শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

যে ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

যে তোমাকে জন্ম দেয় ... প্রেম দেয় ... ঢেকে রাখে শীতে ...
কত মৃত্যু দেবে তাকে? আর কত অপমান দিতে
মন চায় তোমাদের? ঠিক কোন কোন অঙ্গে তার
ঢোকাবে নিষ্ঠুর শলা, এঁকে দেবে দারুণ প্রহার?

ভ্রূণবেলা থেকে তাকে এ'মরণ খোঁজে আজতক
নিরুচ্চারে মেয়েটাকে মেরে ফেলে একুশ শতক।



আগুন ~ অনির্বান মাইতি

বুকের আগুন নিভিয়ে দেবে জলকামান?
আসলো জোয়ার দিল্লি থেকে আন্দামান
হিরকরাজা হন না যতোই বুদ্ধিমান
আম আদমি রাত পোহালেই পার্টিসান!

বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

একলা ~ সুকন্যা ধর

ভাবতে যখন চাইছি তোমায়
এক মন জল টলোমলো,
চোখের চিলতে উঠোনকোনে
আমার আকাশ একলা হোলো।

একলা তখন আমার শহর
রাজপথ আর অন্ধগলি,
পাতায় পাতায় বিষণ্ণতা
খাতাতে নাম লেখা তোরই।

বুকের ওমে শিশির পড়ে
চেনা স্টেশন ভিজে যাওয়া,
একই খাতায় ছন্দ মেলাস্‌?
পর্দা সরায় দমকা হাওয়া।

এক এক সময় অনেক কথা
কথারও বয়স বাড়ে আবার,
চোখের পাতায় আকাশ নামে
সজল তখন উঠোন আমার।

কি রঙ ছড়ায় জানি না ঠিক
হয়তো হলুদ লালচে সবুজ,
ভিতর ভিতর আমার আকাশ
বুঝেও তবু ভীষণ অবুঝ।

বুকের মধ্যে সাদা কালো
কান্নাগুলো জিইয়ে রাখা,
প্রতিদিনই আমার আকাশ
ভীষণ একা ভীষণ একা।

মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১২

শহর ~ সুকন্যা ধর

রাত জেগেছে ঘুমের পায়ে পায়ে,
আলোকবর্ষ পেরিয়ে যাচ্ছে দুজন।
ভিতর ঘরে তবুও কড়া নাড়ে,
এবার শীতের বাতিল কথোপকথন।

ধোঁয়ার ভিতর ক্লান্ত শহর আঁকে,
দুজন থাকার ছোট্ট মাটির ঘর।
মেঘ জমে যায় ঘরের কোনে কোনে,
দুজন কোথায়? শহর নিরুত্তর।

শহর জানে রুক্ষ হাওয়া ওঠে,
শহর জানে মাটির বাসা ভাঙ্গে।
শহর জানে মলিন কথা যত,
দুজন বলে নিজের নিজের কানে।

নিজের হাতে মুখ ছুঁয়েছে দুজন,
নিজের গন্ধ রোজ শুষে নেয় ঠোঁটে।
শহর খোঁজ নেয়নি বলে দুজন,
পরস্পরের গর্ভে বেড়ে ওঠে।

বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১২

কফিহাউস ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরি

কফিহাউস -১
----------------

আজ শনিবার
ওরা কি সবাই লেখে? ছবি আঁকে?
আরও কত কিছু করে প্রাণনিষ্ঠাভরে?
ওরা কি প্রতিভা আলো নাকি ওরা নিছক হুজুগ?
ওরা কি একলা না কি সবে মিলে এক?

বাতাসে ধোঁয়ায় ধোঁয়া মুঠোভরা সাদা বিষকাঠি
সামনে পানীয় কিম্বা নাও থাকতে পারে
অলীক পেয়ালা ভরা ম্লান অজুহাত
হাতে হাতে বদলায় আড় ভাঙা খাতা ম্যাগ পাণ্ডুলিপি
সূর্য না দেখা সেই বইটির কুমারী মলাট

বিষের গারদ শেষে জীবনের দেখাশোনা সেরে
ওই ওরা সদ্য কৈশোর পার যুবক যুবতী
ওই ওরা দারুণ অক্লান্ত আজও প্রৌঢ়তা পেরিয়ে
নীলকণ্ঠরা সব ফিরে গেছে পাখির বাসায়
কলকাতা সোদপুর বনগাঁ হাওড়া বা গড়িয়া
যার যার অন্ধকার অপেক্ষার কাছে

----------------------------------

কফিহাউস -২
----------------------

একপাশে বসেছেন প্রাজ্ঞ দলপতি
দশটি পাথরে মাপা রত্নগর্ভা ভাগ্যটুকু বসে আছে দুহাতে আঙুলে
প্যাসিভ স্মোকিং তাঁর অ্যাজমার ক্ষতি করছে জেনে তবু তিনি
বাধ্য ঋজু বসেছেন ধোঁয়ার সাগরে, ডান হাতে ইনহেলার বিশল্যকরণী
ডিম ভেঙে সদ্য ফোটা চার ফর্মা কবিতার ছানা
ওড়াউড়ি করছে খুব ভক্ত করতলে

নার্ভাস তরুণী কবি দু'ঘন্টায় নয়খানা সিগারেট ফুঁকে
প্রত্যেক শেষাংশগুলি বিলোলেন অর্থহীন শব্দশিকারিকে
ডায়রির ভাঁজ থেকে উঁকি মারল নবজাতকেরা
এর মাঝে তাড়া খেয়ে দু'দুবার কালো সাদা
শর্করার মাত্রা মাপা কফি ... এলো উদ্ভিজ্জ পকোড়া

এই কোলাজের মধ্যে আমি কই?
গডফাদারের বাঁ কাঁধের পেছনে চেয়ারে ওই যে সামান্য আবছা
অর্ধেক মুখ ঢাকা বোকা বোকা সংশয়ের চোখ ...
কেন আসা নিজেই জানিনা ... বসে আছি প্রসাদের দুরূহ আশায় ...
______________________________ _________________________

কফিহাউস - ৩
--------------------------------

একা তুমি... তুমি গুচ্ছ কবিতা
কারও চোখে জল মুচছো কবিতা?
কার সাথে তুমি শুচ্ছো কবিতা!
তুমি নও তত তুচ্ছ কবিতা ...

মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

চেতনার রঙে পান না হল সবুজ ~ অমিতাভ প্রামাণিক

দুপুরে খাওয়ার পর আরামকেদারায় বসে একটা পান খান রবীন্দ্রনাথ, তার সরঞ্জাম নিয়ে মৃণালিনী পায়ের কাছে বসে পান সাজছেন। বাড়ির ঠিকে ঝি মোক্ষদা-র পুঁচকে মেয়েটা এসে বায়না ধরলো, সেও পান খাবে।
মেয়েটার বয়স বছর চারেক, সর্ষের তেলের শিশির মত গায়ের রঙ, মায়াময় চোখদুটি। সারা বাড়ি টো টো করে ঘুরে বেড়ায়, সর্বত্র তার অধিকার। কিন্তু এই বয়সেই তাকে পানাসক্ত করে তোলা কি ঠিক হবে?
রবি বললেন, তুই পান খাবি কী রে? তোকে আমি ভীমনাগের সন্দেশ খাওয়াবো। এখন ছবির খাতাটা নিয়ে আয় তো, কালারিং কর দেখি আমার সামনে বসে।
সে ছুটে গিয়ে তার ছবি রং করার খাতা এনে রবিকে দেখালো, একটাও ছবি রং হতে বাকি নেই আর। ঐ খাতারই শেষ পাতায় তাসের একটা স্পেডের আউটলাইন স্কেচ এঁকে রবি বললেন, 'নে এই পানটাতে রং দে দেখি।'

মেয়েটা আবার এক ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো তার জলরঙের যাবতীয় কৌটো-সামগ্রী। তার কোনোটাতে রং আছে, কোনোটাতে ফুরিয়ে গিয়েছে। লাল, নীল, বেগুনী রঙের কৌটোতে কিছুটা করে রং আছে। অবন ঠাকুর তার একটা কৌটোয় কাঁচা হলুদের নির্যাস ভরে দিয়েছেন আর বলেছেন, সেইটা দিয়ে রং করা প্র্যাকটিশ করতে। একটা নতুন তুলিও দিয়েছেন। সে রবীন্দ্রনাথে
র আঁকা স্কেচটার ওপরে ঝুঁকে পড়ে তার কৌটোর তরল আর আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রং করতে লাগলো।
এক মুহূর্ত বুঝি অন্যমনস্ক ছিলেন রবি। হঠাৎ স্ত্রীর আর্তনাদ শুনে তাকিয়ে দেখেন, মেয়েটা সেই পানের স্কেচের মধ্যে সবুজের বদলে বেগুনী রং বোলাচ্ছে। থতমত খেয়ে গেলো বাচ্চাটা, হাতে তুলে নিলো কাঁচা হলুদের কৌটোটা আর ওটা হাত ফস্কে পড়ে গেলো মৃণালিনীর হাতে ধরা চুনের ডিব্বায়। চুনের মধ্যে হলুদ পড়তেই সাদা ধবধবে চুনটা হয়ে গেলো খুনখারাপি লাল।
দুজনের মুখের হতাশ অবস্থা দেখে হেসে ফেললেন রবীন্দ্রনাথ। চার বছরের মেয়ে, সে কীই বা বোঝে! উনিই তার নাম দিয়েছেন চেতনা।
পাশে পড়ে থাকা কবিতার খাতাটা টেনে নিয়ে লিখলেন - আমারই চেতনার রঙে পান না হলো সবুজ, চুনই উঠলো রাঙা হয়ে...