ঢাকা পড়ে থাকা কিছু কথা॥
১৯৬৯ এ বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় ডিভিশনে পাশ করে চন্দন ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৯৭১ তে পারিবারিক পরিচিতির সূত্রে ফারুক আবদুল্লা তাকে রাজ্যের কোটায় জম্মু কাশ্মীর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান । ১৯৭৪ তে পড়া অসমাপ্ত রেখে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে আবার সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি হন ।
১৯৭৭ তে বেঙ্গল ল্যাম্প এ সেলস ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে কাজে ঢোকেন , স্নিগ্ধা ওয়াহির সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে হয়। স্নিগ্ধা হলেন ইন্ডিয়া স্টিমশিপে কাজ করা শিশির ওয়াহি'র বোন। শিশির রিটায়ার করে কলকাতা ফিরে কিছু ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। এদিকে ১৯৭৮ এ চন্দনের প্রথম কন্যা হয় এবং যেহেতু তার সংসার আলাদা ছিলো, সেও খরচ সামলানোর জন্য কিছু একটা করার কথা ভাবছিলো।
এসময় ব্রিটানিয়া বিস্কিট মুর্শিদাবাদে তাদের সেলস ফ্রাঞ্চাইজি খুঁজছিলো। শিশির ও চন্দন , "ওম্কার ট্রেডিং কোম্পানী" নামে সেই ফ্রাঞ্চাইজি নেয়। তখন বিস্কিটের বাজার ছিলো বাংলায় প্রায় ৩০ কোটির আর বৃদ্ধি ছিলো বছরে ২০ % হারে।
শিশির চন্দন একটা বিস্কিটের নিজেদের কোম্পানী খুলতে চেয়ে ১৯৭৯ তে তৈরি করলো, নিজেদের সঞ্চয়ের ৫ লাখ ক্যাপিটালের "ইস্টার্ন বিস্কিট কোম্পানি"। Durgapur Development Authority এর কাছে ৬০ বছরের জন্য জমি লিজে পেলো, SME হিসেবে ২ একর, একর প্রতি ৫০,০০০টাকায় । ৩৪,০০০ টাকা জমা দিয়ে ও বাকি টাকা ৪ টি কিস্তিতে দেবার চুক্তিতে জমির পজেসন পেলো। এসবই সরকারি নিয়মে চলছিলো। প্ল্যান্ট ডিজাইন সরকারি কর্তাদের পরামর্শ নিয়ে স্ক্রুটিণি করিয়ে জমা দেওয়া হলো আর সেভাবেই প্ল্যান্ট তৈরি এগিয়ে চললো ।
সরকারি নিয়ম মেনে WBFC এর কাছে ২৪ লাখ ব্যাংক লোনের জন্য কোম্পানী দরখাস্ত করলো। টার্ম ক্যাপিটাল ২৯ লাখ, ওয়ার্কিং ক্যাপিটল ১২ লাখ , মোট ৪১ লাখ । মার্চ, ১৯৮০ স্যাংসন হলো ১৮ লাখ, মে তে ডিসবার্স হয় ৯ লাখ। সরকারি ও ব্যাংকের নিয়মে এক SSI হিসেবে ৩,৪৫ লাখ টাকা ক্যাশ সাবসিডি ও ৭৫ হাজার টাকা সিড মানি পাওয়ার কথা। একেতো প্রোজেক্ট আর্থিক সহায়তা ৬৬ % কমিয়ে দিলো ব্যাংক তার উপর ৪,২০ লাখ টাকা আটকে রাখলো তারা।
এদিকে যখন প্ল্যান্ট অনেকটাই হয়েছে, DDA আসরে এসে জানালো প্ল্যান্ট ডিজাইনে ভুল আছে। ক্যাশ ক্রাঞ্চ এ ভুগতে থাকা একজন এন্টারপ্রেনার এর কাছে এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর হয়না ।
কিন্তু আরও বড় দুঃসংবাদ টা এলো "বিপ্লবী" যতীন ও তার সহোদর(!) সুবোধ বাবুদের দলের কাছ থেকে। আনন্দবাজার/ বর্তমান দের কাজে লাগিয়ে চন্দনের বিরুদ্ধে কুৎসা শুরু করলেন কারন তারা ভেবেছিলেন এতেই জ্যোতি বাবুকে পাঁকে নামাতে পারবেন।
মমতা দেবীর ভাইপো , হেকিম সাহেবের মেয়ে, মাঝি সাহেবের ছেলে , কাকলী দেবীর দুই ছেলের নাম সম্প্রতি আম জনতা জানতে পেরেছে ডাক্তার বলে। এর বাইরে কতো সব ""পোতিভাবান" ছেলে মেয়ে আছে এমন নেতাদের যারা ডাক্তার হয়ে বসে আছেন। কিভাবে তারা ডাক্তার হয়েছেন তার একটা নমুনা ছিলো মাঝি সাবের ছেলের পরীক্ষা নিয়ে সংবাদ ভাষ্যে।
এর বাইরে যারা আজ প্রকাশ্যে তাড়া তাড়া নোট নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে আছেন অমিত শা'র ছেলে জয় শা বা মমতা ব্যানার্জীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জী ,(এমনকি মোরারজি'র ছেলে কান্তিভাই) যাদের কড়ে আংগুল সঞ্চালনে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা লুট হয়ে যায়, যেসব পার্টির খুচরো পাড়ার নেতা ঠিক করে দেন কার কপালে কতো কাটমানি জমা পড়বে তারা ভাবতেই পারবে না সর্ব শক্তিমান মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে ২০/ ২৫ লাখ টাকার সংস্থান না করতে পারার জন্য আর DDA /WBFC স্তরের কিছু পুঁটি অফিসারের বিরোধিতার জন্য এক নবীন এন্টারপ্রেনার তার সঞ্চয় জলে ফেলে বাড়ি চলে এলো।
জ্যোতিবাবুকে কিছু বলতে হতো না , শুধুই জয়কৃষ্ণ বাবু এদের কাউকে দেখে না হাসলেই যখন চন্দন হার্ডল মুক্ত হতে পারতো সেখানে সেটুকু মাত্র এঁরা করেননি।
আনন্দবাজার/ বর্তমান এবং যতীন/সুবোধ চক্র এক নবীন এন্টারপ্রেনার কে ধংস করতে চেয়েছিলেন ।
চন্দন তাই বলেছিলেন, আমার অপরাধ ছিলো আমি জ্যোতি বসুর মতো এক রাজনীতিকের ছেলে হয়ে জন্মেছিলাম তাও আবার এই বাংলায়।
জ্যোতিবাবুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁর ছেলেকে নিয়ে কেনো লিখলাম ?
উপসংহার টা হলো , জ্যোতি বাবুর এই ঋজু ও সততাকে কোনও মতে ঢাকা দেওয়া যাবে না "মমতা সততা শাড়ি"র ঢক্কানিনাদে॥ জ্যোতিবাবু তাঁর পরিবারের ক্ষেত্রেও সৎ জীবন কাটিয়েছেন॥
জ্যোতিবাবু / বুদ্ধবাবুর ব্যক্তি সততার ক্ষেত্রে পায়ের নখের যোগ্য নন তাঁদের সমালোচকেরা ॥ রাজনীতির সমালোচকরা রাজনীতির সমালোচনা করুন কিন্তু ব্যক্তিগত সততার প্রশ্নে কিছু বলার আগে নিজের দিকে তাকান ॥
কৃতজ্ঞতা : জ্যোতির্ময় হাজরা দা
তিনি নেই, তাঁর ছড়িয়ে যাওয়া মণিমানিক্য গুলো আছে!❤❤
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন