১) ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও গ্রুপ সি, ডি লেভেলের এক্সামে যারা প্রবল দুর্নীতিগ্রস্ত লিস্টের ভিতর নিজেদের শিরদাঁড়ার জোরে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন তারা বঞ্চিত। দুর্ভাগ্যক্রমে এদের সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না। সৌজন্যে আমাদের মহামান্য পর্ষদ। তারা নথি নেই বলে দাবি করছেন। কিন্তু নথি ডেস্ট্রয় করবার পরেও একাধিক সময়ে তাদের ঝুলি থেকে টুকুর টুকুর করে স্ক্যাণ্ড কপি বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন আরটিআই-তে। অতএব চাকুরিজীবীদের মধ্যে বঞ্চিত শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র এরাই।
বঞ্চিত কারা?
২) ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও গ্রুপ সি, ডি লেভেলের এক্সামে কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী যোগ্যতার সঙ্গে তুমুল ভালো নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউতে কল পায়নি। আজ তারা হাঁ করে ওইসব রত্নখচিত ওএমআর শিটগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ ৯ টি কোশ্চেনের অ্যানসার করেছে, কেউ ১২ টি। কেউ শূন্য খাতা জমা রেখেছে এবং তারা সসম্মানে চাকরিতে বহাল রয়েছে। এদের চোখের জল আর কুৎসিততম অবহেলার খেয়াল কেউ কোনওদিন রাখেনি। বঞ্চিত এরা। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন ২৬০০০ সিট হলে বঞ্চিত কী করে দুই আড়াই লাখ হয়ে যায়? কেউ যদি ৫৫-এ ০৪ পেয়ে চাকুরিরত হতে পারেন তাহলে যে ৪৪ পেয়েছিল সে কী দোষ করল?
কয়েকদিন আগে নিউজ চ্যানেলগুলোতে এক কান্নাবাসা ভিডিও দেখছিলাম।
অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ...
আমার চাকরি চলে গেছে। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ... আমি কিছু করিনি। একটাও দুর্নীতি করিনি। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ... আমার অ্যাকাডেমিক স্কোর ফুল আছে। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ... আমার কাছে ওএমআর আছে। আমি ৫৫ এ ৩৮ পেয়েছিলাম। অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ...
দাদা, আমি ৫১ পেয়েছিলাম। আমার সাবজেক্ট বাংলা। সেখানে হাই কম্পিটিশন! কাট অফ ছিল ৫৩। সেটা হতেই পারে। এসএসসি চিরকালই পাগলের মতো টাফ এক্সাম। কিন্তু আপনি কোন সাবজেক্টের কোন ক্যাটাগরি দাদা, যেখানে ৩৮ কাট অফ ছিল?
কাল কলকাতা টিভিতে ভাগ্যশ্রী বেরা নাম্নী এক চাকুরিজীবী দর্দভরা কাহিনী শোনালেন। ভদ্রমহিলার চাকরি গেছে। এসএসসি-র সাইটে জ্বলজ্বল করছে তার ওএমআর। তিনি ০৯ পেয়েছেন ৫৫ তে। গিয়ে দেখে আসতে পারেন। এনারা যদি যোগ্য হন তাহলে ওই আড়াই লাখ পরীক্ষার্থী কী দোষ করলেন?
সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত কারা?
৩) এবার হাত কাঁপছে। নাহ, আমরা কেউ সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত নই। পেটে যৎসামান্য বিদ্যা আছে। গতরে এখনও খেটে খাওয়ার শক্তি আছে। যুঝে নেব। যে সকল না ফোটা ফুলের দল স্কুলবাড়ির সামনে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে আর দেখছে গেটে তালা ঝুলে গেছে বহুস্কুলের, যারা প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে হাঁ করে বসে আছে আর মিড ডে মিলের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরছে, যাদেরকে এই শয় তান রাষ্ট্র প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে স্কুল তোমাদের জন্য লঙ্গরখানা মাত্র, তার বেশি কিছু আশা কোরো না, যাদের ভবিষ্যতের খবর কোনও ঘন্টাখানেক সঙ্গে সুমন, কোনও জবাব চাইছে ময়ূখরঞ্জন কোনও যাহা বলিব সত্য বলিব-রা রাখবে না সেই সকল শিক্ষায় পরাঙ্মুখ, মুকুলে বিনষ্ট, সততায় বীতরাগ হতে থাকা কঙ্কালসার ভবিষ্যত সর্বাপেক্ষা বঞ্চিত। এই স্লো পয়জনিং-এর কোনও ক্ষমা নাই। ক্ষমা নেই রাষ্ট্রের। ক্ষমা নেই সরকারের। ক্ষমা নেই পর্ষদের। ক্ষমা নেই বিরোধী দলগুলোর। ক্ষমা নেই আমাদের প্রত্যেকের।
আমাদের জাস্ট দম নেই এদেরকে সুন্দর ভবিষ্যত বা বর্তমান দেওয়ার। কোন মুখে আয়নার সামনে দাঁড়াব বলুন?
তো এই হল, বঞ্চিতদের তালিকা। এরপর আরেকটা লেখা আসবে। লাভবান কারা? সঙ্গে আর একটা অংশও থাকবে। প্ররোচিত কারা?
পারলে পড়ে দেখবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন