আষাঢ়ের বর্ষা আর ভাদ্রের বর্ষার তফাৎ অনেকটা নায়ক আর পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতার মত । আষাঢ় আর নায়কের আসার সময় নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা । তার আসার কত তোড়জোড় , মেঘ কালো আঁধার ঘনিয়ে এল । ঐ বুঝি আসে । পরিচালকের ব্যাস্ত পায়চারি, ত্রস্ত ইউনিট । প্রযোজক , প্রেমিকার ঘনঘন ঘড়ি দেখা , যদি না আসে কত লোকসান , কত মিথ্যার আশ্রয়ে দেখা করতে আসা । সে আসবে তো ? দেখ না বাবা একটু বাইরে বেরিয়ে । গুমগুম ডাক শোনা যায় ঐ এল বলে । ছাতাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাক ছাতারের মত । যদি লোকেশন চিনতে না পেরে চলে যায় কি লোকসানটাই না হবে । অবশেষে অপেক্ষার অবসান তার আগমন । হুড়মুড় করে এল সে । বাকি সব কলরব পড়ি কি মরি করে ঘরে ঢুকে এল । হাজার হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ ঝলকে উঠছে আর নিবছে। নায়কোচিত হুঙ্কার আর পারিষদের করতালিতে ফেটে পড়ছে । নায়ক তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আছড়ে পড়ছে ক্যামেরার সামনে । ছোট অভিনেতা অতিবয়স্ক বৃক্ষ সব থরথর করে কাঁপছেন । ঘন্টা দুয়েক দাপিয়ে নায়ক যখন থামলে নায়িকা পরিচালক প্রযোজক সবার অভিমান ধুয়ে মুছে সাফ । তিনি চলে যাবার পর ও ছাদে কার্নিসে টালির চালে গাছের পাতা থেকে তার আবেদন টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে ।উপস্থিত সবার মধ্যে তার আবেশর রেশ । তবে সব নায়ক যেমন মহানায়ক হয় না তেমন সব আষাঢ়ের মেঘ যত গর্জায় তত বর্ষায় না ।
ভাদ্র মাস মল মাস ।তার কাছে কারুর কোন চাহিদা নেই ।পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতার কাছেও কোন অতিরিক্ত চাহিদা নেই । তার জন্য কোন গল্প নেই , অপেক্ষা নেই, আড়ম্বর নেই । শুধু ফাঁকটা ভরাট করা , মাসটা উতরে দেওয়া । অল্প মেক আপ নিয়ে , অল্প সংলাপে, আধা আলাপে যখন কোন কোন পার্শ্ব অভিনেতা অনবদ্য অভিনয় করে তখন হাততালি দেবারও কেউ থাকে না । ভাদ্রের মেঘে যখন বিনা আড়ম্বরে বৃষ্টি নামে লোকে গুরুত্বই দেয় না, ভাবে এর দৌড় জানা আছে ।একদিন তার ঝমঝম মূষল ধারায় ভিজে খেসারত দেয় আর দৌড় মারে । আশ্রয় পেলে পরক্ষণেই বলে ওঠে এ আর কতক্ষণ ? এক্ষুনি থেমে যাবে । জাত পার্শ্ব অভিনেতা থেমে যায় না, সে নায়ককেও দৌড় করায় এডিটিং টেবিল অবধি ।ভাদ্রের বর্ষা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে । রসিক বর্ষায় ভিজে আনন্দ পায় । প্রেমিক প্রতীক্ষায় থাকে আষাঢ়ের ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন