সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আরজিকর কাণ্ড ~ ডাঃ বিষাণ বসু

আরজিকর কাণ্ডের পনের দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর, আমার যেটুকু ব্যক্তিগত উপলব্ধি, তাতে মনে হয়, সেই রাত্রে ঠিক কীভাবে কী ঘটেছিল, তা কখনোই আর পুরোপুরি স্পষ্টভাবে প্রকাশ্যে আসবে না। শুরুর দিনকয়েক কলকাতা পুলিশ যেভাবে সাফল্যের সঙ্গে 'তদন্ত' করেছে, তাতে এখন শার্লক হোমস এরকুল পয়রো ব্যোমকেশ বক্সী একযোগে নামলেও পরিপূর্ণ সত্য উদঘাটনের সম্ভাবনা কম। জড়িত কেউ স্বীকারোক্তি জাতীয় কিছু দিলে একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু আপাতত তেমন সম্ভাবনা তো কিছু দেখছি না।
অতএব, হয়ত 'প্রমাণ' হয়ে যাবে, যে, সঞ্জয়-ই এক এবং একক অপরাধী। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে, ঘটনাস্থলে পাওয়া স্পেসিমেন-এর সঙ্গে তার ডিএনএ-ও নাকি মিলেছে, অতএব…
মদ খেয়ে চুর একজনের পক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়েকে মারধর করে খুন ও ধর্ষণ এতসব করা সম্ভব কিনা, এসব প্রশ্নও, হয়ত, প্রশ্ন-ই রয়ে যাবে। আমাদের মেনে নিতে হবে, ধর্ষণ যদি সঞ্জয় করে থাকে (মেয়েটির জীবিত অবস্থায় বা মৃতদেহের উপর), তাহলে খুন-ও সে-ই করেছে। হয়ত সঞ্জয় সাজা পাবে, অথবা যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে গুরু দণ্ড কিছু পাবে না। এই সব কিছুর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। এদেশে যেমন হয় আর কি!
এখানে পুলিশ অপরাধী ধরার চাইতে অপরাধের প্রমাণ লোপাট করার কাজে বেশি দক্ষ।
এদেশে সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা, তাদেরও অপরাধী ধরার রেকর্ড তেমন ঈর্ষণীয় কিছু নয়।
এদেশে মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত আগ বাড়িয়ে শুনানি করতে ডেকে আদ্ধেক শুনে পনের দিন বাদে বাকিটা শুনবেন বলেন।
এমতাবস্থায় আমজনতা যায় কোথায়? খড়কুটো ধরে বাঁচার মতো, মোবাইল ফোনে ভেসে আসা অজস্র খবরের মধ্যে আশার আলো খোঁজেন। যে খবরের অনেকটাই কল্পিত। গুজব। কিন্তু আশা করতে যে বড় ভালো লাগে! বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, অমুকের দিকে সিবিআই এবার নজর দিচ্ছে... তমুকের সঙ্গে অমুকের যোগসাজশ প্রকাশ হয়ে যাবার মুখে...
আশায় আশায়, অনেকেই, খুব খুউব রাগ নিয়ে রাস্তায় নামেন। হাতে হাত রেখে লড়তে চান। প্রশ্ন করেন - এবারেও, এই এত বড় ঘটনার পরেও, কেউ ধরা পড়বে না? অনেকবার আশাহত হতে হলেও, আবারও আশায় থাকেন…
কোনও কোনও সাংবাদিক, দেখলাম, হয়ত শ্লেষের সুরেই তাঁদের প্রশ্ন করছেন - 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' বলে তো মিছিল করছেন, তা জাস্টিস-টা কার কাছে চাইছেন? শুনতে যতোই বিরক্তিকর লাগুক, প্রশ্নটা কিন্তু ভ্যালিড। এমতাবস্থায়, এই আশ্চর্য অবস্থায়, ন্যায় বলতে কী বুঝব? আর সেই ন্যায় কার কাছে চাইব??
দেখুন, এখনও অব্দি 'তিলোত্তমা'-র মৃত্যুরহস্যের সমাধান না হলেও একটা বড় রহস্য কিন্তু প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মানে, ওখানে আর অতখানি রহস্য নেই। এবং 'তিলোত্তমা'-র ধর্ষক-খুনীর পরিচয় ততখানি স্পষ্ট না হলেও, এই রহস্যের কুশীলবদের নাম যথেষ্ট স্পষ্ট। সীমাহীন দুর্নীতি ও সেই দুর্নীতির কাণ্ডারীর নাম। নয়ই আগস্ট রাত্তিরের ঘটনা একা সঞ্জয়ের পক্ষে সম্ভব ছিল কিনা, সে নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকলেও এই দুর্নীতি যে একা সন্দীপ ঘোষের পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, এবিষয়ে সকলেই নিঃসন্দেহ। খুন-ধর্ষণের দায় একা সঞ্জয়ের কাঁধে ফেলা সম্ভব হলেও হতে পারে - কিন্তু আরজিকর-এর অরাজকতার দায় একা সন্দীপের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা সফল হওয়া মুশকিল।
এবং এই দুর্নীতি - যা আরজিকর মেডিকেল কলেজে উৎকর্ষের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করেছিল অবশ্যই - কিন্তু তা কেবলমাত্র এই একটি মেডিকেল কলেজে সীমাবদ্ধ ছিল, এমন কখনোই নয়। কথাটা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-অধ্যাপকদের সকলেই জানেন - জানতেন অনেকদিন ধরেই - তবে এখন হয়ত কেউ কেউ সেটা মুখে স্বীকার করতে পারবেন। আর ডাক্তারি-জগতের বাইরের লোকজন হয়ত কথাটা - দুর্নীতির এই লেভেলটা - সে বিষয়ে সদ্য জানলেন। মানে, বর্তমান আমলে দুর্নীতি যে কমবেশি সব জায়গায়ই চলে (আর স্বাস্থ্য-দফতর, প্রায় ঐতিহাসিকভাবে, ঘুঘুর বাসা), এটা সবাই জানেন - কিন্তু চিকিৎসা-শিক্ষার দুনিয়ায় তা যে এই স্তরে পৌঁছেছে, সেটা এখন জানতে পারলেন।
অনেকে হয়ত বলবেন, লাগামছাড়া এই দুর্নীতির শুরু ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই। হতেও পারে। হতেই পারে। কিন্তু, বর্তমান শাসকদলের একান্ত বিরোধী হয়েও বলি, আমার তেমনটা মনে হয় না। মানে, দুর্নীতি অবশ্যই ছিল - কিন্তু ব্যাপারটা এই স্তরে পৌঁছেছে গত কয়েক বছরে। মোটামুটি বলতে পারি, বিগত মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনটি পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সে নির্বাচনে ঢালাও দুর্নীতি ইত্যাদি ঘটেছিল - সে আর কোন নির্বাচনে ঘটে না!! - কিন্তু সেই নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় শাসকদলের এমন একটি গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো, যাঁরা 'চিকিৎসক' হিসেবে বিবেচ্য হওয়ার যোগ্য কিনা, সে কথা তো ছেড়েই দিন, যাঁরা মানুষ হিসেবেই 'ভিন্ন' স্তরের। চিকিৎসার নৈতিকতার দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল কাউন্সিলের হর্তাকর্তা হয়ে বসলেন এমন নীতিবোধহীন কিছু 'চিকিৎসক', সেই দুর্ভাগ্যজনক সত্যির বাইরে আরও বড় বিপদ - এঁদের ক্ষমতা স্রেফ মেডিকেল কাউন্সিলে সীমাবদ্ধ রইল না। মেডিকেল কলেজে কলেজে অধ্যক্ষ থেকে ডিন, সর্বত্র নিযুক্ত হতে থাকলেন এঁদের পছন্দের লোক - সবাই ধামাধরা এমন বলব না, কিন্তু অধিকাংশই তেমনই - স্বাস্থ্যশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিতদের ক্ষেত্রেও তা-ই। দেখুন, আরজিকর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় মেডিকেল কাউন্সিলের এক কর্ণধার চটজলদি সেখানে হাজির হন, কাউন্সিলের আরও কিছু তরুণ সদস্যদের নিয়ে। মেয়েটির বাবা-মাকে আত্মহত্যার খবর জানানো হলেও, সেই একই সময়ে (বা তার আগেই) তিনি জেনেছিলেন ধর্ষণ ও খুনের খবর - একথা তিনি নিজেই মিডিয়াকে জানান। পুলিশের তদন্তের সময়কালে (নাকি আগেই) তিনি কেন এসেছিলেন? তিনি কেন ধর্ষণ খুনের ঘটনা বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে মিটিংয়ে বসলেন? যে সন্দীপ ঘোষ বিষয়ে এত কথাবার্তা উঠছে, কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাসকয়েক আগেই তাঁকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়েছেন। কাউন্সিলের তরুণ তুর্কীদের প্রায়শই দেখা যেত আরজিকর-এ - এমনকি মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনের 'বিজয়োৎসব' প্রথম পালিত হয় ওই আরজিকর-এই। মেডিকেল কাউন্সিলের হর্তাকর্তারা স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে নাক গলাচ্ছেন, এমন এর আগে ঘটেনি।
মেডিকেল ছাত্র-রাজনীতিতেও একটা বড় বদল এসেছে এঁদের কল্যাণে। স্টুডেন্টস ইউনিয়ন নির্বাচন তুলে দেওয়ার সুবাদে ছাত্র-রাজনীতি বলতে মূলত দাদাগিরি - তোলাবাজি ইত্যাদি - ও পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানো কমানো। শাসক-ঘনিষ্ঠ ছাত্র-রাজনীতি ও শাসক-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক-রাজনীতি যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও দুইয়ের মধ্যে একটা দূরত্ব ছিল - দূরত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক, এবং বাঞ্ছনীয় - বর্তমানে সেটি মুছে ফেলা গেছে। ছাত্র-নেতারা অধ্যাপকদের 'চমকায়' - অধ্যাপকরাও তাদের তোয়াজ করে চলেন, কেননা বদলি থেকে পদোন্নতি, সবই তরুণ তুর্কীদের হাতে। এবং স্বাস্থ্য-দফতরের শীর্ষ আমলা শাসকদলের ছাত্র-সংগঠনের অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন - গদগদ হাসি মুখে পুষ্পস্তবক হাতে ছবি তোলেন - অতএব, আনাড়িরাও চট করে বুঝে যান, ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ঠিক কোনখানে।
তো পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা, এই মুহূর্তে, শাসকদলের যে গোষ্ঠীর দ্বারা যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে - অনভিজ্ঞ আনাড়ি দুর্নীতিগ্রস্ত মূল্যবোধহীন কিছু জুনিয়র ডাক্তারের দ্বারা, মূলত - সঙ্গে কিছু ঘোড়েল ও ধান্দাবাজ সিনিয়র তো আছেনই, যেমন থাকেন - তার খোলনলচে না বদলালে কিছুই কাজের কাজ হবে না।
জাস্টিস চাই, বলতে - অন্তত এটুকু হোক।
সরকারি কর্মী হিসেবে এবং রাজ্যের একজন নাগরিক হিসেবে, আমার জাস্টিস-এর দাবি আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে এবং সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক হিসেবে দাবিটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছেও।
সিবিআই তদন্ত করতেই পারে - মহামান্য আদালত বিভিন্ন আকর্ষণীয় 'অবজারভেশন'-এর পর পরবর্তী শুনানির তারিখ শোনাতেই পারেন - কিন্তু নিজের দলের সীমিত কয়েকজন গোষ্ঠীবদ্ধ মাফিয়া সিন্ডিকেট গোছের কিছু চালিয়ে গেলে তা শুধরানোর দায় সেই দলের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের। এখানে 'তদন্ত চলছে' বা 'বিষয়টি বিচারাধীন' বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। সব জানার পরেও - বিশেষত সব প্রকাশ্যে আসার পরেও - না শুধরাতে চাইলে ধরে নিতে হবে, এই অনাচার চলে এসেছে (এবং চলতে দেওয়া হবে) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে।
তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুলিশমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ জাতীয় কিছু দাবি আমার এখুনি নেই - গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারকে সরাতে গেলে ভোটের মাধ্যমেই সরাতে হবে, পদত্যাগের মাধ্যমে নয় - কিন্তু, জাস্টিস চাই বলতে আমি চাই রাজ্য স্বাস্থ্য-প্রশাসনের খোলনলচে বদল। প্রকাশ্যে যে মুখগুলো রয়েছে - চিকিৎসক-প্রশাসক থেকে শুরু করে আমলা অব্দি সকলেই - এবং আড়াল থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছে, তার প্রতিটি স্তরে এখুনি বদল জরুরি। এবং যে চিকিৎসার নৈতিকতার দেখভালের দায়িত্ব যে মেডিকেল কাউন্সিলের, সেই স্টেট মেডিকেল কাউন্সিলের শীর্ষ সদস্যদের নাম যখন দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়, তখন সেই কাউন্সিলকে যে বরখাস্ত করা একান্ত জরুরি, সে তো বলা-ই বাহুল্য।
এটুকু-তে সর্বজনস্বীকৃত জাস্টিস হবে কিনা বলা মুশকিল, কিন্তু অন্তত এটুকুও না হলে যে স্বাস্থ্য-প্রশাসন ও সামগ্রিকভাবে প্রশাসনের উপর মানুষের আস্থা ফিরবে না, সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
এবং, আমার মতোই, রাস্তায় যাঁরা আছেন, বিশ্বাস করুন, এই পোস্ট হতাশার পোস্ট নয়। অন্তত এই দাবিটুকু যদি আদায় হয়, তা, অন্তত স্বাস্থ্যব্যবস্থার পক্ষে, মস্ত বড় বদল। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং আগামী প্রজন্মের ডাক্তারি শিক্ষা - এই দুইয়ের পক্ষেই, এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাহিদা এখুনি মনে পড়ছে না।

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

এক্সকিউজ মি, প্লিজ ~ শাশ্বত চক্রবর্তী

'এক্সকিউজ মি, প্লিজ'। ভিড়ের মধ্যে থেকে ভেসে  এলো বাজখাঁই আওয়াজটা, একদম বিশুদ্ধ ব্রিটিশ অ্যাকসেন্ট।  জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিল বেড়িয়েছিলো অমৃতসরে।  সেই মিছিলেই কালা আদমিদের ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো এক ধলা, হাতে তার মোমবাতি।  আবার গর্জে উঠলো তার বাজখাঁই কণ্ঠ: " উই ওয়ান্ট জাস্টিস"। কাম সারসে, এ যে স্বয়ং জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার!

- মানে? আপনিই তো গুলি চালালেন? আপনার আবার কিসের জাস্টিস চাই?

- আমি চক্রান্তের শিকার। আমরা ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করেছিলাম। ডিপ্রেশনে ভোগা দেশিগুলো সব কুয়োতে ঝাঁপ দিয়ে সুইসাইড করল। প্রমাণ আছে আমার কাছে,মৃতদের পকেট থেকে প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেছে।

 

হতভম্ব জনতাকে আরো অবাক করে দিয়ে মিছিলের আরেকদিকে তখন আবির্ভুত হয়েছেন আরেক সাদা চামড়া। ওরে বাবা, এযে পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও'ডায়ার!

- আপনি তো সেদিনই বললেন ডায়ার যা করেছে ঠিক করেছ। আপনি আবার এখানে?

- উই ওয়ান্ট জাস্টিস।কিছুলোক পাঞ্জাবকে বদনাম করতে চাইছে। এই প্রতিবাদ মিছিলেও সশস্ত্র হামলাকারী মিশে আছে, হয়তো তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে চায়। তাছাড়া এটাও জানানো দরকার আমাদের সেক্যুলার গভর্নমেন্ট কিন্তু এখানেও সেক্যুলার কাজই করেছ।

- মানে ?

- মানে হিন্দু-শিখ নির্বিশেষে সেদিন সবাইকে মারা হয়েছ।  ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে রেয়াত করা হয়নি।

 

ততক্ষনে মিছিলে হাজির বুদ্ধিজীবী শিরোমনি প্রখ্যাত সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং।

- আপনি না সাম্রাজ্যবাদের প্রবল সমর্থক? আপনার মতে তো আবার ডায়ার নাকি ভারতের রক্ষাকর্তা! তা এদিকে কি পথ ভুল করে?

- উই ওয়ান্ট জাস্টিস।  এখন রাস্তায় না নামলে আমার বইয়ের বিক্রি কমে যাবে।  বিবিসি রেডিওতে 'ঘন্টাখানেক সঙ্গে ছিঁড়ুন' অনুষ্ঠানেও ডাক পাবো না আর। জবাব চাই, জবাব দাও।

- কার থেকে জবাব চাইছেন ?

- আপনাদের টেগোর এর থেকে।

- কেনো? উনি আবার এখানে কি দোষ করলেন ?

- আদিখ্যেতা হচ্ছে? নাদের শাহের সেনা যখন দিল্লীতে অতো মানুষ মারলো ,তখন নাইট উপাধি প্রত্যাখানের কথা মাথায় আসেনি ?কেবল দুনিয়ার সামনে ব্রিটিশরাজকে বদনাম করার ফিকির।

 

রবি ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালে।  ১৭৩৯ সনে নাদের শাহের আক্রমণের সময়ে তার বয়েস ঠিক কত ছিল সেই কঠিন অঙ্ক কষতে মিছিলের জনতা যখন ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে উল্টোদিক থেকে একটা ছ্যাকরা গাড়ি এসে থামলো মিছিলের মুখে। আজ শুধুই অবাক হবার দিন। কারণ গাড়ি থেকে নামলেন খোদ দেশের ভাইসরয়, চেমস্ফোর্ড সাহেব।  পরনে ধপধপে সাদা জামা, নীল কোট, পায়ে হাওয়াই চটি আর সাথে তার পোষা একঝাঁক বিড়াল। সাহেব আদর করে এদের নাম রেখেছেন লি-বেড়াল।  সে এক আশ্চর্য জানোয়ার মশায়।  ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাইরে কোথাও কিছু অন্যায় দেখলে এরাই ভোল পাল্টে সিংহবিক্রমে গর্জে ওঠে সুতীব্র প্রতিবাদে। আর দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই অমনি চেমস্ফোর্ড সাহেবের চটিচাটা মিউমিউ মেনিবিড়াল। আবেগমথিত কণ্ঠে বক্তৃতা শুরু করলেন চেমস্ফোর্ড সাহেব:

" জনতার আবেগকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এর চেয়ে অনেক বড়ো নারকীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে মরক্কোতে, যেখানে শাসক স্প্যানিশ; এ্যাঙ্গোলাতে পর্তুগিজ, কঙ্গোতে বেলজিয়ান বা লিবিয়াতে ইতালিয়ান শাসকদের বর্বরতার কথাও ভুললে চলবেনা। আমরা জানি এই মিছিলেও  এইসব ব্রিটিশবিরোধী শক্তির প্রত্যক্ষ মদত আছে।  যাইহোক, জনদরদী ব্রিটিশ সরকার নিহতদের পরিবারবর্গকে আর্থিক সাহায্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।  মৃতের প্রোফাইল অনুযায়ী তার রেটকার্ড ধার্য হয়েছে। পাঁচ হাজার থেকে রেট শুরু ,আর কেউ ডাক্তার হলে তার পরিবার দশ লক্ষ টাকা পাবে। এছাড়া হান্টার কমিশন গঠিত হয়েছে, তাই অপরাধীদের নিস্তার নেই। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।"

 

এতদূর শুনে মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে চোয়া ঢেকুর তুলতে তুলতে জেনারেল ডায়ারের স্বগোতক্তি:

" ধুর মরা এই হয়েছে এক হান্টার কমিশন। গত ছদিন যাবৎ আমাকে ডেকে ডেইলি সাতঘন্টা ধরে সেই একই প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছে আর আমিও চপ-সিঙ্গারা গিলতে গিলতে সেই একই উত্তর দিয়ে যাচ্ছি।  এত চপ-সিঙ্গারা খেয়ে আমার শালা অম্বল হয়ে গেলো"।

 

এদিকে কখন আবার মিছিলে যোগদান করেছেন সিডনি রাওলাট সাহেব। তার হাতে প্ল্যাকার্ড : 'এক দুই তিন চার, জনবিরোধী রাওলাট আইনের বহিস্কার'।

- এ আবার কেমন আঁতলামি? আপনিই তো যত নষ্টের গোড়া।  এ তো আপনার কমিটির তৈরী আইন !

- আমরা আইনের রচয়িতা। ল এনফোর্সমেন্টের দায় কেন নিতে যাবো? তাই সবার সাথে আজ আমিও প্রতিবাদে সামিল। উই ওয়ান্ট জাস্টিস"।

 

তারপর মিছিলটা অমৃতসর থেকে ট্রাফালগার স্কোয়ার হয়ে হাতিবাগান পেরিয়ে যেইনা শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে ঢুকেছে, ওমনি--------------------------------------------------------------

ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। উল্টোপাল্টা খেয়ে পেটগরমের স্বপ্ন আরকি। বাস্তবের কোন ঘটনার সাথে মিল খুঁজেতে যাবেননা আবার। এক্সকিউজ মি, প্লিজ।

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪

ভীনেশের লড়াই ~ বিহঙ্গ দত্ত

এই মুহূর্তটার জন্য গোটা অলিম্পিক ধরে অপেক্ষা করে এসেছি। কিন্তু কাল রাতে সৌমিক যখন ড্র জানালো তখন বুঝলাম, এ হওয়ার না। বিশ্ব কুস্তিতে সুজাকি একটা নাইটমেয়ার। ৮২ টা লড়াই লড়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। একটিও হারেননি। আনসিডেড হয়ে অলিম্পিক মঞ্চে আসার কারণে ভীনেশের ড্র খারাপ হবে সবাই জানত। কিন্তু এক্কেবারে প্রথমেই বাঘের মুখে পড়বে জানা ছিল না। যখন পড়ল তখন রেপচোজের রাউণ্ডের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় দেখলাম না দুজনেই। 

কিন্তু কেন আনসিডেড থাকলেন ভারতীয় কুস্তির আখড়ার শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা? তাঁর লড়াই ৫৩ কিলো ক্যাটাগরিতে। অন্তিমকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে সেই ক্যাটাগরিতে। পাঙ্গাল ভারতের কুস্তির নতুন তারকা। সবার নজর তাঁর দিকে। ভীনেশ যখন ডাইরেক্ট তাঁর নাম পাঠানোর আবেদন করে ফেডারেশনের কাছে সে কি কটূক্তি ভক্তকুলের! এ কারণেই তো আন্দোলন! এ কারণেই তো নমস্য রে*পি*স্ট ব্রিজভূষণজির বিরুদ্ধে কুৎসা! 

সাক্ষীর বয়স হয়ে গেছে। তাঁর দরজা যে এবার বন্ধ হবে সবাই জানত। জানত না যে বজরঙ-এর সঙ্গে এই নোংরামোটা হবে ডোপিং টেস্ট কিট নিয়ে। আরেকবার কোয়ালিফাই করার সুযোগ বরবাদ করে ভক্তকুল উল্লাসে ফেটে পড়ল। বজরঙ নেই। সাক্ষী নেই। ভীনেশ পুরো একা পড়ে গেল। ঠিক করল ওয়েট কমিয়ে খেলবে। 

রেস্টলিং-এ ওয়েট কমিয়ে খেলা ভয়ানক চাপের ব্যাপার। আজকেই দেখছিলাম যে ফুল মিল অব্দি করতে পারে না রেস্টলাররা। জল খাওয়া যায় না প্রপারলি। তাই নিয়ে ভীনেশ লড়ল মাত্র একমাসের নোটিশে এবং কোয়ালিফাই করল। ভক্তকুল বলল ফ্লুক! প্রথম রাউণ্ডেই ফুটে যাবে। 

তাই যখন সুজাকির নাম শুনলাম তখন দমে গেছিলাম। শুধু সরে যাওয়া না, চোট আঘাতের ভয় কাজ করছিল ভীষণভাবে। অনেকেই ১৬-র অলিম্পিকের ওই ভয়ংকর নি ডিসলোকেশনের দৃশ্য ভোলেননি। সেবার স্ট্রেচারে করে রিং ছাড়তে হয়েছিল ২১ বছরের ভীনেশকে। গতবছর সেই হাঁটুর চোটেই কেরিয়ার খতম হতে বসেছিল। অপারেশনের পর ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হত ভীনেশকে। 


দুপুর ৩ টে ১০। ভীনেশ লড়াই শুরু করল। ক্ষিপ্র চিতাবাঘের মতো ওঠানামা। সুজাকিকে ছুঁতে দিল না প্রথম হাফে। তবু একটাবার পায়ের নাগাল পেয়ে গেছিল সুজাকি। ১ সেকেণ্ডের ৫ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে নিজেকে মুক্ত করে ভীনেশ। সুজাকির চোখে ওই প্রথম বিস্ময় দেখেছিলাম। 

কিন্তু উপায়ান্তর না দেখে ট্যাকটিকালি প্যাসিভ হওয়ার কারণে পরপর দুটো হাফেই একটা করে পয়েন্ট গিফট করল সুজাকিকে। ম্যাচের বাকি আর ১০ সেকেন্ড। বিমর্ষ হয়ে গেছি। তখন ঝলসে উঠল তরবারির মতো দুটো হাত! 

এই হাতদুটোকে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। সাতজন মিলে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে ছুঁড়ে ফেলেছিল রাস্তার ধারে। ব্রিজভূষণ সহাস্য মন্তব্য করেছিল- কান্ধো কি জোর কম পড় গ্যায়ি ক্যা? 
 কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে এই হাতদুটো জড়ো করে ভীনেশ আর বজরঙ্গ বলেছিল সরযূর তীরে মেডেল ভাসিয়ে দেবে। 
সাক্ষী বলেছিল- আই কুইট! 

সেই হাত ঝলসে উঠল। সুজাকি তখন জয়ের জন্য প্রায় নিশ্চিত। একটু কি কোর্টের কোনায় সরে গেছিলেন? ক্রুদ্ধ ঈগলের মতো আঁকড়ে ধরে উল্টালেন ভীনেশ! সপাটে আছড়ে পড়ল সুজাকি কোর্টের বাইরে। রেফারির হাত উঠল দুটো আঙ্গুল উঁচু করে। 

প্রথম খানিকক্ষণ বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি আর সৌমিক দুজনেই হোয়াটস্যাপে বারবার একে অপরকে লিখে যাচ্ছি ওহ মাই গড! ওহ মাই গড! 
অপ্রতিরোধ্য ৮২-র গতি থামল। স্ক্রিনজুড়ে বড়ো বড়ো করে লেখা হল ৮২-১। 

বেলা ৪টে ৩০। পরের লড়াই ইউক্রেনিয়ানের সঙ্গে। রেস্টলিং এক তুমুল নিষ্ঠুর খেলা। যে জিতছে সে দম ফেলার অবকাশ পায় না। আগেই লিখেছি ভীনেশকে ওয়েট কমাবার জন্য কী কী করতে হয়েছে। ওই অশক্ত অবস্থায় কোয়ার্টার খেলার জন্য নামল ভীনেশ। ইউক্রেনিয়ান ওকসানা এদিকে ১০-২ এ ম্যাচ হারিয়ে ফুটছে রীতিমতো। ধীরস্থির শুরু হল। খানিক পরেই বোঝা যাচ্ছিল এ লড়াই ভীনেশ শুধু জেতার জন্য লড়ছে না। লড়ছে এক আকাশ অপমান আর আসমুদ্র লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে। ব্রিজভূষণ বলেছিল ১৫ টাকার মেডেলজয়ী! ওই যে সাক্ষীকে চ্যাং দোলা করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ! বজরঙ-এর মুখে থুথু মেরেছিল ভক্তরা! সবাই দেখো, আমি লড়ছি। সাতজন মিলে টানতে টানতে যখন নিয়ে যাচ্ছিল তখনও হাত থেকে জাতীয় পতাকা সরেনি। সে হাত এত সহজে হার মানবে না। 
 
পরপর সিঙ্গল লেগ অ্যাটাক! ৪-০ তে এগোলো ভীনেশ। ছাড়ার পাত্র নয় ওকসানা। ট্যাকটিকাল মুভে আছড়ে ফেলল ভীনেশকে কোর্টের বাইরে। মাঝে খেলা বন্ধ হল দুইবার। কিছুতেই শেষ টাইম সেট করতে পারছেন না জাজেরা। শেষ ৮ সেকেণ্ড! কোর্টে তখন ঝড় উঠেছে। একটা হিলহিলে সাপের মতো নিজেকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে ওকসানার হাত থেকে বাঁচাচ্ছেন ভীনেশ! ফিনিশিং বেল বাজল গম্ভীর সুরে। 

মিডিয়া উত্তাল এখন। কেউ যা ভাবেনি তাই হতে চলেছে কি? ভল্ট ঘেঁটে সোশাল মিডিয়ায় উঠে আসছে দিল্লির রাজপথের ছবি, উঠে আসছে হাতজোড় করে কান্নার বিমর্ষ দৃশ্য! উঠে আসছে বিষাক্ত সাপেদের ছোবল মারার মুহূর্তগুলো! 

রাত ১০টা ১৫। সেমিফাইনাল। বিপক্ষ কিউবান আগের ম্যাচে পুরো সময় খরচাই করতে দেননি। ১০-০ স্কোর করে দিয়েছেন অনায়াসে। কিন্তু এ ধারে ভারে ভীনেশের মাপের রেস্টলার নয় তা বলছিল অ্যানালিস্টরা। এই বছরেই ভীনেশ একে হারিয়েছে ৩-১ এ। লড়াই শুরু। প্রথম হাফে চারবার লেগ অ্যাটাক বাঁচাল ভীনেশ। দ্বিতীয় হাফে যখন প্যাসিভ পয়েন্ট যাচ্ছে ভীনেশের এগেন্সটে তখন কমেন্টেটর খানিক অশান্ত। এত কেন স্লো খেলছে? উল্টোদিকে সাক্ষী তখন বড্ড ঠাণ্ডা গলায় বলল, একটা সুযোগের অপেক্ষা করছে ভীনেশ! পেলে ম্যাচ বের করে নেবে। সুযোগ এল প্যাসিভ পয়েন্টের একদম শেষ ১২ সেকেণ্ডের মাথায়! এবার ডাবল লেগ অ্যাটাক! জানপ্রাণ দিয়ে পাক মারছে গোটা শরীরটা! কোথায় ব্রিজভূষণের চ্যালারা? কোথায় গোদি মিডিয়া? কোথায় আইটি সেলের ট্রলবাজরা? ওই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের মেডেলটাকে ১৫ টাকায় কেনা যায় বলেছিলি! সব দাঁত নখ নিয়ে আয়! দেখ, ভীনেশ লড়ছে! পরপর ৪ পয়েন্ট এল। ম্যাচ ওখানেই শেষ। 

কোনও কোনও ইতিহাস তৈরি হয় বড্ড নিশ্চুপে। যাকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়েছিল আইটিসেল বাহিনী তাঁর কাঁধে আজ গোটা দেশের ভার। ওই কাঁধের জোর মাপতে গেছিল ব্রিজভূষণ! আসুন বাহুবলি! মেপে যান! 

সামনে ফাইনাল। ভীনেশ একা নয়। পেছনে ভূতের মতো উঠে আসছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের চাষীরা। উঠে আসছে তাঁর সংগ্রামসঙ্গী সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ, দিদি গীতা, বৃদ্ধ জ্যাঠা মহাবীর সিং ফোগট! উঠে আসছে মতি নন্দীর গল্পের চরিত্ররা! ট্রামের পাদানি থেকে অফিস কামাই করে নামল কমল গুহ। গ্যারেজের কাজ সেরে ছুটতে ছুটতে হাজির হল প্রসূন। শীতল, কালো জল ঠেলে উঁকি দিল কোনির মুখ, রুটির দোকানের মাল নামিয়ে ঋজু হয়ে দাঁড়াল শিবা! সিনা টান করে দাঁড়াল গোটা ভারতবর্ষের মেহনতি! 

ফাইনালের দিন এরা সবাই থাকবে। ভীনেশ ফোগট জানে ওই মারণপ্যাঁচের থেকেও কঠিন ছিল সেদিনের ঘাড়ধাক্কা, থুৎকার! সেদিন হাল ছাড়েনি যে বন্ধুরা, তারা ছেড়ে যাবে না ভীনেশকে। একাকী যাবে না অসময়ে।