মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

মমতাহীন ~ অনামিকা মিত্র

সিঙ্গুরে যার দহন দেখে চমকেছিলে 
আমিই আবার দগ্ধ হলাম গড়বেতাতে 
নাই বা গেলে আমার জন্য আজ মিছিলে,  
অন্যে গেলে, কেনই বা রাগ করবে তাতে?  

মৌলবাদের সঙ্গে তোমার গট আপ খেলা
মুখোস পড়া শকুনপ্রতিম ভোটশিকারি।  
কুমিরকান্না কাঁদছ না কই, আমার বেলা?   
নজর শুধুই রাজতখতের দখলদারি?  

সাংবাদিক আজ দারুণ বাধ্য টাকার জোরে  
তোমার হাতেও খুব অকৃপণ টাকার থলি 
উন্নয়নের জ্বলছে টুনি গ্রাম-শহরে
আগুননদীর খাত ঢেকে দেয় লোভের পলি। 

চোখ ধাঁধাচ্ছো ভিক্ষে দেবার রকমফেরে
কেউ বিভূষণ, কারওর জন্য ভিক্ষা অন্ন  
অশ্রু বারণ। শুকনো চোখেই কাঁদছে কে রে,
রাজপেয়াদা ঘুরছে তাদের ধরার জন্য।  

তোমার মিথ্যে ভাষণ শোনার ভুল সময়ে 
প্রত্যেকদিন কন্যাশ্রীর শরীর পোড়ে
মেয়ের শোকে কাঁদছে যারা আকুল হয়ে 
তাদের মধ্যে বাঁচব আমি… নতুন করে।

রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

দাঙ্গা ~ কৌস্তভ কুন্ডু

১৯৪৭ এ পুরো পরিবার চলে এলেও দাদু থেকে যায় বাংলাদেশে। বরিশালের গৌড় এ। তামাকের ব্যবসা ছেড়ে আসতে রাজী হয়নি। বা ১৯৫০ এ যখন ২০০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাম দা দিয়ে একে একে গলা কাটা হয় তখনও আসেনি, (এটা গল্প নয়, বা গুজব নয়, ১৯৫০ বরিশাল genocide নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন এর উল্লেখ পাবেন।) । কিছুতেই ব্যবসা ছেড়ে আসতে রাজী ছিলো না।
তারপর ১৯৭১, গ্রামে গ্রামে রাজাকার বাহিনী তান্ডব চালাচ্ছে । দাদুর মাথার দাম দিয়েছে ১০ হাজার টাকা। একদিন গ্রামের কিছু মুসলমান এসে বলল রাজাকার বাহিনী আসছে, তারাই বলল গ্রামের সব হিন্দুরা বড় গোডাউনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ুক। তাহলে রাজাকার বাহিনী খুঁজে পাবেনা, সুরক্ষিত থাকবে। সেই রাতে ৮২ জন হিন্দু আশ্রয় নেয় গোডাউনে। দাদু ভোরের আলো ফোটার আগে প্রাতঃকৃত সারতে মাঠে যায় । তখন দেখতে পায় মশাল, তরোয়াল নিয়ে ক্ষেতের আল ধরে কারা গোডাউনের দিকে যাচ্ছে । রাজাকার বাহিনী । আর ওদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই ছেলেগুলো যারা গোডাউনে আশ্রয় দিয়ে বলেছিল আপনারা সুরক্ষিত । প্রাণভয়ে দৌড়তে শুরু করে দাদু, দূর থেকে দেখেছিল গুদামে আগুন লাগানো হচ্ছে। ভোরের দিকে স্টিমার ঘাটে পৌঁছয়, সেখানেও রাজকাররা, কোন হিন্দু কে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। খুন করা হচ্ছে, আর মেয়ে হলে তাদের রেখে দেওয়া হচ্ছে যুদ্ধকালীন খাদ্য হিসেবে । যতদিন যুদ্ধ চলবে ধর্ষণ করা হবে। গ্রামে একসাথে থাকতে গিয়ে নামাজ পড়ার কায়দাটা জানত দাদু। সবার সাথে নামাজ পড়তে বসে যায়। নামাজ পড়তে দেখে সন্দেহ করেনি কেউ, স্টিমারে উঠতে দেয়। তারপর চলে আসে দাদু এদিকে, আর কোনদিন বাংলাদেশে ফিরে যায়নি।
পরে খবর পায় ঐদিন বাকি ৮১ জনকে গোডাউন সুদ্ধু জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।
ছোট থেকে ঘটনাটি শুনে বড় হয়েছি, তারপর একদিন গুজরাত দাঙ্গার বার্ষিকীতে কোন একটা খবরের চ্যানেল গুজরাতের ভয়াবহতার কথা দেখাচ্ছে, দাদু আর আমি দেখেছি, দাদু বলছে "ইসস, মানুষ না হালারপোলা গুলান।" আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম তোমাদের সাথেও তো এরম হয়েছিল বাংলাদেশে। দাদু বলল "হোন, যারা একবার দাঙ্গা দ্যাখছে নিজের চোখে, হে আর দাঙ্গা support করবো না।"
আমি ঘৃণা করি দাঙ্গা, ঘৃণা করি জামাত, ঘৃণা করি বিজেপি ।
ফিরে যায়নি দাদু বাংলাদেশ, একদিন google map খুলে দেখাচ্ছিলাম বরিশাল, দাদু খুশি হয়ে ওঠে । তারপর দুজন মিলে অনেক খুঁজে খুঁজে পেয়ে গেছিলাম নিজেদের ঘর, গৌড় নদীর পাশে........

(Courtesy: Kaustav Kundu )

মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

নাটক : কল্লোল : (পঞ্চাশ বছর পেরোচ্ছে)

শার্দুল সিং বলে কেউ ছিল না! খাইবার বলে কোনো জাহাজ ছিল না! উৎপল দত্ত ইতিহাস জানেন না। কংগ্রেস কখনো নৌ বিদ্রোহকে স্যাবোতাজ করেনি।* *এই নাটকটা যে চলছে এটা বাংলার পক্ষে লজ্জার। বন্ধ করে দেওয়া হোক। এই সব ছিল নাট্যসমালোচনা, তথাকথিত বড় পত্র-পত্রিকায়।* *শেষে যখন এতেও কাজ হল না,তখন একে একে স্টেট্‌সম্যান ছাড়া সব পত্রিকা বলল বিজ্ঞাপন নেব না নাটকের।

একদম হিংস্র হয়ে এক পত্রিকা বলল, সব পত্রিকা সব নাটকের বিজ্ঞাপন নেয় না।পাল্টা এল তাপস সেন-এর মাথায়।এল টি জি জানাল, সব নাটক সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় না। আর তাপস সেন রাতারাতি পোস্টারের বয়ান বানালেন, 'কল্লোল চলছে, চলবে।' ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী, ছাত্র-যুব, অন্যান্য নাট্য সংগঠনের জোটের কর্মীদের হাতে হাতে, তারপর দর্শকের হাতে হাতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেল সেই পোস্টার।

এর আগে 'অঙ্গার' আক্রান্ত হয়েছিল মিনার্ভায়। কংগ্রেসী গুন্ডা নেপাল রায়ের নেতৃত্বে কাঁচ ভেঙে 'দেশদ্রোহী' (মানে কং সরকার বিরোধী/ বুর্জোয়া খনি মালিক বিরোধী বলে) নাটককে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে মিনার্ভার পাহারায় থাকত ছাত্র-যুব-শ্রমিকের দল। 'কল্লোল'-এ তাই সুবিধে হল না ও ভাবে গুন্ডামির। ফোন করে ভয় দেখিয়ে, রাস্তায় হেনস্থা করে, জোছন দস্তিদারকে সমর্থনের জন্য মেরে, উৎপল দত্তকে একটি প্রবন্ধের জন্য দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার করে 'কল্লোল'-র শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়ার অবিরাম চেষ্টা চলল। শার্দুল সিং চরিত্রাভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায়কে বারেবারে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টাও ছিল।

বলরাজ সাহানির মত প্রবীণ আই পি টি এ কর্মী (একদার) অন্য কিছু না পেয়ে নাটকের সঙ্গীতে কেন রাশ্যান, জার্মান নৌ বিদ্রোহের সুর ও গান ব্যবহার হয়েছে তাই নিয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে ঠুকলেন। তাঁর সাম্প্রতিক জাতীয়তাবাদ উথলে উঠে বলছিল দেশীয় নাটকে দেশীয় সুরই থাকতে হবে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ইন্টারন্যাশনালের জন্ম মনে করিয়ে দিতেই চাপ হয়ে গেল। কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙনের আভ্যন্তরীণ বিতর্কের অংশ এ সব।

