শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

রাষ্ট্র ~ সাক্যজিত ভট্টাচার্য্য

"ফ্রানজ কাফকার বিশ্রুত উপন্যাস 'দ্য ট্রায়াল'-এ নায়ক জোসেফ কে একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে  উঠে দেখেছিল  তার ঘরে পুলিশ। তার অপরাধের বিচারের  জন্য আদালতের শমন নিয়ে এসেছে। জোসেফ কে  জানত না তার অপরাধ কী। পুলিশ, আদালত, আমলাতন্ত্র সকলের কাছে প্রশ্ন করলেও উত্তর মেলে না।  এদিকে বিচার চলতে  থাকে নিজের নিয়মে। আর এই প্রক্রিয়াতেই আস্তে আস্তে কে-র ব্যক্তিগত জীবনে, সম্পর্কে, এমনকি শোবার ঘরে পর্যন্ত রাষ্ট্র ঢুকে পড়ে। তার গতিবিধি, চলাফেরা, কার সাথে সে মেলামেশা করছে সবকিছুর হিসেব অলক্ষ্যে পৌঁছে যেতে থাকে  আদালতের কাছে। 

জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা এই বছরের জানুয়ারি মাসে বস্তারে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তদন্ত করছিল। এক রাত্রিবেলা  সংস্থার সদস্য  এবং পরিচিত মানবাধিকার কর্মী বেলা ভাটিয়ার ছত্তিশগড়ের  বাড়িতে জনা তিরিশ সশস্ত্র দুষ্কৃতি হানা দেয়। তারা হুমকি দেয় বেলাকে এই মুহূর্তে এই রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। কথা না শুনলে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে এবং মেরে ফেলা হবে বেলার আদরের  পোষ্যটিকে। বারবার বেলা ভাটিয়া জিজ্ঞাসা করেন তাঁর অপরাধ কী। উত্তর মেলেনি। চলতে থাকে অকথ্য গালিগালাজ।  নিরুপায় বেলা পুলিশ ডাকেন। পুলিশ আসে, সঙ্গে আসেন  গ্রামের সরপঞ্চ। এবং বেলা সবিস্ময়ে দেখেন, পুলিশ এবং সরপঞ্চ দুজনেই দুরে দাঁড়িয়ে মজা দেখার ভঙ্গীতে গোটা ব্যাপারটার পর্যবেক্ষণ করছে। বেলার বাড়িওয়ালিকে দিয়ে পুলিশের সামনে দস্তখৎ দেওয়ানো হয় যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি দায়ীত্ব নিয়ে বেলাকে বাড়িছাড়া করাবেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। বাড়ির মালিক এবং তাঁর ছেলেদের স্থানীয় থানায় ডাকা হয় এই ঘটনার পরদিন। পুলিশ শাসায় যে বেলা এই অঞ্চল না ছাড়লে তার ফলাফল ভাল হবে না।  

ঠিক একই  পদ্ধতিতে এর আগে ভয় দেখিয়ে অথবা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে   বস্তার থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল সাংবাদিক মালিনী সুব্রমণিয়াম, আইনজীবি শালিনী ঘেরা এবং ঈশা খাণ্ডেলওয়ালকে। এঁরা সকলেই জগদলপুর লিগাল এইড নামক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত  ছিলেন। বস্তারের ডিআইজি এসআরপি কাল্লুরির নেতৃত্বে পুলিশবাহিনীর দমনমূলক কার্যকলাপ, হত্যা, ধর্ষণ, মিথ্যে কেসে মাওবাদী অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া ইত্যাদি  ডজন ডজন অভিযোগ  নিয়ে এই লিগাল এইড বহুদিন ধরেই সরব। এই কারণে  কিছুদিন আগেই বস্তার পুলিশের পক্ষ থেকে এই লিগাল এইডের নেতৃত্বের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছিল। যদিও প্রতিটি নিগ্রহের ঘটনার পরেই পুলিশ হয় হীরন্ময় নীরবতা পালন করেছে, নাহলে সব দায় চাপিয়েছে স্থানীয় দুস্কৃতিদের উপর। 

নাজিব আহমেদ। জে এন ইউ-র ছাত্র ছিল। গত বছরের ১৫ই অক্টোবর হস্টেলে রাষ্ট্রীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কিছু সদস্যদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক বচসা হয়েছিল। সেই দিন থেকেই নাজিব নিখোঁজ। তার বন্ধুরা এবং পরিবারের তরফ থেকে দিল্লি পুলিশ ও সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। গত ২৯শে জানুয়ারি নাজিবের বাড়িতে দিল্লি পুলিশের প্রায় ৫০ জনের একটি দল হানা দেয়। তারা বাড়ি ঘর তছ্নছ করে, সমস্ত ঘরের আসবাবপত্রের  ছবি তুলে নিয়ে যায়, এবং বাড়ির সদস্যদের ঠারেঠোরে হুমকি দেয় মামলা প্রত্যাহার করার জন্য। নাজিব যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এরকম কথাও বলা হয়।  এমনকি নাজিবের নব্বই বছরের বৃদ্ধ মাতামহও পুলিশি নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পাননি। যথারীতি দিল্লি পুলিশ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার  করে ঠাণ্ডা গলায় জানিয়ে দিয়েছে যে তদন্তের স্বার্থেই যা হবার হয়েছে। 

ঘটনাগুলো কি অভিনব? না, এগুলো আজ প্রথম ঘটছে না। পুলিশ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গলা তোলার ফলে হেনস্থা হতে হয়েছে, এরকম অভিযোগ বিজেপি অথবা কংগ্রেস, কোনো কেন্দ্রীয় সরকারের আমলেই কম নয়। কিন্তু যে জিনিসটা অভিনব, সেটা হল প্রায় শৈল্পিক দক্ষতায় নাগরিকের শোবার ঘরে রাষ্ট্রের ঢুকে পড়া। মানতেই হবে, এই দক্ষতার আমদানি করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এর আগে এই সমস্ত কাজ হত অনেক মোটা দাগে, খুন জখমের মাধ্যমে ।  তাই সেগুলোর বিরুদ্ধে গলা চড়ানোটাও ছিল অপেক্ষাকৃত সহজ। এখন সম্ভবত রাষ্ট্রব্যবস্থা বুঝে গেছে যে  প্রতিবাদীর  শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বইয়ে দিতে গেলে সূক্ষ মনস্তাত্বিক চাপটুকু অনেক বেশি কার্যকরী।  উপরের ঘটনাগুলো  তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। 

বেলা ভাটিয়ার বাড়িতে আক্রমণ করেছে কারা? পুলিশ? মোটেও না। পুলিশ বরং চক্ষুলজ্জার খাতিরে হলেও একবার এসেছিল। আক্রমণ করেছে কিছু স্থানীয় গুণ্ডা। পুলিশের সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে  তাদের সম্পর্ক থাকার কথা নয়। আক্রমণ হয়েছে রাত্রিবেলা, ঠিক যে  সময়টাতে মানুষ সবথেকে ক্লান্ত থাকে, থাকে মানসিকভাবে অগোছালো। লক্ষ্যণীয়, আক্রমণকারীর দল কিন্তু বেলাকে প্রাণে মারবার হুমকি দেয়নি। বরং হুমকি দিয়ে গেছে যে বেলার কুকুরটাকে মেরে ফেলবে। এই প্রায় অ্যাবসার্ড একটা হুমকি যে মানসিকভাবে একজন মানুষকে কী  ভয়ংকরভাবে দুমরে মুচড়ে ফেলে, সেটা তাঁরাই বুঝবেন যাঁদের  পোষ্য আছে।  বেলাকে প্রাণে মারার হুমকি দিলে সেটা বরং অনেক চেনা ছক হত, তার মোকাবিলাও তেমনভাবেই করা যেত। কিন্তু একটি অবোলা জীবকে হত্যার দায়ভার নেবার যে মনস্তাত্বিক চাপ, বেলার মত  সংবেদনশীল সমাজকর্মী সেটা স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারবেন না। এখানেই শেষ নয়। পুলিশ বেলার বাড়িওয়ালিকে হুমকি দিল যাতে বাড়ি ফাঁকা করে দেওয়া হয়। নিশ্চয়, পুলিশ তো বেলার ভালর জন্যেই এই কথা বলেছে, যাতে তাঁর কোনো অনিষ্টসাধন না হয়! মনে রাখতে হবে, বস্তারে পুলিশবিরোধী আন্দোলন শুরু হবার কয়েক মাসের মাথাতেই 2015 সালে একইভাবে পুলিশ চাপ দিয়ে বেলাকে আগেও একবার নিজের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিল। তখনো শোনা গিয়েছিল যে পুলিশ নাকি বেলার নিরাপত্তার জন্যই এটা করেছে। 

নাজিবের ক্ষেত্রেও, একটি সাধারণ বাড়িতে রাত্রিবেলা পুলিশ হানা এবং নব্বই বছরের বৃদ্ধকে হেনস্থা করা আসলে  মনস্তাত্বিক ছকটিকেই অনুসরণ করছে। সমাজের দুর্বল এবং আত্মরক্ষায় অক্ষম অংশটিকে নিগ্রহের মাধ্যমে বিপক্ষকে নুইয়ে দেবার পদ্ধতিটি চেনা । এবং পদ্ধতিটার প্রয়োগ করা হচ্ছে তথাকথিত আইনের গণ্ডীর মধ্যে থেকেই। পুলিশ কোনো  আইন ভাংছে না, কাউকে পিটিয়ে মারছে না, প্রাণে মারার হুমকিও দিচ্ছে না। এগুলো না করে শুধুমাত্র মানসিক নির্যাতন করতে করতে রাষ্ট্র ঢুকে যাচ্ছে আমাদের অন্দরমহলে।  তাকে পুরোদমে সহায়তা করছে আমলাতন্ত্র। এবং তাই খুব মসৃণ গতিতে মালিনী সুব্রমণিয়ামদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা তুলে নাস্তানাবুদ করা হয়। বেলা ভাটিয়াকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নিজের বাড়ি ছাড়তে হয়। এবং খুব শান্ত গতিতে, যেন কিছুই হচ্ছে না এমন ভাব নিয়ে জগদলপুর লিগাল এইডের একাধিক সক্রিয় কর্মীর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন আটকে যায়, অথবা রেশন কার্ড জালিয়াতি করার অভিযোগে বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। কোনো বেআইনি পথ অবলম্বল না করে এবং এক ফোঁটাও বিতর্ক না বাড়িয়ে রাষ্ট্র প্রমাণ করে দিচ্ছে তার দাঁতের ধার। একে খুব উন্নতমানের ফ্যাসিবাদ না বললে আর কাকে বলা হবে? 

আর সংবাদমাধ্যমগুলির ভূমিকা? জরুরী অবস্থার সময়ে সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে লালকৃষ্ণ আদবাণি বলেছিলেন "তাদের ঝুঁকতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, আর তারা হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছিল"। বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি করবার  আর  দরকার পড়ছে না। রাজনৈতিকভাবে অশান্ত অঞ্চলে কোনো  নক্সালপন্থী দলের নেত্রী গেলে বাংলার বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রটি মড়াকান্না জুড়ে দিচ্ছে "ভাঙ্গরে নক্সালদের অনুপ্রবেশ"! যেন নক্সালদের ওখানে যাওয়া  বেআইনি কোনো ঘটনা!  জেএনইউ-র অধ্যাপিকা নিবেদিতা মেনন যখন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন কাশ্মীরকে বলপূর্বক ভারতের অংশ করে রাখার যৌক্তিকতা কতখানি, সংবাদমাধ্যমগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিবেদিতাকে দেশদ্রোহী প্রমাণ করবার জন্য। মানুষের গতিবিধি, স্বাধীন মতামত, এমনকি কার সাথে মেলামেশা করা হচ্ছে সেই জিনিসগুলির ওপর প্রায় গোয়েন্দার মত নজর রাখছে সংবাদমাধ্যম। আর এভাবেই তারাও চমস্কি কথিত 'সম্মতি নির্মাণের' রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার হিসেবে সফলভাবে  ঢুকে পড়ছে আমাদের অন্দরমহলে। 

কাফকা জানতেন, ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। যদি একদিন  মাঝরাতে গুণ্ডারা আপনার দরজায় কড়া নাড়ে, অথবা সকালে যদি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেন আপনার সংগ্রহের 'দাস ক্যাপিটাল'টি হাতে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসা করছে আপনি মাওবাদী কি না,  বুঝবেন এই ভারতবর্ষে  বেলা ভাটিয়া কোনো বিচ্ছিন্ন নাম নয়। আর মনে রাখবেন, জোসেফ কে-র বিচারের রায় ছিল মৃত্যুদণ্ড। এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সে নিজের অপরাধ জানতে পারেনি। "

আরেক রকম পত্রিকার ফেব্রুয়ারি মাসের সম্পাদকীয়, যেটা আবার ঘটনাচক্রে আমারই লেখা। লেখবার সময়েও ভাবতে পারিনি কয়েকদিনের মধ্যেই আমার জীবনেও এটা সত্যি হয়ে যাবে। পুলিশের এফআইআর, আইন আদালত ইত্যাদি তো ছেড়েই দিলাম, আমার ব্যক্তিগত জীবন, আত্মীয় স্বজন এবং বান্ধবীদের নিয়ে পর্যন্ত রসালো কেচ্ছা, প্রায় পর্নোগ্রাফি লেখা, এগুলো আসলে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এগুলো সবই ঘরের অন্দরমহলে রাষ্ট্রের সহস্র চোখ ঢুকে যাবার একটা পদ্ধতি। যে কাজে শামিল হিন্দুত্ববাদীরা এবং তাদের অন্যান্য কিছু সহযোগী । কাজেই কাল যদি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার দুই বছরের আগে করা একটা আলটপকা কমেন্টের স্ক্রিনশট হাতে নিয়ে পুলিশ আমার দরজাতে কড়া নাড়ছে আর জিজ্ঞাসা করছে আমার আইএসআই কানেকশন আছে কি না, তাহলে বুঝতে হবে ভারতরাষ্ট্রের গৈরিকীকরণ সম্পূর্ণ । Eppur si muove? ahimè, la terra è morto!

আ মরি উর্দু ভাষা ~ অবীণ দত্তগুপ্ত

আজ থেকে বেশ কিছুদিন আগে আমার এ লেখা লেখার কথা । যেদিন বাপ্পামামার কাছ থেকে স্রেফ প্রচ্ছদ দেখে মান্টোর এই অনুবাদ খানা এনেছিলাম , তার দুদিনের মধ্যেই লেখা উচিত ছিল । অন্তত ২১শে ফেব্রুয়ারি । নাহ্‌ । দিনান্তের ক্লেদ সঞ্চয়ে আর প্রতিদিনের সর্বশক্তিমানের সাথে যুদ্ধে , সে সময় পাওয়া যায় নাই । আজ পেলাম তাই লিখি । এই লেখার পুরোটার জন্যই আমি মান্টোর অনুবাদক আতিশ তাজিরের কাছে ঋণী । 

আতিশের মা এবং বাবা যথাক্রমে ভারতিয় এবং পাকিস্থানি পাঞ্জাবি । আতিশ দিল্লীতেই বড় হয়েছে । আতিশের বাবা মা এবং দাদু উর্দুতে কবিতা লিখতেন । দাদুর একটি কবিতার খাতা আতিশ পেয়েছিল উত্তরাধিকারে । কিন্তু আতিশ উর্দু জানে না, অথচ উর্দুতেই লুকিয়ে ইতিহাস । অতএব ডাক্‌ পড়ল জফর মুরাদাবাদির । মুরাদাবাদি অবশ্যই মুরাদাবাদে থাকতেন বলে , আসল নাম কেউ জানে না । এটা ২০০৪এর কথা । 

জফর মুরাদাবাদে এসছিলেন , যখন তার বয়স ২১ । সালটা ১৯৬১ , এবং তখনো উনি কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । আর কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বলেই না মুরদাবাদে , গালিবের শহরে , উর্দু কবিদের দেশে আসা । জন্ম কোথায় , তাতে কি বা যায় আসে ?? কর্ম মুর্দাবাদে । মির , ঘালিব , মোমিন আর দাঘ-এর মতো কবির জন্মস্থান কেউ না জানুক , কর্মস্থান মুরাদাবাদ সক্কলে জানে । অতএব জফর-ও এসেছিলেন । এসেছিলেন তখন , যখন উর্দুতে কবিতা পাঠ হলে , লোকে হল ভরে শুনতো । এসেছিলেন তখন , যখন উর্দু কবি কোন ডায়নোসারের সমোগত্রিয় শব্দবন্ধ ছিল না । জফর এসেছিলেন । জফর রাজনীতি বুঝতেন না । বুঝলে জানতেন উর্দু , ভারতের ত্যাজ্য ভাষা । 

সেই ৪৭এর পরের থেকেই পাকিস্থান , উর্দুর সাথে ইস্লামিক্‌ রাস্ট্রকে এক করে দেওয়ার প্রচেষ্টা আরম্ভ করেছিল । অথচ যে সমস্ত ভুখন্ড পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত , তাদের একটিতেও উর্দুর কোন প্রভাব ছিল না । উর্দু ছিল ভারতের নিজস্ব , পুরানি দিল্লী - মুরাদাবাদ তদ্‌সম-তদভব অঞ্চলের ভাষা । ফায়েজের মতো কবিরা ,উর্দুকে পাঞ্জাবে হাত ধরে নিয়ে এসেছিলেন বললেও ভুল বলা হবে না । কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণ বসত ভারত সরকার , উর্দু ভাষা থেকে দূরে সরতে শুরু করলেন , কাছে এগোতে থাকলো পাকিস্থান । জফররা কেবল ছিলেন বিলুপ্ত প্রজাতি , ভারত বা উর্দু কোনটাই ছাড়তে পারলেন না । 

এরপর ভারতের সরকার আস্তে আস্তে দেবনাগরীর মতো একটি লিপিকে যতো এগোতে থাকলেন , ততো পেছোতে থাকলো জফরের ভাষা । কিন্তু তবুও ভারতের অসামান্য মিলিয়ে দেওয়া , এবং বৈচিত্রের সংস্কৃতি উর্দুকে খুন করতে দিল না । বাঁচিয়ে রাখলো সিনেমা , বাঁচিয়ে রাখলো বোম্বাই। আজ অব্দি , বলিউডি সিনেমায় একজন যাত্রীকে মুসাফির্‌ বা একটি ষড়যন্ত্রকে সাজিস্‌ বলা হয় । এবং এটা বলার জন্য বর্ডারের দুপারের মানুষকে কোন আলাদা মনোযোগ দিতে হয় না । ভাষা এমনি-ই বেঁচে থাকে । কিন্তু এটুকু স্রেফ এটুকু দিয়েই কি কবি বাঁচে ?

কবি যদি হন গুলজার বেঁচে যেতেই পারেন , অথবা কাইফি আজমি । তারা অন্যমানের , অন্য ধাতুর মানুষ । উর্দু শব্দের সাথে হিন্দী শব্দ (সিলি হাওয়া ছু গয়ি -সিলা বদন্‌ ছিল্‌ গিয়া অথবা সারে জাহান্‌ সে আচ্ছে হিন্দোস্তা হামারা ।) কজনই বা মিলিয়ে কাঁপুনি ধরিয়েছে ।  জফর এদের মতো ছিলেন না । অথবা হয়তো ছিলেন , কিন্তু তিনি নিজের লিপি ভয়ঙ্কর ভালোবাস্‌তেন । আপনাকে যদি বলা  হয় - "রোমান অক্ষরে বাংলা লিখুন " - আপনি খুশি হবেন ?? জফর নিজের লিপি ছাড়া কবিতা লিখতেন না । উনি বিশ্বাস করতেন , "মেজাজ লুকিয়ে আছে লিপিতে" । এবং এই একটি বাক্যের জন্যই না চিনে না জেনে ভালোবেসেফেলেছি । 

সে যাই হোক , প্রথমে কবিতা লিখতেন উর্দু স্ক্রিপ্টে , তারপরে গান-ও তাই । চোখের সামনে দিয়ে ওনার ভাষার দুনিয়া শ্মশান হয়ে গেল । উনি কোথাও পালিয়ে যান নি । মনে করতেন উর্দুর গন্ধ লুকিয়ে ভারতের বৈচিত্রের মাটিতে । ভারতেই লড়ে গিয়েছেন ভাষার জন্য । প্রতিক্ষন । সাত-সাতটি পি এইচ ডি থিসিস্‌ লিখে দিয়েছেন ভাড়ায় , উর্দুতে । নিজেকে বলতেন "ইন্টেলেকচুয়াল মারসিনারি " । আতিশকে পড়াতে এসছিলেন যখন, প্রথম শর্ত ছিল "আগে লিখতে জানতে হবে , তারপর পরতে" । সপ্তাহে পাঁচ দিন, তিন ঘন্টা প্রতিদিন , ভাষা শেখাতেন পাঁচ হাজারে । সালটা ২০০৪ । আতিশ একদিন ওনার বাড়ি গেছিলেন । ঈদ ছিল সেদিন । দেওয়াল ময় পেচ্ছাপ আর রাস্তাময় সদ্য ব্যায় হওয়া রক্তের গন্ধ ঢেকে গিয়েছিল , জফরের উইন্‌ সিগারেটের গন্ধে । একটা অস্থায়ি সিড়ি টপকে , ৯ফুট বাই ৮ফুটের ঘর । সেখানেই , জফররা চারজনে থাকেন, কাপড় টানা বাথরুম । ঘরের অর্ধেক ভর্তি বই । বড় ছেলে কারাখানায় ঘুমায় রাতে । ঘষ্টানো সব্জেটে দেওয়ালে পিঠ ঠাসিয়ে বসে , নতুন কবিতা পড়ছেন জফর । উইন সিগারেট হাতে , জফরকে ভাষা শহিদের মতোই দেখতে ।  যেমনটা দেখতে ছিলেন বাংলাদেশের আব্দুস্‌ সালাম বা আব্দুল জাব্বার ।

বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভাল ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়


- বাপুজির টিফিনকেকের ওপর চার চামচ পোর্ট ওয়াইন ঢেলে খেয়ে দেখেছিস? অমৃত। রন্ধ্রে রন্ধ্রে রস

- রস? রসের নামে ছাইপাঁশ খাবেন কেন স্যার?

- কেনো রে? তুই বুঝি এসব চাখিসনি! ন্যাকামো হচ্ছে? মেয়ে বলে তুই এক্কেরে লবঙ্গলতিকা বুঝি?

- না,  মানে সেরকম ঠিক….

- সত্যি করে বল দিকি

- গেল বছর দোলের দিন স্যার, দাদারা খাচ্ছিল,  একবার উঠেছিল, আমি গিয়ে বোতল থেকে এক চুমুক….

- সে কি রে? সোজা বোতল থেকে? বলিস কি?

- জ্বলে গেছিল স্যার, গলা বুক জ্বালা, কি ভয়ংকর, চোখে অন্ধকার দেখছি

- তার পর? অজ্ঞান হয়ে গেলি?

- যেতাম, কিন্তু দাদা এমন থাবড়া মারল… জানেন, আমি কলেজে পড়ি তাও আমাকে একরকম করে বদমাশ টা

- বুঝেছি। তার মানে খাসনি।

- হি হি। খেয়েছি। পরে। সন্ধ্যেবেলা। ওই বজ্জাতটাই স্প্রাইটের সঙ্গে মিশিয়ে, লেবু চিপে কিসব করে দিল। কি ভাল।

- তোর দাদাটা তোকে সত্যি ভালবাসে।

- আপনি বাসেন না?

- আমি? আমি তো তোর মাস্টার

- মাস্টাররা ভালবাসে না ছাত্রীদের?

- সে তো আমি…. তোদের সবাইকেই…. মানে…ইয়ে

- তোতলাচ্ছেন কেন?

- কই?  তোতলাইনি তো? আমি কি ইয়ে?

- আপনি আমাকে ভয় পান স্যার?

- তুই একটা পুঁচকে মেয়ে, তোকে ভয় পাবো কেন?

- পান তো, নইলে বিকেলে আমি ফোন করে আসব বললুম, আর আপনি কেমন প্যাঁচার মত গলা করে ব্যাস্ত আছেন বললেন

- তুই কি সে কথা শুনলি? ধেই ধেই করে হাজির হলি।

- আর আপনি আমাকে মাখন দিয়ে চা, থিনারুট বিস্কুটে মধু, পান্তা ভাতে চানাচুর, হুইস্কিতে ভেজানো ধানি লংকা, বাপুজির কেকে পোর্ট ওয়াইন এই সব গল্প করছেন

- তুই বুঝি পড়তে এসেছিস? বই খাতা কই? ব্যাগ কই?

- আপনি অত্যন্ত বাজে একটা লোক

- জানি তো। তাই এসব গপ্প করছি

- আমি সেই কথা বলিনি। আপনি সব বোঝেন। বোঝেন না?

- কাঁসিও ভাল ঢাক্‌ও ভাল,
টিকিও ভাল টাকও ভাল,
ঠেলার গাড়ী ঠেল্‌‌তে ভাল,
খাস্তা লুচি বেলতে ভাল,
গিট্‌‌কিরি গান শুনতে ভাল,
শিমুল তুলো ধুন্‌‌তে ভাল,
ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভাল,
কিন্তু সবার চাইতে ভাল-
পাউরুটি আর ঝোলা গুড় ।

- মানে?? এ আবার কি?

- সুকুমার রায় পড়িসনি বুঝি? ভাল রে ভাল, সব ভাল। এত কিছু ভাল। মানুষকে ভালবাসা ভাল। কিন্তু ওই যে - "সবার চাইতে ভাল পাউরুটি আর ঝোলা গুড়"

- কিচ্ছু বুঝিনা আপনার হেঁয়ালি।

- ওই পাউরুটি আর ঝোলাগুড়েই ভাল থাকি রে। থাকতে হয়। আধবুড়ো বয়সে পেটে পোলাও কালিয়া সহ্য হবে না।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মেয়ে ~ মনিপর্ণা সেনগুপ্ত মজুমদার

তোমরা যখন কথায় কথায় খিস্তি মারো, স্পষ্ট
আমরা একই বললে কথা, তখন আবার "নষ্ট"!
পুরুষমানুষ করলে নেশা, আঃ উহ্‌, সো কুল,
আমরা যদি একই জিনিস করি তখন, ভুল।
তুমি ফেরো অ-নে-ক রাতে, তোমার শুধুই কাজ...

একই সময় ফিরলে মেয়ে, তখন সে নিলাজ। 
এত রকম ধ্যানধারণা, কত প্রভেদ আছে
শুধু, মানুষ হতে পারছি না আর পরস্পরের কাছে...।

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সময় ~ সৌমিক দাশগুপ্ত

​কে বনে ফুল পাড়ে? (কিশলয়)

গঞ্জের জমিদারের নাম কী? (সহজপাঠ)

রামের কাছে ৩০ টাকা আছে। সে ৫ টাকার ডাল, ১ টাকার আলু, ৪ টাকা ৪০ পয়সার সরষের তেল আর ৬০ পয়সার ডিম কিনলো। তার কাছে কত টাকা থাকবে? (নব গণিত মুকুল)

পুরোনো প্রস্তর যুগে কী কী অস্ত্র ব্যবহার হত? (ইতিহাস)

সালোক সংশ্লেষ এ গাছ কোন গ্যাস গ্রহণ করে? (প্রকৃতি বিজ্ঞান)
.
.
.
.

Draw a CPU and point the components.

What is RAM?

Name the currency of Russia, South Korea and Japan.

What is the funtion of Retina?

Whar is reflection?

Why the Parrot of Bukhara told the marchent to meet his friends at India?

ইয়ে, দুটোই ক্লাস থ্রী র অ্যানুয়াল পরীক্ষার কোশ্চেন পেপার।

তিরিশ বছর আগের আর পরের।