সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বুদ্ধবাবু ~ কাজরী বসু

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারি সব সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য তাঁর। প্রত্যাখ্যান করলেন। কখন? যখন প্রাণবায়ুর অভাবে ধুঁকছে হৃদযন্ত্র। এক পয়সাও নেবেন না, পার্টি বিল মিটিয়ে বাড়ি ফেরালো,দশ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরেও হাসপাতালের বিল মেটানোর মতো টাকা নেই যাঁর, তাঁকে, তিনি ফিরতেই চান,তাই। এক কবির লেখায় পড়েছি আমরা,তুমিও মানুষ আমিও মানুষ তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়। জানি না,কোন কবি কার উদ্দেশে কখন কী লেখেন,কিন্তু মজা হলো এই, কবিতার সেই লাইন হঠাৎ করে একদিন এমন কিছু বোঝায় যা হয়ত কবিও কখনো বলেননি। কিংবা বলেছেন,সব কী আর মনে রাখা যায়!

সে তিনি মনে রাখুন আর নাই রাখুন,আমরা অনেকেই কিন্তু মনের মণিকোঠায় রেখে দেব বাংলার এক পুরোদস্তুর সৎ উন্নতশির ঋজু শিরদাঁড়ার সেই মুখ্যমন্ত্রীকে যিনি নিজের প্রাপ্য সুযোগসুবিধা অবলীলায় ফিরিয়ে দেন ফিরিয়ে দেবেন বলেই। মাথা শ্রদ্ধায় নত হবে আজীবন, গর্বে ভরে উঠবে বুক। আমরা কেউ কেউ উপেক্ষা করব আজীবন তাঁদের,যাঁরা একদিন এই মানুষটির গায়ে কাদা ছিটিয়ে তাঁর ব্যঙ্গচিত্র এঁকে নিজেকে ধিক্কারযোগ্য প্রমাণ করার পরেও ফুটেজ খেতে নির্লজ্জের মতো হাসপাতালে তাঁরই অসুস্থতায় চলে যান আর বাইট দেন, আমরা উপেক্ষা করব আজীবন তাকে, যে সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষতা জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু চেটে নেওয়া ক্ষীর দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থবার চাটার আশায় পদলেহন করে তাদের যারা একদিন মিথ্যে দোষারোপ করে সেই সৎ মানুষটিকে পিছন থেকে ছুরি মেরে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। আমরা উপেক্ষা করব সেই দুর্বুদ্ধিজীবীদের যারা শুধু গিরগিটি হবে বলেই মানুষের চামড়াটিকে বন্ধক দিয়েছে বেনিয়াদের কাছে আর তাঁকে মসনদচ্যুত করেছে কিছু অর্থের লোভে।

এদের সবাইকে উপেক্ষা করে আমরা অনেকেই শুধু সেই মানুষটিকে প্রণম্য বলে ভাবব যাঁর সততা প্রমাণের জন্য পোস্টারের প্রয়োজন হয় না,হ্যাঁ সহস্রবার ভাবব।

আমরা নিজেদের পশ্চিমবঙ্গবাসী বলে আজীবন গর্ব করব কারণ একদিন এই মানুষটি,একক প্রচেষ্টায় এ রাজ্যকে জল হাওয়া খাদ্য দিয়ে পরিপুষ্ট করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাওয়া মানুষটি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন,যাঁর নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

✍©কাজরী বসু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন