শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭
এফ আর ডি আই বিল ~ পুরন্দর ভাট
মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭
"হিন্দু রাষ্ট্র' ~ পুরন্দর ভাট
শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭
কর্পোরেট মিডিয়া ও শ্রমিক স্বার্থ ~ সুশোভন পাত্র
মিত্তির মশাই'র সরকারী চাকরি আছে। ই.পি.এফ আছে; মেডিক্লেম আছে। একটা মিউচুয়াল ফান্ড আর দুটো এল.আই.সি আছে। ছুটির দিনে সর্ষে ইলিশের জোগাড় আছে।
মিত্তির মশাই'র সেদিন বড্ড ভোগান্তি গেছে। পার্লামেন্ট স্ট্রিটে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে আধ-ঘণ্টা ট্রাফিকে কেটেছে। অ্যাটেন্ডেন্স রেজিস্টারে সই করতে গিয়ে বড় বাবুর টিপ্পনী হজম করতে হয়েছে। আসন্ন প্রমোশনে সঙ্কট মোচনের কথা ভেবে রাতে তিনবার বেশি পাশ ফিরতে হয়েছে। মিত্তির মশাই তাই বেজায় চটেছেন। স্মগে ডোবা সান্ধ্য আড্ডায় খাকিয়ে বলেছেন
- যতসব মিছিল-মিটিং। ডিসগাস্টিং পলিটিক্স। রবিবার কর, ছুটির দিন দেখে কর, আপিসের দিনগুলো বাদ দিয়ে কর। বলি, তোদের কাজ নেই বলে কি কারও নেই? সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধাটা একবার ভাববি না ?
ব্যাসিক্যালি মিত্তির মশাই ঠিকই বলেছেন। ১৩৫ কোটি ৫০ লক্ষ'র তামাম ভারতবর্ষে ৪৮.৭ কোটি শ্রমিকের, অনেকেরই হাতে 'কাজ নেই', পেটে ভাত নেই। অনেকেরই প্রতিদিন 'রবিবার', প্রতিদিনই 'ছুটির দিন।' সেদিক থেকে মিত্তির মশাই'রা 'প্রিভিলেজড'। প্রিভিলেজড কারণ, মিত্তির মশাই'রা দেশের 'শ্রমিক শ্রেণী'র, সেই ৩.৫৫% বিরল প্রজাতি যারা সরাসরি রাজ্য কিম্বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী। অর্থনীতির পোশাকি ভাষায় যারা 'অরগানাইজড সেক্টর'। যাদের মাস গেলে বেতনের নিশ্চয়তা আছে, চাকরি'র নিরাপত্তা আছে, ওভারটাইমে মজুরি আছে, সরকার ধার্য ছুটি আছে, শ্রম আইনে বোনাস আছে, ইনক্রিমেন্ট আছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড আছে, প্রোমোশন আছে। সরকারী, আধা-সরকারী এবং বেসরকারি মিলিয়ে ভারতবর্ষে 'অরগানাইজড সেক্টর'র লাক্সারি উপভোগ করেন ৫.৬% শ্রমিক ¹। 'ক্রিম অফ দি ক্রপ'।
আর মিউনিসিপালিটির যে ঝাড়ুদারটা প্রতিদিন সকালে এঁটোকাঁটা ভর্তি ব্যাগটা ডাস্টবিন থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, যে লোকটা স্কুলে-স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না করছে, আপনার হবু স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের স্বপ্নে যে রাজমিস্ত্রিটা একের পর এক ইট গাঁথছে, যে আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সার্ভের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরছে, যাঁদের প্রতিদিনের রক্ত জল করা পরিশ্রমে সভ্যতার পিরামিড আকাশে পাড়ি দিচ্ছে, ঝাঁ চকচকে স্মার্ট সিটির ইমারত গুলো ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে -দেশের সেই ৯৪.৬% শ্রমিকই আসলে 'আন অরগানাইজড'। যাদের মাস গেলে ন্যূনতম বেতন নেই, চাকরি'র নিরাপত্তা নেই, ওভারটাইমে মজুরি নেই, সরকার ধার্য ছুটি নেই, শ্রম আইনে বোনাস নেই, ইনক্রিমেন্ট নেই, প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, প্রোমোশন নেই ² ।
১৯৫৭'তে অর্থনীতিবিদ গুলজারি লাল নন্দা'র নেতৃত্ব ১৫তম ইন্ডিয়ান লেবার কংগ্রেস বলেছিল –"শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি, চারজনের পরিবারের প্রতিজন কে প্রতিদিন ২৭০০ ক্যালরির ব্যালেন্স ডায়েট, পরিবার প্রতি বছরে ৬৫ মিটার কাপড়, সরকারি আবাসন প্রকল্পে প্রদত্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট ঘর ভাড়া এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ সহ বিবিধ খরচা পুরোপুরি ভাবে বহন করার উপযুক্ত হওয়া প্রয়োজন ³ ।" ১৯৯২'এ সুপ্রিম কোর্ট এই ন্যূনতম মজুরির উপর আরও ২৫% ছেলেমেয়ের পড়াশুনা, চিকিৎসা, বিনোদন এবং উৎসবের জন্য সংযোজনার নির্দেশ দেয়। সব মিলিয়ে বর্তমান বাজার মূল্যে ন্যূনতম মজুরিটা প্রায় মাসিক ২৬,০০০ টাকা। বাস্তবে, এই 'আচ্ছে দিনের' রামরাজত্বেও যে ন্যূনতম মজুরিটুকু উপার্জন করেন দেশের মাত্র ৭% শ্রমিক। আর তুলনায় মাসিক ১০,০০০ টাকারও কম উপার্জন করা শ্রমিকের সংখ্যাটা ৬৮% ⁴ ।
১৯৮৭-২০১৫, যে ২৮ বছরে সেনসেক্স-নিফটি-জিডিপি'র ঊর্ধ্বগামী অর্থনীতিতে শ্রমিক'রা ২১০% নিট মূল্য সংযোজন করেছে, সেই ২৮ বছরেই শ্রমিক'দের নিট পারিশ্রমিক নাম মাত্র ১৪% বেড়েছে ⁵ । যে ২৮ বছরে ভারতবর্ষে বিলিয়নারির সংখ্যা ১ থেকে বেড়ে ১৩২ হয়েছে, সেই ২৮ বছরেই ১০০ টাকা উৎপাদন মূল্যে শ্রমিক'দের প্রাপ্য মজুরি কমতে কমতে ৯.৯ টাকায় ঠেকেছে ⁶ ⁷ ।
শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে উদ্বৃত্ত সম্পদ বণ্টনের এই বৈষম্য দেখে যখন চক্ষু চড়ক গাছ অক্সফামের মত আন্তর্জাতিক গরিবি গবেষক সংস্থার ⁸, 'মার্কেট ফ্লেক্সিবিলিটি'র অজুহাতে যখন নতুন শ্রম আইনে মালিক শ্রেণীর হাত শক্ত করা হয়েছে ⁹, আই.এল.ও-র বুনিয়াদি শ্রমমান সম্পর্কিত ৪টি কনভেনশন কে যখন ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ¹⁰ , ৪৩তম শ্রম সম্মেলনের 'ঠিকা শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ ও বিলোপ' আইনের সংশোধনী কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে যখন স্থায়ী কাজে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ বেড়েছে ¹¹ -মিত্তির মশাই'দের টেবিল তখন ব্লেন্ডার্স প্রাইড আর চিকেন ললিপপে সেজেছে। যে আনন্দবাজার বিরাট কোহলির ফুটওয়ার্কে খুঁত খুঁজতে কফিন থেকে ডন ব্র্যাডম্যান কে তুলে আনে, যে অর্ণব গোস্বামীরা পদ্মাবতী নিয়ে রোজ প্রাইম টাইমে মাছের বাজার বানিয়ে ফেলে, যে জি-নিউজ নতুন দু-হাজারের নোটে জি.পি.এস চিপ বসিয়ে ফেলে, যে আজতকের ক্যামেরা মঙ্গলে গিয়ে জলের ছবি তুলে আনে; সেই কর্পোরেট মিডিয়ার লেন্সেই ৯৪.৬% শ্রমিক'দের দুর্দশার ছবি ধরা পড়েনা। সেই কর্পোরেট মিডিয়ার পাতাতেই নাকের ডগার শ্রমিক বিক্ষোভের খবর দু কলম জায়গা পায়না ¹² । পায়না, কারণ কর্পোরেট মিডিয়া শ্রমিক'দের স্বার্থের কথা বলে না। বলে মালিক'দের মুনাফার কথা। পায়না, কারণ কর্পোরেট মিডিয়া শ্রমিক'দের পয়সায় চলে না। চলে আম্বানি-আদানি'দের পয়সায়।
তাই কর্পোরেট মিডিয়া কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই, ৩ লক্ষ শ্রমিকের সমাবেশে উত্তাল হয়েছে দিল্লি। মুষ্টিবদ্ধ হাত আর তুমুল ইনকিলাবি শ্লোগানে ভেসেছে দিল্লি। গণহত্যা কারী মাস্টার মাইন্ড'দের দিল্লি কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে সফদারের গন্ধ মাখা দিল্লি। ধর্মীয় ভেদাভেদের পিণ্ডি চটকে লাল ঝাণ্ডার তলে হক আদায়ের শপথের সাক্ষী থেকেছে দিল্লি। শপথ, ১৮,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবী আদায়ের। শপথ, দাবী পূরণ না হলে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের। শপথ, কারখানার'র গেটে তালা ঝুলিয়ে রক্ত চোষা মালিকের বিরুদ্ধে হাল্লা বোলের।
সেদিন সকালে স্তব্ধ হবে সভ্যতা, থমকে যাবে চাকা। সেদিন সকালে সিক্সটি পয়েন্ট হেডিং-এ ছাপা হবে শ্রমিক'দেরই কথা। সেদিন সকালে প্রতিটা কুঁড়ি বারুদ গন্ধে মাতাল করেই ফুটবে। সেদিন সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে।
2. http://keydifferences.com/difference-between-organised...
3. http://pib.nic.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=81227
4. https://www.facebook.com/newsclickonline/videos/1130794417052125/
5. http://www.hartford-hwp.com/archives/52a/017.html
6. http://www.ezinemart.com/robbar/20092015/Home.aspx
7. http://www.livemint.com/.../80-of-Indians-live-on-less...
8. http://www.thehindu.com/.../indias.../article10935670.ece
9. https://cpim.org/views/labor-law-changesmore-exploitation
10. http://www.frontline.in/.../labour.../article6540729.ece
11. http://pib.nic.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=123367
12. http://www.thecitizen.in/.../3-Reasons-Why-the-Big-Media...
বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭
বিপ্লব সম্প্রচারিত হবে না ~ অবিন দত্তগুপ্ত
শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭
ডেঙ্গু ~ ড: রেজাউল করীম
শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭
কর্নেল চিত্তরঞ্জন দাস ~ সাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য
বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭
জমি অধিগ্রহণ ~ আর্কাদি গাইদার
সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭
ধর্মঘট ~ আর্কাদি গাইদার
রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭
ডেঙ্গু ~ শাক্যজিত ভট্টাচার্য্য
শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭
হাসপাতালের জার্নাল ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী
অরুণাচল ~ আর্যতীর্থ
বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭
গুল্প-সমগ্র ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরি
রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭
পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু ~ সুশোভন পাত্র
বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭
ডেঙ্গু = অজানা জ্বর
বুড়ো বলল, "তা হলে লিখে নাও—আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০, মৃতের সংখ্যা ১৩।"
আমি বললাম, "দুৎ! আমার জেলাতেই মৃতের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়ে গেছে , বলে কিনা ১৩!"
বুড়ো খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে জিজ্ঞাসা করল, "বাড়তি না কমতি?"
আমি বললাম, "সে আবার কি?"
বুড়ো বলল, "বলি ডেঙ্গিতে মৃত্যু এখন বাড়ছে না কমছে?"
আমি বললাম, "মৃত্যু আবার কমবে কি?"
বুড়ো বলল, "তা নয় তো কেবলই বেড়ে চলবে নাকি? তা হলেই তো গেছি। কোনদিন দেখব মৃতের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একেবারে ষাট সত্তর আশি পার হয়ে গেছে। শেষটায় পঞ্চায়েতে হারি আর কি!"
আমি বললাম, "তা তো হারবেই। এত মানুষ মরলে হারতে হবে না!"
বুড়ো বলল, "তোমার যেমন বুদ্ধি! আশি জন ডেঙ্গিতে মরবে কেন? চল্লিশ হলেই আমরা মৃতের সংখ্যা ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না—উনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে মৃতের সংখ্যা নামতে থাকে। এমনি করে যখন দশ পর্যন্ত নামে তখন আবার মৃতের সংখ্যা বাড়তে দেওয়া হয়। আমার রাজ্যে তো কত উঠল নামল আবার উঠল, এখন হয়েছে তেরো৷" শুনে আমার ভয়ানক হাসি পেয়ে গেল।
কাক বলল, "তোমরা একটু আস্তে-আস্তে কথা কও, আমার হিসেবটা চট্পট্ সেরে নি।"
জন্তটার রকম-সকম দেখে আমার ভারি অদ্ভুত লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি কে? তোমার কি হয়েছে?"
সে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, "আমার অজানা জ্বর হয়েছে । আমার অজানা জ্বর হয়েছে, আমার ভাইয়ের অজানা জ্বর হয়েছে, আমার বাবার অজানা জ্বর হয়েছে, আমার পিসের অজানা জ্বর হয়েছে—"
আমি বললাম, "তার চেয়ে সোজা বললেই হয় তোমার গুষ্টিসুদ্ধ সবার অজানা জ্বর হয়েছে।"
সে আবার খানিক ভেবে বলল, "তা তো নয়, আমার সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট! আমার মামার সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার খুড়োর সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার মেসোর সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার শ্বশুরের সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট—"
আমি ধমক দিয়ে বললাম, "সত্যি বলছ? না, বানিয়ে?"
জন্তুটা কেমন থতমত খেয়ে বলল, "না, না, আমার শ্বশুরের প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে, ব্রেনে অক্সিজেন কম যাচ্ছে।"
আমার ভয়ানক রাগ হল, তেড়ে বললাম, "একটা কথাও বিশ্বাস করি না।"কাকটা আমনি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "সে তোমাদের হিসেব অন্যরকম।"