সত্যজিৎ-মৃণাল থেকে অজিতেশরা সকলে পথে নামলেন উৎপল দত্ত-র মুক্তির দাবীতে। সারা ভারত থেকে প্রতিবাদ এল। এল বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। অনেকেই 'কল্লোল'-এর রাজনীতির সঙ্গে সহমত না। কিন্তু শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন।* *কলকাতারই আরেক প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব একবারের জন্যও ভাঙলেন না তাঁর হিরণ্ময় নীরবতা। প্রতিবাদ করলেন না।

তবু সেদিনকার কং সরকার গণ আন্দোলনের চাপে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন একসময় উৎপল দত্ত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের। উৎপল দত্ত যখন জেলে তখনও 'কল্লোল' চলেছে। অভিনেতারা যাবতীয় ভয় তুচ্ছ করে কাজ করেছেন। এবং তাঁদের পাহারা দিয়েছে শ্রমিক-ছাত্র-জনতা ঐক্য।

ঠিক এইখানে জনতার শিল্প এবং কম্যুনিস্ট পার্টির সম্পর্ক যেমন করে ফুটে উঠেছিল তা আর কখনো ফুটে ওঠেনি। 'কল্লোল'-এর প্রযোজনা নিয়ে আজ আর লেখার ইচ্ছে নেই। শুধু বলার কথা যে এমন এক ঐতিহাসিক প্রযোজনার পঞ্চাশ বছর কেমন নিঃশব্দেই প্রায় চলে যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো সব বদলে গেছে বলে? 'কল্লোল'-এর শেষ দৃশ্যে নাবিকেরা, স্বাধীনতার সশস্ত্র যোদ্ধা পরাজিত নাবিকেরা ক্ষত বিক্ষত দেহ-মন নিয়েও বলতে বলতে যেতেন 'নো সারেন্ডার নো সারেন্ডার'। বাতাসের কানে কি আজ কেউ সেই কথা বলে আর?

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

হাম্বা ~ সুশোভন পাত্র

হিন্দুকুশের চড়াই পেরিয়ে, ৩২৭ খৃষ্ট-পূর্বাব্দে ম্যাসিডনের দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা আলেকজান্ডার এসে পৌঁছলেন উত্তর-পশ্চিম ভারতে। ক্লান্ত, অবসন্ন, ক্ষুধার্ত বিশাল সৈন্য বাহিনী বিস্তীর্ণ অরণ্য চষে আবিষ্কার করল এক অর্ধচন্দ্রাকার ফল, কলা ¹।  কাঁচা অবস্থায় ভেতরে প্রয়োজনীয় স্টার্চ সরবরাহের তাগিদে ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ যে কলার খোসা সবুজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলে সেটা হয়ে যায় হলুদ। বদলের হিড়িকটা ঠিক আমাদের আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার মত। পাঁজি দেখে আট তারিখ, আট ঘটিকায় সেই যে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বললেন -"মিঁত্রো, কষ্ট কেবল দু-দিনের।" জাপান ফেরত সেই দু-দিন বেড়ে হল একমাসের। একমাস এখন একধাক্কায় দিন পঞ্চাশের। আর শাস্ত্রমতে অর্থমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ বাণী, কষ্ট নাকি টেনেটুনে ঐ ছ'মাসের ² । সাইজে ছিল তিল, বদলে হয়ে গেলো তাল।
ডিমান্ড-সাপ্লাই'র অর্থনীতির দুর্বোধ্যতায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হৃদয়ঙ্গম করতে গুজরাটের শাহানশাহর একটু ভুলচুক তো হতেই পারে। প্রজা সকলের দুর্দশার আয়ুষ্কালও অনায়াসে তাই দু-দিন থেকে ছ'মাসে উত্তীর্ণ হতেই পারে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী যখন বলছেন দেশজুড়ে 'কালচারাল রিভোলিউশন' চলছে তখন ব্যাঙ্ক-এটিমের লাইনে শ-খানেক কো-ল্যাটারেল ড্যামেজ ঘটতেই পারে ³ ।  কিছু শ্রমিক ছাঁটাই, কিছু আধপেটা কৃষকের আত্মহত্যা, কিছু কন্যাদায়গ্রস্ত বাপেদের হার্টফেলের খবরও কানাঘুষো আসতেই পারে। এমনকি আড়ালে আবডালে ডিমনিটাইজেশনের উদ্দেশ্য-বিধেয়টাই সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। আফটার অল, দার্শনিক হেরাক্লিটাস তো কবেই বলে গেছেন 'বদলই জগতের একমাত্র সত্য' ⁴ । 
প্রধানমন্ত্রীর একমাস আগের ২৫ মিনিটের বক্তব্যে, ডিমনিটাইজেশনের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল 'কালো টাকা উদ্ধার' এবং 'জাল নোটের কারবার বন্ধ।' সেদিন প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে ১৮ বার 'কালো টাকা' এবং ৫ বার 'জাল নোট' শব্দ-বন্ধ ব্যবহার হলেও, 'ডিজিটাল/ক্যাশলেস ইকোনমির' শব্দ-বন্ধ অনুল্লেখিতই ছিল। শতাংশে শব্দ-বন্ধের গুলোর ব্যবহার ছিল যথাক্রমে, ৭৮.৩%, ২১.৭% এবং ০%। আর গত ২৭শে নভেম্বরের 'মান কি বাত' অনুষ্ঠানে ডিমনিটাইজেশনের ঘোষিত উদ্দেশ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে, 'ডিজিটাল/ক্যাশলেস ইকোনমির' শব্দ-বন্ধের আমদানি হয়েছে ৭২.৭% হারে, 'কালো টাকা' শব্দ-বন্ধ ব্যবহার কমে হয়েছে ২৭.৩%, আর বেমালুম গায়েব 'জাল নোটের' প্রসঙ্গ ⁵।  আপনি যে এদ্দিন জানতেন দেশে কালো টাকা উদ্ধারের বলশেভিক বিপ্লব হচ্ছে, জাল নোটের বিরুদ্ধে অগ্নিযুদ্ধ চলছে, আদপে তা না, ডিমনিটাইজেশনে নাকি দেশের ইকোনোমি এখন 'ক্যাশলেস' হচ্ছে। ছিল রুমাল, একমাসে হয়ে গেলো আস্ত একটা বেড়াল!
আসলে খোদ আয়কর দপ্তরের তথ্যানুসারে 'লিকুইড ক্যাশে' কালো টাকার পরিমাণ যখন মাত্র ৬%, তখন 'কালো টাকা উদ্ধারের' অজুহাতে ৮৬% ক্যাশের লিগ্যাল টেন্ডার বাতিল; 'ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়ে'র জোগাড় ⁶। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে সার্কুলেটেড নোটে জাল নোটের পরিমাণ যখন .০০০৭%, তখন 'জাল নোটের কারবার বন্ধ'র অছিলায় দেশসুদ্ধু  মানুষের ভোগান্তি; 'মশা মারতে কামান দাগা'র ফলাফল ⁷। আর এখন যখন, সমস্ত কালো টাকা'ই বজ্র আঁটুনির ফোস্কা গেরোয় সিস্টেমে ফিরে এসে সাদা হয়ে যাবার সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে, ⁸ ⁹ এখন যখন মোহালি থেকে কর্ণাটক, উড়িষ্যা থেকে মুম্বাইয়েও নতুন নোট আকছার জাল হচ্ছে,¹⁰ ঘোষণার তিন সপ্তাহ পরেও যখন বাতিল টাকার অঙ্কের মাত্র ১০% পূরণ করা হয়েছে বলে খবর বেরোচ্ছে,¹¹ তখন সাপের ছুঁচো গিলে, প্রধানমন্ত্রীর 'ক্যাশলেস ইকোনমির' অলীক স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা আসলে 'ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া'র উপক্রম।
কাদের ক্যাশলেস ইকোনমির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী? যে দেশের ৯১.২ কোটি মানুষ এখনও ইন্টারনেট পরিষেবাই বাইরে, তাঁদের? যে দেশের মাত্র ১৩ কোটি মানুষ ডেবিট কার্ডে লেনদেন করেন, তাঁদের? না, যে দেশের মাত্র ২.১১% মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তাঁদের? প্রধানমন্ত্রীও কি এই গ্রহেরই, সেই অভাগা ভারতবর্ষের বাসিন্দা, যে দেশে 'ইন্টারনেট পেনিট্রেশন রেট' ২৭%; বাস্তবে কিনা কেনিয়া, নাইজেরিয়া'র থেকেও কম? যে দেশের 'অ্যাভারেজ পেজ লোড টাইম' ৫.৫ সেকেন্ড; আসলে কিনা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার থেকেও খারাপ? কিম্বা যে দেশে গড়ে প্রতি ১১৭৬ জনের জন্য রয়েছে  মাত্র একটা কার্ড সোয়াইপ মেশিন ¹² ¹³ ? জনাব, আপনার প্যায়ারের শ্যাম আঙ্কলের দেশেও যখন বেচাকেনার ৪৬ শতাংশই হয় ঐ ক্যাশেই, তখন এদেশে 'ক্যাশলেস ইকোনমির' আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে, গাছে তুলে, মইটা না কেড়ে নিলেই কি চলছিল না ¹¹ ?
নিউমেরোগ্রাফিক সংস্থার এন্ট্রেপ্রেনিউর কুলপ্রীত কর, হায়দ্রাবাদের জনৈক ভিক্ষুক কে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি ভিডিও বানান। ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও তে বিলাসবহুল গাড়ির ভেতরে বসে থাকা ভদ্রমহিলা খুচরোর অভাবে, ভিক্ষুকের কার্ড সোয়াইপ মেশিন ব্যবহার করে ভিক্ষা দেন। প্রধানমন্ত্রী মোরাদাবাদের জনসভায়, তিন বছর আগের সেই ভিডিও হোয়াটস অ্যাপে দেখে, ডিজিটাল ভিক্ষুকের দক্ষতায় আহ্লাদিত হয়ে 'ক্যাশলেস ইকোনমির' তাঁবেদারি করলেন। গরু খোঁজা খুঁজলেও আর একটা রাষ্ট্রনেতাও আপনি পাবেন যিনি, দেশের তাবড় অর্থনীতিবিদ'দের প্রশ্নের উত্তর দেননা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর'দের উদ্বেগ কে তোয়াক্কা করেন না, সাংসদ কক্ষে উপস্থিত থাকেন না, বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন না; অথচ হোয়াটস অ্যাপে বস্তাপচা স্ক্রিপ্টেড ভিডিও দেখে নিজের ঢাক নিজেই পেটাতে কসুরও করেন না ¹⁴ ।
আর যেমন অন্ধ কানাই, তেমন জুটেছে পাগলা জগাই। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, 'মিঁত্রো, সব কালো টাকা আছে সুইস ব্যাঙ্কে', বশংবদ পাগলা জগাইরা সমস্বরে ডেকে ওঠেন, 'হাম্বা।' যদি বলেন, 'মিঁত্রো, ক্ষমতায় এলেই প্রত্যেকের একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়বে', তাঁরা  ডেকে ওঠেন, 'হাম্বা'। প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন, 'মিঁত্রো, ডিমনিটাইজেশনে কালো টাকা উদ্ধার হবে', জাল নোট বন্ধ হবে', তাতেও তাঁরা ডেকে ওঠেন, 'হাম্বা'। আর এখন যখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, 'মিঁত্রো, ডিমনিটাইজেশনে দেশের ইকনোমি ক্যাশলেস হবে', এখনও তাঁরা ডেকে উঠেছেন, 'হাম্বা।' বাজি ধরুন, যেদিন রাত্রি ৮ টায়, প্রধানমন্ত্রী টিভির পর্দায়, পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলবেন "মিঁত্রো, কুছ ভি বোলো, টাট্টি তো হামে বাথরুম মে হি করনা চাহিয়ে", সেদিনও এই স্তাবক পাগলা জগাইরা, সমস্বরেই, সপ্তমে সুরে, প্রাণ ভরিয়ে এবং তৃষা হরিয়ে গেয়ে উঠবেন, 'হাম্বা... হাম্বা...হাম্বা'।

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

পেক্ষাগৃহে জাতীয় সংগীত ~ সরসিজ দাশগুপ্ত

"জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।"

৫২ সেকেন্ড গান গেয়ে নিলাম। আইন সদা পরিবর্তনশীল, আজ প্রেক্ষাগৃহে বাধ্যতামূলক হয়েছে, কাল লেখালেখিতেও হতেই পারে। প্রগতিশীল মানুষ যে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কাজ করবে তা বলাইবাহুল্য, তাই, একটু গেয়েই নিলাম। কি আর যায় আসে। ক্ষতি তো কিছুই নেই। হ্যাঁ, "মানতে ক্ষতি কি", এই যুক্তিতেই তো আজকাল সমস্ত বিতর্ক ধামা চাপা পরে যাচ্ছে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি যদি কিছু মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে ? হোক না বাধ্যতামূলক, ক্ষতি তো কিছু নেই। মোটের ওপর এইভাবেই শুরু ও শেষ হয় সমস্ত ডান-পন্থী মানুষের যুক্তি। রাষ্ট্রের শাসন মানবে না কোনো ? কেনো সব ব্যাপারে প্রশ্ন করবে, এতো কিসের সমস্যা ? বাড়িতে বাবার শাসন মানোনা ? জানোনা শাসন মানুষ হওয়ার পথে এক অপরিহার্য আনুষাঙ্গিক ? কৈ, সিয়াচেনে -৪০ ডিগ্রী গরমে পাহারারত সৈনিকরা তো প্রশ্ন করছে না ? তোমার তো সবেতেই সমস্যা, দুনিয়ার কোন রাষ্ট্র পারফেক্ট ? এইসব আজকাল যেকোনো আলোচনায় দু-একজন বন্ধুবান্ধব বলেই ফ্যালেন। যেমন কথায় কথায় প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশাত্মবোধে, দেশপ্রেমে, দেশের প্রতি ভালোবাসায়। মৃদুস্বরে ধরুন ভুলবসত বলেই ফেল্লেন, "যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই", ব্যাস, হয়ে গেলেন পাকিস্তান-পন্থী ! হয়ে পড়লেন দেশ-বিরোধী, হ্যাঁ, ওই একটা বাক্যেই একসাথে হয়ে গেলেন, উন্নয়নবিমুখ থেকে এন্টি-ন্যাশনাল হয়ে একদম, জেহাদি অব্দি। তা হোক, ক্ষতি কি ? সার্জিকাল স্ট্রাইকে কয়েকটা কল্যাটেরাল ড্যামেজ হয়েই থাকে।
এই লেখা যখন লিখছি, ইন্টারনেট তখন উত্তপ্ত আলোচনায় ব্যস্ত। তিরিশে নভেম্বর, দুহাজার ষোলোর যুগান্তকারী রায়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত শোনানো হবে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি ? এতে যখন ক্ষতি কিছু নেই, তাহলে আলোচনাতেও ক্ষতি নেই। আসুন, বুঝেনি, কি হলো, কেন হলো, কিভাবে হলো।
ফিরে যেতে হবে, দু হাজার তিন সালে। ফিরে যেতে হবে, বলিউডে। করণ জোহরের "কভি খুশি কভি গম"। চলচ্চিত্রটির একটি দৃশ্যে অভিনেতা শাহরুখ খানের ছেলে, তার ইংল্যান্ডের স্কুলের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে ভারতের জাতীয় সংগীত গাইতেই, প্রথমে শুধু শাহরুখ খানের পরিবার একমাত্র ভারতীয় হিসেবে উঠে দাঁড়ালেও, আস্তে আস্তে ভারতের জাতীয় সংগীতের সম্মানে উঠে দাঁড়ালেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত দর্শক। কিন্তু উঠলেননা প্রেক্ষাগৃহে বসে থাকা দর্শকেরা। যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জনৈক শ্যাম নারায়ণ চৌকসি। আধ্যাতিক ও  ধর্ম-কর্মে ব্যস্ত থাকা এই ভদ্রলোক কেন ও কি কারণে হটাৎ চলচ্চিত্র দেখতে গেছিলেন জানা যায়নি, তবে, জানা গেছে তার রাগ এবং দুঃখের কথা। দুইয়ের কেন্দ্রেই ওই উঠে না দাঁড়ানো দর্শককুল। নিজে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন পেছনে বসা দর্শকদের থেকে, তারপর প্রথমে, প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছে অনুযোগ, তারপর প্রেক্ষাগৃহের বাইরে সত্যাগ্রহ, তারপর পুলিশের কাছে অভিযোগ। এছাড়াও আরো নানান ভাবে তিনি জনসাধারণকে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং সেই চেষ্টায় বিফল হয়ে, শেষে মামলা করেছিলেন, মহামান্য মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে। প্রতিপক্ষ, কেন্দ্রীয় এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারের সাথে সাথে সেন্সর বোর্ড আর চলচ্চিত্রটির প্রযোজকেরাও। যুক্তি ছিল, যেহেতু, ভারতবর্ষের সংবিধানে ও ১৯৭১ সালের ন্যাশনাল অনার এক্টে, জাতীয় সংগীতের অবমাননার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং যেহেতু, জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লাভ আইনত দণ্ডনীয়, সেহেতু, চলচ্চিত্রর অংশ হিসেবে জাতীয় সংগীতকে রাখা যাবেনা, এবং চলচ্চিত্রটিকে সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে হবে, এই বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া অব্দি। ওনার রিট পিটিশন আদতে ছিল, একটি জনস্বার্থ মামলা।
জাতীয় সংস্কৃতির রক্ষক ও দেশপ্রেমের দায়িত্বে ব্রতী, শ্যাম নারায়ণ চৌকসিকে এচোখেই দেখেছিলেন মাননীয় বিচারপতি দীপক মিশ্র ও এ. কে. শ্রীভাস্তাভের ডিভিশন বেঞ্চ। শ্যাম নারায়ণ চৌকসির অভিযোগের উত্তরে সেন্সর বোর্ড জানায়, ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তারা উক্ত চলচ্চিত্রটি দেখেছিলেন, এবং, চলচ্চিত্রটিতে আপত্তিজনক কিছু পাননি। আর, চলচ্চিত্র চলাকালীন দর্শকদের উঠে দাঁড়ানর নির্দেশ দেওয়ার অধিকার যেহেতু সেন্সর বোর্ডের নেই, তাই, তাদের মতে, চলচ্চিত্রটি বিনা বাধায় চলতে দেওয়া উচিত। দর্শক উঠে দাঁড়াবে কিনা, তা দর্শকদের বিচার্য, সেন্সর বোর্ডের না। কিন্তু প্রশ্ন তো দেশের সম্মান রক্ষার, জাতীয় সংগীতের অপমান, আসলে তো দেশের অপমান। তাই এতো সহজে মেটেনি ব্যাপারটা। স্বল্প কোথায় বলতে গেলে, মামলার পুরো আলোচনা হয়েছিল, দুটি প্রশ্নের ওপর, এই চলচ্চিত্রে জাতীয় সংগীতের ব্যবহার দ্যাখানো যায় কিনা, এবং দ্যাখালে, দর্শকদের উঠে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক কিনা। বিচারের শেষে মাননীয় বিচারপতিদ্বয় রায় দেন যে, উক্ত চলচ্চিত্রে আর জাতীয় সংগীতের ব্যবহার দ্যাখানো যাবেনা, এবং, যতক্ষণনা অব্দি ওই দৃশ্য উক্ত চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে, ততক্ষন চলচ্চিত্রটি, কোনো প্রেক্ষাগৃহে, টিভি চ্যানেলে, ভিডিও ক্যাসেটে ও লোকাল কেবিলে দেখানো যাবেনা। প্রথম প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তরের ফলে, দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর আর খোজ হয়নি।
চমকে না গিয়ে, উক্ত চলচ্চিত্রটি যেকোনো মাধ্যমে দেখুন, সেই দৃশ্য আজও সমান সম্মান সহকারে দেখানো হয়ে থাকে। কারণ, যথাযথ কারণে, মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ওই রায়কে, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, বাতিল করে দেয় এবং, উক্ত চলচ্চিত্রটি পুনরায় একই ভাবে চলবার অনুমতি পায়।
কিন্তু, চাকা ফিরে আসে, কপালের লিখন খণ্ডানো অসম্ভব, ইত্যাদি ইত্যাদি। তেরো বছর পরে, সুপ্রিম কোর্টে সেই একই শ্যাম নারায়ণ চৌকসির সাথে আবার দ্যাখা হয়ে যায়, মাননীয় বিচারপতি দীপক মিশ্রর। বিষয়ও আবার একই, জাতীয় সংগীতের অবমাননা। কাকতালীয়, নাকি, এক হাতে তালি বাজেনা, সে তর্কে না গিয়েও বলা যায়, ঘটনা হিসেবেই বিরল। তা সে যাই হোক, এবার আর কোনো নির্দিষ্ট চলচ্চিত্র নয়, অন্য কিছু ছোটোখাটো নাম-মাত্র আর্জির সাথে সাথে, সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত প্রদর্শনের আর্জিও ছিল। মামলায় একমাত্র প্রতিপক্ষ হলো কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম শুনানির দিন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদ্বয় জাস্টিস দীপক মিশ্র ও অমিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ, সরকারের বক্তব্য শুনতে চায়, ও সেই মর্মে নির্দেশ দেয়। এর পরেই আসে তিরিশে নভেম্বর, ২০১৬।
তিরিশে নভেম্বর মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলো যে, (১) জাতীয় সংগীতের থেকে ব্যবসায়িক লাভ করা যাবেনা, (২) জাতীয় সংগীত নাটকীয় ভাবে প্রদর্শন করা যাবেনা, (৩) অসম্মান হতে পারে, এমন কোনো ভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়া বা লেখা যাবেনা, (৪) ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত চালাতে হবে, এবং, উপস্থিত দর্শকেরা উঠে দাঁড়াতে বাধিত থাকবে, (৫) জাতীয় সংগীত চলাকালীন যাতে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি না হয় তাই প্রেক্ষাগৃহের দরজা বন্ধ থাকবে, (৬) জাতীয় সংগীত চলাকালীন পর্দায় জাতীয় পতাকার ছবি থাকবে আর, (৭) জাতীয় সংগীতের সংক্ষিপ্ত প্রয়োগ করা যাবেনা।
এই রায় দেয়ার আগে বা পরে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায়ের স্বপক্ষে বিশেষ কোনো কারণ দর্শায়নি, বলেছে শুধু একটি কথা। এ দেশের প্রতিটা মানুষের দেশের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত এবং, ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কিত ভিন্নমতের চিন্তাভাবনার কোনো অবকাশ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা মামলার বিষয়ে একটি কথাও না বলে, শুধু রায়টি কার্যকর করবার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছে, আর কিভাবে তাড়াতাড়ি এই রায় কার্যকর করা যায় সেই নিয়ে বক্তব্য জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরো বলা উচিত, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়, যা দুহাজার সতেরো সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী অব্দি বলবৎ থাকবে।
অর্থাৎ, মামলার শুনানি শেষ হওয়ার আগেই, মামলার মূল আর্জি মেনে নেয়া হলো। এরকম হয়েই থাকে, যখন বাদী এবং বিবাদী দুপক্ষই মামলার মূল আর্জির ব্যাপারে সহমত পোষণ করে। বর্তমান পরিস্থিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে, ভিন্ন কোনো আশা, ডান ও বাম নির্বিশেষে, আমাদের কারোরই নেই বলেই আমার বিশ্বাস।
শেষের পরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। এই রায়ের মূল অংশে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, "অল দি সিনেমা হলস ইন ইন্ডিয়া শ্যাল প্লে দি ন্যাশনাল এন্থেম বিফোর দি ফীচার ফিল্ম স্টার্টস এন্ড অল প্রেসেন্ট ইন দি হল আর অবলাইজড টু স্ট্যান্ড আপ টু শো রেস্পেক্ট টু দি ন্যাশনাল এন্থেম"। অর্থাৎ, একই বাক্যে একবার "শ্যাল" আর আরেকবার "অবলাইজড" ব্যবহার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমটি জাতীয় সংগীত প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে এবং দ্বিতীয়টি জাতীয় সংগীত চলাকালীন উঠে দাঁড়ানোর প্রেক্ষিতে। এইখানেই প্রশ্ন থেকে যায়, মহামায় আদালতের কাছে যখন "শ্যাল", "ম্যান্ডাটরিলি", "হ্যাভ টু" জাতীয় নানান শব্দ ব্যবহারে কোনো বাধা ছিলোনা, তখন শুধু "অবলাইজড" কেন, যখন "অবলাইজেড" শব্দের আরো বিবিধ অর্থ যেকোনো অভিধানে সহজলভ্য !
"দি আনসার মাই ফ্রেন্ড ইস ব্লোউয়িং ইন দি উইন্ড, দি আনসার ইস ব্লোউয়িং ইন দি উইন্ড"।

তথ্যসূত্র :
১. AIR 2003 MP 233
২. Writ Petition(s)(Civil) No(s). 855/2016