বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১১

আপনাকে বলছি স্যার ~ অনামিকা মিত্র

দারুণ কড়া বিবৃতি স্যার, আপনি অভিভাবক।
বেশ ঝেড়েছেন... ঠিক করেছেন... হৃদয়ে ধকধক
আপনি বললে সান্ত্বনা পায়। আপনি জানেন আজও
শঙ্খ ঘোষের বাক্য মানেই বাজো স্বদেশ... বাজো!
সময়টাও কী সাংঘাতিক! বিন্দুমাত্র দেরি
করলে পরেই... নোঙর তুলবে নির্বাচনের ফেরি।
এমন সময় দেরি মানে কয়েক লক্ষ ভোট,
এ'দিক ও'দিক। দেরি মানেই প্রচণ্ড সঙ্কট।
বুদ্ধিজীবির দায়িত্ব তো অল্পটি নয় স্যার!
আপনি জানেন এমন সুযোগ মেলেনা বারবার।

বুদ্ধও যে নিন্দা করবে, করবে প্রতিবাদ
ঠিক জানতেন, সত্যি না স্যার? কোন কায়দায় বাদ
দেবেন তাকে? তার চাইতে অপেক্ষা না করে
মুখ মুখোসের কাব্যচিত্র কুশলী অক্ষরে,
বলতে পারলে লক্ষ্যসিদ্ধি, পাবেন ফোটোসেশন।
হয়তো কয়েক বছর বাদে মেট্রোরেলের স্টেশন...
সেটাও পাবেন। সেই প্রাপ্তি মোটেও নয় ফেলনা।
কিন্তু কিছু বোকা মানুষ... যাদের ভাবেন খেলনা
বোকার মতই তারা সবাই ভাবছে এ'টা ভান।
নইলে একই অসভ্যতা করেছে কল্যান...
তখন ছিলেন বিসদৃশরকম ভাবে... চুপ।
ভাবছে সবাই... আপনি কেন এমন বহুরূপ!

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১১

শেষ লড়াই ~ অনির্বাণ মাইতি

ছিন্ন ভিন্ন ছড়িয়ে একটা লাশ
জঙ্গল ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস
...লাল কাঁকড়ের বুকে জমে থাকা ঋণ
শাল পিয়ালের জন্য নতুন দিন
রক্ত নিশান আবার উড়িয়ে দে না
ট্রিগারে আঙ্গুল মুচলেকা চাইবে না।

লাল মাটি আরও লাল কবে হবে বল ?
বীরসার দেশে বিপ্লব ই সম্বল
শক্ত চোয়াল , কালো পেশীদের ভিড়
গুলি বন্দুক, রুখে দিতে পারে তীর
পতাকায় মুছি সময়ের যন্ত্রণা
হাতে রাইফেল মুচলেকা চাইবে না

আবার নতুন লড়াই শুরুর বেলা
জীবনের সাথে রোজ কানামাছি খেলা
চলো কমরেড আবারো সেদিন গুনি
এদেশের বুকে রণ দুন্দুভি শুনি
থুতু ছুঁড়ে বলি মানছি না, মানবো না
কেন রাষ্ট্রের কাছে মুচলেকা চাইবো না?

স্বপন কোলেকে মনে রেখে ~ সুভাশিস

স্বপনকে তো মারলি তোরা
স্বপ্নটাকে পারবি?
যতই মারিস বাড়বে মিছিল
মার কত মার মারবি।


রক্তে ভেজা নিথর দেহ
অভিজিত আজ শুধুই লাশ,
ভয় দেখিয়ে ঘার বেঁকিয়ে
রাজ্য জুরে শুধুই ত্রাস।

যতই করিস শব সাধনা
মিছেই হাঁকিস হাজার বার,
বুকে আগুন হয়ে জ্বলছে সবার
সায়ন্তিকার অঙ্গিকার।

আমরাও আজ তৈরী আছি
কলম হাতুরি কাস্তেতে,
মানুষই তোদের জবাব দেবে
এগারোয় ভোট বাক্সেতে। ।

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১১

মানুষ ~ অনামিকা মিত্র

মানুষ বড় বোকা
বসেই আছে শুকনো চোখে
কখন ফেরে খোকা।

তোমরা চেনো তা'কে।
জানো সে খুব অন্ধকারেও
সূর্য জ্বেলে রাখে।

সূর্য কোথায়?... মনে।
ভয় মেঘের আড়াল থেকে
ওঠে এতক্ষণে।

ভয় কীসের? কাকে?
ভাই বন্ধু যার বুলেটে
রক্তে শুয়ে থাকে।

ভয় কীসের? কাকে?
যে হানাদার আগুন জ্বেলে
পুড়িয়ে মারে মাকে।

ভয় কীসের? কাকে?
যার মুখোস চোখ রাঙায়
প্রতি কথার ফাঁকে।

মানুষই ভয় তাড়ায়।
রাতপাহারা চলতে থাকে
ছন্নছাড়া পাড়ায়।

মানুষ বড় জেদী।
ভালোবাসার ফুলে সাজায়
ভাঙা শহিদ বেদী!

প্রতিভা ~ অনামিকা মিত্র

অঙ্কন শেখা শুভাদার কাছ থেকে
আমার বেলায় বাঁকা হাসি? অবহেলা?
রবিঠাকুরওতো এঁকেছে প্রচুর ছবি
কোনও আপত্তি করিসনি তার বেলা।

রবিঠাকুরেরই মতন লিখেছি বই।
বেশি নয় ঠিকই, দুইচার খানা কম
নোবেল পাইনি। পাব না বলেছে কেউ?
পোড়ালেও হয় দিব্যি দুধ গরম।

গান জানি, জানি বাজাতে সরগরম।
সুর ভুল? সে'তো লতা মঙ্গেশকরও
প্রথম প্রথম নার্ভাস হয়ে গিয়ে...
শুধু শুধু একা আমাকেই কেন ধরো?

আরও নানাবিধ প্রতিভা রয়েছে হাতে।
জলের মতন মিথ্যে বলতে পারি,
লোকসভাতেও মিথ্যে পিএইচডিটা 
দাখিল করেছি। ছিঁড়ে পড়ি নয়া শাড়ি।

আর কী কী পারি চ্যালারা বুঝিয়ে দেবে
নিজেও হয়তো বুঝে যাবি হাড়ে হাড়ে!
যদি না বুঝিস? তারও ব্যবস্থা আছে।
মিডিয়ারা পারে। সবটা বোঝাতে পারে।

যে করেই হোক ছলে বলে কৌশলে
গদী দখলের হুকুম পেয়েছি আমি।
আপাতত তাই তোদের সইতে হবে
প্রতিভা এবং মাপাজোকা পাগলামী।

চ্যানেল কিনেছি ছবি আঁকা টাকা দিয়ে
ছবি কিনে নিল মেহতা ও নেওটিয়া।
এ'বার চ্যানেলে ভাগ্য গণনা শুরু। 
ঠোঁট দিয়ে ঠিক তাস টেনে নেও টিয়া!

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১১

আত্মকথা ~ অনামিকা মিত্র


তৃণমূল ক্যাডার ~ অনামিকা মিত্র

আমি তৃণমূল কর্মী, আমার পরিচয় দিতে চাইনে।
চেনবার যারা চিনে যাবি ঠিকই বোমা বন্দুক মাইনএ।

সিভি আপলোড করা আছে... জানে নেত্রীর দপ্তর।
তা' দেখে নেত্রী বলেছে,লড়ে যা,এ'পাড়ার "তোলা" সব তোর!

আগে করতাম ক্ষুদ্র ব্যবসা, ছ্যাঁচরামি তোলা ছিনতাই।
নেত্রী চাইছে বৃহৎ ব্যবসা, কাটছেনা আর দিন তাই।

পাঁচটা দশটা খুনটুন করা আজকাল জলভাত তো!
থিয়োরেটিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে, অর্পিতা জয় ব্রাত্য।

আমি হতে চাই... রাজার জামাই। প্রকাশ্যে... ফিসফিসিয়ে...
রটনা করছি সিপিএম দেবে টালাজলে বিষ মিশিয়ে!

অপেক্ষা শুধু, দিদি একবার পৌঁছলে মহাকরণে,
সিওর বলবে... জোলো দুধ নয়... আয় বাছা আয়... সরও নে।

তনয়কাহিনি--মুকুলপর্ব ~ অনামিকা মিত্র


বড়দি'মনি


তনয়কাহিনি ~ অনামিকা মিত্র

শুধুই সেলএর চাকরি ছেলের পোষাচ্ছিল না মোটেও।
তাই অভিজিৎ ভুলে হিতাহিত, দাঁড়িয়ে গিয়েছে ভোটে ও!

সবাই বলল "আগামীকল্য, না খেয়ে মরবি শেষটা!"
বলে বাছাধন "আছে পেনশন, সুবিধার ভিআরএসটা।

বলছে লোকরা রাহুল ছোকরা খুব নাকি তালেবর সে!
আমি কীসে কম? মেলছি পেখম উদার ভারতবর্ষে!

চাকরি না ছাই, ক'টা টাকা পাই? এর চেয়ে পলিটিকসে
নামলে আমার বহু রোজগার। জেনে গেছি আমি ঠিক সে।

প্রণবপুত্র... সে'টাই সূত্র। এ'দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ডে...
হলেই এমএলএ উৎকোচ মেলে, ডলার এবং পাউন্ডে!

হামাগুড়ি দিতে শিখি নাই আজও, তবু চাহিতেছি... হাঁটিতে।
হাত ধর বাপা... হাঁটি হাঁটি পা পা, রোডশোতে... নলহাটিতে! "

সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১১

কার্যকারণ ~ অনামিকা মিত্র

টিভির ভিতর মিথ্যে ভাষণ দিচ্ছে বাছা পার্থ
(ভাষণ কোথায়? হাসাচ্ছে লোক। ওইটা নেহাত ভাঁড় তো।)

পাগল ছাগল ছদ্মবেশে মিথ্যে এবং ভুলকে

সত্যি বলে রটাচ্ছে ওর নিরেট মাথা চুলকে।

সবাই শুধোয় পার্থ এমন মিথ্যে কেন বলছ?
কবর থেকে চমকে ওঠে বাপরে গোয়েবলস-ও!

শুভেন্দুরা সেই সুযোগে রক্তে ভাসায় পাড়া 

ভুল বুঝি না। কিছুই কি হয় কার্যকারণ ছাড়া?


কর্পোরেটের অন্ধ গোলাম। শেকল বাঁধা গলায়।
এমনি কি আর বলছে কথা? নগদ টাকাই বলায়।

তাই নাকি হে? কারা এখন ঢালছে এমন অর্থ?
হিজ মাস্টার্স ভয়েস মানেই গোপনতম শর্ত।

গোপন তো নয়! ব্যাপার যত ঘটছে তা' প্রকাশ্যে!
সাম্রাজ্যের নির্দেশে আর মনমোহিনী ভাষ্যে।


টাটকা আজও পরমাণুর অপমানের গল্প।
আর তা'ছাড়া বিশ্ববাজার সেটাও তো নয় অল্প।

বামরা নিকেশ হলেই এ'দেশ না ঘরকা না ঘাটকা

পেনশনে আজ রাহুর ছোঁয়া খেলুক পুঁজি ফাটকা

এনডিএ বা ইউপিএ হও মানতে হবে চুক্তি 

গরীব আরও গরীব হলেই অর্থনীতির মুক্তি।

সেই জন্যেই জ্বলবে বসত। মারবে ভুখা লোককে।
খুনসন্ত্রাস... খেলতে হবে সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যে। 


