তামিলনাড়ুর থুত্থুকুডিতে সতেরো জন বিক্ষোভকারীকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে খুন করলো পুলিশ। তারা বেদান্তর স্টারলাইট তামা কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এলাকার জল বায়ুতে ব্যাপক দূষণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একবার জরিমানা করেছিল স্টারলাইটকে। তখন থেকে বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল যে কারখানা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই দাবি দশ বছর ধরে করেও কোনো ফল হয়নি। তাই গত একশো দিন ধরে ধর্নায় বসেছিলেন এলাকার মানুষ, আজকে তারা মিছিল করে জেলা শাসকের অফিসের দিকে যেতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।
এই সেই বেদান্ত, যারা ওড়িশার নিয়ামগীরীতে, খনন করার জন্য হাজার হাজার আদিবাসীকে ভিটে মাটি ছাড়া করার চেষ্টা করেছিল। আদিবাসীরা প্রতিবাদ করলে, তাদের মাওবাদী আখ্যা দিয়ে অকথ্য অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল পুলিশ। শেষ অবধি সব অত্যাচার প্রলোভন উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হয় কোঁধ উপজাতির আদিবাসীরা, প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য হয় বেদান্ত। রিয়্যাল লাইফ "Avatar."
এই সেই বেদান্ত, যাঁরা মাত্র ৫০৭ কোটি টাকা দিয়ে, কেন্দ্র সরকারের লাভজনক সংস্থা ব্যালকোকে কিনেছিলো বাজপেয়ী সরকারের কুখ্যাত "বিলগ্নিকরণ"-এর আমলে। তার বিরুদ্ধে লাগাতার ধর্মঘট করেছিল শ্রমিকরা, লড়াই করেছিল ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগী। লাভ হয়নি, লোকসভায় পাশ হয়ে যায় বিল। একাধিক একাউন্ট্যান্টের মতে যে কোম্পানির দাম হওয়া উচিত ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, সেই কোম্পানির দাম মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা ধার্য করে ৫১ শতাংশ শেয়ার ৫০৭ কোটি টাকায় বেদান্তকে বিক্রি করেছিল বাজপেয়ী সরকার।
এইখানেই শেষ নয়। ২০১৪ সালে একটি স্বেচ্ছা সেবামূলক সংস্থা, দিল্লি হাইকোর্টে একটি হিসেবে পেশ করে যে কংগ্রেস এবং বিজেপি, উভয় দলই মোট ১৪ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে বিদেশী সংস্থা বেদান্তর কাছ থেকে। বিদেশ থেকে পাওয়া মোট চাঁদার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিয়েছে বেদান্ত, দুটো দলকেই। তখনকার বিদেশী মুদ্রা আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা পাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। দিল্লি হাইকোর্টে মামলা হয়। এরপর, ২০১৮-তে এসে কেন্দ্র সরকার এক আইন পাশ করে সংসদে। সেই নতুন আইন অনুযায়ী বিদেশ থেকে পাওয়া অনুদান বৈধ হয়ে যায়, শুধু ২০১৮ থেকে নয়, ১৯৭৬ থেকে পাওয়া সমস্ত অনুদানকেই বৈধ ঘোষণা করা হয় আইন অনুযায়ী। আইন পাশ করার পর মামলাটা কোর্ট থেকে খারিজ হয়ে যায়, বৈধ হয়ে যায় বেদান্তর কাছ থেকে পাওয়া ১৪ কোটি টাকা রাজনৈতিক অনুদান। এই সেই বেদান্ত, যার কারখানা বাঁচাতে আজ পুলিশ পনেরো হাজার মানুষের ওপর গুলি চালালো।
এই সেই বেদান্ত, যার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রাম সভার প্রাধান্যকে বাইপাস করার জন্য নতুন আইন আনছে মোদী সরকার, যার জন্য গত বছর কুনি সিকাকা জেলে গিয়েছিল।