মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮

DA: দয়া না দায় ~ দেবযানী ভট্টাচার্য্য

বহুদিন ধরে সরকারি কর্মচারীদের DA নিয়ে রাজ্যে বিতর্ক চলছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের DA বাকি আছে, মুখ্যমন্ত্রী দিতে রাজি নন। বর্তমানে মামলা হাইকোর্টে। কোর্টে রাজ্যের হয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল declare করেছেন যে সরকারি কর্মীদের DA নাকি কিছু বাকি নেই। অথচ এতদিন ধরে প্রচুর দাবী উঠেছে এবং দাবী রয়েছে যে DA বাকি আছে। তাহলে সত্যিটা কি? কৌতূহলের বশেই জানবার চেষ্টা করেছিলাম। আপনাদের সাথেও share করতে চাই। এটি রীতিমত একটি ছোটখাটো গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন সরকারি সাইট থেকে যেগুলোর লিঙ্ক লেখার শেষে দেওয়া আছে। পুরোটা পড়লে বোঝা যাবে DA নিয়ে এই ডামাডোলের কারণ কি এবং তা কতটা যুক্তিসঙ্গত বা আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা। 

প্রথমেই জানতে হবে, DA কি এবং কেন?

DA বা Dearness Allowance হল মহার্ঘ্যভাতা। ধরা যাক আমার মাইনে আজ ১০০ টাকা। আজকের বাজারমূল্যের নিরিখে এই ১০০ টাকায় আমার সংসার চলে। কিন্তু আগামী বছর যদি Price Index বা মূল্যসূচক বদলে যায়, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তখন জীবনযাত্রার মান exactly এক রেখে চললেও ১০০ টাকা আমার সংসারে কম পড়বে। অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পরেও যদি আমার মাইনে ১০০ টাকাতেই আটকে থাকে, তখন আমার মাইনে virtually কমে যাবে। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মীদের মাইনে যাতে effectively কমে না যায়, সেটা ensure করার জন্যই সরকারি কর্মীরা পান মহার্ঘ্যভাতা। অর্থাৎ জিনিসপত্র মহার্ঘ্য হওয়ার ফলে যে ভাতা তাঁদেরকে দেওয়া হয়, তা-ই হল মহার্ঘ্যভাতা। 

প্রশ্ন হল, সরকারি কর্মীরা DA পাবেন কেন? বেসরকারি কর্মীরা তো পান না। জিনিসের দাম বাড়লে অসুবিধা তো সবারই হয়। 

এর যুক্তিসঙ্গত উত্তর হল, employer যখন খোদ সরকার এবং জিনিসপত্রের দামের ওঠাপড়ার দায়ও যেহেতু সরকারের এবং যে বাজারে জিনিসের দাম সরকারি নীতির direct outcome হিসেবে বাড়ে সেই বাজার থেকেই জিনিসপত্র কিনতে যেহেতু সরকারি কর্মচারীরা বাধ্য, সেইজন্যই তাঁদের মাইনের buying power বা ক্রয়ক্ষমতা যাতে অপরিবর্তিত থাকে সেটা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারি কর্মীদের DA দেওয়া সরকারের ন্যায্য দায়িত্ব ও নিয়ম। DA দেওয়া মানে  সরকারি কর্মীদের মাইনে বাড়ানো নয়, বরং মাইনের কমে যাওয়াকে রোধ করা।

তাহলে বেসরকারি কর্মীদের কি হবে? তাঁরা তো DA পান না। 

বেসরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রেও annual appraisal এর basis এ increment হয়। 

তবে কি সরকারি কর্মচারীরা increment পান না? যতদূর জানি, সেও তাঁরা পেয়ে থাকেন। তাহলে আলাদা করে মহার্ঘ্যভাতা দেওয়ার প্রয়োজনটা কি? 

আসলে বাৎসরিক increment এর তাৎপর্য সরকারি এবং বেসরকারি sector এ আলাদা। সরকারি চাকরিতে increment হল শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার দাম। তাই তা ন্যূনতম থাকে এবং তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক থাকে না। অর্থাৎ নতুন চাকরিতে ঢোকা একজন অনভিজ্ঞ কর্মচারীর চেয়ে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কর্মচারীর সেই পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার মূল্য হিসেবে পাঁচটি increment পাওনা হয়। কিন্তু সেই পাঁচ বছর আগে ঢোকা একজন নতুন অনভিজ্ঞ কর্মচারী যে basic pay তে চাকরিতে join করেন, তার পাঁচ বছর পরে যদি সেরকমই নতুন অনভিজ্ঞ কেউ সেই একই চাকরিতে join করতে আসেন, তবে তাঁকেও সেই একই পাঁচ বছরের পুরোনো basic pay তে চাকরিতে join করতে হয়। ইতিমধ্যে এই পাঁচ বছরে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি যাই ঘটে থাকুক না কেন, এই initial joining time basic pay তে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। 

বেসরকারি ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয় না। বেসরকারি ক্ষেত্রে পাঁচ বছর আগে যে মাইনেতে একজন নতুন অনভিজ্ঞ কর্মচারীকে চাকরিতে নেওয়া হয়, পাঁচ বছর পরে সেই একই চাকরিতে একই যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে নিতে গেলে সাধারণতঃ কোম্পানীরা বেশি মাইনে অফার করতে বাধ্য হন। 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরিতে কোনো ব্যক্তি ২০০৯ সালে কোনো বিশেষ পদে Join করবার সময় যে initial basic pay তে join করেছিলেন, আজ ২০১৮ সালে সেই একই পদে join করতে গেলে একই রকম যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির initial basic pay একই হয়। কিন্তু এই ন'বছরে বাজারমূল্য তো এক জায়গায় থেমে নেই। ২০০৯ সালের সেই initial basic pay র যা ক্রয়ক্ষমতা ছিল, আজ ২০১৮ সালে সমান basic pay র ক্রয়ক্ষমতা অনেক কম। এই ব্যবধানকে পূরণ করতে বেসরকারি কোম্পানীগুলি ২০০৯ সালে কোনো পদে কর্মচারী নিয়োগ করতে গিয়ে যে initial বেতন অফার করত, আজ সেই একই চাকরিতে একই যোগ্যতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ করতে গিয়ে অনেক বেশি initial বেতন অফার করে। সরকারি চাকরিতে যেহেতু বেশি initial basic pay অফার করার কোনো উপায় নেই, তাই সেই initial basic pay র বাস্তব মূল্যহ্রাস রোধ করতে এবং বাজার মূল্যের ব্যবধান পূরণ করতে যে বাড়তি টাকা allowance হিসেবে দেওয়া হয়, তাকেই বলা হয় মহার্ঘ্যভাতা বা DA. 

এর মানে দাঁড়ালো এই যে আসলে বেসরকারি কর্মীরাও DA পান কিন্তু যেহেতু সেই টাকাটা প্রতি নিয়ত মূল বেতনের সঙ্গে জুড়ে যেতে থাকে আর তাকে আলাদা করে রেখে আলাদা নামে ডাকা হয় না, তাই আমাদের মনে হয় যেন তাঁরা মহার্ঘ্যভাতা পান না। বাস্তবে বেসরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি নিয়ত যে ঘটনা ঘটতে থাকে অর্থাৎ মূল বেতনের সঙ্গে মহার্ঘ্যভাতার মিশে যাওয়া, সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটে দশ বারো বছর পর পর যখন বেতন কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করা হয়। তাই এ ব্যাপারে বলাই যায় যে বেতন পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারে বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মচারীরা সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে এবং তাদের মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করা বৃথা। 

আর তাছাড়াও মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার পিছনে বেসরকারি কোম্পানীর যেহেতু কোনো হাত নেই, তাই বেসরকারি এমপ্লয়াররা মূল্যবৃদ্ধির compensation তাদের কর্মচারীদের দিতে বাধ্য থাকেন না। তা সত্ত্বেও অধিকাংশ বেসরকারি কোম্পানীই প্রতি বছর তাদের কর্মচারীদের pay revision করে থাকেন। আর সরকারি কর্মচারীদের employer যেহেতু সরকার নিজে, এবং মূল্যবৃদ্ধির দায়ও যেহেতু সরকারের, তাই সরকারকে DA দিতে হয়। 

অর্থাৎ DA মানে মাইনে বাড়ানো নয়, মাইনে কমে যাওয়া আটকানো।

অর্থাৎ এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারীদের মাইনে কমে গিয়েছে। আইনতঃ যে কাজের জন্য যে মাইনে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি স্বয়ং রাজ্যপালের কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের মাধ্যমে পেয়ে তাঁরা চাকরিতে ঢুকেছিলেন, এই মুহূর্তে সেই একই কাজ করার জন্য তাঁদের বহু কম মাইনেতে কাজ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ তাঁরা সঠিক মাইনে পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রেও আইন অমান্য করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার কর্মচারীদের বঞ্চিত করে। 

আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ধারনা সরকারি কর্মচারীদের সময়ে সময়ে মাইনে বাড়ে। বাস্তবটা আদৌ তা নয়। আর সাধারণ মানুষের এই ভুল ধারনার কারণেই সরকার তার কর্মীদের DA না দেওয়ায় আমাদের তত কিছু যায় আসে না, বরং আমরা যেন কিছুটা খুশিই। বোধ হয় ঈর্ষার কারণে। আর সাধারণ মানুষের এই ভ্রান্তিই সম্ভবতঃ মুখ্যমন্ত্রীরও আছে। কারণ এই ধরনের বিষয়ে, যেমন অর্থনৈতিক ও আইনগত বিষয়ে ওঁর understanding একেবারেই সাধারণ মানুষের মত। কেবলমাত্র ভোটের রাজনীতির বিষয়ে, ওঁর বোঝার ক্ষমতা outstanding, অতুলনীয়। 

কারুর মনে হতে পারে, যে রাজ্য অর্থকষ্টে ভুগছে, তার সরকার কর্মচারীদের মাইনে দেবে কি করে? কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখতে হবে যে এমনটা আদৌ হয় কিনা। কোনো কোম্পানী যদি অর্থকষ্টে থাকে, তবে তার কর্মচারীদের বোনাস না-ও মিলতে পারে, কিন্তু মাইনেতে হাত পড়ে কি?কোনো কোম্পানীর যখন কর্মীদের মাইনে দেওয়ার সংস্থান থাকে না, তখন বোঝা যায় যে সে কোম্পানীর রোজগার নেই, কোম্পানী লাটে ওঠার মুখে। তবে কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক দৈন্য এমনই যে প্রায় লাটে উঠতে চলেছে? এমন আশঙ্কা আগে একাধিকবার প্রকাশ করেছি যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্ভবতঃ financial emergency র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো দিন money bill fail করবে এবং সেই দিন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু সে আলাদা প্রশ্ন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি কর্মচারীদের ব্যয়ভার বহন করতে না পারে, তাহলে কর্মীসংকোচন করার জন্য ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট স্কীম অফার করতে পারে। সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা নতুন কোনো attractive VR scheme এর অপেক্ষা না রেখেই VR নিতে  চান। কিন্তু যতদূর জানি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আজকাল VR allow করে না। সম্ভবতঃ VR নিলে কর্মীর সমস্ত পাওনাগণ্ডা অবিলম্বে চুকিয়ে দিতে গেলে যে আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তা-ও নেই। একজন, দু'জনকে VR allow করতে হয়ত সরকার পারে, কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যা অবস্থা, তাতে একজনকে Allow করলে পর পর এত কর্মী VR নিতে চাইবেন যে সবার claim settle করার সংস্থান Government এর নেই। স্বাস্থ্যদপ্তরে ডাক্তারদের VR allow করা হয় না বরং তাঁদের retirement age extend করা হয়েছে। অন্যান্য নানা দপ্তরেও এমন অনেকে আছেন যাঁরা চাকরি করতে চাইছেন না, কিন্তু তাঁদের ছাড়বার উপায় নেই। 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত attractive VR scheme ঘোষণা করা। বহু কর্মী এক সাথে retirement নিয়ে নেবেন এবং এককালীন তাঁদের claim settle করে দিলে সরকারের মাইনে বাবদ recurring cost এক ধাক্কায় অনেকখানি কমবে। অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা একটা রাজ্যের জন্য এটি একটি দাওয়াই হতে পারে। 

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি তা করবে? তা করলে সরাসরি প্রমাণিত হবে যে সরকারের পক্ষে কর্মসংস্থান করা এমনকি খোদ সরকারি সেক্টরেও সম্ভব হচ্ছে না। 

কিন্তু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অন্য আর একভাবেও করা যেতে পারে এবং  মমতাদেবী হয়ত সেরকম ভেবেও দেখেছিলেন। ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে নামেমাত্র মাইনে দিয়ে নিয়োগ করে। আসলে সরকারি কর্মচারীরা ঠিক কি কাজ করেন, সেগুলো না করলে ক্ষতি কি, তা সম্ভবতঃ মমতাদেবী বোঝেন না। সেই জন্য কর্মচারীদের মাইনে ওঁর কাছে বিশাল বোঝা। ওঁর হয়ত মনে হয়, রাজ্য চালানোর কাজ তো পার্টির লোকেদের দিয়েই সম্ভব। সিদ্ধান্ত নেবেন মমতাদেবী নিজে আর তা রূপায়ন করবে ওঁর অনুগামীরা। যেমন সাম্প্রতিক অতীতে উনি এই দায়িত্ব দিতে চেয়েছেন পাড়ার ছেলেদেরকে। সরকারী কর্মচারীদের প্রয়োজন কি? বরং যে কর্মচারীকে মাস গেলে ২৫,০০০ টাকা দিতে হয়, সেই টাকায় পাঁচটা পাড়ার ছেলের ক্যাজুয়াল মাসমাইনে হয়ে যেতে পারে। আমার মনে হয় মমতাদেবী হয়ত সত্যি সত্যিই সরকারী অফিসগুলোকে একেবারে উঠিয়ে দেওয়ার কথাও সিরিয়াসলি ভেবে দেখেছেন। বেশ জনমোহিনী সিদ্ধান্ত হত সেটা। যাঁরা মনে করেন সরকারি কর্মচারীরা কাজের কাজ কিছু করেন না, তাঁরাও খুশি হতেন আর তাদের মুখ্য প্রতিনিধিও!

কিন্তু বাস্তবে যে সরকারি কর্মচারী ব্যতীত সরকারচালনা সম্ভব নয়, সেটা মমতাদেবী নিশ্চয় জানতে পেরেছেন। কিন্তু মানতে পারেন নি। ওঁর অসন্তোষও সেখানেই। কেন উনি নিজের ইচ্ছে মত যা খুশী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না? কেন কোর্ট intervene করে? কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোর্টে কেস হারে (সেই মর্মে উনি আইনমন্ত্রী ও সচিবকে বকাঝকাও করেছেন বলে খবরে প্রকাশ)? কেন এত কেস হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ইচ্ছার উপর কথা বলার কোর্ট কে?

সাংবিধানিক সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে সামন্ততান্ত্রিক রাজতন্ত্রের তফাৎ মমতাদেবীকে বড়ই পীড়া দেয়। সেই কারণেই সম্ভবতঃ সরকারী কর্মচারীদের উপর ওঁর রাগ। ওঁরা ওঁদের ন্যায্য মাইনে দাবী করলেও উনি বলছেন 'ঘেউ ঘেউ করবেন না'। কর্মচারীদের সঙ্গত দাবী ওঁর কাছে কুকুরের ঘেউ ঘেউয়ের মতই বেসুরো ও বিরক্তিকর ঠেকে। 

আরও আছে কিছু অস্বস্তিকর সংবাদ। সরকারি কিছু কিছু দপ্তরে, যেমন স্বাস্থ্যদপ্তরে, কর্মীদের উপর এমন চাপাচাপি চলে যে অনেক ডাক্তার, কর্মচারীই সেখানে depression এ ভুগছেন। কিছু নির্দিষ্ট IAS ও WBCS অফিসাররা এক্ষেত্রে instrumental. অন্যায্য চাপাচাপি এবং heckle করার কাজটা 'স্বাস্থ্যভবন' থেকে তাঁরা করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর good book এ থাকেন। 

ন্যায্য মাইনের অভাব এবং তার উপর চাপাচাপির দ্বারা বহু কর্মীকে পরোক্ষে lead করা হচ্ছে যাতে তাঁরা চাকরিতে resignation দিয়ে দেন। অনেকেরই হয়ত জানা থাকবে যে সরকারি চাকরিতে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিলে কেবলমাত্র প্রভিডেন্ড ফাণ্ড ছাড়া অন্য কোনো dues দেওয়ার দায় সরকারের থাকে না কিন্তু কর্মী যদি retire করেন, এমনকি তা voluntary retirement হলেও, তবে তাঁর সমস্ত dues মেটাতে সরকার বাধ্য। তাই কর্মীরা frustrated হয়ে গিয়ে যদি resign করেন, তাহলে কিছু পাওনা মেটানোর দায়ভার থেকে মুক্ত হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সরকারি অলিন্দে কান পাতলে এসব কথা আজকাল হাওয়ায় ভাসে। 

জুনিয়র ডাক্তারদের উপর শর্ত হল পাশ করার পর তিন বছরের জন্য গ্রামীন duty তে যেতেই হবে। নয়ত দশ লাখ টাকা খেসারত দিলে সেই শর্ত থেকে মুক্তি মিলবে। জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় সবাই যে কোনো উপায়ে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পথই বেছে নিচ্ছেন কিন্তু সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে চাইছেন না। কারণ যেখানে তাঁরা duty করতে যাবেন, সেখানে না আছে চিকিৎসা পরিকাঠামো, না আছে সাপোর্টিং স্টাফ, আর না আছে তাঁদের বসবাসের সুবন্দোবস্ত।

যাই হোক্ DA র বিষয়ে ফিরে আসা যাক। 

হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল declaration দিয়েছেন যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA কিছু বাকি নেই। তাতে কর্মচারী সংগঠনের কৌঁসুলি বলেছেন যে রাজ্য ROPA অনুযায়ী কর্মীদের DA দিলেও কেন্দ্রীয় সরকারি হারে দিচ্ছে না। তাতে কোর্ট জানতে চেয়েছে যে রাজ্যের ROPA আইন অনুযায়ী রাজ্যের কর্মীদের DA কত বাকি আছে না আছে, তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে। বাস্তব হল, ROPA তে DA সম্বন্ধে পরিষ্কার guideline দেওয়া আছে ২০০৯ এর মার্চ পর্যন্ত। তার পরের time period এ DA কি হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। কিন্তু কেন নেই তা ব্যাপারটা একটু বিশদে দেখলে বোঝা যাবে।  

পঞ্চম পে কমিশন গঠিত হয় ২৮.৮.২০০৮ তারিখে শ্রী সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে। ২০০৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী পে কমিশন তার রিপোর্ট জমা দেয়, যা পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার্যকর করে ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তারিখে। যদিও পয়লা জানুয়ারী ২০০৬ থেকে বর্ধিত বেতনক্রমের notional effect দেওয়া হয়, কিন্তু একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করে যে মার্চ ২০০৮ পর্যন্ত কোনো arrear payment করা হবে না। স্বাভাবিকভাবেই সেই পর্যন্ত কোনো DA ঘোষণা করারও প্রশ্ন ওঠে নি। সেই ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তারিখেই একটি memorandum (no. 1692-F) এর মাধ্যমে সরকার জানিয়ে দেয় যে ১.৪.২০০৮ থেকে ১.৪.২০০৯ এর মধ্যে ধাপে ধাপে DA মিটিয়ে দেওয়া হবে যাতে ১.৪.২০০৯ থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও ১৬% হারে DA পেতে থাকবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সেই ২৩ শে ফেব্রুয়রী ২০০৯ তারিখে দাঁড়িয়ে একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীও ১৬% হারেই DA পেতেন। 

মেমোরাণ্ডামের কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি: লিঙ্ক নীচে লেখার শেষে

ROPA: Memorandum No. 1691-F dated 23rd February, 2009. 
Subject: Clarificatory Memorandum on the West Bengal Services (Revision of Pay & Allowance) Rules, 2009 & on allied matters dealt with by the Fifth Pay Commission

Serial No. 10. Dearness Allowance - "Consequent upon revision of pay of Government Employees in accordance with the West Bengal (Revision of Pay & Allowance) Rules, 2009, the Dearness Allowance to which a Government Employee is entitled from time to time since the 1st day of January, 2006 needs to be related to pay in the revised pay structure. Necessary Government Order in this regard has been issued with Finance Department Memo. No. 1692-F dated the 23rd February, 2009." 

চলুন দেখা যাক memo no. 1692. তে কি বলা ছিল।

1692-F dated the 23rd February, 2009." 
Subject: Drawal of Dearness Allowance in the revised pay structure under the West Bengal (Revision of Pay & Allowance) Rules, 2009, 
Serial No. 3. "Accordingly the Governor is pleased to decide that the Dearness Allowance payable to a Government Employee with effect from 1st April, 2008, shall be at the following rates.

1.4.2008 - 31.5.2008 @ 2%
1.6.2008 - 31.10.2008 @ 6%
1.11.2008 - 28.2.2009 @ 9%
1.3.2009 - 31.3.2009 @ 12%
1.4.2009 onwards @ 16% 

এই তারিখের ১৮ দিন পরে অর্থাৎ ১৩ই মার্চ ২০০৯ তারিখে অবশ্য ভারতসরকার তাদের memorandum no. 1(1)/2009-E-II(B) এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য DA র হার ১৬% থেকে বাড়িয়ে ২২% করে দেয় with effect from 1st January, 2009. কিন্তু এর থেকেই বোঝা যায় যে যেহেতু এই কেন্দ্রীয় মেমোরাণ্ডাম প্রকাশের ১৮ দিন আগে অর্থাৎ ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের জানা ছিল না যে কবে আবার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের DA বাড়বে এবং কত বাড়বে, তাই তারা নিজেদের মেমোরাণ্ডাম প্রকাশের সময় সর্বোচ্চ DA র হার নির্দিষ্ট করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সেদিনকার existing DA র হারের সমান করে। অর্থাৎ ১৬%. 

মেমোরাণ্ডামের কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি: লিঙ্ক নীচে লেখার শেষে

As on 23rd February 2009, the rate of DA given to the Central Government Employees was 16%. On 13th March, 2009 vide office memorandum no. 1(1)/2009-E-II(B) the Central Government enhanced the DA payable to the Central government employees "...from the existing rate of 16% to 22% with effect from 1st January, 2009." 


1.1.2009 @22%
1.7.2009 @ 27%
1.1.2010 @ 35%
1.7.2010 @ 45%
1.1.2011 @ 51%
1.7.2011 @ 58%
1.1.2012 @ 65%
1.7. 2012 @ 72% 
1.1.2013 @ 80%
1.7.2013 @ 90%
1.1.2014 @ 100% 
1.7.2014 @ 107%
1.1.2015 @ 113%
1.7.2015 @ 119%
1.1.2016 @ 125%

After this the Central government announced DA calculations based on AICPIN with base year 2001. 

AICPIN December 2015 value was 269. In June 2006, it was 123. 

AICPIN IN JUNE 2016       277
AICPIN DECEMBER 2016   275
AICPIN JUNE 2017             280

DA is equal to (average of AICPIN for the past 12 months - 115.76) * 100 / 115.76. 

এই ঘটনা থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে রাজ্য সরকার তার কর্মচারীদের DA দেবার সময় কেন্দ্রীয় হারকেই অনুসরন করে বা করত, যদিও তা কার্যকর করতে কয়েকমাস দেরী করত। 

বর্তমানে পৌঁছিয়ে আমরা দেখছি যে রাজ্য সরকার তাদের সম্পূর্ণ খেয়ালখুশী মত DA ঘোষণা করছে যার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের DAর হারের কোনো সামঞ্জস্যই নেই। অপরপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মচারীদের জন্য প্রতি ছ'মাস অন্তর যে DA ঘোষণা করে তা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্ধারিত এবং AICPIN (All India Consumer Price Index) বা মূল্যবৃদ্ধি সূচকের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ। ২০০১ সালের মূল্যকে base বা ১০০ ধরে নিয়ে DA হিসেব করা হয় নিম্নোক্ত ফর্মূলা মেনে। 

DA = (গত বারোমাসের গড় AICPIN - 115.76)*100/115.76. 

এর কারণ ১১৫.৭৬ হল ২০০৬ সালের AICPIN as on 1.1.2006.(অর্থাৎ ১.১.২০০৫ থেকে ১.১.২০০৬ পর্যন্ত প্রতি মাসের AICPIN এর গড়) যখন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করেছিল। সেই দিক দিয়ে হিসেব করলে যেহেতু জুন ২০১৭ র AICPIN হল ২৮০. সুতরাং DA হার হওয়া উচিত (280 - 115.76)*100/115.76 = 142% (approx). কেন্দ্রীয় সরকারের DAর হার exactly এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যদিও ইতিমধ্যে তারা তাদের সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশও কার্যকর করে ফেলাতে exact DA র হার নতুন করে হিসেব করা হচ্ছে ২০১৬ র নিরিখে(যেমন এর আগে পর্যন্ত হত ২০০৬ এর নিরিখে যার ভিত্তিতে আমরা এই ১৪২% পেয়েছি)। 

কিন্তু রাজ্যসরকার যেহেতু এখনও তাদের কর্মচারীদের ২০০৬ এর বেতন হারেই মাইনে দেয় এবং তাদের গঠিত ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ যেহেতু ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে, তাই মূল্যবৃদ্ধি সূচকের হিসাব ধরলে ১.৭.২০১৭ তারিখ থেকে কর্মচারীদের DA পাওনা হয় ২০০৬ সালের বেতন হারের উপর ১৪২%. বাস্তবে সেখানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তার কর্মচারীদের DA ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দিয়েছে ৮৫% হারে। অর্থাৎ ৫৭% কম। ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে আরও ১৫% DA দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও এই হিসেবে বকেয়া DA র পরিমাণ তবু থেকে যায় ৪২%. 

তাহলে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কেন কোর্টকে হলফনামা দিয়ে জানালেন যে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের DA কিছু বাকি নেই? অর্থাৎ কেন তিনি রাজ্য সরকারের হয়ে কোর্টকে মিথ্যা বললেন?

বললেন কারণ এইখানেই রাজ্য সরকারের অসততা। আমরা আগেই বলেছি যে ROPA 2008 সংলগ্ন memorandum no 1692-F অনুসারে রাজ্যসরকারের ঘোষিত সর্বোচ্চ DA র হার ছিল ১৬%. সেই হারে DA তো রাজ্যসরকার সত্যিই দিয়েছে এবং সময়ে সময়ে ঘোষিত আদেশ অনুসারে তার চেয়ে বেশি হারেই DA দিয়ে চলেছে। সেই যুক্তিতে রাজ্য সরকার আইনের ফাঁক খুঁজে আদালতকে বোঝাতে সচেষ্ট হয়েছে যে সমস্ত ঘোষিত DA ই তো দেওয়া হয়, তাহলে DA বকেয়া থাকার প্রশ্ন ওঠে কোথায়? অর্থাৎ কোনো DA বকেয়া নেই। 

তাই যদি হয়, তাহলে বলুন দেখি এর মধ্যে অসততা কোথায়? অসততা এইখানেই,  memorandum no 1692-F এর তারিখ যে ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯, এবং সেই তারিখে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত DA র পরিমাণ যে সেই একই ১৬%, অর্থাৎ রাজ্যসরকারি কর্মচারীদের DA ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত DA র হার যে অবশ্য বিবেচ্য, এই সত্যটা রাজ্য সরকার সুকৌশলে অগ্রাহ্য করে গেছে এবং কোর্টের কাছে অর্ধসত্য উপস্থাপনা করেছে। 

এছাড়াও রাজ্য সরকার আর একটি মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে বেমালুম চেপে গেছে। তা হল, ROPA rules এর সঙ্গে সংযুক্ত memorandum no 1691-F dated 23rd February, 2009 (অর্থাৎ সেই যেখানে ROPA rules 2009 এর অন্তর্গত কোনো খানে DA র ব্যাপারে কিছু বলা আছে সেই একই memorandum এ) প্রথমেই পে কমিশন গঠন করবার কারণ হিসাবে যে পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে, তার পাঁচ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে "to make recommendations on each of the above having regard inter alia to the prevailing pay structure under the Central Government, public sector undertakings & other State Governments etc..." অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারি বেতন কাঠামোর সাথে রাজ্য সরকারি বেতন কাঠামোর সাযুজ্য বজায় রাখার দায়িত্ব দিয়েই আদৌ বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। রাজ্য সরকার সেই কথাটুকু চেপে গিয়ে বরং highlight  করতে চেয়েছে সেই একই পয়েন্টে বলা শেষ কথাগুলি যেমন " ...the resources of the State Government & the demands thereon on account of the commitment of the State Government to developmental activities." তাই তারা বলতে চেয়েছে যে যেহেতু সমস্ত উন্নয়নমূলক দায়বদ্ধতা পূরণ করার পর, মানে মেলা, খেলা, উৎসব, ইমাম-মোয়াজ্জিন ভাতা ইত্যাদিতে খরচ করার পর, রাজ্য সরকারের হাতে যথেষ্ট resource বাঁচেনা তাই কর্মচারীদের DA দেওয়া সম্ভব নয়। এই যে নিজেদের সুবিধামত আংশিক সত্যকে চেপে গিয়ে বাকি আংশিক সত্যের উপর নির্ভর করতে চাওয়া এখানেই অসততা। 

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এইভাবে আইনের ফাঁক খুঁজে নিজের সুবিধামত 'কেস' সাজানো আসলে এক ধরনের মিথ্যাচার ও অপরাধমনস্ক ভাবধারা, যা ব্যক্তিবিশেষকে মানালেও কোন রাজ্য সরকারকে তা মানায় না।

