বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০

করোনা ও মানুষ ~ বিষাণ বসু

এই শালা মাইগ্র‍্যান্ট ওয়ার্কারদের জন্যে দেশে করোনা এবার মহামারী হয়ে যাবে। 

ঠিকই। একেবারে ১০০% সহমত।

দেখেছেন? দেখেছেন শালাদের গাদাগাদি করে বাসস্ট্যান্ডে ভিড় জমাতে? লকডাউন ফেইল করবে না এরপরেও? বাস নেই, তো হেঁটে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছে - কে ট্র‍্যাক করবে এদের? কে টেস্ট করবে? মিনিমাম সচেতনতা না থাকলে…

একদম ঠিক জায়গাটা ধরেছেন, সিরিয়াসলি। আমি তো আরেকটু আগের কথা বলছি। এই ধরুন, বিলেত-আমেরিকার ডলার-পাউন্ডের মাইগ্র‍্যান্ট বাবুরা যদি এমন করে তাঁদের ফেলে যাওয়া দেশটিতে  না ফিরতে থাকতেন, ফেরার পর তাঁদের যদি এমন করে বাজারে ছেড়ে না দেওয়া হত, কে জানে, লকডাউন না করেই হয়ত আমরা বেঁচে যেতাম, তাই না? আরেকটু আগেই যদি মাইগ্র‍্যান্ট ওয়ার্কারদের দেশে ফেরার ঢল বন্ধ করতে প্লেনগুলো আটকানো যেত? প্লেনে চেপে যাঁরা ফিরলেন, তাঁদের সবাইকে  যদি কোয়ার‍্যান্টাইন করে টেস্ট হত, তাহলে??    

এই হচ্ছে আপনাদের প্রবলেম। রাজনীতি বাদ দিয়ে কথা বলতে শেখেন নি।

ঠিকই। কাদের মাইগ্র‍্যান্ট ওয়ার্কার বলা হবে আর কাদের নয়, এটা তো একেবারেই রাজনীতির সিলেবাসের বাইরে, তাই না? উন্নত দেশে বসে চাকরি করে মাসে কয়েক লাখ কামালে তাঁকে তো আর ওয়ার্কার বলা যাবে না, তাই তো? ভালো আয়ের সুযোগ বুঝে এদেশ থেকে ওদেশে পাড়ি জমালে, বিপাকে পড়ে ওদেশ থেকে এদেশে ফিরে এলে, তাকে মাইগ্রেশন বলাও নেহাত অনুচিত। মাইগ্র‍্যান্ট ওয়ার্কার মানে শুধুই তারা যারা দিনমজুরির কাজ হারিয়ে মাথায় হাঁড়িকুঁড়ি চাপিয়ে ঠা ঠা রোদ্দুরে হেঁটে চলেছেন। এবং, এই সংজ্ঞায় রাজনীতি নেই। তাই না??

আরে, তারা আর এরা?? এদের মধ্যে কোনো কনশাসনেস আছে??

সে তো বটেই। করোনার সংস্পর্শ জেনেও লন্ডন থেকে ফিরে যিনি বাজার-শপিং মলে ঘুরে বেড়ালেন, বিদেশ থেকে ফিরে যাঁরা মস্ত পার্টিতে হুল্লোড় করলেন, এমনকি যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরেই স্রেফ গাঢাকা দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন, হয়ে গেলেন ননট্রেসেবল - তাঁরা সাঙ্ঘাতিক সচেতন নাগরিক বই কি!!

দেখুন, আপনার এই সব কথাতেই সো-কলড গরীবের ছুতো দেওয়া বন্ধ করবেন, প্লীজ??

বেশ, বন্ধ করলাম। মধ্যবিত্তদের কথা বলি তাহলে? আচ্ছা, ফ্ল্যাটে যেসব বুড়োবুড়িরা থাকেন, তাদের অবস্থাটা ভেবেছেন?? তাঁরা কিন্তু কাজের লোক রান্নার লোকের উপর খুব নির্ভরশীল। এই বাজারে তাঁরা কেমন আছেন, জানেন?? এঁরা খাবার পাচ্ছেন কিনা, কী খেয়ে থাকছেন, জানার চেষ্টা করেছেন? ওষুধের দোকানের সামনে লাইনটা দেখেছেন? হয়ত খবর রাখেন না, নিখিল বিশ্বে করোনা-ই এক এবং একমাত্র অসুখ নয়। আপনি যখন মধ্যবিত্তদের কথা ভাবছেন, এটুকু নিশ্চয়ই জানেন, এইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অধিকাংশই দিনে চারপাঁচটা ওষুধ খান - সুগার-প্রেসার ইত্যাদি। সে ওষুধ বন্ধ করার জো নেই। এনারা যদি ওষুধের দোকানে লাইন দিয়ে করোনা বাধিয়ে বসেন - জানেন তো, করোনায় মরার ভয় মেইনলি এঁদেরই।           

হুমমমমম…. 

আর হ্যাঁ, মাথায় রাখুন, এঁদের অনেকেই নির্ভর করেন সঞ্চয়ের টাকার উপর যে মাসিক সুদটুকু মেলে, তার উপরে। সরকার যে আচমকা সুদ কমিয়ে দিল - আমার-আপনার সঞ্চয়ে যে সুদ কমলো, তার থেকেও কিছুটা বেশী করে কমে গেল বয়স্কদের সঞ্চয়ে - এনাদের দিন চলবে কী করে, ভেবেছেন?? হ্যাঁ, এঁরা কিন্তু আমার-আপনার মতোই মধ্যবিত্ত - মানে, সেরকমই ছিলেন - করোনার দিনগুলো কাটলে, এবং বেঁচে থাকলে, এঁরা হয়ত নিম্ববিত্তের জীবনযাত্রায় নতুন করে অভ্যস্ত হবেন। নাঃ, থাক - আপনি তো আবার রাজনীতির কথা পছন্দ করেন না!!

© বিষাণ বসু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন