বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

জরুরি অবস্থায় আরএসএস-এর আত্মসমর্পণ ~ দেবেশ দাস

বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২৫শে জুন সংবিধান হত্যা দিবস হিসাবে পালন করা হবে, কারন ১৯৭৫ সালে ওইদিন জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। জরুরি অবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আজকের বিজেপির উত্তরসুরী জনসঙ্ঘ নেতারা ছিলেন ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তথা আরএসএস-এর লোকও ছিলেন। কিন্তু, তার সাথে এটাও সত্যি কথা যে যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র আরএসএস ও জনসঙ্ঘ নেতারাই সেদিন ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেই ইতিহাসটা একটু জেনে রাখা দরকার।

জেলে ঢুকেই আরএসএস নেতারা মুক্তির খোঁজে

আরএসএস-এর প্রধান মধুকর দত্তারেয় দেওরস ওরফে বালাসাহেব দেওরস আটক হন ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন। তার সাথে গ্রেফতার হওয়া মহারাষ্ট্রের আরএসএস সংগঠক ভি এন ভিদে, গ্রেফতার হওয়ার মাত্র ১৫ দিন বাদে লিখলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবনকে - "সঙ্ঘ এমনকি দূর থেকেও সরকার বা সমাজের বিরুদ্ধে কিছু করেনি। সঙ্ঘের কর্মসূচীতে এ জাতীয় জিনিসের কোনও স্থান নেই। সঙ্ঘ কেবল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কিন্তু এসব ভিত্তিহীন হিসাবে প্রমাণিত। ...... আমি আপনাকে আটক সঙ্ঘ কর্মীদের মুক্তি দিতে অনুরোধ করছি।" দেওরসের পরামর্শ নিয়েই ভিদে নিশ্চয়ই এই চিঠি লিখেছেন।

আরএসএস প্রধানের ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি

ইন্দিরা গান্ধীকে মোট তিনটি চিঠি লিখেছিলেন দেওরস, হিন্দিতে। তিনটি চিঠি নয়দার এক প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতি প্রকাশন ছাপিয়েছে ১৯৯৭ সালে। প্রথম চিঠি ১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫ তারিখে দিল্লীর লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পর। দেওরস লিখলেন - "সপ্রেম নমস্কার, ১৫ই আগস্ট তারিখে দিল্লীর লালকেল্লায় রাষ্ট্রকে সম্বোধন করে আপনি যে ভাষণ দিয়েছেন, তা আমি আকাশবাণীতে এই কারগার থেকে মন দিয়ে শুনেছি। আপনার ভাষণ সময়োচিত এবং উপযুক্ত আর এর জন্য এই চিঠি লিখতে আমি প্রবৃত্ত হয়েছি"। লালকেল্লার ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী দেশকে গঠন করার নানা কর্মসূচীতে সাহায্য করার জন্য সমাজের সাচ্চা শক্তিগুলিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেওরস চিঠিতে লিখলেন - "১৫ই আগস্টে আপনার ভাষণে এই কাজে সমাজের সাচ্চা শক্তিগুলিকে নিজের নিজের ক্ষেত্র নিয়ে লেগে পড়া চাই বলে আপনি সমস্ত সমাজকে যে ডাক দিয়েছেন তা সময়োচিতই ছিল" । দেশের উত্থানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর এই দেশ গড়ার আহ্বানে সঙ্ঘ যুক্ত হতে চায় সে কথাই লিখলেন দেওরস - "দেশের উত্থানের জন্য সঙ্ঘের এই শক্তিকে যুক্ত করার আয়োজন হওয়া জরুরি"। চিঠি শেষ করেছেন ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করতে চেয়ে - "আপনি চাইলে, আপনার সাথে দেখা করতে আমার আনন্দই হবে"। ভাবুন, যার বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে দুই মাস আগেই আন্দোলন, তার সাথেই দেখা করার জন্য আরএসএস প্রধান ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন।

না, ইন্দিরা গান্ধী দেখা করতে চাননি, উত্তরও দেননি। অধৈর্য হয়ে উঠলেন দেওরস। কিন্তু কী উপলক্ষ্য করেই বা আবার চিঠি লিখবেন? আবার সুযোগ এসে গেল। একটি সুখবর এলো ইন্দিরা গান্ধীর জন্য। ১৯৭৫ সালের ১২ জুন এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, ১৯৭১ সালে লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর জেতা অবৈধ। ইন্দিরা গান্ধী সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনে জেতাকে বৈধ ঘোষণা করে। এই রায় বেরোনোর মাত্র ৩ দিন পরে ইন্দিরা গান্ধীকে অভিনন্দন জানিয়ে দেওরস চিঠি পাঠালেন ১০ ই নভেম্বর, ১৯৭৫ - "সাদর নমস্কার, উচ্চতম আদালতের পাঁচ বিচারপতি আপনার নির্বাচনকে বৈধ ঘোষণা করেছেন বলে আপনাকে হার্দিক অভিনন্দন"। তিনি লিখলেন - "শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণের ---------- আন্দোলনের সাথে সঙ্ঘের কোনও সম্পর্ক নেই"। জয়প্রকাশ নারায়ণ ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার আগে থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যেদিন জরুরি অবস্থা জারি হয় সেদিনও জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে দিল্লীতে বিশাল জমায়েত হয়েছিল। তিনি আরও লিখলেন -"আমার আপনার কাছে প্রার্থনা যে আপনি প্রকৃত পরিস্থিতি জানুন...... সঙ্ঘের সম্বন্ধে সঠিক ধারণা বানান ...... সঙ্ঘের কয়েক হাজার লোককে মুক্তি দিন।
 .........এটা করলে সঙ্ঘের লাখ লাখ স্বয়ংসেবকদের নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার শক্তি সরকারী এবং বেসরকারী পথে রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য কাজে লাগবে ও আমাদের সকলের ইচ্ছা অনুসারে আপনার দেশ সমৃদ্ধ হবে। পত্রের উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম"।

১৬ই জুলাই, ১৯৭৬ ইন্দিরা গান্ধীকে দেওরসের তৃতীয় চিঠি- "সাদর নমস্কার, আমি আপনাকে আগেই দুটি চিঠি লিখেছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের কোনও প্রাপ্তিস্বীকার বা উত্তর পাইনি। ওই চিঠিগুলিতে আমি আপনি ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা আরএসএস সম্বন্ধে যে অভিযোগগুলি করেছেন তার কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছি। অভিযোগগুলির ধরন একই এবং কোনদিন তার স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দেওয়া হয়নি। ...... আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে দয়া করে সঙ্ঘ সম্বন্ধে যে ভুল বোঝাবুঝি বিরাজ করছে তার ঊর্ধ্বে উঠুন, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন ও সঙ্ঘের উপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে তাকে তুলুন"।


জরুরি অবস্থায় আরএসএস সম্বন্ধে আইবি রিপোর্ট

জরুরি অবস্থার সময়ে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) হেড অফিসে ভিআইপিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে উচ্চপদে কাজ করতেন বিখ্যাত আইপিএস অফিসার টি ভি রাজেশ্বর, পরে তিনি আইবি-র ডিরেক্টর হয়েছিলেন। শেষ বয়সে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে 'ইন্ডিয়া, দি ক্রুসিয়াল ইয়ারস' নামে একটা বই লিখেছেন, তাতে বিভিন্ন সময়ে আইবি দপ্তরের কিছু গোপন তথ্য আছে। তাতে লিখেছেন- "জরুরি অবস্থার প্রবর্তনে দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এর প্রধান বাবাসাহেব দেওরস, নীরবে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সাথে একটি সংযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং দেশে নিয়ম ও শৃঙ্খলা প্রয়োগের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। ...... আইবি-র একজন সিনিয়র অফিসার আরএসএসের উচ্চস্তরের কিছু লোককে জানতেন এবং দেওরস সহ তাঁদের সাথে কয়েকটি বৈঠক করেছিলেন। দেওরস মিসেস গান্ধী ও সঞ্জয়ের সাথে দেখা করতে আগ্রহী ছিলেন, তবে এটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি"।

জরুরি অবস্থাকে কার্যত সমর্থন

ডি আর গোয়াল রচিত 'রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ' বইতে আছে যে বাবাসাহেব দেওরস-এর বক্তব্য ছিল যে আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করার প্রশ্নই উঠতো না।

আরএসএস-এর শাখাগুলিতে প্রতি সপ্তাহে একটা বক্তৃতা হয়, যাকে বলে 'বৌদ্ধিক'। আরএসএস-এর এক শীর্ষ নেতা বাবা ভিদে, এই সমস্ত বৌদ্ধিকগুলিতে তিনি জরুরি অবস্থার সমর্থনে বক্তৃতা করতেন। এবিভিপির প্রভু চাওলা, বলবীর পুঞ্জ ও শ্রেরাম খান্না হই হই করে ইন্দিরা গান্ধীর ২০ দফা কর্মসূচীতে নেমে পড়েন, ফলে তাদের আর জেলে ঢুকতে হয় না। আরএসএস-এর একনাথ রামকৃষ্ণ রানাডে একটা সংযোগ গড়ে তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর সাথে, তাকে বলা হয় ইন্দিরা গান্ধীর সাথে কথাবার্তা চালাতে।

উত্তরপ্রদেশে জনসঙ্ঘ ১৯৭৬ সালের ২৫শে জুন, জরুরি অবস্থার এক বছর পূর্ত্তিতে  ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে সম্পূর্ণ সমর্থন করার কথা ঘোষণা করে এবং সরকার বিরোধী কোনও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার জন্য আবেদন করে। সেখানেই শেষ নয়, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে ৩৪ জন  জনসঙ্ঘের নেতা কংগ্রেসে যোগ দেন।     

আরএসএস-এ সাথে যুক্ত পুনের একটি মারাঠী দৈনিক 'তরুণ ভারত' সঞ্জয় গান্ধীর নামে একটি বিশেষ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশ করে। আরএসএস-এর হিন্দি মুখপাত্র 'পাঞ্চজন্য' ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে যুব নেতা হিসাবে সঞ্জয়ের উত্থানকে অভিনন্দন জানায়।