তাছাড়াও, এই যে 'নিজেদের' সুবিধা চাওয়া, এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার প্রমাণ করে চলেছে যে তারা আর তাদের কর্মচারীদের 'নিজেদের' মধ্যে গণ্য করে না। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা তো জানি যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা রাজ্য সরকারেরই ওতপ্রোত ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাকরির শর্ত অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মীরা ২৪ ঘন্টাই তাঁদের কর্তব্যের জন্য দায়বদ্ধ। বা আরও ভালোভাবে বলতে গেলে বলা যায় সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সম্মিলিত সত্তাই হল রাজ্য সরকার। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য যে এখানকার মুখ্য জনপ্রতিনিধি সম্ভবতঃ রাজ্য সরকার বলতে বোঝেন শুধু সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারকে এবং সেই অপব্যবহার করবার ন্যায্য অধিকারী হিসেবে কেবলমাত্র নিজেকে। তাই তিনি রাজ্য সরকার এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রভেদ দেখতে পান এবং বিভেদ বুনতে চান। এ যেন অনেকটা কোনো বস্তুর থেকে তার সবকটি অণু পরমাণুকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েও সেই বস্তুটির অলীক অস্তিত্ব কল্পনা করার মত। 

তাই DA মামলা শুধু রাজ্যসরকারি কর্মচারীদের দাবীদাওয়া আদায়ের মামলা নয়। এই মামলা আসলে রাজ্য সরকারের বাস্তব ব্যবহারিক অস্তিত্ব ও রাজনৈতিক অলীক অস্তিত্বের মধ্যে লড়াইয়ের মামলা। এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের প্রত্যেক রাজ্যবাসীর স্বার্থ কারণ রাজ্য সরকারটা আমাদের, কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। রাজ্যসরকারের প্রত্যেকটি পরিষেবার ন্যায্য অধিকারী আমরা, সাধারণ রাজ্যবাসীরা এবং সেই পরিষেবা প্রদানকারী হলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাঁরা আমাদের নিযুক্ত কর্মচারী এবং মুখ্যমন্ত্রী আর কেউ নন, আপনার আমার মত সাধারণ মানুষেরই মুখ্য প্রতিনিধি মাত্র। এই সত্য যেদিন আমরা রাজ্যবাসী সাধারণ মানুষেরা বুঝতে পারবো, সেদিনের অপেক্ষায় আছি। 




যদি কেউ জানতে ইচ্ছুক থাকেন যে AICPIN এবং State wise CPIN গুলো বিভিন্ন সময়ে কেমনভাবে vary করেছে, তাহলে নীচের লিঙ্ক দেখুন। এ থেকে আমরা স্পষ্ট ধারনা পাই যে ALL INDIA CONSUMER PRICE INDEX আর আমাদের রাজ্যের CONSUMER PRICE  INDEX তুল্যমূল্য বরং রাজ্যের কিছু জায়গায় তা বেশি। দিল্লির থেকে তো সর্বত্রই বেশি। অর্থাৎ দেশের গড় মূল্যবৃদ্ধি সূচকের চাইতে আমাদের রাজ্যের মূল্যবৃদ্ধি সূচক কম কিছু নয়। 



সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮

পার্টি লাইন ~ অভিজিৎ চন্দ

কংগ্রেসের সঙ্গে কমিউনিস্টদের নির্বাচনী সমঝোতা হলে অচিরেই আকাশ লাল হয়ে উঠবে,
কেউ বলছেন পূব
কারোর মত পশ্চিম......

মধ্য চল্লিশের যুবক শামসুর সূর্যোদয় সূর্যাস্তের ইশারা চেনে, কারন মাঝের সময়টুকু সে যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে, স্রেফ টিঁকে থাকার লক্ষে।
ওর জীবনে বিজয় আর বিপর্যয় হাত ধরাধরি চলে.........

পার্টিকংগ্রেসে লাইন ঠিক হবে। ঠিক হবে ওরা দুজন, মানে পার্টি আর কংগ্রেস একসাথে থাকবে কি না।
যা দিনকাল...... ভিনধর্মের দুজন খোলা রাস্তায় হাত ধরে চলাই কঠিন......

মেদিনীপুরের একদা মাওবাদপ্রবণ গ্রামে সনাতন মাইতি স্কুলের দাওয়ায় প্রজাতন্ত্র দিবসের পতাকা তোলেন, ছাত্রদের লাইন ঠিক করেন আর আশৈশবলালিত অভ্যাসমত চিৎকার করেন,
এই দিন দেশের সংবিধান চালু হয়েছিল, তাকে আমাদের বুক দিয়ে রক্ষা করতে হবে......

সর্দার মুখ টিপে হাসে, যন্ত্রগণক একাগ্রচিত্তে মাথা গুণে যায়,
৬৯ এর ঙ
৪৭ এর ফ
৫৫ এর জ.........(য়)
৩১ এর ল..........(য়).....

শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

প্রজাতন্ত্র দিবস ~ সুশোভন পাত্র

- ভাগ্যের জোরে যে রাজনৈতিক দল দেশে ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছেন। দেশের মানুষ কোনদিনই তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা কে সম্মান করবে না। 'তিন' সংখ্যাটি অশুভ। তিরঙ্গা যতদিন জাতীয় পতাকা থাকবে, ততদিন মানসিক ভাবে খারাপ প্রভাব ফেলবে এবং দেশের ক্ষতি করবে ¹।  
কে বলে এমন অলক্ষণে কথা ? 'দেশদ্রোহী' কানাহাইয়া কুমার ? 'পাকিস্তানের স্পাই' উমর খালিদ ? না 'চিনের দালাল' সীতারাম ইয়েচুরি ? আজ্ঞে না ! গণপরিষদ তিরঙ্গা কে জাতীয় পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রতিবাদে, ১৪'ই অগাস্ট ১৯৪৭, এই কথা গুলো ফলাও করে ছাপা হয়েছিল সঙ্ঘের'র মুখপত্র 'দি অরগানাইজার'এ। এমনকি স্বাধীনতার ৫২ বছর অবধি, সঙ্ঘে'র হেড কোয়ার্টারে কোনদিন উত্তোলন করাই হয়নি তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা ² । 
- আমাদের সংবিধান পাশ্চাত্যের দেশগুলির বিভিন্ন নিবন্ধের দুর্বহ এবং বৈষম্যপূর্ণ সংকলনের জগাখিচুড়ি। জাতীয় লক্ষ্য, জীবন দর্শনের কোন পথনির্দেশই সংবিধানে নেই। কোন নিজস্বতাও নেই, কারণ গণ পরিষদের পণ্ডিতরা মনুস্মৃতির মত প্রাচীন ভারতের নৈতিক ও কার্যকরী আইন কে সংবিধানে জায়গা দেওয়ার প্রয়োজন বোধই করেননি।    
যে সংবিধানের সিঁড়ি বেয়ে প্রজাতন্ত্র আজ ৬৯-এ, সেই সংবিধান নিয়ে কাদের এমন মূল্যায়ন? কাদের এমন অনাসৃষ্টি? বিলক্ষণ নিশ্চয় 'কমিউনিস্টি'? আজ্ঞে না ! সংবিধান সম্পর্কে এই মূল্যায়ন স্বয়ং দ্বিতীয় সঙ্ঘ-চালক গোলওয়ালকারের, 'মনুস্মৃতি'কে সংবিধানের গৃহীত খসড়াতে মান্যতা না দেওয়ায় তাঁর 'বাঞ্চ অফ থটস' বইয়ে ২৩৮ পৃষ্ঠায় এভাবেই তুলোধোনা করেছিলেন গণ পরিষদ কে ³ ।   
তাই প্রজাতন্ত্র দিবসে, দিল্লীর রাজপথে, প্রধানমন্ত্রী যখন ঐ তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে, সংবিধান মেনে দেশ পরিচালনার নিখুঁত অভিনয় করেন; নাগপুরের রেশিম বাগের হেড কোয়ার্টারে তখন মোহন ভাগবত গোঁফের নিচে মুচকি হাসেন। আসলে মোহন ভাগবত আলবাত জানেন, তাঁদের ফ্যান্টাসি'র ঐ 'হিন্দুরাষ্ট্রে', সংবিধানের প্রস্তাবনা মেনে 'গণতন্ত্রের' বালাই নেই। 'ধর্ম নিরপেক্ষতা'-'সমাজতান্ত্রিক'-'প্রজাতন্ত্র'-'সামাজিক সমতা', -এসব ভারী শব্দ বন্ধের নাম ও নিশান নেই ⁴ । মোহন ভাগবত আলবাত জানেন, তাঁদের ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' আসলে ফ্যাসিস্ট'দের জন্যই টেলার মেড। তাঁদের ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' আসলে নাৎসি'দের জার্মানির কার্বন কপি।      
সঙ্ঘের গঠনতন্ত্রে ও কর্মপদ্ধতি'তে ফ্যাসিস্ট পার্টির বৈশিষ্ট্যই রুবারু। সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা হেডগাওকারের মতাদর্শ গত অভিভাবক বালকৃষ্ণ শিবরাম মুঞ্জে,  ১৯৩১'র মার্চে ইউরোপে গিয়ে একাধিক মিলিটারি স্কুল পরিদর্শন করেন। তাঁকে সবচেয়ে প্রভাবিত করেছিল রোমের বালিলা এবং আভংগুরাডিস্টি'র ফ্যাসিস্ট পার্টির ইয়ুথ অর্গানাইজেশন ⁵। মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাত সম্পর্কে মুঞ্জে ডাইরি তে লেখেন, "মুসোলিনির সাথে দেখা করে আমি অভিভূত। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে মুসোলিনি এবং তার ফ্যাসিস্ট পার্টির সম্পর্কে নানান সমালোচনা ও বিষোদ্গার শুনলেও, আমি তাঁদের মধ্যে আপত্তিকর কিছুই খুঁজে পেলাম না। বরং ভারতের মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিকাশমান জাতির ফ্যাসিস্ট সংগঠনই প্রয়োজন।" মুঞ্জের পরামর্শেই ফ্যাসিস্ট পার্টির ধাঁচেই সঙ্ঘ কে গড়ে তোলেন হেডগাওকার। ফ্যাসিস্ট পার্টির মতই, সঙ্ঘও ছয় থেকে আঠারো বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের সংগঠনে নথিভুক্ত করে। শারীরিক ব্যায়াম, আধা-সামরিক প্রশিক্ষণ, ড্রিলস-প্যারেড করে। আবাসিক শিবিরে উগ্র 'হিন্দুত্ব'র বীজ মস্তিষ্কে বপন করার সুচারু কর্মযজ্ঞ শুরু করে। এমনকি ফ্যাসিস্ট পার্টির হবুহু নকল করে খাকি হাফ প্যান্টও পরে ⁶। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতিগত শুদ্ধতার অজুহাতে নাৎসি সামরিক বাহিনী তদানীন্তন জার্মান অধিকৃত ইউরোপের ষাট লক্ষ ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের উপর 'হলোকাস্টের' ন্যক্কারজনক গণহত্যা সংগঠিত করেছিল ⁷ ⁸, গোলওয়ালকার তাঁর "উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইন্ড" বইয়ে সেই গণহত্যারও ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছিলেন "জাতি এবং তার সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা বজায়ে জার্মানি নিজেদের কে ইহুদী মুক্ত করে বিশ্বে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। বিশ্বে একমাত্র জার্মানি'তেই জাতি গর্ববোধ পূর্ণ মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হিটলার বুঝেছেন বিভিন্ন জাতি কে একসাথে নিয়ে এগোনো অসম্ভব। হিন্দুস্থানের জন্যও হিটলারের এই উদাহরণ দৃষ্টান্তমূলক। ⁹ " 
জার্মান লোকাচারে কথিত আছে, সঙ্ঘের হার্টথ্রব হিটলারে একবার নাটক দেখতে গিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েন। কারণ নাটকের ভিলেনেরও হিটলারের মত বাটারফ্লাই গোঁফ ছিল। অতএব, ভিলেন কে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে -হিটলারে আদেশ। গোয়েরিং বলেন "ফুয়েরার, ভিলেন যদি গোঁফটা কেটে দেয়?" হিটলার নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, "তাহলে গোঁফটা কাটার পর গুলি করে দিও। কেমন ?" 
তাই 'পদ্মাবতী' 'আই' কেটে 'পদ্মাবত' হওয়ার পরও, বেছে বেছে বি.জে.পি শাসিত রাজ্যে কর্নি সেনার বাঁদরামি দেখে অযথা অবাক হবেন না ¹⁰। সেদিন নাৎসি'র দেশে গোঁফ কেটে যেমন পার পান নি ভিলেন, তেমন আজকেও সঙ্ঘের দেশে 'আই' কেটেও পার পাবে না 'পদ্মাবতী'। কারণ, এই কর্নি সেনাপ্রধান লোকেন্দ্র সিং লাকভি'কেই তো ২০১৪'র লোকসভা নির্বাচনে রাজপুতে ভোটের জন্য বি.জে.পি তে আদর করে জায়গা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক রণকৌশলের প্রশংসার লুজ মোশেনে ভেসে গিয়ে মিডিয়া বলেছিল, "বিক্ষুব্ধ যশবন্ত সিংহ কে বি.জে.পি'র মাস্টার স্ট্রোক" ¹¹। 
আজ সেই মাস্টার স্ট্রোকের ফসল ঘরে তুলে তাঁদের ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র'র ¹² ট্রেলার দেখাচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার। যে ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' জাতি দাঙ্গায় মেতে থাকবে। যে ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' ধর্মের নামে মানুষ খুন করবে। যে ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' স্কুল বাসে ভাঙচুর করবে। যে ফ্যান্টাসি'র 'হিন্দুরাষ্ট্র' সিনেমা হলে আগুন জ্বালাবে। আর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ¹³, কর্নি সেনার উপদ্রব দেখে, প্রধানমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবেন। 
লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, সিট ব্যাক অ্যান্ড এনজয় দি লেটেস্ট ট্রেলার অফ 'হিন্দুরাষ্ট্র'। যে ট্রেলারে মূকাভিনেতা নরেন্দ্র মোদীর নীরবতাও হাজার কথা বলে। বলে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী বাক স্বাধীনতার পক্ষে নয় বরং দীপিকা'র নাক কাটার পক্ষে। বলে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে নয়, সঙ্ঘের নকশা করা 'হিন্দুরাষ্ট্র'র পক্ষে। বলে যে, প্রধানমন্ত্রী আসলে সংবিধান পক্ষে নয়, মনুস্মৃতির পক্ষে। বলে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে নয় কর্নি সেনার উপদ্রবের পক্ষে। লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, ম্যাডনেসও যেমন মেথড আছে, অন্ধকারেরও যেমন সৌন্দর্য আছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর নীরবতারও তেমন ভাষা আছে।













জোকার ও রিংমাস্টার ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী


কেন সহস্র ঢাকের আওয়াজ ঢালছ কর্ণপটাহে
পচা খাল ঢেকে উন্নয়নের ফ্লেক্সের কেন ঘটা হে?
রিং মাস্টার, অ্যাড দাও এত। দরকার কী এ' ভূমিকার?
ক্ষমতায় ভরা এই সার্কাসে আমরা তো জানি তুমি কার।

গণতান্ত্রিক ম্যাচ ফিক্সিং, দ্বন্দমূলক সন্ধি
ছলা কলা আর বয়কটবাজি, ট্যাবলো সাজানো ফন্দি।
চাণক্যে বলা সরল হিসেব বোঝা নয় তত শক্ত
জনতা নিজের মাপসই করে পাবেই তার শাসক তো।

গদিটা যখন পেয়েছ সে'টাকে কৌশলে থাকো আঁকড়ে।
প্রচার না করে হেরে গেছে যারা, বিলুপ্ত হয়ে যাক রে!
কিছু টি না পেয়ে ভুল বুঝেছিস, করেছিস মিছে গোঁসা কে?
ওই দ্যাখ রাজা… সবজান্তাটি সর্বহারার পোষাকে।

নীল সাদা নীল দশ দিগন্ত ভরল হুকুম নিনাদে
একে বিভূষন, তাকে সাইকেল, সরস্বতীকে বীণা দে।
ঋণের গল্পে ফের ঋণ নিয়ে তবু পড়ছে না বিপাকে
আমরা জোকার… মেনে চলি তার, শাস্তিমূলক কৃপাকে।

শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮

সৌন্দর্য? ~ অনির্বাণ মাইতি

আজ রাজারহাট ধরে ফিরছিলাম বাড়ির দিকে। রাস্তা জুড়ে আলো ঝলমল করছে দেখতে কি ভালো যে লাগে। জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে দেখছিলাম আলোর ঝর্ণা। রাস্তায় একটা জায়গায় গাড়ি একটু জ্যামে ফাঁসল। চোখ গেল একটা গাছের দিকে গাছটা ন্যুব্জ  হয়ে নীচের ছোট চারা গাছ গুলোকে যেন ঢেকে দিতে চাইছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ কানে এলো চারা গাছের কথা 
"আলো নিভবে না মা? ঘুম আসছে না যে"
মা গাছ ও উত্তর খুঁজতে রাস্তার দিতে তাকালো, পাতার মর্মর শব্দও কানে এলো। গাছটা যেন সোজা চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। উপলব্ধি করছে আলোর রোশনাই দেখে আমার মুগ্ধতা। তারপর আরো আরো ন্যুব্জ হয়ে চারাগুলিকে ছায়া দিতে দিতে যেন বলল "ঘুমাও আমি ছায়া দিচ্ছি, কিন্তু বাছা আমার, এই শহরে আলোয় ঘুমানো অভ্যেস করতে হবে তো" 

খারাপ লাগল গাছ আর তার ছানাদের কথা ভেবে। অনুভব করলাম আলোর মুগ্ধতাও যেন নিমেষে উধাও। কোনটা জরুরী বেশি, আলোয় ঝলমল শহর নাকি গাছের বিশ্রাম? সারাদিন আমাদের দূষণের ভার বইতে বইতে ক্লান্ত গাছগুলো কি এক ফোঁটা ঘুমাবে না? গাছ না বাঁচলে এই আলোগুলো আর জ্বালাবার দরকার হবে কি? জ্বালাবেই বা কে?

বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮

কংগ্রেস না বিজেপি ~ আর্কাদি গাইদার

সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম) এর কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং নিয়ে আপাতত বাজার গরম। 
কেন?
কারন সেই কেন্দ্রীয় কমিটি মিটিং এ আগামী সম্মেলনের জন্যে যে খসড়া প্রস্তাব ভোটাভুটিতে পাশ হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে।
যেমন,
১)বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপিকে ভারতের ক্ষেত্রে প্রধান শত্রু চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পেছনে যে কারন দেখানো হয়েছে তা হলো - বিজেপি ভারতের নাগরিকদের ওপর অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক আক্রমন নামিয়ে এনেছে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে। নিওলিবারাল পলিসির নোংরাতম রুপ তারা বাস্তবায়িত করছে একের পর এক, এবং অর্থনীতি এবং বিদেশনীতি, দুই ক্ষেত্রেই দেশকে বিদেশীদের হাতে বেচে দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জা করে তাদের একে একে দূর্বল করছে, গনতন্ত্র এবং ভাবনা ও চেতনার স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে। এ ছাড়াও একটা সামগ্রিক সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী কর্মসূচীর রুপায়ন তারা করছে, যাতে তাদের অর্থনীতির নোংরা অভিমুখ থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে রাখা যায়, এবং যা দেশের অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে ঝুকির মুখে ফেলছে।
২)এই প্রধান শত্রুকে পরাস্ত করবার লক্ষ্যে কংগ্রেসের সাথে কোনরকম জোট করা যাবে না। আগামী দিনে বামপন্থীদের নিজেদের বিকল্প অর্থনীতি এবং সমাজব্যাবস্থার কথাকেই সামনে রেখে লড়াই আন্দোলন গড়ে তুলে এককভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে, তাহলেই বিজেপিকে টক্কর দেওয়া যাবে, এবং পরাস্ত করা যাবে। 

আপাতত যারা যারা এই নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, তাদের বোঝাপড়ার জন্যে একটু প্রক্রিয়া সংক্রান্ত জ্ঞান দিতে চাই। এটা হলো খসড়া প্রস্তাব। প্রতি তিন বছর অন্তর পার্টির যে সম্মেলন হয়, সেখানে এই প্রস্তাব পেশ করা হবে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত করে পাঠানো ডেলিগেটদের কাছে। তার আগেও, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে, এই খসড়া ছাপিয়ে বা ইন্টারনেটে সবার পড়বার জন্যে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে, আপনি যেই হন, মানে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি, টিএমসি, পুরুষ, মহিলা, ছাত্র, পুলিশ, আপনার মূল্যবান মতামত বা কোন সংশোধনী চিঠি লিখে বা ইমেল করে পাঠাতে পারেন। যদি কেন্দ্রীয় কমিটির মনে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বা গুরুত্বপূর্ন কোন বক্তব্য আছে, তাহলে তা প্রস্তাবে যোগ করা হবে বা পালটানো হবে। সম্মেলনের সময় এই প্রস্তাব পেশ করা হবে। ডেলিগেটরা তাই নিয়ে আলোচনা করবেন। ভোটাভুটিতে সংখ্যাধিক্যের নিরিখে সেই প্রস্তাব এই আকারে বা কিছু বদল এনে পেশ করা হবে। অর্থাৎ উপরোক্ত দুটি গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টই সম্মেলনের মঞ্চে পুরোপুরি পালটে যেতে পারে।

আপাতত আমার আলোচনা সিপিআই(এম) বা এই প্রস্তাবের পয়েন্টগুলো নিয়ে না। তা ঠিক না ভুল তা সময় বলবে। Nothing succeeds like success, nothing fails like failure.
আমার আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী বা লিবারাল বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে সংবাদপত্রে, মিডিয়ায় বা ওয়েবে লম্বা লম্বা লেখা ছাপিয়ে বকাবকি শুরু করে দিয়েছেন, যে এই প্রস্তাব কতটা অবাস্তব, এবং একেবারেই প্রায়োগিক না। তাদের বক্তব্য, বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে লড়তে হবে, বা সমর্থন জানাতে হবে, নাহলে বিজেপিকে কিছুতেই হারানো যাবে না। 
যেটা অদ্ভুত, সেটা হলো, এই একই বুদ্ধিজীবীরা একদা ইউপিএ সরকারকে সমর্থন জানানোর জন্যে সিপিএমকে তীব্র আক্রমন করেছিলেন। তারা বলেছিলেন এটা মেকি বামপন্থা, সংশোধনবাদ,  শাসকশ্রেনীর সাথে আপস, শ্রেনী সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, ইত্যাদি। ২০১৬তে বাংলায় কংগ্রেসের সাথে জোটকেই এরা সুবিধেবাদী, আদর্শবর্জিত, নীতিহীণ আখ্যা দিয়েছিলেন। আজকে হঠাত করে এনাদের মতামত পালটে গেছে। কেন? কারন আজকে এনাদের যে আপাত নিরাপদ পরিসর, তা আক্রান্ত। এনাদের মনে সত্যিকারের ভয় ঢুকেছে। তাই আপাতত এনাদেরই কথিত নীতি আদর্শকে সম্পূর্নরুপে ভুলে এনারা যেনতেন প্রকারে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসকে জেতাতে চান। যেই শ্রেনীসংগ্রামের কথা এনারা বলেন, তা যে আদতে স্রেফ নৈশভোজের কথোপকথনে পাঞ্চলাইন, তা স্পষ্ট। কারন আপামর জনগন, তাদের কাছে যে শোষন এবং শ্রেনীসংগ্রাম সত্য, তা তো কংগ্রেস জিতলে শেষ হয়ে যাবে না। তাহলে একটি কমিউনিষ্ট পার্টি নিজেদের আগামীদিনের কর্মসূচী কেন স্রেফ বিজেপিকে হারানো আর কংগ্রেসকে জেতানোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করবে? তারা তো নিজেদের স্বতন্ত্র বৃদ্ধির স্বার্থেই চাইবে যে সত্যিকারের বিকল্পের কথা এই সুযোগে মানুষকে জানানোর, তাদেরকে ব্যাপক আকারে গনআন্দোলনে যুক্ত করা, এবং অর্থনীতির প্রশ্নকেই প্রধান করে সামনে তুলে ধরা। আর যদি বিজেপিকে হারানোর ক্ষেত্রে লক্ষ্য একমাত্র কংগ্রেসকে জেতানো হয়, তাহলে আলাদা পার্টির দরকার কি? সবার তো কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে যুক্ত হয়ে কংগ্রেসকেই শক্তিশালী করে তোলা বেশি যুক্তিযুক্ত অবস্থান হবে। এই বুদ্ধিজীবীরাই সেটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। বামপন্থা তো কোন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট না, যে সেই তকমা গায়ে না থাকলে, একটা বিশেষ সামাজিক পরিসরে প্রেস্টিজ বা সোশ্যাল ক্রেড থাকবে না। নাকি এনাদের কাছে বামপন্থা তাই?

আমাদের সমস্যা হলো যে বিজেপি বিরোধীরা এরকম সংগতিহীন অবস্থান নেন এবং সেটা মানুষের কাছে ভন্ডামি হিসেবে উপস্থাপিত করতে বিজেপির সুবিধে হয়। 

সংঘ পরিবার একটি behemoth. এই প্রথমবার তারা তাদের এজেন্ডাকে সম্পূর্নরুপে দেশের সামনে উন্মুক্ত করে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে। তাই লড়াইটা শুধু ২০১৯ এ তাদের হারানোর লড়াই না, লড়াইটা তাদের এই দেশ থেকে সম্পূর্নরুপে নিশ্চিহ্ন করবার। শত্রুকে চিহ্নিত করবার সাথে সাথে অত্যন্ত জরুরী তার শক্তিকে চিনতে পারা। যতদিন এই দেশের কোন কোনে একটিও আরএসএসের শাখা থাকবে, ততদিন বিজেপি জীবিত থাকবে। তাদের ধ্বংস করবার এই লড়াই দীর্ঘমেয়াদি লড়াই, কঠিন লড়াই, হয়তো অনন্তকালের লড়াই। কিন্তু ২০১৯ এ তাদের হারিয়ে যে এই লড়াই থামবে না তা নিশ্চিত। তাই যারা এই লড়াই সত্যি সত্যি লড়তে চান, তারা আম্বানির কথিত 'আপনি দুকান' কংগ্রেসের সাথে কাধ মিলিয়ে আগামী দিনের নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা, নিজেদের ভিত্তি দূর্বল করবেন কিনা, তাই নিয়ে ভাবুন। দীর্ঘসময় নিয়ে ভাবুন। সাংঘাতিক সংকটময় পরিস্থিততে পড়লে আমরা আতংকিত হয়ে ততকালীন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। কিন্তু যে কোন সিদ্ধান্তের রেশ কিন্তু দীর্ঘদিন রয়ে যায়। ২০১৯ এ গুরুত্বপূর্ন লড়াই। কিন্তু শেষ লড়াই না। আগামী ৫ বছরের কথা ভাবুন। বা ১০ বছর। বা ৫০ বছর। ভাবুন।

সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৮

বাজারী সম্পাদকীয় ~ রেজাউল করীম

আনন্দবাজার ধ্বজাধারী বাজারি কাগজ। বাজার অর্থনীতি তার নিয়ামক। মুনাফাখোর এই কাগজ বোঁচকাবৃদ্ধির জন্য কত নীচে নামতে পারে তার প্রতিযোগিতা করছে। হরিশ মুখার্জিরা কাগজ প্রকাশ করেছিলেন জনশিক্ষার জন্য। বাজারি কাগজ অর্থের জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করে দেয়, সত্য ও ন্যায়ের মত অলীক স্বপ্নের জন্য শব্দ খরচ তারা করবে না জানি। একজন চিকিৎসককে কুৎসিত আক্রমণ  করে শাসকের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য কত নীচ হতে পারে তা আনন্দবাজার তার নিত্যনতুন নজীর সৃষ্টি করছে। সঞ্জয় রায়ের ঘটনার  সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে কয়েকটি জিনিস মনে রাখা দরকার। 1) পরপর অনেকগুলি সরকারী হাসপাতাল কেন তাকে ভর্তি নেয় নি?  2) বেসরকারী হাসপাতালে কী উপায়ে তিনি জীবিত ছিলেন?  ও 3) সরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরের অবব্যহিত পর কেন তিনি মারা যান? সরকারের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তকারী দিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা।
সাম্প্রতিক আমরি কাণ্ডে চিকিৎসককে দায়ী করে  আনন্দবাজার সম্পাদকীয় লিখেছে। চিকিৎসক ছুটি কাটাচ্ছেন আর শিশুর মা শোকে কাতর  এই মন্তব্য করে আনন্দবাজার প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসকদের  বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, শিশুটির মা চিকিৎসককে দায়ী করে কিছু বলেছেন বলে জানা নেই। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেও চিকিৎসায় গাফিলতির কোন প্রমান নেই। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শিশুটির প্রাথমিক সমস্যার দ্রুত নিরাময় করেছিলেন। ফেব্রাইল কনভালসানের পরবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। একজন চিকিৎসক যিনি সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন তার কি সমাজের কাছে এটাই প্রাপ্য? আনন্দবাজার কি কখনো এই প্রশ্ন করেছে:১) কেন এই রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে ওঠে নি। ২) এ রাজ্যে ২৫০০০০ বেড দরকার। কেন তার মাত্র অর্ধেক আছে ? ৩) এ রাজ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা এত কম কেন? এখানে চিকিৎসক:রোগীর অনুপাত মাত্র ১: ১৭৫০ কেন?  ৪) কেন রোগীর ব্যক্তিগত খরচ ৮০%?  ৫) কেন সরকারী আমলা মন্ত্রী বা ভুঁইফোঁড় এম পি দের জন্য বেসরকারী হাসপাতালের বিলের টাকা সরকার মেটায় আর গৌতম পালদের সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ মেটাতে হয়!! আনন্দবাজার কী কখনো এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে কেন জনদরদী সরকার থাকা সত্বেও বেসরকারী হাসপাতাল গড়ে ওঠে আর শাসকদলের সাংসদরা সেইসব হাসপাতালে সরকারী খরচে যতদিন খুশি ভর্তি থাকেন? তাদের বেশিরভাগ কোথা থেকে সেই বিপুল খরচ বহন করেন যখন রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ লোক চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর নতুন করে দরিদ্র হচ্ছেন? 
যে আনন্দবাজার চিকিৎসকদের নৈতিক মান নিয়ে নানা প্রশ্ন করে তাদের কাগজের বিজ্ঞাপন পাতা কেন হাতুডে চিকিৎসকদের বিজ্ঞাপনে ভর্তি তার জবাব দিতে পারবে? তারা একদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে একটা কথা খরচ করার সাহস দেখাবে না, নিজেদের কাগজের পাতায় পাতায় অনৈতিক ব্যবসার নজির রাখবে আর চিকিৎসকদের বিচারালয় খুলে বসবে এই অন্যায় মেনে নেওয়া যাবে না। একজন চিকিৎসক দায়ী কিনা তা আনন্দবাজার ঠিক করবে না মেডিকেল কাউন্সিল ঠিক করবে? কোন অধিকারে আনন্দবাজার চিকিৎসকের বিশ্রাম নেওয়ার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে? চিকিৎসক কি ভগবান যে ইচ্ছা করলেই  মৃত্যুকে রোধ করতে পারে? সে তার সাধ্যমত চেষ্টা করেও অনেককে বাঁচাতে পারে না কিন্তু তাই বলে কেউ মারা গেলেই চিকিৎসককে আসামীর কাঠগডায় দাঁড় করিয়ে সংবাদপত্রে অন্যায় বিচার বন্ধ হোক।
চিকিৎসকদের ও ভাবতে হবে পয়সা খরচ করে এই জঘন্য সাংবাদিকতার নজির তারা ক্রয় করবেন না উদয়াস্ত পরিশ্রম শেষে সেই সময়ে নিজের পরিবারকে সময় দেবেন!! 


সরল গণিত বীজ ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

গুন্ডা কন্ট্রোল X শবসাধনা + মোমবাতি ( হাড়হিম আলো কাঁপা কাঁপা)
= রাজত্ব + গুন্ডা পুনর্বাসন (সিভিক, যা আদতেই ফাঁপা)
= মৃত্যু - মোমবাতি + সতর্ক ধামাচাপা
এই যে সরল অঙ্ক, 
এ' সমীকরণে আর কেউ নই ভীত
দু'পাশেই মোমবাতি। তুমি হে বিদ্দ্বজ্জন, 
একপ্লাসে প্লাস চিহ্নে … অন্যপাশে মাইনাসে শোভিত
আর যে শুয়েছে মাঝে লাশকাটা ঘরে
গায়ে প্রহারের দাগ, বালকের খুলিতে গুলির

চলছে উৎসব ঋতু রসগোল্লা পিঠে ও পুলির
টুনি বালবে ঝলমলে, ভিক্ষের ছদ্মবেশে নানাবিধ 'শ্রী'তে
তুমি তো কবেই গেছ জ্যাকপট জিতে

তোমার অমনোযোগে, 
দেখে তবু না দেখার এ' অবহেলায়
দুঃখী মোমবাতি শিল্পে মন্দা নেমে যায়

বিদ্দ্বজ্জন, তাই করব তুমি যা যা চাও
রসে বশে আছো বুঝি
তবু এসো। রুগ্ন এই শিল্পকে বাঁচাও…

শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৮

নিজামুদ্দিন আউলিয়া ও বসন্ত পঞ্চমী ~ নয়না চৌধুরী

বসন্ত বা বসন্ত পঞ্চমী, যা দেশের নানা জায়গায় পালন করা হয় নানা ভাবে, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাতেও এক বিশেষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।  বেশ মজার ব্যাপার, তাই না? আর এরও মূলে সেই খুসরো বুড়ো! গল্পটা বলি? 

নিজামুদ্দিন নিজে বিয়ে করেন নি কিন্তু তাঁর বোনের ছেলে তাকীউদ্দীন নূহ কে তিনি বিশেষ স্নেহ করতেন।  এটাও মজার কথা! সুফী সন্তদেরও আমাদের মতো ভালোবাসা? তা ছিল বই কি ! নিজামুদ্দিন বলতেন, ইশ্ক (প্রেম), অকল (বুদ্ধি), আর ইল্ম (জ্ঞান) এই তিনটের মিশ্রণই সুফী হবার মূল কথা।  আর এর মধ্যে প্রথমটার মাত্রা অনেকটা বেশি ছিল বলেই তাঁর নাম, "মেহবুব এ ইলাহী" (প্রেমের ঈশ্বর)! যাই হোক দুর্ভাগ্যক্রমে এই তাকীউদ্দীন কয়েকদিনের অসুখে হঠাৎ মারা যান এবং নিজামুদ্দিন এতে খুবই ব্যথিত হন।  দীর্ঘদিন তাঁর মুখে হাসি ফোটে না।  তিনি তাঁর চিল্লায় (ধ্যান করার জায়গা) বসে থাকতেন এবং তাঁর শিষ্যরা বিশেষত খুসরো তাঁকে নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।  

এমন সময় এক দিন খুসরো দেখেন মহিলারা হলুদ শাড়ি পরে, হলুদ ফুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে, হাসতে হাসতে কোথাও যাচ্ছে।  তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে বসন্ত এসে গেছে, শীত শেষ।  তাই তারা নিজেদের আরাধ্য দেবতাকে পুজো দিতে যাচ্ছে।  খুসরো জিজ্ঞাসা করেন, এই বেশ ভূষা ও ফুল দেখলে কি তাদের দেবতা খুশি হবেন? তারা হ্যাঁ বলাতে, খুসরো তাড়াতাড়ি হলুদ শাড়ি পরে আর হলুদ সর্ষের ফুল নিয়ে নিজামুদ্দিনের কাছে গান গাইতে গাইতে পৌঁছান
 "সকল বন্ ফুল রহি সরসো/ অম্বুয়া বোরে, তেসু ফুলে / কোয়েল কুকে দর দর/ অউর গোরি করত শৃঙ্গার " 

নিজামুদ্দিন নিজের প্রিয় শিষ্যর এই বেশ ভূষা আর চেষ্টাতে হেসে ফেলেন।  সেই থেকে বসন্ত বিশেষ দিন নিজামুদ্দিন এর খানকা এবং দরগাতে। 

নিজামুদ্দিন মারা যাবার পর ৭০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর আজও চলছে সেই পরম্পরা।  গান এর লিংকটা দিলাম:



আর এবারকার বসন্ত এর আমন্ত্রণও (ছবিতে দেখো)।  যে যে যেতে চাও দেখে এস।  ওই দিন সবাই হলুদ জামা কাপড় পড়বে।  আর হলুদ ফুল দেবে।  আর ওই একদিনই নিজামুদ্দিন এর দরগার ভেতরে কাওয়ালি হবে।  মানে জালিরও ভেতরে।  উঠোনে নয়।  কাওয়ালরা হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাইবেন সেদিন... আহা কি আনন্দ! 


সোমবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৮

জঙ্গ রহেগি ~ সুশোভন পাত্র

বেসিক্যালি আপনি হয়ত 'অ্যাপলেটিক্যাল'। মানে গাছেরও খান, তলারও কুড়ান। আদা আর কাঁচকলা দুটোই আপনার সমান পছন্দের। আপনি সাপের মাথাতেও চুমু খান, নেউলের গায়েও হাত বোলান। আপনার বাথরুমের পাশে স্টার-জলসা। আর জীবন মানেই জি-বাংলা। 
অক্টোবরে কৃষক ধর্মঘটে স্তব্ধ হয়েছিল রাজস্থান  -কিন্তু আপনি তো কৃষক না  ¹। ডিসেম্বরে শ্রমিক'দের নূন্যতম মজুরির দাবীতে অবরুদ্ধ হয়েছিল দিল্লির পার্লামেন্টে স্ট্রিট  -কিন্তু আপনি তো শ্রমিক না ² । বেমক্কা নোট বাতিল আর জি.এস.টি তে মাথায় হাত পড়েছিল দেশের ছোট-মাঝারি ব্যবসিক'দের, -কিন্তু আপনি তো আবার ব্যবসিক না ³ । আর আজকে যখন দলিত বিক্ষোভ উত্তাল মহারাষ্ট্র ⁴ তখন আপনি সিগারেটের ধোঁয়ার পিছনে দুটো ইংলিশ গুঁজে বলেছেন -"ডার্টি পলিটিক্স। দিস হোল ব্লাডি সিস্টেম ইস ক্র্যাপ।" বেসিক্যালি আপনি তো 'অ্যাপলেটিক্যাল'। মোটা দাগে আপনি 'নিরপেক্ষ'। আপনি তো আর 'দলিত' না! 
ভাগ্যিস আপনি 'দলিত' না। হলে বুঝতেন, আজকের 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' কিম্বা আড়াইশো বছর আগের পেশোয়া'দের ব্রাহ্মণ্যবাদী মারাঠা সাম্রাজ্য -দলিতের নসীব বদলায়নি। পায়ের ছাপে আর থুতুতে পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার ভয়ে দলিত'দের সেদিনও কোমরে ঝাঁটা আর গলায় কলসি বেঁধে 'ভদ্দর-লোকের' গ্রামে ঢুকতে হত ⁵। আর আজও খরা কবলিত মহারাষ্ট্রে 'উচ্চবর্ণ'র দুয়ারে জল আনতে গিয়ে দলিত বৌ'দের বেশ্যা বৃত্তি করতে হচ্ছে ⁶।  ডিজিটাল দাদা। এক্কেবারে ষোলআনা ডিজিটাল। 
সেদিন পেশোয়া'দের প্রবল সামাজিক বঞ্চনার ইতি টানতে ১৮১৮'র পয়লা জানুয়ারি ভীমা নদীর তিরে কোরেগাঁও'এ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী'দের পক্ষ নিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু দলিত মাহার যোদ্ধা বিশাল পেশোয়া সেনা কে পরাস্ত করে। ১৯২৭'এ আম্বেদকার, কোরেগাঁও'এ ব্রিটিশ'দের নির্মিত মহারা যোদ্ধা'দের শহীদ স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাবার পর প্রতি বছর দলিতরা কোরেগাঁও'এ পূর্বসূরি'দের বীরত্বের স্মরণে বিজয়োৎসব পালন করে ⁷। হিন্দু'দের অমরনাথ যাত্রা কিম্বা মুসলিম'দের হজের মতই; জলের কুমীর পেশোয়া'দের বিরুদ্ধে ডাঙ্গার বাঘ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ'দের পক্ষে যুদ্ধ জয়ে আদেও কোন গৌরব গাঁথা আছে কিনা সে বিতর্ক ব্যতিরেকেই দীর্ঘদিনের এই বিজয় সম্মেলন কে আগে কোনদিন উগ্র হিন্দুত্ববাদী'দের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়নি ⁸। এবার হয়েছে। নেপথ্যে সঙ্ঘের আদর্শপুষ্ট সাম্বাজি ভিড়ে এবং মিলিন্দ একবোটে। পুলিশে অভিযোগ ও উপযুক্ত প্রামাণ্য নথি থাকলেও গ্রেপ্তার হননি কেউই ⁹। অবশ্য হওয়ার কথাও ছিল না। কারণ, ২০১৪'র নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদী ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন সাম্বাজি ভিড়ে'র  আর দেবেন্দ্র ফডনবিশের নির্বাচনী প্রচারে সফরসঙ্গী ছিলেন মিলিন্দ একবোটে। অতএব আমার গল্প ফুরল। নটে গাছটি মুড়ল¹⁰। 
আসলে মোহন ভাগবত'দের রাম-রাজত্বে দলিত'দের উপর আক্রমণ সঙ্ঘ পরিবারের জাতপাতে বিভক্ত 'হিন্দুরাষ্ট্র' গড়ার আস্ত একটা 'মোডাস অপারেন্ডি'। এই সঙ্ঘ'রই মুখপত্র 'অরগানাইসার' সেদিন প্রবল জাতপাতবাদী 'মনুস্মৃতি'কে সংবিধানের গৃহীত খসড়াতে মান্যতা না দেওয়ায় তাবড় সম্পাদকীয় ছেপে গণপরিষদ কে তুলোধোনা করেছিল¹¹। এই সঙ্ঘেরই দ্বিতীয় সংঘচালক, বর্ণবাদী গোলওয়ালকার 'বাঞ্চ অফ থটসের' দশম অধ্যায়ে সগর্বে লিখেছেন, "জাতিভেদ প্রথা আসলে দেশের দুর্বলতা নয়, শক্তি ¹² ।" সেই  ব্রাহ্মণ্যবাদী গোলওয়ালকার যার মতে নাকি, "শঙ্কর প্রজনন পদ্ধতিতে, প্রভূত লাভ হতে পারে মনুষ্য প্রজাতির। কেরলে নাম্বুদিরি ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রথম সন্তান সব সময় নিম্নবর্ণের মেয়ের সাথে বিবাহ করবে এবং সন্তানের জন্ম দেবে। এইসব সন্তানেরা নাম্বুদিরি বামুনদের গুণাবলী তাদের পিতার থেকে পাবে। কেরলের যে কোনও জাতের, যে কোনও বিবাহিত মহিলা, তার বিবাহ অন্য যার সাথেই হোক, সেই মহিলার প্রথম সন্তান যেন নাম্বুদিরি বামুনদের ঔরসজাত হয় ¹³ ।" এমন গুণধর গুরুদেবের চ্যালা নরেন্দ্র মোদী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন শুধু দলিত বলে পুলিশ'দের জুতো একটু চাটতে হবে বৈকি ¹⁴ । 
নরেন্দ্র মোদী সেই বিজেপি'র প্রধানমন্ত্রী, যে বিজেপির ২০১৪'র নির্বাচনী ইশতেহারে ফলাও করে লেখা হয়েছিল "দলিত'দের বি.পি.এল থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কার্যকরী ভূমিকা নেবে। স্পেশাল ফান্ডের মাধ্যমে দলিত'দের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে ¹⁵।" অথচ এন.সি.ডি.এইচ.আর'র তথ্যানুসারে স্পেশাল কম্পোনেন্ট প্ল্যানে দলিত'দের জনসংখ্যার অনুপাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১,৩৩,৬৬২ কোটি থেকে কমিয়ে ৮৪,৩১৩ কোটি করা হয়েছে। দেশজোড়া দলিত ছাত্র-ছাত্রী'দের স্কলারশিপ বাবদ বকেয়া বর্তমানে ১১,২৬৭ কোটি। লেখা হয়েছিল "মেথর'দের ময়লা পরিষ্কারের কাজ থেকে মুক্ত করে অস্পৃশ্যতা মুছে ফেলতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। আর বাস্তবে, ২০১৭-১৮'র বাজেটে মেথর'দের পুনর্বাসনের বরাদ্দ বিজেপি সরকার ১০কোটি থেকে কমিয়ে অর্ধেক করেছে ¹⁶। অস্পৃশ্যতা মুছে ফেলা তো দুরস্ত, বিজেপির হার্টথ্রব ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশের গঠিত কমিশন বলছে গো-রক্ষা বাহিনীর বদান্যতায় দেশে দলিত'দের উপর আক্রমণ বেড়েছে ১৭% ¹⁷।  
আপনি যখন নিরপেক্ষতা-নিরপেক্ষতা খেলছেন, তখন দলিত'দের ভাতে এবং পাতে মারার জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার নতুন ইতিহাস লিখছেন মোদী-ভাগবত। সে আপনি যতই 'নিরপেক্ষ' আর 'বর্ণ ব্যবস্থা'য় আপনি যতই পৈতেধারী নিখাদ ব্রাহ্মণ কিম্বা দত্ত-ঘোষ-পাল-পুরকায়স্থ হন না কেন, এই 'আর্থিক ব্যবস্থায়' আপনিও ঐ 'দলিত'ই। সরকারী পরিকাঠামো এক্কেবারে নিচের সারিতে। যে সারিতে আপনার রেশনে চিনি আসে না। ফসলের ন্যায্য দাম জোটে না। নূন্যতম মজুরিতে হাত লাগে না। পি.এফ'র সুদ বাড়ে না। অর্থনীতির মার্কা মারা 'ট্রিকল ডাউন' থিওরি মেনে যে যাজকতন্ত্রে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে আপনি বঞ্চিত, যে যাজকতন্ত্রে আপনি'ই 'অস্পৃশ্য', সেই যাজকতন্ত্রেরই এক্কেবারে শীর্ষে বসে আছেন আম্বানি-আদানি। যাদের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্সে ছাড় আছে। এন.পি.এ'তে মাফ আছে। এফ.আর.ডি.আই'র আতিশয্য আছে। দেশে মদ বিক্রি করে বিদেশে পালানোর ব্যবস্থাও আছে। আর এদের পা চেটেই মুখের জেল্লা বেড়েছে নরেন্দ্র মোদী'দের। এদের "মালাই খেয়েই পেটে চর্বি জমেছে মোহন ভাগবত'দের"। 
তাই জাতির-ধর্মের নামে মানুষ লেলিয়ে দেশ বিক্রি বন্ধ হওয়া অবধি এদের বিরুদ্ধে আমাদের জঙ্গ রহেগি। কৃষকের ফসলের দাম, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, বেকারের পেটে ভাতের জন্য আমাদের জঙ্গ রহেগি। সঙ্ঘের বাই-প্রোডাক্ট বিজেপি'র আদর্শ কে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা অবধি জঙ্গ রহেগি। মোহন ভাগবত'দের পেটে জমা চর্বি গলা অবধি জঙ্গ রহেগি। নরেন্দ্র মোদীর'দের আম্বানি-আদানি'দের পা চাটা বন্ধ হওয়া অবধি জঙ্গ রহেগি। মিত্রোঁ, মেরি ক্রিসমাস তো তব হোয়েগি। হ্যাপি নিউ ইয়ার তো তব আয়েগি।




















শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৮

লাল পতাকা ~ আর্কাদি গাইদার

রাক্কা (Raqqa), সিরিয়া।

একদা আইসিসের রাজধানী।

কমিউনিষ্টদের ভলান্টিয়ার বাহিনীর দ্বারা আইসিসের হাত থেকে স্বাধীনতা পেয়েছে।

এই বাহিনীর নাম International Freedom Battalion (IFB). ইউরোপ এবং বাকি দুনিয়ার থেকে ভলান্টিয়ার হিসেবে আসা বিভিন্ন কমিউনিষ্ট ও বামপন্থী পার্টির সদস্যদের নিয়ে তৈরি। গত শতাব্দীর স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন গোটা পৃথিবী থেকে কমিউনিষ্ট পার্টির ভলান্টিয়ারদের নিয়ে তৈরি হয়েছিলো International Brigades. 

আন্তর্জাতিকতাবাদের সেই ঐতিহ্যের ধারা বয়ে চলেছে সিরিয়াতে। আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইতে। 

কুর্দিশ মিলিশিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে লড়েছে জার্মানি, ইউনাইটেড কিংডম, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়ার IFBর কমরেডরা। 

হ্যা,  আমাদের শত্রুরা যখন আমাদের বদনাম দেয় তখন তারা সত্যি বলে। আমরা আন্তর্জাতিকতাবাদী। সংকীর্ণ কৃত্রিম জাতীয়তাবাদের বাইরে বেরিয়ে লড়াই করি বলে আমরা গর্বিত।

তাই  যখন কেউ কেউ দম্ভের সাথে বলে - 'ভারতের ১৯টি রাজ্যে আমরা ক্ষমতায়', তখন আমরা মুচকি হাসি।

হাসি, কারন পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশে, প্রত্যেকটা শহরে, প্রত্যেকটা গ্রামে, কোথাও না কোথাও, হয়তো ফ্যাক্টরির গেটের সামনে ঝলমল করে, বা ভেঙে পড়া কুড়ে ঘরের টালির ছাদের ওপর শীর্ণ ন্যাকড়ার মতন, একটুকরো কাপড় উড়ছে। হিটলারের বার্লিনের রাইখস্ট্যাগের ওপরে, বা আইসিসের রাক্কার ওপরে এই একটুকরো কাপড় উড়ছে।  এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা কোনে আমার পার্টির পতাকা উড়ছে।