রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

ওয়ার্কশপ @ হায়াত ইন্টারন্যাশনাল ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

সত্যি ভাতের সন্ধানে সে আলোকবর্ষ হাঁটতে রাজি
তার ঠিকানায় রাষ্ট্র পাঠায় মিড ডে মিল-এর ধাপ্পাবাজি।

ধাপ্পা, কারণ একলা সে নয়, গুষ্টিশুদ্ধ সবার পেটে
ভাত যোগাবার দায়িত্ব তার। ইস্কুলছুট যাচ্ছে হেঁটে।

স্বপ্নে সে খুব ভাত দেখেছে। বাস্তবে ভাত যায়নি ছোঁয়া।
বুকের খাঁচায় পাথরধুলো। ফুসফুসে যায় কালচে ধোঁয়া।


সেই যে ছেলে প্রাজ্ঞ প্রাচীন। বয়স? বোধহয় বছর বারো।
ইটভাঁটাতে রেস্তোঁরাতেও তোমরা ওকে চিনতে পারো।

এই ছেলে রোজ শূন্য থালায় শিউলি ভাতের স্বপ্ন জপে।
তোমরা তখন ঠাণ্ডা ঘরে। তোমরা যখন ওয়ার্কশপে!

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

দেশপ্রেম ~ সম্বুদ্ধ আচার্য্য

আমি ফ্ল্যাগ উড়িয়ে বেঁচে থাকি.
তক্তপোষে ছারপোকা আর মস্তকে বিভ্রম-
বিশ্বজোড়া ফেসবুক আর টুইটার আর ক্রোম-
মাওবাদীরা চাষ করে আর ঘাস ছাঁটে উদ্বেগে-
রাজধানীতে দেশোধ্ধারে সবাই থাকে জেগে-
উঠলে গলা গিলোটিন আর ছুটলে ঘোড়া মেধ-
পড়লে পোশাক নাপসন্দ তো ধর্ষণে সংবেদ-
লুকিয়ে করি বলাত্কার আর চুকিয়ে দেব ঘুষ-
দেশকে ভাবি হাতি আবার শিশ্ন কে অঙ্কুশ-
তিন রঙ্গা ফ্ল্যাগ প্যান্টে গুঁজে জয় বাবা রামদেব-
বঙ্গ আমার লিঙ্গ আমার ফক্কা আমার জেব-
দাদুর গানে মধুর কানে চা এর কাপে ঝড়-
নাবালিকা বাসন মাজে, শহীদ রা খচ্চর-
যৌনজীবন ট্যাবু আমার, পানু প্রতিশ্রুতি-
কর ফাঁকিয়ে চুল ঝাঁকিয়ে দেখাচ্ছি উন্নতি-
চড় থাপ্পর যে যা মারে আরাম করে দেখি-
প্রতিবাদে একটু আগুন, একটু লেখালেখি।
তবু ও আমি উড়িয়ে যাব ফ্ল্যাগ,
চাড্ডি তে আজ দেশপ্রেম আর পায়খানা তে ত্যাগ।

আজ স্বাধীনতা ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

স্বাধীনতা মানে ... একদিন ছুটি, বিকেলে শপিং ... দুপুরে মাংস। 
স্বাধীনতা দিয়ে মাপব ম্যাপএর সকল দ্রাঘিমা আর অক্ষাংশ! 
বিদেশীরা গেছে। বাতাস শিখল কালো মালিকের হুকুমশব্দ। 
হাহাকার থাক গ্রামে অরণ্যে, আমার গ্রীষ্ম এসি আরব্ধ! 

আজ স্বাধীনতা, ময়লা কুড়োনো ছেলেটার মনে বড় আনন্দ ... 
পাওয়া যাবে বহু কাগজ পতাকা, সাথে ফুলমালা, গোলাপগন্ধ! 
তাকে বলছিনা, "আমি রোজই খাই, আয় বাছা আজ তুইও দু'মুঠ খা!" 
স্বাধীনতা মানে ওয়ান ডে ম্যাচ। তিরঙ্গা মানে সস্তা গুটখা।

শহিদ হইনি। শহিদস্মরণে টিভিতে করছি তর্কাতর্কি! 
গরিব বস্তি জ্বললে জ্বলুক, আমার কি তাতে? কিম্বা তোর কি? 
স্বাধীনতা মানে সাংসদভাতা, নিজেরই বাড়ানো ... সহজে লভ্য।
কানে হেডফোন ... ফ্রিতে রিংটোন, ফেসবুকে ভাব ... কটুকাটব্য...!

স্বাধীনতা মানে চাষের জমিতে বুলডোজারের রাষ্ট্রশক্তি।
অনলাইনের অবাধ সাট্টা। পাট্টা কাড়ার রক্তারক্তি।
পাসপোর্টের তৎকাল আছে, বিপিএল-এ নেই সে'সব ফান্ডা।
সংবিধানের সমানাধিকার আইনি ভাষায় বুলেট ... ডান্ডা ...

কবির কলম, ভালবাসবার স্বাধীনতা খুঁজে ছিন্নভিন্ন। 
দলিত মেয়ের স্বাধীনতা মাখে অপমান আর আগুনচিহ্ণ। 
চালাক ছেলেটা সফটওয়্যারের, অভাগীর ছেলে যায় সীমান্তে! 
হিসেব কিছুতে মিলতে চায়না, পোড়া এ'দেশের সকল প্রান্তে! 

স্বাধীনতা নয় কর্পোরেটের যত্নে সাজানো দেয়ালচিত্র। 
স্বাধীনতা হোক আগুন ফুলকি ... বাঁচার ইচ্ছে ... পূত পবিত্র। 
ভুলভুলাইয়া যাক মুছে যাক। স্বাধীনতা ভুল অর্থে আর না! 
হে স্বদেশ, তুমি শুনতে পাচ্ছো, একশ' কোটির সকল কান্না?

মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

পোলট্রির ডায়েরি ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

পোলট্রিতে বড় হলে শেষ প্রশ্ন ... কাটা নাকি গোটা
তার আগে গম ভুষি ... তার আগে মাংসে সেজে ওঠা

ঝোল ... কষা ... দো-পেঁয়াজি ... ফ্রাই... প্রায় নিরামিষ স্টুতে
জিভেরা খোয়ারি ভেঙে মেতেছিল ... প্রাণপণে চেয়েছিল ছুঁতে
ব্যক্তিগত লালাসিক্ত জীবনবাসনা।
কেউ কাউকে শুধোয়নি ... শোনো তুমি ভালো কি বাসোনা

আমরাও করিনি তা ... হাতে খুবই সীমিত সময়
গম ... ভুষি ... গল্প শেষে ইস্পাতের সাথে দেখা হয়
তখন পালকে রক্ত ... রাস্তার মাইকে হরি ওম ...
পোলট্রিতে বড় হলে এই গ্রহে এ’টাই নিয়ম।

দেবী পাঁচালি ~ বরুণ বন্দোপাধ্যায়


বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১২

লগবুকে শেষ এন্ট্রি ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

বন্দরে পৌঁছে গেছে মায়াবী জাহাজ
বাতিল কামানে আজ তোপ দাগো । একশ'টা নীরব আওয়াজ
ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়ে যাক নাবিকের লুকোনো বাসনা
সবাই জানুক তবে, আমরা যে আর ভাসবো না

তার পরে বৃষ্টি শুরু হোক
ধুয়ে যাক তমসুক ... মুছে যাক সমস্ত কুহক
নষ্ট এই সময়ের সমস্ত স্মৃতি গায়ে মেখে
বাতাসেরা নতমুখে জাহাজের ভিজে যাওয়া ডেকএ
এখুনি উড়িয়ে দেবে যাবতীয় শোকগাথাগুলি
ছায়া শুধু রয়ে যাবে। থেকে যাবে অনন্ত গোধূলি।

নিস্তার তবুও নেই। ম্লান সেই হিম অন্ধকারে
মনখারাপেরা এসে দাঁড়িয়েছে রেলিংএর ধারে
গলায় সামান্য ব্যথা দুই চোখে অসামান্য জল
জানিয়ে দিয়েছে ঠিকই এ'সাগর কতটা অতল

সাবধানে ডোবো তবে ... ও জাহাজ ... প্রবালপাতালে
যদি কোনও দিন কেউ অন্য কোনও কালে
ডুবসাঁতারের ছলে ছুঁয়ে দেয় তোমার আঙুল ...
কম্পাসের মনেপড়বে ... হয়তো তোমারও ... মনে পড়বে অনিবার্য ভুল ...