ছেলেটা বাংলায় ৭০পেত। মাছ - ভাত ভালোবাসত।
ছেলেটা রঞ্জনা নামের একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসত।
ছেলেটা ভরদুপুরে সাইকেল নিয়ে রঞ্জনার পাড়ায়, রঞ্জনার বাড়ির সামনে এসে ঘুরপাক খেত - একবার বারান্দায় রঞ্জনাকে দেখবে বলে।
ছেলেটা অল্প বয়সী ছিল, সদ্য প্রেমে পড়েছিল।
প্রেমে পড়ার সাহস থাকলেও, রঞ্জনার মেজদা'র কব্জির কারিকুরি মোকাবিলা করার সাহস ছিল না, নিজের ঠ্যাং হারানোর মত বুকের পাটাও ছিল না
ছেলেটার।
ছেলেটা রঞ্জনাকে দুপুরে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে, কোনো একটা নির্জন বিকেলে রঞ্জনার জীবন থেকে নিশ্চুপে সরে গেছিল। আমরা অঞ্জন দত্তর গলায় শুনেছিলাম সেই অসফল প্রেমের গল্প।
ততদিনে আমরা পা দিয়েছি কৈশোরের দোরগোড়ায়.... দেখে নিয়েছি ভেঙে পড়েছে সোভিয়েত রাশিয়া, উদার অর্থনীতি কড়া নেড়েছে আমদের দোরগোড়ায়... সুদূর অযোধ্যায় চোখের সামনে এক এক করে ভেঙে গেছে বাবরি মসজিদের তিনটে আস্ত গম্বুজ... সেই ধূলোয় ঢেকে গেছে গোটা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আকাশ।
আবছা হয়ে আসছিল আমাদের চারপাশ; দমবন্ধ লাগছিল; খুব দ্রুত মসজিদের সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে যেত ছেলেরা, প্রাণপণে মন্দিরের রাস্তা এড়ানোর চেষ্টা করত একটা সম্প্রদায়।
আমরা আরো একটু বড় হলাম, জিভের তলার কষাটে স্বাদটা আরো একটু বাড়ল... সুদূর গুজরাটের গোধরার একটা পোড়া কামরার গন্ধ কিভাবে যেন চারিয়ে গেল গোটা দেশটায়। অবাক হয়ে দেখলাম, ভোটার লিস্ট ধরে মুসলমান খুন করা একজন নেতা আবার যখন মসনদে বসেন, আমার বাংলা থেকে তাকে হলুদ গোলাপের তোড়ার মোড়কে বন্ধুত্বের ইঙ্গিত পাঠান বাংলারই এক নেত্রী....
শিখ দাঙ্গা - বাবরি মসজিদ ভাঙার কলঙ্কিত অধ্যায় - গোধরার লজ্জার মধ্যেও যেখানে আমার বাংলায় একটাও লাশ পড়ে নি, সেখানেই কোথাও খুব সংগোপনে চাষ হচ্ছিল বিষবৃক্ষের।
রঞ্জনার মুসলিম প্রেমিক হারিয়ে গেছে... কোথায় গেছে আমরা কেউ জানি না... রঞ্জনাও হয়ত আজ কারো গৃহিণী... ওর মেজদাদা হয়ত কাল বা পরশু ট্রেন ধরবে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে...
রাম বাড়ি পাবেন ২২তারিখ...
ধন্যবাদ অঞ্জন দত্ত, আজ আপনার জন্মদিন, আপনি আমাদের কিশোরবেলাতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আগামী ভারতের ছবিটা...
আমরা বুঝি নি - দোষ আমাদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন