"সবচেয়ে বেশি জোরে কেঁদেছিলেন হারুর ঠাকুরমা। তিনি আবার কানে শোনেন কিছু কম।তাঁকে সবাই জিজ্ঞেস করল, "আপনি এত কাঁদছিলেন কেন?" তিনি বললেন, "আমি কি অত জানি? দেখলুম ঝিয়েরা কাঁদছে, বৌমা কাঁদছে, তাই আমিও কাঁদতে লাগলুম—ভাবলুম একটা কিছু হয়ে থাকবে।"
অতএব হারুর ঠাকুরমার দেশপ্রেম পেলো। এবার জেএনইউ তে পেলো। দেশপ্রেম বড়ই অমূল্য। রেখে ঢেকে খরচা করতে হয়। তাও সবসময় আবার দেশপ্রেম পায় না। মহারাষ্ট্রে কৃষক মরলে পায় না। কন্যাভ্রূণ হত্যা হলে পায় না। লেবার ল রিফর্ম হলে পায় না। ৪৪২ জন কোটিপতি সাংসদ মিলে দৈনিক ২৫ টাকায় 'বিলো প্রভাটির' লক্ষণরেখা টেনে দিলে পায় না। রেভিনিউ ফোরগোন'র নামে কর্পোরেটদের ৬৮,৭১০ কোটি টাকার ট্যাক্স ছাড় দিলে পায় না। কৃষি 'সেস' বসলে পায় না। 'ক্লিন এনভায়ারোমেন্ট সেস' দ্বিগুণ হলে পায় না। প্রত্যক্ষ করে সরকার ১০৬০ কোটি টাকা আয় কমিয়ে পরোক্ষ করে ২০ হাজার বেশী আয়ের কোপ জনসাধারণের উপর চাপালেও পায় না। কিন্তু সিয়াচেনে সৈনিক মরলে পায়। ক্রিকেট মাঠে জাতীয় সঙ্গীত বাজলে পায়। ১৫'ই অগাস্ট দুপুরে টিভি'তে রোজা সিনেমা দেখলে পায়। পি-এফ'এ ট্যাক্স বসলে পায়। মাঝে মাঝে গোবর আর ঘুঁটেতেও পায়।
কিন্তু আম ছাড়া আবার আমাশা হয় না। একটি সংবাদ সংস্থার 'মুড অফ দ্য নেশন' সমীক্ষায় বলছে ২০১৪'য় নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করতেন ৫৭% মানুষ, ২০১৬ সালে তা ৪০%৷ ৫১% জানিয়েছেন মোদীর আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা একই থেকে গেছে কিংবা আরও খারাপ হয়েছে৷ ৫৮%'র মতে মোদী সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ৷মূল্যবৃদ্ধি এখন ৫ .৬৯ শতাংশ। এই সরকার যেদিন শপথ নেয়, সেদিন সেনসেক্সের সূচক ছিল ২৪৫৫০৷ এই মুহূর্তে ২৩০০০। বিহার-দিল্লী ছাড়ুন। গুজরাট ও ছত্তিসগড়ে তো খাঁটি দেশপ্রেমের চাষ হয়। সেখানেও পৌরনির্বাচনে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বণ্টনকারীদের শক্তি কমেছে৷ উত্তরপ্রদেশে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রে বিজেপি ৫৮টির মধ্যে ৫০টিতেই হেরেছে৷ এবং গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিং'র কেন্দ্রে ২৮টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে৷
লাজুক মধুচন্দ্রিমা কাটলে আগে দাঙ্গা পেত। কনটেম্পোরারি সময়ের লেটেস্ট ফ্যাশন -এখন দেশপ্রেম পায়।
আরএসএস'র প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের 'ফ্রেন্ড ফিলজফার অ্যান্ড গাইড', বালকৃষ্ণ শিবরাম মুঞ্জে ১৯৩১'এ মুসলিনির সাথে সাক্ষাৎ করতে ইতালি যান। সেখানে তিনি ফ্যাসিস্ট অ্যাকাডেমি পরিদর্শন করে লেখেন, "আমি অভিভূত। প্রতিটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিকাশমান জাতির এই রকম ফ্যাসিস্ট সংগঠনই প্রয়োজন।" অতএব সঙ্ঘে প্রবর্তন হয় ৬-১৮ বছরের বালকদের প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থী উগ্র দেশপ্রেমে মগজধোলাই। পরে গোলওয়ালকার হিটলারের ইহুদি নিধন যজ্ঞের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছিলেন "জাতিগোষ্ঠীর শুদ্ধতা রক্ষা করতে জার্মানি দেশটাকে সেমেটিক জাতিভুক্ত ইহুদিদের ক্লেদ মুক্ত করেছিলো।" এখন অবশ্য প্রকাশ্যে এই দেশপ্রেমী'দের আর হিটলার-মুসলিনি পায় না। স্তালিন-ক্রুশচেভ পায়। গান্ধী পায়। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল পায়। সেই গান্ধী, সেই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, যিনি ১৯৪৮'র ১১ই সেপ্টেম্বর চিঠি তে লিখেছিলেন "সঙ্ঘের নেতাদের বিষাক্ত ভাষণের জন্য গান্ধী কে হত্যা করা হয়েছে। আর সঙ্ঘের অনুগামীরা তা উৎযাপন করতে মিষ্টি বিতরণ করছে।"
জেএনইউ'র মত সেটাও ছিল ফেব্রুয়ারি। ২৭'এ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩। জার্মানির বিলাসবহুল হেরেন ক্লাবে ভাইস চ্যান্সেলর ফন পাপেন তখন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের হাতে তুলে দিচ্ছেন দুর্লভ বিদেশী মাদকের স্বর্ণাভ সুরাপাত্র। অন্যদিকে গোয়েবলসের প্রাসাদে, গ্রামাফোনের মৃদুমন্দ আবহসঙ্গীতের সিম্ফনি তে মোহিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কর্পোরাল হিটলার, তাঁর গুণমুগ্ধ স্তাবকদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারে সম্মোহনী পরিকল্পনার রূপরেখা বর্ণনা করছেন। রাত তখন ১১, ক্রমশ লাস্যময়ী, প্রথম ফোনটা এলো হানফস্টাঙ্গেলের কাছ থেকে। 'রাইখস্ট্যাগে আগুন লেগেছে'। ফুয়েরার কে নিয়ে ঝড়ের গতিতে রাইখস্ট্যাগে পৌঁছে গেলেন গোয়েবলস। নিমেষে সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলেন। ফুয়েরার গোটা বিশ্ব কে জানিয়ে দিলেন 'এই কাজ অবশ্যই কমিউনিস্টদের'। গেস্টাপো-চিফ রুডলফের উদ্দেশ্যে গোয়েরিং'র চিৎকার করে 'অ্যাডমিনিসট্রেটিভ ডায়রেক্টিভস', "আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা নয়। কোন ক্ষমা নয়। প্রতিটি কমিউনিস্ট কে এক্ষুনি গুলি করে মারতে হবে।"
রাইখস্ট্যাগের আগুনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা অবশ্য আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু গুলি সেদিন চলেছিল। ঝাঁঝরা হয়ে কমিউনিস্টরা মরেও ছিল। তবুও, তবুও, আজও, কানহাইয়ারা জন্মাচ্ছে, কানহাইয়ারা জন্মেছে, কানহাইয়ারা জন্মাবে...
অতএব হারুর ঠাকুরমার দেশপ্রেম পেলো। এবার জেএনইউ তে পেলো। দেশপ্রেম বড়ই অমূল্য। রেখে ঢেকে খরচা করতে হয়। তাও সবসময় আবার দেশপ্রেম পায় না। মহারাষ্ট্রে কৃষক মরলে পায় না। কন্যাভ্রূণ হত্যা হলে পায় না। লেবার ল রিফর্ম হলে পায় না। ৪৪২ জন কোটিপতি সাংসদ মিলে দৈনিক ২৫ টাকায় 'বিলো প্রভাটির' লক্ষণরেখা টেনে দিলে পায় না। রেভিনিউ ফোরগোন'র নামে কর্পোরেটদের ৬৮,৭১০ কোটি টাকার ট্যাক্স ছাড় দিলে পায় না। কৃষি 'সেস' বসলে পায় না। 'ক্লিন এনভায়ারোমেন্ট সেস' দ্বিগুণ হলে পায় না। প্রত্যক্ষ করে সরকার ১০৬০ কোটি টাকা আয় কমিয়ে পরোক্ষ করে ২০ হাজার বেশী আয়ের কোপ জনসাধারণের উপর চাপালেও পায় না। কিন্তু সিয়াচেনে সৈনিক মরলে পায়। ক্রিকেট মাঠে জাতীয় সঙ্গীত বাজলে পায়। ১৫'ই অগাস্ট দুপুরে টিভি'তে রোজা সিনেমা দেখলে পায়। পি-এফ'এ ট্যাক্স বসলে পায়। মাঝে মাঝে গোবর আর ঘুঁটেতেও পায়।
কিন্তু আম ছাড়া আবার আমাশা হয় না। একটি সংবাদ সংস্থার 'মুড অফ দ্য নেশন' সমীক্ষায় বলছে ২০১৪'য় নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করতেন ৫৭% মানুষ, ২০১৬ সালে তা ৪০%৷ ৫১% জানিয়েছেন মোদীর আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা একই থেকে গেছে কিংবা আরও খারাপ হয়েছে৷ ৫৮%'র মতে মোদী সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ৷মূল্যবৃদ্ধি এখন ৫ .৬৯ শতাংশ। এই সরকার যেদিন শপথ নেয়, সেদিন সেনসেক্সের সূচক ছিল ২৪৫৫০৷ এই মুহূর্তে ২৩০০০। বিহার-দিল্লী ছাড়ুন। গুজরাট ও ছত্তিসগড়ে তো খাঁটি দেশপ্রেমের চাষ হয়। সেখানেও পৌরনির্বাচনে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বণ্টনকারীদের শক্তি কমেছে৷ উত্তরপ্রদেশে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রে বিজেপি ৫৮টির মধ্যে ৫০টিতেই হেরেছে৷ এবং গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিং'র কেন্দ্রে ২৮টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে৷
লাজুক মধুচন্দ্রিমা কাটলে আগে দাঙ্গা পেত। কনটেম্পোরারি সময়ের লেটেস্ট ফ্যাশন -এখন দেশপ্রেম পায়।
আরএসএস'র প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের 'ফ্রেন্ড ফিলজফার অ্যান্ড গাইড', বালকৃষ্ণ শিবরাম মুঞ্জে ১৯৩১'এ মুসলিনির সাথে সাক্ষাৎ করতে ইতালি যান। সেখানে তিনি ফ্যাসিস্ট অ্যাকাডেমি পরিদর্শন করে লেখেন, "আমি অভিভূত। প্রতিটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিকাশমান জাতির এই রকম ফ্যাসিস্ট সংগঠনই প্রয়োজন।" অতএব সঙ্ঘে প্রবর্তন হয় ৬-১৮ বছরের বালকদের প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থী উগ্র দেশপ্রেমে মগজধোলাই। পরে গোলওয়ালকার হিটলারের ইহুদি নিধন যজ্ঞের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছিলেন "জাতিগোষ্ঠীর শুদ্ধতা রক্ষা করতে জার্মানি দেশটাকে সেমেটিক জাতিভুক্ত ইহুদিদের ক্লেদ মুক্ত করেছিলো।" এখন অবশ্য প্রকাশ্যে এই দেশপ্রেমী'দের আর হিটলার-মুসলিনি পায় না। স্তালিন-ক্রুশচেভ পায়। গান্ধী পায়। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল পায়। সেই গান্ধী, সেই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, যিনি ১৯৪৮'র ১১ই সেপ্টেম্বর চিঠি তে লিখেছিলেন "সঙ্ঘের নেতাদের বিষাক্ত ভাষণের জন্য গান্ধী কে হত্যা করা হয়েছে। আর সঙ্ঘের অনুগামীরা তা উৎযাপন করতে মিষ্টি বিতরণ করছে।"
জেএনইউ'র মত সেটাও ছিল ফেব্রুয়ারি। ২৭'এ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩। জার্মানির বিলাসবহুল হেরেন ক্লাবে ভাইস চ্যান্সেলর ফন পাপেন তখন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের হাতে তুলে দিচ্ছেন দুর্লভ বিদেশী মাদকের স্বর্ণাভ সুরাপাত্র। অন্যদিকে গোয়েবলসের প্রাসাদে, গ্রামাফোনের মৃদুমন্দ আবহসঙ্গীতের সিম্ফনি তে মোহিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কর্পোরাল হিটলার, তাঁর গুণমুগ্ধ স্তাবকদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারে সম্মোহনী পরিকল্পনার রূপরেখা বর্ণনা করছেন। রাত তখন ১১, ক্রমশ লাস্যময়ী, প্রথম ফোনটা এলো হানফস্টাঙ্গেলের কাছ থেকে। 'রাইখস্ট্যাগে আগুন লেগেছে'। ফুয়েরার কে নিয়ে ঝড়ের গতিতে রাইখস্ট্যাগে পৌঁছে গেলেন গোয়েবলস। নিমেষে সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলেন। ফুয়েরার গোটা বিশ্ব কে জানিয়ে দিলেন 'এই কাজ অবশ্যই কমিউনিস্টদের'। গেস্টাপো-চিফ রুডলফের উদ্দেশ্যে গোয়েরিং'র চিৎকার করে 'অ্যাডমিনিসট্রেটিভ ডায়রেক্টিভস', "আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা নয়। কোন ক্ষমা নয়। প্রতিটি কমিউনিস্ট কে এক্ষুনি গুলি করে মারতে হবে।"
রাইখস্ট্যাগের আগুনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা অবশ্য আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু গুলি সেদিন চলেছিল। ঝাঁঝরা হয়ে কমিউনিস্টরা মরেও ছিল। তবুও, তবুও, আজও, কানহাইয়ারা জন্মাচ্ছে, কানহাইয়ারা জন্মেছে, কানহাইয়ারা জন্মাবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন