এই যে এক চিলতে ঘর দেখছেন, এ আমার লন্ডন এর দুদিনের ঠিকানা। মেয়েটির নাম ধরে নিন শায়না, কেরালার পালাক্কাদ এর মেয়ে। বাবা মুটে মজুরী করেন, মা ও। একটা ভাই একটা বোন, ছোটো। এক বছর আগে ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি তে Data Science পড়তে এসেছিলো কেরালা সরকারের স্কলারশিপ এ। স্কলারশিপ এ কোর্স ফি হয়ে যায়, কিন্তু থাকা খাওয়া? সপ্তাহে ৩ দিন Mcdonalds এ কাজ করে ও, ৬ ঘন্টা ৩ দিন। সপ্তাহে ১৮ ঘন্টার বেশি কাজের অনুমতি নেই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস দের। তাতে থাকা খাওয়া চলে যায়, চলে যাওয়ার মতোই। এই দু তলার ১০x১০ ঘরের মাসিক ভাড়া ৬০০ পাউন্ড, ভারতীয় মুদ্রায় ৬০,০০০ টাকা। ফ্যান নেই, ফ্যান এর টাকা আলাদা, এই মুহূর্তে ফ্যান কেনার টাকা নেই শায়নার, তাই ৩০-৩১° সেলসিয়াসে কখনো ভেজা তোয়ালে, কখনো ভেজা জামা সম্বল। যদিও এসব ভাবার সময় নেই ওর, সামনেই dissertation, তারপরে একটা চাকরি, শাটোর্ধ মা কে আর মাল বইতে দেবে না শায়না।
শায়না একা নয় গোটা লন্ডন জুড়ে কয়েক লক্ষ ভারতীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার ওয়ার্কিং স্টুডেন্টস দের দেখা মিলবে। কেউ ফাস্ট ফুড সেন্টার, ডেলিভারি ওয়ার্কার, ভালো জীবন এর লড়াই ক্লান্তিহীন দৌড়। গত বছরই SFI United Kingdom সার্ভে করেছ, উঠে এসেছে এমন নানা তথ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর MP দের কাছে রুম রেন্ট কন্ট্রোল এর আবেদন ও করেছে ওরা।
শায়না গল্প করছিলো, ফ্লাইট এ টিকিট কাটার পয়সা ছিলো না ওর, বন্ধুরা ধার করে ভিসা, কোর্স এর ডাউন পেমেন্ট দিয়েছিলো, কিন্তু টিকিট হবে কি করে? SFI UK এর বিশাল দায়িত্ব নিলো, এখানকার কমরেড দের সাথে নিয়ে চাঁদা করে টিকিট কাটা হোলো শায়নার। স্বপ্ন উড়ান।
আপাতত শায়না দের স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াই এ অনেকটা পথ হাঁটা বাকি, লড়াই বাকি অনেকটা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন