বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

প্রতিষ্ঠান্ন ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

যা যা ছিল এলিট মধ্যবিত্তের নিজস্ব অভিজ্ঞান, সবই কালের গতিতে ম্লান। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন সে'ও তো নিভন্ত প্রায়।

তবে আদৌ সাহিত্য নিয়ে এত মধ্যবিত্ত কচকচি কেন? নতুন মধ্যবিত্তর তো রয়েছে আইপিএল, এল ক্লাসিকো। ক্লাসিক্যাল পানুচর্চা বা প্যানপেনে টিভি সিরিয়াল। এখন সব অশৈলী কাণ্ডই জিও মানে গভর্নমেন্ট অর্ডারে ঘটে নইলে এনজিওরা ঘটায়। 

এ' দু'টির যে কোনও একটি থাকতেই হবে উদ্যোগের মূলে। তথাকথিত 'প্রতিষ্ঠান'ই একমাত্র 'প্রতিষ্ঠান্ন' দেবে এ'টা নেহাত বাতিল এক বস্তাপচা ধারণা। এই ধর্মযুদ্ধে মতান্তরে এই অধর্মযুদ্ধে কেউই অপ্রতিষ্ঠান নয়। বড় পত্রিকা ছোট পত্রিকা সকলেই 'প্রতিষ্ঠান'।সব খানেই সেই প্রসাদ নামের কল্পিত উচ্ছিষ্ট পাবার উমেদারির প্রতিযোগিতার আসর। 

হ্যাঁ, পাঠকসংখ্যা একটা ব্যাপার বৈকি। সেই পাঠক নোবেল প্রাইজের কমিটিতে থাকেন না। নোবেল চুরি করেন না। আন্দাজ করি ইদানিং সাহিত্যও পড়েন না। ছাপার অক্ষরগুলি গল্পের ছদ্মবেশে, প্রবন্ধের রাজপোষাকে, খাট-সাহিত্য আর খাঁটি সাহিত্যের মাঝামাঝি কোনও এক অবস্থানে দোদুল্যমান থাকে যদিও বা, কবিতার পাতাগুলোকে স্বয়ং কবিও নিজের লেখার পাতাটি ছাড়া গ্রাহ্য করেন না। তবু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে কার না ইচ্ছে করে। তাই সম্পাদককে ছাপার অক্ষরে চেতাবনি দিতে হয়, পকেটে কবিতা গুঁজে দিয়ো না কেউ… টেলিফোন তদবির নিষিদ্ধ …ইত্যাদি।

'সম্পাদক'এর কাজটুকু নিশ্চিত ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক। কোন লেখাটি পত্রিকার মানবর্দ্ধক, কোনটি বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক, কোনটি পারস্পরিক পিঠ চুলকানোর আসর থেকে লব্ধ, কোন লেখাটি পঞ্চবানবিদ্ধ, এই এত সব বিবেচনা করে যে প্রতিষ্ঠান তারই নাম সম্পাদক, সে তথাকথিত 'বড়' বা পাতিরাম রিজেকটেড আতিপাতি যে কোনও পত্রিকারই হোক না কেন। ব্যবসা, যশলোভ আর পাঠকসংখ্যা ছোট বড় সবার টার্গেট।টাটা বিড়লা আম্বানি বড় তাই লড়াইহীন নরক, আর পাড়ার ঘাম ঝরানো মুদি দোকানি ক্ষুদ্র সংগ্রামী ভাই আমার, এরকম প্রলেতারিয়েত ভাবনা অলীক।

বামেদের গাঁ ছাড়া করার মহান কাজটাই তারুণ্যের প্রতীক ছিল বুঝি? তবে কেন ধন্দ লাগে যখন শুনি যে সে' কাজে ব্রতী পশুখামারের তরুণ তুর্কী ঘোড়ারা ভোটের মরশুমে খেপ খাটতে গেছে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের হয়ে? লিটল ম্যাগাজিনের 'নন্দীগ্রাম' সংখ্যাও কি কম দেখা গেছিল সে সময়? সবটাই প্রতিষ্ঠান আর তার দখলদারির খেলা।

তাই বলি কে প্রতিষ্ঠানের মুখ আর কে মুখোস, কার কোঁচড়ে ডলার আছে আর কার মুঠোতে ছড়ানোর যোগ্য খইটুকুও নেই, এ তর্ক স্থগিত রেখে যে যতটুকু লিখতে পারে লিখে যাক। কেউ লেখা চাইবে। কারওর দরজায় মাথা খুঁড়তে হবে। আডৌ কেউ না ছাপলেও নেট আছে। 

ও হো বলতে ভুলেছি। নেটজগতও তো অংশত প্রাতিষ্ঠানিক আজকাল। মানে ওই নেটজিনে লেখক হিসেবে প্রবেশাধিকার, ছাপা কাগজের মতই রিজার্ভড। হে যশোকামী লেখক। হিংসে করে লাভ নেই।ভেবে দেখলে সে'টাও দরকারি এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ষোলো আনার ওপর আঠার আনা।

পার্থ, ফললাভের আশা কোরো না। মুখ ও মুখোস দুই প্রতিষ্ঠানই মৃত। একমাত্র জীবিত তুমি। তুমি সব্যসাচী। অক্লান্ত দু'হাত সমানে চলতে থাকুক।

আর তোমার অস্ত্র হোক তোমার জাগ্রত অর্দ্ধজাগ্রত অথবা ঘুমন্ত কিন্তু স্বপ্নবিদ্ধ সেরিব্রাম।

এ প্রপঞ্চে ~ অমিতাভ প্রামাণিক

এবার ভোটে সবার ঠোঁটে ঝুলছে এ প্রশ্নটা,
দিদি এবার কার কপালে দেবেন যে ভাইফোঁটা!
সেটা জানবে বলে –

সেটা জানবে বলে সদলবলে টিভির রিপোর্টারে
সুযোগ পেলেই মাইক হাতে খুব জ্বালিয়ে মারে!
দিদির সময় আছে?

দিদির সময় আছে এসব গাছে এক্ষুণি জল ঢালার?
বিয়ের আগেই কেউ কখনো কাউকে পরায় মালা!
যত দুষ্ট লোকে

যত দুষ্ট লোকে তাই দুচোখে লাগিয়ে নিয়ে ঠুলি
দিনদুপুরে রাস্তাঘাটে গাইছে ব্রজবুলি!
তাতে বয়েই গেল –

তাতে বয়েই গেল! ও ভাই, হ্যালো, শখ যদি সব জানার,
লিখছো না ক্যান উন্নতি এই রাজ্যে ষোল আনা!
তোরা অন্ধ সেজে

তোরা অন্ধ সেজে হনুর লেজে লাগিয়ে তারাবাতি
এঁড়ে গরুর দুধ দু'তে চাস, ছিলিস ভালো তাঁতী!
তার রাখিস খেয়াল?

তার রাখিস খেয়াল, ভিট্‌রে শেয়াল, গেয়ে হুক্কাহুয়া
ভোটের বাজার গরম করিস উড়িয়ে দিয়ে ধুঁয়া!
সব গেলিই ভুলে

সব গেলিই ভুলে তোর মাশুলে জমিয়ে সিকি-আনি
জেলখানাতে রাখছি পুষে সুদীপ্ত-দেবযানী!
ওদের আর্ট গ্যালারি

ওদের আর্ট গ্যালারি গয়না-শাড়ি আংটি-পলা-শাঁখা
সব বিলাবো; আর্ট তো আমার, কয়েক কোটি টাকা!
তোরা সব পাবি রে

তোরা সব পাবি রে, আস্তে ধীরে, যার যত চাই খুশি –
ছিবড়ে হওয়া মাংসটা, তার হাড্ডি আমিই চুষি!
এবার ভোটের পরে

এবার ভোটের পরে বন্ধ ঘরে ডাকবে তো নিশ্চয়ই।
বলবে ডেকে, সাপোর্টটা দাও, এইখানে টিপসহি!
তখন বলব হেসে

তখন বলব হেসে, আমার দেশে লক্ষ নরনারী
আমায় শুধায় ফ্রীতে কবে চড়বে রেলের গাড়ি!
ওদের মুখটা চেয়ে

ওদের মুখটা চেয়ে অলপ্পেয়ে মন্ত্রীসভায় হানা
দিয়ে আবার বাগিয়ে নেব রেলদপ্তরখানা!
তাতে বুঝলে ভায়া

তাতে বুঝলে ভায়া এই বেহায়া রাজ্য যাবে ফুলে –
শিলান্যাসে ভরিয়ে দেবে মদন আরাবুলে!
যেমন আগেও করা!

যেমন আগেও করা বন্যা খরা তছরুপে বর্ষণে
ভাইরা আমার রেসপন্স দেয় হুমকি ও ধর্ষণে!
ওরা আমার পোষা

ওরা আমার পোষা, ফলের খোসা চিবিয়ে হাঁকে জোরে,
রাজ্যে কোথায় কী হয়েছে চৌত্রিশ বচ্ছরে!
এটাই মন্ত্র ওদের

এটাই মন্ত্র ওদের, এর জোরে ঢের বাগিয়ে নেওয়া আসন
দ্রৌপদীদের সামলে রাখে দু-চারটে দুঃশাসন!
ওরে, সব সাজানো –

ওরে সব সাজানো তোমরা জানো এই শাড়ি, নীল পাড়ে
হাওয়াই চটির সংসারখান টানছি আমি ধারে!
আমি শিল্পী মানুষ

আমি শিল্পী মানুষ চৈনিক-রুশ সব ব্যাটাদের পাতে
ছাই দিয়ে ডান্স করছি এখন শারুখ খানের সাথে!
এটা চেঞ্জ না তো কী?

এটা চেঞ্জ না তো কী, এ আমলকি, চিবাও একটু পরে
জল খেলে মুখ মিষ্টি হবেই, তদ্দিনে ঝরঝরে
তোদের ভবিষ্যৎও!

তোদের ভবিষ্যৎও আরও কত উঠবে ফুলে ফেঁপে
আমার চ্যানেল, আমার কাগজ সব দেখাবে ছেপে!
তোরা সেই বুঝে দে

তোরা সেই বুঝে দে পরম জেদে চুন চুনকে, গুণে
ভোটটা তাপস-দেব-বাইচুং শতাব্দী-মুনমুনে!
এদের গ্ল্যামার কত

এদের গ্ল্যামার কত আর উদ্ধত বুক ভেসে যায় জলে
বই বানাবো এদের নিয়ে দেখবি বসে হলে!
এদের মেকাপ দিয়ে

এদের মেকাপ দিয়ে খুব সাজিয়ে ছাড়ব এক এক জনা
চিত্ত-নিবেদিতা-বিবেক সুভাষ-রবীন্দ্রনাথ!
তখন বুঝবি তোরা

তখন বুঝবি তোরা দুষ্টু ছোঁড়া, লাগিস আমার পিছু!
কী যায় আসে কোনটা, জেনে কাঁঠাল নাকি লিচু!
ওরে, সাজানো সবকিছু ...
ওরে, সাজানো সবকিছু ...

২রা বৈশাখ ১৪২১
১৬ই এপ্রিল ২০১৪

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

হাল্লা যখন যুদ্ধে চলেন ~ সোমনাথ রায়

হাল্লা যখন যুদ্ধে চলেন চ্যানেল জুড়ে ঢিচক্যাঁও
পোখরান আর কেওনঝোড়ে ম্যাকিনসেতে মিশ খাও
হিন্দি পাকি ক্রিকেটম্যাচে ক্ষান্তবুড়ির ঠানদি
দল ভারি হয় শব মিছিলে, স্বপ্নে ছিলেন গান্ধি
একশ ভাইয়ের কেউ ছাড়িনি খেমের রুজের পাঁচগ্রাম
অক্ষৌহিনী হত্যালীলায় বাবরি ভাঙি, রামরাম-
যুদ্ধ যখন 'হল্লা বোল'-এর, সংখ্যালঘুর ঘরদোর
সব জ্বলে যায়, বেস্টবেকারি- অউশটিশের অফশোর
ট্রোজান অশ্ব, খোঁজ আন বশ্য বক্সাইটের সম্ভার
পার করেগা সালোয়া জুদুম আব কি বারের সরকার।।

ভোটের ছড়া ~ অমিতাভ প্রামাণিক

ভোটের কুকুর ঘেউ ডেকেছে,

ভোটের বিড়াল মিউ বলে।
তাতেই কাঁপে ভোটারছানা
ভয়ভীতিতে, বিহ্বলে।

পাড়ার দাদা ডিগবাজি খায়,
আস্তে বলে বৌদিকে –
ভোট না দিলেই কেচ্ছা তোমার
ছড়িয়ে দেব চৌদিকে।

অবশ্য ঐ রোগ যে তোমার,
দিচ্ছি আমি টোটকা না?
ধাপ্পা তো নয়, চাইছি শুধু
ছাপ্পা তোমার, ভোটখানা।

ভোটটা দিলেই রাস্তা হবে,
ইস্কুল হবে, নিউ কলেজ –
তোমার বরের চাকরি হবে, 
জল আসবে গো টিউকলে।

ওদের পাটি-র সব ভুলভাল,
নিম গাছে কি শিম ফলে?
ভোটটা দিও বৌদি তুমি
আমার পাটির সিম্বলে।

ভোট পেরোলেই এসব দাদা
কোথায় হাওয়া, ফুক্কা, হুঁ!
ভোটের গরু হাম্বা ডাকে,
ভোটের শিয়াল হুক্কা-হু!

১৩ই এপ্রিল ২০১৪


দুইখান কতা ~ প্রকল্প ভট্টাচার্যয়

-দাদা, ভোট আসচে হুনলুম?
-হ্যাঁ, তাতে তোমার অসুবিধে কোথায়?
-না, মানে, যদি এই একই পোধানমন্তি থাকেন, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি নতুন কেউ হ'ন, তা'লে দুইখান কতা আছে।
-নতুন কেউ ই হবেন।
-ওই একই পাটির না অন্য পাটির? যদি একই পাটির কেউ হ'ন, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি অন্য পাটির কেউ হ'ন, তা'লে দুইখান কতা আছে। 
-অন্য পার্টিই তো মনে হচ্ছে।
- তা কত্তা বিজেপি, না আপ? যদি আপ হয়, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি বিজেপি হয়, তা'লে দুইখান কতা আছে।
-মনে ত হচ্ছে বিজেপিই হবে।
-ওহো, তা'লে পোধানমন্তি কে হবেন, আদবানি না মোদি? যদি আদবানি হ'ন, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি মোদি হ'ন, তা'লে দুইখান কতা আছে।
-মোদিজীই তো হবেন নির্ঘাত।
-তিনি কি সত্যিই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চাইবেন? যদি চেয়ারে বসে পোতিহ্যুতি ভুলে যান, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি ভুলে না যান, তা'লে দুইখান কতা আছে।
-ভুলবেন কেন! নিশ্চয়ই সেটাই চাইবেন!
-আচ্ছা, সেটা কীভাবে চাইবেন? হান্তিপূর্ণভাবে, নাকি তালিবানি কায়দায়? যদি হান্তিপূর্ণভাবে হয়, তা'লে কোনো কথা নাই। যদি তালিবানি কায়দায় হয়, তা'লে দুইখান কতা আছে।
-উনি এবং ওনার দলবল তো শান্তিপূর্ণ নয়, তালিবানি কায়দাতেই বিশ্বাসী, যা দেখছি শুনছি!
-তা'লে হালার ভোটই দিমু না!!