বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বসন্ত-উৎসব ~ জয়দেব বসু

(আয়ান ঘোষ শাক্ত ছিলেন জানা যায়। তাই যদি, অ-'কারণ' ছিলেন না আশা করি ...)

আমার চাকা চলছে চাঁদের দিকে সোজা
আমার মাথা টলছে তমালতরুমূলে,
কার বাজাবার কথা চন্দ্রাবলী,
তাকে কোথাও দেখছি না এই কূলে?

নানান-রঙা আবির দিয়ে গড়া
এক পাশে ঐ গিরি-গোবর্ধন,
ঝুলন আছে, পঞ্চপিদিম জ্বালা...
বীণাবাজিনী কোথায় এতক্ষণ!

আমার আসতে দেরি একটু হল বলে
সে কি গোষ্ঠে গেল অভিমানের বশে?
ঐ দিকে তো কালীনাগের থানা
ঐ দিকে তো সন্ধ্যাতারা খসে,

ওইদিকে তো ঘন বেতস-বন
ঐ দিকে তো কুঞ্জ সর্বনাশা
পুঞ্জ অমা গুঞ্জরে ঐখানে...
ঐ দিকে তো শ্যাম-লালার বাসা!

সে কি পলাশ-হারে সাজিয়েছিল গলা
সে কি ফুলের দুলে সাজিয়েছিল কাল,
সে কি যাওয়ার আগে শুনতে পেয়েছিল
মারাত্মক কোনো বাঁশির তান?

আমার সারাক্ষণই বিলম্বিত লয়,
আমার সারাক্ষণই হীনন্মন্যতা,
গোপাল বড় সুবোধ ছেলে জানি –
রাখাল-রূপে কাজ কী জন্য তার!

আমি বলব ভাবি এসব কথা তাকে,
বলব ভাবি – থাক আসলে আর
বলার যে নেই, তোমরা তো সব জানো,
গজদাঁতের নানান অভিসার।

সে-সব যারা পারে এখন তারা
রং খেলছে নাগরজনোচিত
আমি ভাবছি, রাত্রে ফিরে তার
বসন-ভূষণ থাকবে তো সংযত!

আমি নই, মা আছেন সে-জন্যই
চিন্তা এত, না-হলে আজ রাতে
মাধ্বীরঙা চাঁদ উঠেছে ঐ,
কে আর পোঁছে আউলে যাওয়া ভাতে?

কে আর থাকে দিনের পর দিন
নিপাট আর ছিনাল শয্যায়,
আছে যখন গ্রামরেখার ধারে
শৌন্ডিকা-র বেপথু দরজা।

আমার চাকা কাঁপছে সেই দুয়ারের দিকে
আমার মাথা টলছে হৃৎস্পন্দনসীমায়,
অনার্য ঐ শ্যামা আমার কেন
চেনাল এই কোহলচন্দ্রিমা –

থাক সে কথায়, এমন পৌর্ণমাসী
আঁজলা ভরে ধরেছি দুই হাতে,
ওরা চুঁয়েছে কাঠকয়লা দিয়ে
আফিম নাকি মিলিয়েছে তার সাথে।

এক কলসে দুই কলসে তিন
তিন কলসে চার কলসে পাঁচ

দূরে এখন বেতের বনচ্ছায়ে
শুরু হয়েছে পৌর্ণমাসী নাচ

তিন কলসে চার কলসে পাঁচ
পাঁচ কলসে ছয় কলসে সাত

শুরু হয়েছে কুচযুগের ঘাম
শুরু হয়েছে গভীর ধারাপাত

তার গা কাঁপছে কানু-র চোখে চেয়ে,
কটিবিদ্ধ অক্লেশকেশবে –
চিয়ার্স, প্রিয় মাতাল বন্ধুগণ,
এমনই হয় ...... বসন্ত-উৎসবে।

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মাতৃভাষা... ~ অনির্বাণ মাইতি

স্বপ্নেরা ভাঙে, স্বপ্নেরা গড়ে
স্বপ্নেরা পাল্টায়।
মনের মধ্যে ভাষাশহীদেরা
আজকেও গুমরায় ।
রাষ্ট্র পারেনি, বাজার পেরেছে
ভোলাতে সে সব ঋণ ।
মাতৃজঠর কুরে কুরে খায়
কোন সে অর্বাচীন ?

কেন রাগবো না ?
ঘৃ্ণা করবো না ?
মরবো না লজ্জায় ?

দাঁড়িয়ে মায়ের আততায়ী
ফের আমাদেরই দরজায়।
লাগাম দিয়েছি তবু শোনে কই
অবাধ্য ভালোবাসা,
এই জিভ তোকে বন্ধক দেবো
আমার মাতৃভাষা...

সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

এই মেয়ে ~ সম্বুদ্ধ আচার্য্য

এই মেয়ে তুই পড়লি মিনি স্কার্ট কেন?
চলা ফেরায় এতটা তুই স্মার্ট কেন?
আয় তোকে রেপ করি। 
এই বিকেলে ই পাল্টে দেব জীবন-হাতেখড়ি.

তোর ছেলেদের বাবা র নেই খোঁজ কেন?
নাইট ক্লাবে যাচ্ছিস রোজ রোজ কেন?
আয় তোকে রেপ করি.
এই বিকেলে ই থামিয়ে দেব সমাজ-লড়ালড়ি। 

তোর প্রফেসন ঘৃণ্য এক এসকর্ট কেন?
ছেলের মত drink করিস চটপট কেন?
আয় তোকে রেপ করি। 
বুঝিয়ে দেব ছেলে-মেয়ের তফাত সরাসরি। 

মদন শরে বিদ্ধ আমরা পুরুষকুল,
মমতা দর্শাতে আসা তোদের ভুল,
প্রশাসন আর পুলিশ - তোদের কিসসু নেই,
কালকে লোকে ভুলবে আবার যে কে সেই। 

ছেলের মতন সমান দাবি চাস কেন?
হেঁসেল ছেড়ে বাড়ির বাইরে যাস কেন?
আয় তোকে রেপ করি। 
জেনে রাখিস আমরা সমাজ-ন্যায় এর দন্ড ধরি। 

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

জনৈক ধর্ষিতাকে খোলা চিঠি ~ দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়

উনি মদ্যপান করেন
উনি নাইট ক্লাবে যান,
বাবার নামে পুরোনো কেস
অতএব সব ভান!

কবে ঘটনা ঘটেছিলো
কবে নথিভুক্ত হোলো,
বয়ান আগে অন্য ছিলো
পরে পাল্টে কেন গেলো!

তাই মহাকরণ বলে:
উনি এস্কর্টে খাটেন,
এসব বলে মন্ত্রী আবার
রাইটার্সে হাঁটেন।

আমি কাগজ পড়ে জানি
খবর দ্রুত ছোটে হাওয়ায়,
অভিযুক্তরা ক্লাবে যায়নি
চা খেয়েছিলো ধাবায়।

তদন্ত টি চলুক
ঝুলির বেড়াল দেখুক লোকে,
তার আগে শুয়োরের বাচ্চাগুলো
কেন খারাপ বলে তোকে?

তোর কলজেতে জোর আছে
তাই থানায় গেলি তুই,
দিদি তোর নাম জানিনা
তোর পা দুটো দে ছুঁই।

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভ্যালেন্টাইন ~ প্রীতম চ্যাটার্জী


ভাট বাজারীর সমাজ


শালা ভীম-ভাসমান মাইন,


এর-ই মাঝে লাল পতাকা


আমার ভ্যালেন্টাইন!




১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২ 

বই-মেলা ~ রজতশুভ্র বন্দোপাধ্যায়

বই-মেলাতে বই মেলে, তাই
বই-মেলাতে যাই,
বই-মেলাতে হামলে গিয়ে
বই দেখি আর খাই।

বই-মেলাতে দইবড়া খাই,
পান্তুয়া, সন্দেশ,
ঝাল মুড়ি আর চপ কচুরি,
তাও কিনে খাই বেশ।

চা কফি তো মেলাই মেলে,
দশ বারো বার খাই,
সুযোগ পেলেই খাই সিগারেট,
আড়াল খুঁজি, প্রাই।

লেমন চিকেন, সঙ্গে চিলি,
চাও দিয়ে তাও খাই,
মাটন কষা, কোবরেজী ফিশ,
চিংড়ি মাছের ফ্রাই।

খাবার পরেই বিল জুটে যায়,
দেখেই গড়ায় ঘাম!
বই-মেলাতে ওই ঝামেলা –
বাপ রে! সে কি দাম!

বই-মেলাতে খৈও দামী –
খাবার কিনেই কাত,
বই-মেলাতে তাই নিরুপায় –
বই কিনি দৈবাত।।

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

তোষামুদে ~ ঈশ্বর গুপ্ত (১৮১২ - ১৮৫৯)

তুড়ি মারে টপ্পা গায় টাকা ভেবে সার।
বয়ে মরে রাশি রাশি যে আজ্ঞার ভার।। 
মূলেতে নিপাত করে পেলে পরে চারা।
বাবুরূপে বৃক্ষের বাঁদুরে গাছ তারা।।
কিসে ভাল কিসে মন্দ নাহি জানে কিছু।
জেলের হাড়ির মত ফেরে পিছু পিছু।। 
বাগানেতে শশা তোলে পাড়ে পিচ নীচু।
কথায় কথায় কহে জল উঁচু নীচু।। 

বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

শিশুরা শুধু... ~ নবারুণ ভট্টাচার্য

মূর্খ! কোনো আস্থাই নেই মন্ত্রীর আশ্বাসে
শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে

জমছে খালি দুধের বোতল, সস্তার ঝুমঝুমি
নজর কাটার কাজলফোঁটা কোথায় দেবে তুমি
দোলনা একা দুলেই চলে রাতের মহাকাশে
শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে


এই তো এল সেদিন, কীসের যাওয়ার এত তাড়া
মুখেভাতের যৎকিঞ্চিত খরচ বাঁচায় তারা
লুকিয়ে পড়ে মাটির তলায় ফুল ফোটাতে ঘাসে
শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে

মূর্খ! কোনো আস্থাই নেই মন্ত্রীর আশ্বাসে
শিশুরা শুধু মরতে ভালোবাসে
শিশুরা শুধুই মরতে ভালোবাসে