এই লেখার মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ ওয়াকফ বিল (যদিও এই লেখার সময় সেটি আইনে পরিণত) এর আপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করার আগে বিল তথা বর্তমান চালু আইনের কিঞ্চিৎ পটভূমিকা প্রয়োজন যেটা আপত্তির জায়গাগুলো অনুধাবন করতে আমাদের সাহায্য করবে।
১.১. ওয়াকফ- বিষয়টি কী: ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন অনুসারে, ওয়াকফ বলতে মুসলিম আইনে স্বীকৃত ধার্মিক, ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে যেকোনো ব্যক্তির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির স্থায়ী উৎসর্গকে বোঝায়। এইভাবে উৎসর্গ করা সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলা হয়। যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি এভাবে উৎসর্গ করেন তাকে ওয়াকফি বলা হয় এবং যে ব্যক্তি এই সম্পত্তি পরিচালনা করেন তাকে মুতাওয়াল্লি (পরিচালক এবং প্রশাসক) বলা হয়। ওয়াকফ তিন ধরণের। (১) ওয়াকফউলিল্লাহ অর্থাৎ পাবলিক ওয়াকফ), (২) ওয়াকফ-আল-আওলাদ (শিশুদের জন্য ওয়াকফ) এবং (৩) মসজিদ, মাদ্রাসা, দরগাহ, কবরস্থান, পিরোস্তান, ঈদগাহ ইত্যাদি ব্যবহারকারীদের দ্বারা ওয়াকফ। পাবলিক ওয়াকফ ধর্মীয় এবং দাতব্য উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় যা জনসাধারণের জন্য এবং ওয়াকফ-আল-আওলাদ হল একজনের সন্তান/আত্মীয়দের কল্যাণের জন্য তৈরি একটি ওয়াকফ। ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ বলতে বোঝায় যেখানে কোনও জমি বা ভবনের অংশ স্থায়ীভাবে কোনও ধর্মীয় বা ধার্মিক উদ্দেশ্যে যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।
১.২. মুতাওয়াল্লি কে: ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনাকারী ব্যক্তিকে "মুতাওয়াল্লি" বলা হয়। মুতাওয়াল্লির আইনি অবস্থান হল ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক বা সুপারিনটেনডেন্টের। মুতাওয়াল্লিরা আবার দুটি শ্রেণীর; নিযুক্ত এবং রেকর্ডকৃত। ওয়াকফ কর্তৃক সম্পাদিত, উত্তরাধিকারের নির্দিষ্ট নিয়মের সাথে, হস্তান্তর দলিলের সংস্করণ অনুসারে রেকর্ডকৃত মুতাওয়াল্লিদের বলা হয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে উত্তরাধিকারের কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই বা ওয়াকফ দলিল নেই, বোর্ড কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন।
১.৩. ওয়াকিফ বা দাতা কে: ওয়াকফ বা দাতা বলতে বোঝায় যে কোনও ব্যক্তি সর্বশক্তিমানের নামে কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি উৎসর্গ করে যা মুসলিম আইন দ্বারা ধার্মিক, ধর্মীয় বা দাতব্য হিসাবে স্বীকৃত। দুইটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। এক) যিনি দান করবেন তাকে ঐ সম্পত্তির আইনত মালিক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। দুই) একবার কোনও সম্পত্তি উৎসর্গ করা হলে দাতা সেই সম্পত্তির ওপর তার সম্পূর্ণ অধিকার হারাবেন এবং এই ধরনের সম্পত্তি কখনই বিচ্ছিন্ন, বন্ধক বা হস্তান্তর করা যাবে না, ফেরত নেওয়া যাবে না, বিক্রি করা যাবে না, উপহার দেওয়া যাবে না বা অন্য নামে দানপত্র করা যাবে না, কিংবা উত্তরাধিকার হিসাবে সন্তান-সন্ততিরা পাবে না।
১ ৪. ওয়াকফ এর ধর্মীয় পটভূমি: "ওয়াকফ" (আরবি: وقف) শব্দটি হাবুস নামেও পরিচিত, আরবি শব্দ "ওয়াকফা" থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ আটকে রাখা, আটকে রাখা বা বেঁধে রাখা। বলা হয় যে, একবার দ্বিতীয় খলিফা আব্দুল্লাহ বিন ওমর খাইবার এলাকায় এক টুকরো জমি অধিগ্রহণ করেন এবং নবী মুহাম্মদকে জিজ্ঞাসা করেন যে কীভাবে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়। নবী বলেন, "সম্পত্তি বেঁধে দাও এবং মানুষের কল্যাণে উপার্জিত অর্থ উৎসর্গ করো, এবং এটি বিক্রি করা বা উপহার বা উত্তরাধিকারের বিষয়বস্তু করা যাবে না, এর উৎপাদিত ফসল তোমাদের সন্তানদের, তোমাদের আত্মীয়স্বজন এবং দরিদ্রদের এবং আল্লাহর পথে উৎসর্গ করো"। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, প্রথম ওয়াকফ গঠন হয় হজরত মহম্মদের জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরামর্শে। মুখাই-রিক নামে একজন ইহুদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হজরত মহম্মদকে ৭ টি ফলের বাগান দান করতে চাইলে হজরত মহম্মদ তাঁকে পরামর্শ দেন ওয়াকফ তৈরি করে ঐ সম্পত্তি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে ইসলামের সেবায় ব্যবহার করতে।
১.৫. ওয়াকফ এর আইনি পটভূমি: ভারতে ওয়াকফ গঠিত হয় মধ্যযুগে ইসলামের আগমনের পরে। সুলতানি আমলে, মুঘল আমলে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাবে, মুলতানে, নিজামশাহের আমলে অবিভক্ত অন্ধ্রে, নবাব শাহী আমলে বাংলায় এবং অন্যান্য রাজ্যে বহু ওয়াকফ সম্পত্তি গঠিত হয়। এইসব ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহৃত হতো দাতব্যমূলক কাজে এবং মুসলমান জনগণের সেবায়। ঐ অর্থে তৈরি করা হতো মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরখানা এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ। সেই ধারা এখনো অব্যাহত। পরবর্তী পর্যায়ে মুঘল শাসনামলে, আওরঙ্গজেব "ফতোয়াই-ই-আলমগীরি" এর মাধ্যমে ওয়াকফ সংক্রান্ত আইন সহ মুসলিম আইনগুলিকে সংহিতাবদ্ধ করেছিলেন যা ব্রিটিশ যুগে প্রিভি কাউন্সিলের সময়কাল পর্যন্ত বৈধ ছিল। ভারতে, মুসলিম ওয়াকফ বৈধকরণ আইন, ১৯১৩, মুসলিম ওয়াকফ আইন ১৯২৩ ব্রিটিশ আমলে প্রিভি কাউন্সিলের সময় প্রচলিত ছিল। এর পরে বেঙ্গল ওয়াকফ আইন, ১৯৩৪, অস্তিত্ব লাভ করে এবং তারপরে, ওয়াকফ আইন, ১৯৫৪ (কেন্দ্রীয় আইন) যা বলবৎ ছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া (যেখানে বেঙ্গল ওয়াকফ আইন, ১৯৩৪ বলবৎ ছিল কেন্দ্রীয় আইন জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত।
১.৬। দেশ স্বাধীন হলে ভারত সরকার ঐ আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ১৯৫৪ সালে ওয়াকফ আইন তৈরি করে। পরে ১৯৫৯, ১৯৬৪, ১৯৬৯, ১৯৮৪ সালে কিছু কিছু সংশোধন করা হয়। পরে যৌথ সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৯৫ সালে নতুন ভাবে ওয়াকফ আইন তৈরি করে। বর্তমানে এই আইনকেই প্রিন্সিপাল আইন বলা হয়। ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদীয় সিলেক্ট কমিটির সুপারিশের উপর ভিত্তি করে ওই আইনের বেশ কিছু সংশোধনী যুক্ত করে। ১৯৫৪ এবং ১৯৯৫ সালের আইনের ভিত্তিতেই রাজ্যে রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ড গঠিত হয়। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৫ সালের আইনের উপর ৪০টির বেশি সংশোধনী এনেছে।
এইবার বর্তমান সংশোধনী বিল এর বিভিন্ন আপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা যাক
২ ১. সংশোধনীতে বলা হয়েছে ওয়াকফ আইন WAQF Act কথাটির পরিবর্তে এই আইনটির নাম হবে ''Unified Wakf Management, Empowerment, Efficiency and Development Act''। বিলের ১৩(২এ) অংশে বলা হয়েছে বোহরা সম্প্রদায় এবং আফগানি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রাখতে পৃথক পৃথক বোর্ড করা হবে। অর্থাৎ বিভাজনের দৃষ্টিভঙ্গি হতে মুসিলম জনসাধারণকে ভাগ করতে চাওয়া হয়েছে। বর্তমান বোর্ডগুলি সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করে।
২.২. বিল অনুযায়ী কেবলমাত্র একজন মুসলিম যিনি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ধর্ম পালন করছেন এমন ব্যক্তিই ওয়াকফ সম্পত্তি দান করতে পারেন। ১৯৯৫ সালের আইনে বলা ছিল যে কোনও ব্যক্তি তা করতে পারেন। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ হতে সেই অধিকারকে খর্ব করতে চাওয়া হয়েছে যাতে অমুসলিমরা কেউ ওয়াকফে সম্পত্তি দান না করেন। সংশোধিত আইনের ফলে মুসলিম অমুসলিম ভ্রাতৃত্বের এই প্রকাশ আর সম্ভব হবে না।
২.৩. ১৯৯৫ সালের আইনে বলা আছে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্যরা মুসলিম সম্প্রদায়ের হবেন। অথচ বিলে বলা হয়েছে ঐ কাউন্সিলে অন্তন্ত দু'জন অমুসলিম থাকবেন। অমুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করার ইসলামিক আদেশ সত্ত্বেও, সংশোধিত আইনে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি মুসলমানদের তাদের ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ।
২.৪. ১৯৯৫ আইনে বলা ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি বিষয়ে যে সব ট্রাইবুনাল গঠিত হবে সেখানে মুসলিম আইন সম্পর্কে দক্ষতা আছে এমন ব্যক্তিকে রাখতেই হবে। বিলে এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যটা কি বুঝতে অসুবিধা হয় না।
২.৪. বিলে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে দু'জন মহিলা সদস্য থাকবেন। অথচ ১৯৯৫ সালের আইনে বলা আছে ''at least two women members'' অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের আইনে দুইয়ের বেশি থাকারও সুযোগ রাখা ছিল। এখন বলা হচ্ছে দু'জন থাকবেন। এটা কেন?
২.৫. পূর্বের আইন মোতাবেক রাজ্য সরকার ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হিসাবে সাংসদ ও বিধায়ক ক্ষেত্র হতে মুসলিম সাংসদ ও বিধায়কদের মধ্য হতে মনোনীত করতো। বর্তমানে বিলে বলা হয়েছে মুসলিম হতে হবে এমন নয়, যে কোন সাংসদ, বিধায়ক থাকতে পারবেন। মন্দির ট্রাস্ট বডিতে এই ফর্মুলা মানা হবে তো?
২.৪. এই বিল অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণের ক্ষমতা সার্ভে কমিশনারের কাছ থেকে সরকার নিযুক্ত রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে, সরকার উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং বৃত্তিমূলক কেন্দ্রগুলিকে জব্দ করার লক্ষ্য নিয়েছে, যার ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করা হবে। বিলে আরও বলা হয়েছে যে কোনও ওয়াকফ সম্পত্তির নথি সহ রেজিষ্ট্রকরণ বাধ্যতামূলক এবং তা করতে হবে জেলাশাসকের কাছে। কেন এটা হবে? মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে বহু ওয়াকফ তৈরি (Wakf by use) হয়েছে এবং তা লাগু আছে। সেগুলির তাহলে কি হবে? দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের মাধ্যমে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হাজার হাজার ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতামূলক নতুন আদেশটি সরকারের গোপন কর্মসূচিকেই উন্মোচিত করে, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে।
২.৫. ১৯৯৫ সালের আইনে বলা আছে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে রাজ্য সরকারগুলি ওয়াকফ ট্রাইবুনাল তৈরি করবে এবং ৭(১) ধারায় বলা আছে সেই ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত। বর্তমান বিলে ৭(১) ধারাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। এক্সিকিউটিভদের এই জুডিশিয়ারি ক্ষমতাদান এর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হচ্ছে।
২.৫. এই বিল অনুযায়ী কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারের অধীনে থাকলে তা আর ওয়াকফ সম্পত্তি থাকবে না। তা কেন হবে? মালিকানা কেন ওয়াকফ হারাবে? বরং সরকারের দেখা উচিত যেসব সরকারি সম্পত্তির মালিকানা ওয়াকফের নামে আছে অথচ সরকার ভোগ করছে তার মধ্যে যেগুলি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব তা দিতে হবে।
২.৬. এই বিল অনুযায়ী0l কেন্দ্রীয় সরকার রেজিস্ট্রিকৃত ওয়াকফ সম্পত্তির হিসাব পরীক্ষা করার বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারবে। ১৯৯৫ সালের আইনে ওয়াকফ বোর্ড এবং রাজ্য সরকার এই কাজ করতো। এটা রাজ্য সরকারের কাজের উপর এবং ওয়াকফ বোর্ডগুলির ক্ষমতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে
ওয়াকফ বোর্ডগুলি তদারকি করে রাজ্য সরকার। এই বিল প্রণয়নের সময়ে কেন্দ্র সরকার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনা করেনি। কৃষিনীতি (বর্তমানে বাতিল), শ্রমনীতি, এমন কি শিক্ষা নীতি রচনায় কেন্দ্র একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। এই পদক্ষেপে আসলে ভারতের সংবিধান স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরেই আঘাত।
২.৭. সর্বশেষে ওয়াকফ আইনের ৪০ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে, ওয়াকফ বোর্ড ওয়াকফ সম্পত্তির প্রকৃতি নির্ধারণের কর্তৃত্ব হারাবে। ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি মূলত চারটি বিভাগে পড়ে: দলিল অনুসারে ওয়াকফ (নথিভুক্ত), মৌখিক ঘোষণা অনুসারে ওয়াকফ (মৌখিকভাবে ঘোষিত), ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়াকফ (দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত), এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি। নতুন সংশোধনীর অধীনে, দেশের বেশিরভাগ ওয়াকফ সম্পত্তি - যা মৌখিকভাবে বা ব্যবহারের মাধ্যমে ঘোষিত - সরকারী দখলের ঝুঁকিতে পড়বে।উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং কেরালার মতো বৃহত্তম ওয়াকফ হোল্ডিং সহ রাজ্যগুলি এই ঝুঁকির সামনে
সবশেষে যেটা বলার তা হল এই যে বিষয়টা মোটেই এমন নয় যে এই বিল আসার আগে ওয়াকফ নিয়ে যা চলছে সেটা খুব গ্রহণযোগ্য। ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা এবং পরিমাণ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। কেননা দেশে সে ধরনের বিজ্ঞানসম্মত কোনও সমীক্ষা হয়নি। নিবন্ধিত হয় নি এমন বহু ওয়াকফ আছে। তবে সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল সূত্রে জানা যায় সারা দেশে কমবেশি ৮ লক্ষ ৭০ হাজার ওয়াকফ সম্পত্তি আছে এবং সেগুলিতে মোট জমির পরিমাণ ৯ লক্ষ ৪০ হাজার একরের মতো। এর বাজার মূল্য ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী দেশের স্থায়ী সম্পদ বিশিষ্ট ওয়াকফের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৭২ হাজার ৩২৮ টি এবং অস্থায়ী সম্পদ বিশিষ্ট ওয়াকফ সংখ্যা হলো ১৬,৭১৩ টি। এর মধ্যে ডিজিটাল রেকর্ডভুক্ত করা সম্ভব সম্ভব হয়েছে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯৫ টি ওয়াকফের। পশ্চিমবাংলায় ১ লক্ষের বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে। যার মধ্যে রেকর্ড ভুক্ত ৮০ হাজারেরও বেশি। যেটা বাম আমলে হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে দেশে প্রতিরক্ষা ও রেল দপ্তরের পরে সবচেয়ে বড় জমির মালিকানা হলো ওয়াকফ সম্পত্তি।
এই বিপুল সম্পত্তির অনেকটাই বেআইনি ভাবে ব্যক্তিস্বার্থে ভোগ দখল করছেন এমন কিছু মানুষ যাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, আদপে ওই সম্পত্তি সাধারণ গরীব মানুষের কাজে লাগছে না। তাই আইনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করবেন না। কিন্তু আইন সংশোধন সংস্কারের নামে সংবিধান প্রদত্ত ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করার চেষ্টা হলে সমস্ত শুভুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিভাজনকারী ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাতে হবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে। এটাই আবেদন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন