সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে ~ অর্ক ভাদুরী

Md Ismail

সোহরাওয়র্দী সবেমাত্র ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে ঘোষণা করেছেন। ১৯৪৬ সাল। গোটা কলকাতা শহর রক্তে ভাসছে। একদিকে মুসলিম গার্ড আর উল্টোদিকে গোপাল পাঁঠার দলবল দখল নিয়েছে গলি থেকে রাজপথ। শহর ছাড়িয়ে দাঙ্গার আগুন ছুঁয়ে ফেলছে গ্রাম-মফস্বল। বাড়িঘর ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। এর মধ্যেই সম্প্রীতির পাঁচিল তুলে দাঁড়াল কমিউনিস্টরা। দাঙ্গাবাজদের চোখে চোখ রেখে প্রতিরোধ করলেন ট্রাম শ্রমিক আন্দোলনের নেতা মহম্মদ ইসমাইল।

সামরিক পরিভাষায় যাকে ফায়ার পাওয়ার বলে, সেই ফায়ার পাওয়ার অনেক বেশি ছিল দাঙ্গাবাজদের।তাদের ছিল পেট্রল বোমা আর এই গরীব মানুষগুলোর সম্বল ছিল জেদ। মুসলিম গার্ডের দাঙ্গাবাজদের সেদিনের লক্ষ্য ছিল ভিক্টোরিয়া কলেজের নিরস্ত্র ছাত্রীরা। তাদের চোখে মুখে খুন ,ধর্ষণ লুটপাটের প্রবৃত্তি সুস্পষ্ট।
মহম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বেই সেদিন মধ্য-কলকাতা অঞ্চলের শ্রমিকরা, মজুর, কলাবাগান বস্তির মহিলারা, ঘরোয়া হাতা-খুন্তি বেলনা আর লাঠি, বেলচা নিয়ে এদের আটকে দেন। এক ঘন্টার লড়াই, স্রেফ ইট এবং খেটো লাঠি নিয়ে সোহরাওয়ার্দীর বাহিনীর মহড়া নিলেন শ্রমিকরা। সংখ্যায় বেশি হয়েও শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে লেজ গুটিয়ে পালায় দাঙ্গাবাজরা। 

এতক্ষণ পড়ে কি মনে হল , ক্লাসিক টেল অফ ডেভিড ভার্সেস গোলাইয়াথ ?
মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।সেদিন বাজপাখির সামনে পাজামা ভিজিয়ে ফেলেছিল রাজাবাজারের কুখ্যাত ডন। তিনদিন তিনরাত ছাত্রীদের আগলে রাখার পর যেদিন পুলিশের হাতে তাদের নিরাপদে তুলে দেওয়ার পালা এল সেদিন এক যুবক ব্রিটিশ অফিসার সেই শ্রমিকদের একজনকে প্রশ্ন করেন যে কোন অসম সাহসে তাঁরা এভাবে দুর্গের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন ....

শ্রমিকটির উত্তর ছিল ; " উও সুরখী ঝান্ডা দেখ রাহে হ্যায় সাহাব , উও সুরখী ঝান্ডা জব একবার উড়তা হ্যায় না তব উসকো উতারনা নামুনকিন হ্যায় "
বাজপাখির ডানা সেদিন আগলে রেখেছিল বাংলার সম্প্রীতি । 'সুরখী ঝান্ডা' অর্থাৎ লাল পতাকাকে টেনে নামানোর সাহস হয়নি ওদের ।

পাঁঠা হোক বা শুয়োর , প্যাদানি খাওয়ার ওয়ার্দী যে , তাকে কখনো রেয়াত করেনি এই 'সুরখী ঝান্ডা'।
সেই মাস্তানির উত্তরাধিকার আজও শিরায় উপশিরায় প্রবাহিত।

কৃতজ্ঞতা : 
*সাংবাদিক অর্ক ভাদুড়ির ফেসবুক পোস্ট
*ছেচল্লিশ এর দাঙ্গায় ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা/সাধন ব্যানার্জি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন