বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

বেদান্ত ও গণহত্যা ~ পুরন্দর ভাট

তামিলনাড়ুর থুত্থুকুডিতে সতেরো  জন বিক্ষোভকারীকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে খুন করলো পুলিশ। তারা বেদান্তর স্টারলাইট তামা কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এলাকার জল বায়ুতে  ব্যাপক দূষণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একবার জরিমানা করেছিল স্টারলাইটকে। তখন থেকে বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল যে কারখানা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই দাবি দশ বছর ধরে করেও কোনো ফল হয়নি। তাই গত একশো দিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন এলাকার মানুষ, আজকে তারা মিছিল করে জেলা শাসকের অফিসের দিকে যেতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। 

এই সেই বেদান্ত, যারা ওড়িশার নিয়ামগীরীতে, খনন করার জন্য হাজার হাজার আদিবাসীকে ভিটে মাটি ছাড়া করার চেষ্টা করেছিল। আদিবাসীরা প্রতিবাদ করলে, তাদের মাওবাদী আখ্যা দিয়ে অকথ্য অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল পুলিশ। শেষ অবধি  সব অত্যাচার প্রলোভন উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হয় কোঁধ উপজাতির আদিবাসীরা, প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য হয় বেদান্ত। রিয়্যাল লাইফ "Avatar."  

এই সেই বেদান্ত, যাঁরা মাত্র ৫০৭ কোটি টাকা দিয়ে, কেন্দ্র সরকারের লাভজনক সংস্থা ব্যালকোকে কিনেছিলো বাজপেয়ী সরকারের কুখ্যাত "বিলগ্নিকরণ"-এর আমলে। তার বিরুদ্ধে লাগাতার ধর্মঘট করেছিল শ্রমিকরা, লড়াই করেছিল ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগী। লাভ হয়নি, লোকসভায় পাশ হয়ে যায় বিল। একাধিক একাউন্ট্যান্টের মতে যে কোম্পানির দাম হওয়া উচিত ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, সেই কোম্পানির দাম মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা ধার্য করে ৫১ শতাংশ শেয়ার ৫০৭ কোটি টাকায় বেদান্তকে বিক্রি করেছিল বাজপেয়ী সরকার।  

এইখানেই শেষ নয়। ২০১৪ সালে একটি স্বেচ্ছা সেবামূলক সংস্থা, দিল্লি হাইকোর্টে একটি হিসেবে পেশ করে যে কংগ্রেস এবং বিজেপি, উভয় দলই মোট ১৪ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে বিদেশী সংস্থা বেদান্তর কাছ থেকে। বিদেশ থেকে পাওয়া মোট চাঁদার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিয়েছে বেদান্ত, দুটো দলকেই। তখনকার বিদেশী মুদ্রা আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা পাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। দিল্লি হাইকোর্টে মামলা হয়। এরপর, ২০১৮-তে এসে কেন্দ্র সরকার এক আইন পাশ করে সংসদে। সেই নতুন  আইন অনুযায়ী বিদেশ থেকে পাওয়া অনুদান বৈধ হয়ে যায়, শুধু ২০১৮ থেকে নয়, ১৯৭৬ থেকে পাওয়া সমস্ত অনুদানকেই বৈধ ঘোষণা করা হয় আইন অনুযায়ী। আইন পাশ করার পর মামলাটা কোর্ট থেকে খারিজ হয়ে যায়, বৈধ হয়ে যায় বেদান্তর কাছ থেকে পাওয়া ১৪ কোটি টাকা রাজনৈতিক অনুদান।  এই সেই বেদান্ত, যার কারখানা বাঁচাতে আজ পুলিশ পনেরো হাজার মানুষের ওপর গুলি চালালো।

এই সেই বেদান্ত, যার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রাম সভার প্রাধান্যকে বাইপাস করার জন্য নতুন আইন আনছে মোদী সরকার, যার জন্য গত বছর কুনি সিকাকা জেলে গিয়েছিল।

সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

প্রহসিত ~ অনামিকা মিত্র

ভাঙছে নদীর পাড় দ্রুত। সশব্দ ভাঙনের কালে
আমরা শুনিনি কানে কিছু। মন দিই টিভি সিরিয়ালে।
এখন নির্বিকার থেকে, কোনও মতে নিজে বেঁচে থাকা
রাজপথে হেঁটে গেলে যাক, যার হাতে জয়ের পতাকা।

উলুখাগড়ারা মরে যাক। রাজা রণদামামা বাজায়।
আওয়াজে 'কথা'রা ঢেকে গেলে, 'জয়'কে দখল করা যায়।
প্রজাদের একটাই কাজ, বেঁচে থেকে রাজার ভজনা।
শুধু কেন মরে যেতে চায়, অবাধ্য বেকুব ক'জনা?

যে'হেতু জীবন একটাই, বেঁচে থাকা দারুন জরুরী
হাসি মুখে থাকার হুকুম। বিদূষক দেয় সুড়সুড়ি। 
শ্মশানে শান্তি থাকে খুব। এইখানে গ্রামে ও শহরে
প্রশ্ন তুলবে পেয়াদারা, কবি কেন রাজনীতি করে?

গণতন্ত্রের মুখোমুখি, দেশ ভরা খুদে হিটলারে।
প্রতিদিন গুণে নেওয়া হয়, ক'টা মাথা আছে কার ঘাড়ে?
মেধাবী মিডিয়া এইখানে সেজেগুজে কচলাবে লেবু
মাঝরাতে বাড়িতে আগুন। মরে যাবে ঊষা আর দেবু।

যে সময়ে মন ভালো থাকে, যে সময়ে সুখ থাকে মনে
মানুষেরা হাসে গান গায়, ভেসে যেতে পারে প্রহসনে।
রাজাদেশ ছড়ায় গুজব। আমরা গুজব খেয়ে বাঁচি।
এখন কি সুখের সময়? আমি কেন প্রহসনে আছি?

পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন ~ আর্কাদি গাইদার

সুপ্রভাত।

ভোরের চায়ের সাথে স্টোভে সেঁকা কড়কড়ে পাউরুটির পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া কালো পৃষ্ঠটা জিভে ঠেকিয়ে আস্বাদন করুন পঞ্চায়েত ভোটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিসেবে কড়কড়ে করে পোড়ানো দুটো মানবদেহ।

কয়লা হয়ে পড়ে আছে কাকদ্বীপের কাছাড়ী বাড়ি(নামখানা) এর বুধখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৩ নং বুথের কমরেড দেবু দাস ও কমরেড ঊষা দাস। রাতেরবেলা জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দুজনকে। 

কারন তারা সিপিআই(এম) কর্মী।

যেমন জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আফরাজুলকে। 
কারন সে মুসলমান।

আফরাজুলের খুনি শম্ভুলাল রেগরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তো? ঘৃনা করেছিলেন তো? করুন। কারন মমতার বাংলায় বসে খুনি মোদীর বিরুদ্ধে গলা ফাটানো যায়, প্রতিবাদী হওয়া যায়, বাহ্বাও পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক অনেক দেবু দাস, উষা দাস, হাফিজুল মোল্লা ক্ষয়ে যাচ্ছে এই মাটিতে, কিন্তু ভয়, ভয়, ভয়, ক্রেন দিয়ে টেনেও আমাদের শিরদাঁড়াগুলো সোজা করা যাচ্ছে না।  নৈশব্দের কারফিউ জারি করেছি আমরা প্রত্যেকে নিজেদের ওপর, একের পর এক দেহের ভারে চাপা পড়তে পড়তে শুনতে, দেখতে, বলতে ভুলে গেছি।

আপনারা প্রত্যেকে, হ্যা প্রত্যেকে, আসামী। কারন আপনারা প্রত্যেকে যারা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে, ফ্যাসিবাদের জুজু দেখিয়ে, নিরাপদ অবস্থান রেখে মুখে কুলুপ এটেছেন, আপনারাই এই খুনিদের সক্রিয়করণকারী।

Everyone who is silent is complicit.

বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮

শঙ্খধ্বনি ~ অরুনাচল দত্তচৌধুরী

এ্যাই শোন, ওই কবির নামটা কে রেখেছিস্ শঙ্খ?
জানিস তোরা, বুঝিস তোরা, উন্নয়েনের অঙ্ক?
আমি ফুঁ দিই পাঞ্চজন্যে, আমিই বাজাই ঢাক
চড়াম চড়াম চড়া আওয়াজ। মুখটি বুজে রাখ।

আমায় যিনি পোষেন, গলার শেকলটি যাঁর হাতে
যাঁর প্রশ্রয় যোগায় সাহস উদ্ধত উৎপাতে
তাঁর ইচ্ছেতেই উন্নয়নকে রাস্তাঘাটে ছেড়ে
একতরফা আবীরখেলা। তুই বলবার কে রে?

সুবোধ যত দামাল ছেলের তিনিই অভিভাবক
বাংলাভাষার মুখাগ্নিতে পাটকাঠি আর পাবক।
যুগ্মরোলের এই খেলাতে তাঁকেই করে মান্য
কবি এবং কবিনীদের যায় জুটে 'উপান্ন'।

বিদ্দ্বজ্জন উন্নয়নের এমন ভাগ্যদোষে
হাত বোলাচ্ছে দাড়িতে, আর কণ্ঠের বকলসে।
লেক টাউনের বিগবেন আর নিউটাউনের টুনি
উন্নয়নের এই যে ঝলক, দেখিসনি কে শুনি!

রাস্তা ঘাটের হাল দেখেছিস? কেমনটি ঝকঝকায়!
রুটিন কাজকে উন্নয়নের পোষাক দিয়ে ঠকায়।
সেই উন্নয়ন তোদের জন্য পাড়ার মোড়ে মোড়ে
শায়েস্তা খান সেজেছে আজ, দেখিসনি কি ওরে?

আজ থেকে শোন শঙ্খ ও নয়। আমিই তোদের জন্য
তাঁর হুকুমে শঙ্খ সেজে, হলাম পাঞ্চজন্য।