২০১৯ এ এসে আমরা অনেকেই বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহার করছে সেই নিয়ে চিন্তিত হচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক জনমত বা মতাদর্শ তৈরি করা বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকটি নির্বাচনের সাথে সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে খরচ বেড়েই চলেছে।
সোশ্যাল মিডিয়াকে রাজনৈতিক ভাবে বর্তমান দুনিয়াতে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই নিয়ে নেটফলিক্সে একটি তথ্যচিত্র এসেছে। নাম "The Great Hack"। ব্রিটিশ সংস্থা "Cambridge Analytica" বেআইনি ভাবে ফেসবুক ড্যাটা নিয়ে ২০১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও ব্রিটেনে ব্রেক্সিট রেফ্রেন্ডউমকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল সেই নিয়ে এই তথ্যচিত্র।
"Cambridge Analytica" ফেসবুক থেকে ৭ কোটি মার্কিন নাগরিকের ফেসবুক একাউন্ট থেকে, মাথাপিছু ৫০০০ ডেটা পয়েন্ট জোগাড় করে। এই ৭ কোটি মানুষের ড্যাটা এনালিসিস করে এরা বেছে নেয় সেইসব ভোটারদের, যাদের বিহেভিয়ার অন্যালিসিস করে বোঝা গেছে যে এনারা দোদুল্যমান ভোটার। তাই এই প্রত্যেকের ৫০০০ ডেটা পয়েন্ট নিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা ভাবে প্রোপাগ্যান্ডা মেটিরিয়াল তৈরি করে। ভাবুন, প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা। অর্থাৎ আপনার চিন্তাধারার সাথে খাপ খাইয়ে প্রোপাগ্যান্ডা। যেই যেই রাজ্যে দোদুল্যমান ভোটার বেশি, প্রায় প্রত্যেকটা রাজ্যে নির্বাচনে বিজয়ী হয় ট্রাম্প।
এরা কিভাবে কাজ করে, তার একটি ছোট্ট উদাহরণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ত্রিনিদাদ আইল্যান্ডে দুটি প্রধান দল। একটি দল মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের, অন্যটি ভারতীয়দের। ভারতীয়দের রাজনৈতিক দলটি "Cambridge Analytica" কে ভাড়া করে। "Cambridge Analytica" নির্বাচনের আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ক্যাম্পেন শুরু করে, নাম দেয় "Do So Campaign"। এটি কোন রাজনৈতিক ক্যাম্পেন নয়, সোশ্যাল ক্যাম্পেন। যুবক যুবতীদের লক্ষ্য করে এই ক্যাম্পেন। নির্বাচনের আগে এই ক্যাম্পেনটিকে রাজনৈতিক বানিয়ে দেওয়া হয়। যুব সমাজকে বলা হয় সব রাজনৈতিক দল চোর, জোচ্চোর, কেউ মানুষের কথা ভাবে না।, তাই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সাঙ্গাস্কৃতিক তফাৎ থাকায় এরা জানতো, যে একজন ভারতীয় যুবক বা যুবতীর গুরুজনরা তাদের কে ভোটের দিন ভোট দিতে যেতে বললে তারা চলে যাবে, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ যুবক, যুবতীরা যাবে না।নির্বাচনে অল্পবয়েসী ভোটারদের মধ্যে, ৪০% কৃষ্ণাঙ্গ যুব, কম ভোট দেয় ভারতীয় যুবদের তুলনায়।এর ফলে ভোটে ৬% সুইং হয়ে, ভারতীয়দের রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে জিতে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া কিভাবে একটি লাগামহীন দানবে পরিণত হয়েছে ও সেই দানবকে পৃথিবীর সব জায়গায় কিভাবে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, পুরোটা জানতে এই তথ্যচিত্রটি দেখুন। এসবের মধ্যে দুটি সব চাইতে দুঃখয়ের বিষয়।
১) মানুষ হিসেবে আমরা সম্পূর্ণ অসহায়। আমাদের নাগালের মধ্যে কিচ্ছু নেই। আমরা কিছু বদলাতে পারবো না। কিছু মানুষ চেষ্টা করছেন সোশ্যাল মিডিয়া ড্যাটাকে মানবাধিকার আখ্যা দেবার, কিন্তু এখনো অবধি তারা বিফল।
২) এই সোশ্যাল মিডিয়ার দানোবিক দিকটা দক্ষিণপন্তীরা সম্পূর্ন নিজেদের নাগালের মধ্যে নিয়ে নিয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে। আমেরিকা থেকে ব্রিটেন, ব্রাজিল থেকে ভারত।