ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রথম অ্যাসিড টেস্টঃ হিন্দু কোড বিল।
স্বাধীনতার পর গণপরিষদের অন্যতম বড় টাস্ক ছিল হিন্দু বিবাহ ও সম্পত্তি আইনের কোডিফিকেশন, একীকরণ ও সংস্কার । বি এন রাউ এর করা খসড়া-র রিভিশনের ভার পড়ে সিলেক্ট কমিটির হাতে, যার মাথায় ছিলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী বাবাসাহেব আম্বেদকর ।
নতুন আইনের অন্যতম সূচীমুখ ছিল- স্বামী বা পিতার সম্পত্তিতে স্ত্রী ও কন্যার অধিকার, সেপারেটেড স্ত্রীর খোরপোষের অধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ এর অধিকার, সকল প্রকার ইন্টারকাস্ট বিবাহের অধিকার, সন্তান দত্তকের অধিকার, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি ।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হয়তো মনে হবে, এগুলো খুবই মিনিমাম দাবী, এটা তো সাধারণ অধিকার, এ নিয়ে এত মাতামাতির কী হল ? কিন্তু আজ থেকে সত্তর বছর আগে ব্যাপারটা মোটেই সহজ হয়নি । ব্রাহ্মন্যবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজপতিরা মেয়েদের এইটুকু অধিকার দিতেও রাজী হচ্ছিল না । পেছনে যুক্তি কী ছিল ? সতীদাহ, বিধবাবিবাহ থেকে শুরু করে শবরীমালা অবধি এদের যে দাবী, হিন্দু কোড বিলের ক্ষেত্রেও তাই ছিল- "ট্র্যাডিশন" । যদিও বাবাসাহেব প্রথমেই এদের সঙ্গে অফেন্স এ যাননি, বরং প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র থেকে রেফারেন্স টেনে এনে দেখাতে চেয়েছিলেন যে শাস্ত্রে স্ত্রীকে পুরুষের দাসী বানানোর কথা বলা হয়নি । এইভাবে বাবাসাহেব আসলে রামমোহন বা বিদ্যাসাগরের পথই ফলো করছিলেন, তবে তাতে করে ব্রাহ্মন্যবাদীদের টলানো যায়না, যায়নি ।


কোড বিল বিরোধী বিক্ষোভের মাথা ছিলেন আরেক ভন্ড সাধু, স্বামী কর্পাত্রি মহারাজ । তিনি আরএসএস ও অন্যান্য সংগঠনের উদ্যোগে দেশজুড়ে উস্কানি দিয়ে বেড়ালেন । দাঙ্গা হাঙ্গামার হুমকি দিলেন । দেশ ভেঙ্গে টুকরো করার হুমকি দিলেন । রাষ্ট্রপতির চেয়ার নিশ্চিত হওয়ার পর মাঠে নেমে পড়লেন বাবুজীও, বললেন তিনি এই বিলে সই করবেন না । এই জায়গায় পিনারাই বিজয়ন থাকলে হয়তো আরএসএস-জনসঙ্ঘ নেতাদের স্ত্রীদের দিয়ে ডিভোর্স করিয়ে নিতেন, জ্যোতি বসু থাকলে দলের লোকজন দিয়ে এসব ভন্ড সাধুদের তুলিয়ে হিমালয়ে দিয়ে আসতেন, কিন্তু নেহরুর ততোটা জোর তখনও ছিল না । শশী থারুরের মতো ওনারও লিবেরাল জহরকোটের আড়ালে ভোটব্যাঙ্ক নির্ভর পলিটিশিয়ানের কম্পমান হৃদয় ছিল । উনিও আর ভোটের আগে এই নিয়ে এগোলেন না । অপমানিত, ভগ্নহৃদয় হয়ে বাবাসাহেব আম্বেদকর পদত্যাগ করলেন ।
তবে নেহরু আর যাই হোক, শশী থারুর নন । নির্বাচনী প্রচারে বারবার করে হিন্দু কোড বিলের কথা উনি তুলেছিলেন দেশজুড়ে । সমর্থন চেয়েছিলেন, যাতে প্রথম পার্লামেন্ট এ বিল পাশ করা যায় । তার বিরুদ্ধে এলাহাবাদ আসনে জনসঙ্ঘ-রামরাজ্য পরিষদ- হিন্দু মহাসভা যৌথ প্রার্থী করেছিল কোড বিল বিরোধী হাঙ্গামার অন্যতম নায়ক প্রভুদত্ত ব্রহ্মচারীকে । সেই আসনে নেহরু বিপুল ভোটে জয়ী হন । দ্বিতীয় হয়েছিলেন কৃষক মজদুর প্রজা পার্টির প্রার্থী বংশীলাল । ব্রহ্মচারী ফুটে যান ।
প্রথম লোকসভায় হিন্দু কোড বিল চার খন্ডে ভাগ হয়ে পাশ হয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন