শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯

আমাজনে আগুন ~ সংগ্রাম চ্যাটার্জী

বোলতার চাকে ঢিলটা মেরে কথাটা ইতোমধ্যেই এসে গেছে যে— গত ক'দিন ধরে জ্বলতে থাকা আমাজন জঙ্গলের আগুন একটা সামগ্রিক চক্রান্তের পরিণতি, এবং এর পিছনে থাকতেই পারে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত NGO গুলো!
আরে! শুধু ঐ NGO গুলোই কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণে আছে! রাষ্ট্র নেই!? মানে একের পর এক দেশের শাসক শ্রেণী কর্পোরেট দ্বারা পরিচালিত নয়?!?

যাই হোক্, পরিবেশ! যে কিনা বর্তমান ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সামাজিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্র!
এক আমাজন রেইন ফরেস্ট গোটা দুনিয়ার এক পঞ্চমাংশ অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়। এ' যদি ধ্বংস হয় তাহলে গোটা পৃথিবীর ইক্যুইলিব্রিয়াম টলে যাবে!
তো? সমস্যা কার? যারা ঘটাচ্ছে?
নাহ্! সব্বার আগে মরবে গরীবস্য গরীব মানুষগুলো। পড়ে থাকবে পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষ! আর যারা নিজের হাতে ধ্বংস করছে এই ব্যবস্থা, তারা আরও অনেক অনেক মুনাফা নিয়ে আরও আরামের জীবনের দিকে পা বাড়াবে।

ভারত। আমার দেশ। 
গত পাঁচ বছর ধরে আমার দেশে রাষ্ট্রের সরাসরি মদতে পরিবেশকে কুচলে মারার কাজটা কার্যত 'বুলেট ট্রেন'-এর গতিতে চলছে!!
মধ্যভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাহাড়-জঙ্গলের ওপর পড়ছে একের পর এক কোপ! পশ্চিমঘাট থেকে শুরু করে আরাবল্লী, বিন্ধ্য— সর্বত্র জল-জমিন-জঙ্গলকে কর্পোরেটকে বেচে দেওয়া অথবা সরাসরি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ধ্বংস করার কাজটা চলছে! চলেই যাচ্ছে! সাথে এই বনাঞ্চলকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা হাজারো-লাখো মানুষের ভবিষ্যৎ আজ একটা বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে!!

চাই মুনাফা! শুধুমাত্র অতিরিক্ত মুনাফা!
মহারাষ্ট্রের বিরাট বনাঞ্চল জ্বালিয়ে দেওয়া হল, মধ্যপ্রদেশের হাজার হাজার একর জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া হল! বুলেট ট্রেনের নাম করে হাজার হাজার একর ম্যানগ্রোভ অরণ্য ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে! উত্তরাখণ্ডে প্রায় প্রতি বছর পরিকল্পিত দাবানল হচ্ছে!! হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে এলাকার পর এলাকা বেচে দেওয়া হচ্ছে কর্পোরেটকে! আরাবল্লী পাহাড় কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে!!
পরিবেশ, বর্তমান ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্র!

"একটা গাছ—একটা প্রাণ"! এই স্লোগানে গলা মিলিয়ে ঘরে ঘরে গাছ লাগিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। কারণ... 
কারণ, আপনি-আমি চাই বা না চাই এই সমস্যাটা একান্তই একটি মূলগত রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা না করে এবং রাজনৈতিক ভাবে এর শত্রুদের কোণঠাসা না করলে এই লড়াইটা জেতা যাবে না। আর, এই লড়াইটা লড়তে হবে জেতার জন্যেই।
(গাছ লাগানোর বিরোধিতা করছি— আমার এই কথা থেকে এই মানে তৈরি করবেন না দয়া করে)

সমস্যাটা যে আমার অস্তিত্বকেই নাড়া দিচ্ছে এখন— এটা আমাজন রেইন ফরেস্টের লাগাতার আগুন আরেকবার— হ্যাঁ, আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে just দেখিয়ে দিল।

আবারও লিখি— পরিবেশ, বর্তমান ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্র!

ছবিতে জ্বলন্ত আমাজন রেইন ফরেস্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন