বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪

ভোটার কালি ~ অমিতাভ প্রামাণিক

ভোটের বাজারে আমি কেমিস্ট্রি ছুঁড়ছি না মানে ভাববেন না, ভোটের নিজস্ব কোনো কেমিস্ট্রি নেই। অবশ্যই আছে এবং সেই রসায়ন বেশ রসসিক্ত।
আপনি যখন আপনার মহামূল্যবান ভোটটি কোনো প্রার্থীকে দান করতে বুথে ঢোকেন, তখন আপনার আঙুলের মাথায় কেউ একজন আলতো করে একটা তুলি বুলিয়ে দেয়। সেই জায়গাটায় কিছুক্ষণ পরে কালো দাগ হয়ে যায়। এই কালো দাগ থাকে যতক্ষণ না ওই জায়গার চামড়াটা খসে পড়ে ভেতর থেকে নতুন চামড়া গজায়। নখের ওপর অবশ্য দাগটা তার আগেই উঠে যায়। এই দাগটা কী? মহামূল্যবান রুপো। যা থেকে আমাদের কারেন্সির নাম রুপিয়া। যে তার রূপের জন্য বিখ্যাত।
ভোটকেন্দ্রের শিশিতে যে তুলি ডুবিয়ে আপনার আঙুলে লাগিয়ে দিয়েছে, তাতে যে বস্তুটা থাকে, তা এক 'গোপন' ফর্মুলা, যা তৈরি করে দিয়েছে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। সারা ভারতে মাত্র একটা কোম্পানি তা প্রস্তুত করে এবং যেখানে যত ইলেকশন হয় – লোকসভা, বিধানসভা, কর্পোরেশন, পঞ্চায়েত, এনিথিং – যেখানে আঙুলে এই ছাপ দেওয়া হয়, তার সমস্ত কালি সেখান থেকে যায়। তারাই একমাত্র জানে ওটাতে হুবহু কী আছে। তবে এটা জানা যে ওর মধ্যে আছে একটা বেগুনি রং আর সিলভার নাইট্রেট, বাকিটা জল আর কিঞ্চিৎ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল। রং থাকে যাতে আঙুলে যে লাগানো হ'ল কিছু তা বোঝা যায়। সেটা জলে গোলা থাকে। অ্যালকোহল দেওয়া হয় জলটা তাড়াতাড়ি উবে যাওয়ার জন্য। তবে আসলি কেমিস্ট্রিটা হচ্ছে ওই সিলভার নাইট্রেটের। সূর্যের আলো পেলেই ওটা বিজারিত হয়ে তৈরি করে পাতলা সিলভারের 'ফিল্ম' যা চামড়ার সঙ্গে সেঁটে থাকে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দ্রবণে ১০ থেকে ১৮ গ্রাম সিলভার নাইট্রেট থাকে। বুথে ভোটারের সংখ্যার ওপর এই শিশির সাইজ নির্ভর করে। কোথাও খুদে ৫ এম এল, কোথাও ৭.৫, কোথাও ১০, ২০ বা ৫০ এম এল। একটা ৫ মিলিলিটার শিশির কালি থেকে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো ভোটারের 'উঙ্গলি কালা' করা যায়।
যে কোম্পানিটা এই কালি তৈরি করে, সেটা আমাদের ব্যাঙ্গালোরের প্রতিবেশী শহর মহীশূরে অবস্থিত, তার নাম মাইসোর পেন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড। আগে এর নাম ছিল মাইসোর ল্যাক অ্যান্ড পেন্টস। রং ও লাক্ষা তৈরির জন্য ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহীশূরের রাজা চতুর্থ ওয়াড়িয়ার, যিনি তার আগে ব্যাঙ্গালোরে জমি দান করেছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিট্যুট অভ সায়েন্স প্রতিষ্ঠার জন্যও। দশ বছর পরে দেশ স্বাধীন হলে এটি একটি পাব্লিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। এখন এই কোম্পানি কর্ণাটক রাজ্য সরকারের অধীনে পরিচালিত। প্রথম যে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল, তখন থেকেই আঙুলে কালি লাগানোর ব্যবস্থা চালু হয় এবং সেই কাজের জন্য সারা দেশের ভোটারদের আঙুলে লাগানোর কালি সরবরাহের দায়িত্ব পড়ে এই কোম্পানির ঘাড়ে। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রায় চার লক্ষ শিশি অর্ডার হয়েছিল, তার দাম ছিল সওয়া দু' লক্ষ টাকার কিছু বেশি। সেদিন থেকে আজ অবধি তারা এই গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছে।
এবারের ৭ দফা লোকসভা নির্বাচনের জন্য এই কোম্পানিতে ইলেকশন কমিশন থেকে অর্ডার গেছে ২৬ লক্ষ ৫৫ হাজার শিশি কালি সরবরাহের, যার মোট দাম ৫৫ কোটি টাকা। সোনারুপোর দাম বাড়ছে মানে সিলভার নাইট্রেটের দাম বাড়ছে, ফলে ভোটের কালির দামও বাড়ছে। একটা ১০ এম এল শিশির দাম এখন ১৭৬ টাকা। আপনি আপনার মহামূল্যবান ভোট দিয়ে এলেন, আপনার হাতে যে কালি লাগানো হ'ল তার দাম প্রায় আটানা! কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহম্মদ ইরফান জানিয়েছেন, এ বারের অর্ডারটাই সবচেয়ে বড় অর্ডার। স্বাভাবিক। মা ষষ্ঠীর কৃপা কম নয় আমাদের দেশের ওপর।
১৪০ কোটি জনগণের দেশে ৯৭ কোটির ওপর ভোটার, তাদের হাতের আঙুলে কালি লাগানো হয় কেবলমাত্র ইলেকশন কমিশন পরিচালিত ভোটের সময়। আইনবলে এর আর অন্য কোনো ব্যবহার নেই, একমাত্র ব্যতিক্রম হয়েছিল আপৎকালীন কোভিডের টিকা দেওয়ার বেলায়।
ভাবছেন, এর আর তেমন গুরুত্ব কী! এ তো যে-কেউ করতে পারে। আজ্ঞে না। ২৫টারও বেশি দেশ থেকে অর্ডার পায় মাইসোর পেন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড সেই দেশে ভোটের সময় এই কালি ব্যবহারের জন্য। ক্যানাডা, ঘানা, নাইজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, কাম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশগুলো তাদের নির্বাচনের কালির জন্য এই ক্ষুদ্র কোম্পানির সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল।

বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪

মার্কড সেফ ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য

ঝড় উঠেছে কাকদ্বীপেতে সেফ আছে কেউ মাদ্রাজে
ব্যাঙ্গালোরে সেফ আছে কেউ বলছে নিছক আন্দাজে।
ঝড় উঠেছে সোদরবনে সেফ আছে কেউ দিল্লিতে
সেফ আছে কেউ বনগাঁ,টালায় ইলেক্ট্রিকের বিল দিতে।
ফুঁসছে সাগর সাগরদ্বীপে সেফ আছে কেউ আসানসোল
সেফ আছে সেই আনন্দতে প্যাদাচ্ছে কেউ মাটন রোল।
ঘর ভেঙ্গেছে ভীষণ ঝড়ে ফ্রেদারগঞ্জ,মেদিনীপুর
সেফ আছে কেউ ব্যারাকপুরে সেখান থেকে অনেক দূর।
ঝড়ের দাপট বাংলাদেশে, খেপুপাড়া সাতক্ষীরায়
ঢাকায় বসে কেউ বলেছে সেফ আছি ভাই বারান্দায়।
এমনি করে মার্কড সেফএর ঝড় উঠেছে নেটপাড়ায়
বাধ ভেঙ্গেছে, ঘর ভেঙ্গেছে সব আনসেফ এ বর্ষায়।।

টিবির ওষুধ নাই ~ ডাঃ বিষাণ বসু

টিবি-ফিবি, মানে সাধুভাষায় যাকে যক্ষ্মা বলে, সেসব নিয়ে আজকাল আর কেউ কথা বলে না।
স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্তরা যখন কথা বলেন - বিশেষ করে এই শ্রেণীটির কথা বলছি, কেননা এঁদের একটা ভয়েস থাকে, অন্তত থাকাটা সম্ভবপর, থাকাটা নিদেনপক্ষে উচিত, যেটা ক্ষমতার উপরমহলের কর্ণগোচর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে - তো এঁরা যদি অসুখ-বিসুখ নিয়ে কথা বলেন, তা, ইদানীং, শুধুই হাইটেক চিকিৎসা নিয়ে। অর্থাৎ আলোচনা বলতে শুধুই অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, ক্যানসারের নিত্যনতুন চিকিৎসা এসব নিয়ে। নিতান্তই যদি তা না হয়, তাহলে সুস্থ থাকতে হলে অ্যাভোকাডো নাকি অ্যাসপারাগাস কোনটা বেশি করে খাওয়া উচিত, এসব গুরুগম্ভীর আলোচনা। বলাই বাহুল্য, টিবি বলে যে একটা অসুখ রয়েছে, দেশের কয়েক লক্ষ নাগরিক যে সে অসুখে ভুগছেন এবং এঁদের মধ্যে বেশ কয়েক হাজার মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে ভুগছেন, যাঁদের প্রচলিত কোনও ওষুধেই কাজ হচ্ছে না - সে নিয়ে জনগণ, মানে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত সেভাবে বিচলিত নন।
কেননা, এঁদের চোখে টিবি গরীবের অসুখ। মানে, গরীবের অসুখ বলেই সচেতনভাবে এঁরা প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান, এমন নয়। কিন্তু দেশের 'অগ্রগতি'-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো - দারিদ্র্য নিশ্চিহ্ন না হলেও আমাদের চোখের সামনে থেকে দরিদ্রদের হাপিস করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে দরিদ্রদের সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তার অভ্যেস - যৎকিঞ্চিত হলেও কিছুটা তো ছিল - তা-ও অন্তর্হিত।
টিবি বিষয়ে এমন ভাবনার দুরকম সমস্যা। প্রথমত, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজ কোনও সমস্যাকে গুরুত্বহীন মনে করলে সরকারের চাড় থাকে না সে সমস্যাকে গুরুত্ব দেওয়ার, কেননা, আগেই বলেছি, শ্রেণী হিসেবে এঁদের কিঞ্চিৎ গলার জোর থাকে (ঠিক একারণেই, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছেড়ে কর্পোরেট হাসপাতালমুখী হওয়ার সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিষয়ে সরকারের অবহেলাকে যোগ করে দেখা সম্ভব)। আর দ্বিতীয়ত, সংক্রামক ব্যধি আর্থসামাজিক বিভাজন মেনে চলে না। টিবি এক্সক্লুসিভলি গরীবের অসুখ, এমন নয়। তদুপরি, আজ যা গরীব-গুর্বোদের অসুখ, কাল তা আপনার সন্তান বা বৃদ্ধ মাতাপিতাকেও আক্রান্ত করতে পারে। করছেও। দেশের যক্ষ্মা-আক্রান্তদের মধ্যে মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তের সংখ্যা কিছু কম নয়। যক্ষ্মায় যদি রাশ টানা না যায়, তাহলে সংখ্যাটা ভবিষ্যতে বাড়বে।
আরও এক সমস্যা, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণা যে পথে চলছে, তাতে অসুখ সারিয়ে দেওয়ার ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কোম্পানির উৎসাহ কম - কেননা, অসুখ সেরে গেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ, কোম্পানির লাভও কম। তার চাইতে সেসব ওষুধ আবিষ্কারে লাভ, যাতে আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হয় - হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি - এমনকি ক্যানসারের যেসব নিত্যনতুন ওষুধ বাজারে আসছে, সেগুলিও অসুখ সারায় না, অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখে মাত্র। অতএব বলাই বাহুল্য, যক্ষ্মার মতো উপেক্ষিত অসুখের ভাগ্যে নতুন ওষুধ জোটেনি।
অর্থাৎ, যক্ষ্মার মতো দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল অসুখের ক্ষেত্রে পুরনো ওষুধগুলোই ভরসা। যদি জীবাণু সেসব ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-ক্ষমতা গজিয়ে ফেলে, তাহলে অন্যান্য কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ থাকে বটে, কিন্তু সে চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল, সারিয়ে তোলা খুবই কঠিন।
এমতাবস্থায়, প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নির্ণয় করে চটজলদি ওষুধ খাইয়ে অসুখ সারিয়ে তোলা, বাকি সব অসুখের ক্ষেত্রে একথা একইভাবে সত্য হলেও যক্ষ্মার ক্ষেত্রে কথাটা আরও একটু বেশি করে সত্য।
কিন্তু মুশকিল হলো, যক্ষ্মার ওষুধটিই আপাতত অমিল।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, টিবি-র ওষুধ আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে এবং বাইরের দোকানে - দুজায়গায়ই ওষুধের জোগান অনিয়মিত।
কিন্তু এই খবরটুকু আপনি জানেন না, তাই না?
ভোটের তুমুল হইহল্লার বাজারে আমার দুটি ভাই Anirban Datta আর Smaran Mazumder এমন অপ্রিয় এবং পলিটিকালি ইনকারেক্ট বিষয় নিয়ে গান বেঁধেছে, আপনাদের জানানোর জন্য। তবুও আপনি জানবেন না?
"গণতন্ত্রে আর নাই রক্ষা
যাদের বুকের ভেতর যক্ষ্মা!
নখে কালির দাগ যাদের
ওষুধ মিলছে না যে তাদের..."
একটু মনে করিয়ে দিই, যক্ষ্মা অত্যন্ত জটিল গোত্রের সংক্রামক ব্যাধি। যার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। অন্তত মাসছয়েক ওষুধ খেতে হয়। অনিয়মিত ওষুধ খেলে জীবাণু সাধারণ ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-ক্ষমতা তৈরি করে ফেলে - তারপর আর ওষুধ খেলেও সহজে অসুখ সারতে চায় না। এবং সেই ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণু যদি বাজারে বহুল হারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তাহলে যক্ষ্মা প্রকৃতপ্রস্তাবেই মহামারীর আকার নেবে। নগর পুড়িলে দেবালয়ই রক্ষা পায় না, তো আপনি কোন হরিদাস পাল!!
"গণতন্ত্রকে খায় ঘুষ
আর টিবি খায় ফুসফুস
প্রজার গর্বভরা বুকে
রক্ত ছলকে ওঠে মুখে..."
ভোটের বাজারে সান্ধ্য গলাবাজি থেকে হাতাহাতি, সবই তো দেখছেন। তবু...
"আসবে রাজা যাবে রাজা
নিয়ম বলে তা-ই।
শুধু জানল না কেউ
হাসপাতালে টিবি-র ওষুধ নাই।"
জানুন এবং জানান। গানটির লিঙ্ক রইল টিবির ওষুধ নাই। নিজে শুনুন এবং অপরকে শোনান।
পুনঃ- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিবি-কে কাবু করার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ২০৩০ সাল। আমাদের দেশ অবশ্য ভাবনাচিন্তায় অনেক এগিয়ে। সরকার জানিয়েছেন, ২০২৫-এর মধ্যেই তাঁরা টিবি-কে ঘায়েল করে ফেলবেন। ওষুধ তো অমিল। তাহলে? যাক গে, সরকার যখন ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই ভালো কিছু ভেবেই করেছেন, তাই না?

সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪

হান্স, গল্প ও সত্যি ~ ডঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

আট বছরের ছোট ছেলে হান্স এর গল্প। পুরোনো গল্প। বিদেশি গল্প। হান্স এর বাড়ি ছিল হল্যান্ড এর হার্লেমে। নদী/সাগর বাঁধের ধারে ছোট্ট শহর। এক সন্ধ্যের সময়ে বন্ধুর বাড়ি থেকে ঘরে ফিরছিল হান্স নির্জন বাঁধের পাশ দিয়ে। জল পড়ার আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল যে বাঁধের দেওয়ালের গায়ে একটা ছোট ফুটো হয়েছে। তাই দিয়ে জল পড়ছে। আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে হান্স ওই ফুটোতে নিজের আঙ্গুলটা ঢুকিয়ে দিল। ব্যাস, অমনি জল পড়া বন্ধ। এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল হান্স সারারাত। কারণ সরে গেলেই জলের তোড়ে ফুটোটা বড় হয়ে যাবে, বাঁধ ভেঙে পড়বে আর ভেসে যাবে গোটা শহর। 

এটা গল্প ছিল। সত্যি ঘটনা নয়। আজকে আবার এই পুরোনো গল্পটা শোনানোর কারণ আছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক (এবং আজকাল মানব সৃষ্ট) দুর্যোগ বা বড় মাপের বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার চর্চাও জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের একটা অন্যতম বিষয়। দেখা গেছে যত দ্রুত ওই বিপর্যয় পীড়িত মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানো যায়, তত মঙ্গল। তাই রেপিড রেসপন্স টিম তৈরি হয়। 

এসব আধুনিক ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার আগেও বিপর্যয় ছিল, মানুষ তার মোকাবিলাও করেছে। হান্স তারই উদাহরণ। দেখা গেছে যে যেসব সমাজে বা গোষ্ঠীতে সামাজিক মেলামেশা বা বন্ধন বেশি তারা তত ভালভাবে ওই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে পেরেছে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে। এই অভ্যেস ভুলে গিয়ে আমরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক একটা পরিবার নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো বসবাস করতে শুরু করেছি। 

কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রম আছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রায়দিঘির বহু মানুষ দেখেছেন। ঝরে বন্যায় আইলায় আম্পানে বিধ্বস্ত মানুষ গুলো দেখেছে এক প্রৌঢ়কে। ঈষৎ মোটাসোটা কালোকুলো চেহারা, ধুতিটা হাঁটুর ওপরে। লেগে গেছেন ত্রাণের কাজে। 

হ্যান্স এর গল্পে ফিরে আসি। এক যাজক সারা রাত অসুস্থ বন্ধুর সেবা করে নিজের বাড়ি ফেরার পথে ভোর বেলায় একটা গোঙানির আওয়াজ শুনে এগিয়ে গিয়ে ছোট্ট হান্স কে আবিষ্কার করেন। ঠান্ডায়, ব্যাথায় ভয়ে যন্ত্রণাকাতর হান্সকে।তারপরে আরো অনেক লোক ডেকে নিয়ে আসেন ওই যাজক। হান্স ছাড়া পায়। বাঁধের মেরামতি হয়। হান্স হয়ে যায় জাতীয় হিরো।

আমার গল্পের হিরো সেই প্রৌঢ় কখনো হিরো কখোনো জিরো। চিত্রাভিনেত্রীর কাছে নির্বাচনে হার। তবুও মানুষটা ঘরে বসে থাকেন নি। যেকোনো বিপর্যয়ে সবার আগে ঘটনাস্থলে। রেপিড রেসপন্স টিম। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলেন, উনি নাকি ঝড়ের আগেই পৌঁছে যান। মানুষটাকে আবার দেখতে পাচ্ছি প্রচারের আলোয়।  রেমাল আছড়ে পড়ার এপিসেন্টারে।

উনি ভোটে জিতুন বা হারুন তাতে আমার কিস্যু এসে যায় না। শুধু জানি আমাদের হান্স বেঁচে আছেন। রায়দিঘির মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য দেওয়া বাঁধের ফাটলে সারারাত হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের নিজেদের হান্স। আমাদের প্রেরণা হয়ে, মিথ হয়ে, উপকথার নায়ক হয়ে বেঁচে থাকুন হান্স। সেলাম।


বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

রবীন্দ্রনাথ , বুর্জোয়া কবি ; এবং... ~ রাজদীপ বিশ্বাস রুদ্র

ফি বছর ২৫ শে বৈশাখ এলেই একটি অভিযোগ খুব উঠতে দেখি ইদানীং ― " কমিউনিস্টরা তো রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি বলেছিলো "! অভিযোগটি মূলত আসে তাদের দিক থেকে যারা স্কুল সিলেবাস থেকে রবীন্দ্রনাথ এবং ডারউইনকে ছেঁটে ফেলেছে। অভিযোগের উত্তরে বামপন্থীরা যুক্তি দেন - ওই মূল্যায়ন সিপিআই নেতা, প্রাবন্ধিক ভবানী সেনের ব্যক্তি মূল্যায়ন। ভবানী সেনের ব্যক্তি মূল্যায়ন কমিউনিস্ট পার্টির দলগত মূল্যায়ন ছিল না। মজা হলো, পক্ষ এবং বিপক্ষের লোকজন যদি একটু তথ্যনিষ্ঠ হতেন, যদি তারা জানতে চেষ্টা করতেন নিজের শ্রেণী অবস্থান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের আত্ম মতামতটি ঠিক কি ছিল, তাহলে তারা একটি আশ্চর্য তথ্যের খোঁজ পেতে পারতেন। তারা দেখতে পেতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নিজেই নিজেকে বলতেন - " জাত - বুর্জোয়া "!  

সাহিত্যকে শ্রেণী দৃষ্টিতে বিচার করার বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের পছন্দ ছিল না। সাহিত্য বিচারে ভাব এবং অন্তরের সম্পদকেই রবীন্দ্রনাথ বিবেচ্য মনে করতেন। সেই প্রসঙ্গেই ১৭.০৩.১৯৩৯ এর চিঠিতে অমিয় চক্রবর্তীকে তিনি লিখছেন - ময়মনসিংহগীতিকা পড়ে তিনি খুবই আনন্দ পেয়েছেন। শ্রেণী বিচারে ময়মনসিংহগীতিকা হয়ত প্রলেতারিয়েত। আর তিনি নিজে জাত - বুর্জোয়া। তাতে গ্রন্থটির রসাস্বাদনে তার কোন অসুবিধা হয়নি। স্পষ্টতই বোঝা যায়, নিজের শ্রেণী অবস্থান সম্পর্কে কতটা অকপট ছিলেন, কতটা স্বচ্ছ ধারণা রাখতেন রবীন্দ্রনাথ। 

বুর্জোয়া শব্দটি যে গালাগালি নয়, ওইটি যে একটি শ্রেণীগত অবস্থানবাচক শব্দ, তা তথাকথিত রবীন্দ্র অনুরাগী দক্ষিনপন্থীরা না বুঝলেও, রবীন্দ্রনাথ বুঝতেন। নিজের সম্পর্কে " জাত বুর্জোয়া " বিশেষণ ব্যবহারে তাই কোনও কুন্ঠা ছিল না তার। নিজের শ্রেণীগত অবস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলেই হয়ত তার পক্ষে শ্রেণীগত অবস্থানের উর্ধ্বে ওঠার প্রচেষ্টা সম্ভব হয়েছিল। তার কৃষি সমবায় গঠনের প্রচেষ্টা, সোভিয়েত প্রীতি, সোভিয়েত ব্যবস্থার প্রতি তার অকুন্ঠ সমর্থন মোটেই কাকতালীয় নয়।

রবীন্দ্রনাথকে " বুর্জোয়া কবি " বললে কি তার সৃষ্টিকে অপমান করা হয়? মোটেই না। বরং উল্টো। লেনিন প্রলেতারিয় সংস্কৃতি প্রসঙ্গে লিখেছেন - প্রলেতারিয় সংস্কৃতি আকাশ থেকে পড়বে না, বাতাস থেকেও তৈরী হবে না। বুর্জোয়া সংস্কৃতির যা কিছু বৈপ্লবিক,যা কিছু মহান, তার প্রকৃত উত্তরসূরি হয়ে উঠতে হবে প্রলেতারিয়েতকে। একমাত্র এভাবেই প্রলেতারিয়েতের পক্ষে নিজস্ব সংস্কৃতির নির্মান সম্ভব। 

সোভিয়েতে  পুশকিন, গোগোল, টলস্টয়, চেকভ বর্জিত হননি। তারাও সামন্ত অথবা বুর্জোয়াই ছিলেন। কেউই প্রলেতারিয়েত বা কমিউনিস্ট ছিলেন না। তাদের শ্রেণীগত অবস্থান গোপন না করেই সোভিয়েত কমিউনিস্টরা তাদের সৃষ্টিকে ধারণ করেছেন। তাদের সাহিত্যগত ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হয়েই তারপর নির্মিত হয়েছে - সোভিয়েত সাহিত্য।

ছবি : অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠিটি।

শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

পাউন্ড ফর পাউন্ড ~ ডঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

নিউইয়র্ক হারলেম এর ১৫ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চা ছেলেটা বন্ধুর বার্থ সার্টিফিকেট চুরি করেছিল। বয়েস কমানোর জন্য নয়। বাড়ানোর জন্য। না হলে বক্সিং টুর্নামেন্ট এ নামার অনুমতি পাচ্ছিল না। রাতারাতি ওয়াকার স্মিথ জুনিয়ার হয়ে গেল রে রবিনসন। 

ওয়াটারটাউন নিউইয়র্কে ম্যাচ চলার সময়ে দর্শক আসন থেকে এক মহিলা বলে ফেললেন, কী মিষ্টি ছেলে, চিনির মতো মিষ্টি। ব্যাস। নামের সাথে জুড়ে গেল শব্দটা, সুগার। অন্য বক্সাররা, তাদের ট্রেনাররা আর ক্রীড়া সাংবাদিকরা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সেরা বক্সার সেই পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির ছেলেটি। নাম সুগার রে রবিনসন। 

গড়পড়তা আমেরিকানদের তুলনায় ছোটখাটো শরীর দিয়েছিল প্রকৃতি। অসম্ভব পরিশ্রম, অতুলনীয় ডেডিকেশন, মনের জোর এগুলো দিয়ে সেই অসুবিধে অতিক্রম করেছিল রবিনসন।

১৯৯৯ সালে রবিনসন "শতাব্দীর সেরা ওয়েলটারওয়েট বক্সার"; "শতাব্দীর সেরা মিডলওয়েট বক্সার" আর "শতাব্দীর সেরা ফাইটার" আখ্যা পান এসসিয়েটেড প্রেস এর কাছ থেকে। ২০০৭ সালে ইএসপিএন এর"সর্বকালের সেরা পঞ্চাশ জন বক্সার" এর যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে প্রথম নাম ছিল রবিনসন এর। 

মহম্মদ আলি এর নাম বেশি বিখ্যাত। তিনি গ্রেটেস্ট বলে পরিচিত। তিনি তাঁর প্রতিভার জোরে বিখ্যাত হয়েছেন। তাঁকে ছোট করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু আলী আর রবিনসন এর তুলনার প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। এরা দুজনে কোনোদিন একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেন নি। কারণ বক্সিং এর নিয়ম। বক্সারের দৈহিক ওজন অনুযায়ী কতোগুলো বিভাগ তৈরি হয়।  ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা আলী ছিলেন হেভিওয়েট বিভাগের খেলোয়াড়। 

রবিনসন এর দক্ষতা ও প্রতিভায় মুগ্ধ ক্রীড়া সাংবাদিকরা একটা শব্দবন্ধ আবিষ্কার করে ফেলেন তাকে অন্য বিভাগের বক্সারদের সাথে তুলনা করার জন্য "pound for pound"  (ও দেশে ওজন মাপা হয় পাউন্ড দিয়ে)।

মহম্মদ আলী, জো লুই, সুগার রে লিওনার্দ এর মতো বিখ্যাত বক্সাররা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন যে বক্সিং খেলাটার ফেয়ার প্লে স্পিরিট মানতে গিয়ে হেভিওয়েট এর সাথে ওয়েলটার ওয়েট এর লড়াই চলে না ঠিকই তবে "পাউন্ড ফর পাউন্ড" নীতি মানলে ওই সুগার রে রবিনসনই হলেন ক্রীড়া ইতিহাসের সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা। পাউন্ড ফর পাউন্ড হল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির একটা কনসেপ্ট বা ধারণা। সমানুপাতিক প্রতিদ্দ্বন্দিতা। 

বক্সিং ফেয়ার প্লে নিয়ম অনুযায়ী কোনোদিনই ১০০ পাউন্ড ওজনের কোনো বক্সার কে বলা হবে না, বাদবাকি নিয়মকানুন তো একই, তাই তুমি ভাই ২০০ পাউন্ড ওজনের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নেমে যাও। ভাই রবিনসন, একটু নামো তো দেখি মহম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। কারণ ওটা ফেয়ার প্লে নয়। 

ঠিক তেমনভাবে মাধ্যমিক মেধা তালিকায় যারা স্থান করে নিয়েছে তাদের মেধা বুদ্ধি পরিশ্রমকে কোনোমতেই ছোট করা যায় না। কিন্তু এই সেরার সেরাদের সাথে মেধাতালিকায় যারা জায়গা পায় নি তাদের তুলনা করার প্রশ্নটা অনায়াসে চলে আসে। আমরা হামেশাই করে থাকি। এবং করে থাকি অনায়াসে ভুলে যে এই প্রতিযোগিতায় কোনো লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছিল না। ছিল না কোনো "pound for pound" নিয়ম। ১০ জন গৃহ শিক্ষক সহ সারাদিন মুখ গুঁজে পড়াশোনা করার সুবিধে পাওয়া ছাত্র/ছাত্রীর সাথে বাবা হারা সংসারে মায়ের মুদির দোকান চালানো সামান্য রোজগারে বা কমিউনিস্ট পার্টির হোলটাইমারের সামান্য  রোজগারে বড় হয়ে ওঠা বা কোনো গৃহ শিক্ষক এর সাহায্য ছাড়াই পরীক্ষা প্রস্তুতি নেয়া কোন এক ছাত্র/ছাত্রীর সাথে তুলনা আমরাই করে থাকি। 

জীবনতো আর বক্সিং রিং নয়, ফেয়ার প্লে আইন খাটে না। ফেদারওয়েট এর বিরুদ্ধে অনায়াসে নেমে যায় হেভিওয়েট। আমরা হটাৎ চমকে যাই যদি দেখি সুগার রে রবিনসনের মতো কোনো চ্যাম্পিয়ন চলে আসে। ওই পার্টি হোল  টাইমার উমেশ প্রসাদ এর ছেলেটার কথাই ধরা যাক।  বালুরঘাট হাই স্কুলের ছাত্র উদয়ন প্রসাদ বাবা মা ভালোবেসে যার ডাকনাম দিয়েছেন লেনিন। মাধ্যমিকে তৃতীয় স্থান পাওয়া লেনিন। ভারী মিষ্টি চেহারার ছেলে ঠিক যেমনটি ছিলেন সুগার রে রবিনসন। অভাব অনটনের সাথে লড়াই করে বড় হওয়া উদয়ন/লেনিন।

ওকে এই অসম প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে বলে দুঃখ করার কোনো জায়গা নেই। আবারো বলি যে জীবন এর খেলায় বক্সিং এর কোনো নিয়ম চলে না। রিংয়ে নেমে যেতে হয়। তারপরে পাঞ্চ আর জ্যাব আর হুক। নানা ঘুষিতে অনায়েসেই হেভিওয়েটরা বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে ফেদারওয়েটকে। আমরা খালি দর্শক আসনে বসে দেখে যাই কি ভাবে অসম্ভব পরিশ্রম, অতুলনীয় ডেডিকেশন, মনের জোর দিয়ে লড়াই চালিয়ে যায় একের পর এক ফেদারওয়েট। ঘুঁষি খেয়ে মাটিতে পরে গিয়েও নক আউট হয়ে যায় না।  আবার উঠে দাঁড়ায় লড়াই এর আঙিনায়। অদৃশ্য রেফারি বারবার গুনে যান এক, দুই, তিন, চার .....

মুখের কষ বেয়ে বয়ে আসা রক্তধারাকে গ্লাভসের উলটো পিঠে মুছে নিয়ে লঘু পায়ে ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে  লড়াই দেয় ছিপছিপে চেহারার  আমাদের রবিনসন উদয়ন/লেনিন

সুধী দর্শকমন্ডলী, যারা রিং এর চারপাশে বসে আছেন, দিল থামকে বৈঠিয়ে জনাব। পিকচার আভি বাকি হ্যায়। আরো হাজারো উদয়নের লড়াই এখনো বাকি। পৃথিবী একদিন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে, হবেই। করে ছাড়বো আমরা। পাউন্ড ফর পাউন্ড। উদয়ন/লেনিন এর কাছে, লেনিনদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার। "পাউন্ড ফর পাউন্ড"

বুধবার, ১ মে, ২০২৪

পয়লা মে এবং গোপালবাবুর গপ্পো ~ ইন্দ্রনীল সুমন

গোপালবাবু কোমরের বেল্টের চামড়া উঠে গেলে জামা গুঁজে পরেন না, বলেন গরম লাগে... গোপালবাবু মাসের সতেরো তারিখের পরে মেট্রো থেকে নেমে রিক্সা নেন না, হেঁটে আসেন, কোলেস্টেরলটা ঐ সময় একটু বেশীর দিকে থাকে, গোপালবাবু মাঝারি সাইজের লাইলেনটিকাকে চারপিস করতে বলে মাছকাটার লোকের কাছে ঝামটা খান, গোপালবাবু বসের ছেলের স্কুলপ্রজেক্টের খাতা রেডি করে দেন ছুটির পরে... ফ্রিতে, গোপালবাবু অফিস ফেরতা তিনদিন টিউশন করেন, আরও দুটো বাড়ানোর চেষ্টায় আছেন, গোপালবাবু সকাল আটটা কুড়ির মেট্রো ধরেন, অফিস ছাড়েন সন্ধ্যা সাতটায়, গোপালবাবু "শ্রমিক" নন, গোপালবাবু অফিসের দুই নম্বর, মালিকের পরেই, গোপালবাবুর ইচ্ছা হয় অফিস যাওয়ার আগে একটু বাগান করার...ইচ্ছা হয় অফিসের পরে বাড়ি ফিরে ছেলেকে দুটো বিপরীতমুখী ট্রেন আর প্লাটফর্মের অঙ্ক বোঝাতে বোঝাতে ছোটোবেলায় দেখা বৃষ্টি ভেজা খুর্দা রোড স্টেশনের ছবি আঁকতে... গোপালবাবুর বিবাহবার্ষিকীর ভোরে অফিসট্যুরে যেতে ইচ্ছা করে না... গোপালবাবু কলেজজীবনে হে মার্কেটের নাম শুনেছিলেন কি না মনে করতে পারেন না... গোপালবাবু "শ্রমিক" নন, গোপালবাবু অফিসের দু-নম্বর...