তবে কিঞ্চিত মজা পেলাম তৃণমুল সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে। সিভিল সোসাইটির যে কোনো আন্দোলনকেই তাঁরা বিরোধীতা করাটা মোটামুটি অভ্যাসে পরিণত করেছেন। হয়ত জানেন-ও না কি কারণে কেন বিরোধীতা এদিকে তড়িঘড়ি মন্ত্রীসভার দুই বর্ষীয়ান মন্ত্রী দেখলাম এই আন্দোলনকে ধিক্কার জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। যদিও পশ্চিমবংগে এই দলীয়-রাজনীতির রংমুক্ত সিভিল সোসাইটির আন্দোলনের একটা মডেল প্রথম তৃণমূলের হাত ধরেই এসেছিল। সিংগুর নন্দীগ্রামের পর এক-ই প্ল্যাটফর্মে মমতা-কবীর সুমন-দোলা সেন-নক্সাল নেতারা, এবং আশেপাশে ঘুরছেন এপিডিআর-এর কর্মীরা, মাঝে মনে হয় একবার রাজনাথ সিং-ও এসেছিলেন। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সেই মঞ্চে উঠতে গিয়ে ধমক খেলেন মমতা ব্যানার্জীর কাছে। সিভিল সোসাইটির সেই আন্দোলনের এক্সটেনশনকেই এখন অস্বীকার করছেন তাঁরা।
তবে এই লেখার উদ্দেশ্য কোনও বিশেষ দলকে সমালোচনা নয়। সাম্প্রতিককালে বারে বারে সমস্ত রাজনৈতিক দল-ই বিব্রত হয়েছে সিভিল সোসাইটির নানা আন্দোলনে, কারণ পরিচিত বাম বা দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কোনো ছকেই এদের ফেলা যাচ্ছে না। আবার সত্যি কথা বলতে কি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন শ্রেণী-সংগ্রামের সাথেও এই মুভমেন্টগুলোর কোনো প্রত্যক্ষ যোগ নেই। সে নির্ভয়া কান্ডে দিল্লীর রাজপথ অচল করে রাখাই হোক বা চুমু খাওয়া অথবা ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকানোর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের রাস্তায় নামা। অস্বস্তির কারণগুলো মোটামুটি এরকম ঃ
১। কোনো আশু বা সুদুরপ্রসারী ইকনমিক প্রবলেমকে অ্যাড্রেস করছে না এই আন্দোলনগুলো।
২। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে এরা রাস্তায় নামছে না। বরং ব্যানার ছাড়া আসতে বলা হচ্ছে সকলকে।
৩। আন্দোলনের মুখ হিসেবে উঠে আসছেন আলোকপ্রাপ্ত শিক্ষিত মধ্যশ্রেণীর, বেশিরভাগ সময়েই ছাত্র-ছাত্রী। খেটে খাওয়া গরীব নিম্নবিত্ত মানুষের সাথে কানেক্ট করা যাচ্ছে না যাঁদের।
মোটামুটি এই তিনখানা বিষয়ে বাম বা দক্ষিণ, বিশেষত বাম, সমস্ত চিরাচরিত পার্টিগুলোই বেশ কনফিউজড। কতটুকু রাখবেন কতটা ছাড়বেন, অংশগ্রহণ করবেন না বাইরে থেকে সমর্থন এসব নিয়ে নানারকম আলোচনা তর্ক-বিতর্ক শোনা যাচ্ছে বামপন্থীদের অন্দরমহলে। কিস অফ লাভ এই সমর্থন বিরোধীতার মার্জিনটা অনেকটা স্পষ্ট করে তুলেছে। যে দক্ষিণপন্থীরা নির্ভয়া আন্দোলনে ব্যানারহীন রাজনীতি নিয়ে ঢোঁক গিলতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা মুক্তকন্ঠে কিস অফ লাভ-কে 'ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী' বলে দাগিয়ে দিতে পারছেন। যে বামেরা কামদুনির ঘটনায় পথে নেমেছিলেন তাঁরাও সহজেই ডিস্ক্লেইমার দিতে পারছেন যে 'এই আন্দোলন কোনো বেসিক ইস্যুর সমাধান করবে না'। কিন্তু তার পরেও অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েই যায়।
সেগুলো শুধু কিস অফ লাভ নিয়েই নয়। বরং ২০১৪ সালের ভারতবর্ষের প্রতিরোধের চরিত্র নিয়ে।
১৯৯১-পরবর্তী ভারতবর্ষে শহুরে মধ্যশ্রেণীর একটা চমকপ্রদ উত্থান হয়েছে। তাদের হাতে টাকা এসেছে, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, মার্কেট এক্সপ্যানসন হয়েছে এবং সেই সাথে এসেছে অ্যাসপিরেশন। এই উচ্চাকাংখা শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির উচ্চাকাংখা নয়, এ হল শাসন প্রক্রিয়ার অংশ হবার উচ্চাকাংখা। বাজার-ও স্বাভাবিক নিয়মেই চেয়েছে তার ক্রেতা যেন সেন্ট্রাল লেভেলে ডিসিশন মেকিং-এর জায়গায় থাকে, ফলে বাজারের নিজেকে প্রসার করতে সুবিধে হবে। নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের পেছনে এই রাইজিং মধ্যশ্রেণীর একটা বড় অংশের আকাঙ্ক্ষা একটা বড় কাজ করেছে। এবং সেই সাথেই ভারতবর্ষের রাজনীতি একটা দক্ষিণপন্থী বাঁক নিয়েছে, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দুই দিকেই। কিন্তু এই যে মধ্যশ্রেণী এটা কোনো হোমোজিনাস এন্টিটি নয়। এর মধ্যেও নানা রঙ আছে। একটা অংশ শুধুই ইকনমিক গ্রোথকে পাখির চোখ করে। একটা অংশ তার সাথে সাথে সামাজিক বৃদ্ধিও চায়। তাদের কাছে ভারতবর্ষের বর্তমান যা অবস্থা 'আ লিবারাল ইকনমি অ্যান্ড আ কনজারভেটিভ সোসাইটি' সেটা কাম্য নয়। অর্থর্নৈতিক স্বাধীনতার সাথে সাথে ব্যক্তি-স্বাধীনতার ওপর তারা জোর দেয়। আবার আরেকটা অংশ আছে যারা চায় 'আ কনজারভেটিভ ইকনমি অ্যান্ড আ লিবারাল সোসাইটি'। এই অংশটা তুলনামুলকভাবে ছোট যারা মোটামুটি মোদী-বিরোধী। এই নানা অংশের চাহিদা পুরণের জন্য তারা সবসময়েই স্টেটের সংগে দর-কষাকষিতে নামছে। একটা অংশ দাবী করছে 'তুমি আমায় মুক্ত বাজারের সুযোগ সুবিধা দাও বদলে আমি তোমায় রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা দেব'। আরেকটা অংশ দাবী করছে 'তুমি আমায় স্টেটের চোখরাংগানী থেকে সামাজিক মুক্তি দাও বদলে আমি তোমার অর্থনৈতিক আগ্রাসনে নাক গলাব না'। এরকম আর কি!
মুশকিলটা হল বামপন্থীরা দুর্বল হয়ে যাবার কারণে সাবেকি শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের অভিমুখ অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। আগে অন্যান্য বর্গগুলোর এই দাবীদাওয়াগুলো কিছুটা বামেদের আন্দোলনের ফলে মিটত আর বেশির ভাগটাই চাপা পড়ে যেত অনেক বেশি তীব্র এবং অনেক বেশি পলিটিকালি ওরিয়েন্টেড অন্যান্য নানা আন্দোলন দিয়ে, যেমন ট্রেড ইউনিয়ন মুভমেন্ট। এখন সেই ফাঁকা জায়গাটা পুরণ করার জন্য উঠে আসছে সামাজিক শক্তিগুলো। দক্ষিণপন্থীরা এই আন্দোলন চালাতে পারবে না কারণ তারা নিজেরা রাষ্ট্রশক্তির অংশ। পড়ে থাকে
দলীয় রাজনীতির রঙমুক্ত সামাজিক বর্গগুলো, এলজিবিটি, পরিবেশরক্ষার আন্দোলন, কিস অফ লাভ, উচ্ছেদবিরোধী সংগ্রাম এসব। অনেক সময়েই এসব আন্দোলনে যুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে প্রান্তিক নিম্নবর্গীয় মানুষজনকে, তাদের দলীয় রাজনীতির রংটুকু বাদ রেখে। আবার অনেক সময়েই এগুলো আবদ্ধ থাকছে মধ্যবিত্তের মধ্যে।
এই যে অচিরাচরিত রেজিস্টান্স, তাহলে কি একে আমরা গ্রহণ করব না? কবে বামপন্থীরা আবার শক্তিশালী হবেন সেই দিশা দেখার অপেক্ষায় বসে থাকব? ভারতবর্ষে যে ছোটবড় এতগুলো তাহিরীর স্কোয়ার ঘটে চলেছে প্রতিদিন, সেটা কপিবুক মুভমেন্ট হচ্ছে না বলে অবজ্ঞা করব? এবং আমরা, বামেরা বা নানা রঙের লিবারাল রাজনীতিকরা, বুদ্ধিজীবীরা ঠিক করে দেব কোন আন্দোলন ঠিক কোনটা ভুল? সব থেকে বড় কথা আমরা ঠিক করে দেবার কে? কেনই বা আমাদের স্বপ্নপূরণের দায় সেই প্রতিরোধের ওপর চাপাব?
একটা আন্দোলন শুরু হবার পরে সেটা কোন ফর্মে চলবে কেউ জানে না, বলতেও পারে না। সেটা অনেক সময়েই আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে, তাতে সেই প্রসেসের কিছু যায় আসে না। এটা অনেকটা স্বতঃস্ফুর্ততার ওপর নির্ভর করে। এই রেজিস্টান্সের মধ্যে অনেক মতবাদ আলাদা আলাদা ভাবে না মিশেও পাশাপাশি আছে। বিভিন্ন মতবাদ তাদের বিভিন্ন লাইন নামায় একটা গণ-আন্দোলনে। যারা কিস অফ লাভ করছে তাদের-ই অনেকে হয়ত নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু এক ইস্যুতে রেজিস্টান্স দেখায়নি বলে অন্য ইস্যুতে তাকে অবজ্ঞা করবই বা কেন? বরং যে্টা পারি তা হল পাশাপাশি কিছুটা চলা। যদি আমার অ্যাসপিরেশন, একটা বামপন্থী দলের রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ এবং একটা এলজিবিটি আন্দোলন, এই তিনখানার অভিমুখ শেষ পর্যন্ত এক নাও হয়, তাহলেও যেটা করা যাবে সেটা হল কিছুটা রাস্তা পাশাপাশি হাঁটা। হয়ত এক বামপন্থী হিসেবে আমি ট্রেড ইউনিয়ন করেছি সারাজীবন। সেটা তো আমায় বাধা দেয় না সমকামীদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে, এটা জেনেও যে সেই সমকামীদের-ই কেউ কেউ ভারতে লেবার ল-এর তীব্র বিরোধী হতে পারেন। কিন্তু একটা ক্ষেত্রে যে শোষক সে অন্য ক্ষেত্রে শোষিত হতেই পারে এই সত্যিটা কেন অস্বীকার করব?
ক্লাসিকাল মার্ক্সিস্টরা বলেন, এবং আমাদের দেশে তাঁরাই বেশি স্বীকৃত, যে সমস্ত সমস্যা আসলে এক সুতোয় বাঁধা। জাত পাতের বৈষম্য বা লিংগ-সমতার দাবীতে আন্দোলন আসলে অর্থনৈতিক প্রশ্নগুলোর নানা আদলে রিফ্লেকশন। মনে হয় এখন সময় এসেছে এই ইউনিফায়েড থিওরির বদলে সমস্ত আন্দোলনকে তার নিজের পার্স্পেক্টিভে দেখার। নাহলে ওই 'যে যেখানে লড়ে যায় আমাদের-ই লড়া' বলে সমস্ত প্রতিরোধের ওপর আলোকপ্রাপ্ত শিক্ষিত সমাজ নিজেদের আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছে অনিচ্ছেগুলো চাপিয়ে দেবে এবং দিয়ে এসেছে এতদিন ধরে। আর তাই প্রান্তিক মানুষের উচ্ছেদ হওয়ার সংগ্রাম শুধুই উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন হিসেবে দেখা হোক। কবে সরকার বদলাবে ব্যবস্থা পাল্টাবে সেই দিকে না তাকিয়ে আশু কোন উপায়ে রেজিস্টান্স করা যায় এবং জাস্টিস আনা যায় সেটার কথা ভাবা হোক। তার জন্যে যদি রাজনৈতিক দলের হাত ধরতে হয় তো হবে। যদি রাজনৈতিক দল সেই আন্দোলনকে জোর করে নিজের প্রোগ্রামের সাথে মিলিয়ে দিতে চায় তো দলহীন ভাবেই চলতে হবে। প্রয়োজনে বিরোধী দলের-ও হাত ধরতে হবে। কিন্তু কবে ব্যাকরণ মেনে একটা স্ট্রাকচারড বামপন্থী শ্রমিক কৃষকের আন্দোলন হবে তার অপেক্ষায় বসে থেকে এই আনস্ট্রাকচারড রেজিস্টান্সগুলোকে অবজ্ঞা করার মতন জায়গায় এখন য়ার নেই আমরা।
এখন সম্ভবত বোঝার সময় এসেছে যে সমস্ত রেজিস্টান্স আসলে অধিকার রক্ষার লড়াই। সে কিস অফ লাভ-ই হোক বা নির্ভয়া। এবং এক আন্দোলনের বিরোধী হয়েও অন্য আন্দোলনে কারোর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করায় সমস্যা নেই কোনও। কিস অফ লাভ কে যে বিরোধীতা করছে ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী বলে কামদুনির ঘটনা ঘটলে সে-ই ব্যারিকেড গড়তে ছুটে যাবে এবং তার সেই ছুটে যাওয়াটাও এক-ই রকমভাবে সমান সত্যি। সেই সত্যিটাকে অস্বীকার করলে গোটা শাহবাগ বা তাহিরীর স্কোয়ারকে অস্বীকার করা হয়। বরং বামপন্থীদের কাজ হতে পারে সেই আন্দোলন তাঁদের পছন্দসই না হলেও তার পাশাপাশি হাঁটা। একটা মডেল দিল্লীতে আম আদমী পার্টি দেখিয়েছে, দেখাচ্ছে। রেজিস্টান্সের প্রয়োজনে গান্ধীবাদ, বামপন্থা, অ্যানার্কি যে কোনো মডেল বা তাদের মিশ্রণ স্বাগত। কোনোকিছুই অচ্ছ্যুত নয়, প্রতিরোধ সংগ্রামে। আর কে কেমনভাবে কোন ইস্যুতে প্রতিরোধ করবে সেটা আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। এমনকি সেই রেজিস্টান্স যদি ফর দ্য সেক অফ রেজিস্টান্স-ও হয় তো সেটাও স্বাগত। লোকদেখানো হলেও স্বাগত। এই অক্ষম সময়ে দক্ষিণপন্থার তীব্র বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক আগ্রাসন মুখ বুজে মেনে নেবার বদলে কেউ যদি রাজভবনের গায়ে একটা মলোটভ ককটেল ছুঁড়ে মারে, কেউ যদি কলকাতার রাস্তায় সাইকেল চালানোর দাবীতে মুভ করে, অথবা কেউ যদি শুধুই লোক-দেখানোর জন্য রাস্তা অবরোধ করে চুমু খায় তো সেই সব, সবকিছুই স্বাগত।
এই আন্দোলনগুলো আল্টিমেটলি কোন ফর্ম নেবে কেউ বলতে পারে না। হয়ত মুছে গেল কিছুদিন বাদে। আবার হতেই পারে পাশাপাশি চলতে চলতে মিলে গেল একে অপরের সাথে। ভবিষ্যতের ঠিকা নিয়ে তো কেউ-ই বসে নেই! হতেই পারে যে একটা পর্যায়ে গিয়ে মধ্যবিত্তের অ্যাসপিরেশন এবং নিম্নবিত্তের চাহিদা মুখোমুখী প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। উদাহরণস্বরূপ, কিস অফ লাভ-এর সংগঠকদের কোনো গ্রামের মেয়ে তো বলতেই পারে যে 'আপনাদের এই কাজের জন্য আমার বাড়ি থেকে আমায় কলকাতায় পড়তে পাঠাচ্ছে না'। আবার উল্টোটাও হতে পারে। হতেই পারে যে নির্ভয়া কান্ডের পর তথ্যপ্রযুক্তির মহিলা কর্মীরা প্রশ্ন তুলে দিলেন যে 'চিরাচরিত ঝুপড়ি, রাস্তার ধারের দোকান, রুটিওয়ালা ইস্তিরিওয়ালা এই চেনা পরিবেশকে উচ্ছেদ করে আর্বানাইজেশনের নামে স্টেট যে হাইরাইজ আর শপিং মল বানিয়ে চলেছে গন্ডগ্রামের মতন ফাঁকা জায়গায়, সেই অচেনা পরিবেশে অচেনা মুখের ভিড়ে আমার রাত্রিবেলা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে'। এই বিচ্ছিন্নতা আর মেলানোর প্রসেসটা কোথায় গিয়ে শেষমেষ দাঁড়াবে সেটা সময় বলবে। তবে 'সব পথ এসে মিলে যাবে শেষে' এমন স্বপ্ন আজকের দিনে না দেখাই ভাল। যদি কেউ
উদ্দেশ্যহীনতার অভিযোগ তোলেন তাহলে একটাই কথা বলার, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন কোনো রেজিস্টান্স হয়নি যেটা ভবিষ্যত চোখের সামনে দেখতে পেয়েছে। রেজিস্টান্স হয়েছে আশু সমস্যার খাতিরে। আর উদ্দেশ্য নেই বলে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, জাস্টিসের জন্য এবং অপ্রেশনের বিরুদ্ধে তার লড়াই থেমে থাকবে না। আপনার আল্টিমেট গোল মেটানোর দায় আমার রেজিস্টান্সের নয়।
জাঁ পল সাঁর্ত্র বুড়ো বয়েসে, স্বপ্নভংগ তিতকুটে মনে এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন যে আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে যেখানে দক্ষিণপন্থী পার্টিগুলো হারামজাদা আর বামপন্থী পার্টিগুলো বিপ্লবের সব থেকে বড় শত্রু, সেখানে তিনি চেয়ে আছেন নতুন কোনো ফোর্সের উঠে আসার দিকে। কোনো এক তৃতীয় শক্তি যারা প্রতিরোধ কামনায় রাত জাগবে। আমরা সেই শক্তি দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে, দিনের পর দিন। কপিবুক মুভমেন্ট নয় তো কি এসে গেল! মলোটভের অভাবে পাঁকভরা বেলুন ছুঁড়েই আপাতত না হয় কমরেড আচার্য্যর নিদ্রাভংগ করা যাক!