মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

শীত ~ মনিপর্ণা সেনগুপ্ত মজুমদার

বছর শেষ হতে চললো, আমরাও আরেকটু এগিয়ে চললাম আমাদের শেষের দিকে। হালকা টান পড়ছে চামড়ায়, সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন আর মহার্ঘ অলিভ অয়েলে সেজে উঠছে ড্রেসিং টেব্‌ল। বচ্ছরকার অতিথি এল বলে। চারদিকে তাকালেই দিব্যি মালুম হচ্ছে। অর্ধেক পাতা-ঝরা গাছগুলো হাত-পা ছড়িয়ে, দাঁড়িয়ে রয়েছে পার্কের কুয়াশাভেজা বেঞ্চের পাশে। লাল,সবুজের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর ক'দিন বাদেই দেখা যাবে আপামর বাঙ্গালীর মাঙ্কিক্যাপে। গেরুয়াও চোখে পড়বে ইতি-উতি। তবে এসব বাদ দিলেও যে ব্যাপারটায় আমি আশ্চর্য হই, যে শীতকালে যেন শব্দরা বড্ড বেশী জীবন্ত হয়ে ওঠে। গভীর রাতে যখন টুপ্‌টাপ্‌ ঝরে পড়ছে শিশির ফোঁটা, একটা অস্পষ্ট শব্দ যেন শুনতে পাই। দূরে ডেকে ওঠা কোন একলা কুকুর বা সমবেত সারমেয় উল্লাস ফেলে যাওয়া বিবাহনুষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট ঘিরে -- সব যেন বড় বেশী উচ্চকিত। মাঝরাতে কোন ডায়াবেটিক রুগীর বাথরুম ব্যবহার করার ছ্যাড়ছ্যাড়ানি, রাতটাকে উলঙ্গ করে দিতে চায়। জলের আওয়াজ এত কদর্য, অশ্লীল? কই, আগে তো কখনও খেয়াল করিনি! প্রতিবেশীর শীৎকার কান জ্বালিয়ে দ্যায়, অন্যসময় কিন্তু শুনতে পাইনা। তার মানে কি ওরা শুধু শীতকালেই...? ধুর, মরুগ্‌গে, কানের ওপর বালিশ চেপে ধরে মানসিক শান্তি ও শালীনতা বজায় রেখে ঘুমোনোর চেষ্টা করি।

এই শীতকাল এলেই যত রাজ্যের উদ্ভুট্টি চিন্তা আসে মাথায়। একদিকে কত মেলা, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, সস্তাশিল্প, মহার্ঘশিল্প ইত্যাদি প্রভৃতি... আর অন্যদিকে দ্যাখো, রোগা রোগা চেহারার কেলে-কুচ্ছিত কতগুলো বাচ্চা নোংরা, খড়ি-ওঠা জেব্রা ক্রসিং মার্কা হাত বের করে কেঁদে-ককিয়ে ভিক্ষে চেয়েই চলেছে। ব্যাটাচ্ছেলেরা আবার ইন্টেনশ্যানালি ঠিক ওই মেলার গেটগুলোর কাছেই দাঁড়িয়ে থাকবে। ক্যানো বাপু? ইদিক-উদিকে গিয়েও তো দাঁড়াতে পারে, তা'লে অন্তত এই 'ইমোশন্যাল অত্যাচার' থেকে বাঁচা যায়। আবার উত্তুরে হাওয়ায় হি-হি করে কাঁপছে দ্যাখো! বলি কী-ই বা এমন শীত পড়ে কলকাতায়? যেতিস যদি এই সময় দার্জিলিং বা সিকিম, ভুটান... কী করতিস? এই যে... এই দ্যাখ আমার ইম্পোরটেড ফার-কোট (গরম লাগে বটে এখানে গায়ে চাপালে কিন্তু তাও লোকে তো টেরিয়ে দ্যাখে, সলিড জিনিস) এতেও ঠান্ডা শানাতোনা।

তারপর ধরো যে এই ঠান্ডার সময়েই তো একটু খেয়ে-পরে আরাম আছে এই শহরে, শীতের উষ্ণতায় একটা বেশ মন-ভাল-করা আমেজে চট করে ফুরিয়ে আসা বিকেলগুলোতে বেরিয়ে পড়েছি হয়তো। কিন্তু দ্যাখো কান্ড, যেই দুপুরটা বিকেলের হাত ছুঁইয়েই সন্ধ্যার গায়ে এলিয়ে পড়ে, ঠিক তক্ষুণি মনে পড়ে যায় এইরকম ...ঠিক এইরকম একটা না-বিকেল-না সন্ধ্যা সময়েই ঠাম্মা বলে উঠেছিল,"শালখান আমার গায়ে জড়্যাইয়া দে কেউ, যাওনের সময় অইলো গিয়া"। ব্যস্‌ , বুড়ির শেষ বলা ডায়লগ যেই মনে পড়া, অমনি দ্রুত জুম-আউট হতে থাকে, নীল-সাদা ব্রীজ, রোশনাই ওয়ালা সারি সারি দোকান...কিচ্ছুটি আর হাতছানি দ্যায়না...স-অ-ব ঝাপসা। নিজেকেই খিস্তাতে ইচ্ছে করে। যাচ্ছিস একটা ফান-ড্রাইভে...এই সময় সেন্টিমেন্টের ঠাম্মা-দিদা না করলেই নয়? যত্ত সাব-অল্টার্ন ন্যাকামো!

তবুও শীতার্ত উত্তাপ ছড়ায় ধমনীতে। কেঁদুলীর মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে নিষিদ্ধ উত্তেজনা, ''চোখ বন্ধ করে টান মার, বাবার প্রসাদ...কিস্যু হবে না ...আগুন-লাগানো ঘাস জাস্ট" ...তারপর কাশতে কাশতে প্রায় টিবি রুগী...সম্মোহিতের মত বসে সারারাত বাঊল গান, অজয়ের ওপর কুয়াশার মসলিন মায়াজাল।এক চোখ বিষণ্ণতা নিয়ে বসে থাকা এক সদ্য যুবতী, জীবনানন্দ... সেই যে, "এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা, কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।"  আমি? আমি-ই ছিলাম নাকি ওটা? নাকি অন্য মৃত্যু কোনো...কে জানে। স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে মাঘ, এই ভরা মাঘ। এইজন্যেই বিচ্ছিরি লাগে। বড্ড বেশী বিবর্ণ যেন চারপাশ। রঙচঙে মোড়ক কত, সযত্নে সরিয়ে রাখা মনখারাপ, তবুও ন্যাপথলিন আর একফালি পুরনো রোদের গন্ধমাখা নস্ট্যালজিয়া উঁকি দেবে, দেবেই। এইখানেই বোধহয় জিতে যায় এই বেয়াড়া ঋতুটা, পুরো প্রকৃতিটাকেই ডিফ্লাওয়ার করে দেওয়া, উদ্দাম, নির্মম এক সন্ন্যাসী। কুরে কুরে বের করে নিয়ে আসা আচমকা একরাশ যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে লেপের ওমের ভেতর দুটো শরীর এক হয়ে যায়। বসন্ত নয়, শীতকেই প্রেমের শিরোপা দেওয়া উচিৎ আমার মতে, আফটার অল,"Nothing burns like cold"।

আর সেই যে না-খেতে-পাওয়া, ঠান্ডায় নীল হয়ে যাওয়া চেহারাগুলো? ওদের কথা মনে পড়েনা আর। ক্রিসমাসের 'জিংগল বেল' আর কেক, নিউ ইয়ারের উদ্দাম ফূর্তির মাঝে কোথায় ওরা? আবার কোন এক দিন...সিগ্‌ন্যালে থেমে যাওয়া গাড়ীর পাশে উদয় হবে, কয়েক মুহূর্তের অপরাধবোধ আর মন-খারাপের উস্কানি। ব্যস্‌, আবার কী? শীত তো চলেই গেল...  


শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭

BPMO জাঠা ~ সাক্যজিত ভট্টাচার্য্য

তো, কমিউনিস্ট পার্টি আসলে কী? কেমন ছিল আমাদের যাদবপুর বেহালা টালিগঞ্জ কসবা অঞ্চলের পার্টির গল্পগুলো? পার্টি বলে কি আসলে কিছু ছিল? না কি পুরোটাই এক মায়াম্যাজিক? ছিল একমাত্র আমাদের স্বপ্নে, অথবা মাথার ভেতরে? এক অসঙ্গেয় অতিকথা হয়ে? 

বেশির ভাগ সময়ই একে একে দুই হয় না। মড়ার খাটের তলায় কে বোমার বস্তা ফেলে থাকে আমরা জানতে পারি না। জানি না কখন বেমক্কা খালি বন্দুক থেকে গুলি ছুটে খোপরি ফাঁক করে দেবে । আমাদের মগজে এই হিসেবগুলো মিলতে চায় না। একে একে দুইয়ে অভ্যস্ত মগজ বিব্রত হয়। ঘেন্না, রাগ, ভয়, ভালোবাসা, বিশ্বাস- সব মিলেমিশে এই রাজনৈতিক প্রবচনের কোন খোপে আমাদের চেনা যুক্তি আর কোথায় সেই অচেনা বোধ কাজ করে- ঠাহর হয় না। আমাদের গুলিয়ে যায়- ধর্ম। রাজনীতি। নৈতিকতা। বিশ্বাস। বিশ্বাস। এবং বিশ্বাস। নিটোল ক্ল্যাসিফিকেশন এবং নিখুঁত কম্প্যারিজন আমাদের স্বস্তি দিত- কিন্তু বেওয়াফা ইতিহাস সেই আরামটুকু দেয় না।

অশোক মিত্র একে বলেন পরিবৃত্ত- পার্টির পরিবৃত্ত। গত চল্লিশ পঞ্চাশ বছর ধরে পারিবারিক অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে, গোষ্ঠীগত লোককথা সম্বল করে, একসঙ্গে ইতিহাসের আঁচে বদলাতে বদলাতে গড়ে ওঠা এক পরিবৃত্ত। এখন কেউ দলছুট, কেউ নিরলস, কেউ বা ক্লান্ত, কেউ নিস্পৃহ- যেরকম হয় ইতিহাসে। যেরকম ভাবে মাকন্দো গড়ে উঠেছিল, এবং ভেঙ্গে গিয়েছিল। কিন্তু এই বিভিন্ন পথে চলে যাওয়া আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত স্মৃতিগুলো জড়ো হতে হতে যে যৌথ ইতিহাস তৈরি হয়েছে সেটা এই পরিবৃত্তের সবার কাছেই একটা রেফারেন্স ফ্রেম। প্রাইভেটে পাশ করা রিফিউজি বাপকাকা, ঘোর দারিদ্র্যের মধ্যে সবকিছু ছেড়ে ঝাণ্ডা হাতে পথে নামা, আবার হয় তো শান্তিকল্যাণ এলে নিশ্চুপে কোটরে ফিরে আসা, কংগ্রেসি গুন্ডাদের আক্রমণে ফেলে আসা ধ্বস্ত ঘরদুয়ার, বুককেসে এখনও সারি সারি হালকা সবুজ মলাটের  কালেক্টেড ওয়ার্ক্স অফ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, সাদা লাল মলাটে দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, পার্টি অফিসে জড়ো হতে থাকা ফড়ে দালালদের ছায়াপুঞ্জ। এই যৌথ ইতিহাসের উত্তরাধিকার, আমরা- এই পরিবৃত্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্যেকে  বহন করি। জ্ঞানে ও অজ্ঞানে আমাদের রাজনৈতিক সত্তায় এই ইতিহাস ছায়া ফেলে- আপাতত: উল্টোপথে চলা প্রাক্তন কর্মী, বা ক্রমশ: নির্জন অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ কমরেড, কিম্বা ইদানীং ডান বা বাম কোনোদিকেই না থাকা সফল পুরুষটি- কেউই এই উত্তরাধিকার থেকে মুক্ত হতে পারি না। এই উত্তরাধিকার ঘেন্না-রাগ-ভয়-নিস্পৃহতা, এবং সর্বোপরি ভালোবাসার ইতিহাস- বাস্তবের ইতিহাস এবং ম্যাজিকের ইতিহাস- যুক্তির নিয়মমাফিক প্রকোষ্ঠের বারমহলে এই ইতিহাসের আনাগোনা। কেই বা জানে কেন এখনও ঠাকুরদার ফেলে যাওয়া চশমা, ট্রাঙ্কে তোলা আম্মার পুরোনো শাড়ির গন্ধ, ষাট সালে রাস্তা থেকে বাবার কেনা ফুটনোটসম্বলিত জেম্‌স জয়েস আমাদের ভালোবাসার শেষ সম্বল!

জীবনের সব ভালোবাসা এবং বিষাদ খুব ভেবেচিন্ত হিসেব করে হয় না। রাজনীতিও না। পিতৃপ্রেম এবং পিতৃদ্রোহ- দুইই একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলে। পঞ্চাশ ষাট  বছর ধরে বৌদ্ধিক সত্তায় , এবং প্রাত্যহিক জীবনচর্যায় আঁকশিলতার মতো জড়িয়ে যেতে থাকে এতদিন শুনে আসা যাবতীয় অতিকথা, কাহিনী এবং প্রবাদ। যে সময় পেরিয়ে আসতে হয়েছে সেই সময়ের হাত এড়াবার স্পর্ধা কারই বা থাকে? মায়া রহিয়াই যায়। এই মায়ার কোনো ইউনিভার্সালিটির দাবী নেই। যাদের ছুঁয়ে থাকে তাদেরই ছুঁয়ে থাকে। এই মায়ার কোনো লোক জড়ো করার তাগিদ নেই, অন্যকে দলভুক্ত করার ইচ্ছা নেই। পার্টিগত রাজনীতির হৈচৈ উল্লাস রক্তপাতের সীমানার বাইরে এই মায়া নিয়ে আমরা মরে যেতে থাকি।

(ভেবেছিলাম জাঠা নিয়ে লিখব। হল না। পার্টির  ভেতরে বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সামান্য সমর্থকের মাথার ভেতর অবিরত বহমান জাঠা নিয়েও লেখার কেউ থাকুক। যদিও সঙ্গের ছবিটি এক ভোরবেলার গ্রামের পথে জাঠারই ছবি। বাকিটা ব্যক্তিগত, হয়ত বা )


বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭

ভূতচতুর্দশী ~ অর্ক ভাদুরী

ভূতচতুর্দশীর রাতে পৃথিবীতে আত্মারা নেমে আসে। কাতারে কাতারে, ধোঁয়া ধোঁয়া। আঙুলকাটা হাত তুলে গোঙাতে গোঙাতে নেমে আসেন পূর্ববঙ্গের নীল চাষি। তাঁকে সঙ্গ দেন পাবনা আর রংপুরের কৃষক। আসেন বীরসা মুন্ডা, তিতুমীর, সিধু-কানহুর লোকজন, ওয়াহাবি আর মোপলা বিদ্রোহের শহীদ। বেনিয়ানে পিস্তল লুকিয়ে কলেজ স্ট্রিট থেকে কলুটোলার দিকে চলে যায় ঝকঝকে যুবক। বউবাজার মোড়ের শহীদবেদি ভেঙে বেরিয়ে আসেন লতিকা, প্রতিভা, অমিয়া, গীতা। মির্জাপুর স্ট্রীট ধরে হেঁটে যায় শান্তি-সুনীতি, টেগরা আর ক্ষুদিরাম। হিন্দ সিনেমার সামনে রডা কোম্পানির অস্ত্র লুঠের কুশীলবেরা-  শ্রীশ মিত্র, গিরীন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপীন গাঙ্গুলি, আশুতোষ লাহিড়ি। বিনয়-বাদল-দিনেশ আর মেজর সত্য বক্সীর পাশাপাশি হেঁটে আসছে শহীদ রামেশ্বর। জানবাজারের পুজোমন্ডপের পাশে বিড়ি ধরালেন কানপুরের সিপাহী, গলায় ফাঁসির দাগ। হেদুয়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেথুন কলেজের প্রীতিলতা। ব্যারাকপুর থেকে, আলিপুর থেকে, বরাহনগর-কাশীপুর থেকে, ব্যারাকপুর যখন ব্যারাকপুর নয়, সেই চনকের নৌকোঘাট থেকে, রামপ্রসাদ সেনের ধুঁতির খুঁট থেকে, চল্লিশের কঙ্কালসার লাশের গন্ধ থেকে, দক্ষিণের সোনারপুর, যাদবপুর থেকে, কাকদ্বীপ থেকে উঠে আসছেন বৃদ্ধ-অতিবৃদ্ধ আত্মারা। ভূতচতুদর্শীর সন্ধ্যে রাতের দিকে বেঁকে যাচ্ছে।

ভূত চতুর্দশী ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য

ভূতপেত্নি দৈত্যদানো
আজকে সবাই দারুণ খুশি
পঞ্জিকাতে পষ্ট লেখা
আজকে তো ভূত চতুর্দশী।।

ভূতের ছেলে বায়না ধরে
ক্যাপ পিস্তল আতসবাজি
শাস্ত্রে এসব বারণ আছে
ব্রহ্মদৈত্য তাতেই রাজি।।

পান্ত ভূতের খুড়শাশুড়ি
বনগাঁ যাবেন লোকাল ট্রেনে
মুড়কি নাড়ু সঙ্গে নেবেন
ফেমাস ভীষণ, সবাই চেনে।।

কিপটে ভূতের ঘুম আসেনা
নিমগাছে কি পয়সা ফলে
সখ দেখে গা পিত্তি জ্বলে
বাজার করে শপিং মলে।।

জম্মে যে ভূত চান করে না
সে'ও দেখি আজ সাবান মাখে
খড়ম পায়ে,গগস চোখে
ডান পকেটে রুমাল রাখে।।

ভূতের মেয়ে সবুজ সাথী
সাইকেলে যায় হাই ইস্কুলে
আজকে সেও খুব সেজেছে
ঘাগরা চোলি কানের দুলে।।

আনন্দে আজ নৃত্য করে
ক্লান্ত ভূতের শান্ত পিসি
ভূতের শ্বশুর গাইছে ভজন
আজকে তো ভূত চতুর্দশী।।

সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭

মশা ও ডারউইন ~ আর্কাদি গাইদার

মশাদের জগতে একটা বেশ মজার ঘটনা ঘটে চলেছে। ধরুন প্রথম যখন মশা মারবার জন্যে মানুষ কোন কীটনাশক আবিষ্কার করলো। সেই সময় যত মশা ছিলো তার মধ্যে ৯৫% এর ওপর এই কীটনাশক কাজ করে। বাকি ৫% এর ওপর করে না। এবার কীটনাশক আবিষ্কারের আগে এই ৫%কে সেই ৯৫% এর সাথে প্রতিযোগীতা করে টিকে থাকতে হতো। মশার জগতে তাদের অনুপাতও ওই ৫% এর আশেপাশেই থাকতো। এবার কীটনাশক আবিষ্কারের পরে এই ৯৫% এর মধ্যে অনেক মশা ধ্বংস হতে শুরু করলো। একটা পরিসরে তখন এই ৫% যারা ছিলো, তাদের বৃদ্ধি ঘটতে শুরু করলো। বেশ কিছু প্রজন্ম পরে দেখা গেলো যে ওই ৫% কীটনাশক-প্রতিরোধী মশারা বৃদ্ধি পেয়ে এখন সংখ্যাগুরু। তাই মশা ধ্বংস করবার কাজে ওই কীটনাশকের উপকারিতা নিম্নগামী। এখন মানুষকে নতুন কীটনাশক তৈরি করতে হবে। 
এই হলো Darwinism. এইতো কয়েকদিন আগেই বিজেপির অঘোষিত মুখপত্র 'স্বরাজ্যম্যাগ' একটি সম্পাদকীয় লিখে আমাদের আলোকিত করলো - বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার নাকি আমাদের ওপর এই Darwinism প্রয়োগ করতেই একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। সরকার চায় এই 'চ্যালেঞ্জ'গুলোর দ্বারা পরীক্ষিত হয়ে দেশের মানুষ শক্তিশালী হোক, উন্নততর হোক। আমাদের কান্নাকাটির কোন মানে নেই। কারন সবশেষে, এই সুবিশাল Darwinian experiment এর পর, যে মানুষগুলো টিকে থাকবে, তারা হবে fittest. যেটা উহ্য রাখা হয়েছে, সেটা হলো যে যারা fittest না, তাদেরকে এই এক্সপেরিমেন্টের স্বার্থে খরচের খাতায় ফেলতে হবে। তারা expendable. কারন তারা যথেষ্ট fit নয়।
Darwinism কে সহজভাবে বোঝাতে অনেকেই survival of the fittest বলে এক লাইনে অভিহিত করেন। এটা বৃহৎভাবে ভুল বোঝাপড়া। Darwin নিজে কোনদিন এই লাইনটা ব্যাবহার করেননি। ওনার থিওরীকে যদি এক লাইনে প্রকাশ করতেই হয় - তাহলে সেটা হতে পারে survival of the most adaptable. কিন্তু ডারউইন নিয়ে বিতর্কের জন্যে এই লেখা না। এই লেখা মশা আর কীটনাশক নিয়ে। 
মশা - যার নাম সোনিকা কুমারী। ১১ বছর বয়স। দূর্গা পুজোর ছুটি বলে স্কুল বন্ধ। মিড ডে মিল নেই। আধার কার্ড নেই বলে বাড়িতে রেশন বন্ধ হয়ে গেছে। ৮দিন অভুক্ত থেকে মারা গেছে। 
 যদিও সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে কোনরকম বেনিফিট লিংক করা যাবে না। তাও। কারন উন্নততর দেশ বানানোর লক্ষ্যে সুপ্রীম কোর্ট, সোনিকা কুমারী, এদের নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। কীটনাশক তৈরি আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা একের পর এক কীটনাশক তৈরি করে যাবো। এবং প্রতিবার যারা টিকে থাকবে তাদের জন্যে তৈরি হবে নতুন কীটনাশক। নোটবন্দী। আধার। জিএসটি। সব শেষে যারা টিকে থাকবে তারাই হবে উন্নততর ভারতের উন্নততর নাগরিক। তাদের বেচে থাকতে রেশন লাগবে না। গ্যাসে ভর্তুকি লাগবে না। চাষে নূন্যতম মূল্য নির্ধারন লাগবে না। সারে ভর্তুকি লাগবে না। মিড ডে মীল লাগবে না। ১০০ দিনের কাজ লাগবে না। হাসপাতালে অক্সিজেন লাগবে না।
তাদের শুধু লাগবে ১০০ কোটি টাকার রামমূর্তি। তার পদতলে বসে তারা গান করে, আড্ডা মেরে, হাওয়া খেয়ে সুখে দিন কাটাবে। আর লাগবে আধার কার্ড। মরার পর গলায় কার্ড ঝুলিয়ে চুল্লিতে বা কবরে প্রবেশ করবে। সোনিকা কুমারীর যদিও আধার কার্ড নেই। তাই না খেয়ে মরে গেছে। আপাতত সরকারি ব্যাবস্থায় দাহও করা যাবে না বোধহয়। চলুন স্লোগান তুলি - জয় শ্রী ডারউইন।

শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭

ফুটবলার সেজমামা ~ চন্দন গোস্বামী

এই ফুটবলারটিকে চিনতে পারছেন? ইনি হচ্ছেন সেই ছাগলের সেজমামা।
মনে পড়ছে না, তাইতো? 
হযবরল স্মরণ করুন।

''...বলতেই ব্যাকরণ শিং ব্যা ব্যা করে ভয়ানক কেঁদে উঠল ।
আমি বললাম, 'আবার কি হল ?' ছাগল বলল, 'আমার সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়েছিল, তাই বাকি আধখানা মরে গেল ।' আমি বললাম, 'গেল তো গেল, আপদ গেল । তুমি এখন চুপ কর।''

হে পাঠক, বাকি আধখানা মরে নাই, যুবভারতীর সামনে ফুটবল খেলিতেছিল।

দিদির কল্যাণে আজ পুনরায় দৃশ্যমান হইল।

রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭

কুমারী পূজা ~ তপব্রত ভাদুরী

আদিম কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রধান দেবতা ছিল পৃথিবী৷ পৃথিবী শস্য ও উদ্ভিজ্জপ্রাণের উৎস৷ তাই আদিম সমাজে পৃথিবী হয়ে ওঠে আদিমাতা (Primordial Mother)৷ পাশাপাশি মানুষ দেখেছে, নারী সন্তানের জন্ম দেয়৷ এ-ব্যাপারে  পুরুষের ভূমিকা সম্পর্কে আদিম সমাজ ছিল অজ্ঞ৷ লোকবিশ্বাসে রহস্যময় সৃষ্টিক্ষমতার গৌরবে নারী ক্রমে আদিমাতা পৃথিবীর সমকক্ষ ও প্রতিভূ হয়ে ওঠে৷ এইভাবে ধরিত্রীমাতা ও নারীর প্রজননশক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রাচীন এক ধর্মমত – উর্বরতাবাদ (Fertility Cult)৷ এর সূচনা হয়েছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজে৷ প্রজননশক্তির অধিষ্ঠাত্রীরূপে লোকবিশ্বাসে কল্পিত হয়েছিল বিভিন্ন নারীদেবতা৷ নানা দেশে  নানা নামে৷ ননা, অনৎ, অল্লৎ, ইশতার, সিবিলি, আইসিস, মা, মাইয়া, আর্তেমিস প্রভৃতি৷ নারীই হতেন সে দেবতার পূজক তথা পুরোহিত৷ যৌনক্রিয়া ছিল পূজানুষ্ঠানের অঙ্গ৷ সেইসঙ্গে হত পশুবলি৷ 

গোড়ায় এই আদিমাতা ছিলেন অবিবাহিতা চিরকুমারী৷ পরে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ যখন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে রূপান্তরিত হল, তখন নারীদেবতাদের পুরুষসঙ্গী কল্পিত হল৷ পরবর্তী যুগে ক্রমে ক্রমে তাঁরা পুরুষদেবতার সঙ্গে বিবাহসম্পর্কে আবদ্ধ হলেন৷ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দেবতার পূজার অধিকার নারীর হাত থেকে চলে গেল পুরুষের হাতে৷ মন্দিরের নারীপূজকরা পরিণত হলেন পবিত্র গণিকায়৷ নতুন পুরোহিতদের বিধানে সমাজের অন্য নারীদেরও বিয়ের আগে অন্তত একবার দেবমন্দিরে বারাঙ্গনা বৃত্তি অবলম্বন করতে হত (উপেন্দ্রকুমার দাস, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, প্রথম খণ্ড, পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ : ১৩৯১, তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১০, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, কলকাতা, পৃ. ২২-২৩)৷ 

কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরবর্তী যুগে উর্বরতাশক্তির এই দেবীদের যুদ্ধদেবতা রূপেও উপাসনা করা হত৷ এসব ক্ষেত্রে যিনি সৃষ্টিশক্তির দেবী, তাঁকেই একাধারে ধ্বংসের দেবতা রূপেও কল্পনা করা হয়েছে (উপেন্দ্রকুমার দাস, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২০)৷ দৃষ্টান্তস্বরূপ গ্রিসের দেবী এথেনা, সুমের বা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের দেবী ননা, প্যালেস্টাইন অঞ্চলের দেবী অনৎ এবং ব্যাবিলন ও আসিরিয়া অঞ্চলের দেবী ইশতারের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে৷ ভারতের দেবী দুর্গাও সৃষ্টিশক্তির প্রতিভূ আদিমাতার একটি রূপ৷ একই সঙ্গে তিনি রণদেবী৷ এথেনা আর্তেমিস প্রভৃতি পৃথিবীর অন্যা্ন্য প্রান্তের মাতৃকা দেবতাদের মতো দুর্গাও গোড়ায় ছিলেন কুমারী মাতা (Virgin Mother)৷ দেবতাদের তেজঃপুঞ্জ থেকে তিনি কুমারী নারী রূপেই আবির্ভূত হন৷ পরবর্তী কালে দেবীকে শিবজায়া রূপে কল্পনা করা হয়েছে৷ কিন্তু বৃহন্নীলতন্ত্রের মতো প্রাচীন শাস্ত্রে আছে, শিব দেবীর পুত্র – 'ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবানাঞ্চ প্রসূতে করুণাময়ি'৷ দেবী নিজ পুত্র শিবকে পতিত্বে বরণ করেন (উপেন্দ্রকুমার দাস, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৯)৷

তন্ত্রশাস্ত্রবিহিত কুমারী পূজার মধ্যে  কুমারী আদিমাতার উপাসনার প্রত্নস্মৃতি লুকিয়ে আছে৷ কুমারী এক্ষেত্রে দেবীর প্রতিভূ ও প্রজননশক্তির বিগ্রহ৷ আগম মতে, পূজার জন্য মনোনীত কুমারীকে অবশ্যই হতে হবে 'অজাতপুষ্পা' (হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় শব্দকোষ, প্রথম খণ্ড, সপ্তম মুদ্রণ, ২০০৮, সাহিত্য অকাদেমি, পৃ. ৬৫০) ৷ 'রজোদর্শনের পূর্বপর্যন্ত কুমারী পূজ্যা৷' (সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তিরঙ্গ বঙ্গভূমি, প্রথম সংস্করণ, ডিসেম্বর ১৯৯১, আনন্দ পাবলিশার্স, পৃ. ৯৬)  অর্থাৎ, যার মধ্যে প্রজননশক্তি এখনও সুপ্ত অবস্থায় আছে, পরিস্ফুট হয়নি, এমন বয়সের কুমারী কন্যাই পূজার জন্য উপযুক্ত৷  প্রজননশক্তির প্রতীক রূপে নারীর পূজা এবং সে পূজার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রজোদর্শনের টাবু নারীর পক্ষে শ্লাঘনীয় কিনা, সে বিচারের ভার নারীর উপরেই ছেড়ে দিলাম৷ 

আধুনিক কালে কুমারী পূজার শাস্ত্রীয় ঐতিহ্যকে নতুন করে প্রবর্তিত করেন বিবেকানন্দ ও তাঁর রামকৃষ্ণ মিশন৷ সেই 'জ্যান্ত দুর্গা'র পূজার আড়ম্বরের অন্তরালে নারী সম্পর্কে এঁদের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে ঠিক কী, তা জানার জন্য ঔৎসুক্য বোধ হওয়া স্বাভাবিক৷ রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা যে দশনামী   সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, তার প্রতিষ্ঠাতা আদি শঙ্করাচার্য তাঁর 'মণিরত্নমালা'য় লিখেছিলেন, 
'কিমত্র হেয়ং? – কনকঞ্চ কান্তা৷'
অর্থাৎ, মুমুক্ষু ব্যক্তির পক্ষে কোন্ কোন্ বিষয় পরিত্যাগের যোগ্য? – ধন ও স্ত্রী৷
'কা শৃঙ্খলা প্রাণভৃতাং হি? – নারী৷'
অর্থাৎ, জীবের দুশ্ছেদ্য বন্ধন কী? – নারী৷
'ত্যাজ্যং সুখং কিং? – রমণীপ্রসঙ্গঃ'
অর্থাৎ, কোন্ সুখ সম্যকরূপে পরিত্যাজ্য? – স্ত্রীসম্ভোগ৷
'দ্বারং কিমাহো নরকস্য? – নারী৷'
অর্থাৎ, নরকের দ্বার কী? – নারী৷
'বিজ্ঞান্মহাবিজ্ঞতমোঽস্তি কো বা? –
নার্য্যা পিশাচ্যা ন চ বঞ্চিতো যঃ৷'
অর্থাৎ, এই জগতে বিজ্ঞ থেকে মহাবিজ্ঞতম কে? – যাঁকে পিশাচীরূপিণী নারী বঞ্চনা করতে পারেনি৷
'মণিরত্নমালা'র এই উদ্ধৃতিটি আছে বিপিনবিহারী ঘোষাল প্রণীত  'মুক্তি এবং তাহার  সাধন' বইতে ( অষ্টম পুনর্মুদ্রণ, মে ২০১৫, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ১২১) ৷ বইটির ভূমিকায় স্বামী হিরণ্ময়ানন্দ লিখেছেন, রামকৃষ্ণের সংগ্রহে এই বইটি ছিল৷ তিনি তাঁর তরুণ শিষ্যদের বইটি পড়তে দিতেন৷ রামকৃষ্ণের বহুল ব্যবহৃত বইটি বর্তমানে বেলুড় মঠের গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে৷

নারীকে রামকৃষ্ণও 'কামিনী' রূপে দেখেছিলেন৷ কথামৃতে একাধিক জায়গায় 'কাঞ্চন' আর 'কামিনী' সম্পর্কে ভক্তদের সতর্ক করা হয়েছে৷ বিশেষ করে 'সন্ন্যাসীর বড় কঠিন নিয়ম৷ স্ত্রীলোকের চিত্রপট পর্যন্ত দেখবে না৷' ('সন্ন্যাসী ও কামিনী – ভক্তা স্ত্রীলোক', শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত,  চতুর্থ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথম প্রকাশ, জানুয়ারি ২০০২, দে'জ পাবলিশিং, পৃ. ৬৮৩) রামকৃষ্ণের উপলব্ধিতে " অত পাশ করা, কত ইংরাজী পড়া পণ্ডিত, মনিবের চাকরী স্বীকার করে তাদের বুট জুতার গোঁজা দু'বেলা খায়৷ এর কারণ কেবল 'কামিনী'৷" ('কামিনী-কাঞ্চন জন্য দাসত্ব', শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত,  প্রথম ভাগ, চতুর্থ খণ্ড, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, পৃ. ৬৮৩) 'মেয়েমানুষ থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়, তবে যদি ভগবান লাভ হয়৷' ( 'ঘোষপাড়ার স্ত্রীলোকের হরিপদকে গোপালভাব – কৌমার বৈরাগ্য ও স্ত্রীলোক', শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত,  দ্বিতীয় ভাগ, ঊনবিংশ খণ্ড, পৃ. ৩৫২) রামকৃষ্ণ বিচার করতে বলেছেন, 'কামিনীকাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত৷ বস্তু বিচার করবে৷ মেয়েমানুষের শরীরে কি আছে – রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মুত, বিষ্ঠা এই সব৷ সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?' ( "ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও যোগতত্ত্ব – যোগভ্রষ্ট – যোগাবস্থা – নিবাতনিষ্কম্পমিব প্রদীপম্' – যোগের ব্যাঘাত", শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত,  তৃতীয় ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৪৬৩)

ব্রাহ্মণ্য পিতৃতন্ত্রের স্মৃতিশাস্ত্র থেকে শুরু করে সেকালের শঙ্করাচার্য  হয়ে একালের রামকৃষ্ণ পর্যন্ত বয়ে আসা নারীঘৃণার এই অসুস্থ বিকৃত বিপজ্জনক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত সন্ন্যাসী সঙ্ঘ আর তাদের 'জ্যান্ত দুর্গা'র পূজা পরস্পরের প্রতিবাদ করতে করতে বছর বছর চলে আসছে৷