মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘ফ্লপ শো’ ~ সুশোভন পাত্র

​এবং, অবধারিত ও অনিবার্য কারণেই, অন্যান্য অনেকবারেই মতই আরও একবার, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে 'ফ্লপ শো' উপহার দিল, সি পি আই এম। ব্রিগেড সমাবেশ থেকে 'ক্যাডার'দের কোনরকম বার্তা দিতেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ সি পি আই এম'র 'পক্ককেশ' নেতারা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, চিট-ফান্ডে প্রতারিত মানুষদের টাকা ফেরৎ, দোষীদের শাস্তি, আয়করের আওতায় না পড়া প্রত্যেকের জন্য দু-টাকা কেজি দরে চাল, ফসলের দাম না পেয়ে কৃষকদের লাগাতার আত্মহত্যা, একশো দিনের কাজের নিয়মিতকরণ, বকেয়া মেটানো, অর্ধাহার-অনাহার-অপুষ্টি ও বিনা চিকিৎসায় চা বাগান শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল, এসএসসি-টেটে নিয়মিত ও স্বচ্ছ নিয়োগ, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-শালবনী-রঘুনাথপুর-নয়াচরে শিল্প, নারী সুরক্ষা --এসব আবার কোন বার্তা নাকি? 'পক্ককেশে'র আবার নেতা হয় নাকি? ঝিন-চ্যাকের যুগে কেউ আবার শহীদ স্মরণ করে নাকি? যত সব আহাম্মক!
বার্তা হবে, 'পাগলু' ড্যান্সের মত। বার্তা হবে, আগের রাতে যুবভারতী ভাড়া করে,খিচুড়ি মাংসের মত। বার্তা চুইয়ে পড়বে মদের বোতলের গা বেয়ে। বার্তা দুলে উঠবে ঝিঙ্কু-মামনিদের কোমরের তালে। শহীদ স্মরণ হবে কনটেম্পোরারি স্টাইলে, মহাগুরুর ডায়লগে, "শালা মারবো এখানে, লাশ পড়বে শশ্মানে..."। নেতা হবে নায়ক দেবের মত; মঞ্চে উঠে মাসেল ফুলিয়ে বলবে--"থোড়া সা করলো রোমান্স।" নেতা হবে মালদহের ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃনমূলের সভাপতির মত। যিনি তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারার অপরাধে সাইকেল আরোহীর উপর তৎক্ষণাৎ গুলি চালাতে পারবেন। সাংসদ হবে, মুনমুন সেনের মত, যিনি বাঁকুড়ার গরমে ভোটের প্রচারের জন্য নতুন 'সানস ক্রিম' খুঁজবেন। মঞ্চের ঘোষক হবেন কুনাল ঘোষের মত। যিনি আর্থিক নয়-ছয়ের কারণে জেলের ঘানি টানতে পারবেন। শুধু পরিবারতন্ত্রের জোরেই প্রধান বক্তা হবেন 'কচি' ভাইপো। তাহলেই আর চুল পাকবে না। 'পক্ককেশ'ও থাকবে না।
শিল্পমন্ত্রীর দিব্যচক্ষু'র অবসারভেশেন, পিছন থেকে ব্রিগেড মাঠ ছিল খালি। আমি তো বলি, সাইড থেকে আরও খালি। মঞ্চের কাছে তো একেবারেই খালি। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় যেসব 'বার্ড আই ভিউ'-টিউ আপনার দেখেছেন, সেগুলির প্রায় সবই আসলে 'আই অয়াশ'। নিজদের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের পিছনে লেভির এক পয়সা খরচা করতে না পারা, একটা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এইরূপ উদ্যোগ আসলে 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর' উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 'সাইন্টিফিক রিগিং' ও ফটোশপীয় নিপুণতার চরম নমুনা। দুর্ভাগ্য যে, এই 'নিবেদিতপ্রাণ' টাইপের কর্মীগুলো 'গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার' অভাবে প্লেনামের ব্যর্থতা নিয়ে গবেষণা না করে, 'কালীঘাট কেন্দ্রিকতার' অবসানে অযথা 'জান কবুল' করছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "চাইলে রাস্তায় ঘোরাফেরা করা মানুষদের নিয়ে দু-পাঁচ লাখের একটা সমাবেশ করাই যায়।" আসলে 'চাইলেই' সপ্তাহে একটা-দেড়টা ব্রিগেড করতে অভ্যস্ত দিলীপ বাবুর সংখ্যাতত্ত্বে অযথা উদার হয়ে 'লক্ষ'-এ পৌঁছে গেছেন। বাস্তবে ওটা মেরেকেটে দু-পাঁচ শ বেশী না। 'পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক' দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশে, নরেন্দ্র মোদী কে ডেকে, আড়াআড়ি মঞ্চ বেঁধেও, ব্রিগেড ভরাতে না পেরে, ক্ষুরধার মস্তিষ্কের রাজনীতিবিদ রাহুল সিনহার মত বাংলার মানুষ কে 'দিদিভাই-মোদীভাই 'র 'লাড্ডু' খাওয়ানোর সাহসিকতা সি পি আই এমের নেতারা আর দেখাতে পারলেন কই বলুন?
যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনীতি সচেতন এবং কলকাতার রাস্তাঘাট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা 'উন্মাদ' 'হার্মাদ', চেয়ার মোছা কবি এবং উভচর --সবাই জানেন এসপ্লেনেড, রানী রাশমনি রোডের চৌমাথা বা সিইএসসি চত্বরের ধারণ ক্ষমতা ব্রিগেডের থেকে কয়েকশ গুন বেশী। স্বাভাবিক কারণেই কেন্দ্রীয় সমাবেশ করে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ভরানোর থেকে এসপ্লেনেড, রানী রাশমনি রোডের চৌমাথা বা সিইএসসি চত্বর ভরানো আসলে অনেক কঠিন। আর এই কঠিন কাজটাই দীর্ঘদিন ধরে অবলীলায় করে আসছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ব্রিগেডে সমাবেশ করার মধ্যে কোন বীরত্বেই তো নেইই, বরং রাস্তাঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিল মিটিং করলেই, পুলিশে হেসেখেলে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারে, যানজটের সমস্যা এড়ানো যায়, অফিস ফেরৎ মানুষদের সুবিধা হয়, অ্যাম্বুলেন্স কে ভিড়ে আটকে থাকতে হয় না, স্কুল ফেরৎ পড়ুয়াদের ভোগান্তিও হয় না। কারণ সেদিন কলকাতায় গাড়ি-ঘোড়া তো আর রাস্তায় চলে না, চলে, ব্রিগেড গ্রাউন্ডের নাক বরাবর।
তাই ডিগবাজি স্পেশালিষ্ট পঞ্চায়েত মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন যে "কাল ব্রিগেডের থেকে চিড়িয়াখানাতে ভিড় ছিল বেশী"। কারণ, উনি জানেন, ২১ শে জুলাই'র সমাবেশে, রাস্তা বয়ে এসে, বৃষ্টি মাথায় বসে, মঞ্চে, সরীসৃপ, গিরগিটি, পাগলু-ছাগলু, চোর, ডাকাত ও উন্মাদদের দেখার থেকে চিড়িয়াখানায় কিছু বড় জন্তু জানোয়ার দেখার অভ্যাস করা ভালো। অনেক ভালো..


সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

ব্রিগেড ~ আশুতোষ ভট্টাচার্যী

​গতকাল যারা ব্রিগেডে এসেছে দিনবদলের লক্ষ্যে
তৃণমূল ভাবে একি জ্বালাতন, একা রামে নেই রক্ষে
সাথে ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত ভাষণ দিচ্ছে সেলিমে
দিদি বললেন , মিথ্যুক এরা এসব দেখেছি ফিলিমে;
সাইকেল বিলি করেছি আমরা মঞ্চ, টঞ্চ খাটিয়ে
সিপিএম তার সিম্পাথি নেই! ক্যাডার এনেছে হাঁটিয়ে!
যারা এসেছেন, তাঁদের মেয়েরা বালা, চুড়ি কিছু পায়নি?
সত্যি বলুক, দুটাকা কিলোর বিপিএল চাল খায়নি?
ক্লাবে শুধু শুধু অনুদান দেওয়া, ঘুমোচ্ছে নাকি অন্ধ
ব্রিগেডে মিটিং জেনেশুনে সব, রাস্তা করেনি বন্ধ!
সব দেখেশুনে জনতার মন দিদি ভয়ানক রুষ্ট
কেউ বলে এতো গোষ্ঠীদন্ধ বিরোধী মদতপুষ্ট;
চুলকিয়ে দাড়ি পার্থ বলেন মিডিয়ার ষড়যন্ত্র
তিল থেকে তাল এদের বানানো, জনগণ বিভ্রান্ত।
পুলিশ বলেছে 'বলা তো বারণ',কত লোক ছিল গুনিনি
মিটিং এ সেদিন আধখানা মাঠ ভর্তি হয়েছে শুনিনি!
যেসব মানুষ এসেছে ব্রিগেডে, মিলিয়েছে পা মিছিলে
বলে কমরেড, ব্যারিকেড গড়, ভেবে দ্যাখ তুমি কি ছিলে;
কমিশন যদি আশ্বাস দেয়, ভোট হয় যদি অবাধে
আবার ফিরবে সিপিএম দ্যাখো পরিনত হব প্রবাদে।।


মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫

সার্কাসের মজা ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

মজাটা হচ্ছে,
সবাই বোঝে সার্কাস চলছে

তবু টিকিট কেটে
(পড়ুন, সংগঠনের চাঁদা দিয়ে)
সে সার্কাস দেখতেও ঢুকছে সবাই।

মজাটা ডবল হয়ে ফিরছে
যখন ক্লাউন দেখা দিচ্ছে রিং মাস্টারের বেশে…
চমকে উঠছে চাবুক

ক্ষুধার্ত বাঘের পাতে
ঢালা হচ্ছে
দু'টাকা কিলোর আফিম মেশানো চাল

কাকপ্রসন্ন ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

​কাক এক্কে কাক
আমার মাথায় টাক,
তোর তাতে কী, মুখ্যু ঢেঁকি? যেমন আছিস থাক!
কাক দু'গুনে তুলি,
মেলাচ্ছি wrong গুলি,
ধান্দা উঁচা আমার রহে, কাণ্ড হোক, বা মূলই!
তিন কাক্কে তিনু
লোভী আগেই ছিনু,
মওকা পেলাম, টেক্কা গোলাম, কেমনে ছাড়িনু!
চার কাক্কে চাঁই,
বাড়ছে টাকার খাঁই!
লাভের গুড়ে বালি, তবু জুটলো সিবিয়াই!
পাঁচ কাক্কে পাড়ি,
গোটাবো পাততাড়ি।
কপাল ঠুকে নেপাল যাবো, আর কামাবো দাড়ি।
ছয় কাক্কে ছক,
সব ব্যাটা বুড়বক,
জানিস, আমি স্যাণ্ডো করি? (আসলে নাটক!)
সাত কাক্কে থাম,
সুবা সে অব শাম
এখানে ফ্ল্যাট, ওখানে ফ্ল্যাট অনেক তো কিনলাম!
আট কাক্কে আঁটি
প্যাল্যান সবই মাটি!
বাজেয়াপ্ত হচ্ছে সবই, ভিটে মাটি চাঁটি!
নয় কাক্কে নো,
নইকো প্রসন্ন,
জেলখানায় কি ডাকাত থাকে! চোরেদের জন্য!
দশ কাক্কে দুশশশ
স্বপ্ন মহল ফুসসস!
পেপ্সি, না না, লপসি খেয়ে চালাচ্ছি দুরমুশ!!

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

অনুদান ~ আশুতোষ ভট্টাচার্যী

এটা কোন ক্লাব? যুবক সংঘ! গত ভোটে খুব খেটেছে
দেওয়াল লিখেছে,মিটিং করেছে, মিছিলে খানিক হেঁটেছে;
এদের তো চিনি, বলাকা স্পোর্টিং একশো তরুণ তুর্কি
যেটুকু সাধ্য তাতেই বিলোয় নাড়ু, বাতাসা কি মুড়কি;
ওই কোনে দ্যাখো ঝিকিমিকি ক্লাব, ওদের নিবাস কালনা
গতবার ভোটে লাঞ্চের মেনু পোলাও ডিমের ডালনা;
এবার বুঝেছি তোমরা এসেছ সুভাষ ক্লাবের তরফে
পার্টি অফিসে তোমাদের নাম লেখা আছে গোটা হরফে!
রানাঘাট থেকে এসেছেন যারা বাংলা কিশোরে বাহিনী
ষ্টেজে উঠে এস, বলনা একটু মহান রিগিং কাহিনী;
মঞ্চে আসুক ক্ষুদিরাম ক্লাব দেশের গর্ব তোমরা
তোমরা অ্যাসেট যেকোনো দলের পার্টির প্রানভোমরা;
নবারুণ ক্লাব অ্যাকটিভ খুব রক্তদানের ক্যাম্পে
জলসা হয়েছে সারারাত জুড়ে, নায়িকা হেঁটেছে র‍্যাম্পে;
হাসি হাসি মুখে দুর্জয় ক্লাব, ছেলেগুলো ভারী দস্যি
ছাপ্পা ভোট কি বুথ ক্যাপচার ওদের কাছে তো নস্যি;
ভুলেই গিয়েছি পতাকা সংঘ, বোমা, পিস্তল, পটকা
বিরোধী শূন্য কাটোয়া, কালনা যদি মনে লাগে খটকা;
ধুনুচি সংঘ পূজো, টুজো করে, বলুন কাদের স্বার্থে
বিরোধীরা বলে এসব হচ্ছে, জনগণেশের অর্থে;
এই নাও তুমি উন্নতি কর, শুধু এক লাখ তঙ্কা
নিন্দুকে বলে পিকনিক হবে, বৃথা করে কেন শঙ্কা?
এই নাও তুমি দুই লাখ টাকা, কেটেছে দুঃখে, অভাবে
পাড়াপড়শিরা কন্ট্রোলে থাক তোমার নম্র স্বভাবে;
বস চুপ করে মন দিয়ে শোন কেউ করবেনা ঝগড়া
ক্লাব শিল্পের জোয়ার আসুক দিনহাটা থেকে মগরা;
মন দিয়ে সব প্র্যাকটিস কর, তাস, ডাংগুলি, ক্যারামে
টিভি, ফ্যান দেব এসি দিতে পারি সিণ্ডিকেটের ব্যারামে;
পরে হবে ডিএ আসছে বছর, গরিবের মুখে অন্ন
ক্লাব কালচার দেশের গর্ব, পেয়েছে যৎসামান্য।। 

---- সব ক্লাব ও চরিত্র কাল্পনিক।

আমাদেরই বাংলা রে ~ অমিতাভ প্রামাণিক

কোন দেশেতে গরুর কথা
সকল গরুর চাইতে হাসির?
কোন দেশেতে চলতে গেলেই
দলতে হয় রে নোংরা মাসির?
ট্যাঁক ফাঁকা, তাও দেদার টাকা
ক্লাবের মাথায় ঢালে রে।
সে আমাদের বাংলাদেশ,
আমাদেরই বাংলা রে...