সুমিত সাউয়ের বয়স ১৯ বছর। শালকিয়ার বাসিন্দা। বাড়িতে বাবা, মা আর দুই বোন। সুমিতের বাবা পেশায় গাড়ির ড্রাইভার। সুমিত কার্যত বেকার, মাঝেমধ্যে বাবার গাড়ির খালাসি। অল্পশিক্ষিত, কর্মহীন।
সুমিতের মা জানাচ্ছেন সুমিত ২০২১এর পর থেকে বিজেপির মিছিলে যেত। তার আগে তৃনমূলের মিছিলে যেত। মিছিলে গেলে টাকা পেত।
সুমিত রামনবমীর মিছিলে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মিছিল করায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে ৭ বছরের জেল হবে। জেল থেকে বেরিয়ে সুমিতের এমনিতেই কঠিন জীবনসংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে যাবে। বা সুমিত চিরকালের জন্য অপরাধের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাবে।
আর মিডিয়াতে দুই দলের, ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকায় ভারতের ধনীতম দুই দলের, পরস্পর দোষারোপের চাপান-উতোরে হারিয়ে যাবে আসল কথাটা, যে এই দুই দলই সুমিতের মতো অসংখ্য যুবকের জীবনে এই অন্ধকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য দায়ী।
যে নেতারা ওকে মিছিলে গেলে হাতে টাকা গুঁজে দিত, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরিয়ে দিত, তাদের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা, তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবৃত্তের লোকেরা কেউ এই মিছিলগুলোতে হাঁটে না। তাদের আগ্নেয়াস্ত্র তো দূর, কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা হাতেও কখনও রাস্তায় দেখা যায় না।
তারা নামীদামী স্কুলে, কলেজে, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, কর্পোরেট অফিসে বা নিজের ব্যবসায়ে নিজেদের জীবনে বেশ নির্ঝঞ্ঝাট আরামে আছে।
চিরকালই দক্ষিণপন্থী দলগুলো এভাবেই প্রান্তিক মানুষদের অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার সুযোগ নিয়ে, হাতে সামান্য কিছু পয়সা গুঁজে দিয়ে, নিজেদের নোংরা রাজনৈতিক খেলায় বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করেছে।
ঐতিহাসিকভাবে চল্লিশের দশকের কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া, এই উপমহাদেশে বরাবরই এটা হয়ে এসেছে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির ফুটসোলজার সবসময়েই "নীচু তলার" লোকজন। "উঁচু তলা" চিরকালই তাদের উস্কানি দিয়ে, সামান্য কিছু পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে, নানারকম অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহার করে গেছে।
এই প্রসঙ্গে জয়দেব বসু একটা কবিতা লিখেছিলেন:
১
রামা বাউড়ি আর রহিম শেখ,
খায়না শুয়োর কিংবা গরু,
বানভাসি হয়, খরায় খাক,
জলে বিষ আর রাস্তা সরু।
এ ওর বন্ধু, শত্রু এর ও,
মাস্কেট আর মিলাদ-পুজোও,
এর মেয়ে ওঠে ক্লাস টেনে আর
ওর ছেলে পায় শহরে সুযোগ।
গ্রামে থাকে এরা, পঞ্চায়েতে...
২
রাম মুখার্জি, রহমত আলী,
পার্টনার এঁরা বেঙ্গল ক্লাবে,
বিফ স্টেক আর রোস্টেড পর্ক
আজ রাত্তিরে ডিনারে খাবেন।
বন্ধু দু'জন ক্লাব থেকে ফিরে,
টাকা পাঠাবেন দুই গোষ্ঠীকে,
এর ছেলে ভাবে ওর সাথে শুই,
ওর মেয়ে ভাবে 'চল মস্তিতে'!
শহরের লোক, মন চায় এতে...
৩
সেই চাঁদাতেই মাস্কেট কেনা,
সেই চাঁদাতেই রক্তের দেনা...
[Agnibesh Roy আর Arijit Mukherjee-র সৌজন্যে]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন