আজকাল আর বেশি লেখা লেখি করা হয় না। চর্তুদিকে যা দেখি তাতে আর সময় পাই না। আজ মনে হল কিছু কথা বলা দরকার, আমার কথা , আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে এলাম আজ। এখানে নানা বিষয়ে কথা হয়, তর্ক হয়, সব জানি না বুঝিনা তো কথা বলব কি সাহসে। যাক ধান ভাঙতে শিবের গীত বন্ধ করে সোজা কথায় আসি।
আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকি, আমরা রেশন দোকানে যাই কি ? যদি না যাই তা হলে কষ্ট হলেও কয়েক সপ্তাহ একটু যাই না। লোকসভা ভোটে হারার পর থেকে নানা মুনি নানা ভাবে বামফ্রন্ট সরকার আর সি পি আই এম পার্টির নানা খুত খুঁজেই চলেছেন। কেউ সত্যি কিছু দেখাচ্ছেন, আর বেশির ভাগ ঝাল মেটাচ্ছেন পার্টিটার গুষ্ঠি উদ্ধার করে। এটা আমার মত যাঁরা মানেন না , মাথার দিব্যি দিয়ে মানাতেও চাই না। তাঁরা থাকুন তাদের মত নিয়ে।
জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া, নিম্নবিত্ত দূরে থাক মধ্যবিত্তের ও পেটে টান পড়েছে , রোজ যা খেতেন ২ বছর আগে এখন বাজারে গেলে অনেক কিছু ছেঁটে ফেলছেন বা পরিমাণে কমাচ্ছেন তাঁরা। এই বাজার দরের জন্য সরাসরি দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ তা মনে করছেন না। কেন দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার জানেন বোধহয় সকলে তাও এক দুই করে লিখি।
এক নম্বর দেখুন পেট্রোল, ডিজেলের দামের কি অবস্থা, বিদেশের বাজারে অপরিশোধিত তেল এখন ৭৪ ডলার প্রতি ব্যারেল। এক ব্যারেল মানে ১৭৬ লিটার , এক ডলার মানে ৪৮ টাকা, আর অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে এক লিটারে খরচা ২২ পয়সা। সব মিলিয়ে দাম পড়ে ২২ টাকার কাছে আর তা বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৫ টাকার কাছাকাছি। তেলের দাম বেশি হলে সব জিনিসের দাম বাড়ে , নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের মুখে আর তেলের দাম বাড়ার গল্প নেই , আমাদের আছে তো ?
দ্বিতীয় হল আগাম বাণিজ্য নীতি , বামপন্থীদের চাপে খাদ্যে ওটা চালু ছিল না , তৃণমুল সমর্থিত কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্য দ্রব্যের উপর সেটা চালু করেছে। চিনি , গম, ডাল সব এখন আগাম বাণিজ্যের কবলে। ক্ষেত থেকে ফসল ওঠার আগে চুক্তি হয়ে গেছে , উৎপন্ন খাদ্য চলে যাবে বিদেশি কম্পানির গোডাউনে। আর কি চাই যে দিন চিনি আর, ডাল আগাম বাণিজ্যে ঢুকলো সেদিন থেকে চিনি আর ডালের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজ তো লিখবে না কে বলবে এসব সাধারণ মানুষের কাছে আমরা ছাড়া?
তৃতীয় কারণটা আরও মারাত্বক, দিদিমণি তখন এন ডি এ জামানায় মন্ত্রী ছিলেন, তখন থেকে অত্যাবশকীয় পণ্য আইন কে নখ দাঁতহীন করে হল। মজুতদারী করলে কোন শাস্তি নেই, রাজ্য সরকার কিছু করতে পারে না আইন নেই। আলুর ক্ষেত্রে দেখুন কি করুণ হাল রাজ্য সরকারের। দিদিমণির কথা শুনে অনেকে বলেন আলুর দাম বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকার দায়ী কেন্দ্র সরকার কি করবে? আসল কারণ ঃ- ধসা রোগে আলুর ফলন কম, তবু রাজ্যের ৪৫০ টা হিমঘরে যে আলু আছে তাই দিয়ে নতুন আলু ওঠার আগে তিন মাস পশ্চিমবঙ্গে আলুর যা দরকার তা জোটান যেত। কিন্তু অত্যাবশকীয় পণ্য আইন না থাকায় রাজ্য সরকার কে কাঁচকলা দেখিয়ে আলু হিমঘরে রেখে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে হিমঘরের মালিকরা।
এই তিনটে কারণ থেকে যে ব্যবস্থা কিছুটা হলেও মানুষ কে বাঁচাতে পারে তা হল গণবন্টণ ব্যবস্থা, মানে রেশন , কিন্তু সেখানেও কেন্দ্রীয় সরকার বাধা দিয়ে রেখেছে, পারলে রেশন ব্যবস্থাটা তুলে দেয়। এমনিতে বি পি এল ছাড়া কারুর রেশন নেই তার উপর খাদ্য নিরাপত্তা বিল এর নাম করে ওরা বিপিএল নির্ধারণ করার অধিকার নিজেদের হাতে নিতে চাইছে। যেহেতু অর্জুন সেনগুপ্তের রির্পোটে আছে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের দৈনিক আয় ২০ টাকার নিচে তাই বিপিএল এর নতুন মাপকাঠি করছে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামে ১১ টাকা আর শহরে ১৮ টাকা আয় যারা করেন তাঁরাই খালি বিপিএল থাকবেন। তার মানে রেশন ব্যবস্থাটা আর কিছু থাকবে না । এর মধ্যে আবার আশিয়ান চুক্তি সই করা হয়ে গেছে ফলে ৩০০০ মাল বিনা শুল্কে আমাদের বাজারে ঢুকবে, কৃষি পন্য আছে তার মধ্যে, ফলে কৃষকের বেঁচে থাকার যে রাস্তা ছিল সেটাও বন্ধ হল। wto এর দোহা রাউন্ড এর নতুন করে সমঝোতার লাইন বার হচ্ছে , আর কি ভর্তুকি দেওয়া যাবে না । কৃষি পণ্যের দাম যা হবে তাতে আর বাজার করে খেতে হবে না। কে বলবে সাধারণ মানুষ কে এই কথাগুলি আনন্দবাজার বা স্টার আনন্দ নিশ্চয়ই নয়। পশ্চিমবঙ্গের ট্রেড ইউনিয়ান গুলি রাস্তায় নামতে শুরু করেছে, ১৬ সেপ্টেম্বার ১০ দফা দাবির প্রথম দাবি মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে। আমরা কি করব? সর্বশক্তি দিয়ে এই নিয়ে প্রচার করব না কি?
আর বামফ্রন্ট সরকার ? এত যার পিন্ডি চটকানো, বন্ধু শত্রু কেউ তো ছেড়ে কথা বলছে না এখন। তারা কি করছে। সীমাবদ্ধ আর্থিক ক্ষমতা নিয়েই রেশন ব্যবস্থাটাকে চালানোর চেষ্টা করছে, চিনি ও ডাল দেবার ব্যবস্থা করেছে, চাল, গম কম দামে দেওয়া চালু ছিল আগে থেকেই। আলুর মজুতদার কে চাপে ফেলার জন্য আইন না থাকয় রেশনের মাধ্যমে পাজ্ঞাব থেকে আলু এনে ১৩ টাকায় পরিবার প্রতি ২ কেজি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা যারা এখানে তর্ক করি সবাই এপিএল, তাই রেশন দোকানে যাই না, আমাদের মাল টা সরকারের ভরতুকি দেওয়া রেটে রেশন ডিলার কেনে আর খোলা বাজারে বেঁচে দেয়। আমাদের কি কিছুই করার নেই? বামফ্রন্ট সরকারের বিকল্প নীতি প্রচার করা ছাড়া , রেশন দোকানে সাপ্তাহিক মাল কেনার উপস্থিতি দূর্নীতি রুখতে সাহায্য করবে। প্রশ্ন হল যাব কি ? মাল খারাপ, সময় নেই প্রভৃতি নানা কারন থাকবে । ডি ওয়াই এফ আই বা সি পি আই এম একদিন ডেপুটেশান দিলে সমস্যা মিটবে না। আপনারা যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন আপনাদের কাছে বিনীত আবেদন মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত কারণ প্রচারের পাশাপাশি একটু বামফ্রন্টের বিকল্প নীতির প্রচার করুন, আর রেশন দোকানে নিয়মিত যান, খোঁজ রাখুন দূর্নীতি থাকলে খবর দিন।
যারা সি পি আই এম এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনের পর্যালোচনা পড়েছেন দেখবেন ভোটে পরাজয়ের কারণ গুলির মধ্যে রেশন ব্যবস্থার ব্যর্থতা কে একটি অন্যতম কারণ বলে সি পি আই এম মনে করেছে।
মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
মেঝেন ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
অই যে
অই ধান্যের মাঠ্যের শেষ্যা
অই যে সেই শাল পিয়ালের বন্যে
লজ্জ্যা পেয়্যা মুখ লুকাঁইছিল্যি
ভুল্যে গেছিস কেনে?
মারাংবুরুর থানে, রাতের বেল্যা
মাদল বাজাঁইছিলাম
তোরা নাচতেছিলি, ফসল কাটার পর্যেয়
নারান কিস্কু ধর্যে ছিল হাত
মুখটি মুই ছিলাম চুপটি কর্যেয
সায় দেছিলি ঘাড় হেলায়েঁ
মন্যে আছে, জল্যে মোর
চোখটি ছিল্য ভরে
পঞ্চায়েতের ঘর্যে তখ্যন
নারান উঠতি নেত্যা
লাল পার্টির আঞ্চলিকের
লতুন সভ্যাপত্যি
মোরে শুধু ডাক দেছিল সেদিন
ঝান্ডা নিয়্যা মিছিল কর্যালর ঠেঙ্গে
দিন গুলান কুথায় যেছে চল্যে
তর কাল্য চুল্যে সাদ্যা রঙের ছাপ
মোর মুখ্যের কাটাকুটির দাগ
বয়স খানা দেছে মোর বল্যে
গাঁয়ে এখন কার্যা যেন আস্যে
রাতের বেল্যা চুপিসাড়ে
ফিসফিসিয়ে শলা করে কত
নারান এখ্যন প্রধান হইঁছে
মোটোর গাড়ি চাপ্যে
নারান এখ্যন ঝান্ডা উড়ায়
তেরঙ্গা - ফুল ছাপ্যে
মোর নামে হুলিয়া দেছে
লাল পার্টির সনে
হাঁটলে পরে নারান কিন্তু
খবর দেব্যে বনে
শালকো সরেন, ফাগু বাস্কে
শোন্যেনি কথা, মান্যেনি
লাশ হয়েঁ যেঁছে
তর খোঁপায় গোঁজা লাল পলাশ ফুল
মেঝেন, মুই পলাশ রঙে আছি
বল্যিস গিয়ে নারান কে তুই
লাল পার্টির নিশান ধরি
য্যে কট্যা দিন বাঁচি
অই ধান্যের মাঠ্যের শেষ্যা
অই যে সেই শাল পিয়ালের বন্যে
লজ্জ্যা পেয়্যা মুখ লুকাঁইছিল্যি
ভুল্যে গেছিস কেনে?
মারাংবুরুর থানে, রাতের বেল্যা
মাদল বাজাঁইছিলাম
তোরা নাচতেছিলি, ফসল কাটার পর্যেয়
নারান কিস্কু ধর্যে ছিল হাত
মুখটি মুই ছিলাম চুপটি কর্যেয
সায় দেছিলি ঘাড় হেলায়েঁ
মন্যে আছে, জল্যে মোর
চোখটি ছিল্য ভরে
পঞ্চায়েতের ঘর্যে তখ্যন
নারান উঠতি নেত্যা
লাল পার্টির আঞ্চলিকের
লতুন সভ্যাপত্যি
মোরে শুধু ডাক দেছিল সেদিন
ঝান্ডা নিয়্যা মিছিল কর্যালর ঠেঙ্গে
দিন গুলান কুথায় যেছে চল্যে
তর কাল্য চুল্যে সাদ্যা রঙের ছাপ
মোর মুখ্যের কাটাকুটির দাগ
বয়স খানা দেছে মোর বল্যে
গাঁয়ে এখন কার্যা যেন আস্যে
রাতের বেল্যা চুপিসাড়ে
ফিসফিসিয়ে শলা করে কত
নারান এখ্যন প্রধান হইঁছে
মোটোর গাড়ি চাপ্যে
নারান এখ্যন ঝান্ডা উড়ায়
তেরঙ্গা - ফুল ছাপ্যে
মোর নামে হুলিয়া দেছে
লাল পার্টির সনে
হাঁটলে পরে নারান কিন্তু
খবর দেব্যে বনে
শালকো সরেন, ফাগু বাস্কে
শোন্যেনি কথা, মান্যেনি
লাশ হয়েঁ যেঁছে
তর খোঁপায় গোঁজা লাল পলাশ ফুল
মেঝেন, মুই পলাশ রঙে আছি
বল্যিস গিয়ে নারান কে তুই
লাল পার্টির নিশান ধরি
য্যে কট্যা দিন বাঁচি
স্বাধিনতা তুমি কার? ~ আবিন দত্তগুপ্ত
যুদ্ধ বিধস্ত প্যালেস্তাইনের রাস্তা। জান্তব শব্ধ তুলে গড়িয়ে চলেছে ইসরাইলি অত্যাধুনিক মানুষখেকো ট্যাঙ্ক। হঠাৎ রাস্তা ফুড়ে বেরিয়ে এলো এগারো বছরের এক কিশোর, বলা যায় বালক--- হাথে তার আধলা একটা ইঠ। চোখের পলক না ফেলতেই ছুড়ে মারলো ট্যাঙ্কের দিকে। না, ট্যাঙ্কটার অপর অস্বাভাবিক কিছু ঘটলো না, কিন্ত ঠিক দুইদিন বাদে ইসরাইলি ফায়ারিং স্কোয়াড গুলি করে খুন করলো ১১ বছরের নাম না জানা কিশোর টিকে। এই ঘটনাটি যখন আমরা দুরদর্শন মারফৎ জানলাম তখন এক অন্তরনীহিত দেশাত্মবোধ বলে উঠল “ দেশের মুক্তির জন্যেই প্রান দিল এই অজানা তরুন”, কিন্তু সত্যি কি তাই? একে আন্তর্জার্তিক বিশেষে মানুষ বলবে, “ দেশ নয়, সার্বিক মুক্তির জন্যেই এই আত্মহূতি” আমার প্রবন্ধ এই দ্বিতিয়ের সমর্থনে।
জাতিয়তাবাদিদের মতে নিজের ঘরের অথবা বৃহদর্থে দেশের এক খন্ড জমি বাঁচাতেই কিশোরের এই বলিদান। আমরা আন্তর্জাতিকরা বলি “ না, সার্বিক মুক্তির জন্যেই এই লড়াই , দুই মুঠো খাবার , ভাতের জন্যে, বহুদিন মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেবার জন্যেই, অস্তিত্ব বাঁচানর এই লড়াই। রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে চলা যুদ্ধযান “ইসরাইলি” না “হামাসের” তাতে সাধারণ দিন আনতে দিন খাওয়া মানুষের কি বা এসে যায়? মানুষ প্রতিরোধ করে তখনই, যখন সেই মারণযন্ত্র তাদের সার্বিক স্বাধিনতা ক্ষুন্ন করে, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিতে চায়, আর তখন যুদ্ধযন্ত্রি জারি হোক না কেনো, স্বদেশীয় বা বিদেশী, তার ওপর কোন ও না কোনো বৃদ্ধ-যুবা-কিশোর বা শিশুর ছোড়া পাথর পড়তে বাধ্য।
জাতিয়তাবাদিরা বলতেই পারেন উপরোক্ত কথা গুলো তো শুধুই মনে হওয়া, রেটরিক ও বটে...... এর সপক্ষে প্রমান কি? প্রমান ইতিহাস। বাংলা দেশ থেকেই শুরু করা যাক। সিরাজদৌলার বাংলাকে আক্রমণ করলেন লর্ড ক্লাইভ-- ইংরেজ। যুদ্ধ হলো। পলাশীর যুদ্ধে নবাব পরাজিত হলেন। বাংলা কোম্পানীর হলো। লক্ষ্যনীয়, যুদ্ধ করলেন শুধুমাত্র মাইনে পাওয়া সৈনিকরা ও নবাবের বিশ্বস্ত অনুচর বৃন্দ। ইতিহাসের কোথাও এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের অংশীদ্বারিত্বের খবর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আসলে নবাব থেকে কোম্পানী- এই ক্ষমতা বদলের অর্থ, এক নিষ্পেশকের হাথ থেকে শাসনভার আর এক নিষ্পেষকের হাথে যাওয়া। সাধারণ মানুষ নবাবেও বঞ্চিত, কোম্পানীতেও। এবার আসি সম্পূর্ণ বিপরিত এক যুদ্ধচিত্রে। স্তালীনগ্রাদের যুদ্ধ। আগ্রাসনকারী প্রচন্ড শক্তিশালী হিটলারের নাৎসীবাহিনি। বৎসর খানেকের বেশী চলা সেই যুদ্ধ, লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারা গিয়েছিলো যুদ্ধে। কেমন ছিলো সেই যুদ্ধ? কেমন ভাবে জয়লাভ করেছিলো আপাত দূর্বল সমাজতান্ত্রীক সোভিয়েত? জয় এসেছিলো শুধুমাত্র সোভিয়েত জনগনের অদ্ভূত- অপূর্ব আত্মত্যাগে। প্রতি রাস্তায়, প্রতিটি ঘরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো সাধারণ মানুষ। কারখানায় ট্যাঙ্ক তৈরি হচ্ছে, শ্রমিকরাই সেই ট্যাঙ্কে চেপে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাচ্ছেন। লক্ষ্যাধিক সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ সেদিন শুধুমাত্র তাদের পিতৃভূমি কে রক্ষা করেনি, রক্ষা করেছিলো সমগ্র বিশ্বকে। সেদিন সোভিয়েতের মানুষ লড়াই করেছিলেন তাদের সার্বিক মুক্তির অধিকার কে বজায় রাখতে, লড়াই ছিলো অস্তিত্বের। আরো কিছুদিন আগের ঘটনা---- ১৯৩৫-৩৬ এর স্পেন। গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করল দক্ষিন-পন্থী-জাতিয়তাবাদী - মৌলবাদী এক জোট। মুলত বামপন্থী সেই সরকার ছিলো যুগ-যুগ ধরে বঞ্ছিত- খুদার্ত স্পেনের দরিদ্র মানুষের সরকার- পরে বাংলাতে যেমন অপারেশন বর্গা হয়েছিলো, কৃষকের কোমরের জোরে, বামফ্রণ্ট সরকারের হাথ ধরে, এমনি প্রথম বামপন্থী সরকার ও জোতদার - জমিদারের হাথ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দিতে আরম্ভ করেছিলো জমিতে লাঙ্গল চষা চাষীদের মধ্যে। স্বাবাভিক ভাবেই এই বামপন্থী “অনাচার” সমাজের ওপরতলার কায়েমি-স্বার্থের মূল ভিত্তিতে আঘাত করেছিলো। সুতরাং বামপন্থীদের ক্ষমতাচূত করাও আবশ্যিক হয়ে পড়লো। আজকের ভারতবর্ষে বামপন্থী- দমনে বিদেশী হাথ যেমন সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার, সেদিন স্পেনে সেই ভূমিকায় অবতীর্ন ফ্যাসিস্ত হিটলার- মুসলিনীরা। সেইবারই পৃথিবী প্রথম দেখেছিলো আন্তজার্তিক গনফৌজকে, নেতৃত্বে সোভিয়েত। আন্তর্জার্তিক সৈন্যবাহিনীর সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে জাতিয়তাবাদিদের (যাদের মূল স্লোগান ছিলো “God, Country and king”) বিরুদ্ধে লড়েছেন সাধারণ না খেতে পাওয়া মানুষ। তারা সেইদিন লড়াই করেছিলেন তাদের সার্বিক মুক্তির ফেরিওয়ালা বামপন্থী সরকারকে রক্ষা করার প্রাণের আকুতি নিয়ে । জাতিয়তাবাদীরা এদের কি বিশেষনে ভূষিত করবেন? বিশ্বাসঘাতক? ঠিক তাই। ফ্যাসিস্তরা অবশ্য তাই বলেছিলো। এরকম হাজারো উদাহারণ আছে ইতিহাসে। ইতিহাস শিক্ষক আমরা শেখার চেষ্টা করছি মাত্র।
স্বাধিনতা দিবস পালন। আপনার বাড়ির পাশে বস্তি টা, তার কোনো একটা ঘরে ঢুকে যান। দেখবেন উলংগ বাচ্ছা তিনটে ধূলো মেখে রাস্তায় বসে । হাথে জাতিয় পতাকা-- পেটে খাবার নেই- চোখে খুদাপীড়নের প্রতিচ্ছবি-- অশ্রু। ১৯৪৭ এর আগে দেশ পরাধীন, ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের মুখাপেক্ষী, ৪৭ এর পরে দেশ স্বাধিন, এবং সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল। এই দুই অর্ধেই ওই গাল ভাঙ্গা পোকা মাকড়ের মতন দেখতে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ খুদার্থ, আর দুই অর্ধেই তাদের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়েছে ওপরের তলার মানুষ। স্বাধিনতার পূর্বে যাদের মাথায় জমিদারি পাগড়ি, স্বাধিনতার পরে পাগড়ির জায়গা নিয়েছে “সাম্রাজ্যবাদী দালাল” প্রতিক “গান্ধী টুপি” ধারী “সেবাদল” বৃন্দ। সীমান্ত যুদ্ধ এই সব উপরতলার বড়মানুষদের অর্থাৎ খমতার অধিকারী- অধিকারীনিদের একটা পলায়নের রাস্তা। দেশের নিরক্ষর, নীপিড়িত , বুভূক্ষু হাড় জিরজিরে জনতা যে সময়তে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে- তখনই যুদ্ধ, মহান দেশপ্রেমের দেশী মদে (পড়ুন চোলাইয়ে) অশীক্ষিত মানুষকে মাতাল করে দিয়ে, মুহূর্তের জন্যে তাদের দুক্ষ্য-দূর্দশা কে ভূলিয়ে দেবার প্রচেষ্টা মাত্র। স্বদেশী কথায় মানুষ মোহগ্রস্ত , নিস্তেজ হলো। মাথার ওপর তোলা মুষ্টি বদ্ধ হাথ শিথিল হলো, রাজার আসন টলতে গিয়েও , টললো না। ৬৭ এর যুদ্ধ, ৭১ এর যুদ্ধ, কার্গিল--- প্রতিটা যুদ্ধের “প্রেলিউড” সেই একই গপ্প। যুদ্ধ শেষ, দেশ বাসীর প্রাপ্তির খাতায় গোটা চারেক সিনেমা, গোটা দশেক দেশ্মাত্ববোধক গান এবং আরেকটু বেশী ঘন হয়ে যাওয়া গরিব মানুষের মৃত্যুমিছিল।
তাই আজ, জাতিয়তাবাদী স্বাধিনতার ৬২ বছর পর প্রশ্ন জাগে? স্বাধিনতা তুমি কার? স্বাধিনতা , তুমি কিসের জন্যে? এ কেমন স্বাধিনতা?
জাতিয়তাবাদিদের মতে নিজের ঘরের অথবা বৃহদর্থে দেশের এক খন্ড জমি বাঁচাতেই কিশোরের এই বলিদান। আমরা আন্তর্জাতিকরা বলি “ না, সার্বিক মুক্তির জন্যেই এই লড়াই , দুই মুঠো খাবার , ভাতের জন্যে, বহুদিন মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেবার জন্যেই, অস্তিত্ব বাঁচানর এই লড়াই। রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে চলা যুদ্ধযান “ইসরাইলি” না “হামাসের” তাতে সাধারণ দিন আনতে দিন খাওয়া মানুষের কি বা এসে যায়? মানুষ প্রতিরোধ করে তখনই, যখন সেই মারণযন্ত্র তাদের সার্বিক স্বাধিনতা ক্ষুন্ন করে, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিতে চায়, আর তখন যুদ্ধযন্ত্রি জারি হোক না কেনো, স্বদেশীয় বা বিদেশী, তার ওপর কোন ও না কোনো বৃদ্ধ-যুবা-কিশোর বা শিশুর ছোড়া পাথর পড়তে বাধ্য।
জাতিয়তাবাদিরা বলতেই পারেন উপরোক্ত কথা গুলো তো শুধুই মনে হওয়া, রেটরিক ও বটে...... এর সপক্ষে প্রমান কি? প্রমান ইতিহাস। বাংলা দেশ থেকেই শুরু করা যাক। সিরাজদৌলার বাংলাকে আক্রমণ করলেন লর্ড ক্লাইভ-- ইংরেজ। যুদ্ধ হলো। পলাশীর যুদ্ধে নবাব পরাজিত হলেন। বাংলা কোম্পানীর হলো। লক্ষ্যনীয়, যুদ্ধ করলেন শুধুমাত্র মাইনে পাওয়া সৈনিকরা ও নবাবের বিশ্বস্ত অনুচর বৃন্দ। ইতিহাসের কোথাও এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের অংশীদ্বারিত্বের খবর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আসলে নবাব থেকে কোম্পানী- এই ক্ষমতা বদলের অর্থ, এক নিষ্পেশকের হাথ থেকে শাসনভার আর এক নিষ্পেষকের হাথে যাওয়া। সাধারণ মানুষ নবাবেও বঞ্চিত, কোম্পানীতেও। এবার আসি সম্পূর্ণ বিপরিত এক যুদ্ধচিত্রে। স্তালীনগ্রাদের যুদ্ধ। আগ্রাসনকারী প্রচন্ড শক্তিশালী হিটলারের নাৎসীবাহিনি। বৎসর খানেকের বেশী চলা সেই যুদ্ধ, লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারা গিয়েছিলো যুদ্ধে। কেমন ছিলো সেই যুদ্ধ? কেমন ভাবে জয়লাভ করেছিলো আপাত দূর্বল সমাজতান্ত্রীক সোভিয়েত? জয় এসেছিলো শুধুমাত্র সোভিয়েত জনগনের অদ্ভূত- অপূর্ব আত্মত্যাগে। প্রতি রাস্তায়, প্রতিটি ঘরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো সাধারণ মানুষ। কারখানায় ট্যাঙ্ক তৈরি হচ্ছে, শ্রমিকরাই সেই ট্যাঙ্কে চেপে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাচ্ছেন। লক্ষ্যাধিক সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ সেদিন শুধুমাত্র তাদের পিতৃভূমি কে রক্ষা করেনি, রক্ষা করেছিলো সমগ্র বিশ্বকে। সেদিন সোভিয়েতের মানুষ লড়াই করেছিলেন তাদের সার্বিক মুক্তির অধিকার কে বজায় রাখতে, লড়াই ছিলো অস্তিত্বের। আরো কিছুদিন আগের ঘটনা---- ১৯৩৫-৩৬ এর স্পেন। গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করল দক্ষিন-পন্থী-জাতিয়তাবাদী - মৌলবাদী এক জোট। মুলত বামপন্থী সেই সরকার ছিলো যুগ-যুগ ধরে বঞ্ছিত- খুদার্ত স্পেনের দরিদ্র মানুষের সরকার- পরে বাংলাতে যেমন অপারেশন বর্গা হয়েছিলো, কৃষকের কোমরের জোরে, বামফ্রণ্ট সরকারের হাথ ধরে, এমনি প্রথম বামপন্থী সরকার ও জোতদার - জমিদারের হাথ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দিতে আরম্ভ করেছিলো জমিতে লাঙ্গল চষা চাষীদের মধ্যে। স্বাবাভিক ভাবেই এই বামপন্থী “অনাচার” সমাজের ওপরতলার কায়েমি-স্বার্থের মূল ভিত্তিতে আঘাত করেছিলো। সুতরাং বামপন্থীদের ক্ষমতাচূত করাও আবশ্যিক হয়ে পড়লো। আজকের ভারতবর্ষে বামপন্থী- দমনে বিদেশী হাথ যেমন সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার, সেদিন স্পেনে সেই ভূমিকায় অবতীর্ন ফ্যাসিস্ত হিটলার- মুসলিনীরা। সেইবারই পৃথিবী প্রথম দেখেছিলো আন্তজার্তিক গনফৌজকে, নেতৃত্বে সোভিয়েত। আন্তর্জার্তিক সৈন্যবাহিনীর সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে জাতিয়তাবাদিদের (যাদের মূল স্লোগান ছিলো “God, Country and king”) বিরুদ্ধে লড়েছেন সাধারণ না খেতে পাওয়া মানুষ। তারা সেইদিন লড়াই করেছিলেন তাদের সার্বিক মুক্তির ফেরিওয়ালা বামপন্থী সরকারকে রক্ষা করার প্রাণের আকুতি নিয়ে । জাতিয়তাবাদীরা এদের কি বিশেষনে ভূষিত করবেন? বিশ্বাসঘাতক? ঠিক তাই। ফ্যাসিস্তরা অবশ্য তাই বলেছিলো। এরকম হাজারো উদাহারণ আছে ইতিহাসে। ইতিহাস শিক্ষক আমরা শেখার চেষ্টা করছি মাত্র।
স্বাধিনতা দিবস পালন। আপনার বাড়ির পাশে বস্তি টা, তার কোনো একটা ঘরে ঢুকে যান। দেখবেন উলংগ বাচ্ছা তিনটে ধূলো মেখে রাস্তায় বসে । হাথে জাতিয় পতাকা-- পেটে খাবার নেই- চোখে খুদাপীড়নের প্রতিচ্ছবি-- অশ্রু। ১৯৪৭ এর আগে দেশ পরাধীন, ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের মুখাপেক্ষী, ৪৭ এর পরে দেশ স্বাধিন, এবং সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল। এই দুই অর্ধেই ওই গাল ভাঙ্গা পোকা মাকড়ের মতন দেখতে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ খুদার্থ, আর দুই অর্ধেই তাদের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়েছে ওপরের তলার মানুষ। স্বাধিনতার পূর্বে যাদের মাথায় জমিদারি পাগড়ি, স্বাধিনতার পরে পাগড়ির জায়গা নিয়েছে “সাম্রাজ্যবাদী দালাল” প্রতিক “গান্ধী টুপি” ধারী “সেবাদল” বৃন্দ। সীমান্ত যুদ্ধ এই সব উপরতলার বড়মানুষদের অর্থাৎ খমতার অধিকারী- অধিকারীনিদের একটা পলায়নের রাস্তা। দেশের নিরক্ষর, নীপিড়িত , বুভূক্ষু হাড় জিরজিরে জনতা যে সময়তে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে- তখনই যুদ্ধ, মহান দেশপ্রেমের দেশী মদে (পড়ুন চোলাইয়ে) অশীক্ষিত মানুষকে মাতাল করে দিয়ে, মুহূর্তের জন্যে তাদের দুক্ষ্য-দূর্দশা কে ভূলিয়ে দেবার প্রচেষ্টা মাত্র। স্বদেশী কথায় মানুষ মোহগ্রস্ত , নিস্তেজ হলো। মাথার ওপর তোলা মুষ্টি বদ্ধ হাথ শিথিল হলো, রাজার আসন টলতে গিয়েও , টললো না। ৬৭ এর যুদ্ধ, ৭১ এর যুদ্ধ, কার্গিল--- প্রতিটা যুদ্ধের “প্রেলিউড” সেই একই গপ্প। যুদ্ধ শেষ, দেশ বাসীর প্রাপ্তির খাতায় গোটা চারেক সিনেমা, গোটা দশেক দেশ্মাত্ববোধক গান এবং আরেকটু বেশী ঘন হয়ে যাওয়া গরিব মানুষের মৃত্যুমিছিল।
তাই আজ, জাতিয়তাবাদী স্বাধিনতার ৬২ বছর পর প্রশ্ন জাগে? স্বাধিনতা তুমি কার? স্বাধিনতা , তুমি কিসের জন্যে? এ কেমন স্বাধিনতা?
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)