এ'সব কিছু ছাপ যেন না ফেলতে পারে চিত্তে

তার জন্যেই চলছে প্রচার হিংস্র ... এবং মিথ্যে। 


আসছে টাকাও। ভাগ করছেন প্রচারকারী পার্থ।
ভিক্ষে কুড়োয় বিদ্দ্বজ্জন... শাঁওলি বা জয়... ব্রাত্য।

পার্থ শোনো,যাদের কেনা সহজ, তাদের কিনো।
মানুষ খালি যায়না কেনা। গুণছে তারা দিনও।

হুজুরের মানহানি ~ অনামিকা মিত্র


মানের হানি। মামলা করুন। জিতুন কিম্বা হারুন।
ব্রাত্য হুজুর, আপনি কিন্তু সত্যবাদী দারুণ!

নাটক করেন। রাজনীতিও। মদ্যে ভেজান ওষ্ঠ।
রেলের টাকায় বেলের পানায় শুদ্ধ রাখেন কোষ্ঠ।

ঋতব্রতর বড্ড সাহস, চাইছে এ'সব ধরতে।
এ'বার বুঝুক। সেলাম করুক একদম নিঃশর্তে।

মঞ্চ থেকে দেদার টাকা, কলেজ থেকে মাইনে।

রেলের টাকাও? বেশ করেছেন। বাধলে বাধুক আইনে।

আসল কথা সম্মান। আর এমন সাম্মানিককে,
ঋতব্রত কায়দা করে বলছে নাকি ভিক্ষে!

রেল কি কারও মামার বাড়ি? কাজ করলে খাদ্য

তবেই মেলে। গর্দভদের বোঝানো দুঃসাধ্য।

জয়দা বলুন, শাঁওলি বলুন, লাভের কড়ি যার যার।
মামলাটা হোক। ঝুলির থেকে নির্গত হোক মার্জার।

যেই সম্মান ছিলনা তার হচ্ছে বেজায় হানি।
মামলা করুন। ঋত এবার টানুক জেলের ঘানি।


রক্তে ভেজা কোলাজ ~ সদানন্দ কারিগর

রক্তে ভেজা কোলাজ

-সদানন্দ কারিগর

ঘটনা ১ : বাঁকুড়া সন্মিলনি মেডিকেল কলেজের মর্গ-এর উল্টো দিকের চা'য়ের দোকান। বহুদিন পর হঠাৎ দেখা এক কমরেড-এর সাথে। চিৎকার করে ডাকি- আরে কমরেড, কি খবর? এখানে? সেই চেনা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। মুখটা একটু শুকনো। মনটা খচখচ করে উঠল। তাহলে কি কোন আত্মীয়-স্বজন


অদ্ভুত ক্ষমতা এদের অন্যের মনের কথা বোঝার। হাতটা চেপে ধরে বললেন, বাড়িতে সব ভালই। পার্টী থেকে দায়িত্ব দিয়েছে মর্গ সামলানোর। সারেঙ্গা বা বাঁকুড়া জেলা লাগোয়া অঞ্চলে প্রায় রোজই কমরেডরা খুন হচ্ছেন। 'বডি'গুলো এখানেই আসছে। আমরা সাহায্য না করলে গ্রামের মানুষ আরও বিপদে পরবে। তাই


শহুরে মধ্যবিত্ত - অবাক চোখে আকাশটাকে আঁকড়ে ধরে পালাতে চায়। পারেনা। আবার সামাল দেয় সেই কমরেড। পকেট থেকে একটা কালো সুতোর বিড়ি বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ছাড়ো ওসব। মুহূর্তে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করে বলি, এখনও কতো এসেছে? উনি বললেন- প্রথম প্রথম হিসেব থাকতো। এখন আর থাকেনা। তবে জান কমরেড, একটা ঘটনা কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারছিনা। রাতে শুতে গেলেই মনে পড়ে। ঘুমাতে পারিনা। সেপ্টেম্বর- এর ১০ তারিখ। সারেঙ্গাতে খুন হন ৭১ বছরের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক কৃষ্ণ কুণ্ডু। পরের পরের দিন, মানে ১২ তারিখ ওনার ছেলে এসেছে। আমরা দাঁড়িয়ে আছি। ছেলেটা আমার পাশে। খেয়াল করিনি, কখন আমার কাঁধে মাথাটা রেখেছে। 'বডিটা' বের করা হচ্ছে। আমি এগিয়ে যাচ্ছি লাল পতাকাটা নিয়ে। ঢেকে দিতে হবে। হঠাৎ ছেলেটা বলে উঠল- 'কাকু, বাবার মুখটা একটু পরিষ্কার করে দেবে? এত রক্ত, ভাল করে দেখাই যাচ্ছে না।' বিশ্বাস করো কমরেড, ঘুমোতে গেলেই কথাটা কানে বাজে। মনে হয় ছুটে যাই জঙ্গল মহলে। দেখি একবার ওদের কত শক্তি। পার্টী হাত বেঁধে রেখেছে, আমাদের কিচ্ছু করার নেই। 

 

ঘটনা-২ : ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের শেষ সমাবেশ। একটু আগে লালগড়ের বিনপুর জোনাল কমিটির মিছিল এসে ঢুকেছে। উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সহযোদ্ধাদের স্বাগত জানিয়েছে মাঠ। ওঁরা বসলেন মাঠের এক কোণে। মঞ্চে বুদ্ধদেব ভাষণ দিচ্ছেন। আমি থাকতে না পেরে চলে গেলাম ওদের কাছে। বললাম- 'লাল সেলাম কমরেড, দারুণ লড়ছেন আপনারা'। প্রত্যুত্তরে হাতের মুঠি শক্ত করে লাল সেলাম জানালেন। কিন্তু মুখে কোন কথা নেই। আবার অবাক হই। ভাবি তাহলে কি আমার পোশাক বাধা হ'য়ে দাঁড়াল? আমাকে কি কমরেড ভাবতে পারছেন না? বসে পরি ওদের পাশেই।

বক্তৃতা শেষ করলেন বুদ্ধদেব। পাশের মানুষগুলো উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন। বছর পঁচিশের এক যুবক শূন্যে হাতটাকে ছুঁড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন- 'ই ই ই ইনকিলাব', চারপাশ কাঁপিয়ে আওয়াজ উঠলো 'জি ই ই ই ন্দা বা আ আ দ' 


এক মাঝবয়সী কমরেড এবার তাকালেন আমার দিকে। জানতে চাইলেন আমি সাংবাদিক কিনা। বললাম না না তেমন কিছু না। এবার তাকালেন সোজা। বললেন, লেখেন নিশ্চয়ই? কিছু জানতে চান? আমতা আমতা করে বললাম- 'ইয়ে মানে পেপার পড়েতো সব ঠিকমতো জানা যায় না। আপনাদের মুখেই তাই শুনতে এসেছি আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা'

-আপনারা শহরের লোক, পারবেন শুনতে ওসব? আমার বাড়ী শালবনী। ২০০৯ সালের জুন মাসে, ১০ জন কমরেড কে ধরে নিয়ে গেছিল ওরা।  দীনবন্ধু সরেন, প্রবীর মাহাত, মলয় মাহাত, সঞ্জয় মাহাত, কেশবচন্দ্র মানা, ধীরজ মানা, মোহন সিং, দেবব্রত সরেন, অসিত সামন্ত আর নাড়ু সামন্ত। হাত-পা বেঁধে রোদের মধ্যে ফেলে রেখেছিল সারাদিন। প্রচন্ড তেষ্টায় জল চাইলে মুখে পেচ্ছাব করে দিয়েছিল মাওবাদীর দল। তারপর একটা ছোটো ঘরে লঙ্কার বস্তায় আগুন ধরিয়ে সেখানে সবাইকে ঢুকিয়ে দম বন্ধ করে মেরে লাশগুলো গায়েব করে দিয়েছে। শালবনী হাইস্কুলের মাষ্টার মশাই, একমাত্র ছেলে মলয় মাহাত-র ছবি নিয়ে আজো জনে জনে জিজ্ঞেস করে তার ছেলের কথা। মা-বাবা দুজনেই আজ সন্তান শোকে পাগল।


বৈতার স্নেহাশীষ দাস। ওর বৌটার সেদিন 'সাধ'। ভজালি দিয়ে গলাটা কেটে আনন্দে চীৎকার করেছিল ওরা। পাগল বৌটার একমাস বাদে একটা মেয়ে হয়েছিল।


কানাই দিগনায়েক। বৌ-ভাতের দিন ঘর থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে গুলি করে মারে। সদ্য বিয়ে আর একই সাথে বিধবা হওয়া বৌটা এখন শুধু তাকিয়ে থাকে। কথা বলেনা।


আকাশ বেজ আর তাপস মণ্ডল। গুঁড়ি গ্রামে বাড়ি। মকর সংক্রান্তির নতুন জামা কাপড় কিনতে গেছিল ছেলে-মেয়েদের জন্য বিনপুর হাটে। গুলি করে মেরে দেয় ওরা।


বেলাটিকরি অঞ্চলের জামদা হাইস্কুলের শিক্ষক কার্ত্তিক মাহাত। পড়াচ্ছিল। ছাত্রদের সামনেই গুলি করে মারে। দুজন ছাত্র তারপর থেকে ভয়ে বোবা হয়ে যায়।


আমার ভেতরটা গুলিয়ে ওঠে। থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, এর পরেও লড়ছেন, ভয় করেনা? অদ্ভুত হাসি হেসে ওঠেন উনি। হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন- 'একটু আগে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কি বলল শুনলেন? এভাবে আমাদের শেষ করা যায় না। জয় আমাদের হবেই'


গোটা দলটা উঠে দাঁড়ায়। এবার ওদের ফিরতে হবে। মরার জন্য, নাকি অনেককে বাঁচাতে? উত্তরটা অজানাই থেকে যায়।


ঘটনা ৩ : সন্ধ্যে ৭টার প্রেস ক্লাব। কোণের TV তে প্রাক্তন নকশাল নেতা কতিপয় বুদ্ধিজীবী পরিবেষ্টিত হ'য়ে 'রেজিমেন্টেড পার্টী-র' বাপান্ত করছেন। একটু আগেই বামফ্রন্টের আসন্ন পরাজয়-এর সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষন করে আসা ক্লান্ত সাংবাদিক কেরাম-এর বোর্ড থেকে ঘার ঘুরিয়ে এক ঝলক সেটা দেখে নিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন 'শালা রেড-বুকটাও পড়েনি। শংকর দুটো লার্জ বিপি আর সোডা দিস্‌'।।   


************


সাত্রে'র নাটকটা মনে পড়ে? কিভাবে একজন সাংবাদিক একটু একটু করে Pathological liar-এ পরিণত হয়? যদিও তারা জানে, তারা যা লিখছে তা আসলে মিথ্যে। একসময় তারাই সেটাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে।


এই মুহুর্তে আমরাই বা কম যাই কিসে? আপাদমস্তক মিথ্যেয় মোড়া অর্ধশিক্ষিত এক ছিটেল মহিলার পেছনে মনে মনে একবারো কি দৌড়াইনি? একবারও কি মনে হয়নি, জঙ্গলে রক্ত ঝরছে কারন অনুন্নয়ন? যেন শ'খানেক গরিব মানুষ মরলেই ওখানে উন্নয়নের বন্যা বয়ে যাবে? একবারও কি মনে হয়নি, যাক না একবার বামফ্রন্ট সরকারটা বছর খানেকের জন্য? সেই মুহুর্তে মনে হয়েছিল কি, গোটা রাজ্যটাই জঙ্গলমহল বানিয়ে দিতে পারে ওরা? সপাটে নিজের গালে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হয় কি তার জন্য?


এখনও সময় আছে। অথবা এই তো সময়। লাল পতাকাটাকে আরো উঁচুতে তুলে ধরুন। এ লড়াই জিততেই হবে।