শুক্রবার, ৯ জুন, ২০১৭

বুদ্ধিজীবী ~ কণিষ্ক ভট্টাচার্য

পিয়ের ক্যুরি ছিলেন ফরাসি ফিজিসিস্ট। ক্রিস্টালোগ্রাফি, রেডিয়েশন বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। রেডিয়েশন নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার পান অরি বেক্যুইরেল আর মারিয়া সালোমেয়া স্ক্লোডোস্কার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে। 

স্লাভিক স্ক্লোডোস্কারা থাকতেন পোল্যান্ডে। মারিয়া সালোমেয়া স্ক্লোডোস্কা পোল্যান্ড থেকে প্যারিস ইউনিভার্সিটিকে পড়তে এসে পিয়ের এর সঙ্গে আলাপ। পরে প্রেম ও বিয়ে। এবং অবশ্যই যৌথ গবেষণা। নোবেল পাওয়ার সময় তার নাম মেরি ক্যুরি।

মাত্র ৪৬ বছর বয়েসে পিয়ের এর মৃত্যু হয় নোবেল পাওয়ার তিন বছর পরে। মারিয়া সালোমেয়া স্ক্লোডোস্কা ক্যুরির গবেষণা কিন্তু থামেনি। তিনি প্রথম নারী যিনি নোবেল পান এবং একমাত্র নারী যিনি দুবার নোবেল পুরস্কার পান। প্রথম বার ফিজিক্সে দ্বিতীয় বার কেমিস্ট্রিতে। রেডিয়াম, পলোনিয়াম, রেডন, থোরিয়াম আবিষ্কারের জন্য। 

পিয়ের আর মেরির দুটি মেয়ে। নাম আইরিন আর ইভ। ছোটো মেয়ে ইভ সঙ্গীতজ্ঞা। বড়ো মেয়ে আইরিন হলেন কেমিস্ট্রি গবেষক। বিয়ে করলেন ফরাসি ফিজিসিস্ট জাঁ ফেড্রিক জোলিয়টকে। আইরিন - জোলি পরমাণুর গঠন আর আর্টিফিশিয়াল রেডিও অ্যাক্টিভিটির ওপরে কাজ করার জন্য ১৯৩৫ সালে নোবেল পান। 

এর আগেই ১৯৩৩ সালে প্রগতিশীল সব কথা বলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমেই জার্মানির ক্ষমতায় এসেছে অ্যাডলফ হিটলার। সেই সময়ে বিজ্ঞানীদের কাজকর্ম নিয়ে রাজনীতিকরা তেমন ভাবত না আর বিজ্ঞানীরাও রাজনীতি নিয়ে তত মাথা ঘামাননি। কিন্তু হিটলারের উত্থানের পপর দেখা গেল তথাকথিত "আর্য রক্তের বিশুদ্ধতা", 'ইহুদী চরম শত্রু" ইত্যাদি কথা বলে আইনস্টাইন থেকে শুরু করে সব বিজ্ঞানীদের দেশ ছাড়া করল। তখনই এই বুদ্ধিজীবী সমাজ রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হয়ে পড়লেন। বুঝলেন যে পক্ষ না নিলে গতি নেই।

সেই সময়ে জার্মানির বহু বুদ্ধিজীবী হয় উদ্বাহু হয়ে 'আহা হিটলার, বাহা হিটলার' করলেন, না হয় বালিতে চোখ গুঁজে ''আমি কিন্তু কিচ্ছু দেখতে পাইনি'' ভাব করে চুপ করে থাকলেন। আরেকদল নানা কুযুক্তিতে অতীত ইতিহাস টেনে এনে এই অমানবিকতাকে জাস্টিফাই করতে লাগলেন। মুখ লুকিয়ে ফ্যাসিবাদের দালালি করলেন। আর বিরোধী ...। বিরোধীদের জন্য ছিল হিটলারের দলীয় হিংস্র বাহিনির হাতে চূড়ান্ত অত্যাচারিত হয়ে অবধারিত মৃত্যু।

কিন্তু গণতান্ত্রিক পথে প্রগতিশীল কথা বলে স্বৈরতন্ত্র এলেও সাধারণত তা গণতান্ত্রিক পথে যায় না। কারণ স্বৈরতন্ত্র গণতন্ত্রের, প্রতিবাদের কোনও স্পেস তার রাস্ট্রে রাখে না। ফলে যারা হিটলারের জন্য নৃত্য করেছিল, হিটলারের অমানবিকতাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কুযুক্তিতে। কিংবা চুপ করে ছিলেন তাঁদের সবার স্থান হয়েছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, গ্যাস চেম্বারে। হিটলার প্রয়োজন মত স্তাবকদের ব্যবহার করলেও, তাঁদের কাজ ফুরোতেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।

হিটলারের বাহিনি প্যারিস ঘিরে ফেলার সময়ে নোবেল লরিয়েট দম্পতি আইরিন ক্যুরি আর ফেড্রিক জোলিয়ট কিন্তু প্যারিসের মুক্তি বাহিনির সঙ্গে হাতে মেশিন গান নিয়ে হিটলারের বাহিনির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে দ্বিধা করেনি। সরাসরি স্ট্রিট ফাইট যাকে বলে তাই করেছেন দুজন নোবেল লরিয়েট। রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে। বুদ্ধিজীবী বলতে এঁদেরই বুঝি।

০৯-০৭-২০১৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন