বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

অস্ট্রিয়া ভ্রমন - প্রদীপ্ত প্রতিম পাল


৯ই মে - ১৩ই মে

অস্ট্রিয়া বলতে আমি ও আমার ছেলের মনে যে দুটো ছবি চিরকাল জেগে থাকবে তা হল - ইনসব্রুক প্রাডলার স্ট্রাসে তে অল্টপ্রাডল হোটেল আর সালজবার্গ আরিবোনাস স্ট্রাসে তে হোটেল এরিনা। আর মনে থাকবে আশ মিটিয়ে সঙ্গ দেওয়া আল্পস্ কে। আছে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলা ট্রাম, অমায়িক মানুষ, সবুজ কার্পেটে মোড়া country side আর কিলো কিলো অক্সিজেন।

ওরা ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়



- ওরা যে কি হারে সংখ্যায় বাড়ছে বাবা... ভাবা যায় না ...

- কে আবার বাড়লো এই সাত সকালে? পোকা? আরশুলো?

- উফ্‌ , তোমাদের মত লোকের ইগনোরেন্সেই এই হাল হয়েছে

- আমি? আমি আবার কি করলুম রে? আমি তো কাগজ পড়ছি

- ধুত , ওই কাগজই পড়ো আর চা ই খাও। অবসর জীবন......

- এত মাথা গরম করিস না তো। বোস এখানে। আজ তোর আপিসও নেই, তাড়াও নেই

- মেজাজটাই খাট্টা হয়ে গেল বাবা...

- খাট্টা? টক বলা যায় না?

- বুঝছোনা বাবা, সব শব্দে সেই জোরটা নেই। ভাষার ছুৎমার্গ থেকে বেরোও এবারে। আর মেজাজ খারাপ করে দিওনা তো, কাগজ পড়ো। আমি চট করে জামা কাপড় ছেড়ে একটু বাজার যাই

- বোস না, আজ তো রবিবার

- পাঁঠার দোকানে লাইন প্রতি সেকেন্ডে কি হারে বাড়ছে সেটা খেয়াল আছে তোমার? তার ওপর এই উটকো পাবলিকটা। নির্ঘাত জঙ্গী টঙ্গী হবে।

- জঙ্গী? বলিস কি রে?

- প্রথমটা বুঝিনি জানো। পার্কের মাঠে দৌড়ের পর আমি একটা বেঞ্চে ১০ মিনিট বসি। পরশু দিন দেখি একটা লোক বসে। বয়স্ক, সাদা পাজামা পাঞ্জাবি, ওই পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছর বয়স হবে, বেশ কাঁচা পাকা দাড়ি গোঁফ। চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা।

- সেটাই জঙ্গী? বোমা ছিল পকেটে?

- আঃ বাবা, ডাইল্যুট করো না তো, শুনতে ইচ্ছে না থাকে আমি চলে যাচ্ছি।

- আহা, চটিস কেন? বল বল। আমি আর কিছু বলছিনা।

- আমি পাশে বসতেই লোকটা এক গাল হেসে বললো ওম-শান্তি-শান্তি-শান্তি......

- ওম শান্তি বলা জঙ্গী? বজরং দল নাকি?

- বাবা ... প্লিজ ...

- আমি মুখে কুলুপ। বলে যা।

- আমি একটু দেঁতো হেসে উঠে এলাম...

- প্রশ্ন চলবে?

- চলতে পারে

- তার পর কি হলো?

- বলছি... গতকাল গিয়ে দেখি পাবলিক আবার বসে আছে। আমি তাকাইনি ভাল করে। কিন্তু বেঞ্চে বসতেই লোকটা আবার বলল লেট দ্য পিস বি উইথ ইউ।

- জেডাই নাইট নয় তো? স্টার ওয়ারে ...... না না, ওরকম করে তাকাস না। তুইও স্টার ওয়ার ফ্যান। জানি। তোকে ৬ বছর বয়সে দেখতে নিয়ে গেছিলাম।

- তুমি একটা ইয়ে বাবা...

- আগে বাঢ়ো জওয়ান

- আজও গিয়ে দেখি শয়তানটা বসে আছে। তখনো অবশ্য বুঝিনি লোকটা ইয়ে

- ঘটনাটা কি ঘটল?

- হারামজাদা আজ এক গাল হেসে বলে কিনা আস-সালাম আলাইকুম... ভেবে দেখো, লোকটা আসলে কি সেটা দুদিন বুঝিনি, এই আমাদের এলাকায়, পাড়ার মধ্যে ঢুকে বসে আছে। ডেঞ্জারাস ...

- আমি তো ডেঞ্জার কিছু দেখলুম না রে

- দেখলে না? ব্যাটা আসলে কি বুঝলে না? পাকিস্তানের স্পাই। আই-এস ও হতে পারে। কিম্বা তালিবান। ঘরশত্রু বিভিষন তো বটেই। ব্যাটা মির্জাফরের বংশ

- কিন্তু কথা থেকে ধরতে হলে, তোর "খাট্টা" শুনে তোকেও তো ইউপি কিম্বা বিহারি ভাবা যেতে পারে

- "খাট্টা" আর "আস-সালাম আলাইকুম" এক হলো তোমার কাছে? এই তোমাদের ইগনোরেন্সেই এরা এতটা বাড় বেড়েছে।

- প্রথম দিন লোকটা কি বলেছিল?

- বলল "ওম শান্তি শান্তি শান্তি", আর গত কাল বলেছিল  লেট দ্য পিস বি উইথ ইউ।

- দুটোর মানে কি কাছাকাছি?

- প্রায় একই মানে। একটা আমাদের সংস্কৃত, অন্যটা ইংরিজি

- আর আজ যেটা বলল?

- "আস-সালাম আলাইকুম"? কে জানে? দাঙ্গা-হাঙ্গামা - খুন খারাপি - জেহাদ - গাজী টাজী কিছু একটা হবে।

- অনেক ছোটো বেলায় শোনা যদিও , তবুও মনে আছে, আস-সালাম-আলাইকুম মানে হল তোমাদের শান্তি লাভ হোক।

- মানে?

- মানে কিছুই না, ভদ্রলোক তোকে তিন দিন তিন ভাষায় একই কথা বলেছেন। তুই শেষেরটার মানে জানতিস না বলে ওনাকে জঙ্গী......... ওই দেখো...... চললি কোথায়? আরে.........।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

দেশপ্রেমিক ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য

যদি দেশপ্রেমিক হাসে
বরফজলে নুন মিশিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে
বাচাল কবি তীর্থে যাবে পর্বতে, সন্ন্যাসে
মুলতুবি হোক বিধানসভা তাণ্ডবে, উল্লাসে।।

যদি দেশপ্রেমিক পড়ে
হাজার পাতার থিসিস লিখুক গোমূত্রে, গোবরে
চাপাতি আর ত্রিশূল কোথায় চেঁচায় ঘুমের ঘোরে
ফলবে কথা বিজ্ঞজনের, অক্ষরে অক্ষরে।।

যদি দেশপ্রেমিক ছোটে
বসপা, সপা, কংগ্রেসি, আপ হারবে সবাই ভোটে
ডিমনি বুঝি এমনি হবে পাঁচশ, হাজার নোটে
ব্যাখ্যা সবই বেদেই আছে, পদ্ম হাজার ফোটে।।

যদি দেশপ্রেমিক কাঁদে
বিরোধী সব কৌটো নিয়ে হাজির প্রতিবাদে
মুর্গী, মাটন নিষেধ বলে রাজমা, চাউল রাঁধে
বলেন রাজা ঘুম আসেনা দেশের বোঝা কাঁধে।।

যদি দেশপ্রেমিক বলে
দেখবে জিও সিম দিচ্ছে নানান শপিং মলে
মাসি পিসি যাত্রা দেখে ভাসায় চোখের জলে
উন্নয়নের জোয়ার দেশে নোটবন্দীর ফলে।।

যদি দেশপ্রেমিক রাগে
সময়মত আইটি রিটার্ন ফাইল করিস আগে
বাঁদর ওঠে তেল মাখানো বাঁশের অগ্রভাগে
পুঁজির খোঁজে মন্ত্রী ছোটেন মস্কো থেকে প্রাগে।।

তুচ্ছ ভেবে দেশপ্রেমে করলে অবহেলা
টিকি , দাড়ির আসল নকল প্রণামী, চালকলা
দারিদ্র আর অর্থনীতির নানান গণ্ডগোলে
ধর্ম থাকুক, ত্রিশূল থাকুক, আগেই রাখি বলে।।

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

নির্বাচন'ই শেষ কথা নয় ~ সুশোভন পাত্র

১ কোটি ৮০ লক্ষ প্রাথমিক সদস্য। ৮৯,১০৪ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক। ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪০১টি বুথ কমিটি। ছটি মান্ডলিক কমিটির মাধ্যমে সৰ্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয়। ৪০৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৮,১৩৮ কিলোমিটার 'পরিবর্তন যাত্রা'। ৭৭টি মহিলা সম্মেলন। ৮৮টি যুব সম্মেলন। ১৪টি প্রাদেশিক বণিক সম্মেলন। ২০০টি অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় ও দলিত সম্মেলন। ৭৫টি জেলাতে ৩,৫৬৪ কৃষক সভা। শেষ ৬ মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ৩৪টি 'কমল মেলা।' ১,৬৪৯টি মোটর সাইকেল মিছিল। ২,৮০,২৬৭টি গ্রামসভা। ৮,৫৭৪টি পথ নাটিকা। অ্যাড এজেন্সির পরামর্শে রাজ্যের প্রথম সারির সমস্ত প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন। ভিডিও ভ্যানে সব বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ৫৮ হাজার শো। ৭৫টি ভার্চুয়াল 'ভিডিও রথে'র মাধ্যমে শহরে শহরে 'মন কি বাত'। ৫,০৩১ জনের সোশ্যাল মিডিয়া টিম। চারটি ফেসবুক এবং একটি টুইটার হ্যান্ডল। ১০,৩৪৪ হোয়াটস অ্যাপ গ্ৰুপ। ক্যাবিনেট সহ প্রধানমন্ত্রীর হাই প্রোফাইল উপস্থিতি। ব্যক্তিগত অনুদান হিসেবে ১৬,৯১,৭২,৩১৫ টাকা অর্থ সংগ্রহ। 
এই সবটা মিলিয়ে একটা 'ইলেকশন ক্যাম্পেন'। বি.জে.পি'র 'ইলেকশন ক্যাম্পেন'। এই সবটা মিলিয়ে একটা নির্বাচনী রণনীতি। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনী রণনীতি।    
রাজপুত অধ্যুষিত হিরণওয়াড়া গ্রামে এস.পি'র প্রাপ্ত ভোট ৭, বি.এস.পি'র ১৪, আর বি.জে.পি'র ৭৯০। ব্রাহ্মণ ভূস্বামী সংখ্যাগুরু এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিত উপস্থিতির ভাণ্ডডা গ্রামে এস.পি'র প্রাপ্ত ভোট ৯, বি.এস.পি'র ১৫৬, আর বি.জে.পি'র ৫৭০। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জালালাবাদ বি.জে.পি'র প্রাপ্ত ভোট ২৩, এস.পি'র ২৩১, বি.এস.পি'র ৪৫৩। ৩৫% যাদব জনসংখ্যার মেনপুরী বিধানসভায় আবার বিপুল ভোটে বিজিত এস.পি। গ্রামের পর গ্রাম, বিধানসভা পর বিধানসভা এই  একই বাঁধা ধরা 'প্যাটার্নের' প্রতিলিপি। সাধারণ মানুষের নির্বাচনী কড়চা'তে উঠে আসেনি ইশতেহারের অনুচ্ছেদ, পাত্তা পায়নি অর্থনীতির যুক্তি-তক্ক, ব্যালট বক্সে জমা পড়েনি ইস্যু ভিত্তিক মেরুকরণ। বরং ই.ভি.এমে কোথাও যুদ্ধ হয়েছে হিন্দু-মুসলিম'দের। কোথাও ব্রাহ্মণ-দলিত'দের। কোথাও আবার জাঠ-যাদব'দের ¹ ² । 
এই সবটা মিলিয়ে একটা ব্লু-প্রিন্ট। বি.জে.পি'র ব্লু-প্রিন্ট। এই সবটা মিলিয়ে একটা 'প্রোপাগান্ডা'। বি.জে.পি'র 'প্রোপাগান্ডা'। যার ক্যাসকেডিং এফেক্ট একটা নির্বাচনী জয়। বি.জে.পি'র উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী জয়।  
ইরম শর্মিলা'র রাজনৈতিক দল 'প্রজা'র আহ্বায়ক এবং নির্বাচনী পদপ্রার্থী এরেন্দ্র লেইচম্ম। হাভার্ডের অর্থনীতির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আর ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের বিলাসী চাকরি; দুটোই ছেড়ে মাটির টানে ফিরেছিলেন মনিপুরের নির্বাচনী রাজনীতিতে। প্রচারের সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন, সবার কথা শুনেছেন, নিজের কথা বলেছেন। সবশেষে  ১১ তারিখ প্রণামী বাক্সে দক্ষিণা জুটেছে ৫৭৩টি। প্রজা'র অন্য মহিলা পদপ্রার্থী মাইতেই মুসলিম নাজিমা বিবি। নিছকই প্রাণোচ্ছল সামাজিক কর্মী। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক হাজার পারিবারিক নির্যাতনের শিকার মহিলার মামলা লড়ছেন, মনিপুরের দুঃস্থ নারী'দের জন্য গড়ে তুলছেন আস্ত একটা 'হোম'। অনলস নির্বাচনী প্রচারও করেছিলেন এই নাজিমা বিবি। সর্বসাকুল্যে ভোট জুটেছে ৩৩টি    ³ । 
২রা নভেম্বর, ২০০০ ম্যালম, মনিপুর। ভারতীয় সেনা নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করল ১০ জন যুবক কে। পরের দিনই  প্রতিবাদী অনশন শুরু করেছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তরুণী -ইরম শর্মিলা। আত্মত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক সেদিনের ইরম শর্মিলা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন আফস্পা'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। মনিপুরের মানুষের চোখের মনি। বিশ্বের 'লৌহ মানবী' ⁴ । টানা ১৬ বছর পর অনশন ভেঙ্গে যেদিন ইরম শর্মিলা বলেছিলেন "আমিও বেঁচে থাকতে চাই। বিয়ে করতে চাই। ভালবাসতে চাই। কিন্তু সবার আগে নির্বাচনী রাজনীতি'তে এসে আফস্পা'র মত কালা আইনের নিরসন করতে চাই" -সেদিনই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মনিপুর। নাগা, কুকিস, পাইতে, দেস উপজাতি অধ্যুষিত প্রবল চড়াইয়ের পার্বত্য এলাকা হোক বা মাইতেই হিন্দু সংখ্যাগুরু আপাত সমতল -গেঁয়ো যোগীকে ভিখ দেয়নি প্রবল পুরুষতান্ত্রিক মনিপুর ⁵। বি.জে.পি-কংগ্রেসের শক্তিশালী 'মেথডিক্যাল প্রোপাগান্ডার' কাছে ইরম শর্মিলা এবং তাঁর নির্বাচনী রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা কে বাণের জলে ভাসিয়ে দিয়েছে মনিপুর। উত্তরপ্রদেশের পৌরাণিক হস্তিনাপুরে যেখানে বহুজন মুক্তি পার্টির 'দুর্যোধন'ও পেয়েছে ৮৫৩ ভোট ⁶, সেখানে ইরম ইরম শর্মিলা কে গুণে গুণে ৯০টা ভোটে দিয়েছে মনিপুর। 
আসলে এই নির্বাচনী রাজনীতি তে, টানা ১৬ বছর নাকে নল গুঁজে অনশন করে, আফস্পা'র মত কালা আইনের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে, ইরম শর্মিলা'ও হারতে পারে। আবার এই নির্বাচনী রাজনীতি তেই, ৯'র দশকে মেলোড্রামাটিক বাংলা সিনেমায় চোখের জলে ঘর ভাসিয়ে দেওয়া সন্ধ্যা রায় ড্যাং ড্যাং করে লোকসভায় অন্দরে পৌঁছে  গিয়ে নিশ্চিন্তে হাই তুলতে পারে। আর পারে বলেই যে দেশে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ ক্ষুধার্ত বাস করে ⁷, যে দেশে ২৭ কোটি মানুষ এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে দরিদ্র সীমার নিচে বাঁচে ⁸, যে দেশে প্রতি বছর ১৪,০০০  কৃষক ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করে ⁹, যে দেশের ৩০% শিশু অপুষ্টিতে ভোগে ¹⁰, যে দেশে ৬০.৪ কোটির ঘরে শৌচাগার নেই ¹¹, যে দেশে ৭.৫ কোটির ঘরে পরিস্রুত পানীয় জলই নেই ¹², সেই দেশেরই সাধারণ মানুষই আবার বৃহত্তম গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করে বেছে নেয় ৮২% কোটিপতি সাংসদ ভর্তি এক সংসদ কক্ষ। সেই দেশেরই সাধারণ মানুষই নিজের এবং দেশের নিরাপত্তার সমস্ত দায়িত্ব এমন সংসদ কক্ষের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন যে সংসদ কক্ষের শতকরা ৩৪%'র বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, ধর্ষণ, কিডন্যাপিং কিম্বা দাঙ্গার মত ফৌজদারি মামলা ¹³ । 
আসলে নির্বাচনী রাজনীতি কোন ফ্লুক নয়, আবেগ কিম্বা আত্মত্যাগের প্রদর্শনী নয়। নির্বাচনী রাজনীতি আদর্শের ভারমাপক দাঁড়িপাল্লা কিম্বা ক্লাসিক্যাল 'শ্রেণী সংগ্রামের' আয়নায়ও নয়। বরং নির্বাচনী রাজনীতি একটা জটিল গাণিতিক বিজ্ঞান। নির্বাচনী রাজনীতি একটা কার্যকরী কৌশলের বাস্তবায়ন। নির্বাচনী রাজনীতি একটি সম্পূর্ণ সাংগঠনিক 'মেশিনারি'। নির্বাচনী রাজনীতি একটা 'প্রোপাগান্ডা'। শুধু ইরম শর্মিলার আত্মত্যাগ কিম্বা লেনিন-স্তালিন'র 'কি করিতে হইবে' দিয়ে এই নির্বাচনী রাজনীতি তে জয় নিশ্চিত হয় না। লোহা দিয়ে লোহা কাটতে ইউ মাস্ট হ্যাভে 'কাউন্টার প্রোপাগান্ডা'। ইউ মাস্ট হ্যাভে বেটার প্রোপাগান্ডা। এটাই নির্বাচনী রাজনীতি। টেক ইট, অর লিভ ইট।














শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

না মানে না ~ সঞ্জয় ঘোষ

এখন মধ্য দুপুর
পথের তিনটি কুকুর
দেখছে, হাসছে, চাটছে
ভাদ্র সোহাগে ভাসছে।

তোমার নেইতো বিচার
বোশেখ, ভাদ্র, আষাঢ়
সমান লোলুপ তুমি
সাজাও বধ্যভূমি।

গলিতে, গুদামে, ঝোপড়ায়
দুপুরে, রাত্রে, সন্ধ্যায়
নয়, নব্বই, উনিশ
সবই ভোগের জিনিষ!

কুরে কুরে খাও তার
মাংস, মজ্জা, হাড়
খোবলানো চোখদুটি
সাধ স্বপ্নের ছুটি!

আমারও তো কিছু ছিল
রঙিন খেলনাগুলো,
লাল ফিতে, ঘাস ভিজে
আকাশ সাজাবো নিজে!

আকাশে একটি মুখ
নিবিড় গোপন সুখ,
পুরুষ মানে তো প্রেমও!
আজ ভুলে গেছি সেও।

ভুলিনি, করিনি ক্ষমা
আমি নির্ভয়া, মনোরমা
তোমাকে বিঁধবো শেষে
অভিসম্পাতে, বিষে!
 
 
 
 
শিলাটা সরাও, লাগছে
ভীষণ বমি পাচ্ছে!
আমি তো বলছি 'না'
শুনতে পাচ্ছো না?

বাতাসে বাজছে 'না'
কেউ শুনতে পাচ্ছো না?

#NoMeansNO!

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

বিরক্তিকর ~ নীলাঞ্জন গুহ মাজুমদার


- কি বিরক্তিকর দেখেছেন!

- কোন ব্যাপারটা বলছেন বলুন তো?
- আরে, এই যে আপনার চোখের সামনেই তো দেখছেন!
- চোখের সামনে তো দেখছি "হিংসা কোরো না, তোমারও হবে" লেখা আছে কালো ধোঁয়া ছাড়া ট্রাকটার পেছনে!
- আরে মোলো যা! আমি বলছি, ওই ওদের কথা! ওই যে দাড়িগুলো ঝুলছে, অদ্ভুতভাবে!
- ও আচ্ছা! হ্যাঁ, এই খাসিগুলো আসলে এখানেই ঘাস খেতে ছেড়ে রাখে। কিন্তু খাসির মাংস তো অত্যন্ত উপাদেয় জিনিস মশায়! বিরক্তিকর কেন হবে?!
- আপনি কি ইচ্ছে করে আমাকে হ্যাটা করছেন?!
- পাগল হয়েছেন! সেরকম কোনো ইচ্ছেই আমার নেই!
- তাহলে বুঝেও বুঝছেন না কেন?
- মাইরি বলছি, যেটুকু বললাম, তাছাড়া আর কিছু বুঝতে পারছি না বলেই বুঝছি না! আপনি বরং একটু খোলসা করে বললে সুবিধে হয়, নাহলে এখুনি আমার মাথা ধরে যাবার সম্ভাবনা!
- সামনের ওই মিনি ট্রাকগুলো দেখুন।
- দেখলাম।
- কি দেখলেন?
- বেশ কিছু লোক গাদাগাদি করে বসে আছে, আর লাফাতে লাফাতে গাড়িটা যাচ্ছে। ওইটেই বিরক্তিকর।
- কেন? আপনি তো ওই গাড়িতে বসে লাফাচ্ছেন না!
- আচ্ছা মুশকিল হল! আমি সেকথা বলছি না!
- তাহলে কি বলছেন?
- ওই ছাগলদাড়ি, লুঙ্গির উপর লম্বা ফতুয়া, মাথায় একই সাদা টুপি - জাস্ট অসহ্য!
- আপনার থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে নাকি কেনার জন্যে?!
- আপনি মাইরি বেকার ঘোরাচ্ছেন ব্যাপারটা! আমার ওদেরকেই সহ্য হয় না!
- সেটা ঠিক! আমাদের থেকে পশুপাখিরা অনেক ভালো, এটা আমিও মানি।
- আপনি ওদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলেন?
- না, মানে, আমরা সবাই হোমো স্যাপিয়েন্স বলেই জানতাম!!
- আমি সেটা বলছি না আপনি ভালো করেই জানেন! ওদের এই অশিক্ষিত আচার-বিচার একেবারেই সহ্য হয় না! যেখানে সেখানে ভীড় করবে, রাস্তাঘাটে চলা যাবে না, নোংরা করবে! দেখুন না, কিভাবে অসভ্যের মত তাকিয়ে আছে এদিকে!
- এইটাই আপনার বিরক্তির কারণ?
- কেন, ভুল কিছু বললাম?
- আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করি?
- করুন...
- দুর্গাপুজোয় ভীড় হয় রাস্তায়। গোটা কলকাতা আর শহরতলি অচল হয়ে যায়। আপনার বিরক্তি লাগে তো?
- কিসের সঙ্গে তুলনা করছেন!! আশ্চর্য!
- শিবের মাথায় জল ঢালতে একগুচ্ছ লোক মাইলের পর মাইল রাস্তাঘাট নরক গুলজার করতে করতে তারকেশ্বর যায়। আশা করি তখনও আপনার বিরক্তি লাগে?
- আপনি বুঝছেনই না ব্যাপারটা।
- প্রশ্নের উত্তরটা দেবেন কি?
- এই প্রশ্নের কোনো উত্তর হয় নাকি!! অদ্ভুত সব মিনিংলেস প্রশ্ন আপনার! আপনি আসলে কোনদিকে বলুন তো?
...
...
- আসুন, আপনার নামার সময় হয়েছে...
- চলুন, আবার কাল দেখা হবে।
- অবশ্যই! যদি আপনার বিরক্তি না লাগে।
- কি যে বলেন! আপনার সঙ্গে বিরক্তি কেন লাগবে?!
- কাল আমি ছাগলদাড়ি, মাথায় টুপি, আর লুঙ্গির উপর ফতুয়া পরে আসব। তাই বললাম...