সাম্প্রতিককালের নন্দন-আকাদেমি স্বল্পদৈর্ঘ্যের মিছিল মনে রেখে
এই এই, এই লেড়ো, বিস্কুট দে, সঙ্গে দুটো ডবল হাফ আর একটা চারমিনার চমকা। এই, এই শালা, কোনদিকে যাচ্ছিস? বলিনি তখন, আবে মিছিল যাবে এইদিকে রে শালা, চোখের কি মাতা খেয়েছিস? এই, এই একদম মিডিয়ার সামনে বাইট দিবিনা, কখন কি বলে ফেলবি। দাদা বলে দিয়েছে, কোনোরকম চুদুরবুদুর নয় চাঁদু। হ্যাঁ যাও, যাও না, টিবির সামনে গিয়ে পোঁদ উলটে পড়ে থাকো, একটা পয়সা পাবে না শালা বলে দিচ্চি। আগাম বললুম মাইরি, মা কালীর দিব্যি, পরে আমাকে দোষ দিবিনা শালা। একদম ফালতু কিচাইন করবি না।
বিশৃঙ্খল মিছিলের দিকে চোখের চশমা সামলাতে সামলাতে মতিলাল শীল এগিয়ে আসেন। এই এই, কি হচ্ছে? ঠিক করে লাইন সামলে নাও সবাই। (ক্যামেরার দিকে ফিরে) কি বললেন? মিছিল? নানা, মিছিল মুখ্যমন্ত্রীর কথায় নয়, বাংলার অপমানের বিরুদ্ধে। পেছনের দিকে এগিয়ে যান, হ্যাঁ, বাস কন্ডাক্টররা যেমন বলেন আরকি, সেইভাবে, দেখতে পাবেন কত লোক হয়েছে।
হঠাৎ শোরগোল। টিভি চ্যানেলের রূপসীরা এসেছেন, সঙ্গে দৃপ্ত মহানায়ক। সামনে মহানায়ককে পেয়ে সবাই প্রশ্ন করতে মরিয়া, এই মিছিল সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য জানতে চায় সবাই। চোখের রোদচশমা সামলে নেন মহানায়ক, আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে বলেন, দেখুন, আমি দিদির কথায় চলে এসেছি। দিদির কথায় আসতে হবেই। কিন্তু এও তো ঠিক, আমার জন্যেই ভিড় খানিকটা হলেও বেড়েছে, আমাকে দেখতে লোক তো কম হয়নি।কত ছাত্তবন্ধুরা, মা বোনেরা আমাকে দেখতে দেখতে এসেচেন। থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ। বেফাঁস মন্তব্য দেখে দ্রুত সামলে দেন শীল, ব্রাত্য প্রমুখেরা। বিরক্ত শীল মহানায়ককে উদ্দেশ্য করে ব্রাত্যর কানে কানে বলেন রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি/ মূর্তি ভাবে আমি দেব... সেই কেস, বুঝলি? ব্রাত্য সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়েন।
টালিগঞ্জের টাকলা ওসি (পড়ুন প্রোডিউসার) ছিলেন, তিনি চাকরি যাওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক লোক এনেছেন। হন হন করে তিনি এগিয়ে যান।
টালিগঞ্জের এক সফল দুঃসাহসী পরিচালক তাঁর নতুন ছবি অভিশপ্ত গামছার কাজ অসমাপ্ত রেখে এসেছেন মিছিলে। সাংবাদিকদের ইচ্ছে ছিল নতুন ছবির নামকরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করার, কারণ টাকলা ওসি ব্যতীত তাঁর সব প্রযোজকই শোনা যাচ্ছে আজকাল গামছা বিক্রি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ মিলল না।
এছাড়া মরশুমি নাট্যশিল্পী সহ অনেককেই দেখা গেল মিছিলে। অনেকেই নিজেকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে দাবী করছিলেন ম্যাটাডোর থেকে নামতে নামতে। শেষ কবে এমন হোলসেল বুদ্ধিজীবীর ঝাঁক শহর আক্রমণ করেছে তা কেউ মনে করতে পারলেন না।
হঠাৎ আবার চঞ্চল ক্যামেরাধারী সাংবাদিককুল। এসে উপস্থিত হলুদ পাঞ্জাবি ভূষিত কবি সুবোধ অতি গোপাল বালক এবং তাঁর পেছনে পেছনে ৩৬৫ পাড়ার পাঁচু। পঞ্চানন পাঁচু সরে পড়ার চেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু তার আগেই ক্যামেরা তাকে পাকড়াও করায় তিনি সরাসরি বলেই দিলেন বিরোধীদের মতই সাংবাদিকরাও বানচোত এবং তাদের মেরে তিনি গাঁড় ভেঙ্গে দেবেন। এইসব অশ্লীলতায় ভ্রুকুঞ্চিত করে এগিয়ে এলেন কবি সুবোধ। সবার সামনে হাসি মুখে তিনি আবৃত্তি করলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'মদনের একটা চাকরি চাই'। শেষ লাইনে "একটা মানুষকে এমএ পড়তে হলে যত অক্ষর পড়তে হয় সেইসব ব্যর্থ অক্ষর মমতার গায়ে লেগে আছে" বলে তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলেন।
মিছিল শেষ। মিছিলের পরে সভা। গরিব সিনেমা টেকনিশিয়ানরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন, যাক বাবা, নিশ্চিন্ত। কিন্তু চমকের তখনও বাকি ছিল। জানা গেল মিছিলে না আসতে পারলেও নিজের কবিতা পড়তে আসবেন প্রবীণ কবি, কবিকুলতিলক। এসেও পড়লেন কবি, কেশবিরল মাথা, চোখে চশমা, মুখে অবিন্যস্ত দাড়ি, দৃষ্টিতে ভয় আর সংশয় মিশে গেছে। বন্ধু কাকপ্রসন্ন না থাকায় কবিকে বিপন্ন লাগছে। মানসিকভাবেও কি দ্বিধাগ্রস্ত? জানা গেল কবি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই হেনস্তা, এই অপমানের প্রতিবাদ করবেন, সমর্থন জ্ঞাপন করবেন তাঁর প্রতি।
মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কবি ধীরে ধীরে নিচুগলায় পড়তে শুরু করলেনঃ
পাগলী তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে বিষমদ কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধাঁ করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী তোমার সঙ্গে ডেলো বাংলো যাব দুকদম
অশান্তি চরমে তুলব, কাক-চিল বসবে না বাড়িতে
বিরোধীরা বাম্বু দেবে, তুমি ছুঁড়বে খিস্তির ভাষণ
পাগলী তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে চৌতিরিশ কাটাব জীবন
মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, কৃষি শিল্পে লক্ষ্মী লোকসান
লোকসান না পুষিয়ে তুমি রাঁধবে খালি সিঙ্গুর ব্যঞ্জন
পাগলী তোমার সঙ্গে অপকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে কালনিদ্রা কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে মাকুমশলা জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে মাও-মাংস কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে বই দেখব পাগলুদের হলে
মাঝে মাঝে মিছিলে যাব অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে শিলাদিত্য কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে কালীঘাট জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে তপসিয়া কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে কি সুদীপ্ত জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে কি মিথ্যুক কাটাব জীবন
এক হাতে উপায় করে দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
ক্লাবে চাঁদা, ধর্ম ভাতা, ধারে কাটবে সহস্র রকম
লটারি তোমার সঙ্গে চিটফান্ড জীবন কাটাব
লটারি তোমার সঙ্গে বকেয়া ডিএ কাটাব জীবন
দেখতে দেখতে পুজো আসবে, সকলে চিৎকার করবে সেল
তোমার কবিতায় খুঁজব রূপসাগরে অরূপ বিশ্বাস
পাগলী তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
বুর্জোয়া এবিপি নয়, জাগো বাংলা কাটাব জীবন
নতুন পার্টির সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, নবান্নতে হেনস্তা চরম
পাগলী তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচাকা জীবন কাটাব
পাগলী তোমার বঙ্গে বিভীষণ কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে শারুখ খান জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে আইপিএল কাটাব জীবন
পাগলী তোমার সঙ্গে রেলরোকো জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে বাংলা বনধ কাটাব জীবন
সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই চেয়ার আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ, ধান্দাতেই আচমকা মিলন
পাগলী তোমার সঙ্গে খাগড়াগড় জীবন কাটাব
পাগলী তোমার সঙ্গে মা সারদা কাটাব জীবন
কুণালকে কনুই মারব, রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
পাপোশকে লেলিয়ে দেব, ঢেউ ভাঙতে কেষ্ট দুকদম
পাগলী তোমার সঙ্গে নর্দমায় জীবন কাটাব
যাদবপুরে অন্ধকারে লাঠিখেলা কাটাব জীবন
পুনশ্চঃ মূল কবিতা থেকে 'পাগলী তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব' প্যারা বাদ পড়ায় রাহুল-তথাগত-অমিত শাহরা শোনা যাচ্ছে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
https://www.youtube.com/watch?v=pgVWpPcBXP0&feature=youtu.be