আরএসএস-এর মুচলেকা

১৯৭৬ সালের ৩০শে নভেম্বর, আরএসএস-এর মাধবরাও মুলে, দত্তোপন্ত থেনগাডি, মরোপন্ত পিংলে সহ ৩০ জনের উপর নেতা ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লেখেন যে আরএসএস-এর নেতা-কর্মীরা মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বেরোতে চান ও যদি তারা সকলে মুক্তি পান, তবে তারা জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করবেন। মাধবরাও মুলে ছিলেন আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক। তিনি, তখন আত্মগোপনে আছেন। ইন্দিরা গান্ধীর মিডিয়া উপদেষ্টা তখন ছিলেন এইচ ওয়াই সারদা প্রসাদ, তার পুত্র রবি বিশ্বেস্বরায় সারদা প্রসাদ পরে লিখেছেন যে তার পিতাই আরএসএস নেতাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার দায়িত্বে ছিলেন।

মহারাষ্ট্রের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বাবা আদভ দেওরসের সাথে একই জেলে ছিলেন, তিনি নিজের চোখে যা দেখেছেন তা লিখেছিলেন- "বন্দীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তারা কোনও অঙ্গীকার বা স্মারকলিপি সই করতে প্রস্তুত কিনা। আমি নিজের চোখে দেখেছি যে বেশিরভাগ আরএসএস বন্দীরা তাদের সম্মতি স্বাক্ষর করছে"।


সুব্রম্মনীয়মের বক্তব্য
সেদিনের জনসঙ্ঘের এক সাংসদ ছিলেন সুব্রম্মনীয়ম স্বামী, ২০১৩ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি 'দি হিন্দু' পত্রিকায় ১৩ জুন, ২০০০ জরুরি অবস্থা নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন যাতে বলেন যে সেদিনের আরএসএস নেতাদের বেশিরভাগ জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।  তিনি লিখেছেন -"অটল বিহারি বাজপেয়ী মহাশয় ইন্দিরা গান্ধীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে পত্র লিখেছিলেন এবং তিনি তাঁকে দয়া করেছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলে লিখিত আশ্বাস দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ২০ মাসের জরুরি অবস্থার বেশীর ভাগ সময়ে বাজপেয়ী মহাশয় প্যারোলে মুক্ত ছিলেন"। 

মাধবরাও মুলের কাছে থেকে সুব্রম্মনীয়ম  জানেন যে আরএসএস-এর নেতা-কর্মীরা  মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেও,  সুব্রম্মনীয়মকে ছাড়া হবে না, কারণ তিনি বিদেশে ইন্দিরা ও সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে প্রচার করেছেন, ইন্দিরার চোখে ভালো হওয়ার জন্য বাজপেয়ীই বিশ্বাসঘাতকতা করে সুব্রম্মনীয়মকে ধরিয়ে দিতে পারেন।  বাজপেয়ী সুব্রম্মনিয়মকে ধরিয়ে দিতে শাসক দলকে খবর দিয়েছিলেন কিনা, সেটা জানা নেই, কিন্তু এটা সত্যি যে সেই সময়ে বাজপেয়ী নিজে নিজেই একদিন দেখা করতে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র দফতের প্রতিমন্ত্রী  ওম মেহতার সাথে। সুব্রম্মনিয়মের ধারণা যে সেদিন বাজপেয়ী বলে এসেছিলেন যে তিনি আর আরএসএস-এর সাথে আর সম্পর্ক রাখবেন না, এবং তিনি সুব্রম্মনীয়ম স্বামী, মাধবরাও মুলে ও অন্যান্য আরএসএস কর্মীরা যারা তখনো আত্মগোপনে আছে, তাদের সমস্ত হদিস দিয়ে আসেন।  স্বাধীনতার আগে থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা আরএসএস-এর রক্তে আছে।

পুরো রেফারেন্স 

১) Shah Commission of Inquiry – 1st Interim Report, page 25

(২) Shah Commission of Inquiry - 3rd Final Report, page 134

(৩) The Print, 25th June, 2020


(৫) Amit Shah, 'Dictorial Mindset Led To Emergency' , টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ২৬ সে জুন, ২০২১;

(৬) Sushil Kumar Modi. 'A story that needs to be retold', ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৬শে জুন, ২০২১;

(৭) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; page 124-129

(৮) D R Goyal, 'Rashtriya Swayamsevak Sangh', Radhakrishna Prakashan, 1979, page 116

(৯) M. S. Golwalkar, 'We Or Our Nationhood Defined', Bharat Publications, Nagpur1939, page 32

(১০) M. S. Golwalkar, Bunch of Thoughts, Sahitys Sindhu Prakashana, 1966, page 59

(১১) M. S. Golwalkar, Bunch of Thoughts, Sahitys Sindhu Prakashana, 1966, pages 177-201

(১২) Partha Banerjee, 'In the belly of the beast', Ajanta Books International, 1998, page 155

(১৩) The Hindu, 6 March, 2018

(১৪) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; page 486-487

(১৫) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, page 66

(১৬) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; pages 227-228

(১৭) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; pages 225

(১৮) Bipan Chandra, 'In the name of democracy: JP movement and the emergency' Penguin, 2003, page 172

(১৯) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; page 488

(২০) Coomi Kapoor, 'The Emergency: A personal story', Penguin, page 117
(২১) मधुकर दत्ताराय देवरस (बालासाहेब देवरस), 'हिंदू संगठन और सत्तावादी राजनीति', जागृति प्रकाशन, नोएडा, 1997
(২২) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019; page 493-494

(২৩) T V Rajeswar, 'India, The crucial years', Harper Collins, 2015, page 79

(২৪) D R Goyal, 'Rashtriya Swayamsevak Sangh', Radhakrishna Prakashan, 1979, page 124-125;

(২৫) Coomi Kapoor, 'The Emergency: A personal story', Penguin, page 47
(২৬) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, 2023 page 67
(২৭) The wire, 29 June 2024
(২৮) PRAJAKTA R. GUPTE, "India:"The Emergency"and the Politics of Mass Sterilization", Education About ASIA, Volume 22, Number 3, Winter 2017, pp. 40-44

(২৯) T V Rajeswar, 'India: The crucial years', Harper Collins Publisher, India, 2015, page 79

(৩০) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, 2023 page 79

(৩১) Bipan Chandra, 'In the name of democracy: JP movement and the emergency' Penguin, 2003, page 217-218

(৩২) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019, page 494-495;

(৩৩) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019, page 181;

(৩৪) Subramanian Swamy, 'Unlearnt lessons of the Emergency', The Hindu, 13 June, 2000;

(৩৫) Ajaz Ashraf, 'Vajpayee, RSS cowered before Indira Gandhi: BJP can't ignore Swamy's account of the Emergency', Firstpost, June 25, 2015.
(৩৬) Coomi Kapoor, 'The Emergency: A personal story', Penguin, page 122
(৩৭) Coomi Kapoor, 'The Emergency: A personal story', Penguin, page 133
(৩৮) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, 2023, page 36-37
(৩৯) N P Ulekh, 'The untold Vajpayee: politician and paradox', Penguin 2017, page 83-84
(৪০) Coomi Kapoor, 'The Emergency: A personal story', Penguin, page 19
(৪১) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019, page 183
(৪২) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019, page 185
(৪৩) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, 2023, page 66
(৪৪) The Indian Express, 26 February 1977
(৪৫) A G Noorani, 'The RSS A Menac to India', Left Word, 2019, page 197;
(৪৬) The Times of India, 11 April 1977
(৪৭) The Indian express, 8 May 1977
(৪৮) The Times of India 13 February 1980

(৪৯) Neerja Chowdhury, 'How Prime ministers decide', Aleph Book Company, 2023, page 67

শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

বিশ্ব রিফিউজি দিবস ও ফিলিস্তিন ~ অরিজিৎ মুখার্জী

"...𝘛𝘩𝘦𝘴𝘦 𝘰𝘱𝘦𝘳𝘢𝘵𝘪𝘰𝘯𝘴 𝘤𝘢𝘯 𝘣𝘦 𝘤𝘢𝘳𝘳𝘪𝘦𝘥 𝘰𝘶𝘵 𝘪𝘯 𝘵𝘩𝘦 𝘧𝘰𝘭𝘭𝘰𝘸𝘪𝘯𝘨 𝘮𝘢𝘯𝘯𝘦𝘳: 𝘦𝘪𝘵𝘩𝘦𝘳 𝘣𝘺 𝘥𝘦𝘴𝘵𝘳𝘰𝘺𝘪𝘯𝘨 𝘷𝘪𝘭𝘭𝘢𝘨𝘦𝘴 (𝘣𝘺 𝘴𝘦𝘵𝘵𝘪𝘯𝘨 𝘧𝘪𝘳𝘦 𝘵𝘰 𝘵𝘩𝘦𝘮, 𝘣𝘺 𝘣𝘭𝘰𝘸𝘪𝘯𝘨 𝘵𝘩𝘦𝘮 𝘶𝘱, 𝘢𝘯𝘥 𝘣𝘺 𝘱𝘭𝘢𝘯𝘵𝘪𝘯𝘨 𝘮𝘪𝘯𝘦𝘴 𝘪𝘯 𝘵𝘩𝘦𝘪𝘳 𝘥𝘦𝘣𝘳𝘪𝘴) 𝘢𝘯𝘥 𝘦𝘴𝘱𝘦𝘤𝘪𝘢𝘭𝘭𝘺 𝘰𝘧 𝘵𝘩𝘰𝘴𝘦 𝘱𝘰𝘱𝘶𝘭𝘢𝘵𝘪𝘰𝘯


𝘤𝘦𝘯𝘵𝘦𝘳𝘴 𝘸𝘩𝘪𝘤𝘩 𝘢𝘳𝘦 𝘥𝘪𝘧𝘧𝘪𝘤𝘶𝘭𝘵 𝘵𝘰 𝘤𝘰𝘯𝘵𝘳𝘰𝘭 𝘤𝘰𝘯𝘵𝘪𝘯𝘶𝘰𝘶𝘴𝘭𝘺; 𝘰𝘳 𝘣𝘺 𝘮𝘰𝘶𝘯𝘵𝘪𝘯𝘨 𝘤𝘰𝘮𝘣𝘪𝘯𝘨 𝘢𝘯𝘥 𝘤𝘰𝘯𝘵𝘳𝘰𝘭 𝘰𝘱𝘦𝘳𝘢𝘵𝘪𝘰𝘯𝘴 𝘢𝘤𝘤𝘰𝘳𝘥𝘪𝘯𝘨 𝘵𝘰 𝘵𝘩𝘦 𝘧𝘰𝘭𝘭𝘰𝘸𝘪𝘯𝘨 𝘨𝘶𝘪𝘥𝘦𝘭𝘪𝘯𝘦𝘴: 𝘦𝘯𝘤𝘪𝘳𝘤𝘭𝘦𝘮𝘦𝘯𝘵 𝘰𝘧 𝘵𝘩𝘦 𝘷𝘪𝘭𝘭𝘢𝘨𝘦 𝘢𝘯𝘥 𝘤𝘰𝘯𝘥𝘶𝘤𝘵𝘪𝘯𝘨 𝘢 𝘴𝘦𝘢𝘳𝘤𝘩 𝘪𝘯𝘴𝘪𝘥𝘦 𝘪𝘵. 𝘐𝘯 𝘵𝘩𝘦 𝘦𝘷𝘦𝘯𝘵 𝘰𝘧 𝘳𝘦𝘴𝘪𝘴𝘵𝘢𝘯𝘤𝘦, 𝘵𝘩𝘦 𝘢𝘳𝘮𝘦𝘥 𝘧𝘰𝘳𝘤𝘦 𝘮𝘶𝘴𝘵 𝘣𝘦 𝘥𝘦𝘴𝘵𝘳𝘰𝘺𝘦𝘥 𝘢𝘯𝘥 𝘵𝘩𝘦 𝘱𝘰𝘱𝘶𝘭𝘢𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘮𝘶𝘴𝘵 𝘣𝘦 𝘦𝘹𝘱𝘦𝘭𝘭𝘦𝘥 𝘰𝘶𝘵𝘴𝘪𝘥𝘦 𝘵𝘩𝘦 𝘣𝘰𝘳𝘥𝘦𝘳𝘴 𝘰𝘧 𝘵𝘩𝘦 𝘴𝘵𝘢𝘵𝘦..." – 𝑃𝑙𝑎𝑛 𝐷𝑎𝑙𝑒𝑡, 10𝑡ℎ 𝑀𝑎𝑟𝑐ℎ, 1948

আজ বিশ্ব রিফিউজি দিবস। পিঠে কাঁটাতারের দাগ লেগে থাকা মানুষগুলোকে মনে রেখে। যাতে আর কারো পিঠে কাঁটাতারের দাগ না লাগে কোনওদিন। ১৯৪৭-৪৮ সালে দেশভাগের দুটো ঘটনার একটায় আমরা ভুক্তভোগী। আর অন্যটা—ফিলিস্তিনের নকবা—সেইভাবে আমরা মনে রাখিনি কোনোদিনও, যদিও ফিলিস্তিনের মানুষ আমাদেরই মত ভুক্তভোগী। মনে রাখিনি তার একটা বড় কারণ সম্ভবতঃ প্রোপাগান্ডা—"আগ্রাসী আরব দেশগুলো আক্রমণ করেছিল সদ্যজাত ইজরায়েলকে, ইজরায়েল প্রতিরোধ করে, এবং ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রসংঘের ১৮১ নম্বর নির্দেশিকা অনুযায়ী তৈরী নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়..."

ছোট করে রাষ্ট্রসংঘের এই পার্টিশনের ফরমুলাটা লিখে দিই—ব্রিটেনের অধীনে থাকা প্যালেস্টাইন তিন ভাগে বিভক্ত হবে—৪২% অংশ নির্দিষ্ট হবে ৮,১৮,০০০ ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের নিজস্ব রাষ্ট্র হিসেবে, সেখানে থাকবে ১০,০০০ ইহুদী ইমিগ্র্যান্টও। ইহুদীদের নিজস্ব রাষ্ট্র তৈরী হবে ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনের ৫৬% এলাকা নিয়ে, সেখানে থাকবে ৪,৯৯,০০০ ইহুদী, যার বেশিটাই ইউরোপীয় ইমিগ্র্যান্ট এবং ৪,৩৮,০০০ ফিলিস্তিনি অধিবাসী। জেরুজালেম এবং সংলগ্ন এলাকা আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে থাকবে, মোটামুটি দুই লক্ষ অধিবাসীসহ (যাদের মধ্যে ইহুদী এবং ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় সমান সমান)। বেন গুরিয়নের নেতৃত্বে জায়নিস্টরা চেয়েছিল ব্রিটিশ প্যালেস্টাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা শুধুমাত্র ইহুদী বসবাসের জন্যে। রাষ্ট্রসংঘ তার চেয়ে কিছু কম দেয়। এই ফরমুলা মেনে নিয়েও বেন গুরিয়ন বলেছিলেন—

"𝘛𝘩𝘦 𝘢𝘤𝘤𝘦𝘱𝘵𝘢𝘯𝘤𝘦 𝘰𝘧 𝘱𝘢𝘳𝘵𝘪𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘥𝘰𝘦𝘴 𝘯𝘰𝘵 𝘤𝘰𝘮𝘮𝘪𝘵 𝘶𝘴 𝘵𝘰 𝘳𝘦𝘯𝘰𝘶𝘯𝘤𝘦 𝘢𝘯𝘺 𝘱𝘢𝘳𝘵 𝘰𝘧 𝘵𝘩𝘦 𝘓𝘢𝘯𝘥 𝘰𝘧 𝘐𝘴𝘳𝘢𝘦𝘭. 𝘡𝘪𝘰𝘯𝘪𝘴𝘮 𝘳𝘦𝘲𝘶𝘪𝘳𝘦𝘴 𝘵𝘩𝘦 𝘑𝘦𝘸𝘪𝘴𝘩 𝘱𝘦𝘰𝘱𝘭𝘦 𝘵𝘰 𝘣𝘦 𝘢𝘳𝘮𝘦𝘥 𝘢𝘯𝘥 𝘳𝘦𝘢𝘥𝘺, 𝘯𝘰𝘵 𝘰𝘯𝘭𝘺 𝘵𝘰 𝘥𝘦𝘧𝘦𝘯𝘥 𝘪𝘵𝘴𝘦𝘭𝘧 𝘣𝘶𝘵 𝘢𝘭𝘴𝘰 𝘵𝘰 𝘦𝘹𝘱𝘢𝘯𝘥. 𝘛𝘩𝘦 𝘣𝘰𝘶𝘯𝘥𝘢𝘳𝘪𝘦𝘴 𝘰𝘧 𝘡𝘪𝘰𝘯𝘪𝘴𝘵 𝘢𝘴𝘱𝘪𝘳𝘢𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘪𝘯𝘤𝘭𝘶𝘥𝘦 𝘴𝘰𝘶𝘵𝘩𝘦𝘳𝘯 𝘓𝘦𝘣𝘢𝘯𝘰𝘯, 𝘴𝘰𝘶𝘵𝘩𝘦𝘳𝘯 𝘚𝘺𝘳𝘪𝘢, 𝘵𝘰𝘥𝘢𝘺'𝘴 𝘑𝘰𝘳𝘥𝘢𝘯, 𝘢𝘭𝘭 𝘰𝘧 𝘊𝘪𝘴-𝘑𝘰𝘳𝘥𝘢𝘯 𝘢𝘯𝘥 𝘵𝘩𝘦 𝘚𝘪𝘯𝘢𝘪. 𝘞𝘦 𝘮𝘶𝘴𝘵 𝘦𝘹𝘱𝘦𝘭 𝘈𝘳𝘢𝘣𝘴 𝘢𝘯𝘥 𝘵𝘢𝘬𝘦 𝘵𝘩𝘦𝘪𝘳 𝘱𝘭𝘢𝘤𝘦𝘴. 𝘈𝘯𝘥 𝘪𝘧 𝘸𝘦 𝘢𝘳𝘦 𝘧𝘰𝘳𝘤𝘦𝘥 𝘵𝘰 𝘢𝘤𝘤𝘦𝘱𝘵 𝘱𝘢𝘳𝘵𝘪𝘵𝘪𝘰𝘯, 𝘸𝘦 𝘮𝘶𝘴𝘵 𝘢𝘤𝘤𝘦𝘱𝘵 𝘪𝘵 𝘰𝘯𝘭𝘺 𝘵𝘦𝘮𝘱𝘰𝘳𝘢𝘳𝘪𝘭𝘺. 𝘛𝘩𝘦 𝘱𝘢𝘳𝘵𝘪𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘳𝘦𝘴𝘰𝘭𝘶𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘸𝘪𝘭𝘭 𝘣𝘦 𝘥𝘦𝘵𝘦𝘳𝘮𝘪𝘯𝘦𝘥 𝘣𝘺 𝘧𝘰𝘳𝘤𝘦 𝘢𝘯𝘥 𝘯𝘰𝘵 𝘣𝘺 𝘵𝘩𝘦 𝘱𝘢𝘳𝘵𝘪𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘳𝘦𝘴𝘰𝘭𝘶𝘵𝘪𝘰𝘯 𝘪𝘵𝘴𝘦𝘭𝘧"

আর, ঠিক তাইই হয়েছিল ১৯৪৭-৪৮ সালে। রাষ্ট্রসংঘ ঠুঁটো জগন্নাথের মত তাকিয়ে থেকেছিল।

পরবর্তীকালে এই সময়ের সমস্ত ন্যারেটিভ রেকর্ড হয়েছে। ফিলিস্তিনি গ্রাম দের ইয়াসিনের মত একাধিক নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে—আরব অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টার স্পষ্ট ডকুমেন্টেশন। তবুও আরব-ইজরায়েল কনফ্লিক্টের ইতিহাস বেশিরভাগ মানুষের মাথায় ১৯৬৭ সালে দাঁড়িয়ে, বড়জোর ১৯৪৮ সালের মে মাসে, যখন আরব আর্মি প্যালেস্টাইনে ঢোকে, আর তারপর সদ্যজাত ইজরায়েল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে ইত্যাদি...এই প্রোপাগান্ডার তলায় চাপা পড়ে যায় নকবার ইতিহাস, প্ল্যান দালে, আর এই সবকিছুর পথপ্রদর্শক ফিলিস্তিনী "ভিলেজ ফাইলস"...

বিশ্ব রিফিউজি দিবসে তাই এই ভিলেজ ফাইলসের কথা লিখি—ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের নীল নকশা।

এই নীল নকশার শুরু তিরিশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে—ততদিনে হাগানাহ তৈরী হয়ে গেছে, ফিলিস্তিনিদের বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেয়নেট চালিয়ে বিদ্রোহীদমনের (মানে গ্রামের সাধারণ মানুষ) ট্রেনিংও সারা। ১৯৩৭-৩৮ সাল নাগাদ হিব্রু ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের প্রফেসর বেন-জায়ন লুরিয়া এক পরিকল্পনা তৈরী করেছিলেন—ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত সমস্ত গ্রামের খুঁটিনাটি বর্ণনা ধরে রাখার—যা পরে জায়নিস্টদের জমি দখলের কাজে সাহায্য করবে। ইহুদি জাতীয় তহবিল (জেএনএফ)—ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের মূল হাতিয়ার—এই প্রকল্পকে সাদরে গ্রহণ করে। সেই সময়ে জেএনএফ-এর প্রধান ইয়োসেফ ওয়াইৎজের নেতৃত্বে স্বয়ং ফিলিস্তিনি চাষীদের জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে।

কী কী তথ্য ধরে রাখা হত এই ভিলেজ ফাইলসে? সমস্ত ভৌগোলিক তথ্য, যেমন গ্রামের অবস্থান, যোগাযোগের রাস্তা, জলের উৎস, জমির মান; সামাজিক-রাজনৈতিক তথ্য, যেমন জনগোষ্ঠীর গঠন, গ্রামপ্রধান (মুখতার), ধর্মীয় পরিচয়, গোত্র কাঠামো, প্রতিবেশী গ্রামের সাথে সম্পর্ক; অর্থনৈতিক তথ্য, যেমন আয়ের উৎস, চাষাবাদের জমি, ফলের বাগিচা, পশুসম্পদ, কারিগর, যানবাহন; জায়নিস্ট কলোনিয়ালিজমের প্রতি ভাবনা, যেমন ১৯৩৬ সালের ব্রিটিশ ও জায়নবাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহে সেই গ্রাম অংশ নিয়েছিল কিনা, কারা ছিল তার মধ্যে ইত্যাদি। এর মধ্যে, সেই বিদ্রোহে নিহতদের পরিবারের নাম বিশেষভাবে নথিভুক্ত করা হত। ইহুদি হত্যার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে ছিল, তাদের তথ্যও আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হত। এছাড়া যোগাড় করা হত সামরিক তথ্যও, যেমন গ্রামে পাহারাদারের সংখ্যা, গ্রামবাসীদের কাছে থাকা অস্ত্রের ধরন ও গুণমান—যদিও সেই অস্ত্রের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য, আর যা ছিল তাও মান্ধাতার আমলের।

শেফেয়া নামের এক ইয়ুথ ভিলেজ—যুবকদের বোর্ডিং স্কুল—ছিল এই তথ্য সংগ্রহের ঘাঁটি। খানিকটা কোল্ড ওয়ারের সময়কার "স্পাই ভিলেজ"-এর মত—যেখানে ফিলিস্তিনি গ্রাম্য জীবনযাপনের ট্রেনিং নিত আরবী বলিয়েকইয়ে ইহুদী যুবকরা। এই শেফেয়া থেকেই তারা বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রামে যেত, আরব অধিবাসীদের আতিথেয়তার ফায়দা নিয়ে এই সমস্ত তথ্য যোগাড় করত। এজরা ড্যানিনের হাতে এই প্রোজেক্টের দায়িত্ব আসার পর ক্রমশ: আরো ব্যাপক চেহারা নেয় ভিলেজ ফাইলস।

১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইন ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় (আচমকাই, অনেকটা ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্তের মতই), তখন এই ভিলেজ ফাইলস সরাসরি যুদ্ধপ্রস্তুতির কাজে লাগায় জায়নিস্টরা। প্রত্যেক গ্রামের জন্যে "ওয়ান্টেড" লিস্ট তৈরী হয়—১৯৩৬ সালের ফিলিস্তিনি বিদ্রোহে যুক্ত থাকা লোকজন, মুফতি হজ আমিন আল-হুসেইনির সমর্থক লোকজন, প্রকাশ্যে ব্রিটিশ এবং জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে কথা বলা লোকজনের নাম তো লিস্টে উঠতোই, এমনকি লেবাননে বেড়াতে গিয়ে থাকলে বা গ্রামের পঞ্চায়েত ধাঁচের কমিটির সদস্য হলেও এই তালিকায় নাম উঠে যেত…
১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বর রাষ্ট্রসংঘের পার্টিশন প্ল্যান পাশ হয় জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে। আর এর পরেই অ্যাক্টিভেট হয় প্ল্যান সি, হিব্রু ভাষায় গিমেল—বাস্তবে যেটা প্যালেস্টাইনের এলাকা দখলের জন্যে তৈরী এর আগের দুটো প্ল্যানের মিশেল—স্পষ্টপভাষায় যেখানে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিশিষ্ট লোকজন, ফিলিস্তিনি অফিসার এবং কর্মীদের "খতম" করার কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল ফিলিস্তিনি যানবাহন ব্যবস্থা, অন্যান্য পরিকাঠামো আর জীবনধারণের ব্যবস্থা ধ্বংস করার কথাও। আর বলা হয়েছিল গ্রাম দখলের কথা—যে কাজে এসেছিল ওই ভিলেজ ফাইলস।
আর, তারপর, ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে আসে প্ল্যান দালে, যে প্ল্যানের একাংশ উদ্ধৃত করে এই লেখার শুরু। শ'য়ে শ'য়ে ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছিল পরের কয়েক মাসে। দের ইয়াসিনের মত হত্যাকান্ড ঘটেছিল একাধিক। ভিলেজ ফাইলসের তালিকা ধরে গ্রামের পুরুষদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় করানো হত—লোকাল ইনফর্মারদের মাথায় কাপড়ের থলি পরিয়ে আনা হত আইডেন্টিফিকেশন প্যারেডে। চিহ্নিত লোকগুলোকে ওই লাইনের গুলি করে মেরে দিত ইরগুন, হাগানাহ আর স্টার্ন গ্যাঙের খুনেরা। তারপর আগুনে পুড়তো গোটা গ্রাম। এই জ্বলতে থাকা ফিলিস্তিন থেকে উদ্বাস্তু হয়েছিল কয়েক লক্ষ মানুষ। নকবা। 

যার অন্যতম হাতিয়ার ভিলেজ ফাইলস।

আচ্ছা, গেস্টাপো আর এসএস-এর চেয়ে কোন দিক দিয়ে আলাদা এই ইরগুন, হাগানাহ বা স্টার্ন গ্যাং?

বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ফিলিস্তিন ~ স্বাতী মৈত্র

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন ভাগের প্রস্তাব পাশ করে। ক্রমবর্ধমান ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ ও জায়নবাদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবার এটাই ছিল তাঁদের সমাধান, যদিও ডেভিড বেন গুরিয়নের মতন জায়নবাদী নেতৃত্ব সেই সময় থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন যে এটা প্রথম ধাপ মাত্র। ততদিনে আমাদের পরিবারগুলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে, বহু মানুষ তখন উদ্বাস্তু। 

সে সময় পোস্ট-ওয়ার অর্ডারের সময়। জাতিসংঘ সব সামলে দেবে, এই প্রত্যয়ের সময়। 

নতুন দেশ ভারত ও পাকিস্তান যখন ১৯৪৮ সালে রিফিউজি ও সাম্প্রদায়িক হিংসা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, কাশ্মীরে ১৯৪৭-৪৮ সালের প্রথম যুদ্ধ লাগিয়ে ফেলেছে, তখনই ফিলিস্তিনে জায়নবাদী শক্তিগুলো শুরু করে ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিন যুদ্ধ। আমাদের পরিবারগুলো তখন ক্যাম্পে, জবরদখল কলোনিতে। হয়তো খবর এসেছিল, হয়তো আসেনি, কিন্তু সেই সময়েই ফিলিস্তিনে উদ্বাস্তু হলেন অন্তত ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনবাসী, এক বিধ্বংসী হিংস্র শক্তির হাতে। এই ঘটনাকে বলা হয় নকবা, অথবা মহাবিপর্যয়। 

দেশভাগ শেষ হয়নি। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ এটা হাড়ে হাড়ে বোঝেন। মানচিত্রের ভাগ আমরাই চেয়েছিলাম, কিন্তু হাঁড়ি ভাগ হলেই যে নাড়ির যোগ ছিন্ন হয়না, তা আমরা একবিংশ শতকে বসে ভালোই বুঝতে পারি। 

শেষ হয়নি নকবাও। তার ফল আরো অনেক বিধ্বংসী, ভয়ঙ্কর। সেখানে এক পক্ষের হাতে পরমাণু বোমা আর আরেক পক্ষের হাতে ক্রুড রকেট ও কয়েকটা কালাশনিকভ। আমরা অন্তত স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীন হয়নি ফিলিস্তিন। 

গাজার সাম্প্রতিক গণহত্যা পৃথিবীর প্রথম গণহত্যা নয়, কিন্তু এই গণহত্যা যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। হাসপাতালে বোমা, স্কুলে বোমা, রিফিউজি শেল্টারে বোমা, তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বোমা, আটা নিতে গিয়ে হত্যা, কোয়াড কপ্টার-স্নাইপার দিয়ে হত্যা, শিশুহত্যা, স্নাইপার দিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে শিশুহত্যা, ধ্বংসস্তূপে হত্যা, খাবার নিতে গিয়ে হত্যা, ওয়াইট ফসফরাস (টুইটারে ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য অনুযায়ী) দিয়ে হত্যা, তাঁবুতে আইভি ড্রিপ-সহ কিশোরকে পুড়িয়ে হত্যা, খেতে না দিয়ে হত্যা, জ্বালানি না দিয়ে হত্যা, মাছ ধরতে না দিয়ে হত্যা, আরও কত কত রকমের হত্যা - এবং সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়া - এটাই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ। জাতিসংঘ একটা ইয়ার্কির নাম। 

ভারতবর্ষের মানুষ মানতে চান, না চান, ইতিহাসের আশ্চর্য সমাপতনে মিডনাইটস চিলড্রেনের মতন এক সূত্রে আমরা গাঁথা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা শুধু ফিলিস্তিনের নয়, আমাদের স্বাধীনতা। ফিলিস্তিন হারলে, নিঃশেষ হয়ে গেলে, ম্যাপ থেকে মুছে গেলে আমাদের হার, কারণ তা আন্তর্জাতিক আইনের হার, তৃতীয় বিশ্বের সুরক্ষা কবচের অন্তিম অন্তর্ধান, নব্য-সাম্রাজ্যবাদের নিরঙ্কুশ জয়। 

একদিকে স্বাধীনতা, অন্য দিকে মহাবিপর্যয়।