মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সিরিয়া ~ আর্কাদি গাইদার


সিরিয়াতে মৃত এবং আহত শিশুর ছবি দেখে অনেকের টনক নড়েছে যে সিরিয়া বলে একটি দেশ আছে, এবং সেখানে কিছু একটা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ যেটা করে অভ্যস্ত, মানে হলো পক্ষ বাছা, সেটাই করছে। এই পক্ষ বাছার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় যা হয়ে দাঁড়ায় তা হলো তথ্য। তাই মনে হয় সিরিয়ার এই ঘটনাবলী সমন্ধে কিছু তথ্য দিয়ে মানুষকে পক্ষ বাছবার কাজে সাহায্য করা উচিত।
১)সিরিয়ার যিনি শাসক, মানে আসাদ, তাকে পশ্চিমী দুনিয়া (অর্থাৎ আমেরিকা আর নেটো কোয়ালিশন) 'একনায়ক' হিসেবে প্রচার করে। যেমন সাদ্দাম, গদ্দাফি ইত্যাদি। আমেরিকা এবং নেটো চায় যে গদ্দাফি এবং সাদ্দামের মতন একটি 'গণঅভ্যুত্থান' এর মাধ্যমে আসাদকে সরাতে, যাতে তারা সেখানে 'গণতন্ত্র' এক্সপোর্ট করতে পারে এবং তেল, ব্যাবসা আর ভৌগলিক ঘাঁটির সুযোগ সুবিধে পেতে পারে। এর জন্যে অনেকদিন ধরেই নেটো এবং আমেরিকা আসাদকে আক্রমন করে আসছে।
২)আসাদের বিরোধীরা মূলত তিনরকম। এক, যারা গণতন্ত্রপ্রেমী। দুই, কুর্দরা। তিন, ইসলামিক মৌলবাদীরা।
৩)এর মধ্যে কুর্দদের ব্যাপারটা আলাদা করে বলতে হয়। কুর্দরা হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ভৌগলিক অঞ্চল জুড়ে বসবাস করা লোক। কিন্তু ব্রিটিশরা যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ওটোমান সাম্রাজ্যের ভাগবাটোয়ারা করছিলো, তখন উপনিবেশবাদের নিষ্ঠুর পরিহাসে কুর্দদের ভৌগলিক অঞ্চলটা পেনের দাগে ভাগ হয়ে যায় চারটে দেশের বর্ডারের মধ্যে - টার্কি, সিরিয়া, ইরাক, ইরান। অর্থাৎ এই চার দেশেই কুর্দরা সংখ্যালঘু হয়ে যায়। এর মধ্যে ইরানের সরকারের সাথে কুর্দদের সম্পর্ক ভালো, তাদের ক্যাবিনেটে কুর্দদের মন্ত্রীও রয়েছে। বাকি তিনটে দেশেই কুর্দরা বহুদিন ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই লড়ছে। এবং টার্কি, ইরাকের সাদ্দাম, বা সিরিয়ার আসাদ - এদের সবার হাতেই কুর্দরা ঐতিহাসিকভাবে অত্যাচারিত। কুর্দদের একটি বিশাল অঞ্চল আছে যা তারা নিজেরা পরিচালনা করে। তাদের একটি সরকার, কাউন্সিল, প্রশাসন রয়েছে। তাদের বাহিনী রয়েছে। এই কুর্দ জাতীয়তাবাদী বাহিনী হলো পেশমার্গা। এই পেশমার্গাদের মধ্যে বড় অংশ হলো বামপন্থী এবং কমিউনিষ্টরা। রোহাভাতে একটি বিকল্প সমাজব্যাবস্থার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কুর্দরা - ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এক ব্যাবস্থা, মধ্যপ্রাচ্যের অন্ধকারের মধ্যে যা এক আলোর দ্বীপের মতন - যার নাম রোহাভা বিপ্লব।
৪)কুর্দদের পশ্চিমী দুনিয়া সন্ত্রাসবাদী মনে করে। টার্কির চাপে আমেরিকা, নেটো এবং আরও অনেকেই কুর্দদের 'সন্ত্রাসবাদী' সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তার মধ্যেই কুর্দরা লড়ে চলেছে।
৫)সাদ্দাম বা আসাদ বা গাদ্দাফিরা ধর্মনিরপেক্ষ ছিলো এই নিয়ে সন্দেহ নেই। তারা গায়ের জোরে ধর্মীয় মৌলবাদীদের দমন করে রেখেছিলো। তেল এবং ক্ষমতার লোভে তাদের সরাতে আমেরিকা সামরিক অভিযানের সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্যে জুড়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের কে তোল্লাই দিয়েছে, অস্ত্র এবং অর্থসাহায্য করেছে, এবং গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আজকে মধ্যপ্রাচ্যে যে ধর্মীয় মৌলবাদীদের এরকম দাপাদাপি, তার পেছনে অন্যতম কারন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লোভ। আসাদকে সরাতেও নেটো ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, আল নুসরা ফ্রন্ট জাতীয় গ্রুপকে তোল্লাই দিয়েছে, যারাই পরে গিয়ে আইসিস নামক রাক্ষসের জন্ম দিয়েছে। এটা মোটামুটি সেই সোভিয়েত তাড়াতে আফঘানিস্তানে তালিবানের সৃষ্টির গল্প।
৬) সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে আসাদ বা সাদ্দাম নিজ নিজ দেশে বামপন্থী, কমিউনিষ্টদের নিষ্ঠুর ভাবে দমন করেছে, খুন করেছে। ইরাক এবং সিরিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টির ইতিহাস পড়লেই এই বিষয়ে ভালো করে জানা যাবে।
৭) সিরিয়াতে যে গৃহযুদ্ধ চলছে তার ৪টি প্রধান গোষ্ঠী রয়েছে। এক হলো আসাদের সরকারী বাহিনী। যাদের সমর্থন করে ইরান, হেজবোল্লা, রাশিয়া। দুই হলো ফ্রী সিরিয়ান আর্মি। এদের মধ্যে আসাদ বিরোধী বহু ছোটখাট দল রয়েছে। এদের প্রধান সমর্থক আমেরিকা আর নেটো। তিন হলো সিরিয়ান ডেমোক্রাটিক ফোর্স বা এসডিএফ। এদের মধ্যে প্রধান শক্তি কুর্দ পেশমার্গা, বামপন্থী এবং কমিউনিষ্টরা। এরা রোজাভা বিপ্লবের আদলে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক সিরিয়া গড়ে তুলতে চায়। আর চার হলো আইসিস। এই চারটি দলই বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে। আবার একসাথে জোট বেধে অন্য দলের সাথে লড়েছে। এবং সেই রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বাধ্যকতাকে মেনেই এদের সমর্থকরাও নিজেদের স্বার্থরক্ষার্থে অস্ত্র, অর্থ ইত্যাদি দিয়ে এই দলগুলোকে সাহায্য করেছে। যেমন ধরুন এসডিএফকে বিগত কয়েকদিনে আমেরিকা সাহায্য করেছে। যদিও তারা তার আগে ফ্রী সিরিয়ান আর্মিকে সাহায্য করতো। আবার আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় অনেকক্ষেত্রে সিরিয়ান আর্মি আর এসডিএফ একসাথে লড়েছে, তখন তাদের সামরিক সাহায্য করেছে রাশিয়া। আবার আইসিস পিছু হটার পরেই যখন পেশমার্গাদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে দেখে নেটোর আরেক পার্টনার টার্কি কুর্দদের ঘাটিতে বোমা ফেলেছে তখন আমেরিকা কোন আওয়াজ করেনি।
৮) এই যুদ্ধে বিগত ৭ বছর ধরে শিশু এবং সিভিলিয়ানরা খুন হচ্ছে। আমেরিকা, নেটো, রাশিয়া, টার্কি, আসাদ বিভিন্ন লোক বিভিন্ন সময় তার জন্যে দায়ী। বিগত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, তা হলো আল ঘৌটা নামক শহর, যা আপাতত মৌলবাদী বাহিনীর ঘাটি, সেই শহর দখল করতে আসাদের সিরিয়ান আর্মি বোমাবর্ষণ করছে নির্বিচারে। এবং তাতে যেই শিশু আর নাগরিকরা মারা যাচ্ছে, তার ছবি নিয়ে চারিদিকে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো এর চেয়ে দশগুন শিশু এর আগে মারা গেলেও এরকম হাহাকার শোনা যায়েনি কেন? কারন হলো ওই ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট। সিরিয়াতে 'গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা' করতে নেটোর হানার আগে বিশ্বের সামনে আসাদের বিরুদ্ধে পয়েন্ট স্কোর করা সম্মতি নির্মাণ করা। আর রাশিয়ার আসাদকে সমর্থনের কারনও ওই আমেরিকাকে প্রতিহত করা আর আগামী নির্বাচনের আগে পুতিনের একটি সফল প্রজেক্ট রাশিয়ানদের সামনে আনা।
৯)তাহলে এবার আপনি পক্ষ বাছবার সময় ভাবতে বসবেন যে আপনি হাজার শিশুর খুনির পক্ষ নেবেন না দুশো শিশুর খুনির পক্ষ নেবেন? আপনি কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বা স্বৈরাচার বা ধর্মীয় মৌলবাদের মধ্যে যেকোন একটা পক্ষ বেছে নেবেন? পক্ষ নিতে হলে তো একটাই পক্ষ আছে। সেটা হলো ওই নাগরিক, ওই শিশুদের পক্ষ। এই তেল, ব্যাবসা, ক্ষমতার বিপক্ষ। এই যুদ্ধের বিপক্ষ। পক্ষ নিতে হলে এসডিএফের পক্ষ নিন। রোহাভা বিপ্লবের পক্ষ নিন।

শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রাজস্থানে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন ~ অবিন দত্তগুপ্ত

২০১৭-র সেপ্টেমবর-এ রাজস্থানে এক ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন হয়েছিল । নেতৃত্ব দিয়েছিল সারা ভারত কৃষক সভা । এই আন্দোলনের প্রধান মুখ ছিলেন রাজস্থানের ,শেখাওয়াতি অঞ্চলের দুই কিংবদন্তি কমিউনিস্ট । সি পি আই এম-এর কমরেড অমরা রাম এবং কমরেড পেমা রাম । ১৩ দিন ধরে চলা সেই আন্দোলন , কৃষক আন্দোলন থেকে গণ আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল । রাজস্থানের ইতিহাসে প্রথমবার কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছিল ব্যবসায়ীরা । শেখাওয়াতি অঞ্চলের সিকার জেলা ,এই আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র ছিল । লাখ লাখ মানুষ পথে নেমেছিলেন । অটো ,বাস এমনকি ডি জে ট্রাক চালকেরাও আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন । অমরা রাম আর পেমা রাম কে নিয়ে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য গান । ১৩ দিন পুরো উত্তর রাজস্থান অবরুদ্ধ ছিল । রেশ ছড়িয়েছিল গোটা রাজ্যে । যে মূল দাবীগুলি নিয়ে কৃষকরা পথে নেমেছিল সেগুলি হল ঃ

১। বিভিন্ন বড়লোকের সাড়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মাপ করেছে কেন্দ্রিয় সরকার । সমস্ত কৃষকদের ৫০,০০০ টাকা ঋণ মাফ করতে হবে । 
২। কৃষক যাতে ভবিষ্যতে ঋণের জালে জড়িয়ে না পরে ,তাই স্বামিনাথন কমিশন একটি নিদান দিয়েছিলেন । কমিশন জানিয়েছিল , ফসলের উৎপাদন মুল্যের দেড় গুন দামে সরকারকে কৃষকের থেকে ফসল কিনতে হবে । রাজস্থানের সরকারকে স্বামিনাথন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী কৃষকদের থেকে ফসল কিনতে হবে ,এই ছিল দ্বিতীয় দাবী ।
৩। রাজস্থানের গরুপ্রেমী সরকার , গরু কেনাবেচা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল । তার ফলে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি হয় এবং বুড়ো গরুর পাল কৃষকদের ফসল নষ্ট করতে থাকে । অতএব কৃষকদের দাবী ছিল , গরু বিক্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে ।
৪। প্রত্যেক খেত্মজুর এবং কৃষককে ২০০০ টাকা পেনশন দিতে হবে । 

১৩ দিনের আন্দোলন সরকারের কোমর ভেঙ্গে দেয় । কৃষক সভার নেতাদের রাজস্থান সরকার লীখিত ভাবে জানান ,তারা সব দাবী মেনে নিচ্ছেন । এও জানান যে ৩ মাস লাগবে , দাবী পুরনের প্রক্রিয়া শুরু করতে । 

 ডিসেম্বর ২০১৭ । তিনমাস কেটে গেলেও সরকার একটিও দাবী পূরণ করে নি । কৃষকসভা সিদ্ধান্ত নেয় ,আরও বড় আন্দোলনের । সিদ্ধান্ত হয় সারা রাজ্যের কৃষক ২২ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা ঘেরাও করবে । বিধানসভায় ওই সময় বাজেট সেশন চলবে ,অতএব ওই সময়-ই  অনিদৃষ্টকালের জন্য ঘেরাও হবে সরকার ।সবকটা দাবী পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে ,তবে ঘেরাও উঠবে । এই কর্মসূচীকে সামনে রেখে সমস্ত গ্রামে প্রচার শুরু করে লাল ঝান্ডা । ঠিক হয় রণকৌশল । চুরু ,ঝুন্‌ঝুনু,শিকার ও নাগোর এই চার  জেলা থেকে চারটে জাঠা বিভিন্ন রুটে জয়পুর পৌঁছানোর কথা ২২শে ফেব্রুয়ারি । রাজস্থান সরকার কৃষকদের ভয় তটস্থ হয়ে ওঠে । তারাও পাল্টা ফন্দি আঁটে লালঝান্ডা কে আটকাবার । অতএব, ২০শে ফেব্রুয়ারি কমঃ অমরা রাম ,কমঃ পেমা রাম ,কমঃ হেতরাম বেনিওয়াল ,কমঃ মাঙ্গেজ চৌধ্‌রি সমেত ৫০০ জন কৃষকনেতাকে গ্রেপ্তার করে রাজস্থান পুলিশ এবং প্যারামিলিটারি ফোর্স ।  কাউকে মিছিল থেকে কাউকে গ্রাম থেকে ,কাউকে পাশের জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । সম্পূর্ণ কৃষকসভা এবং সি পি আই এম নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করা হয় । এস এফ আই-ডি অয়াই এফ আই নেতৃত্বকেও গ্রেপ্তার করা হয় । কিন্তু কিছুজন গ্রেপ্তারি এড়াতে সমর্থ হন । 

সম্পূর্ণ নেতৃত্ব গ্রেপ্তার হওয়ার পর-ও কৃষকরা সিদ্ধান্ত নেয় জয়পুর মার্চ ২২শে-ই হবে । ২১ তারিখ পুরো উত্তর রাজস্থান বনধ্‌ হয় । ব্যবসায়ী সংগঠন ,বার এসোসিয়েশন , দুধ বিক্রেতাদের ইউনিয়ান , অটো-বাস-ডি জে চালক ইউনিয়ান-এর সমর্থনে সর্বাত্মক বনধ্‌ পালিত হয় । ২২ তারিখ মানে আজ ,লাখ লাখ কৃষক জয়পুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন । কিন্তু বিশাল পুলিশ এবং মিলিটারি তাদের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করে । কোন নেতা ছিল না , তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেন ,যেখানে আটকাবে সেখানেই অবস্থানের । এই 'রিপোর্ট' যখন লিখছি ,তখন রাজস্থানের অর্ধেক রাস্তা স্তব্ধ হয়ে গেছে । লাখ লাখ কিষান আর হাজার হাজার লাল পতাকা দখল নিয়েছে সমস্ত হাইওয়ের ,কিচ্ছু নড়ছে না । আন্ডারগ্রাউন্ড নেতৃত্ব বেরিয়ে এসছেন ,কিন্তু এই আন্দোলনের আসল নেতা দুজন । লাল ঝাণ্ডা এবং প্রতিটি কৃষক নিজে । "মেয় হু অমরা রাম , মুঝে গিরিফতার কারো "- মূল স্লোগানের একটি । রাস্তায় রাত কাটানোর সমস্ত সামগ্রী নিয়ে 'অন্নদাতা-অন্নদাত্রী'-রা  অনিদৃষ্টকালের জন্য রাস্তায় । 

এই আন্দোলন ঐতিহাসিক । রাজস্থান গো-বলয়ের একটি রাজ্য । পেহলু খান -আফরাজুল-এর খুনিরা এখানে সরকারে । সেই রাজস্থানে সরকারকে মাটি ধরিয়ে দিচ্ছে শ্রেণী আন্দোলন -ব্যরিকেড ভাঙ্গছে লাল ঝান্ডা । হিন্দু-মুসলমানের আগে এগিয়ে আসছে শ্রেণীর আইডেন্টিটি ,কৃষক আইডেন্টিটি । গরু বিক্রী করতে দিতে হবেই - এটা সমস্ত কৃষকের মৌলিক দাবী । ধর্মের -জাতের-লিঙ্গের ব্যারিকেড ভাঙ্গছে লাল ঝান্ডা । লাখ মানুষের মিছিলে জিপের উপর দাঁড়িয়ে মাইকে নিজের কথা বলছেন রাজস্থানের গ্রামের মহিলারা । এই আন্দোলন ঐতিহাসিক । মনে রাখতে হবে ,এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি অর্থনীতি । এই আন্দোলন নয়া উদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন । বসুন্ধরা রাজের বি জে পি সরকার যেভাবে কৃষকদের শোষণ করেছে ,ঠিক সেভাবেই শোষণ করেছে আগের কংগ্রেস সরকার । আগের কংরেস-এর হাত থেকে বাঁচতে রাজস্থানের কৃষক বি জে পি-র কাছ গিয়েছিল ,এখন বিজেপি-র থেকে বাঁচতে কার কাছে যাবে ? আর ঠিক এখানেই বিকল্প অর্থনীতির লড়াই করছে লাল ঝান্ডা । শ্রেণী ঐক্য-কে সংহত করে এভাবেই রাজস্থানের বালির ক্যানভাসে বিকল্পের লাল টুকটুকে ছবি আঁকা হচ্ছে প্রতিদিন ।

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ত্রিপুরায় ​রাজনৈতিক ​ষড়যন্ত্র?

একটি কাল্পনিক গল্প লিখছি: সত্যি না মিথ্যে? যাচাই সময় করবে


কোনো একটি দেশের- কোনো একটি রাজ্যে নির্বাচন, রাজ্য সরকারের সুপারিশ করা সি.ই.ও.'র তালিকা বাদ দিয়ে পছন্দ সই সি.ই.ও.'র নিযুক্তি হল.....হতেই পারে 


একজন এডিশনাল সি.ই.ও.'র ক্ষমতা খর্ব করার জন্য আরেকজন অতিরিক্ত এডিশনাল সি.ই.ও.'র  নিযুক্তি হলো, যাকে গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুর দায়িত্ব দেয়া হল.....হতেই পারে 


আই.টি.
​ ​
সহ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র দেখার জন্য পাঁচ পাঁচজন ডেপুটি সি.ই.ও.'র  নিযুক্তি হল, বাছাই করা হলো তাদের যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কম,.....হতেই পারে 



ভিডিও রেকর্ডিং এর যে কাজটি ৫০ লক্ষ টাকায় করা যেত, ওয়েব কাস্টিং-এর খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৫ কোটি টাকা- এই নিয়ে একজন এডিশনাল সি.ই.ও.'র সঙ্গে সি.ই.ও.'র (যিনি চান ওয়েবক্যাস্টিং হওক) বিরোধ.....হতেই পারে    


ওয়েব কাস্টিং-এর  নামে টেন্ডার করা হলো, গুজরাটের একটি কোম্পানিকে বরাত দেয়া হল, সঙ্গে সার্ভিস প্রোভাইডার এয়ারটেল.....হতেই পারে   


ওয়েব কাস্টিং-এর কাজ দেখার জন্য একজন একজন  ডেপুটি  সি.ই.ও. কে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হল .....হতেই পারে   


ওয়েব কাস্টিং -এর ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে দেয়া হল... এটা হতে পারে না


রাত নয়টা অব্দি মাস্টার প্ল্যান ঠিক ছিল, বাধা হয়ে দাঁড়ালো বি বি সির এক সাংবাদিকের একটি ভিডিও,যেটা সোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হল। একটি রাজনৈতিক দলের "বিশ্বকর্মা" নামক এক নেতা ভাষণ দিলেন- এই রাজ্যের  মুখ্যমন্ত্রী সহ অনেককে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেবেন। সাংবাদিক বন্ধু এই বিষয়টা নিয়ে মেসেজ দিলেন বর্তমান সরকারের প্রত্যাবর্তন অবিশ্যম্ভাবী
​ আর​
বিশেষ একটি ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের পতন নিশ্চিত। ভিডিওটি দেখলেন একজন মহিলা ডেপুটি  সি.ই.ও.,  দেখালেন গিয়ে আই.টি.'র  দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি  সি.ই.ও. কে। দেরিতে হলেও বিবেক জাগলো  আই টি'র দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি সি.ই.ও.'র- নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। নিজেই পরিবর্তন করেদিলেন সব পাসওয়ার্ড। পরিবর্তন করলেন ওয়েব কাস্টিং-এর ডাটা ট্রান্সফার চ্যানেল। "VM" নামক কোম্পানি, যারা বরাত পেয়েছিলেন ওয়েবকাস্টিংয়ের- তাদের থেকে, আর.ও.'র কাছ থেকে ও
​ এক্সেস
 তুলে নেওয়া হলো, শুধু ডি.এম.'রা 
এক্সেস পেলেন। 


হঠাৎ করে লিংক ফেল, পাগল হয়ে
​ ​
গেলো ওই
​​
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রীরা। রাত বাড়ার
​ ​
পর লাল একটিগাড়ি ("...U0560") নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ওই রাজনৈতিক দলের লোকরা লিংক ফাইলের কারণ জানতে। একটি বুথ কেন্দ্রে ঢোকার সময় গেইটে নিরাপত্তা রক্ষীদের বললেন তারা সি সি
​ ক্যামেরা​
লাগাতে এসেছে। কোনো কাগজ পত্র না দেখে নিরাপত্তা রক্ষী তাদের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়

"সন্ধ্যের সময় সি সি
​ক্যা​
মেরা লাগানো হয়েছে ওই কেন্দ্রে, আবার কেন?" - ঐখানে পাহারারত শাসক দলের কর্মীদের সন্দেহ হয়। মোবাইল ক্যামেরায় তাদের ছবি নেয়া হয়, দেখতে পাওয়া যায় এই টিমটির সঙ্গে আছে
​​
ষড়যন্ত্রকারী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
ষড়যন্ত্রকারী রাজনৈতিক দলের
কর্মীরা মুখ লুকায় চাদরে। দ্রুত বেগে পালিয়ে যায় তারা।  পিছু করা হয় তাদের। অন্ধকার একটি জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।কিছুক্ষন পর গাড়িটি গিয়ে ষড়যন্ত্রকারী রাজনৈতিক দলের এক নেতার বাড়িতে গিয়ে পার্ক করে। ডেপুটি  সি.ই.ও.'র কারণে
​​
ষড়যন্ত্র
​ আপাতত​
ব্যর্থ হয় ।

সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

এই রে, এখন কি করি! ~ প্যাডম্যান নিয়ে ম্যাডম্যানের লেখা

"এই রে, এখন কি করি!
নাসিরুদ্দিন আর তাঁর গিন্নি একদিন বাড়ি ফিরে এসে দেখে চোর এসে বাড়ি তছনছ করে দিয়ে গেছে। গিন্নি তো রেগে আগুন। বললে 'এ তোমার দোষ। সদর দরজায় তালা দাওনি, তাই এই দশা।'
পড়শিরাও সেই একই সুর ধরলে। একজন বললে, 'জানলাগুলোও তো ভাল করে বন্ধ করেনি দেখছি।'
আরেকজন বললে, 'চোর আসতে পারে সেটা আগেই বোঝা উচিৎ ছিল।'
আরেকজন বললে, 'দরজার তালাগুলোও পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ।'
'কী আপদ।' বললে নাসিরুদ্দিন, 'তোমারা দেখছি শুধু আমার পিছনেই লাগতে শুরু করলে।'
'দোষ তো তোমারই মোল্লাসাহেব', পড়শিরা বললে।
'বটে?' বললে নাসিরুদ্দিন, 'আর চোরের বুঝি দোষ নেই?'
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের দোষ আর মহিলাদের পিরিয়ডের সময় চাপিয়ে দেওয়া ধর্মীয় আনুশাসন দেখে একইরকম মনে হয়। চোরের দোষ দেখতেই পায় না – ধর্মের আনুশাসন যারা চাপিয়ে দিয়েছে তাদের পাব কোথায়। শিখ ধর্ম ব্যতিরেকে, মোটামুটি সবকটি Institutional religion এ এই অনুশাসন দেখা যায়। গুরু নানক রক্তকে impure মনে করতেন না, মনে করতেন না যে পিরিয়ড চলাকালীন মহিলারা অপবিত্র, তাই গুরুদুয়ারাতে এইসময় আসতেও কোন বাধা নেই। Guru Granth Sahib (p.1013) বলছে "By coming together of mother and father are we created, by union of the mother's blood and the father's semen is the body made. To the Lord is the creature devoted, when hanging head downwards in the womb; He whom he contemplates, for him provides." । শিখ Padwomanরা এই দিক থেকে অন্তত স্বাধীন।
প্রাচীন বৌদ্ধধর্মে এই ধরণের অনুশাসনকে প্রশ্রয় দেয়নি, তাদের কাছে প্রধান ছিল "`inner washing' (M.I,39), i.e. developing a mind of love, kindness and honesty, and free from greed, hatred and delusion"। কিন্তু কালক্রমে সেই, ধর্মের পবিত্রতার মধ্যেও ঢুকেছে অপবিত্রতা। Thailand এ এইসময় মহিলাদের স্তুপা পরিক্রমণ নিষিদ্ধ হয়েছে। বার্মাতেও এইসময় পবিত্র বুদ্ধ মূর্তির সামনে যাওয়া বারন।
ইসলাম ধর্মে কোরানে এর উল্লেখ আছে, তবে এর ব্যাখ্যা অনেকরকম হতে পারে, মনে হয় তিনি এইসময় যৌনমিলনের বারন বলতে চেয়েছেন। কোরাম বলছে "It is harm, so keep away from wives during menstruation. And do not approach them until they are pure. And when they have purified themselves, then come to them from where Allah has ordained for you. Indeed, Allah loves those who are constantly repentant and loves those who purify themselves [2:222] - Quran"। জানা যায় মোহম্মদ তাঁর বিবির এইসময় তাঁর কোলে মাথা রেখে কোরান পড়েছেন, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় তাঁর বিবিকে মাদুর বিছিয়ে দিতে বলেছেন – ধরা যায় মসজিদে যাওয়া বারন করেন নি। কিন্তু যা হয়, পরবর্তীকালে মহিলাদের অবজ্ঞা করে এসেছে অনুশাসন। সবচেয়ে মজার কথা বা দুঃখের কথা এই যে, এই সাধারণ জৈবিক প্রক্রিয়াকে পাপ বলে তকমা দেওয়া হয়েছে – এর পিছনে অন্য ধর্মের কোন প্রভাব আছে কিনা তা অনুসন্ধান করার যথেষ্ট অবকাশ আছে।
ইহুদি ধর্মে "Juwish code of law, Halakha" এর বিশদ নিয়মকানুন বলে দিয়েছে। The Book of Laviticus, Hebrew Bible এ 15.19-15.33 এই সংক্রান্ত অনেককিছু থেকে কিছু উল্লেখ্য "15.19 "Whenever a woman has her menstrual period, she will be ceremonially unclean for seven days. Anyone who touches her during that time will be unclean until evening. 20 Anything on which the woman lies or sits during the time of her period will be unclean. 21 If any of you touch her bed, you must wash your clothes and bathe yourself in water, and you will remain unclean until evening. 22 If you touch any object she has sat on, you must wash your clothes and bathe yourself in water, and you will remain unclean until evening……….. 29 On the eighth day she must bring two turtledoves or two young pigeons and present them to the priest at the entrance of the Tabernacle. 30 The priest will offer one for a sin offering and the other for a burnt offering. Through this process, the priest will purify her before the LORD for the ceremonial impurity caused by her bleeding. 31 "This is how you will guard the people of Israel from ceremonial uncleanness. Otherwise they would die, for their impurity would defile my Tabernacle that stands among them…….33 or a woman during her menstrual period. It applies to any man or woman who has a bodily discharge, and to a man who has sexual intercourse with a woman who is ceremonially unclean."। এর মধ্যে 29, 30, 31 পড়লে যে কোন ধর্মীয় স্থানের সামনে, মুক্তির পথে কিছুটা এগিয়ে দেবার জন্য, নানাবিধ পূজার দ্রব্যসামগ্রী সাজিয়ে বসে থাকা দোকানের চিত্রটা চোখের সামনে ভেষে উঠা, বা পরপারে যাত্রার জন্য গরুর লেজ ধরে ধরে দাড়িয়ে থাকা মনে আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এইসময় সেই মহিলাদের ছায়া মাড়ানোও যেন পাপ, অশুচি। নেপালে এবং আরো অনেক জায়গায় "menstrual hut" দেখা যায়, নেপালের সর্বোচ্চ আদালত এর বিরুদ্ধে রায়প্রদান করেও সমাজের এই stigma কতটা দূর করতে পেড়েছে জানা নেই। প্রগতিশীল ভাবনাচিন্তার মানুষজন বলবে এর থেকে বেরিয়ে আসায় তো মানুষের কাজ, কিন্তু এর ইতিহাস অনেক প্রাচীন – ধর্মের আধ্ম্যাতিকতা ব্যতিরেকে জাগতিক আচার প্রধান ধর্মের যুগে (ritual over spiritual) – এর থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক অনেক সময়ের অপেক্ষা।
এই প্রসঙ্গে হিন্দু ধর্মের আনুশাসন সর্বজনবিদিত। মন্দিরের সামনে লিখিত বা অলিখিত নিয়মের লিখনের রঙ বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও বা কন্যাশ্রী কালেও বিন্দুমাত্র ফিকে হয়না। এদের কেউ এই অনুশাসনের নামে নারীদের উপর পুরুষের আধিপত্য কায়েম, রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রথিত বহুযুগের করাল গ্রাস থেকে মুক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়না। মনু-স্মৃতির দুটি শ্লোক খুবই প্রাসঙ্গিক। ūrdhvaṃ nābheryāni khāni tāni medhyāni sarvaśaḥ | yānyadhastānyamedhyāni dehāccaiva malāścyutāḥ || 5.130 || - The cavities that are above the navel are all pure; those that are below it are impure; as, also are all excretions dropped from the body.—(5.130). আর একটা vasā śukramasṛgmajjāmūtraviḍghrāṇakarṇaviṭ | śleśmāśru dūṣikā svedo dvādaśaite nṛṇāṃ malāḥ || 133 || - Fat, man, blood, marrow, urine, ordure, nasal excretion, ear-wax, phlegm, tears, rheum of the eyes and perspiration,—these twelve are the 'excretions' of human beings.—( 133). তার মানে নাভির উপর থেকে যা কিছু নিঃসৃত হয় তাতে দোষের কিছু নেই। তাই যদি হয় তাহলে মুখ থেকে নিঃসৃত লালা পূজার আগে প্রসাদের থালাতে পড়লে দোষের কিছু নেই। অনেকেই বলবে যে এটা স্বাস্থ্যবিজ্ঞানসম্মত নয়, তাই থালা ধুয়ে নিতে হবে। তাই যদি হয় তাহলে মহিলারা এইসময় স্বাস্থ্যবিজ্ঞানসম্মত জিনিষ ব্যবহার করে মন্দিরে প্রবেশ করলে দোষ কোথায়, অশুচিতা কোথায় – আসল শুচিতা তো মনে। সব দোষ কি মোল্লা নাসিরুদ্দিনের!
খ্রিস্টধর্ম জন্মের আদিকাল থেকে নারীকে খুব একটা সন্মানের চোখে দেখেনি। Original Sin, The Fall এর জন্য নারীদের দায়ী করে। Eve কে এক সাপ প্রলুব্ধ করেছিল জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেতে। কেন সাপকে দেখান হোল? – সাপ মাতৃজাতির প্রতীক, ক্রমবিবর্তিত জন্ম-মৃত্যু প্রতীক। "The serpent represents immortal energy and consciousness engaged in the field of time, constantly throwing off death and being born again"। একবার Bill Moyers, J. Campbell কে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আর কোন mythology তে নারীদের এতখানি পাপী হিসাবে দেখানোর নজির আছে কিনা। J. Campbell তার বক্তব্যে বলছেন "No, I don't know of it elsewhere. The idea in the biblical tradition of the Fall is that nature as we know it is corrupt, sex in itself is corrupt, and the female as the epitome of sex is a corrupter. Why was the knowledge of good and evil forbidden to Adam and Eve? Without that knowledge, we'd all be a bunch of babies still in Eden, without any participation in life. Woman brings life into the world. Eve is the mother of this temporal world. Formerly you had a dreamtime paradise there in the Garden of Eden -- no time, no birth, no death -- no life. The serpent, who dies and is resurrected, shedding its skin and renewing its life, is the lord of the central tree, where time and eternity come together."। সাপই জীবন দান করেছে, যেমন মায়েরা জীবন দান করে। তাহলে আবার নাসিরুদ্দিনের মত বলতে হয়, বটে, সব দোষ কেবল আমার। সাপ যেমন পুরোন ত্বক পরিত্যাগ করে নতুন ত্বক ধারণ করে – রুপক অর্থে মৃত্যু সেখান থেকে আবার পুনর্জন্ম – চন্দ্রের অমাবস্যা-শুক্লপক্ষ-পূর্ণিমা-কৃষ্ণপক্ষ ক্রমবিবর্তন চক্রও তার প্রতীক বহন করে।
এবার আরো একটু পিছিয়ে প্রায় 27000-20000 BCE সময় পাথরের দেওয়ালে আঁকা, সউথ-ওয়েস্ট ফ্রান্সে একশ বছর আগে আবিষ্কৃত, Venus of Laussel ছবির কথা মনে করা যাক।সুধী পাঠকগণ বিবরণের ঘাটতি মেটানোর জন্য Internet search করে ছবিটি দেখে নিতে পারেন। একটি নগ্ন নারী মূর্তি, তার ডান হাত কাঁধের সমান উচ্চতায় উঠে আছে, সেই হাতে ধরে আছে একটি বাইসনের শিং – তাতে ১৩টি দাগ উল্লম্বভাবে আঁকা। তার বাম হাত ঈষৎ স্ফীত পেটের উপর রাখা। এই ১৩টি দাগের দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। চন্দ্রের অমাবস্যা-শুক্লপক্ষ-পূর্ণিমা-কৃষ্ণপক্ষ ক্রমবিবর্তন চক্রে প্রথম চন্দ্রকণা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময় লাগে ১৩ দিন, আবার কেউ কেউ বলেন এক বছরে চন্দ্র ১৩ বার আবর্তন করে। বাংলা প্রবাদ বাক্য '১২ মাসে ১৩ পার্বণ'-এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আমার জানা নেই, তবে একবছরে মহিলাদের ১৩ বার (365/28 = 13) পিরিয়ড সম্পূর্ণ হয়, এটা সর্বজনবিদিত। অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা আবার অমাবস্যা – জন্ম-মৃত্যুর চক্রবত পরিবর্তন। 1.Menstrual phase (From day 1 to 5), 2.Follicular phase (From day 1 to 13), 3.Ovulation phase (Day 14), 4.Luteal phase (From day 15 to 28) মহিলাদের menstrual cycle চন্দ্রে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এইসময় কত সম্ভাব্য প্রানের জন্ম নেয়, আবার মৃত্যু হয়, আবার জন্ম নেয় – চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান। সুতরাং এর মধ্যে না আছে কোন দোষ, না আছে কোন পাপ, না আছে কোন আশুচী। আগেকার মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সবসময় সংযোগ স্থাপন করত। মানুষ যত সভ্য হয়েছে, ধর্ম যত Institutional Form নিয়েছে প্রকৃতি সঙ্গে যোগাযোগ থেকে আমরা তত বিচ্ছিন্ন হয়েছি, তত আমাদের মধ্যে ঢুকেছে ধর্মীয় আনুশাসন, সামাজিক বিধিনিষেধ। তাই আমরা শুধুই মোল্লা নাসিরুদ্দিনের দোষ দেখি। Psychoanalyst J. L. Hendorson মনে করেন "the menstrual cycle may actually be from a woman's point of view, since it has the power to awaken the deepest sense of obedience to life's creative power over her."
সাম্প্রতিককালে Padman ছবি মুক্তি পেয়েছে, আর সাথেসাথে শুরু হয়েছে চাপানোতর। Federal Censor Board (FCB) এর সদস্য ঈসাক আহমেদ বলেছেন "we can't allow our film distributor to import film which is against our tradition and culture". জানা নেইTradition এর সময়কাল কতদূর সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও', বা কন্যাশ্রী বা এই ধরণের অন্য প্রকল্প সত্যিই বেটিকে বাঁচার মত করে বাঁচাতে পারবে তো, কন্যা শ্রীমতি হতে পারবে তো, নাকি অন্য যূপকাষ্ঠে তাদের বলী চলতেই থাকবে। নাকি মহিলাদের 'এই রে, এখন কি করি!' বলে দুশ্চিন্তা করতেই হবে। কলকাতা এয়ারপোর্টে সম্প্রতি Sanitary Pad dispensary booth চালু হয়েছে, তাহলে যে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে কেন থাকবে না! ভগবানের কৃপায় তাদের আয় তো কম নয়। 1996, Boston Marathon, Uta Pippig, প্রথম স্থানাধিকারী, যখন দৌড় শেষ করে তখন menstrual cramp, কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন কথা তাকে শুনতে হয়। আমরা সবসময় ভুলে যায় "পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমায় পশ্চাতে টানিছে", এর সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় আনুসন্ধানের জন্য পশ্চাতে অগসরের প্রয়োজন আছে বোধহয়। পাপ-পুণ্য, শুচী-অশুচী, শুদ্ধ-অশুদ্ধ না ভেবে জন্ম-মৃত্যুর ক্রম আবর্তন ভাবতে ক্ষতি কিসের, কার ক্ষতি। 'এই রে, এখন কি করি!' – এই tradition নিয়ে। কি আর করি – সুমন চ্যাটুজ্জের মত বলি "সূর্য ডোবার সময় হলে, পশ্চিমে নয় পূবের দিকে, মুখ ফিরিয়ে ভাবব আমি, কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে"।"

রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

যজ্ঞের পাঁঠা ~ সুস্মিতা ওঝা

"খুড়া গ! 
এগার হাজার চার'শ কোটি!
ঘুরছ্যে মাথা বন্ বন্!"
"ক্যানে বাপু?  ব্যাঙ্কে তুমার 
নাইখ খাতা জন্ ধন্?"
"সে ত, তখন বল্যেছিল,
পনের লাখ দিব্যেক,
জানথি কি আর হড়প্ কর‍্যে
বিদেশে পালাব্যেক!" 
"কালা ধনকে কর‍্যে সাদা
ফেরার যখন নীরভ,
তুতো ভাই ত বঠে, ন কি? 
তাথেই মোদী নীরব।
'না খা'ঙ্গা, না খানে দুঙ্গা',
তুদের লাগ্যেই বলা,
দু বেলা ভাত খাত্যেই হব্যেক?  
এত পেটের জ্বালা!
ভাতের বদল ধম্ম ট কে,
খাবিস যদি গুল্যে,
ভুলবি খিদা, হনুর পারা 
লাফাবি ল্যাজ তুলে!
টাকা লুঠ্যে বিদেশ গেছে,
হঁয়্যেছে কি তাতে?
খাতা-পত্তর মিলাইন্ দিত্যে 
এফ আর ডি আই আছে।  
ই টুকু ত দ্যাশের লাগ্যে 
করত্যে হব্যেক ভাই,
রাম রাজ্যের মহা যজ্ঞে
বলির পাঁঠা চাই।
    

শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আপনাকে বলছি ~ অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ – আপনি মানুষের ভালোত্বে বিশ্বাস করলে এই পোস্ট পড়বেন না। পোস্টটি ভায়োলেন্ট এবং অশ্লীল।

আপনার মন ভালো নেই, কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারেন না, তাই আপনার মনে হয় আপনার কোনো সমস্যা নেই।
কৈশোর যখন এলো তখন আপনার তলপেটের নিচে লোমের উন্মেষের সময়ে আপনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আপনি বিচিত্র হয়ে উঠবেন, আপনি আর সবার মতন থাকবেন না, এই আতংক আপনাকে গ্রাস করেছিল। আপনি কাউকে বলতে পারেননি, মাকেও না। এই প্রথম আপনার মনে হল যে একটা ভয়, কষ্টের কথা মাকে বলা যাবেনা। তারপর আপনার বন্ধুর কাছে স্বাভাবিকত্বের শিক্ষা পেয়ে আপনি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আপনার সেই কদিনের আতংক মনের কোনে লুকিয়ে পড়েছিল, বলে যায়নি।
মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সেই সুপ্ত আতংক – আপনি বিচিত্র, , মানুষ আর বাঁদরের মাঝামাঝি বনমানুষ – কিন্তু আতংকটা আর সেই শৈশবের আতংকের চেহারাটা নিয়ে তো আসে না, আপনি আতংকটা আর চিনতেই পারেন না। আতংকটা সেই একই আতংক – আপনি আর পাঁচজনের মত থাকবেন না।
আপনি সবার মত হতে চান। কিন্তু সবাই একজ্যাক্টলি কিরকম আপনি জানেন না। আপনি একটা সহজ পন্থা নিয়েছেন, বেশিরভাগ মানুষ মুখে যা বলে তারা নিশ্চয়ই তাই, তাই মুখে মুখে ফেরা কথা শুনে আপনি সবার মত হয়ে যেতে চান।
কিন্তু মুশকিল ওই – তাও আপনি বুঝতে পারেন না যে আর সবকটা মানুষ কিরকম – তাই আরেকটা সহজ পদ্ধতি নিয়েছেন। আর পাঁচটা মানুষ কি রকম হতে চায়না সেটা তাদের কথায় বোঝা যায় – সেখানে ব্যাপারটা অনেকটাই সহজপাচ্য – আপনি এবার জানেন আর পাঁচটা মানুষ কি হতে চায়না – আপনি তা না হতে চাইলে আপনি সেই আর পাঁচজনের মত হয়ে যাবেন।
আপনি যৌনতা ভয় পান; এদিকে লিবিডো আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আপনি পর্ন ভালোবাসেন, এদিকে এরোটিকায় আপনার ভয়। আপনি ফোরপ্লে করতে জানেন না, তাই আপনি আপনার সঙ্গিনীর তৃপ্তিকে আমল দেননি কখনো। আপনি আপনার সঙ্গিনীর তৃপ্তিকে ভয় পান, কারণ আপনি ফোরপ্লে করতে জানেন না। আপনি এখনও জানেন না সঙ্গিনীর অর্গাজম হলে কেমন হয়, কি হলে অর্গাজম হয়। আপনি যৌনতাকে ভয় পান।
আপনি ১৬ই ফেব্রুয়ারির যাদবপুর স্টেশনের ট্রেনটার সঙ্গে এইজন্যই একাত্ম হতে পারেন। কারণ ট্রেনটা থামেনি; আপনার ভয়ার্ত ঠাপনের মত থেমে যায়নি ট্রেনটা। ভয়ার্ত, কারণ আপনি দ্রুত ইজাকুলেশনের দিকে ছুটতে চান। মধ্যবর্তী সময়টা আপনাকে কি একটা আতংকে আপ্লুত করে যেটাকে আতংক হিসেবেও চেনা যায়না। আপনি পর্ন পছন্দ করেন, কিন্তু পর্নের পুরুষদের মত পারফর্ম করতে পারেন না, আপনি ফোরপ্লে করতে জানেন না। কিন্তু ইদানিং ইরেকশনের প্রবলেম হয় বলে ফোরপ্লে করতে চেষ্টা করেন। নিজেকে জাগাতে।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। আপনার স্নায়ু, আপনার বোধজগত ঘুমিয়ে পড়ছে। আপনি আজকালকার অনেকগুলি আইডিয়া বোঝেন না – মি টু বোঝেন না, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বোঝেন না, সমকামীদের সম্মান বোঝেন না। বুঝতে চেষ্টা করতে গেলেও আপনি বোঝেন যে আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন – মাথাটা সব নতুন আইডিয়া নিতে পারে না। আপনার ডিগ্রী আছে, শিক্ষা নেই। আপনি বোঝেনও না বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস হয় কেন। আপনি চান স্কুল লেভেলের পরেই সবকিছু করেসপন্ডেন্সে হয়ে যাক, আপনার কন্যা বাড়িতে থেকে উচ্চশিক্ষিত হোক। আপনার কন্যাকে একসময়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন বাঁধা সময়ে, নিয়ে আসতেন বাঁধা সময়ে। এখন সে নিজের মত যায়, নিজের মত ফেরে। সেইজন্যেই।
এসব নিয়ে, হালফ্যাশানে নতুন হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে যারা কথা বলে – বিশেষ করে মেয়েরা – আপনি তাদের ঘেন্না করেন। আপনি চান এমন একটা দিন আসুক যখন এদের ল্যাম্পপোস্টে ঝোলানো হবে, পেভমেন্টে গুলি করা হবে। আপনি তখন একবার হাতে বন্দুক চান, আপনি জানেন বন্দুক হাতে এলে আপনি কোথায় গুলি করবেন।
মুখে। হাঁ করা মুখ দিয়ে যে কথাগুলো বেরোয় আপনি বুঝতে পারেন না, স্লোগানের সময়ে মুখগুলো আপনার দূর্বোধ্য লাগে। আপনার ধর্ষকামে আপনি জানেন যে আপনি হাঁ করা মুখগুলো ধর্ষণ করতে চান। আপনার ধর্ষণে এইসব ছেলেমেয়েগুলো বোবা হয়ে যাবে, তাদের কথা তাদের গলায়, পেটে পেঁচিয়ে গিঁট পাকিয়ে যাবে। কিন্তু আপনি দাঁতকে ভয় পান। তাই আপনি চান সেই রামরাজ্য এলে আগে যেন এদের দাঁতগুলো খুলে নেওয়া হয়, তারপর আপনার যখন এক বিন্দুও অবশিষ্ট নেই আপনি তখন মুখে গুলি করবেন।
আপনি ১৬ই ফেব্রুয়ারির যাদবপুর স্টেশনের ট্রেনটার সঙ্গে এইজন্যই একাত্ম হতে পারেন – কারণ অবরোধের ঘাড়ের ওপর উঠে আসার পরেও ট্রেনটা থামেনি। একটি শ্লথ অথচ ভারি এবং অপ্রতিরোধ্য গতি আপনার পছন্দ – আপনার মগজের মত শ্লথ, আপনার অস্তিত্ত্বের মত ভারি, আপনার আকাঙ্খার মত অপ্রতিরোধ্য।
সেই যেদিন আপনার তলপেটের নিচে গজিয়ে উঠেছিল লোম, আপনি আরেকটা জিনিসের প্রতি আতংকগ্রস্থ হয়ে উঠেছিলেন – শরীর পালটে যাওয়া। 'শরীর' শব্দটা অবচেতনে চলে গেছে, থেকে গেছে শুধু পালটে যাওয়ার প্রতি আতংক। আপনি চান সমাজটা যেমন আছে তেমন থাকুক, আরো ভালো হয় যদি পিছিয়ে যায়। আপনার ঐতিহ্য পছন্দ। আপনি আসলে খোলনলচে পালটে যাওয়া নতুনের প্রতি আতংকগ্রস্থ, তাই এইসব বন্ধ-অবরোধ-বিক্ষোভ-বিপ্লব আপনাকে আতংকগ্রস্থ করে, কারণ পালটে গেলে কী যে আসতে পারে আপনি, আপনার শ্লথ মগজ বুঝতে পারেনা। যখন আপনি আপনার পালটে যাওয়া শরীরটাকে ভয় পাচ্ছিলেন, তখন আপনি বুঝতে পারছিলেন না যে আপনার সহপাঠিনী তার পালটে যাওয়া শরীরটা নিয়ে এত উৎফুল্ল কেন। তাকে দেখে আপনার কি যেন একটা রাগ তৈরি হয়েছিল, রাগটা থেকে গেছে, উৎসটা ভুলে গেছেন। ভাবছিলেন মেয়েটা কেন আপনার মত ভয় পাচ্ছে না? আপনার নিশ্চিন্তি ছিল যে মা পালটে যান না, কিন্তু সেই মেয়েটাকে দেখে যে রাগটা হয়েছিল তা আবার ফিরে আসছে বিচিত্র, দূর্বোধ্য এক দুশ্চিন্তায় - আপনার স্ত্রী কি পালটে যেতে পারে? কি এক অস্ফুট আতংক আপনার মধ্যে কাজ করে ধরতে পারেন না। ছায়ার মত ভয়টা যে কিসের, কত বয়স ভয়টার – আপনি ঠাওর করতে পারেন না।
তারপর দেখেন আপনার কন্যার শরীর পালটে যাচ্ছে, অথচ সেই মেয়েটাকে দেখার স্মৃতিটাও যে আপনার মনে পুকুরের তলা থেকে লাসের মত ভেসে উঠছে তাও নয়। সেই দশ-বারো বছরে দেখা দৃশ্যটা আবার আপনার চোখের সামনে – অথচ আপনি চিনতে পারছেন না।
আপনি টাইপ করেন – একটা ট্রেন চলে গেল, একটাও স্পট ডেড হল না?
স্তব্ধ, আটকে যাওয়া শরীর আপনাকে নিশ্চিন্ত করে – যে আর পাল্টাবে না। আপনার কন্যা পাল্টালে আপনি ভাবেন যে আপনি শিশুটার জন্য নস্টালজিক হয়ে পড়ছেন, স্নেহপ্রবণ হয়ে উঠছেন; আসলে আপনি ভয় পাচ্ছেন যে মেয়েটা পালটে যেতে পারে – যেমন আপনার স্ত্রীও পালটে যেতে পারেন।
আপনি তাই একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আর ভাবতে পারেন না – আপনার স্ত্রী, আপনার কন্যা – মাথা ভোঁ ভোঁ করে। তাই আপনি গোষ্ঠীকে নিয়ে ভাবেন। সেই সহপাঠিনীর মতই আপনি দ্যাখেন যে একটা গোষ্ঠী আমূল পরিবর্তনের কথা বলে সমাজের, আর তাতে কি এক আমোদ যেন তাদের। আবার কেউ কেউ যেন পরিবর্তিতই হয়ে গেছে। পাড়ার কিশোরীটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে প্রেমিকের থুতনিতে আঙুল বুলিয়ে আদর করছে – ওরা যেন আগামীর মানুষ আজকের সন্ধ্যেয় এসে হাজির হয়েছে। একটা বমির মত আতংক আপনার তলপেট থেকে (ঠিক যেখানে লোমগুলো দেখা দিয়েছিল) উঠে আসে – এরা পাল্টাচ্ছে, অথচ এদের কোন ভয় নেই, সেই দশ-বারো বছরের ভয়ে আমশি হয়ে যাওয়া ছেলেটার মত ভয় পাচ্ছে না এরা, পালটে যাওয়ায়।
বিচিত্র হতে ভয় পায় না এরা!
একটাও স্পট ডেড হল না?
বামপন্থীদের অপছন্দ আপনার; কিন্তু সেই বামপন্থী নেতাকে আপনি বাঘের বাচ্চা মনে করেন যিনি বলেছিলেন পুলিশের বন্দুকে কি নিরোধ পরানো আছে? আপনি মিলিটারি শাসন পছন্দ করেন। আপনি চান অফিসের জন্য বেরোনোর পর আপনার দোরগোড়ায় প্যারামিলিটারি মোতায়েন থাকবে; যখন আপনার স্ত্রী আর অফিসে যাবেনা। আপনি এও ভয় পান যে বিধর্মীদের যেদিন কর্ডন করা হবে তখন আপনার স্ত্রী যদি বলেন একজন বিধর্মীকে ধর্ষণ করে এসে সাচ্চা পৌরুষ প্রমাণ করতে – আপনি পারবেন তো?
আপনি চান আপনার ধর্ম আরবী ইসলামের মত হয়ে উঠুক। মক্কা হয়ে উঠুক অযোধ্যা। শরীয়ত হয়ে উঠুক মনু সংহিতা। পেট্রোডলারে আপনার ধর্মের পার্টি স্ফিত হয়ে উঠুক। ওরা লাভ-জিহাদ করছে, আপনি বলেন, আপনার স্ত্রী ফাওয়াদ খানকে কামনা করেন, আপনি ইয়ার্কি মেরেও বলতে পারেন না। আপনি বিধর্মীদের মত হয়ে উঠতে চান; কিন্তু আপনার নেতাদের সেই দাপট নেই, সেই পুঁজি নেই, নেই সেই লিঙ্গের মাপ আর দৃঢ়তা, নেই সেই শরীর।
শরীর। কি যে ভয় আপনার শারিরীকে।
আপনি বলেন – রেল একদম ঠিক করেছে, আর কোনোদিন অবরোধ মারাতে আসবে না। কিন্তু আপনিও জানেন – আপনার অপছন্দের লোকগুলোর পিষ্ট শরীরের খবর পেয়ে উল্লাস আপনার দ্বারাও হবে না। আপনি মানুষ নরম মনের বলে নয়, কারণ আপনি এখনও জানেন না যে আপনার যাদের অপছন্দ, যাদের আপনি ঘৃণা করেন তাদের ঠিক কি হলে আপনার তৃপ্তি হবে। আপনি শুধু অন্য কথা বলা মুখ, স্লোগান দেওয়া মুখ, কবিতা বলা মুখগুলোকে সেলাই করে দিতে চান – কথা বলে বলেই। বাকি শরীরটা নিয়ে কি করতে হবে আপনি জানেন না। ফ্র্যাঙ্কলি, আপনি তো কথাকেই ভয় পান শুধু, কথা বুঝতে পারেন না বলে। আপনি শ্লথ, ভারি – ট্রেনটার মত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে চান। একটা শ্লথ ও ভারি জগদ্দল যে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে – এই যেন আপনার সুপ্ত বাসনা। কিন্তু সেই ট্রেনটা কী করবে?
আপনি ১৬ই ফেব্রুয়ারির যাদবপুর স্টেশনের ট্রেনটার সঙ্গে এইজন্যই একাত্ম হয়েছেন কারণ সে আপনার স্বপ্নের ট্রেন। কারণ এই দৃশ্যটা আপনার স্বপ্নের দৃশ্য, আপনার সুপ্ত ইচ্ছের মেটাফর – একটি ভারি, শ্লথ জগদ্দল এগিয়ে আসছে আর অবরোধকারীরা ভয়ে পালাচ্ছে। এইটাই! ওদের ভয়! এইটাই আপনি দেখতে চান। আপনি পিষ্ট শরীর মোটেও দেখতে চাননি। আপনি অপরের, অন্যের, অন্য গোষ্ঠীর আতংক দেখতে চান!
কারণ সেই বালকটি এইটাই ভয় পাচ্ছিলো – যে ওর শরীর জুড়ে অন্যরকম, শরীর ফুড়ে উদ্যত বনমানুষ যেন ওর বালক শরীরটাকে পিষ্ট করে বেরিয়ে যাবে। নিজেকে চেনা যাবে না, শিশ্নের ওপর লোম, হাতে পায়ে লোম, যেন সেই বালকটি আর নেই! সবাই আপনাকে নিয়ে হাসবে, তার বদলে কী তৃপ্তিদায়ক যে সবাই আপনাকে দেখে ভয় পাবে! কিন্তু আবার আপনি একা আতংকও হতে চান না। ওটাই তো আপনার আদত ভয় – বিচিত্র একা হয়ে যাওয়া। আপনি চাইতেন যে আপনি একাকী বিচিত্র নন, আপনি আর পাঁচজনের মতই...হয়ে থাকুন!
কেন আপনি মানুষের গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া ট্রেনটাকে ভয় পাননি বলুন তো? কারণ ট্রেনের মধ্যে লোক ছিল, সেই আর পাঁচজন সাধারণ মানুষ। ট্রেনটা ফাঁকা থাকলে আপনি একাত্ম বোধ করতেন না। আপনি তো এমন এক আতংক হয়ে উঠতে চান যার ওপর অনেক মানুষ সওয়ার হবে – আপনার ধর্মের মানুষ, আপনার দেশবাসী, আপনার ভাবনার শরীক যারা। আর আপনি সেই ট্রেন হবেন যে দেশের মানুষকে ঘাড়ে নিয়ে এগোচ্ছে অথচ যার যার শ্লথ অথচ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিক্ষোভ-বিপ্লব চাওয়া বিচিত্র অমানুষগুলো আতংকে সরে যাবে।
মনে আছে? যখন আপনি সেই প্যান্টের তলায় পালটে যাওয়া, ভয়ে আমশি হওয়া বালক ছিলেন আপনি ভাবতেন যে একদিন স্কুলে মেশিনগান নিয়ে যাবেন? আমেরিকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে আপনার সেই ইচ্ছেটার একটা তফাত আছে – না, আপনি ভাবেননি যে স্কুলের সবাই আপনার বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাক, আপনার বাসনা ছিল যে সম্ভ্রম করে, সম্মান করে সবাই আপনাকে গড় করুক, সমীহ করুক, হাততালি দিয়ে উঠুক আর যারা নিজেদের শরীর পাল্টাচ্ছে বলে নতুন পাওয়া আনন্দে আছে তারা আপনার মেশিনগানটা দেখে আতংকে সরে যাক আপনার পথের সামনে থেকে।
ঠিক যেমন ১৬ই ফেব্রুয়ারির যাদবপুর স্টেশনের সেই ট্রেনটা ...। আপনার স্বপ্নের ট্রেন।

বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ভারতী ঘোষ ~ সুশোভন পাত্র

ম্যাডাম ভারতী ঘোষ, আপনার সালকু সরেন কে মনে পড়ে ?
জানেন ম্যাডাম, লালগড়ের জঙ্গলে সালকু'র লাশটা যখন পাওয়া গেলো তখন গলায় ছ-খানা টাঙ্গির কোপ। শরীরের চামড়া পচে গলে যাচ্ছে, পোকাতে কুরে খাচ্ছে সারা দেহ, চারিদিকে দুর্গন্ধ। অথচ মাওবাদী'দের ফতোয়ায়, বৃদ্ধা বিধবা মা'র শত অনুরোধেও, মৃতদেহ সৎকারে সাহস করছে না ধরমপুর গ্রামের কেউ! সালকুর অপরাধ? সি.পি.আই(এম) মধ্যমকুমারি শাখার পার্টি সদস্য ছিল সালকু ¹। 
সেদিন সালকু'র নৃশংস খুনের 'মাস্টারমাইন্ড' সুচিত্রা মাহাতো'র আত্মসমর্পণের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন আপনিই, শ্রীমতী ভারতী ঘোষ। মহাকরণের অলিন্দে পৌঁছে দিয়ে সরকারী প্যাকেজ নিশ্চিত করেছিলেন আপনিই, শ্রীমতী ভারতী ঘোষ। আদালতে বেকসুর খালাসের জন্য নিখুঁত বয়ান সাজিয়েছিলেন আপনিই, শ্রীমতী ভারতী ঘোষ। আজ সুচিত্রা মাহাতো'র পয়সা হয়েছে, গাড়ি হয়েছে, তৃণমূল নেতা প্রবীর গড়াই'র সাথে বিয়েও হয়েছে। কিন্তু সেদিন বুড়িশোলের জঙ্গলে কিষানজীর মৃত্যুর পর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুচিত্রা মাহাতো পালাল কি ভাবে -সেই প্রশ্নের হিসেব হয়নি। পেটে গুলি বিদ্ধ সুচিত্রা মাহাতোর চিকিৎসা হল কোথায় -সেই প্রশ্নের ফয়সালা হয়নি। পার্শ্ববর্তী গ্রামে চিরুনি তল্লাশি'তেও সুচিত্রা মাহাতো পুলিশের র‍্যাডারে ধরা পড়ল না কেন -সেই প্রশ্নের সমাধান হয়নি ² ³ । । অবশ্য তাতে কি? নিখুঁত স্ক্রিপ্ট, নিবিড় সম্পাদনার উপঢৌকনে এক লহমায় রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে গিয়েছিলেন আপনি। দু-দুটো জেলার পুলিশ সুপার, 'কমেন্ডেবেল সার্ভিস'র মেডেল -বকলমে জঙ্গলমহলের বেতাজ সম্রাজ্ঞী ⁴ ।  তামাম বাংলা সাক্ষী রেখে জঙ্গলমহলে শুরু  হয়েছিল তৃণমূল এবং প্রশাসনের মিথোজীবিতার নতুন অধ্যায়। যে অন্যোন্যজীবিত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন 'জঙ্গলমহলের মা' ⁵। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন 'বনদেবী' ⁶ । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন 'বাংলার মার্গারেট থ্যাচার' ⁷। 
ম্যাডাম ভারতী ঘোষ, আপনার সুশান্ত ঘোষ কে মনে পড়ে ? 
জানেন ম্যাডাম, সুশান্ত ঘোষের পৈতৃক ভিটে বেনেচাপড়ার দাসেরবাঁধ খালের কান ঘেঁষে উদ্ধার হয়েছিল 'কঙ্কাল'। দশ বছর মাটির নিচে পোঁতা মৃতদেহ পচে গলে কঙ্কাল হয়ে গেলেও, অক্ষত রয়ে গিয়েছিলো একটি কঙ্কালের, একটি অন্তর্বাস। আর সেই অন্তর্বাস দেখেই কেশপুরের শ্যামল আচার্য সনাক্ত করে ফেললেন তাঁর বাবা অজয় আচার্য'র দেহাবশেষ -২০০২'র ২২শে সেপ্টেম্বর কেশপুরে 'নিহত' তৃণমূল কর্মী'দের একজন। ব্যাস, শ্যামল আচার্যের এফ.আই.আর-এ সওয়ার হয়ে পুনরুজ্জীবিত হল আদালতে রায় দান হয়ে যাওয়া পুরনো মামালার। 'অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষ' কে 'খুনি সুশান্ত ঘোষ' প্রমাণে সি.আই.ডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শুরু হল প্রবল মানসিক অত্যাচার ⁸ । 
আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি জানতেন না এই শ্যামল আচার্য আসলে আইনের ভাষায় দাগী আসামী? আপনি জানতেন না এই শ্যামল আচার্যর বাড়িতেই যৌথবাহিনী উদ্ধার করেছিল বে-আইনি কার্তুজ? আপনি জানতেন না এই শ্যামল আচার্যই মাওবাদীদের অস্ত্র সরবরাহের ঘটনায় জেল খেটেছিল⁹ ? 
জানতেন। আর জানতেন বলেই, আজ সাত বছর পরেও, সি.আই.ডি 'কঙ্কাল কাণ্ডে'র ডি.এন.এ টেস্টের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে পারেনি, অভিযোগের প্রামাণ্য নথি আদালতে জমা দিতে পারেনি, পুলিশ চার্জশিট গঠন করতে পারেনি, আর তাই হাজার চেষ্টা করেও সুশান্ত ঘোষ কে জেলে আটকে রাখা যায়নি ¹⁰ । যায়নি, কারণ ইতিহাস সাক্ষী সেদিনের 'কেশপুর সিপিএম'র শেষপুর'র নেপথ্য কাহিনীর। ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০০২ আনন্দবাজার পত্রিকা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে যে ইতিহাস  -''রবিবার ভোর ৪টের থেকে কেশপুর ব্লকের তিনদিক থেকে প্রায় ৬০ জনের একটি দল গ্রামে ঢোকে। একদল ঢোকে শালবনীর আমনপুর ও সাতশোল দিয়ে। দ্বিতীয় দলটি ঢোকে বেলামমহারাজপুর, গোরুরবাগা হয়ে এবং তৃতীয় দলটি ডেবরার কাছে কংসাবতী নদী পেরিয়ে সরিষাখোলা হয়ে। শালবনীর দিকে আড়াবাড়ির জঙ্গল দিয়ে ঢুকে আক্রমণকারীরা সাতশোল গ্রামে ব্যাপক মারধর করে। ওই গ্রামের সিপিএম সমর্থক নেপাল ঘোষ, ভক্তি ঘোষ ও চিত্তরঞ্জন বেজের উপর অত্যাচার চালায়। পুলিশ সরিষাখোলা থেকে ১৭ জন তৃণমূল সমর্থক'দের গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছে ৯টি মাসকেট, ১২১টি তাজা কার্তুজ, দুটি বোমা, ১১টি চকলেট বোমা ও কয়েকটি কালো পোশাক পাওয়া গিয়েছে।" 
ভারতী ঘোষ আপনি বলতে পারেন, এই ব্যাপক পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অজয় আচার্যরা কেশপুরে ঠিক কি করছিলেন? ভোররাতে কালো পোশাকে মুখ ঢাকা  ছিল কি উদ্দেশ্যে ? ভারতী ঘোষ আপনি বলতে পারেন, ২২শে সেপ্টেম্বর ভোররাত অবধি দাসেরবাঁধের মাটি কেটে তৃণমূল কর্মী'দের লাশ পুঁতেছিলেন যে সুশান্ত ঘোষ তাঁকে ২৩শে সেপ্টেম্বর সকালেই মহাকরণে পাওয়া গেলো কি করে ¹¹? 
ম্যাডাম ভারতী ঘোষ, আজকে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার পিছনে সি.আই.ডি লেলিয়ে দিয়েছেন, আজকে যখন আপনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার' অভিযোগ করছেন, আজকের যখন আপনার ফ্ল্যাটে বে-আইনি মদ উদ্ধার হচ্ছে, আজকে যখন আপনার আর্থিক অসঙ্গতির কেস-ডাইরি লেখা হচ্ছে, তখন একবার আয়নার সামনে দাঁড়ান ¹² । দেখবেন, সময়ের নাব্যতায় হিসেবের যে বৃত্তটা আজ সম্পূর্ণ হচ্ছে তাতে, সেদিন বামপন্থী'দের বিরুদ্ধে উইচ-হান্টের নায়িকা ভারতী ঘোষ একটু একটু করে হেরে যাচ্ছে। আর বেমালুম জিতে যাচ্ছে সালকু সরেনরা। জিতে যাচ্ছেন সুশান্ত ঘোষরা।  
ম্যাডাম, আপনাকে জানিয়ে রাখি, সালকুর পরিবার আজও লালঝাণ্ডার রাজনীতি করে। সালকু'র মা ছিতামণি সরেন আজও ইনকিলাবি মিছিলে হাঁটে। লালগড়ের পার্টি অফিসে আজও এক টুকোর লালপতাকা সালকুর রক্ত গায়ে মেখে পতপত করে ওড়ে। 
জেরা চলাকালীন আপনার বাধ্য সি.আই.ডি অফিসার সেদিন সুশান্ত ঘোষ কে জিজ্ঞেস করেছিলেন – "আপনার কি কোনও অসুবিধা হচ্ছে? আপনি কেমন আছেন?" সুশান্ত ঘোষ বলেছিলেন, "আমরা কমিউনিস্টরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকি। চিন্তা করবেন না, আমি ভালো আছি"। ম্যাডাম ভারতী ঘোষ, আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি, সুশান্ত ঘোষ আজও ভালো আছেন। সুশান্ত ঘোষ আজও মাথা উঁচিয়ে বাঁচেন। সুশান্ত ঘোষ আজও বুকচিতিয়েই লড়াই করেন। 
আপনি বরং বলুন ম্যাডাম, মালকিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিঘাংসায় সলতে পাকিয়ে বামপন্থী'দের ঘরে যে আগুন আপনি সেদিন লাগিয়েছিলেন, আজকে যখন সেই আগুনেই আপনার নিজের হাত পুড়ছে তখন "আপনার কি কোনও অসুবিধা হচ্ছে?" আপনি বরং বলুন ম্যাডাম, আজকে সেই আগুনেই যখন আপনি নিজেই ছেঁকা খাচ্ছেন তখন "আপনি কেমন আছেন?"












**  ২০০২'র আনন্দবাজারের  ওয়েব সংস্করণ রিডেবেল ফরম্যাটে নেই। তাই আনন্দ বাজার কে কোট করে গনশক্তির একটি নিবন্ধের লিঙ্ক  দেওয়া হল।    



শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দম ~ অর্জুন দাশগুপ্ত

এই গল্পটা আমার জীবনের নয় , আমার বউয়ের।
তবে ফেবুতে অনিয়মিত আসার ফলে আমাকেই বলতে হচ্ছে।

সময়টা বেশ কয়েক বছর আগের শীতের লন্ডনে। আমরা দুজনে ডাক্তারি চাকরির স্বার্থে ইংল্যান্ডময় চক্কর কাটছি। এমন সময় মেয়েটি ( গল্পের স্বার্থে বউকে মেয়ে বলে উল্লেখ করছি) লন্ডনের পূর্বপ্রান্তে একটি জাঁদরেল হাসপাতালে চাকরি পেলো। জানা গেলো যে ইউনিটে পেয়েছে সেটি সবচেয়ে আকাঙ্খিত ইউনিট। সেই ইউনিটের বস একজন বৃদ্ধ দোর্দণ্ডপ্রতাপ কালো সাহেব। গাঁট্টা গোট্টা বক্সার দের মতো চেহারা, গলার আওয়াজ গুরুগম্ভীর, বচ্চনের থেকেও দু খাদ নীচে। সাহেবের ভয়ে হাসপাতাল তটস্থ। সে নাকি কিসব বিরল অপেরাশন জানে যা দেখতে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি থেকে দলে দলে ডাক্তার আসে। ভদ্রলোকের জীবনটাও রঙ্গিন। ৩ বা ৪ নম্বর বিয়ে অথবা ডিভোর্স চলছে। এছাড়াও কানাঘুষো শোনা যায় হাসপাতালেই বহু প্রেম করেছেন। ইউনিটে বহু ডাক্তার, তারা সারাদিন চরকির মতো ছোটাছুটি করে ওনার অঙ্গুলিহেলনে।বুড়ো কালো একটি ওভারকোট পরে সার্জণস রুমে বসে থাকেন। একটানা সিগারেট ঠোঁটে আর মুখে টনি ব্লেয়ারের অকথ্য নিন্দে। যাকে বলে একটি ছোটখাটো কিংবদন্তি।

এমন একটি ইউনিটে ছোটখাটো বাঙালি মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে উপস্থিত হলো। প্রথম দিনের পর শুনলো বস তাকে ঘরে দেখা করতে বলেছেন।যাকে চেনেও না, চোখ তুলে দেখেও নি, তাকে হঠাৎ তলব কেনো? ভয়ে জবুথবু হয়ে কোনোরকমে সাহেবের ঘরে। সাহেব তাকে দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন " শোনো, তুমি কি আমায় কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দম খাওয়াতে পারবে? " । ঘরে অনেক্ষন নৈঃশব্দ্য বিরাজ করলো। সাহেব ইংরেজিতে বললেও কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দম কিন্তু বাঙলাতেই বলেছেন। এ যেন এস্কিমোর রিক্সা চাপতে চাওয়া, বা রেড ইন্ডিয়ানের গলায় দরবারী কানাড়া।
মেয়েটি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে সোজা বাড়ি। আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে দেখি দক্ষযজ্ঞ চলছে।কড়াইশুঁটি সেদ্ধ হচ্ছে। ময়দা মাখা হচ্ছে। এলাহী কান্ড। নিজের বউ বলে বলছি না, মেয়েটির হাতের রান্না খুবই ভালো। আমিও দুটি প্রসাদ পেলুম। পরের দিন খাবার দাবার প্যাক করে সোজা সাহেবের ঘর। ঘরে তখন অনেক ভিড়। বুড়ো মেয়েটিকে দেখেই সবাইকে ভাগিয়ে দিলেন। তারপর গোগ্রাসে খাবারগুলো গলাধঃকরণ। খেয়ে দেয়ে বুড়োর মুখে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তির হাসি।
সিগারেট ধরিয়ে বুড়ো গল্প শুরু করলেন। জন্ম জামাইকাতে। কি একটা নেহেরুর করা এক্সচেঞ্জে উনি যৌবনে এক বছর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে কাটিয়েছিলেন। তখন কলেজ স্ট্রিটের কচুরি আর আলুর দম উনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। বললেন " জানো! লোভে পরে একবার এক বাংলাদেশি মহিলাকে বিয়ে পর্যন্ত করেছিলাম। কিন্তু সেই স্বাদ পেলাম না। শেষমেশ ডিভোর্স করে দিলাম"

এরপর বুড়ো নিত্য নতুন ফরমায়েশ করতে থাকলেন। দই মাছ, ইলিশ ভাপা, কষা মাংস, চিংড়িমাছের মালাইকারী.... ফিরিস্তির শেষ নেই। মেয়েটিও যোগান দিয়ে চলেছে। লন্ডনের নির্মম শীতে আমাদের ছোট্ট বাড়িতে অকালবসন্ত। খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়িতে প্রচুর লোক আসছে। দু একজন তো সারা রাত গাড়ি চালিয়ে ডিমের ডেভিল খেতে উপস্থিত। বাজার হচ্ছে, রান্না হচ্ছে, বুড়ো খাচ্ছে, আর হেঁ হেঁ আমিও খাচ্ছি।
এদিকে ইউনিটের জটিল জটিল অপেরাশন সব দায়িত্ব পড়ছে নবাগতা ছোটখাটো লাজুক বাঙালি মেয়েটির ওপর। সবাই বেজায় অবাক। কিন্তু কিছু বলার সাহস নেই।

এক বছর বাদে ছেড়ে চলে যাবার আগে মেয়েটি বুড়োকে বিদায় জানাতে গেলো। জটিল নানারকম অপেরাশন করতে সে এখন বুড়োর কল্যানে সিদ্ধহস্ত।একাকী এই লোকটির প্রতি কেমন যেন মায়া পরে গেছিলো।আশীর্বাদ করে সাহেব বললো,ট্রেনিং শেষ করে মেয়েটি যেন কলকাতায় ফিরে যায়। আর উনিও কিছুদিন বাদে রিটায়ার করে দেখা করতে আর খেতে যাবেন কলকাতায়।

সেই কলকাতায় যাওয়া আর হয় নি। পরের বছর লন্ডনের এক কোনে প্রাসাদের মতো বাড়ির নুড়ি বিছানো পথে উপুড় হয়ে তাঁর মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। এক হাতে বাড়ির চাবি, অন্য হাতে সিগারেট। একাই থাকতেন,তাই কেউ টেরও পায় নি। মেয়েটি নিজেকে সান্তনা দেয়, মরার আগে বুড়ো সাহেবের সারাজীবনের একটি অসম্পূর্ণ স্বাদ অন্তত পূরণ সে করতে পেরেছে। বুড়ো মরার আগে অন্তত কড়াইশুঁটির কচুরি আর আলুর দম খেয়ে যেতে পেরেছে

( ঘটনাটি সত্যি, তবে ছবিটা ইন্টারনেট থেকে। তেনার শরীর খারাপ। এখন কচুরি চাইলে বিপদ আছে)

বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

​চাঁদের বর্ণ ~ শঙ্খ করভৌমিক

​​
​খবর কাগজে লিখেছিল কাল
চাঁদের বর্ণ টকটকে লাল।
দেখিয়া ক্রুদ্ধ হইলেন পিসি।
কহেন 'তামাশা ইহা কোন দিশি?
ইতিহাস হল চৌত্রিশ সাল,
​​চাঁদের বর্ণ তবু আজও লাল?
নীল সাদা চাঁদ নাই হল যদি,
গঙ্গা কি করে হবে টেমস নদী?'
শুনে হাঁহাঁ করে নগর কোটাল,
পুরকায়স্থ, ঘোষ, বোস, পাল
বলিল 'এ আর এমনকি কথা?
টেন্ডার ডাকা পুরাতন প্রথা।
চাঁদ যদি চাই নীল আর সাদা
বরাত নেবেন কাক আঁকা দাদা।
ম্যাচিং কালারে চাঁদ আর চটি।
বিলিতি হইবে বাঙাল ও ঘটি।'

ছবি: Debraya Mukhopadhyay
ছড়া: Sankha Karbhaumik