অবভিয়াস নিমন্ত্রনে,অবভিয়াস ভাবেই গৃহকর্তা তখনো অনুপস্থিত । সেই সুযোগেই স্বপনদার নাম জানা । যেখানে কাঁটাতার তার অন্য পাড়ে-ই আমার স্বপ্নের ঝান্ডা উড়ছিল । স্বপনদা জানালেন, ওটাই নাকি ভবিষ্যতের ঠিকানা,ওনাদের পার্টি অফিস,এবং ওদিকেই খালপাড়,ওদের বস্তি । জানালেন , বছরের পর বছর ধরে ঐ খালপাড় উচ্চবিত্তের উলটো দিকের কোঠা বাড়িকে , সকালে ঝি, সারাদিনে রিক্সা আর রাতে মেয়েমানুষ জুগিয়েছে । ওনারা শুনেছেন, কোঠা বাড়ির মেয়েরা আজকাল বস্তি ফেসিং ফ্ল্যাট পছন্দ করেন না, কোঠা বাড়ির বাবুরা আজকাল ছোট দোকান, প্যাচপ্যাচে কাদায় বাজার করা পছন্দ করেন না । মল-মুত্র কিসব অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । তাই উন্নয়ন প্রয়োজন,অতএব রাস্তা বন্ধ।
গৃহকর্তার মিসড্ কল ,ততক্ষনে ওনার ফেরার খবর জানান দিয়েছে । অতএব ব্যাস্ত আমি,মধ্যবিত্ত আমি, বিরক্ত হয়েই জানতে চাইলাম " এতো কিছুর পর-ও ঐ ওদিকে, তোমাদের দিকে লাল ঝাণ্ডা ওরে কেন ? "
একগাল হেসে, বিড়িটা ধরিয়ে উত্তর দিলেন " ওইটুকুই যা আছে । তোমাদের শহর,আমার-ও--- জানিয়েছিল যে ঝান্ডা । যে ঝান্ডা কাঁধে 'আমি মানুষ' জেনেছিল আমার বাপ,সেই ঝান্ডাই ওই বন্ধ ভাঙ্গবে । " রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে, ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতের এক ভুবনজয়ী হাসি নিয়ে স্বপনদা বলে গেছিল " যে মিছিলে তোমরা সবার আগে হাঁটো, সেই মিছিলের একদম শেষে আমরা যারা... যাদের দেখাই যায় না, মিছিলটা কিন্তু তাদের । মিছিলটা কিন্তু খালপাড়ের । কোঠাবাড়ির যারা,তারা বিভীষণের জাত। ওরা লাল ঝান্ডার নয় । ওরা ঠিক কেটে পড়বে । শেষের সেই মিছিল,আমাদের,খালপাড়ের,রিক্সার, মজুরের,বেশ্যার, মানুষের মতো মানুষের। লাল ঝান্ডা আমাদের ঝাণ্ডা । আমরা আছি,ঝান্ডা আছে । " ..
আর দেখা হয়নি ।