শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০

কোরোনা ও সরকার ~ ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী

কত্তা, একটু রোসেন। কিছুতেই যে কথাটা ফাইজলামি করে বোঝানো যাচ্ছে না সেটা একটু ঘুরিয়ে কই। ঠাকুর বলেছিলেন পথ দুটো ।একটা ভক্তির আর একটা তর্কের। আমার মতো অনেকেরই পথটা তর্কের। কিন্তু তাতে করে আপনার ভক্তির পথ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কাজেই আমার প্রশ্ন করার অভ্যাস নিয়ে আপনার রেগে যাওয়ার কিছু হয়নি। আমি ওভাবেই বুঝি। যেমন আপনি বোঝেন , মোদিজী যখন বলেছেন তখন নিশ্চই কিছু একটা ভেবেই বলেছেন। নিশ্চই মঙ্গলের দ, চাঁদের প, আর ৯এর ছ মিশিয়ে কিছু একটা দারুন হবে। ছোটবেলা ক্লাসে মনে নেই? কয়েকজন প্রশ্ন করতো আর বাকিরা মুখস্ত করতো এই ভেবে যে বইতে যখন লেখা আছে নিশ্চই ঠিকই হবে। এখন তারা ঠিক সেই অভ্যেসটা whatsapp এও চালু রেখেছেন। ওতেও সমস্যার কিছু নেই। আমি প্রশ্ন করতে করতে বুঝবো, আপনিও একদিন বিশ্বাস করতে করতেই বুঝবেন। । সেই সম্ভাবনা খোলা থাক। কালকেই পৃথিবী শেষ হচ্ছে না। প্রশ্নের কোনো ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতাও নেই। প্রশ্ন প্রশ্নই। যেমন ভক্তি ভক্তিই। নাড়ু কেন আমার বাড়ির দেওয়ালে হিসি করলো এই নিয়ে প্রশ্ন করলে আপনি বলতে পারেন না নাড়ুর বাপ জাঙ্গিয়া না পরে পাতলা লুঙ্গি জড়িয়ে যখন বাজারে যেত তখন তুমি কোথায় ছিলে? ঠিক যেমন আমি আপনাকে জিগাই না, তোমার এত ভক্তি এখন, আদবানি যখন একটা রাম লেখা ইঁট বানাতে বলেছিল… সেই ইঁট তোমার বাপ বানিয়েছিল? নাড়ু বা আপনার বাপ কারো দায় আমাদের নয়। আমরা এখন নিয়ে কথা বলছি, অতীত নিয়েও। কিন্তু তখন তুমি কোথায় ছিলে বল্লে খেলব না। তখন আমি নাক খুঁটছিলাম, আপনি ছোঁচাচ্ছিলেন। কাজেই শোধবোধ হেগো পোঁদ। বাদ দিন।
ঠাকুরে আসি। ঠাকুর ভক্ত হতে বলেছিলেন। দাস হতে একবারও বলেননি। দাস আর ভক্তের বিস্তর ফারাক। একজন মাইনে পায় একজন ফ্রিতে খাটে। এইটা ঠাকুর বলেননি।কারন ঠাকুর আপনাকে দেখেননি। আপনার মত জীব দেশে তখন খুব কম ছিল। যে কটা ছিল তাদের জন্যে যা বলার নরেনই বলে গেছেন। একটু ভক্তিভরে ওর জীবনী পরবেন… গোসেবক নিয়ে ওনার মতামত খুব পষ্ট। মুশকিল হল আপনি গোসেবক আর হিঁদু গুলিয়ে ফেলেছেন whatsapp পড়ে। আপনার তালগোল পাকিয়ে গেছে। ঠিক যেমন আপনি সরকার আর জনগণে গুলিয়ে ফেলছেন।
সরকার পরিকল্পনা করে।তার কাছে সাধারন মানুষের থেকে অনেক বেশি তথ্য থাকে। সেগুলি সে সমন্বয় করে। তার থেকে নীতি তৈরি হয়। ভবিষ্যতের দিশা দেয়। দুর্বলের পাশে এসে দাঁড়ায়। না পারলে তার যুক্তি দেয়।খতিয়ান দেয়। এগুলি বইতে লেখা ছিল মনে আছে? তখন না বুঝে দুলে দুলে মুখস্ত করেছিলেন বলে ভুলে গেছেন। এগুলো সরকারের কাজ। সেই জন্য সরকারকে মানুষ নির্বাচিত করে। এটাও বইতে লেখা ছিল। তার জন্য আপনার আমার পকেট থেকে অনেক অনেক টাকা খসে।এইবার একটু খেয়াল করুন এই সরকার এই করোনা  নিয়ে কি কি করেছে? ( রাহুল গান্ধী রাহুল গান্ধী করবেন না।ও টুইট করে আর থাইল্যান্ড যায়… নিজের পার্টি ছাড়া কারুর ভিটে মাটি চাঁটি আপাতত ও করছে না)। সরকার দুমাস আগাম সময় পেয়েছিল।সরকার পাড়ার ছেলু গয়লা নয়। তার বহু মাইনে করা ইয়াব্বড় শলাহকার আছে। তারা Whatsapp এর ডিগ্রীধারি নয়।তারা কি বলেছিল আর সরকার কি বুঝেছিল আমাদের কেউ জানায়নি। এই রোগ আমদানিকৃত। অনেক আগে বর্ডার সীল করলে আজ হয়ত আপনি আমি কেউ বাড়ি বসে নেই। যখন WHO বলেছিল গ্লোবাল হেলথ এমার্জেন্সি, সরকার বলেছিল তেমন ভয়ের কিছু নেই। সরকার তখন ব্যাস্ত ছিল। ট্রাম্পের নধর নিতম্ব, শাহীনবাগের কারেন্ট, শালাদের গুলি আর মধ্যপ্রদেশের এমএলএ দের খুলি নিয়ে। এগুলো আপনিও দেখেছেন। এই দুই মাসে টেস্টিং, PPE, মাস্ক, ভেণ্টিলেটর কিচ্ছুটির কিছু হয়নি। রাজ্যগুলি অনেক আগে মাঠে নেমেছিল। তারা কেন্দ্রের থেকে বেটার নয়।তাদের মানুষের খিস্তি ডাইরেক্ট খেতে হয় তাই। কিন্তু তারা GSTর হাজার হাজার কোটি প্রাপ্য টাকা পায়নি মাসের পর মাস। কেরালা সরকার হাইকোর্টে গিয়ে মানুষ যাতে নেক্সট তিন মাস কোনো ট্যাক্স না দেয় তার রায় নিয়ে এসেছিল। কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেটা ক্যান্সেল করিয়ে এসেছে। 
তারপর প্রথম বার্তা সরকারবাহাদুর দিলেন একটা চুকিতকিত কার্ফুর আর থালা বাজানোর। তার জন্য টাইম দিলেন চার দিন। দ্বিতীয়বার এসে ২১ দিনের লকডাউন। সময় দিলেন চার ঘন্টার। এর ফলে কি হয়েছে আপনি গুহায় না বাস করলে জানেন। এর মধ্যে আপনিও দেখেছেন সরকার যে প্যাকেজ ঘোষনা করেছে তার আর্ধেক NREGA আর পিএম কিষানের পুর্ব ঘোষিত টাকা। সেটাকে প্যাকেজে জুড়ে দিয়ে মালটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। আপনি হাফিইয়ারলির ইতিহাসের নম্বরটা ফাইনালের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পাশের বাড়ির ঘোঁতনকে ঢপ দিলে সেও এটা একদিন ধরে ফেলতো। ঘোঁতন যদি আপনার ভক্ত না হয়। যারা ভক্ত নয় তারাও তাই করেছে। আপনি ভক্ত বলে বাকিরা ঢপটা গিলবে কেন? যে গালভরা ইএমাই মকুব হয়েছে সেটা না দিলে সুদ সমেত সেটাও আপনাকে পরে শুধতে হবে সেটাও সরকার আপনাকে পরিষ্কার করে একবারো বলেনি।আপনার একবারো মনে হয়নি এটা সরকার বললো না কেন? সরকার কি জনগণের ভাসুর? এত আকার ইঙ্গিতে কথা বলার কি প্রয়োজন? 
 যে লক্ষ কোটি টাকা সরকার তেলের জন্য বাঁচাচ্ছে তার এক পয়সাও মানুষ কে ট্রানফার করছে না। একটা সরকারি পিএম রিলিফ ফান্ড থাকতে সরকার একটা ট্রাস্ট খুলে মানুষের থেকে টাকা তুলছে। একটু দুলে দুলে মোদি মোদি না করলেই দেখবেন আপনি ক্লাস টু এর ফাইনালের আগে যেটুকু হোমওয়ার্ক করতেন সেটুকুও এই গরমেন্ট করেনি। এই অবস্থায় সে এসে আপনাকে বলছে একটু পদিপ জ্বালাবি ভাই? আমরা সবাই দেখবি কেমন মনে বল পাব!
আপনি দুবার ফেল করে আপনার বাপকে যদি বলতেন একটু রেহমানিয়ার বিরিয়ানি খাওয়াবে বাবা? তাহলে এই কঠিন সময় আমি একটু মনে বল পাই। কি হত? নিজের বাপের মুখটা একটু মনে করুন। মালুম পাবেন। আমাদেরো না ঠিক এইরকম লাগছে।
আপনি গুলিয়ে ফেলেছেন কাকু। সারা পৃথিবীতে মানুষ নিজের উদ্যোগে ঘন্টা বাজায়, গান গায়, কবিতা পড়ে, মোমবাতি জ্বালায়। সরকার তাকে কিছু বলে না। সরকার ত্রাণ দেয়, খাবার দেয়। চিকিৎসা দেয়।এখানে সাধারন মানুষ (that includes স্বাস্থ্যকর্মী) ত্রাণ, খাবার, চিকিৎসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে আর সরকার মন দিয়ে ধুপ, কাঁসর, প্রদীপ, ন মিনিট এসব করে যাচ্ছে। উলটে গেছে পুরোটা। মানুষের দ্বায়িত্ব নিজেকে বাঁচানো। সরকার শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দেবে।
উলটে গেলে ভীষন বিপদ জানেন। মানুষের দেহে ব্রেন আর রেক্টাম খুব কাজের জিনিস। কিন্তু এরা জায়গা পাল্টালে ঘোর দুর্দিন। ভাবুন তো কি বিপদ? 
তাই আমরা প্রদীপ টদীপ জ্বালাবো না বুইলেন। আপনি জ্বালান। আপনার মঙ্গল হোক। আমরা তো একই সুতোয় বাঁধা। তাই আপনার হলে আমাদেরো হবে। চিন্তা করবেন না।
পুঃ পাছে কমিউনিস্ট জেহাদি টেহাদি ভাবেন তাই আবার ঠাকুর দিয়েই শেষ করি। ঠাকুর ভক্ত হতে বলেছিলেন ঠিক। কিন্তু মার। বা গুরুর । বা আরাধ্য যা কিছুর।রাজার ভক্ত হতে একবারো বলেননি। আপনি রাজার ভক্ত হয়েছেন। রাজা খুব ডেঞ্জার জিনিস। সে রাজা হিন্দু হোক বা খ্রিশটান বা মোছলমান বা কমিউনিস্ট। রাজা শুধু নৈবেদ্যি বোঝে। আর বোঝে লাঠি, তেল ও গুহ্যদ্বার। আর গুহ্যদ্বারের হিঁদু মোছলমান হয়না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন