বাল্মিকী রামায়ণের যুদ্ধ কান্ডের ১১৫তম এবং ১১৬তম সর্গ দুটিতে লঙ্কার অশোকবনে রামের সাথে সীতার দেখা হওয়ার পর তাঁদের কথোপকথন বাংলায় অনুবাদ করলাম। 🙏🙏
বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধ কান্ড ১১৫ সর্গ
প্রথম শ্লোকঃ
तां तु पार्श्वे स्थितां प्रह्वां रामः संप्रेक्ष्ये मैथिलीम् |
हृदयान्तर्गतं भावं व्याहर्तुमुपचक्रमे ||
অতঃপর অবনতা মৈথিলীকে পার্শ্বে দেখিয়া রাম হৃদয়ের অন্তর্গত ভাব ব্যক্ত করিলেন।
দ্বিতীয় শ্লোকঃ
एषासि निर्जिता भद्रे शत्रुं जित्वा रणाजिरे |
पौरुषाद्यदनुष्ठेयं मयैतदुपपादितम् ||
হে ভদ্রে, শত্রুকে রণক্ষেত্রে পরাজিত করিয়া তোমাকে আমি জয় করিয়াছি। পৌরুষের দ্বারা যাহা করণীয়, তাহা আমি সম্পন্ন করিয়াছি।
তৃতীয় শ্লোকঃ
गतोऽस्म्यन्तममर्षस्य धर्षणा संप्रमार्जिता |
अवमानश्च शत्रश्च युगपन्निहतौ मया ||
আমার লজ্জাজনক অবস্থা এবং আমার প্রতি অন্যায়ের অবসান হইয়াছে। আমার অবমাননাকারী এবং আমার শত্রু যুগপৎ আমার দ্বারা নিহত হইয়াছে।
চতুর্থ শ্লোকঃ
अद्य मे पौरुषं दृष्टमद्य मे सफलः श्रमः |
अद्य तीर्णप्रतिज्ञोऽहं प्रभवाम्यद्य चात्मनः॥
অদ্য আমার পৌরুষ প্রদর্শিত হইয়াছে, অদ্য আমার শ্রম সফল হইয়াছে। অদ্য আমি প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিয়াছি, অদ্য আমি নিজেই নিজের প্রভু।
পঞ্চম শ্লোকঃ
या त्वं विरहिता नीता चलचित्तेन रक्षसा |
दैवसंपादितो दोषो मानुषेण मया जितः ||
যে তুমি এক চপলমতি রাক্ষসের দ্বারা অপহৃতা হইয়াছিলে, আমি এই মনুষ্য, দৈবদোষের অপসারণ করিয়া তাহাকে জয়লাভ করিয়াছি।
ষষ্ঠ শ্লোকঃ
संप्राप्तमवमानं यस्तेजसा न प्रमार्जति |
कस्तस्य पौरुषेणार्थो महताप्यल्पचेतसः ||
যিনি নিজের তেজের দ্বারা নিজ অবমাননা দূর করিতে না পারেন, সেই অতি অল্পচেতন পুরুষের পৌরুষের কি অর্থ?
সপ্তম শ্লোকঃ
लङ्घुनं समुद्रस्य लङ्कायाश्चापि मर्दनम् |
सफलं तस्य च श्लाघ्यमद्य कर्म हनूमतः॥
যিনি সমুদ্র লঙ্ঘন করিয়া লঙ্কা ধ্বংস করিয়াছিলেন, সেই হনুমানের প্রশংসনীয় কর্ম অদ্য সফল হইয়াছে।
অষ্টম শ্লোকঃ
युद्धे विक्रमतश्चैव हितं मन्त्रयतस्तथा |
सुग्रीवस्य ससैन्यस्य सफलोऽद्य परिश्रमः ||
যিনি যুদ্ধে বিক্রম দেখাইয়াছেন এবং হিতকারী মন্ত্রণা দিয়াছেন, সেই সুগ্রীব এবং তাঁহার সেনাদিগের পরিশ্রম অদ্য সফল হইয়াছে।
নবম শ্লোকঃ
विभीषणस्य च तथा सफलोऽद्य परिश्रमः |
विगुणं भ्रातरं त्वक्त्वा यो मां स्वयमुपस्थितः ||
যে বিভীষণ তাঁহার গুণহীন ভ্রাতাকে পরিত্যাগ করিয়া স্বয়ং আমার নিকট উপস্থিত হইয়াছেন, তাঁহার পরিশ্রম অদ্য সফল হইয়াছে।
দশম শ্লোকঃ
इत्येवं वदतः श्रुत्वा सीता रामस्य तद्वचः |
मृगीवोत्फुल्लनयना बभूवाश्रुपरिप्लुता ||
রামের মুখে এইরূপ বচন শুনিয়া মৃগীর ন্যায় উৎফুল্লনয়না সীতা অশ্রুপরিপ্লুতা হইলেন।
একাদশ শ্লোকঃ
पश्यतस्तां तु रामस्य समीपे हृदयप्रियाम् |
जनवादभयाद्राज्ञो बभूव हृदयं द्विधा ||
নিজ সমীপে হৃদয়প্রিয়াকে দেখিয়া জন অপবাদের ভয়ে রামের হৃদয় দ্বিধাগ্রস্ত হইল।
দ্বাদশ শ্লোকঃ
सीतामुत्पलपत्राक्षीं नीलकुञ्चितमूर्धजाम् |
अवदद्वै वरारोहां मध्ये वानररक्षसाम् ||
বানর এবং রাক্ষসদিগের মধ্যে উৎপলাক্ষী, নীলকুঞ্চিতকেশী, সুনিতম্বিনী সীতাকে দেখিয়া (রাম) এইরূপ বলিলেন
ত্রয়োদশ শ্লোকঃ
यत्कर्तव्यं मनुष्येण धर्षणां प्रतिमार्जता |
तत्कृतं रावणं हत्वा मयेदं मानकाङ्क्क्षिणा ||
নিজ অপমানের প্রতিকার করিবার জন্য মনুষ্যের যাহা কর্তব্য, সম্মানার্থে রাবণকে হত্যা করিয়া আমি তাহা করিয়াছি।
চতুর্দশ শ্লোকঃ
निर्जिता जीवलोकस्य तपसा भावितात्मना |
अगस्त्येन दुराधर्षा मुनिना दक्षिणेव दिक् ||
যে দক্ষিণ দিক বিশুদ্ধহৃদয় তপস্বী অগস্ত্যের পক্ষেও দুরতিক্রম্য ছিল, সেই জীবলোককেও (দেশকেও) আমি জয় করিয়াছি।
পঞ্চদশ শ্লোকঃ
विदितश्चास्तु भद्रं ते योऽयं रणपरिश्रमः |
सुतीर्णः सुहृदां वीर्यान्न त्वदर्थं मया कृतः ||
হে ভদ্রে, তোমার জানা উচিত যে এই রণকার্য যাহাতে আমি আমার সুহৃদদিগের বীরত্বের সাহায্যে উত্তীর্ণ হইয়াছি, তাহা তোমার নিমিত্ত করি নাই।
ষোড়শ শ্লোকঃ
रक्षता तु मया वृत्तमपवादम् च सर्वतः |
प्रख्यातस्यात्मवंशस्य न्यङ्गं च परिमार्जता ||
(আমি ইহা করিয়াছি) সর্বত্রব্যাপী অপবাদ হইতে রক্ষা পাইবার জন্য এবং আমার প্রখ্যাত বংশের হীনাবস্থার পরিমার্জনের জন্য।
সপ্তদশ শ্লোকঃ
प्राप्तचारित्रसंदेह मम प्रतिमुखे स्थिता |
दीपो नेत्रातुरस्येव प्रतिकूलासि मे दृढम् ||
চরিত্রসন্দেহ প্রাপ্ত হইয়া আমার সম্মুখে উপস্থিত তুমি নেত্ররোগীর সম্মুখে দীপের ন্যায় অত্যন্ত অবাঞ্ছিত হইয়া আছ।
অষ্টাদশ শ্লোকঃ
तद्गच्छ त्वानुजानेऽद्य यथेष्टं जनकात्मजे |
एता दश दिशो भद्रे कार्यमस्ति न मे त्वया ||
সেইহেতু হে জনকাত্মজা, অদ্য আমি তোমাকে এই দশ দিকের মধ্যে যে কোনও দিকে যথেচ্ছ যাইবার অনুমতি দিতেছি, তোমাকে দিয়া আমার আর কোনো কাজ নাই।
উনবিংশতি শ্লোকঃ
कः पुमांस्तु कुले जातह् स्त्रियं परगृहोषिताम् |
तेजस्वी पुनरादद्यात् सुहृल्लेख्येन चेतसा ||
কোন সদ্বংশজাত তেজস্বী পুরুষ পরগৃহে আশ্রিতা স্ত্রীকে প্রফুল্লচিত্তে পুনরায় গ্রহণ করিবে?
বিংশতি শ্লোকঃ
रावणाङ्कपरिक्लिष्टां दृष्टां दुष्टेन चक्षुषा |
कथं त्वां पुनरादद्यां कुलं व्यपदिशन् महत् ||
তুমি রাবণের অঙ্কে ক্লিষ্ট হইয়া, তাহার দুষ্ট চক্ষুর দ্বারা দৃষ্ট হইয়া কিরূপে আমার মহৎ কুলে পুনরায় গৃহীত হইবে তাহা বল।
একবিংশতি শ্লোকঃ
तदर्थं निर्जिता मे त्वं यशः प्रत्याहृतं मया |
नास्थ् मे त्वय्यभिष्वङ्गो यथेष्टं गम्यतामितः ||
তোমাকে আমি জয় করিয়াছি আমার হৃত যশের পুনরুদ্ধারের জন্য। তোমার সম্পর্কে আমার আর কোনো গভীর অনুভূতি নাই, তুমি যথা ইচ্ছা গমন করিতে পার।
দ্বাবিংশতি শ্লোকঃ
तदद्य व्याहृतं भद्रे मयैतत् कृतबुद्धिना |
लक्ष्मणे वाथ भरते कुरु बुद्धिं यथासुखम् ||
হে ভদ্রে, সেই হেতু অদ্য আমি কৃতবুদ্ধি হইয়া তোমায় বলিতেছি, তুমি যথাসুখে লক্ষ্মণ কিম্বা ভরতের প্রতি মনঃসংযোগ করিতে পার।
ত্রয়োবিংশতি শ্লোকঃ
शत्रुघ्ने वाथ सुग्रीवे राक्षसे वा विभीषणे |
निवेशय मनः सीते यथा वा सुखमात्मनः ||
শত্রুঘ্ন অথবা সুগ্রীব অথবা রাক্ষস বিভীষণ যাহার কাছে সুখী হইবে, হে সীতা তুমি তাহাতে মনোনিবেশ কর।
চতুর্বিংশতি শ্লোকঃ
न हि त्वां रावणो दृष्ट्वो दिव्यरूपां मनोरमाम् |
मर्षयेत चिरं सीते स्वगृहे पर्यवस्थिताम् ||
হে সীতা, তোমার ন্যায় দিব্যরূপা মনোরমা নারীকে স্বগৃহে অবস্থিত দেখিয়া রাবণ দীর্ঘকাল নিজেকে সংযত রাখিতে পারে না।
পঞ্চবিংশতি শ্লোকঃ
ततः प्रियार्हश्रवणा तदप्रियं प्रियादुपश्रुत्य चिरस्य मैथिली |
मुमोच बाष्पं सुभृशं प्रवेपिता गजेन्द्रहस्ताभिहतेव वल्लरी ||
ততঃপর চিরকাল প্রিয়বাক্য শ্রবণে অভ্যস্ত মৈথিলী প্রিয়মুখে এইরূপ অপ্রিয় বাক্য শুনিয়া হস্তীর দ্বারা আক্রান্ত লতার ন্যায় দীর্ঘক্ষণ কম্পমান হইয়া প্রভূত অশ্রু মোচন করিতে লাগিলেন।
ইতি ঋষি বাল্মিকী বিরচিত আদিকাব্য রামায়ণের যুদ্ধ কান্ডের পঞ্চদশোত্তর শততম সর্গ।
বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধ কান্ড ১১৬ সর্গ
প্রথম শ্লোকঃ
एवम् श्रुत्वा तु वैदेही परुषं लोमहर्षणम् |
राघवेण सरोषेण भृशं प्रव्यथिताभवत् ||
রাঘবের এরূপ রোষপূর্ণ কঠোর লোমহর্ষক কথা শুনিয়া বৈদেহী অত্যন্ত ব্যথিত হইলেন।
দ্বিতীয় শ্লোকঃ
सा तदश्रुतपूर्वं हि जने महति मैथिली |
श्रुत्वा भर्तृवचो रूक्षं लज्जया व्रीडिताभवत् ||
এতজনের সম্মুখে পতির এসকল অশ্রুতপূর্ব কথা শুনিয়া মৈথিলী লজ্জায় ব্রীড়াবনতা হইলেন।
তৃতীয় শ্লোকঃ
प्रविशन्तीव गात्राणि स्वान्येव जनकात्मजा |
वाक्षल्यैस्तैः सशल्येव भृशमश्रूण्यवर्तयत् ||
স্বীয় গাত্রে এইসকল সুতীক্ষ্ণ বাক্যবাণগুলির প্রবেশ অনুভব করিয়া জনকদুহিতা অজস্র অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিলেন।
চতুর্থ শ্লোকঃ
ततो बाष्पपरिक्लिष्टं प्रमार्जन्ती स्वमाननम् |
शनैर्गद्गदया वाचा भर्तारमिदमब्रवीत् ||
ততঃপর নিজ বাষ্পপূর্ণ আনন পরিমার্জন করিয়া ধীরে ধীরে গদগদ বাক্যে পতিকে বলিলেন।
পঞ্চম শ্লোকঃ
किं मामसदृशं वाक्यमीदृशं श्रोत्रदारुणम् |
रूक्षं श्रावयसे वीर प्राकृतः प्राकृताम् इव ||
হে বীর, কিহেতু আমার ন্যায় নারীকে এইরূপ দারুণ রুক্ষ বাক্য শুনাইতেছেন, যেরূপ কোনও সাধারণ পুরুষ কোনো সাধারণ নারীকে শুনাইয়া থাকে?
ষষ্ঠ শ্লোকঃ
न तथास्मि महाबाहो यथा त्वमवगच्छसि |
प्रत्ययं गच्छ मे स्वेन चारित्रेणैव ते शपे ||
হে মহাবাহু, আপনি যেরূপ ভাবিতেছেন, আমি সেইরূপ নহি। আমি নিজের চরিত্রের দিব্য দিয়া বলিতেছি, আমার কথা বিশ্বাস করুন।
সপ্তম শ্লোকঃ
पृथक्स्त्रीणां प्रचारेण जातिं त्वं परिशङ्कसे |
परित्यजेमां शङ्कां तु यदि तेऽहं परीक्षिता ||
আপনি আশঙ্কাবশতঃ আমাকে পতিতা স্ত্রীজাতিসদৃশ বলিয়া প্রচার করিতেছেন। যদি আমি আপনার দ্বারা পরীক্ষিতা হইয়া থাকি, তবে এই আশঙ্কা ত্যাগ করুন।
অষ্টম শ্লোকঃ
यद्यहं गात्रसंस्पर्शं गतास्मि विवशा प्रभो |
कामकारो न मे तत्र दैवं तत्रापराध्यति ||
হে প্রভু, যদি আমি গাত্রসংস্পর্শে যাইবার জন্য বাধ্য হইয়া থাকি, তবে তাহাতে আমার কোনও ভূমিকা নাই, তাহা দৈবের বশে হইয়াছে।
নবম শ্লোকঃ
मदधीनं तु यत्तन्मे हृदयं त्वयि वर्तते |
पराधीनेषु गात्रेषु किं करिष्याम्यनीश्वरा ||
আমার অধীন যে হৃদয়, তাহা আপনাতেই স্থির ছিল। পরাধীন এই গাত্রের আমি অসহায় অবস্থায় কি করিতে পারিতাম?
দশম শ্লোকঃ
सहसंवृद्धभावाच्च संसर्गेण च मानद |
यद्यहं ते न विज्ञाता हता तेनास्मि शाश्वतम् ||
হে মানদ, একসঙ্গে বৃদ্ধিলাভ করিয়া এবং এক সংসর্গে থাকিয়াও যদি আমি আপনার কাছে অজ্ঞাত হইয়া থাকি, তবে আমি চিরকালের জন্য হতসর্বস্ব হইলাম।
একাদশ শ্লোকঃ
प्रेषितस्ते यदा वीरो हनूमानवलोककः |
लङ्कास्थाहं त्वया वीर किं तदा न विसर्जिता ||
হে বীর, আমি লঙ্কায় থাকাকালীন যখন আপনি বীর হনুমানকে অবলোকন করিবার জন্য প্রেরণ করেন, সেই সময়েই কেন আমাকে বিসর্জন দিলেন না?
দ্বাদশ শ্লোকঃ
प्रत्यक्षं वानरेन्द्रस्य त्वद्वाक्यसमनन्तरम् |
त्वया सन्त्यक्तया वीर त्यक्तं स्याज्जीवितं मया ||
হে বীর, বানরশ্রেষ্ঠের মুখে আপনার দ্বারা ত্যক্ত হইবার সংবাদ শুনিবামাত্র আমি তাঁহার সম্মুখে জীবন ত্যাগ করিতাম।
ত্রয়োদশ শ্লোকঃ
न वृथा ते श्रमोऽयं स्यात्संशये न्यस्य जीवितम् |
सुहृज्जनपरिक्लेशो न चायं निष्फलस्तव ||
তাহা হইলে আপনার এই বৃথা শ্রমব্যয় হইত না, আপনার জীবনও বিপন্ন হইত না, আপনার সুহৃদজনেরও এই নিষ্ফল ক্লেশভোগ হইত না।
চতুর্দশ শ্লোকঃ
त्वया तु नरशार्दूल क्रोधमेवानुवर्तता |
लघुनेव मनुष्येण स्त्रीत्वमेव पुरस्कृतम् ||
হে নরশার্দুল, আপনি ক্রোধের বশবর্তী হইয়া আমার সহিত লঘু মনুষ্যের স্ত্রীর ন্যায় আচরণ করিলেন।
পঞ্চদশ শ্লোকঃ
अपदेशेन जनकान्नोत्पत्तिर्वसुधातलात् |
मम वृत्तं च वृत्तज्ञ बहु ते न पुरस्कृतम् ||
জনকের দ্বারা আমার জন্ম এক ছল, আমি বাস্তবে বসুধার সন্তান। আমার এই বৃত্তান্ত জানিয়াও হে বৃত্তজ্ঞ আপনি তাহার মর্যাদা দিলেন না।
ষোড়শ শ্লোকঃ
न प्रमाणीकृतः पाणिर्बाल्ये बालेन पीडितः |
मम भक्तिश्च शीलं च सर्वं ते पृष्ठतः कृतम् ||
আমার বাল্যকালে আপনি আপনার বাল্যাবস্থায় আমার পাণিপীড়ন (বিবাহ) করিয়াছিলেন, তাহার অমর্যাদা করিলেন, আমার ভক্তি, শীলতা সকলই আপনি অগ্রাহ্য করিলেন।
সপ্তদশ শ্লোকঃ
इति ब्रुवन्ती रुदती बाष्पगद्गदभाषिणी |
उवाच लक्ष्मणं सीता दीनं ध्यानपरायणम् ||
বাষ্পাকুল গদগদ কন্ঠে এত বলিয়া ক্রন্দনরতা সীতা দুঃখিত, চিন্তান্বিত লক্ষ্মণকে বলিলেন।
অষ্টাদশ শ্লোকঃ
चितां मे कुरु सौमित्रे व्यसनस्यास्य भेषजम् |
मिथ्यापवादोपहता नाहं जीवितुमुत्सहे ||
হে সৌমিত্র, আমার জন্য চিতা প্রস্তুত কর, যাহা আমার এই দুর্দশার ঔষধ। মিথ্যা অপবাদের ভাগিনী হইয়া আমি আর জীবিত থাকিতে ইচ্ছা করি না।
উনবিংশতি শ্লোকঃ
अप्रीतेन गुणैर्भर्त्रा त्यक्ता या जनसंसदि |
या क्षमा मे गतिर्गन्तुं प्रवेक्ष्ये हव्यवाहनम् ||
পতি যখন আমার চরিত্র সম্পর্কে অসন্তুষ্ট হইয়া জনসমক্ষে আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, তখন অগ্নিতে প্রবেশ করাই আমার একমাত্র গতি।
বিংশতি শ্লোকঃ
एवं ब्रुवाणा रुदती बाष्पगद्गदभाषिणी |
अब्रवील्लक्ष्मणं सीता दीनं ध्यानपरं स्थितम् ||
ক্রন্দনরতা সীতা বাষ্পাকুল গদগদ কন্ঠে গভীর চিন্তামগ্ন দুঃখিত লক্ষ্মণকে এই সকল বলিলেন।
একবিংশতি শ্লোকঃ
स विज्ञाय मनश्छन्दं रामस्याकारसूचितम् |
चितां चकार सौमित्रिर्मते रामस्य वीर्यवान् ||
রামের ইঙ্গিতে রামের মনোভাব জানিয়া বীর সৌমিত্র রামের মতানুসারে চিতা সাজাইলেন।
দ্বাবিংশতি শ্লোকঃ
न हि रामं तदा कश्चित्कालान्तकयमोपमम् |
अनुनेतुमथो वक्तुं द्रष्टुं वा प्यशकत्सुहृत् ||
সেই সময়ে রামের কালান্তক যমের ন্যায় মূর্তি দেখিয়া সুহৃদবর্গের কেহই তাঁহাকে কিছু বলিতে অথবা তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে সাহস করিল না।
ত্রয়োবিংশতি শ্লোকঃ
अधोमुखं ततो रामं शनैः कृत्वा प्रदक्षिणम् |
उपासर्पत वैदेही दीप्यमानं हुताशनम् ||
অতঃপর ধীরে ধীরে অধোমুখ রামকে প্রদক্ষিণ করিয়া বৈদেহী প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের প্রতি অগ্রসর হইলেন।
চতুর্বিংশতি শ্লোকঃ
प्रणम्य देवताभ्यश्च ब्राह्मणेभ्यश्च मैथिली |
बद्धाञ्जलिपुटा चेदमुवाचाग्निसमीपतः ||
দেবতাগণ এবং ব্রাহ্মণগণকে প্রণাম করিয়া মৈথিলী কৃতাঞ্জলিপুটে অগ্নির সমীপে গিয়া এইরূপ কহিলেন।
পঞ্চবিংশতি শ্লোকঃ
यथा मे हृदयं नित्यं नापसर्पति राघवात् |
तथा लोकस्य साक्षी मां सर्वतः पातु पावकः ||
যেহেতু আমার হৃদয় কখনো রাঘব হইতে অপসৃত হয় নাই, অতএব জগৎকে সাক্ষী মানিয়া অগ্নিদেব আমাকে সকল দিক হইতে পরিত্রাণ করুন।
ষড়বিংশতি শ্লোকঃ
यथा मां शुद्धचरितां दुष्टां जानाति राघवः |
तथा लोकस्य साक्षी मां सर्वतः पातु पावकः ||
যেহেতু আমি শুদ্ধচরিত হওয়া সত্ত্বেও রাঘব আমাকে দুষ্টা বলিয়া জানিয়াছেন, অতএব জগৎকে সাক্ষী মানিয়া অগ্নিদেব আমাকে সকল দিক হইতে পরিত্রাণ করুন।
সপ্তবিংশতি শ্লোকঃ
कर्मणा मनसा वाचा यथा नातिचराम्यहम् |
राघवं सर्वधर्मज्ञं तथा मां पातु पावकः ||
যেহেতু আমি কর্মে, চিন্তায়, বাক্যে কখনো ধর্মজ্ঞ রাঘবের বিরুদ্ধাচরণ করি নাই, অতএব অগ্নিদেব আমাকে সকল দিক হইতে পরিত্রাণ করুন।
অষ্টবিংশতি শ্লোকঃ
आदित्यो भगवान् वायुः दिशश्चन्द्रस्तथैव च ।
अहश्चापि तथा सन्ध्ये रात्रिश्च पृथिवी तथा ।
यथान्येऽपि विजानन्ति तथा चारित्रसंयुताम् ॥
যেহেতু ভগবান সূর্য, বায়ু, চন্দ্র, দিবা, সন্ধ্যা, রাত্রি, পৃথিবী সকলেই আমাকে সচ্চরিত্রা বলিয়া জানেন।
উনত্রিংশতি শ্লোকঃ
एवमुक्त्वा तु वैदेही परिक्रम्य हुताशनम् ।
विवेश ज्वलनं दीप्तम् निःशङ्केनान्तरात्मना ॥
এই বলিয়া বৈদেহী হুতাশনকে পরিক্রমা করিয়া নিঃশঙ্কচিত্তে একাত্ম মনে জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করিলেন।
ত্রিংশতি শ্লোকঃ
जनः स सुमहांस्तत्र बालवृद्धसमाकुलः ।
ददर्श मैथिलीं दीप्ताम् प्रविशन्तीं हुताशनम् ॥
তথায় উপস্থিত বিপুল সংখ্যক আবালবৃদ্ধজন মৈথিলীকে জ্বলন্ত হুতাশনের মধ্যে প্রবেশ করিতে দেখিল।
একত্রিংশতি শ্লোকঃ
सा तप्तनवहेमाभा तप्तकाञ्चनभूषणा ।
पपात ज्वलनं दीप्तम् सर्वलोकस्य सन्निधौ ।
তপ্ত নবহেমবর্ণা তিনি তপ্তকাঞ্চন ভূষণে সজ্জিতা হইয়া সর্বজনের সম্মুখে জ্বলন্ত অগ্নিতে পতিত হইলেন।
দ্বাত্রিংশতি শ্লোকঃ
ददृशुस्तां विशालाक्षीम् पतन्तीं हव्यवाहनम् ।
सीतां सर्वाणि रूपाणि रुक्मवेदिनिभां तदा ॥
সর্বরূপা বিশালাক্ষী সীতাকে সকলে স্বর্ণবেদীর ন্যায় জ্বলন্ত অগ্নিতে পতিত হইতে দেখিল।
ত্রয়োত্রিংশতি শ্লোকঃ
ददृशुस्तां महाभागाम् प्रविशन्तीं हुताशनम् ।
सीतां कृत्स्नास्त्रयो लोकाः पुण्यामाज्याहुतीमिव ॥
ত্রিলোক দেখিল, মহাপুণ্যবতী সীতা পুণ্য ঘৃতাহুতির ন্যায় হুতাশনে প্রবেশ করিলেন।
চতুর্তিংশতি শ্লোকঃ
प्रचुक्रुशुः स्त्रियः सर्वान् तां दृष्ट्वा हव्यवाहने ।
पतन्तीं संस्कृतां मन्त्रः वसोर्धारामिवाध्वरे ॥
তাঁহাকে মন্ত্রপূত পবিত্র ঘৃতের ন্যায় অগ্নিতে পতিত হইতে দেখিয়া উপস্থিত সকল স্ত্রীগণ চীৎকার করিয়া উঠিল।
পঞ্চত্রিংশতি শ্লোকঃ
ददृशुस्तां त्रयो लोका देवगन्धर्वदानवाः ।
शप्तां पतन्तीं निरये त्रिदिवाद्देवतामिव ॥
তিন লোকের দেব, গন্ধর্ব, দানব সকলেই দেখিল, তিনি যেন অভিশপ্তা দেবীর ন্যায় স্বর্গ হইতে নরকের অগ্নিতে পতিত হইলেন।
ষড়ত্রিংশতি শ্লোকঃ
तस्यामग्निं विशन्त्यां तु हाहेति विपुलस्वनः ।
रक्षसां वानराणां च सम्बभूवाद्भुतोपमः ॥
তাঁহাকে অগ্নির গভীরে প্রবেশ করিতে দেখিয়া বানর এবং রাক্ষস সকলেই বিপুল হাহাকার করিয়া উঠিলে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির উদ্ভব হইল।
ইতি ঋষি বাল্মিকী বিরচিত আদিকাব্য রামায়ণের যুদ্ধ কান্ডের ষোড়শোত্তর শততম সর্গ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন