শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯

ভোট ~ সুশোভন পাত্র

পাত্তা দেওয়ার মত বামপন্থী'দের প্রার্থী তালিকায় কি আছে মশাই? না আছে চমক, না আছে গায়ক, না আছে নায়ক। প্রার্থী তালিকা হবে তৃণমূলের মত। ভোজ বাড়ির পাতের শুরুতেই রায়গঞ্জে মার্কা মারা সঙ্ঘ পরিবারের ক্যাডার থাকবে। ডাল-ভাতের পর শুক্তোর সাথে মাঝ পাতে মতুয়া'দের ধর্মীয় ভাবাবেগ চটকে দেওয়ার রেসিপি থাকবে। ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়া সাংসদের এক্সচেঞ্জ অফারে, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের কোকাকোলা খাওয়া প্রার্থীর কনটেম্পোরারি টাচ থাকবে। দক্ষিণবঙ্গে কোলেস্টরেল কে ভেংচি কেটে শিঙ্গাড়ার সাথে ঘুষ খেতে অভ্যস্ত'দের টিকিট জুটবে। আর্থিক দুর্নীতি তে অভিযুক্ত জেল ফেরত আসামীরা তালিকায় জামাই আদর পাবে। সংসদে ১১% উপস্থিতির রেকর্ড নিয়ে 'মহানায়ক' আবার ভোট চাইবে। আর শেষ পাতে মাস্টার শেফের ট্রাম্প কার্ডে গ্ল্যামার দুনিয়ার চমচম কেষ্টদা'দের প্লেটে নকুলদানা হয়ে গড়াগড়ি খাবে। মিমি কি খেলেন, নুসরত কি পরলেন -স্টুডিও তে ঘণ্টাখানেক বসবে। অবশ্য গৃহপালিত হলেই যে মিডিয়ার মেরুদণ্ড থাকতেই হবে এমন তো মাথার দিব্যি দেওয়া নেই। সরকারী বিজ্ঞাপন পেলে সরীসৃপও তো পোষ মানে।  
পাত্তা দেওয়ার মত বামপন্থী'দের ইশতেহারে কি আছে মশাই? ইশতেহার হবে এন্টারটেনমেণ্ট প্যাকেজের মত। রামমন্দিরের সুড়সুড়ি দেবে। কাশ্মীর নিয়ে গসিপ করবে। এনআরসি নিয়ে চিমটি কাটবে। ১৫ লক্ষ ঢুকিয়ে দেওয়ার হিসেব কষবে। বছরে ২কোটি চাকরির গরু গাছে চড়বে। কোথায় হালকা করে বগলের নিচে চুলকে দিয়ে পাকিস্তান নিয়ে তিনটে প্যারাগ্রাফ নামাবে, তা না, বামপন্থী'রা ইশতেহারে কৃষক-শ্রমিক-বেকার'দের নিয়ে পাতা ভরিয়ে পাড়া মাথায় তুলেছে। মাসিক ৬হাজার বার্ধক্য ভাতা চেয়েছে। জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়িয়ে জিডিপির ৫% করার গাজন গেয়েছে। কি আহাম্মক বলুন দেখি? আরে, ভোটের মুখে গাজন গাইতে হলে রামের নামে গাও, তা না, আবার সর্বজনীন গণবন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কাঁদুনি গাইছে? শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় জিডিপির ৬% করতে বলে কেত্তন করছে? ধনী'দের সম্পদের উপর ট্যাক্স বৃদ্ধি চাইছে? মগের মুল্লুক নাকি? স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে জিডিপির ১১% ব্যয় করলে, ফি-বছরে সরকারী কোষাগার থেকে লক্ষ কোটির কর্পোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার হিসেবটা কি অরুণ জেটলির খাতায় কে সি নাগ এসে মিলিয়ে দিয়ে যাবে? আর ধনী'দের সম্পদের উপর ট্যাক্স বাড়ালে আম্বানি-আদানি'দের মালাই চেটে চর্বি জমানো নেতা গুলো কি না খেতে পেয়ে মরবে? যতসব!    
ভুলেও বামপন্থী'দের ভোট দেবেন না। ক্ষমতার লোভ নেই। লাল বাতির গাড়ি চাপার জন্য জিভে জল নেই। কুর্সির শাহানশাহ খুঁজতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রোমাঞ্চ নেই। ২০০৪-এ লোকসভা নির্বাচনে ৬১টা আসন জিতে একটাও মন্ত্রিত্ব নিল না মশাই। আদর্শ, সততা, প্রত্যয়, নীতিনিষ্ঠতা? কি করবেন এসব নিয়ে? পাঁপড় ভাজবেন? মনে নেই, সেদিন যখন পরিষ্কার বামপন্থীদের ছাড়া নতুন সরকার গঠন অসম্ভব, ওমনি বাজপেয়ী সরকারের বিলগ্নীকরণ মন্ত্রকের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে এ বি বর্ধন বলেছিলেন, 'ভাড় মে যায়ে উয়ো মন্ত্রক, অর উসকা মন্ত্রী।' ব্যাস, ঐ দুটো লাইনেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল আগামী ৫ বছরের রাজনীতির অ্যাজেন্ডা। ভেইল, নালকো -একের পর এক শিল্পে, শ্রমিকদের জঙ্গি মেজাজ আর ধর্মঘটের জেরে বিলগ্নী করতে নেমেও গুটিয়ে যায় কেন্দ্র। বামপন্থী'দের চাপেই তৈরি হয়ে কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম। হাতি-ঘোড়া কি ছিল সেই প্রোগ্রামে? 
ছিল বলতে কিছু পিকচারের ট্রেলর। আজ গোটা দেশ জুড়ে চাষিরা যখন বারবার ফসলের ন্যায্য দাম চেয়ে পথে নেমেছেন, ঋণ মকুবের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, ৫রাজ্যের ভোটে কৃষক অসন্তোষের যে পিকচার নরেন্দ্র মোদীরা দেখেছেন, সেই পিকচারের ট্রেলর। লোকে বলে, স্বামীনাথন কমিশন। আজ গোটা দেশ জুড়ে শ্রমিকরা যখন বারবার ন্যায্য মজুরি চেয়ে পার্লামেন্ট স্ট্রিট স্তব্ধ করে দিয়েছেন, সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে হরতাল করেছেন, ৫রাজ্যের ভোটে শ্রমিক অসন্তোষের যে পিকচার নরেন্দ্র মোদীরা দেখছেন, সেই পিকচারের ট্রেলর। লোকে বলে, অর্জুন সেনগুপ্ত কমিশন। ছিল বলতে, সবার জন্য ১০০ দিনের কাজের আইন, আদিবাসী'দের জন্য অরণ্যের অধিকার আইন, গার্হস্থ্য হিংসা বিরোধী আইন, তথ্যের অধিকার আইন। ছিল মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ দাবি, রুগ্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পুনরুজ্জীবনের দাবি। মাত্র ৬১টা আসন পেয়েই দেশের রাজনীতির অ্যাজেন্ডাই পুরো বদলে দিয়েছিল। কি বিপজ্জনক ব্যাপার ভাবুন!   
ভুলেও বামপন্থী'দের ভোট দেবেন না। সাংসদ করতে হলে মরশুমি মুনমুন সেন কে করুন, বাঁকুড়ার গরমে প্রচারে যেতে যিনি নতুন সানস ক্রিম খুঁজবেন। সাংসদ করতে হলে মিমি-নুসরত কে করুন, যাঁদের ভোটে জিতিয়ে দিলেই নিয়মিত সিনেমার পর্দায় দেখতে পাবেন। সাংসদ করতে হলে অর্জুন সিং, অনুপম হাজরা কে করুন, যাঁদের ভোটে জিতিয়ে দিলেই তৃণমূল-বিজেপির দড়ি টানাটানি দেখতে পাবেন। কৃষক আত্মহত্যা করে মরছে, মরুক; আপনি বরং গণেশের শুঁড়ের প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে ভাবুন। শ্রমিক না খেতে পেয়ে মরছে, মরুক; আপনি বরং গোমূত্রে ভেষজ গুন খুঁজুন। দেশের বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ, হোক না; ভোটে আপনার অ্যাজেন্ডা কিন্তু মন্দির-মসজিদ আর গোমাতা। 
বামপন্থীরা ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানো স্পিসিস। বামপন্থীরা ঠিক আজকের মতই, ভোটের পরেও পেট্রোল-ডিজেলের-গ্যাসের দামে আপনার হেঁশেলে টান পড়লেই লাল ঝাণ্ডা নিয়ে রাস্তায় নামবে। বামপন্থীরা ঠিক আজকের মতই, ভোটের পরেও কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম চেয়ে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটবে। বামপন্থীরা ঠিক আজকের মতই, ভোটের পরেও শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি চেয়ে পার্লামেন্টে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেবে। বামপন্থীরা ঠিক আজকের মতই, ভোটের পরেও ধর্মের নামে মানুষ খ্যাপানোর বিরুদ্ধে এলাকায় শান্তি মিছিল বের করবে। বামপন্থীরা ঠিক আজকের মতই, ভোটের পরেও আপনার বেকার ছেলের কাজের দাবিতেই রাত জেগে অনশন করবে। বামপন্থীদের না আছে চমক, না আছে গায়ক না আছে নায়ক। বামপন্থীরা ম্যাড়ম্যাড়ে। বামপন্থীরা সাদাকালো। বামপন্থীরা আপনার আমার মতই খুব সাধারণ। তাই একদম পাত্তা দেবেন না। আর পাত্তা দিলেও, ঐ যে বললাম ভুলেও বামপন্থী'দের ভোট দেবেন না।

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯

অনশন ও স্ট্র্যাটেজি ~ অমিতাভ প্রামানিক

- দিদি, কেসটা কিন্তু দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। 
- কোন কেস রে?
- এই যে অনশন। এতগুলো ছোঁড়াছুঁড়ি এতদিন ধরে অনশন করছে।
- ওরাম অনশন আমি অনেক করেচি। আমার রেকট আছে। ওদের কতদিন হয়েচে?
- না দিদি, আপনার রেকর্ড ভেঙে গেছে। তার চেয়েও চিন্তার হচ্ছে, আগে এসব নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছিল না, এখন কিন্তু অনেক বড় বড় লোক ওদের হয়ে কথা বলছে।
- কে বড় বড় লোক? বিস্যোবাংলায় আবার বড় বড় লোক কোতায় দেকলি?
- না দিদি, শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবাই ওদের হয়ে লিখছে।
- আরে রাখ। ওদের কাজই ওই, বাজে বকা। ওসব নিয়ে তোকে মাথা ঘামাতে হবে না। নেক্সট ইয়ারে দুটোকে একটা করে বিস্যোস্যি দিয়ে দিস আর মুখটা বন্ধ রাখতে বলিস। 
- কিন্তু দিদি, ফট করে এই ছোঁড়াছুঁড়িদের কেউ যদি ইয়ে হয়ে যায়?
- কিয়ে হয়ে যায়? আমি তো ছাব্বিশদিন অনশন করেচিলাম, ইয়ে হয়ে গেচিলাম?
- না, আপনার তো রাত্তিরে সব ফিট করা থাকত। এদের তো কিছু নেই।
- আরে রাখ। অনশনে কেউ ইয়ে হয় না। গান্ধীজি তো হরদম অনশন করত, ইয়ে হয়েচে? ঐ যে বুড়োভাম, কী যেন নাম, হ্যাঁ হ্যাঁ হাজারে, আন্না হাজারে, আমার খালি হাজরা হাজরা মনে হয় –
- কেন দিদি, কালিঘাট থেকে তো অনেক দূরে থাকে, হাজরা হাজরা কেন মনে হয়?
- কী জানি! কেন মনে হয় বলতো?
- লোকটা ড্রামাবাজ বলে? 
- মানে ঘুরিয়ে আমাকে ড্রামাবাজ বললি? যাগগে, ঐ লোকটা তো কতায় কতায় অনশন করে, ইয়ে হয়েচে? 
- কেন দিদি, যতীন না কে যেন – 
- বাঘা যতীন? ওর কেসটা আলাদা। ও তো অনেকদিন টেনেছিল কিস্যু না খেয়ে। জলও টাচ করেনি। ওরাম করলে তো মরবেই। 
- কিন্তু দিদি, আমি খবর যা পাচ্ছি, এদের কয়েকজন কিন্তু বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
- পরুক। এসব নাটক আমার অনেক দ্যাকা আচে। কাগজে লিকচে?
- না দিদি। কাগজ সবগুলোতে বলা আচে, কেউ যেন এসব ফালতু জিনিস খবর না করে। আপনি যেমন বলেছিলেন। 
- এবার যা, গিয়ে বল, সামনের বিষ্যুৎবার থেকে ছোট ছোট খবর করতে।
- কেন দিদি? সামনের বিষ্যুৎবারে কী? 
- এতদিন আমার সঙ্গে থেকে কী শিকলি, ছোঁরা? সব কিচুর টাইমিং আচে। আগেরবার যে অনশন করেচিলাম, টাইমিংটা কেমন ছিল বল? লোকজন বেশিদিন কিচু মনে রাকতে পারে না। ভোটের ঠিক আগে যেটা হয়, সেই বুজে ভোট দ্যায়। 
- এটাও তো ভোটের মুখেই দিদি। এতে কেস গড়বড় হয়ে যাবে না?
- সেই জন্যেই তো বলচি, এবার খবরের কাগজে আস্তে আস্তে জিনিসটা ছাড়তে বল।
- তাতে তো লোকে ওদের ফরেই চলে যাবে, দিদি। 
- আরে ধুর, তুই ওসব বুজবি না। ওদের চারটে ছুঁড়িকে যদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ধরিয়ে দিই ভোটের ঠিক আগে আগে, তাহলে ... কী বুজলি? 
- আরে দিদি, তুমি জিনিয়াস। কাগজে খবর হবে – মহানুভব নেত্রী নিজের উদ্যোগে কর্মসংস্থান করলেন অসুস্থ ছাত্রীদের সাহায্যার্থে। শিক্ষাক্ষেত্রে নজির গড়ল বিশ্ববাংলা। ফাটাফাটি। ভোটে কে ঠেকায়! 
- অত উল্লাস দেখাতে হবে না। অনুব্বতদের রেডি রাকিস। ইলেকশন কমিশনের মাকড়াগুলোকে কোতায় কোতায় ঘোরাতে নিয়ে যাবি তার লিস্টি করেছিস? করিসনি একোনো? যা ফোট আমার সামনে থেকে ...

শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯

মাস্টারদা ~ চন্দন দাস

নেত্র সেনের 'খুনী' কে?
সাভারকারের নামে বিমানবন্দর কেন?

আজ মাস্টারদার জন্মদিন। কিন্তু আজ আগে একজনের মৃত্যুর কথা বলবো ---নেত্র সেনের মৃত্যুর কথা। 
নেত্র সেন খেতে বসেছিল। তখন রাত। তবে বেশী নয়। তার স্ত্রী খাবার বাড়ছিলেন। এমন সময়ে ঘরে এক কিশোর ঢোকে। কোন কিছু বোঝার  আগেই কিশোরটি দায়ের এক কোপে নেত্র সেনের মুন্ডুটা ঘাড় থেকে নামিয়ে দেন। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি!
নেত্র সেন ধরিয়ে দিয়েছিল মাস্টারদাকে। তাই নেত্র সেনের 'শাস্তি'। কিন্তু দুটি প্রশ্নের সমাধান আজো হয়নি। নেত্র সেনকে শাস্তি দেওয়া সেই অগ্নিকিশোর কে ছিলেন? নাম জানা যায়নি। যিনি জানতেন সম্ভবত সেই নেত্র সেনের স্ত্রীকে দিয়ে কিছু বলাতে পারেনি ব্রিটিশ! 
নেত্র সেন সেই মহিলার স্বামী ছিলেন। কিন্তু সূর্য সেন? স্বপ্নের মানুষ, ভালোবাসা, মুক্তির স্বপ্নের নায়ক। এক কিশোরের পরিচয় গোপন করে মহিয়সী হয়ে ওঠা সেই মহিলার নাম? ইতিহাস মনে রাখেনি। 
এখন সেই সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের নামে শহরতলির একটা সাধারন মেট্রো স্টেশন। সাভারকারের নামে সমুদ্রের ধারে বিমানবন্দর! 
তুমি কে হে? কী তোমার ভূমিকা দেশের জন্য লড়াইয়ে? স্বাধীনতা সংগ্রামে কী করেছো তুমি? স্বাধীনতা সংগ্রাম মানে তুমি তো বাবর, হুমায়ুন, আকবরের বিরুদ্ধে লড়াই বুঝেছো, বুঝিয়েছো চিরকাল। ফাঁকতালে ব্রিটিশের সঙ্গে বোঝাপড়া। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিন দখলদারি, দাদাগিরি, তেলের ভাণ্ডারের লোভে দেদার, দু' কান কাটা বোমাবাজি — তুমি তো দেখতেই পাও না। 
সব গডসের ভাইবোন। সবসময় সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেবে। 
কী করেছিল তোমাদের নেতা 'বীর সাভারকার', আন্দামানের জেলে? ১৯১৩-র চিঠিটি মনে আছে? ব্রিটিশ সরকারকে কী লিখছেন 'বীর' সাভারকার? ''...অন্যভাবে যা পাওয়া যেতে পারে সে তুলনায় আমাকে জেলে আটকে রাখলে কিছুই পাওয়া যাবে না। শক্তিশালীর পক্ষেই একমাত্র ক্ষমাশীল হওয়া সম্ভব। কাজেই অনুতপ্ত সন্তান পিতৃতুল্য সরকারের দরজায় ছাড়া আর কোথায় ফিরে যাবে? মহামান্য হুজুর অনুগ্রহ করে বিষয়গুলি বিবেচনা করবেন এই আশা রইল।''
স্বাধীনতা সংগ্রামীর অনুতাপ। তাও আবার ব্রিটিশের কাছে। তাঁর অনুগতদের কাছে এখন কিনা দেশপ্রেমের সংজ্ঞা শিখতে হচ্ছে?
আর একজন? মাস্টারদা। লন্ডনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন মানুষটি, সঙ্গীদের নিয়ে। গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুচলেকা দেননি। জাত-পাত-বোষ্টম-মুসলমান কিচ্ছুটি কোনদিন বিচার করেননি। জেলবন্দী সূর্য সেন সম্পর্কে লিখছেন তাঁর সহকর্মী, পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট নেত্রী হয়ে ওঠা কল্পনা দত্ত —''জেলে গিয়েও দেখি মাস্টারদা চুপ করে নেই। তিনি জানতেন, তাঁর ফাঁসি সুনিশ্চিত, তাই তিনি সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিতেন তারকেশ্বর দস্তিদারকে কাঠগড়ায় বসে। তাঁর ধারণা ছিল — তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হবে না। শুধু কাঠগড়ায় বসে নয়। জেলের ভেতরেও। ...মাস্টারদা একদিন আমাকে বললেন— জেল থেকে বেরিয়ে এসে শহীদদের জীবনী প্রকাশ করবার চেষ্টা করি যেন আমরা। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও তাদের কথা তিনি ভুলতে পারেননি।''
এই লোকটি আমার ধমনীতে। আমাদের ঐতিহ্য। দেশপ্রেম ও মুক্তির স্বপ্ন আমাদের সম্পদ। তোমরা সাভারকারের ধ্বজাধারী, 'স্বাধীনতার' বানিয়া। তোমাদের কী যোগ্যতা আছে দেশপ্রেমের ব্যাকরণ শেখানোর?

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

এসএসসি অনশন ~ প্রতিভা সরকার

প্রশ্ন তো উঠতেই পারে ওয়েট লিস্টে যারা তাদের কেন চাকরি হবে? মেইন লিস্টে যারা আছে তাদেরই হলো না যখন এখনও? ওয়েট লিস্ট অনশনে বসে পড়লেই হলো? মামদোবাজি !! 

দোলের দিন পাড়ায় প্রভাতফেরি হল। কী সুন্দরী সব মহিলা, সুবেশ পুরুষ, খোল দ্বার খোলের সঙ্গে অভিজাত পদক্ষেপে হেঁটে যাচ্ছেন। যে তরুণের বাইকে চেপে প্রেস ক্লাবে যাচ্ছিলাম সে বলল,দেখছেন রাস্তাও লালে লাল, আর আবীরের গন্ধমাখা। 

অসাধারণ গদ্য আর কবিতাও সারাদিনে পড়লাম কিছু। সত্যি অসাধারণ।  এমনকি যেখানে ছেলেমেয়েরা অনশনে বসেছে সেখানেও বাঁধানো বেদীর মস্ত গাছে নতুন কচি পাতা। শুধু বাইশ দিনের উপোসে শুকনো মুখগুলোতে বসন্ত অনুপস্থিত। হাতে প্ল্যাকার্ড, রোদ এড়াতে ছাতা আর ফুটপাথে বিছানো ত্রিপলের ওপর ক্ষিদে আর আশাভঙ্গের অভিঘাতে শুয়ে আছেন যারা, তারা এ দেশের হবু শিক্ষক ! 

অজস্র মেয়েরা অনশন করছেন। ধারেকাছে লেডিজ টয়লেট নেই, আর্মি এরিয়া বলে ত্রিপল খুলে দেয় বার বার, রাতের হাওয়ায় অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ভেসে আসে, একজন নয়, দুজনের গর্ভপাত হয়েছে, দ্বিতীয়জনের পারিবারিক সম্মানবোধ সে কষ্ট তাকে নীরবে গলাধঃকরণ করিয়েছে, তবু তারা লড়ছেন। ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনশন করছেন আজ বাইশদিন। আমার পাশে বসা মেয়েটির মুখ বড় মলিন। জিজ্ঞেস করে জানলাম সে হাসপাতালফেরত। অক্সিজেন নেওয়া শেষ হতেই আবার এসে বসেছে।অঙ্কের এম এস সি মেয়েটির প্রশ্ন, সরকার যে বলে বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই বলে এতো পদ খালি, আমরা তবে কারা ?  
             
 প্রথমেই যে প্রশ্ন তোলা তার উত্তরেই লুকিয়ে আছে গোটা ব্যাপারখানার ব্যাখ্যা। শুনুন তবে, গোটা পশ্চিমবঙ্গে মোট কতো স্কুলটিচারের পদ খালি আছে তার কোন ঘোষণা হয়নি। অথচ স্কুল সার্ভিস কমিশনের গেজেট অনুযায়ী চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশের ১৫দিন আগে আপ টু ডেট ভেকেন্সি জানাতে তারা বাধ্য। অনশনকারীরা জানাচ্ছেন নিজের নিয়ম নিজেই ভাঙছে সব সরকারি সংস্থা। ২০১৭ মে মাসে রেজাল্ট বেরলো, নিয়মানুযায়ী উচিত ছিল ২০১৭র এপ্রিল অব্দি কতো শূন্যপদ আছে তার তালিকা প্রকাশ করা। কিন্তু বাস্তবে করা হল ২০১৫ অব্দি। মাঝের দুবছর কি উবে গেল ? 

নিয়ম হয়েছিল ১ঃ ১ঃ ৪  রেশিওতে নিয়োগ হবে। অর্থাৎ ১০টি সিট থাকলে ১৪ জনকে ডাকবে, ১০ জন এমপ্যানেল্ড হবে, আর ৪ জন থাকবে ওয়েটলিস্টে। তার মানে ১০০ জনে ৪০ জন থাকবে ওয়েট লিস্টে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ১০০ পদের ওয়েট লিস্টে রাখা হয়েছে ২৫০/৩০০ জনকে। এই বেনিয়মগুলো না হলে আমরা আজ রাস্তায় শুয়ে থাকতাম না, সখেদে বলে লক্ষ্মীকান্তপুরের তরুণটি। তার প্রশ্ন গত ৭ বছর রিক্রুটমেন্ট হয়নি, ভেকান্সিগুলো গেল কোথায়? 
এছাড়াও অঙ্কিত অধিকারীসংক্রান্ত ঘটনা, টাকাপয়সার লেনদেন, আরো অনেক বেনিয়ম নিয়ে কথা বলতে তারা দৃশ্যতই বিব্রত বোধ করছে। কারণ মঞ্চটিকে অরাজনৈতিক রাখতে হবে তো। কিন্তু মুখ খুললেই যে জড়িয়ে যাচ্ছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল। সান্ত্বনা দেবার সাধ্য ছিল না, তাদের ফান্ডে অল্প সাহায্য আর সমবেদনার প্রকাশ ছাড়া এ শর্মার আর কোন সাধ্যই নেই। 
তবু ফিরতি পথে পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাওয়া দেড় কোটি টাকার গাড়ি, উড়ালপুলের ওপর থেকে পাঁচতারা হোটেলের কালো কাচ ফুঁড়ে তার সুসজ্জিত অন্দরমহল দেখতে দেখতে ফিরতি আমি-র কানে বাজতে লাগলো এক তরুণের আক্ষেপ - একটা সিস্টেম গড়ে উঠতে এতো সময় লাগে, আর সেই সিস্টেমকে ধ্বংস করে দিতে কতো অল্প সময় ! মদ খেয়ে মরলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, আমরা অনশনে মরলে কি হবে ?  

আমার কথা যাদের বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হবে না, তাদের দোলের চূড়ান্ত শুভেচ্ছা জানিয়েও বলি, আমাকে মিথ্যুক এবং অনশনকারীদের ষড়যন্ত্রী প্রমাণের জন্যও তো ওদের কাছে আপনার একবার যাওয়া উচিত, ওদের বক্তব্য শোনা উচিত। 

আর যারা আমার কথা যুক্তিযুক্ত মনে করলেন তাদের অনেক ভালবাসা। কল্লোলিনী কলকাতার যে হৃদয় আছে তা প্রমাণে আপনাকে যেতেই হবে, দাঁড়াতে হবে ওদের পাশে। বাইশদিন না খেয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর চকোলেট, স্যান্ডউইচের দরকার নেই, মনোবল আর লড়াকু চেতনার বড় দরকার। 

আর দেরি করবেন না, সাথী ।

বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯

ডাঃ রেজাউল করিম-এর প্রার্থীপদ ~ ডাঃ বিষাণ বসু

আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই প্রথমবার ভোটে দাঁড়ালেন একজন চিকিৎসক-নেতা। হ্যাঁ, আমি ডাক্তার রেজাউল করিমের কথা বলছি।

না, আমি একবারের জন্যেও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় থেকে শুরু করে ডাঃ সূর্যকান্ত মিশ্র বা ডাঃ রামচন্দ্র ডোম, এমনকি ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বা ডাঃ মমতাজ সঙ্ঘমিত্রা অথবা ডাঃ নির্মল মাজি, কারো কথাই ভুলে যাচ্ছি না।

আমার বক্তব্য, এঁদের পরিচিতি রাজনীতিক হিসেবে। এঁদের সাফল্য বা ব্যর্থতার দায়ও ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই, বা সমষ্টিগতভাবে তাঁদের দল বা দলের রাজনীতির।

কিন্তু, এক এবং একমাত্র চিকিৎসক-আন্দোলন থেকেই উঠে এসে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখার নজির, অন্তত এই রাজ্যে, আর নেই।

তিন কি চার দশক আগে, বিশেষ করে বাম দলগুলিতে, এক বিশেষ আন্দোলনের ঘরাণা থেকে নেতা উঠে আসার প্রচলন ছিল। মানে, কৃষক ফ্রন্ট বা শ্রমিক ফ্রন্ট। এই রাজ্যে, সরকারি বাম দলের প্রভাব কমে আসার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত এই দুই উজ্জ্বল স্রোতের ক্ষীয়মানতা। কলকাতা শহরকেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের হাতে যে মুহূর্তে বাম আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত হল, সেই মুহূর্তেই তাঁদের শেষের শুরুটি সূচিত হয়েছিল, এমনটাই মনে করি। পরবর্তীকালেও, অন্যান্য দলেও, বিশেষ একটি আন্দোলনের ফ্রন্ট থেকে নেতা নির্বাচিত হওয়ার নজিরটি বিরল হয়ে উঠেছে।

এই প্রেক্ষিতে, ডাঃ রেজাউল করিমের উঠে আসাকে ব্যতিক্রম ধরা যেতে পারে।  

যাঁর প্রত্যক্ষ কোনো দলীয় রাজনীতির অতীত নেই। থাকা সম্ভবও নয়, কেননা তিনি সরকারি চাকরি করতেন। দলমতনির্বিশেষ এক চিকিৎসক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হিসেবেই তাঁর উত্থান। বর্তমান পরিস্থিতিতে, চিকিৎসকদের যদি একটি সুবিধাভোগী শ্রেণীর অন্যতম হিসেবে না ভেবে বিশেষ একটি আক্রান্ত শ্রেণী হিসেবে যুক্তিসঙ্গতভাবে ধরা হয়, বা অন্তত আক্রান্ত শ্রেণীর অন্তর্গত একটি গোষ্ঠী হিসেবে ভাবা হয়, তাহলে সেই চিকিৎসকদের সার্থক প্রতিনিধি হিসেবে ডাঃ করিমের চেয়ে উপযুক্ত কোনো নাম, এই মুহূর্তে, মাথায় আসে না।

এরই সাথে সাথে, তাঁর আন্দোলন শুধুমাত্র চিকিৎসকদের স্বার্থটুকুই যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে, এই ধরনের মায়োপিক নয়। কেননা, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি বলে, চিকিৎসকদের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে, বা চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, সাধারণ মানুষকে পাশে না পেলে চলবে না। আর, রোগী-চিকিৎসকের এই অবিশ্বাসের মূলে রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে চিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অসহায়তা, এবং সেই অনিশ্চয়তা-অসহায়তারও মূলে চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ। 

অতএব, ডাঃ রেজাউল করিমের জনমুখী আন্দোলন মুখ্যত সবার জন্যে স্বাস্থ্যের দাবীতে আন্দোলন, সবার সামর্থ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যের দাবীতে আন্দোলন।

স্বাধীনতার পর সাতটি দশক পার হয়ে গেলেও, একটিও সাধারণ নির্বাচন লড়া হয়নি সবার জন্যে স্বাস্থ্যের দাবীকে সামনে রেখে। স্বাস্থ্যচিকিৎসা প্রথম দশটি ইস্যুর অন্যতম, এমন কোনো দলীয় নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোও চোখে পড়েনি কোনোদিন।

দেশের প্রথম সারির সবকটি দলের জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ে এমন প্রকাশ্য অনীহা বা অবজ্ঞার উল্টোপিঠেই থাকে চিকিৎসক ও রোগীকে যুযুধান প্রতিপক্ষ হিসেবে খাড়া করা। এরাজ্যের বাম দলগুলিকে ধন্যবাদ, যে, তাঁরা নির্দল প্রার্থী ডাঃ রেজাউল করিমকে সমর্থন জুগিয়ে এই গড্ডালিকা প্রবাহের বিপরীতে প্রথম পদক্ষেপটি নিলেন।      

ডাঃ করিম জিতবেন কি জিতবেন না, সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কেননা, নির্বাচনের সমীকরণ ভারি জটিল বিষয়। এবং, এদেশের নির্বাচনে, বিশেষ করে এই বাজারে, শিক্ষিত ভদ্রলোকের জয়ের সম্ভাবনা প্রথম থেকেই কমে যায়, কেননা খেউরের লড়াইয়ে তাঁদের অদক্ষতা লক্ষ্যণীয়। আর, একথা মাথায় রাখতে হবে, পিপল গেট দ্য লিডার দে ডিজার্ভ। কাজেই…..  

কিন্তু, তাঁর প্রার্থী হওয়া বা প্রচার-পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে সবার জন্যে স্বাস্থ্যের দাবী কিছুটা সামনের সারিতে আসতে পারবে, কিছুটা মান্যতা পাবে, এই দাবী প্রকৃতঅর্থেই জনসাধারণের মধ্যে থেকে উঠে আসা জনসাধারণের দাবী হয়ে উঠতে পারবে, এইটাও খুব বড় পাওনা।

সেইদিক থেকে বিচার করলে, ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা ফলপ্রকাশের বহু আগেই, ডাঃ রেজাউল করিম ও তাঁর অ্যাজেন্ডাটি জিতে গিয়েছে। 

আপনিও গর্ববোধ করুন, কেননা অ্যাজেন্ডাটি আপনারও।

সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯

Revolution Recounted ~ সম্রাট চক্রবর্তী

ভালো আছেন অর্ণব দাম ?ও বিপ্লবী অর্নব বাবু?আইআইটি ড্রপ আউট অর্ণব।আপনি মেধাবী ছিলেন।মাওবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী তরুণ।মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের স্থিতধী তাত্ত্বিক ।

জঙ্গল মহলে বিপ্লবের আশায় পা রাখেন।মুক্তাঞ্চল গড়বেন।সে প্রায় এক দেড় দশক আগের কথা।'যুদ্ধে হেরে'বা মন জগতে পরিবর্তনের ফলে যে কারণেই হোক রাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।এখন ইতিহাসে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর।পোস্ট গ্র্যাজুয়েট।স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট পরীক্ষায় মুন্সিয়ান দেখিয়েছেন।কারান্তরালে দেশের কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অভিনন্দন অর্ণব।উর্ফ আকাশ বা বাতাস বাবু।আকাশ ,বাতাসের কথায় মনে পড়লো!তিলক টুডুর কথা।অর্নবের কমরেডরা ছাত্র ফেডারেশনের এই ছাত্র কর্মীর মাথায় খুব কাছ থেকে গুলি করে।আধমরা তিলকের রক্তাক্ত দেহের পাশে বসে মুরগির ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছিল।এক দশক অতিবাহিত।কে জানে তিলক বেঁচে থাকলে আজকে হয়তো কোনও প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য তৈরি হতেন!অথবা ছবি মাহাতো।একুশ জন বিপ্লবী ধর্ষণ করে যাঁকে পুঁতে দিয়েছিল জঙ্গলে!তার সন্তানরাও নিশ্চই অর্নবের সাফল্যে খুশি হবে।সহ নাগরিকের সাফল্য প্রত্যেকটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করে।প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াই!প্রতিকূল পরিবেশ।সৌম্যজিত বসু ,পার্থ বিশ্বাসের পরিবারের মত প্রতিকূল।স্কুল শিক্ষক সৌম্যজিত ,কলকাতা পুলিশের কর্মী পার্থর পরিবার অবশ্য এতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না।শুধু করোটির একটা অংশ আর কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল।সঙ্গে গুটি কতক হাড়গোড়।শল্কু সোরেদের বাপ মায়েদের থেকে একটু কম সৌভাগ্যবান।পোঁকায় কাটা পঁচা গলা লাশের জায়গায় শুধু খুলি আর হাড়গোড়।হায়দ্রাবাদের গবেষণাগার থেকে 'ফলাফল' জানতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা তাঁদের পরিবারের লোকেদের।কঙ্কাল গুলো তাঁদের পরিবারের প্রিয়জনের তো!ভালো থাকুন অর্ণব।

মানস চক্ষে দেখতে পাচ্ছি অধ্যাপক অর্ণব ইতিহাসের ক্লাসে সমাজ পরিবর্তনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করছেন।শ্রেণী বিপ্লব, ক্লাস ইক্যুয়েশন, কায়িক ও বৌদ্ধিক শ্রমের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের সামনে দন্ডায়মান।ছেলেমেয়েরা গণতন্ত্র, প্রলতাড়িয়েত সমাজে রাজবন্দীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ছেন অধ্যাপক অর্নবের দিকে।একের পর এক প্রশ্ন বানে বিপন্ন অর্ণব ঢোক ঢোক করে ঠান্ডা জল খেলেন।যে জল টুকুও ১৫বছরের তিলক টুডু পায় নি।বিপ্লবীরা অবশ্য বেসক্যাম্পে যাবার আগে আধমরা তিলকের গলার কন্ঠনালী কুচুৎ করে কেটে 'শ্রেণী শত্রুর রক্তে' হাত রাঙিয়ে বিপ্লবের উদ্বৃত্তের মূল্য উশুল করে দিয়েছিলেন।অর্ণবের পরীক্ষার খাতায় শিক্ষকের কলমের লাল দাগের মত যা বিরলতম।'শ্রেণীশত্রু
ভাগচাষীর' মেধাবী পুত্রের  রক্ত।একটু লাল সেলাম হবে না কমরেড?

শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৯

অনশন চলছে ~ হাবিব বাপি

আগে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় পাশ করলে চাকরি হত। এখন পড়াশুনা করতে হয়। ফর্ম ফিলাপ এর জন্য আন্দোলন করতে হয়। রিটেন একজ্যাম দেওয়ার জন্য আন্দলন করতে হয়।  রেজাল্ট বের করার জন্য, ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য, মেরিট লিস্ট পাব্লিশ করার জন্য কেস অথবা আন্দোলন করতে হয়।  কাউন্সেলিং এবং জযেনিং এর জন্য আবার আন্দোলন করতে হয়। 

৫-৬ বছরের একটা প্রসেস।  যার মধ্যে পড়াশুনো ৬ মাস আর বাকি সাড়ে ৫ বছর আন্দোলন, কেস এবং অনশন করতে হয়।  

অনশন এখনো  চলছে ।

মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

হিটলারের জুমলা ~ অরিজিত মুখার্জী

সরকারি জুমলার একটা গল্প বলি শুনুন।

১৯৩৮ সালের কথা। তার বছর কয়েক আগে, সঠিকভাবে বলতে গেলে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাডলফ হিটলার প্রথমবার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে ডাক পান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট, ফিল্ড মার্শাল হিন্ডেনবার্গের কাছ থেকে। প্রথমে ছিলো কোয়ালিশন, কিন্তু অচিরেই একে একে সবাইকে সরিয়ে, অন্য দলগুলোকে বেআইনি ঘোষণা করে, লেবার ইউনিয়ন বাতিল করে সেখানে ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট বা নাৎসি পার্টির একমাত্র সংগঠন বসিয়ে হিটলার জার্মানির একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন। রাইখস্ট্যাগ তখন ছিলো নাম কা ওয়াস্তে, রাবারস্ট্যাম্প মাত্র। গোয়েবলস তখন প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রির সর্বেসর্বা, তাঁর ইশারায় দেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যম পরিচালিত হত - তিনিই বলে দিতেন কবে কোন খবর কীভাবে লিখতে হবে। সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি অবধি - সর্বত্রই ন্যাশনাল সোশ্যালিজমই একমাত্র এবং আবশ্যিক বিষয়। ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হত জার্মান সায়েন্স, জার্মান হিস্টরি, জার্মান জাতিগত তত্ত্ব ইত্যাদি - নামীদামী যে অধ্যাপক বা সংস্কৃতি কর্মীরা এ পথে হাঁটতে চাননি, তাঁদের তখনই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো শুরু হয়ে গেছে, কখনো খুন করাও। এর মধ্যে বার্লিন এবং অন্যান্য শহরে লাইব্রেরির সমস্ত বই জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটে গেছে।

তো যেটা বলছিলাম - সাধারণ জার্মানরা কিন্তু কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও বেশ মানিয়ে নিয়েছিলো, কারণ জাতীয়তাবাদের হিস্টিরিয়া হিটলার সফলভাবে চালাতে পেরেছিলেন, বিশেষ করে ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানীর দুরবস্থা আর তা কাটানোর জন্যে লীগ অফ নেশনস থেকে বেরিয়ে আসা, এমনকি অসামরিক ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত রাইনল্যান্ডে জার্মান সৈন্য পাঠানো - বিভিন্ন প্লেবিসাইটে জার্মানরা ঢেলে হিটলারের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, গেস্টাপোর ভয়ে অনেকেই হয়তো না-কে হ্যাঁ লিখেছেন, কিন্তু তাতেও এই বিপুল সমর্থনকে অস্বীকার করা যায় না।

এই সময়ে, হিটলার, সাধারণ জার্মান কর্মীদের মধ্যে আরও জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে একটি "জনসাধারণের গাড়ি" তত্ত্ব বাজারে আনেন। গোদা বাংলায়, সমস্ত জার্মান কর্মীদের জন্যে সহজলভ্য গাড়ি তৈরী হবে, তার দাম থাকবে ৯৯০ মার্ক, অর্থাৎ তখনকার হিসেবে ৩৯৬ ডলার। তৈরী হয় ভোকসওয়াগন - যার আক্ষরিক অর্থ - "পিপলস কার"। বলা হয় (হিটলারের নিজস্ব দাবীও তাই) যে অস্ট্রিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ডঃ ফার্ডিন্যান্ড পোর্শের করা বীটলসের ডিজাইনে হিটলার অবদান ছিল। এবারে বেসরকারি কোনো সংস্থার পক্ষে ওই দামে গাড়ি বানানো সম্ভব নয় – তাই হিটলারের নির্দেশে তৈরী হল সেই সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গাড়ি তৈরীর কারখানা, একটি সরকারী সংস্থা, যার মাথায় হিটলার বসালেন নাৎসি পার্টির লেবার ফ্রন্টকে। বলা হল এই কারখানা থেকে প্রতি বছর  পনেরো লক্ষ গাড়ি বাজারে আসবে। গোয়েবলসের দল প্রচারে নেমে পড়লো এই নিয়ে, বছরে পনেরো লক্ষ গাড়ি, কোথায় লাগে ফোর্ড কোম্পানি? লেবার ফ্রন্টের তরফ থেকে কারাখানা শুরুর জন্যে পাঁচ কোটি মার্ক দেওয়া হল। কোথা থেকে এলো এই টাকা? সেই যে হিটলার ট্রেড ইউনিয়নের বদলে নাৎসি সংগঠন বাধ্যতামূলক করলেন - তাদের তো সাপ্তাহিক চাঁদা দিতে সমস্ত কর্মীকে - তাই দিয়েই তৈরী হয়েছিল লেবার ফ্রন্টের "ফান্ড"।

এবার আসরে নামলেন ডঃ রবার্ট লে, যিনি জার্মানিব্যাপী লেবার ফ্রন্টের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কর্মীদের জন্যে আনলেন একটা নয়া স্কিম - অনেকটা গাড়ির দামের দরুণ সপ্তাহে একটা ইনস্টলমেন্ট - সমস্ত কর্মীকে এই টাকা দিতে হবে প্রতি সপ্তাহে - যতটা সে পারবে - দশ বা পনেরো মার্ক করে। এই টাকা জমে যখন ৭৫০ মার্ক হবে, তখন সেই কর্মী একটা রসিদ পাবে অর্ডার নম্বর সহ, তাতে লেখা থাকবে যে কারখানা থেকে গাড়ি বেরোলেই সেই কর্মী একটি গাড়ি পাবে। এভাবে জার্মানির সমস্ত কর্মীর কাছ থেকে কয়েক বছর ধরে তোলা হল লক্ষ লক্ষ মার্ক।

বলাই বাহুল্য, ভোকসওয়াগনের কারখানা থেকে নাৎসি শাসন চলাকালীন একটিও গাড়ি রাস্তায় বেরোয়নি। ১৯৩৯ সালের পয়লা সেপ্টেম্বের জার্মান ট্যাঙ্কবাহিনী পোল্যান্ডের বর্ডার বেরোয়। ততদিনে ভোকসওয়াগনের কারখানা গাড়ির কারখানা থেকে বদলে হয়ে গেছে যুদ্ধাস্ত্র তৈরীর কারখানা। "জনসাধারণের গাড়ির" তত্ত্ব দেখিয়ে জার্মান কর্মীদের কাছ থেকে সংগৃহীত লক্ষ লক্ষ মার্ক গাড়ির বদলে কাজে লাগলো যুদ্ধাস্ত্র তৈরীতে, আর তার পরের কথা আর কাউকে বলে দেওয়ার দরকার নেই। আমরা সবাই জানি সেই গল্পটা।

শেখার বিষয় এইটাই যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর "গ্র্যান্ড স্কিম" গুলোও এরকমই জুমলা। 

যেমন ধরুন "প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা"। চাষীদের কাছ থেকে ফসল বীমার জন্যে টাকা নেওয়া হয় যাতে খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্যে চাষীদের ক্ষতি আটকানো যায়। ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই স্কিম চালু করেন। আরটিআই সুত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে ২০১৪-১৫ বা ২০১৬-১৬ সালে (অর্থাৎ, নতুন চালু করা স্কিমের আগের বছরে), যখন পুরনো ফসল বীমা চালু ছিলো, তখনকার তুলনায় ইনসিওরেন্স প্রিমিয়াম বেড়েছে ৩৪৮% (১০,৫৬০ কোটি থেকে বেড়ে ৪৭,৪০৮ কোটি)। এবং হাতে গোণা কয়েকটি বেসরকারি বীমা সংস্থা, রিলায়েন্স যাদের মধ্যে অন্যতম, ২০১৬-১৭ সালে মুনাফা করেছে ৭০০০ কোটি টাকার, যেখানে গড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষী খরিফ মরসুমের জন্য পেয়েছে মাত্র ১০,০০০ টাকা। নাম আসবে আরো অনেক স্কিমের - যেমন এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, স্বচ্ছ ভারত, স্মার্ট সিটি ইত্যাদি - সবই দেখা যাচ্ছে জুমলা। ভোকসওয়াগন কারখানার মত এখানেও স্কিমগুলো তৈরী যাদের উদ্দেশ্যে, তারা কিন্তু যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। ১৯৩৮ সালে কর্মীদের দেওয়া টাকায় তৈরী হয়েছিলো যুদ্ধাস্ত্র। আজ ভারতে চাষী বা কারখানার শ্রমিকদের টাকায় কর্পোরেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী তুষ্ট করছেন কখনো আম্বানিকে, কখনো আদানিকে।

এটা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবো, ততই মঙ্গল।

[Source: The Rise and the Fall of the Third Reich, William Shirer]

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯

৫৬ ইঞ্চি ~ দেবতোষ দাস

শ্রীশ্রীভূষণ্ডি কাগায় নমঃ। 

শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচে। ৪১ নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটি। আমরা হিসাবি ও বেহিসাবি, খুচরা ও পাইকারি, সকল প্রকার গণনার কার্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করিয়া থাকি। আমরা সনাতন বায়সবংশীয় দাঁড়ি কুলীন, অর্থাৎ দাঁড়কাক। 

কিন্তু গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের পাণ্ডা অকাল-পক্ক দণ্ডবায়স শ্রী কাক্কেশ্বর, স্মার্টবোমের সার্জিকাল আঘাতে অকাল-অক্কা হওয়াতে, গণনা আপাতত স্থগিত আছে।
 
অমনি গাছের ফোকর থেকে বেরিয়ে এক দেড়েল বুড়ো বলল, ১০ দিন পার হয়ে গেল, এখনও হিসেবটা হয়ে উঠল না? তারপর কয়েকখানা রঙিন কাচ দিয়ে বারবার চারপাশ দেখে দরজির ফিতেটা বার করল। তারপর হাওয়ায় খানিক মাপ-টাপ নিয়ে বলল, ছাতি যখন ৫৬ ইঞ্চি, বন্দুকও যখন ৫৬ মানে একে ৫৬, তখন লাশও ৫৬ হবে! 

একটা তকমা-আঁটা পাগড়ি-বাঁধা কোলা ব্যাং রুল উঁচিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, ভুল হিসেব! মানহানির মোকদ্দমা! শামলাপরা কুমির সর্দিবসা মোটা গলায় বলতে লাগল, ধর্মাবতার হুজুর! এটা মানহানির মোকদ্দমা। সুতরাং প্রথমেই বুঝতে হবে "মান" কাকে বলে। মান মানে কচু। 

সেই শুনে হিজিবিজবিজ হেসে বলল, একজনের মাথার ব্যারাম ছিল, সে সব জিনিসের নামকরণ করত। তার কোটের নাম ছিল 'বিমুদ্রাকরণ'। তার জুতোর নাম 'অবিমৃষ্যকারিতা'। তার গাড়ুর নাম ছিল 'পরমমিত্রোঁওওও' – কিন্তু যেই তার বাড়ির নাম দিয়েছে 'কিংকর্তব্যবিমূঢ়' অমনি ভূমিকম্পে বাড়ি-টাড়ি সব পড়ে গিয়েছে।
 
তাই দেখে ব্যাকরণ সিং-এর ব্যা-ব্যা করে কী জোশ! থেকে থেকে চিৎকার করছে, যুদ্ধ চাই! যুদ্ধ! ছাগল ফুঁপিয়ে বলল, যুদ্ধে আমার সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়েছিল, বাকি আধখানা মরে গেল দেশপ্রেমে! তারপর? ছাগল বলল, তার আর পর কী? আমিও মনের দুঃখে ফাইলগুলো খেয়ে ফেললাম! 

তবে আপাতত গণনা স্থগিত। দণ্ডবায়স প্রয়াত। তার জন্য খানিক নীরবতা পালন করা যেতে পারে। কতটা? এই ৫৬ ইঞ্চি!

মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯

দেশদ্রোহী ~ শঙ্কর কুমার দাস

পাকিস্তান-চিন-রাশিয়া-কিউবা-ভেনেজুয়েলার দালালদের কুৎসিত অতীতটা একটু জানবেন না?

১) মুজফ্ফর আহমেদ - মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ সরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়,যার মধ্যে ৩ বছর সেলুলার জেল এ কাটে।স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

২) গণেশ ঘোষ-চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অন্যতম নায়ক।সূর্য সেনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জালালাবাদ পাহাড় এ লড়াই করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে।১৬ বছর সেলুলার জেলে সশ্রম কারাদণ্ড । পরবর্তী কালে সিপিআই MLA,
৩ বারের জন্য ও সিপিএমের M.P.

৩) কল্পনা দত্ত- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর সহোযোগিনী এবং চট্টগ্রাম বিদ্রোহের অন্যতম মুখ।৬ বছর এর দ্বীপান্তর।ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টি তে যোগ দেন ও ভোটে দাঁড়ান।

৪) সুবোধ রায় - চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন,জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে কনিষ্ঠতম সৈনিক।
১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়, যার মধ্যে ৬ বছর সেলুলার জেল। সিপিএম রাজ্য কমিটি সদস্য আজীবন।

৫) অম্বিকা চক্রবর্তী- চট্টগ্রাম বিদ্রোহের জন্য ১৬ বছর সেলুলার জেলে সশ্রম কারাবাস।স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টি তে যোগদান ও নির্বাচিত MLA.

৬) অনন্ত সিং - চট্টগ্রাম বিদ্রোহের জন্য ২০ বছর (১৬ বছর সেলুলার জেলে) সশ্রম কারাবাস। স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টি তে যোগদান।

৭) শিব ভার্মা - ভগৎ সিংএর সহযোগী। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় একসাথে গ্রেপ্তার হন।ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় ও এনার যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর আন্দামানে।১৭ বছর পর ফিরে যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে।পরে সিপিএম উত্তর প্রদেশ রাজ্য কমিটির সেক্রেটারি।

৮) হরেকৃষ্ণ কোনার- ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ এর জন্য ৬ বছর আন্দামানে এ দ্বীপান্তর। আন্দামানে বিপ্লবীদের নিয়ে কমিউনিস্ট কনসোলিডেশন গঠন ও পরে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান মুখ।

৯) লক্ষী সায়গল - আজাদ হিন্দ বাহিনীর রানী ঝাঁসি রেজিমেন্ট এর ক্যাপ্টেন।আজাদ হিন্দ বাহিনীর হয়ে ইমফল ও কোহিমা ফ্রন্টে লড়াই করেন।স্বাধীনতার পর কমিউনিস্ট পার্টি তে আসেন। আমৃত্যু সদস্য ছিলেন।

১০, ১১, ১২ ) জয়দেব কাপুর , অজয় ঘোষ ও কিশোরীলাল- ভগৎ সিংএর সহযোগী লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় একসাথে গ্রেপ্তার হন এবং যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় আন্দামান সেলুলার জেলে। স্বাধীনতার পর মুক্তি পেয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

১৩) সতীশ পাকড়াশী - মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় ১০ বছর এর জন্য সেলুলার জেল। ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ও সিপিএম বিধায়ক।

১৪) পি সি জোশি- মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন, যদিও মেয়াদের আগে মুক্তি পান। ৩ বছর কাটান সেলুলার জেলে, কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম জেনারেল সেক্রেটারি।

১৫)অরুণা আসাফ আলী - ১৯৪৬ এর নৌ বিদ্রোহের সংগঠক কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ৬৬ টা যুদ্ধ জাহাজ ও ১০০০০ নৌ সেনা নিয়ে গড়ে ওঠা ব্রিটিশ বিরোধী যে বিদ্রোহ কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভার পিছন থেকে ছুরি মারায় অঙ্কুরে বিনাশ পায়। এই বিদ্রোহী দের মধ্যে আরো অনেক কমিউনিস্ট ছিলেন যারা ব্রিটিশ এর গুলিতে মারা যান, উৎপল দত্তের 'কল্লোল ' নাটকে এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।

১৬) বি টি রণদিভে - ১৯২৫ থেকে ১৯৪২ , ১৭ বছর ধরে ব্রিটিশ সরকার এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কৃষক শ্রমিক কে সংগঠিত করেছেন। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নৌ বিদ্রোহের সমর্থনে সারা ভারত ব্যাপী হরতাল সংগঠিত করেন ও ব্রিটিশ সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেন। স্বাধীনতার পর সিপিআই এ, পরে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি তে।

১৭) ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ - ১৯৩৪ - ১৯৪২ ব্রিটিশ সরকারের ' ওয়ান্টেড লিস্ট' এ প্রায় গোটা যৌবন তাই আত্মগোপন করে কাটিয়ে দিয়েছেন। পরে কেরালার প্রথম কমিউনিস্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।

১৮, ১৯ ) বীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর-- ছাত্রাবস্থায় পালিয়ে যান জার্মানি তে ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স লীগ এর বার্লিন কমিটি এর সদস্য হয়ে ভারত বর্ষের বিপ্লবীদের অস্ত্র যোগান দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
হিটলারের নাত্সি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার ও দীর্ঘ কারাবাস জার্মানিতেই।কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

২০ ) শওকত উসমানী- মীরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত।কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

এইরকম কুৎসিৎ অতীত একমাত্র বামপন্থী দেশদ্রোহী দেরই আছে।

আর কারো আছে নাকি???

আর থাকবেই বা কেন?
ওরা তো দেশপ্রেমী!

অনেক তো 'দেশদ্রোহী' সিপিএমের কুৎসিত অতীতের কথা তো জানলেন।এবার জানুন সত্যিকারের 'দেশপ্রেমিক'দের কথা।

১)মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর(আরএসএসের দ্বিতীয় স্বরসঙ্ঘচালক) : "হিন্দুরা ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করে তোমাদের শক্তি খরচ না করে,আসল শত্রু মুসলমান,খ্রিস্টান আর কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করো।"

২)বিনায়ক দামোদর সাভারকর('হিন্দুরাষ্ট্র' বই-এর লেখক এবং হিন্দুত্ব আইডিওলজির জনক) : ইংরেজ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে লেখেন যে তিনি আর কোনও দিনও ব্রিটিশ বিরোধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেবেন না।

৩)নাথুরাম বিনায়ক গডসে(আরএসএসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) : জীবনে কোনওদিন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ না নিলেও গান্ধীজীকে খুন করেন[প্রসঙ্গত,গান্ধীজীর আদর্শকে সমর্থন করিনা,তবে তাঁকে খুন করাটাও ঘৃণ্যতম অপরাধ বলেই মনে করি]।

৪)অটল বিহারী বাজপেয়ী(আরএসএস নেতা,পরবর্তীকালে বিজেপির টিকিটে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী) : ১৯৪২সালে ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের বটেশ্বর গ্রামে ব্রিটিশ সরকারের রাজসাক্ষী হয়ে অসংখ্য বিপ্লবীকে ইংরেজ সরকারের কাছে ধরিয়ে দেন।

৫)শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (আরএসএস নেতা তথা বিজেপির প্রাণপুরুষ) : ১৯৪৭ সালের ২রা মে ভাইসরয় মাউন্ট ব্যাটেনকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন ভারত ভাগ পরে করা হলেও ক্ষতি নেই কিন্তু বাংলাকে যেন অবিলম্বে ভাগ করা হয়[যে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল রাস্তায় নেমে এসেছিলেন]।

৬)কে বি হেডগেওয়ার (আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা) : ১৯৩০সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় দেশবাসীকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তেরঙ্গা পতাকা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সত্যাগ্রহ সহ ব্রিটিশ বিরোধী সমস্ত আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানান।

এই ইতিহাস জানতে 'দেশদ্রোহী বাম' ঐতিহাসিকদের লেখা পড়ার প্রয়োজন নেই।
'দেশভক্ত আরএসএস বিজেপি'র নিজস্ব ইতিহাস বইগুলোই যথেষ্ট।

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

বালাকোট ~ পুরন্দর ভাট

বিশ্বব্যাপী সংবাদ সংস্থা, এসসিয়েটেড প্রেস বলছে তাদের সাংবাদিকদের ২৬ তারিখ সকালবেলাই বালাকোটের সেই কুখ্যাত পাঁচতারা টেররিস্ট ক্যাম্প, যা ভারতীয় বায়ুসেনা বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে, সেখানে নিয়ে গেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সঙ্গে পাকিস্তানি মিডিয়ার সাংবাদিকরাও ছিল। এসসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকরা সেই পাহাড়ে কিছু উপড়ে পড়া গাছ আর দুটো ভাঙা মাটির বাড়ি ছাড়া কিছু দেখতে পায়নি। (লিংক:  https://www.apnews.com/e64d72f76c4f475493e4d41501ebab06 )

চলে আসা যাক আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রক্ষণশীল সংবাদপত্র, ওদের মালিক হলো কুখ্যাত ফক্স নিউজের মালিক - রুপার্ট মারডক। ওরা ট্রাম্প সমর্থক, খোলাখুলি ইসলাম বিদ্বেষী না হলেও কেউ ওদের ইসলামপন্থী বলে প্রশংসা করতে পারবে না। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটা সম্মানীয় পত্রিকা, ফক্স নিউজের মত নয়। তো সেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও জানাচ্ছে যে বালাকোটে যেখানে বোমা ফেলা হয়েছে সেখানে কিছুই নেই কয়েকটা গাছ ছাড়া। (লিংক: https://bit.ly/2TphqtS )

একই কথা বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং লন্ডনের টাইমস। ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ান পত্রিকাও সন্দেহ করছে যে ফাঁকা জঙ্গলে বোমা ফেলেছে বায়ুসেনা। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে যে পাকিস্তানে বহুদিন যাবৎ বড় বড় টেররিস্ট ক্যাম্প বন্ধ হয়ে গেছে, যা আছে তা হলো ছোট ছোট টেররিস্ট সেল যারা কয়েকদিন পর পর জায়গা বদলায়। বালাকোটে, এক দশক আগে জঙ্গি ঘাঁটি থেকে থাকলেও এখন কিছুই নেই। (লিংক: https://nyti.ms/2GLbe9B , https://www.thetimes.co.uk/article/india-bombs-terror-camp-inside-pakistan-9cggx6lmt )

বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট - তাবর তাবর সংবাদমাধ্যম ঘেঁটেও কোথাও পেলাম না যেখানে তারা পাঁচতারা জঙ্গিঘাঁটির কথা বিশ্বাস করেছে।

একমাত্র আলজাজিরা বালাকোটের কাছে জৈশে মোহাম্মদ পরিচালিত একটা ছোট মাদ্রাসার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। সেখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হোক না হোক, অন্তত জঙ্গি রিক্রুটমেন্ট যে হত সেইটা ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু সেই একচালা মাদ্রাসা কোনোভাবেই সুইমিং পুল শোভিত পাঁচতারা জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির বলা যাবে না এবং সেই মাদ্রাসাটি অক্ষতই আছে, বোমার আঘাত লাগেনি। জেহাদী মতবাদে দীক্ষা দেওয়ার জন্য এরকম ছোট ছোট মাদ্রাসা গোটা পাকিস্তান অকুপাইড কাশ্মীরে ভুরি ভুরি আছে, তাই এটা খুব হাই প্রোফাইল টার্গেট বিশ্বাস করাও কঠিন। (লিংক: https://bit.ly/2H5B7QO )

এতগুলো রিপোর্ট দেখেও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই ভক্তদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দেশ, জেহাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়াই করা দেশ - ইজরায়েলের সংবাদমাধ্যম ঘাঁটলাম। বায়ুসেনা যে বোমাগুলো ফেলেছে সেগুলোও তো ইজরায়েলি, ওরা নিশ্চই পাঁচতারা সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্পের কথা লিখবে। ইজরায়েলের সব থেকে বড় সংবাদপত্র হারেতজের ওয়েবসাইটে গেলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য ওরাও বলছে যে বালাকোটের সেই পাহাড়ে দু চারটে কুঁড়ে ঘর ছাড়া কিছু নেই!! (লিংক:  https://bit.ly/2Nyf06O )

এবার আমি পড়লাম বিপদে। কাকে বিশ্বাস করবো? বিশ্বের সেরা সংবাদমাধ্যমগুলোকে, যাদের সাংবাদিকরা ভুরি ভুরি পুলিতজার পুরস্কার পায় নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য, নিজেদের প্রাণ সংশয় করে যারা সংবাদ জোগাড় করতে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যায় হামেশা - সেই সব সংবাদমাধ্যমকে? নাকি ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোকে, যারা স্টুডিওয় বসে, ভিডিও গেমের ফুটেজ, পুরোনো ছবি, কুৎসিত গ্রাফিক্স সাজিয়ে বোমায় মৃতের সংখ্যা ২০০-২৫০-৩০০ বলে হাঁকাচ্ছে? আমি দেশদ্রোহী হতে চাই না তাই ভারতের সংবাদমাধ্যমকেই বিশ্বাস করলাম। বিশ্বাস করতেই হবে কারণ বিশ্বাস না করলে মেনে নিতে হয় যে ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান, দুজন পাইলটের বদলায় আমরা শুধু কিছু গাছ মেরেছি।

আজকে দেখলাম অনেকে ইমরান খানের প্রশংসায় গদগদ কারণ সে বলছে যে শান্তি চাই, বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দনকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়েছে সে। তাদের বলবো যে ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান, দুজন বায়ুসেনা পাইলট - এই সংখ্যাগুলো ভুলবেন না । ৪৬ জনের কফিনের সামনে দাঁড়ালে ইমরান খান কত শান্তির বাণী শোনাতেন তা আমার জানা আছে। প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেললে সহজেই মহান সাজা যায়। 

আমাদের এই ব্যর্থতা জন্য কিন্তু বায়ুসেনা একেবারেই দায়ী নয়। অন্ধকারে ৫ হাজার ফিট ওপর থেকে বোঝা সম্ভব নয় কোনটা জঙ্গি ঘাঁটি কোনটা নয়। বায়ুসেনাকে টার্গেট দিয়েছিল আমাদের গোয়েন্দারা, তারা সেই মত দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে বোমা ফেলে এসেছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে এই গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে অজিত দোভাল নামের এক অপদার্থ। ভুলে গেলে চলবে না যে এই অজিত দোভাল গোয়েন্দা বিভাগের সব স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দিয়ে মোদি নামক এক চূড়ান্ত অপদর্থের পায়ে তাকে সপে দিয়েছে, যাতে করে দেশের নিরাপত্তা, তার সামরিক নীতি - সবকিছু থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে বিজেপি।

মোদির মত অপদার্থ সত্যিই খুব কম হয়। সারা মিডিয়া কিনে নেওয়ার পরও নিজের অপদর্থতা লুকোতে পারছে না। ভারত পাকিস্তানের সাথে খোলাখুলি যুদ্ধে যেতে পারবে না এটা অর্ণব গোস্বামীও জানে আর ভারতের পক্ষে জেহাদী জঙ্গি দিয়ে পাকিস্তানের সাথে ছায়াযুদ্ধ করাও সম্ভব না। উপায় একটাই - কূটনৈতিক চাপ। ভারত সোজাসুজি দাবি করতে পারতো মাসুদ আজহারকে ইন্টারপোলের হাতে যতক্ষণ না তুলে দিচ্ছে পাকিস্তান ততক্ষণ কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না। সারা বিশ্বে পাকিস্তানকে শুধু মাসুদ আজহারের ইস্যুতেই একলা করে দেওয়া যেত, সমস্ত রাষ্ট্রকে দিয়েই চাপ দেওয়ানো যেত যাতে মাসুদ আজহারকে ইন্টারপোলের হাতে তুলে দেয়। সেটা করতে গেলেই ইমরান খানের বিচি শুকিয়ে যেত কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে বহু মাসুদ আজহারের ভক্ত রয়েছে। কিন্তু সেই কূটনৈতিক লড়াই মোদি সেদিনই হেরে গেছে যেদিন পাকিস্তানকে বিপুল সাহায্য ঘোষণার পরদিনই সৌদি রাজপুত্রকে এয়ারপোর্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। 

তাই আজ এই বিরাট ব্যর্থতা ও অসহায়তার মাঝে, ভারতীয় মিডিয়ার পাঁচতারা জঙ্গি ঘাঁটিতে ২০০-৩০০ জঙ্গির লাশ গোনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। অবস্থা এতটাই করুন যে সেনাবাহিনীর তিন প্রধানকে বিবৃতি দিতে হচ্ছে প্রকাশ্যে, যাতে সেনাবাহিনীর মনোবল না নষ্ট হয়ে যায়।  এই ব্যর্থ সরকারকে ছুঁড়ে না ফেললে আরো বেইজ্জত হবে দেশ।