মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯

মেকী আদিবাসী দরদীদের প্রতি ~ পারিজাত ভট্টাচার্য্য





অলচিকিকে বামফ্রন্ট সরকার ১৯৭৯ সালেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্ত ভারতবর্ষের অন্য কোনো রাজ্য সরকার বিশেষত ঝারখন্ড রাজ্য আজও তার স্বীকৃতি দেয়নি। বিহার সরকার অলচিকি মানবে না, বহুদিন আগেই বলে দিয়েছে। ওড়িশা, আসাম নিরুত্তর। তাহলে শুধু পশ্চিমবঙ্গে অলচিকি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের সাঁওতালরা অন্য রাজ্যের স্বজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। সি পি আই এম এর বক্তব্য - এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ভাষাবিদদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি কমিশন গঠন করা ঊচিত। যাতে সব রাজ্যের জন্য একিরকম সিদ্ধান্ত কার্যকরী হতে পারে। যে ঝাড়খন্ড দিশম পার্টি এখানে অলচিকি র জন্য গলা ফাটাচ্ছে, তাদের কেন্দ্রীয় দপ্তর ঝাড়খন্ড রাজ্য। সেখানে শিবু সোরেন কি করছেন বা করেছেন?

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৫৭ টী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অলচিকি হরফে পঠন-পাঠন চালু করা হয়েছে। জেলায় পঞ্চাশ শতাংশ বা তার বেশী তফশিলী ঊপজাতি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করে এমন বিদ্যালয়ের সঙ্খ্যা ৫০৭ টি। পর্যায়ক্রমে এইসব বিদ্যালয়ে অলচিকি হরফে সাঁওতালী ভাষা শিক্ষা ব্যাবস্থা করা হবে। এই লক্ষ্যে তফসিলী উপজাতি সম্প্রদায়ে ১১৭১ জন প্রাথমিক শিক্ষকের মধ্যে ১১০৩ জনকে অলচিকি হরফে পড়ানোর প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৮ জন আদিবাসী শিক্ষক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের না হওয়ায় প্রশিক্ষন নেননি। এক্ষেত্রে, বামেরা সেই একি কথা বলেন যে, বিহার, ঝারখন্ড, ওড়িশা রাজ্যে এই ব্যাবস্থা প্রবর্তনের কোনো ঊদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে সাঁওতালী ভাষা পত্র পডানো হচ্ছে। শীঘ্রই স্নাতকোত্তর স্তরেও পড়াশুনার কাজ শুরু করার প্রস্ততি চলছে। মাধ্যমিক ও ঊচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনো ছাত্র চাইলে অলচিকি হরফে পরীক্ষার উত্তর লিখতে পারে।

অলচিকি হরফের জনক পন্ডিত রঘুনাথ মূর্মুর জন্ম ওড়িশায়। তাঁর জীবদ্দশায় ওড়িশা সরকার তাঁকে কোনো সন্মান জানায়নি। অথচ ১৯৭৯ সালে পুরুলিয়ায় এক জনসভায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তাঁকে গণ-সংবর্ধনা জানান এবং অলচিকি লিপির স্বীকৃতির ঘোষনা করেন। সকলেই জানেন যে, সাঁওতালী ভাষায় সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য এরাজ্যের বামপন্থীরা লড়াই করেছে। অবশ্য আয়াসেকা সংগঠন ও এই দাবিতে অনেক লড়াই করেছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমিতে ২০০০ সালের ১লা আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় বামফ্রন্টের উদ্যোগে সর্ব্দলীয় প্রস্তাবে গৃহীত হয়। তার ভিত্তি তে ২২ শে আগস্ট বিধানসভায় সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা স্বরাস্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানীকে স্বারকলীপি দেন। পরিশেষে ২০০৩ সালের ২২ শে ডিসেম্বর যে চারটি ভাষাকে অষ্টম তফশিলে অন্তর্ভূক্ত করার বিল এনেছিলো তাতে সাঁতালী ভাষা ছিলো না। এই বিল পেশ হলে বামপন্থী সাংসদরা ওয়েলে নেমে আদবানী কে ঘিরে সোচ্চার দাবি করেন যে, এই বিলের সঙ্গে সাঁতালী ভাষাকে যুক্ত না করলে বিল পাশ করতে দেওয়া হবে না। তাঁরা যুক্তি দিয়ে দেখান যে, মাত্র কয়েক লক্ষ্য মানুষের মুখের ভাষা মৈথেলী সংবিধানে যুক্ত হলে এক কোটিরও বেশী মানুষের ভাষা সাঁওতালী স্বীকৃতি পাবে না কেন? বামপন্থীরা যখন এই দাবিতে সরব হন, এরাজ্যের অন্য দলের সাংসদরা তখন চুপ ছিলেন। যাই হোক, অবশেষে বামপন্থীদের যুক্তি ই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে আদবানী সাঁতালী ভাষাকে যুক্ত করে বিল আনেন এবং তা গৃহিত হয়।

কবি সাধূ রামচন্দ্র মুর্মু এবং পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মূর জন্মশতবর্ষ রাজ্য সরকারের পাশাপাশি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় প্রতিটি ব্লকে পশ্চিমবঙ্গ গনতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের ঊদ্যোগেই পালিত হয়। এই সংগঠনের ঊদ্যোগেই ঝাড়্গ্রাম শহরে রঘুনাথ মুর্মূর মূর্তি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে ঝারগ্রাম পৌরসভা রামচন্দ্রের মূর্তির প্রতিষ্ঠা করে। জেলার বিরোধীরা তখন কোথায় ছিলেন? সুপন্ডিত ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কেকে সাম্মানিক ডি লিট দেয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দেশে এটাই কোনো সাঁওতাল পন্ডিতকে সাম্মানিক ডি লিট দেওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরী হয়।

‘হুল’ এর নায়ক সিধু, কানহু স্মরণে রাজ্য সরকার নিয়মিত সিউড়ি, ঝাড়গ্রাম, মুকুটমনিপুর ও পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠান করে থাকে। এই মৃতুঞ্জয় বিদ্রোহী কে স্মরণে রেখেঅবিভক্ত মেদিনীপূর জেলায় ১৯৮৯ সাল থেকে ৩০ শে জুন প্রতিটি ব্লক-পঞ্ছায়েত ও জেলাস্তরে পালনের পাশাপাশি ব্লকভিত্তিক প্রধানত আদিবাসী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার শেষে জেলাস্তরে ২ দিনের ‘হুল উৎসব’ এ পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা হয়। সারারাতব্যাপী দশ-বিশ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে থাকে এই কর্মসুচিতে। বাম্পন্থীরা ছাড়া আর কারা কোথায় এই কাজ করছে আজকের আন্দোলন কারীরা তার জবাব দেবেন কি? ১৫ নভেম্বর বীরসা মুন্ডার জন্মদিন নিয়ম করে রাজ্য সরকারের ঊদ্যোগে জেলায় জেলায় পালিত হয়। মনে রাখা দরকার যে, রঘূনাথ মুর্মু, সিদো কানহু বা বীরসা মুন্ডা এঁরা কেঊই মেদিনীপুর জেলার সন্তান নন, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের ও নয়। তথাপি এঁদের বামপন্থীরাই স্মরণ করছে, সন্মান জানাচ্ছে। কারন বামপন্থীরা সমাজের যে কোনো মনীষী বা বীর যোদ্ধাদের অবদান থেকে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে চায়, তাঁদের আদর্শের দ্বারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চায়।

পশ্চিমমেদিনীপুর জেলায় বিগত ২০০৩-২০০৮ পর্যন্ত জেলা সভাধিপতি পদ অসংরক্ষিত ছিলো। তা সত্তেও বামপন্থীরা যাকে সভাধিপতি মনোনীত করেছিলেন, তিনিও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বর্তমানে মেদিনীপুর-খড়গপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অসংরক্ষিত চেয়ারম্যান পদেও তিনিই আছেন। সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতার বাইরে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আদিবাসী অংশের ব্যাক্তিকে মনোনীত করার দৃষ্ঠান্ত ভু-ভারতে আর কোথাও রয়েছে কিনা জানা নেই। যদিও তাঁকে আদিবাসী হিসেবে এই পদে বামপন্থীরা মনোনীত করেনি, বরং সভাধিপতি হিসেবে ৯৮-২০০৩ পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিল এর থেকে সংগ্রিহিত খবর, এই জেলায় বিশেষ ভাবে ৫৭ টী স্কুলে দ্বিতিয় শ্রেনী অবধী অলচিকি হরফে পাঠ্য বই প্রকাশিত হয়েছেএবং ওই অলচিকি হরফে সাঁওতালী ভাষায় পঠন-পাঠন হচ্ছে।আসেকা নামে এই সংগঠন টী সারা পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালী ভাষা , অলচিকি হরফে, স্কুল-কলেজে পঠন-পাঠন সাথে সাঁওতাল সংষ্কৃতি বিকাশের জন্যে অনেকদিন আগের থেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছে। এদেরই একটা পরিচালিত স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুরজেলা তে আছে।স্কুলটির নাম্্্বেথকুদরি বিদ্যাগাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়।এই স্কুলটি অবস্থীতঝাড়গ্রাম দুহিজুড়ির নিকটে।ওই স্কুলের টিচার , শ্রীমতি মেরী হেমব্রম, জেলা ডি আই অফিসে, দরখাস্ত করে, সই করে, অলচিকি স্ক্রীপ্টে সাঁওতালী ভাষায় লেখা ,১ এবং ২ শ্রেণী র বই, ওনার স্কুলের জন্যে নিয়ে গেছেন জেলা ডি আই দপ্তর এর এইরকম ভাবে কোনো প্রাইভেট স্কুলে বই দেবার নিয়ম নেই তবুও ডি আই কর্তৃপক্ষস্পেশাল পার্মিশান নিয়ে সেই পাঠ্যপুস্তক ( ১ এবং ২ শ্রেনীর জন্যে), ওই প্রাইভেট স্কুলে দেওয়া হয়।এই ঘটনা প্রমান করে যে জেলা প্রাইমেরি স্কুল গুলোতেঅলচিকি স্ক্রীপ্টে সাঁওতালী ভাষায় পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে।এই ৫৭ টী প্রাইমেরি স্কুলের নাম ও ঠিকানা ডি আই অফিসের ওর্ড়ারেরর এক অনুলিপী তে দেওয়া হল।

ভারতবর্ষে তথাকথিত "উঁচু" জাতের লোকেরা, তথাকথিত "নিচু" জাতের ওপর প্রবল অত্যাচার করতো, সামাজিক এবং আর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এবং এখনো করে যাচ্ছেযার জন্যে আজ আমাদের দেশ তথাকথিত "শাইনিং" হলেও , এই আদিবাসী সম্প্রুদায়ের কি নিদারুণ অবস্থা, আমাদদেশের অনেক রাজ্যে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অলচিকি স্ক্রীপ্টের অধ্যায়ন নিয়ে লেখা হয়েছিলো। এই সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালী ভাষায় অধ্য্যনের পরিদর্ষক, ডাঃ সুশীল হাঁসদা কাছ থেকে।

এই স্তরে সবথেকে বড়ো সমস্যা হলো যে আমাদের সারা দেশে এই সাঁওতালী ভাষা-ভাষী মানুষদের কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন নেই যারা ঠিক করবেন যে সারা দেশে সাঁওতালী ভাষা-ভাষী মানুষদের ভাষার বিকাশ, সংস্কৃতির বিকাশ কোন দিকে এবং কিভাবে হবে। আমাদের দেশে এর বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী সাঁওতালী ভাষা-ভাষী মানুষেরা এখনো ঠিক করতে পারেননি যে তাদের লেখার মাধ্যম কোন লিপী ব্যাবহার করা হবে। আমি যেমন আগেই বলেছি যে পশ্চিমবঙ্গে অলচিকি হরফের ব্যাবহারের স্বকৃতি দেওয়া হয় ১৯৭৯ সালে, কিন্ত এই হরফ দক্ষিণ বঙ্গে প্রচলিত থাকলেও, উত্তবঙ্গের সাঁওতালী ভাষা-ভাষী মানুষেরা, অলচিকি ব্যাবহার না করে, রোমান হরফ ব্যাবহার করেন অথবা সাঁঅতালী ভাষা পরিত্যাগ করে, হিন্দি বা বাংলা মাধ্যমে ব্যাবহার করেন, এই ক্ষেত্রে আসেকা নিশ্চুপ। ঝাড়খন্ডে প্রচলন আছে দেবনাগিরি স্ক্রীপ্ট কিন্ত এখানে ঊল্লেখ্য যে সরকারে সেখানে কোনো প্রতক্ষ্য ভুমিকা নেই এবং ওদেরই বিশ্ববিদ্যালয় (রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়), সাঁওতালী বিভাগের অধ্যাপকরা দেবনাগিরি স্ক্রীপ্ট এ অধ্যায়ন করেন এবং করান, অথচ এই অধ্যাপক রা যখন পশ্চিমবঙ্গে আসেন তখন ওনারা এখানে অলচিকি হরফে সাঁওতালী পঠন-পাঠন কে সমর্থন করেন। ওড়িশা তে চলন আছে ঊড়িয়া স্ক্রীপ্ট, তবে সেটা খুবি সীমাবদ্ধ।

শুধু ভাষার নয়, আদিবাসীদের জমির অধিকার দিতেও বামপন্থীরাই আন্তরিকভাবেই লড়াই করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে ১১৷২৬ লক্ষ একর কৃষিজমি বন্টন করা হয়েছে ৩০ লক্ষ কৃষকের মদ্ধ্যে। এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই তফসিলী জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। জনসমাজে আদিবাসী অনুপাতের থেকেও তাদের মধ্যে জমি বন্টনের পরিমাণ বেশী। কিছুদিন আগে আদিবাসীদের বনাঞ্চলের অধিকার তৈরি হলেও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যগুলি এটি রুপায়নে বেশী আগ্রহ দেখায়নি।

বনাঞ্চলের পাট্টা দেওয়ার কাজ দেশে কেমন হয়েছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। নিয়মানুসারে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পাট্টার জন্যে আদিবাসীদের আবেদন সংগ্রহ করার কথা এবং গ্রামসভার মিটিং ডেকে এইসব আবেদনকারীর দাবির যথার্থতা প্রমাণের পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাট্টা দেওয়ার কথা। কেন্দ্রের প্রকাশীত এই রিপোর্টে বলছে ফেব্রুয়ারী মাস পর্য্যন্ত বনাঞ্চলে আদিবাসীদের একটি পাট্টাও দেয়নি ঝাড়খন্ড সরকার। ঐ রাজ্যের ২৮ শতাংশ মানুষ আদিবাসী। রাজ্যের ২৯ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল। অথচ পশ্চিমবঙ্গে ৬৭২২ একর বনাঞ্চলের জমির পাট্টা দেওয়া হয়ে গেছে। পাট্টা পেয়েছে ৫২৪৯ টি পরিবার। প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীরা আছেন ৫৷৫ শতাংশ। সর্বাধিক পাট্টা দেওয়া হয়েছে বর্ধমানে- ২৪৯৪ টি। তারপর স্থান পশ্চিমমেদিনীপুরের। সেখানে এখনো পর্যন্ত পাট্টা পেয়েছে ২২৫৮ টি পরিবার। জলপাইগুড়িতে পেয়েছে ২৭৪ টি পরিবার। এছাড়া বীরভূম, পুরুলিয়াতেও অনেক আদিবাসী বনাঞ্চলের পাট্টা পেয়েছেন। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় দেওয়া গেলো না আরো ৯০০০ পাট্টা।

এছাড়া যে রাজ্যগুলিতে বনাঞ্চলের জমিতে আদিবাসীদের পাট্টা দেওয়ার কাজ হয়েছে তার মধ্যে আছে মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা। কিন্ত কারো কাজই আশানুরূপ নয়। মধ্যপ্রদেশের ২৩৷৩ শতাংশ আদিবাসী। এখন পর্যন্ত পাট্টা দিতে পেরেছে মাত্র ৮০৫৯ টি। অন্ধ্রপ্রদেশে আদিবাসীরা ৬৷৬ শতাংশ। বনাঞ্চলের জমিতে ঐ রাজ্যে পাট্টা পেয়েছেন মাত্র ৩৩০ টি পরিবার। ওড়িশায় আদিবাসী বাসিন্দা পায় ২২৷২ শতাংশ। বনাঞ্চলের জমিতে কেউ পাট্টা পাননি এখনো। ৯৩৪৬ টি পাট্টা তৈরি আছে বলে জানা গেছে। বিহারে একজন আদিবাসী পাট্টা পাননি। সঙ্খ্যার বিচারে সর্বাধিক পাট্টা দেওয়া হয়েছে ছত্তিশগড়ে। প্রায় ৮৫ হাজার ৫৪৯ টি পাট্টা দেওয়া হয়েছে ঐ রাজ্যে। কিন্ত ঐ রাজ্যে মোট জমির ৪৪ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৫৯ হাজার বর্গ কি মি বনাঞ্চল। আর জনসঙ্খ্যার এক-তৃতীয়াংশ আদিবাসী। তাই আদিবাসী জনসঙ্খ্যার ভিত্তিতে পাট্টাপ্রদানের হারে ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের পিছনে।

ইঊ পি এ সরকারে থাকার সময় তে বামপন্থীদের বিশেষ করে সি পি আই এম - এর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলেই তফশিলী আদিবাসী ও বনাঞ্চল অধিবাসী (বনাঞ্চল অধিকার স্বীকৃতি) আইন পাস করা হয়। পার্টির হস্তক্ষেপ ব্যাতিরেকে এই আইন বর্তমান আকারে পাস করা সম্ভব হতো না। সি পি আই এম ও বামপন্থী দলগুলির হস্তক্ষেপের ফলে নিম্নলিখিত সংশোধন সম্ভব হয়।

১) বৎসর সীমা ১৯৮০-এর পরিবর্তে ডিসেম্বর, ২০০৫ করা হয়।

২) ঊপকৃত তালিকায় অন্যান্য চিরায়ত বনাঞ্চলের অধিবাসীদের অন্তর্ভূক্তি;
৩) জমির উর্ধসীমা ২৷৫ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৪ হেক্টরে নির্ধারণ;
৪) ক্ষুদ্রতর বনজ উৎপাদন প্রসারিত অধিকারের অন্তর্ভূক্তি;
৫) গ্রামসভা ও পঞ্চায়তের সম্প্রসারিত ভূমিকা;
৬) বনাঞ্চলে সীমাবদ্ধ এলাকায় ঊন্নয়ন প্রকল্পগুলির অধিকার;
৭) নারী দের সমান অধিকারের সুরক্ষা।

সামনে এই পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঊন্নয়নের জন্যে সি পি আই এম এর কর্মসুচী ও লক্ষ্য - ১) সমস্ত সরকারী চাকরিতে তফসিলী ঊপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত শূন্য পদগুলি পুরণ করা হবে, বেসরকারী ক্ষেত্রেও প্রসারিত করা হবে। ২) আদিবাসীদের জমির ঊপর অধিকার রক্ষা করা হবে। তাদের কাছ থেকে বে-আইনিভাবে যে সমস্ত জমি নেওয়া হয়েছে সেগুলি রক্ষা করা হবে। সম্পূর্ণভাবে তফসিলী ঊপজাতি এবং এযাবৎ বনাঞ্চলে বসবাসকারী অন্যান্য বাসিন্দা ( বনাঞ্চল অধিকার স্বীকৃতি) আইন ২০০৬ রুপায়ণ করা হবে, এ যাবৎ বনাঞ্চলের বাসিন্দাদের সংজ্ঞাকে আরও সুস্পষ্ট করতে এই আইনকে সংশোধন করা হবে। ঊপজাতি প্রভাবিত এলাকায় সংবিধানের পঞ্চম এবং ষষ্ট তফসিল অনুযাযী যেখানে প্রয়োজন সেখানে স্বশাসন দেওয়া হবে; গনতান্ত্রিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে প্রসারিত করা হবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিলেও। ঊপজাতি ভাষা ও হরফের উন্নয়ন এবং স্বীকৃতি সুনিশ্চিত করা হবে; ঊপজাতি এলাকায় প্রসারিত করা হবে রেশন ব্যাবস্থা, পানীয় জলের সুবিধা, স্বাস্থ্য কেন্দ্র , স্কুল এবং হস্টেলের সুবিধে। তফসিলী জাতির মধ্যে স্কুল ছুটের সংখ্যা রোধ করতে বৃত্তি এবং হস্টেলের সুবিধে দেওয়ার মতো বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সুত্র:

http://wesanthals.tripod.com/id39.html

http://www.ambedkar.org/News/Santalrecognition.htm
http://www.allindiaaseca.org/wboltor.html
http://edustories.blogspot.com/2007/11/from-2008-state-to-have-santhali-medium.html
http://www.expressindia.com/latest-news/Santhali-in-schools-from-this-session/322243/

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০০৯

ভাড়াটে বিপ্লবী ~ সিদ্ধার্থ রায়

দেওয়ালেতে পোস্টার ভরা তাতে শাসানি
ভোট দিলে চোট পাবে এই চোখ রাঙ্গানি
হাথে হাথে রাইফেল বোমা আর পিস্তল
ভন্ড বিপ্লবীরা করে দিল রসাতল
গরীবের দরদীরা গরীবের প্রান নেয়
সকালেতে তড়িঘড়ি সব পিট্‌টান দেয়
যায় তারা ওড়িশাতে যায় ঝাড়খন্ড
বিপ্লবী বুলি সুধু আসলেতে ভন্ড
যেখানেতে টাকা পাবে সেথা জনযুদ্ধ
সুবিধের ইস্যু দিলেই হয়ে যাবে খুব্ধ
ভরে দিছে আঙ্গিনা বিষফুল ফুটিয়ে
তারি মধু খায় দেখ হাথে হাথ মিলিয়ে
ভোটে এসে লড়ে যাবে সে তো নেই ক্ষমতা
চাষি মেরে এদের হয় কৃষিপ্রেমি মমতা
আর আছে ল্যান্ড মাইন্‌ সবখানে পাতা যা
সব কিছু ভেঙ্গে দেবো কয় খেয়ে জল আদা
চায় নাকো বাতি জল চায় নাকো প্রগতি
লেনিন মার্ক্স কে ছেড়ে কয় দেখ ও দিদি!
কলকাতার দিদি হোক কিবা দাদা দিল্লীর
টাকা পেলে পা চাটা কাজ এই বিল্লীর
তাই বলি কেউ যদি বিপ্লবী ভাড়া চাও
এনারা সদাই আছে টাকা সুধু ঢেলে যাও

সুত্রঃ http://www.siddharthya.info

রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০০৯

ইন্ডিয়া ইজ শাইনিং, ভারত ইজ সাফারিং ~ সুজন চক্রবর্তী

সুইশ ব্যাঙ্কে জমা থাকা ভারতীয় টাকা ও কালো টাকার বিষয়ে আজ দেশ জুড়ে যে আলোচনা চলছে এই বিষয়ে আমিই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষন করি গত ২৪ই ফেব্রুয়ারি,২০০৯ লোকসভায় Interim Budget (2009-10)’এর আলোচনায় আমি এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করি ওইদিনের আলোচনায় আমি যা যা বলেছিলাম সেগুলিই এই ব্লগে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি

এই Interim Budget’এর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল এটা সত্য, কিন্তু তা হলেও আরো অনেক ভালভাবে এই বাজেটকে করার সুযোগ ছিল কি না সেটা দেখে নেওয়া জরুরী ছিল বলে আমার ধারণা গত কয়েক বছরে যদি আমরা দেখি, যেটা আমরা করেছি আসলে-স্বাধীনতার পর আমরা অনেকগুলো বছর পার হলাম, ৬০/৬১ বছর হয়ে গেল, কিন্তু দেশের মধ্যে দুটো দেশ…তার ত ক্রমশ ক্রমশ বিভক্তি বাড়ছে এটা ঠিক যে ইন্ডিয়া ইস শাইনিং, আবার এটাও ঠিক যে ভারত ইস সাফারিং একটা দেশের মধ্যে দুটো দেশের এই যে ফারাক, তা একটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক ইঙ্গিতের দিকে আমাদের আস্তে আস্তে নিয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক যে আমাদের দেশে ৫৫ জন বিলিওনেয়ার আছেন, তারা পৃথিবীর অন্যদের সঙ্গে তুলনীয়, এটাও ঠিক যে আমাদের দেশে গত একটা বছরে ২৩০০০ মিলিওনেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে, সেটা একটা অংশ কিন্তু বিপরীতে, ৭৭% জনসংখ্যা, অর্জুন সেনগুপ্ত কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, যাদের দৈনিক আয় কুড়ি টাকার নিচে, কি হবে তাদের ভবিষ্যত? অসঙ্গঠিত শিল্পের বিল গৃহিত হয়েছে, কিন্তু আমরা কেউ এখনো জানি না সেই বিলের সুপারিশ কি কি ফলপ্রসু করা হবে কৃষক আত্মহত্যা বাড়ছেই, সেটা কিন্তু কমছে না এখনো অনেক ঋণদান প্রকল্প হয়েছে, বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সমাধানটা কোথায়? অথচ ১৮% জি.ডি.পি চাষের উপর নির্ভর করে ফলে ক্রমশ এই যে সেক্টরটা আমাদের দেশের সঙ্কটকে যেভাবে বাড়াচ্ছে, সেই সঙ্কট থেকে বেরোনোর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব যথেষ্ট এটা কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এবং ক্রমশ ক্রমশ বাড়ছে মুল্যবৃদ্ধি ভয়ংকর...মুদ্রাস্ফিতি খানিকটা কমে এসেছে বলা হচ্ছে, ঠিক, কিন্তু তাহলে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির হার, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সেটার বৃদ্ধির হার তো কমছে না একটা বড় অংশের মানুষের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে জিনিসের দাম ফলভোগ করছেন মূলত তলার দিককার মানুষেরা এটা আমাদের খেয়ালের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার বিপিএল-এর প্যারামিটারটা কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয় বিপিএল যে প্যারামিটারে করা হচ্ছে তা থেকে আমরা কেউ-ই বলতে পারব না যে সত্যি সত্যি আমরা প্যারামিটার অনুযায়ী-ই কাজ করতে পারছি কোথাও এপিএল বিপিএল হয়ে যাচ্ছে, কোথাও বিপিএল তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং এটা একটা গোটা দেশের সর্বত্র একটা বড় সামাজিক অস্থিরতা তৈরির দিকে গোটা দেশকে নিয়ে যাচ্ছে আমার মনে হয় কিভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা আমরা করব সেদিকে আমাদের এবার নজর দেওয়া উচিত আসল কথাটা হল রাজনৈতিক ইচ্ছা

সুইশ ব্যাঙ্ক সংস্থার ২০০৬ এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে পাঁচটা দেশের টাকা ওখানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত, এবং তার বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ পঞ্চম দেশের তুলনায় বহুগুণ, প্রায় ১৫ গুণ এবং এই ১৫৪৬ বিলিয়ন ডলার, যেটার ভারতীয় মুদ্রায় মূল্য হয় প্রায় ৭০ লক্ষ কোটি টাকা, সেটা আমাদের যা বৈদেশিক ঋণ আছে তার ১২-১৩ গুণ কোথা থেকে এই টাকাটা আসছে? কিভাবে এটাকে রাখা হচ্ছে? কে রাখছে? দেশের সম্পদের সাথে এটাকে যুক্ত করার কি সুযোগ আছে? আমরা যদি সেটা না ভাবি, আমরা আসলে এক চোখ দিয়ে দেখব সমস্যার সমাধানের দিকে যেতে পারব না কালো টাকার প্রশ্নটাও এক-ই রকম প্রাসঙ্গিক এটা একটা সমান্তরাল অর্থনীতি প্রতিবার আলোচিত হয়, প্রতিবার আমরা সবাই উদবেগ প্রকাশ করি, সারা সংসদ উদবেগ প্রকাশ করে, কিন্তু সমাধানের কোনও পথ বেরয় না কিভাবে আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসব, এই মনোভাব নিয়ে আমরা যদি না চলি, আমার ধারণা, তাহলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে, যে ক্ষতির মুখোমুখি কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে আছি দেশ মানে দেশের আম-আদমি, দেশের বেশীরভাগ অংশের মানুষ, সেই মানুষের জন্য সঠিক পরিকল্পনা রুপায়ণে তাহলে অসুবিধা দেখা দেবে

আমরা অনেকদিন এই কথাটা বলছিলাম, আমাদের যে বৃদ্ধি নিয়ে এত গলা ফাটানো হয়, সেটা কোনো জীবিকা তৈরি করে না বৃদ্ধির হার ভালই হচ্ছে, কিন্তু মানুষের হাতে কাজ নেই! গত ৩ মাসে বলা হচ্ছে ৫ লক্ষ কর্মচ্যুতি হয়েছে অবশ্যই এটা একটা অসম্পুর্ণ রিপোর্ট আসল সংখ্যাটা এর থেকেও অনেক বেশি কিন্তু আর কত কর্মচ্যুতি হবে? কোথায় যাচ্ছে এত কাজ? ঠেকাব কি করে এত কর্মচ্যুতি? এই ভাবনায় আমাদের একটা কোথাও দূর্বলতা আছে মেইন সেক্টর হচ্ছে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদি আপনি যদি দেখেন, ক্ষুদ্র শিল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ সহজে পাওয়া যায় না যদি পাওয়াও যায়, সুদের হার খুব বেশী বৃহত ঋণ যারা নেবে, তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার কম!! হওয়ার কথা ছিল, ক্ষুদ্র শিল্পে সুদের হার কম হবে হচ্ছে ঠিক তার উলটো আমার মনে হয় একটু ভাল করে যদি আমরা না দেখি, এই অবস্থা থেকে আমরা বেরতে পারব না এক-ই রকম ভাবে, স্বামীনাথন কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে, কৃষকদের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৪% এ নামাতে হবে...এখন দাড়িয়ে আছে ৭%-এ ফলে আমাদের প্রায়োরিটি সেক্টর কে সর্বাগ্রে গুরূত্ত দেবার দৃষ্টিতে কি আমরা আমাদের দেশ, অথবা দেশের বাজেট, অথবা দেশের প্ল্যানিং কে এগিয়ে নিয়ে চলেছি? মনে হয় না আমি যেটা বলে শেষ করব তা হচ্ছে এই, অন্তত ৪/৫ খানা মেজর সেক্টর আমাদের দেশে আছে, যেমন ‘R & D’, যার থেকে গুরূত্তপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না আমাদের এত বিপুল সম্ভাবনা, শিক্ষা, সেখানে ৬% বাজেট বরাদ্দ আমরা কবে করব? আমাদের গবেষণা ক্ষেত্রে আমরা অন্তত ১% বাজেট বরাদ্দ কবে করব? আমাদের অসঙ্গঠিত ক্ষেত্র, তার জন্য ৩% সহায়ক ব্যাবস্থা, আমরা কবে করব? আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৫% বরাদ্দ আমরা কবে করব? আমরা কিন্তু ঘোলা জলের মধ্যে রয়েছি যেভাবে আমাদের চলা উচিত, সেটা আমরা স্পষ্ট করে বলছি না

আমি শেষ করছি, শুধু একটাই কথা বলার বহুদিন আগে লালবাহাদুর শাস্ত্রী বলেছিলেন, “জয় জওয়ান, জয় কিষাণ“ সবাই আমরা খুশী হয়েছিলাম তারপরে বহুবছর কেটে গেছে কৃষকের জয় হয়নি, যুবকের জয় হয়নি বরং আমাদের মুল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, এবং কৃষকের মুল সমস্যাগুলো এখনো সমাধান করার পথে যাওয়া হচ্ছে না, আমরা ওপরে ওপরে দেখছি, কিন্তু গভীরে দেখছি না শাইনিং ইন্ডিয়ার কথা ভাবছি, সাফারিং ইন্ডিয়ার কথা ভাবছি নাএটাই হল আমাদের অর্থনীতির মূল ত্রুটি কিভাবে সেটা কাটানো হবে সে বিষয়ে U.P.A. সরকার কোনো পদক্ষেপ মনোভাবই দেখায়নি আমরা বামপন্থীরা আশা করব আপনারা আমাদের সমর্থন করে ভবিষ্যতে আমাদের ভাবনাচিন্তার সমর্থক হবেন

(আমার লোকসভার আলোচনার ভিডিও দেখার জন্য www.sujan.info/video.html দেখুন )

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০০৯

দিদির গান ১ ~ কৌশিক

বিরোধির স্বজন আছে,
স্বজনের আছে সুশিল,
সুশিলের গোপাল আছে,
শুধু ভোট নেই আমার হায়রে
ভোট নেই আমার ওহো,
ভোট নেই আমার।

বিদেশি পুঁজি আছে,
পুঁজিতেই কেনা প্রচার,
প্রচারের মধু আছে,
তবু ভোট নেই আমার হায়রে
ভোট নেই আমার ওহো, ভোট নেই আমার।



("গোলাপের কলি আছে"র সুরে গাইতে হবে)

দিদির গান ২ ~ কৌশিক

CM হবার জন্যে
সেজেছি অগ্নি কন্যে
তাইতো জন অরণ্যে
আশার হাত বাড়াই।

ভুলেও কোণ একান্তে,
চেওনা আমার account-এ,
যদি লো্কে পারে জানতে,
বেনামে খুলেছি তাই।

তুমিতো বড়ই মন্দ,
ন্যানো গেল বলে কান্দো,
নাও জোড়া ফূল ঝান্ডো,
হয়ে থাকো মো্র ভাই।

ওহো, অহো,
লা, লা, লা।



("হয়তো তোমার'ই জন্যে"র - সুরে গাইতে হবে)

সুজনকে নিয়ে মিথ্যা-লিখন মুছল প্রশাসন

আজকাল, ২৪শে এপ্রিল, ২০০৯ থেকে -

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তৃণমূলের লেখা মিথ্যা দেওয়াল লিখন মুছে দিল প্রশাসন। একটা দুটো নয়, মিথ্যা প্রচারের এরকম প্রায় ১০০ দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া হয়েছে। আরও দেওয়াল মোছার কাজ চলছে। বারুইপুর ব্লকের অধীন সাউথ গড়িয়ায় বৃহস্পতিবার এই দেওয়াল মোছার কাজ করেন বিডিও-র কর্মীরা। সঙ্গে ছিলো বারুইপুর থানার পুলিশ। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুজন চক্রবর্তী তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেননি, ৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ফেরত গেছে বলে তৃণমূল যাদবপুর কেন্দ্রের দেওয়ালে দেওয়ালে প্রচার-লিখন চালায়। সুজন চক্রবর্তী যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী। প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের কাছে মিথ্যা লিখনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তদন্তে প্রমাণ হয়, সুজন সাংসদ কোটার প্রায় সব টাকাই যথাযথ সময়ের মধ্যেই খরচ করেছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়কে এক নির্দেশে ওই মিথ্যা প্রচারের দেওয়াল মুছে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তৃণমূল গড়িমসি করায় শেষে জেলা প্রশাসনই দেওয়াল মুছল।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে ডঃ সুজন চক্রবর্তীর website থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ীঃ

The actual figure of MPLAD Fund expenditure of Dr. Sujan Chakraborty is varying with Loksabha website and MPLAD website www.mplad.nic.in.


This is to be noted the in the website www.mplad.nic.in the MPLAD Fund expenditure mentioned is a consolidated report since 1993.

The mentioned unspent amount of Rs. 4.71 Crore is not in the part of Dr. Sujan Chakraborty during his tenure as MP of Jadavpur. The figure is a carry forwarded figure from past MPs’ of Jadavpur Constituency.

There is no flaw in the figure of expenditure of Dr. Sujan Chakraborty as mentioned in the website www.sujan.info as certified by the District Development and Planning Department, South 24 Parganas District. Only an amount of Rs. 10 Lac is not included in that certificate as it was released centrally for Bihar Flood Relief Fund.

Actual Figures of MPLAD Fund of Dr. Sujan Chakraborty is as follows:

Total approved Scheme: Rs. 10 Crore 50 Lac

Total Released Amount: Rs. 8 Crore 52 Lacs

Details here: http://sujan.info/mplad_tab.html

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০০৯

গোর্খাল্যান্ড ৩ - পারিজাত ভট্টাচার্য্য


পর্ব -৩:

গ্রেটার ণেপাল ও গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন:

অনেকেই ভেবেছিলেন যে নেপাল এ মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসলে, নেপাল এর সাথে আমাদের দেশের সু-সম্পর্ক থাকবে না, ওরা খালি চিন-চিন করবে আর ভারত এর সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবে, যাতে ভারত তারাহুড়ো করে উল্টো-পাল্টা কিছু করে বসে। কিন্ত এমনটা কিছুই হয়নি। প্রচন্ড এবং সাথে আরো অনেকেই দিল্লী তে আলোচনা করে গেছেন , ভালোভাবেই আলোচনা হয়েছে। আমাদের দেশের সাথে যাতে নেপাল এর সম্পর্ক ভালো না থাকে তার জন্যে কিছু কিছু দেশ সচেষ্ঠ। কোনো কোনো দেশ ভারতে নাশকতা মুলক কাজ পরিচালনা করার জন্যে নেপাল কে ঘাটি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্রিয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন দেশে দেশের আভ্যন্তরিন ব্যাপারে নাক গলাতে অভ্যস্ত, ঠিক তেমনি ভাবেই তারা নেপালের আভ্যন্তরিন রাজনীতিতে হস্থখেপের তাল খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওদের একটাই লক্ষ্য--মাওবাদী। তাই তাদের খতম করতে, এবং নেপাল দেশে নানারকম অস্থিরতা তৈরি করতে, ওরা নেপাল এর অভ্যন্তরে নানারকম বিচ্ছিন্নতাকারী শক্তি দের মদত যুগিয়ে আসছে। বর্তমানে নেপালে রাজা নেই, মাওবাদীরা সরকারে আসীন অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সাথে। কিন্ত এই নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে রাজি নয় আমেরিকা, তাই ওনারা নানান তালে আছেন। এই আমেরিকা ভালই বোঝে যে ভারত এবং চিন এর মাঝে নেপাল দেশটিরভৌগোলিক অবস্থানের প্রাধান্য, তাই তাদের এত লম্ফ-ঝম্ফ।

নেপাল দেশটি গঠন এবং আর্থসামাজিক অগ্রগতির দিক দিয়ে মোটামুটি চার ভাগে বিভক্ত:

১) প্রথম ভারতবর্ষের সীমানা পার্শবর্তী ত্বরাই অঞ্চল। দক্ষিন দিক। সাধারণভাবে সমতল এবং ঊর্বর। এটাই নেপাল দেশের শস্যভান্ডার।
২) ত্বরাই এর উত্তরে সিবালিক। ছোটো, মাঝারী পর্বতমালার মধ্যে সবথেকে উচু পর্বতমালা ১৫০০ মিটার এর মধ্যে। সিবালিক এর পরে মহাভারত রেঞ্জ, এখানে পর্বতমালার উচ্চতা ৩০০০ মিটার অবধি। এই এলাকাতে অনেক মানুষ থাকে।
৩) এর উত্তরে উপ্যতকা বা ভ্যালি। খুব উর্বর এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু অবস্থীত।
৪) এর উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা। এখানে এভারেস্ট, কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা, সবই অবস্থীত।

নেপাল এর অর্থনীতিতে শুধু নয়, এখন সেখানকার রাজনীতিতের ওই ত্বরাই অঞ্চল বিশেষ দৃষ্ঠি আকর্ষণ করেছে। এখানে অনেক বড় সঙ্খ্যার মানুষ বাস করেন এবং এদের বেশি ভাগ’ই হচ্ছে ভারতের বংশদ্ভূত। মাওবাদীরা অন্যত্র বেশি দাপাদাপী করলেও এই অঞ্চলে বেশী সুবিধে করতে পারে না, বরং ত্বরাইভিত্তিক দুইএকটি দল তৈরী হয়েছে যাদের শক্তি এখানে অনেক বেশী, এই এলাকাতে ভোটে এরাই সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ। মাওবাদীরা এদের হাথে নিয়মিত মার খায়। সাধারনত এদের মধেশীয় বলা হয়। এদের একটা অংশ ত্বরাই কে নেপাল থেকে বিচ্ছিন্ন করার নীতিতে বিশ্বাসী এবং উদ্যোগী। এদের আরেকটা অংশ যথেষ্ঠ ক্ষমতা নিয়ে স্বাশন চালায় নেপাল এর মধ্যেই। এদের সাথে সমঝতা না করে নেপালে সাধারণ নির্বাচন করা যাচ্ছিল না।


ঐ মধেশীয় নেতা কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। নানারকম প্রশ্নে ওই ত্বরাই এর রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে সমঝতা করে চলতে হচ্ছে নেপাল সরকারকে। সি পি আই (এম) এর কোয়েম্বাটোরে, ১৯ তম পার্টি কংগ্রেসে, এই পরিস্থিতি বিশ্লেশণ করে বলা হয় যে, এর মধ্যে ত্বরাই অঞ্চলে জঙ্গি মধেশীয় আন্দোলন গড়ে ঊঠেছে যারা ভবিষৎএ সমস্ত সরকারী গনতান্ত্রিক মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তুলেছে। গনতন্ত্রে উত্তরণের শক্তি প্রক্রিয়াকে বিপথে পরিচালিত করতে এই ঘটনাকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, জনজীবনে বিভাজন ঘটানোর লক্ষ্যে ব্যাবহার করে চলেছে। এমনিতেই ত্বরাই নেপালের সিঙ্ঘদুয়ার, অন্যতম প্রধান উন্ন্যত এলাকা। ওই দেশে শিল্প যা আছে, তার প্রধান অংশ ওই ত্বরাইতে। এর সাথে নেপাল এর রাজনীতিতে ত্বরাইএর সজোর হস্তক্ষেপ, একটা বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। অবশ্য নেপাল এর অভ্যন্তরে অনেক কাল ধরে ভারত বিরোধী শক্তি সক্রিয়। নানান ছুতোয়, তারা ভারত-নেপাল সম্পর্ক খারাপ করতে চায়। এরকম ই একটা শক্তি গ্রেটার নেপাল এর দাবিতে সোচ্চার।

ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসে এরা কাঠমান্ডু তে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে গ্রেটার নেপাল ফেরানোর দাবিতে শামিল হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। ১৮১৬ তে ব্রিটিশ এর সাথে নেপাল এর চুক্তি অনুযায়ী, এদের দাবীমত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, সিকিম, পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং জেলা (শিলিগুড়ি নিয়ে) অনেকটা এলাকা নেপাল এর হাত থেকে ব্রিটিশের হাতে চলে যায়। ভারত স্বাধীন হবার পরে ১৯৫০ সালে নেপাল এর সাথে চুক্তি হয়। ওদের বক্তব্য, পুরনো ব্রিটিশদের চুক্তির কোনো অর্থ নেই, অথহেব, ২০০ বছর আগের সব জায়গা ফেরত দাও, আর না ফেরত দিলে, ওদের এক নেতার কথায়, কাশ্মীরের থেকেও বেশী আগুন জ্বলবে এই সব দাবির অঞ্চলে। ওদের এক নেতার কথায়...” I have visited these areas and found that Nepalese of Indian origin as well as Nepalese forced to seek menial jobs in India support the demand”...গ্রেটার নেপাল গড়ার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে ইউনিফাইড নেপাল ন্যাসানাল ফ্রন্ট (UNNF), এই ফ্রন্ট এর পক্ষ্য থেকে ২০০৮ সালে গ্রেটার নেপাল এর ম্যাপ প্রকাশিত করা হয় আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ইংল্যান্ড এর রানীর কাছে দাবীসনদ পেশ করা হয়।

গ্রেটার নেপাল এর ম্যাপ এ পশ্চিমবঙ্গ( শিলিগুড়ি এবং ডুয়ার্স নিয়ে) আর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে জঙ্গি আন্দোলনকারী হুমকি দেওয়া গষ্ঠির ম্যাপ, কাকতালীয় ভাবে এক। গ্রেটার নেপালের প্রবক্তাদের মূল কথা হচ্ছে, ১৮১৬ সালের সুগাউলি চুক্তি বে-আইনি, জোর করে ব্রিটিশ নেপালের কাছ থেকে এলাকা নিয়ে নিয়েছিল, এখন ব্রিটিশ চলে গেছে, তাই ভারতকে নেপালের জায়গা ফেরত দিতে হবে। অর্থাৎ মামলা ভারতের মধ্যে শুধু আলাদা গোর্খল্যান্ড রাজ্য নয়, ভারত থেকে বেরিয়ে নেপালে যুক্ত হওয়া। মামলা শুধু দার্জিলিং , শিলিগুড়ি, আলিপূরদুয়ার দেওয়া নয়, সিকিম, উত্তরাঞ্চল দিয়ে দেবার। তাই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে যারা লড়ছেন এবং যারা সমর্থন করছেন, তাদের গ্রেটার নেপাল সম্পর্কে বক্তব্য কি?.........

দীর্ঘ আন্দোলন, রক্তপাত এবং ততধিক আলাপ-আলোচনার শেষে, রাজীব গান্ধী, জ্যোতি বসু, সুভাষ ঘিসিং তৈরি করলেন DGHC । তবে এটাও ঠিক যে সুভাষ ঘিসিং রা যতটা কাজ করতে পারতেন ওই এলাকাতে, তার প্রায় কিছুই হয়নি, DGHC গঠন হবার পরে প্রথম কয়েক বছর খুব ভাল কাজ হলেও, শেষ দেড় দশক কিছুই হয় নি। যে মুহুর্তে ঘিসিং দেখলেন (প্রায় ২০ বছর ডি জি এইচ সি চালাবার পরে), কাউন্সিল এর ভোট এগিয়ে এসেছে এবং ওনার জনসমর্থন তলানিতে ঠেকেছে, তখন হুঙ্কার ছাড়লেন... ষষ্ঠ তপশীল। সরকার পাহাড়ে পুনরায় অশান্তী ঠেকাতে যখন ষষ্ঠ তপশীল এর প্রসঙ্গে নীতিগতভাবে মেনে নিতে রাজি হলো, তখন দার্জিলিং এ বিজয় মিছিল বেরোলো। এই বিমল গুরুং নেত্রীত্ব দিলেন। হঠাৎ কি হলো, কয়েকদিনের মধ্যে সব উলটে পালটে গেলো। “ডি জি এইচ সি চাই না, ষষ্ঠ তপশীল চাই না, চাই আলাদা রাজ্য...গোর্খাল্যান্ড, চাই শিলিগুড়ি শুদ্ধু ডুয়ার্স”। কেউ যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝবেন যে, পাহাড় নিয়ে আলাদা রাজ্য “গোর্খাল্যান্ড” গঠনের চেয়ে বেশি নজর শিলিগুড়ি সমেত ডুয়ার্সে বেশি গন্ডগোল পাকানো। দার্জিলিং, কার্সিয়াং, কালিম্পং এ সভা করার থেকে বেশি স্বার্থ এবং চেষ্ঠা, শিলিগুড়ি, মালবাজার আর বানারহাটে সভা করার। যেকনো ভাবে ডুয়ার্সে গন্ডগোল পাকানো। তাই প্রশ্ন শুধু বাংলা ভাগের নয়, আমাদের দেশে কে দূর্বল করার চক্রান্ত আরো গভীর হচ্ছে। অনেক দেশী-বিদেশী শক্তি হাত মিলিয়ে এই চক্রান্তের মধ্যে আছে।
...শেষ
গোর্খাল্যান্ড পর্ব ২
গোর্খাল্যান্ড পর্ব ১

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০০৯

পহেলা বৈশাখ ও পান্তা-ইলিশ ~ নীড় সন্ধানী

যদিও এটা খুবই জনপ্রিয় শহুরে মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি কিন্তু পহেলা বৈশাখে পার্কে গিয়ে পান্তা-ইলিশ খাইনি কখনো। আমার কাছে এই ব্যাপারটা কেন যেন একটু মেকী মনে হয়। আমি জানিনা পার্কে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মেকী সংস্কৃতি কখন থেকে শুরু, কিন্তু পান্তা খাওয়ার সামর্থ থাকলেও ইলিশ খাওয়ার সামর্থ্য যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের নেই সেটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হতে হয় না। ইলিশ মাছের দাম এমনকি মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবু পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়াকে যেভাবে দেশীয় সংস্কৃতির ফরজ হিসেবে দেখানো হয় মিডিয়াতে, আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। দেশের বেশীরভাগ মানুষ যে খাবার খেতে পারে না সেটাকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে পালন করতে আমার একটু আপত্তি আছে।

এমনিতে নিন্মবিত্ত মানুষকে অভাবের কারনে সকালে পান্তা খেতে হয়। কিন্তু সেটা ইলিশ দিয়ে নয়, পেঁয়াজ, মরিচ বা আগের রাতের বাসী তরকারী দিয়ে। আর্থিক দুরাবস্থায় আছেন তেমন মানুষ মাত্রেই জানেন সকালে পান্তাভাত আর বাসী তরকারী খাওয়াটা কোন উৎসবের অংশ নয়, নিত্যদিনের দুঃখদৃশ্য। আমি সেই কঠিন মধ্যবিত্ত জীবন দেখে এসেছি বলে পান্তা ইলিশ উৎসবে কখনো যোগ দিতে পারিনি।

পহেলা বৈশাখ বা এরকম যে কোন উৎসব শ্রেফ শহুরে বাবুয়ানা যাতে আপামর দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহন নেই। আমি শহর কিংবা গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষদের এই উৎসবের বিষয়গুলির প্রতি প্রবল অনাগ্রহ দেখেছি। আসলেই দরিদ্র মানুষের কী কোন উৎসব আছে? সকল উৎসব পালা পর্বন শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের অধিকারে। তার মানে এই নয় যে আমরা এসব পালন করবো না। নিশ্চয়ই পালন করবো। তবে পালন করতে গিয়ে যেন ঐতিহ্যকে বিলাসিতা বানিয়ে না ফেলি। আমাদের সকল উৎসব ঐতিহ্য যেন আপামর জনগনের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। উৎসব থেকে যারা আর্থিক সামর্থ্যের কারনে বাদ পড়ছে তাদের কথা যেন ভুলে না যাই।

Courtesy: amar blog dot com

জোট বাধো, তৈরি হও... ~ বিমান বসু

জোট বাধো, তৈরি হও... কমরেড বিমান বসুর আহ্বান

পৃথিবীর ১৯৫টি স্বাধীন দেশের মধ্যে মানবোন্নয়নসূচকে আমাদের প্রিয় দেশ ভারতের অবস্থান ১৩২। অথচ আমাদের ভারত প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ এবং মানব সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। সঠিকভাবে জনগণের স্বার্থে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নের কর্মসূচী বাস্তবে রূপায়িত করলে মানব সম্পদ উন্নয়নের সূচকের এই পরিণতি হতো না।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ৬১ বছর পার করে এখন ৬২ বছরে পদার্পণ করছি। এই দীর্ঘ সময় পার করে এখনও আমাদের দেশ কৃষিতে স্বয়ম্ভর হতে পারলো না, শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে পরিণত হলো না, দেশের মানুষের দারিদ্র্য ঘুচলো না এবং এখনও আমাদের নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান শেষ হলো না।

এই সবই হয়েছে জনস্বার্থবিরোধী, পুঁজিবাদী পথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে। কারণ ভারত রাষ্ট্র বৃহৎ পুঁজিপতিদের নেতৃত্বে পুঁজিপতি-জমিদারদের শ্রেণীশোষণের যন্ত্র। যারা ক্রমশ বৈদেশিক লগ্নীপুঁজির সঙ্গে সহযোগিতা করছে ভারতে পুঁজিবাদী পথে উন্নয়নকে পরিচালিত করতে। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব থেকে ভারত মুক্ত থাকতে পারে না।

যদিও একথা সত্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)সহ দেশের বামপন্থীরা বিগত বেশ কিছু বছর ধরে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সংস্থা, বীমা, নবরত্নসহ রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রায় সবই বিরাষ্ট্রীয়করণের পরিকল্পনাকে প্রতিরোধ করতে পেরেছে। যদি এসব বেসরকারী হাতে চলে যেত, তাহলে ভারতের অর্থনীতি একেবারে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যেতো। আমাদের বিরোধী অর্থনীতিবিদরা এখন স্বীকার করছেন। সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীরা সংসদে এবং সংসদের বাইরে বেসরকারীকরণের নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে এ কাজ না করতে পারলে, বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্কটে সমস্ত কুফল আমাদের দেশের উপর পরোক্ষভাবে পড়তো। এইসব হওয়া সত্ত্বেও অপ্রত্যক্ষ প্রভাব আমাদের অর্থনীতির উপর পড়েছে। আমাদের বিদেশে রপ্তানি বাণিজ্য চূড়ান্তভাবে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে প্রায় ১২-১৩ লক্ষ রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনের কাজে যুক্ত মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছেন। রপ্তানি বাণিজ্য আরো মার খাবে। ইতোমধ্যে বণিকদের সংগঠক অ্যাসোচেম লক্ষ্ণৌ করে দেখেছে নতুন অর্থনৈতিক বর্ষে আগামী ৩ সাড়ে ৩ মাস পরে ভারতে কর্মরত প্রায় ১ কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। এমনিতেই আমাদের দেশে কয়েক কোটি মানুষের বেকারীর জীবনযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দরদাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শহরাঞ্চলে গরিব মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। আবার গ্রামের কৃষক যা ফসল ফলান তাঁরা দামে মার খাচ্ছেন। অন্যদিকে ঋণের জোয়ালে আবদ্ধ হয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক প্রতিবছর আত্মহত্যাই তাঁদের বাঁচার একমাত্র পথ হিসাবে বেছে নিচ্ছেন। তথাপি গরিব মানুষের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থাকে দেশব্যাপী গড়ে তোলা হচ্ছে না। যা রয়েছে তাকেও ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে।

এই অবস্থায় কংগ্রেস নেতৃত্বে ইউ পি এ সরকার ভারত-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদন করলো এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করলো। আবার মিথ্যাপ্রচার শুরু করলো সি পি আই (এম) ও বামপন্থীরা ভারতের গ্রামে গ্রামে পারমাণবিক বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০৩০ সালে পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য চুল্লি ব্যবহার করলে তা দেশের বিদ্যুতের চাহিদার মাত্র ৮% সরবরাহ করার ক্ষমতা অর্জন করবে। আর এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ তৈরি করা যেমন ব্যয়বহুল, অনুরূপভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে তাপবিদ্যুৎ (কয়লার ভিত্তিতে) তার থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। জলবিদ্যুতের প্রায় ৩ গুণ ব্যয় করতে হবে। ‍‌যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধারণ মানুষের সাহায্যে আসবে না, তা করেই বা লাভ কী?

ভারত রাষ্ট্রের এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতি যা কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউ পি এ জোট সরকার পরিচালনা করছে অতীতে যা বি জে পি’র নেতৃত্বে এন ডি এ সরকার পরিচালনা করেছে তার ফলশ্রুতিতে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণা বাড়ছে বৈ কমছে না। আর স্বাভাবিকভাবে পুঁজিপতিদের সৃষ্ট সঙ্কটের বোঝা শ্রমিক, শ্রমজীবী জনগণ, গরিব কৃষক ও সাধারণ নিম্নবিত্তদের ঘাড়ে স্থানান্তরিত করে চলেছে। এই অবস্থায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র মৌলবাদী শক্তি, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ও সন্ত্রাসবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে দেশের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

অন্যদিকে, ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর, সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে সব ধরনের দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়ার শক্তি, মৌলবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তথাকথিত মাওবাদীদের মিলিত কর্মসূচীতে রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। কৃষির সাফল্যকে সংহত করে কৃষির বৈচিত্র্যকরণের কর্মসূচীকে প্রসারিত করে রাজ্যে শিল্পবিকাশের সরকারী প্রচেষ্টা বানচাল করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে অশুভ শক্তির জোট মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই অশুভ জোট বামফ্রন্ট সরকারের বিগত দিনের সাফল্যকে খাটো করে দেখিয়ে উন্নয়নকামী সব ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আবার নতুন করে বাংলাকে ভাগ করার জন্য উত্তরবঙ্গে দার্জিলিঙের গোর্খাল্যান্ডের দাবিকেও সমর্থন করছে, সমর্থন করছে কামতাপুর ও গ্রেটার কোচবিহারের দাবিকে। আবার রাজ্যের পশ্চিমাংশে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাথে যুক্ত করে গ্রেটার ঝাড়খণ্ডের দাবিকে সমর্থন করছে।

এইসব চক্রান্তমূলক রাজ্যবিরোধী ও রাজ্যবাসীর শত্রুতাকারী কর্মসূচীকে পরাস্ত করতে রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্বে সমস্ত স্তরের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সচেতনভাবে ঐক্যের দৃঢ়প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গে জনস্বার্থবাহী কর্মসূচী রূপায়ণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিকল্পে বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্ট সরকারকে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের রাজ্যসহ সারা দেশের জনগণের মৌলিক দাবিগুলিকে সোচ্চার করতে সংসদে বামফ্রন্টের শক্তিবৃদ্ধি এই মুহূর্তে জরুরী কর্তব্য। এই কাজ করতে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও বি জে পি-সহ সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীলদের মুখের মতো জবাব দেওয়ার জন্য এক্ষুনি প্রয়োজন আরো বেশি মানুষের সমর্থন, প্রয়োজন গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বস্তিতে এবং গরিব মানুষের পাড়ায় পাড়ায় নিবিড় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি। আরো প্রয়োজন লোকসভার ৪২ আসনের প্রায় ৬৩ হাজার বুথে (অক্সিউলারিসহ) বুথ সংগঠনকে মজবুত করে গড়ে তুলে বুথের এলাকায় মানুষের কাছে বামফ্রন্টের রাজনৈতিক প্রচার ধারা পৌঁছে দেওয়া।

নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিরুদ্ধে শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে লোকসভার ৪২টি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জয়ী করার শপথ গ্রহণ করুন।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০০৯

গোর্খাল্যান্ড ২ ~ পারিজাত ভট্টাচার্য্য



পর্ব-২
পার্বত্য পরিষদের গঠন ও তার পর---



২৬ এ আগষ্ট, ১৯৮৮ সালে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা আর ইতিবাচক ভূমিকায় পত্তন হয়, দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের। এই স্বশাসিত সংস্থা এর নাম করন হয় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল (DGHC)। ওই দিনে শ্রী জ্যোতি বসু, মুখ্যমন্ত্রী আর সুভাস ঘিসিং(DGHC) এর মধ্যে এই সংস্থা এর চুক্তি সই হয়। সেই অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন শ্রী বুটা সিং, সি জি সমাইয়া আর রবিন সেনগুপ্ত। সর্বশ্রী নির্মল বসু, কানাই ভোমিক, ্যতিন চক্রবর্তী, কিরণময় নন্দ, হারকিষেণ সিংসুরজিৎ, আবদুস সাত্তার আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য ঊপস্থিত ছিলেন সাক্ষী হিসেবে। বর্তমানে আমাদের রাজ্যের সজ্জন গষ্টি এবং সংবাদমাধ্যম বোধহয় জানেন না যে সেই চুক্তি তে কি ছিলো। সেই চুক্তি তে পরিষ্কার আছে যে দেশের স্বার্থে এবং দেশের সার্বোভৌমত্বর জন্যে এবং প্রধানমন্ত্রির অনুরোধে, জি এন এল এফ আলাদা” গোর্খাল্যান্ড” এর দাবি পরিত্যাগ করছে এবং রাজ্য সরকারের আইন এবং বিধি অনুযায়ী, পাহাড়ের মানুষের আর্থসামাজিক, শিক্ষাগত এবং সাংষ্কৃতিক উন্নয়ন এর ধারা কে জারি রাখতে, পার্বত্য পরিষদের এর গঠনের প্রস্তাব কে অনুমদন করছে এবং সহমত পোষণ করছে। সেই চুক্তির কিচ্ছু দরকারি বিশ্লেষন তুলে দেওয়া হল।


১) পরিষদের নাম হবে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাঊন্সিল।

২) এই পরিষদের কার্য্যের বা উন্নয়নের jurisdiction হবে দার্জিলিং জিলার দার্জিলিং, কার্সিয়াং আর কালিম্পং মহাকুমাএবং সাথে আছে লোহাগড় চা বাগান, লোহাগড় বন, পানিঘাটা, রঙ্গমোহন, বরাচেংগা, ছোটো আদলপুর, পাহাড়, সুখনাবন, সুখনা-পার্ট -১, শানন্দাপতি বন - ১, মহানদি বন, চম্পাসারী বন আর সালবাড়ি চাট- পার্ট ২ মৌজা। এই মৌজা গুলি সব ই শিলিগুড়ি মহাকুমা অন্তর্গত। তাছাড়া এই চুক্তি তে লেখা আছে যে পরিষদ গঠনের পরে, রাজ্য সরকার পরিষদকে প্রশাসনিক কাজের এবং তৎসহ পারিষধিয় উন্নয়ন এর জন্যে জমি দেবে লিজ বা অন্য কোনো উপায়ে। এবং সেই জমি দেওয়া হবে শিলিগুড়ি মহাকুমা অন্তর্গত দার্জিলিং মোড়ের কাছে।

৩) পরিষদের প্রশাসনিক এবং কার্য্যকারি ক্ষমতাপরিচালিত এবং পরিদর্শিত হবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারে মাধ্যমে। জনগনের উন্নয়ন এর জন্যে এবং সর্বসাধারণের স্বার্থে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং তৎসহ অন্য কনো কারণ ছাড়া, পরিষদের যে কোনো জমি অধিগ্রহন করার ক্ষমতা থাকবে নিম্নলিখিত ঊন্নয়ন প্রকল্পে----১) বনাঞ্চল সম্প্রসারণ ২) কৃষি কার্যের স্বার্থে সেচ এর জলের জন্যে ক্যানেল এর ব্যাবস্থা ৩) কৃষি কাজ ৪) স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা এর পরিকাঠামো ৫) পর্যটন শিল্প ৬) শিক্ষা ব্যাবস্থার পরিকাঠামো ৭) জনকল্যানমূলক কাজ---্যেমন রাস্তা ঘাট এর ব্যাবস্থা---- তার পরিদর্শন এবং মেন্টেনেন্স (জাতিয় ও রাজ্য সড়ক বাদে)

৪) পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে বাজার সমিতি নিয়ন্ত্রন এবং পরিচালনের দায়িত্ব।

৫) শিক্ষা র বিকাশ এর নিয়ন্ত্রণ, প্রাইমারী, মাধ্যমিক এবং উচ্চ্যমাধ্যমিক স্তর অবধি।

৬) ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পেরপ্রসার ও নিয়ন্ত্রন।

৭) পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ঊন্নয়নমূলক, প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রন এবং পর্যবেক্ষন। এই পার্বত্য পরিষদের ৪২ টি সদস্য সংক্ষ্যার মধ্যে, ২৮ জন নির্বাচিত হবেন আর বাকিরা হবেন রাজ্য সরকার থেকে মনোনিত। এই পরিষদের একটি নিজস্ব এক্সিকিউটিভ বডি থাকবে এবং পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়াম্যান স্বাভাবিক ভাবে এই এক্সিকিউটিভ বডির সদস্য হবেন। এই এক্সিকিঊটিভ কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান হবেন স্বাবাভিক ভাবেই পরিষদের চেয়ারম্যান যিনি একজন পূর্ণ রাজ্য মন্ত্রীর সন্মান এবং দায়িত্ব ও পাবেন।


ঊল্লেখ্য যে এই পার্বত্য পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে ১৫ই ডিসেম্বর’ ১৯৮৮ এর মধ্যে। গোর্খাল্যান্ড দাবির সাথে জড়িত বিভিন্ন অপরাধ মূলক দোষে দোষী ব্যাক্তি দের বিরুধ্যে আইনী ব্যাবস্থা নেবার ব্যাপারে রাজ্য সরকার পুনরায় বিবেচনা করবে। এই পূণর্বিবেচনার প্রক্রিয়াকরণ শুরু হবে এই চুক্তি সই এর ১৫ দিন এর মধ্যে।


ধংস্বাত্বক কাজকর্মে লিপ্ত দোষী ব্যাক্তি দের ব্যাপারে চুক্তির বয়ান কি বলছে----?

১) খুন ব্যাতিরেখে যে সরকারি কর্মচারিরা অন্যান্য ধ্বংস্বাত্বক কাজকর্মের সাথে লিপ্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা রাজ্য সরকার তুলে নেবে।
২) গোর্খা ন্যাশানাল লিবেরেশন ফ্রন্ট তার সদস্য দের ঊদ্দেশ্যে একটি লিখিত বিবৃতি জারি করবে যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কাছে সঞ্চিত বিভিন্ন অস্ত্র জেলা প্রশাসন এর হাতে তুলে দিতে হবে। এর জন্যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে না।
৩) প্রকারান্তে জি এন এল এফ কেও নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে সমস্তরকমের ধ্বংসাত্তক কাজকর্মের থেকে বিরত হতে হবে এবং রাজ্য সরকারের সাথে মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি, উন্নয়ন এর ধারাকে বজায় রাখতে হবে।


এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালিন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জ্যোতি বসু, জি এন এল এফ প্রধান শ্রী সুভাষ ঘিসিং এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মুখ্য সচিব শ্রী সি জি সোমাইয়া।


কিন্ত এই চুক্তি সই হবার ২০ বছর পার হয়ে যাবার পর দেখা যে পাহাড়ের মানুষের স্বার্থে সার্বিক কোনো উন্নতি হয় নি। কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করে এই ডি জ়ি এইচ সি র প্রধানেরা ফুলে ফেপে ঊঠেছে। ঊপরের স্তরে গনতন্ত্র দেখালেও অন্তরীক্ষে গনতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। চোরাগোপ্তা বাঙ্গালী বিদ্বেষ তো ছিলোই কিন্ত তার সাথে জুড়ে whisper campaigning করা হতো যে সি পি আই এম বাঙ্গালী দের পার্টি এবং নেপালী দের শত্রু। সি পি আই এম পাহাড়ে কোনো জায়গায় সভা করলেই আগের থেকে এই DGHC সেখানে বন্ধ ডেকে দিতো এবং স্বাবাভিক ভাবেই পার্টির কর্মী - সদস্য রা সেই সভাস্থলে আসতে পারতেন না। সব কিছুর মধ্যেই ছিলো কংগ্রেসী মদত। পাহাড়ে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে কর্মরত বাঙ্গালি কর্মচারিদের ওপর চলতো মানসিক অত্যাচার। জাতপাত নিয়ে অশ্লীল গালি-গালাজ শুনতে হত। এই ব্যাপারে আমিও ভুক্তভূগি। প্রতিবাদ করলেই সন্ধ্যেবেলায় নেশাখোরদের হাথে মার। যাই হোক এই উন্ন্যয়নখাতের অর্থের লুন্ঠনের ব্যাপকতা, সাথে মারাত্মক ভাবে প্রচারিত সাম্প্রদায়িকতা এবং পাহাডের এক শ্রেনীর মানুষের ক্রমবর্ধমান পূঁজি প্রমান করেছিলো এই পূঁজিপতি-সামন্ত্রতান্ত্রিক শ্রেনীর দৈন্যতা। সাথে প্রমান করে কংগ্রেসের সাপ্রদায়িক , আধা-ফ্যাসিস্ত দের লেজুড়বৃত্তি। জি এন এল এফ এর ২০ বছর অপশাসন এর ফলে সাধারণ গরিব শ্রমজিবি মানুষের মধ্যে তিব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জি এন এল এফ থেকে বেরিয়ে আসে কিছু গষ্ঠি, এই ঘটনা আবার প্রমান করে, পূঁজিবাদী সামন্ত্রতান্ত্রিক ব্যাবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা । যাই হোক সুভাষ ঘিসিং বুঝতে পারে যে তার নাম তলানিতে ঠেকেছে এবং পরবর্তি হিল কাউন্সিল এর আগেই তোরজোড় আরম্ভ করে দেন ষষ্ঠ তপশিল এর দাবিতে আনন্দলোন। আবার অশান্ত পাহাড়, আবার দিন এর পর দিন বন্ধ, রাস্তা অবরোধ, সরকারি অফিস বন্ধ, বন্ধ চা বাগান, রিক্ত চা শ্রমিক, বেহাল পর্যটন শিল্প... ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজ্য সরকার পাহাড়ের শান্তি বজায় রাখার জন্যে ষষ্ঠ তপশীল এর অন্তর্ভুক্তির দাবি বিবেচনার জন্যে আশ্বাস দেয়। জি এন এল এফ , রাজ্য সরকারের পাহাড়ে শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রাখার এই ইতিবাচক ভূমিকাকে, ভাবে রাজ্য সরকারের দুর্বলতা এবং হার, আর তাদের জিত। তাই সেই জিত এর উপলক্ষে তারা দার্জিলিং এর ম্যাল এবং পাহাড়ের সর্বত্র বিজয় মিছিল করে। বর্তমান জনমুক্তিমোর্চার সভাপতি সেইদিন, সেই বিজয় মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির আমুল পরিবর্ত্তন হয়ে যায়। জি এন এল এফ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে প্রচুর সমর্থক এবং তাদের নেতা হন বিমল গুরুং স্বয়ং। তিনি গঠন করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তাদের দাবিতে দেখা যায় আমুল পরিবর্ত্তন। তাদের দাবি হয়...”dssolve hill council”…” remove Ghising”….”We want separate GORKHALAND including Siliguri and Dooars and no 6th schedule….etc etc”….” ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার পাহাড়ে জ্বলে আগূন। দিন এর পর দিন বন্ধ। সাধারণ মানুষের জ়ীবন হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত। গুরুং , ঘিসিং এর ৩০ দিনের বন্ধ এর রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। চলে বন্ধ আর হিংসাশ্রয়ী আনন্দোলনের কম্পিটিশন। ওনারা দাবি করেন যে ওনারা নাকি ওনাদের গোর্খাল্যান্ড এর দাবি তে “গান্ধীবাদি” আনন্দোলন করছেন কিন্ত তা কতটা গান্ধীবাদী তার কিছু নজির নিচে পেশ করা হোলো।



১) পাহাড়ে সি পি এম পার্টি অফিস ভাংচুর, পার্টি অফিস আগুন দিয়ে পোড়ানো। লাল ঝান্ডা ছিড়ে নিয়ে পার্টি অফিসের মাথায়ে নিজেদের ফ্ল্যাগ লাগানো। সি পি আই এম পার্টি সদস্য ও সমর্থকদের সামাজিক বয়কট, তাদের বাড়ির জলের লাইন কেটে দেওয়া, তাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের স্কুলে জেতে না দেওয়া, তাদের বাড়ির সামনে সর্বক্ষন গার্ড দেওয়া, তাদের পার্টি ছেড়ে দেবার জন্যে হুমকি দেওয়া, না ছাড়লে পাহাড় থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, সি পি আই এম এর সব রকম জনসভা বলপূর্বক বানচাল করা। এখানে উল্লেখ্য যে এই অত্যাচার হয়েছে এবং এখন হচ্ছে কেবলমাত্র সি পি আই এম দলের সমর্থক ও সদস্যদেরওপর। ওন্যরা সবাই সাধু।

২) রাজ্য পুর ও নগোরোন্নয়ণ মন্ত্রী শ্রী অশোক ভট্টাচার্য্য কে তার বিধানসভা এলাকা অন্তর্ভুক্ত এলাকা মিরিকে ঢুকতে না দেওয়া। এবারের লোকসভাতে নির্বাচনেদার্জিলিং লোকসভা তে সি পি আই এম প্রার্থী শ্রী জিবেশ সরকারকে পারাডে প্রচার আর কর্মিসভা করতে বাধা দেওয়া ইত্যাদি।


৩) প্রায় এক বছর বকেয়া বিদ্যুত, দুরভাষ দপ্তরের বিল। তাদের ক্যাশ কাউন্টার আর ডিসকানেকশনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোর্চার। প্রাইভেট এবং কমার্শিয়াল গাড়ীর ওপর নাম্বার প্লেট এর অপর WB মুছে GL লেখা বাদ্ধ্যতামুলক। রাজ্য সরকারি দপ্তরের বোর্ডের ওপর Government of West Bengal মুছে Government of Gorkhaland লিখে দেওয়া হচ্ছে এবং সম্পুর্ণ বেয়াইনি ভাবে। গাড়ীর নাম্বার প্লেট এর অপর GL লেখা হচ্ছে শুকনা থেকে আর সেবক থেকে। পাহাড়ে রাজ্য সরকারি বাকি দপ্তরে যেমন ভূমি সংস্কার , এম ভি আই ( মটর ভেইকেলস) দপ্তরে রাজস্ব আদায়ে মানা।

৪) পাহাড় ও সমতলে মোর্চা সমর্থকদের নানা সাম্প্রদায়িক প্ররোচোনামূলক উক্তি। মোর্চার নেতারা পাহাড়ের থেকে শিলিগূড়ি এবং ত্বরাই এলাকাতে মিছিল, মিটিং করতে আরো বেশী তৎপর । এই সব সমতল এবং ত্বরাই এলাকাতে বেশী রকম সাম্প্রদায়িক উক্তির মাধ্যমেয় মোর্চার নেতারা এইসব অঞ্চলে আরো বেশী মাত্রায় গন্ডগোল পাকাতে উদ্যত। বছর খানেক আগের ঘটনা। মোর্চার নেতারা ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান আইডল খ্যাত প্রশান্ত তামাং এর চিত্র নিয়ে মিছিল করলেনপাহাড়ে। তারপরেই শিলিগুড়িতে এসে ওনারা নানান ছুতোয়ে, ভেনাস মোড়ে টাঙ্গানো ইন্ডিয়ান আইডল রানার্স খ্যাত আমিত পালের চিত্র পোড়ালেন। শুরু হয়ে গেলো সাম্প্রদায়িক লড়াই, চললো টিয়ার গ্যাস, গুলি, ১৪৪ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর পর সুযোগ পেয়ে গেলো “আমরা বাঙ্গালী” সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে।

৫) চাবাগান গুলি বন্ধ। চা শ্রমিক দের ঊপার্যনের পথ বন্ধ। সেখানকার ট্রেড য়ুনিয়ন সি আই টি ঊ এর সমর্থ, সদস্য এবং নেতারা বিতাড়িত।

৬) স্কুল, কলেজ দিনের পর দিন বন্ধ রেখে সেখানকার ছাত্র ছাত্রী দের বলপূর্বক মিছিলে এবং অনশনে নিয়ে আসা।

বর্তমানে এই ভাবে এবং আরো নানান ভাবেই চলছে মোর্চার “গান্ধীবাদি “ আন্দোলন। এর সাথে তাল মিলিছে আমাদের পাড়াতুতো দিদির দল। দিদির এক সাগ্রেদ তো সোজাসুজি শুকনা তে গিয়ে মোর্চার অনশন মঞ্চে গোর্খাল্যান্ড এর দাবি কে সমর্থন জানিয়ে আসলেন। এরপর স্বয়ং গুরুং বাবু সোজা লালগড়ে গিয়ে আদিবাসী - মাওবাদী দের বিপথে চালিত আন্দোলন কে ঊস্কে দিয়ে আসলেন। এই দিকে উত্তরবঙ্গে চলছে মোর্চার সাথে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের এক অশুভ আঁতাত। এইদিকে রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিলিগুড়ি তে এসে বলে গেলেন যে ওনারা আলাদা রাজ্যের দাবি মানেন না, অথচ তৎকালিন জি এন এল এফ এর সাথেয় কংগ্রেসে এর অশুভ আঁতাত এর ফল বর্তমান দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসী সাংসদ পরের দিন ই বললেন যে কংগ্রেস গোর্খাল্যান্ডের দাবি কে সমর্থন করে। তাই চারদিকেই চলছে এক রাজ্য ভাঙ্গার চক্রান্ত। মমতার সাথে তাই সমান ভাবে পাল্লা দিচ্ছে বিমল গুরুং। মমতার কারখানা তাড়ানোর স্টাইলে ঊনি পাহাড়ে যা করছেন তাতে পাহাড়ে পর্যটক যাওয়া বন্ধ হবে তাই নয়, ক’দিন বাদে অনেককে পাহাড় ছেড়ে অন্যত্র বসবাসের পরিকল্পনা নিতে হবে। নেপালের রাজা বা প্রধানমন্ত্রীও যে পোষাক পড়েন না, ঊনি হুঙ্কার দিলেন দার্জিলিংবাসীকে(স্কুল ছাত্র-ছাত্রী সহ) সেই নেপাল দেশের পোশাক পরতে হবে। অথচ ওখানে লেপচা, ভুটিয়া, তিব্বতী, বাঙ্গালী, আদীবাসী, হিন্দুস্থানী মানুষ আছেন। দেখে তো মনে হয় যে গুরুং বাবু আলাদা দেশ পেয়ে গ্যাছেন। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেল খুব ই তাৎপর্যপূর্ণ এবং উত্তেজনা পূর্ণ একটি খবর প্রকাশ করেছে। মাওবাদীদের তিন শীর্ষ নেতা দার্জিলিং গেছেন বিমল গুরুং এর সাথে গোপন সভা করার জন্যে। আলোচ্য বিষয় ঊত্তরবঙ্গকে টুকরো টুকরো করে কে কোনটা পাবে। কার্জনীয় নীতি বহাল এখোনো। তফাৎ খালি বাইরে শ্যাম চাচা দের সাথে আভ্যান্তোরিণ বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির গোপন আঁতাত। একটা এলাকার দাবিদার কামতাপুরিরা আর একটা ঊত্তরখন্ডীরা সাথে আদিবাসীদের জন্যে ডুয়ার্সের খানিকটা চাই। সর্বোপরি গোর্খাল্যান্ড। ম্যাপে ম্যাপে ঠোকা-ঠুকি চলছে। মাওবাদী মাইনওয়ালারা গ্যাছেন শান্তিপূর্ণভাবে, সবাই মিলেমিশে যাতে চুটিয়ে অশান্তি করতে পারে তার পাকাপাকি ব্যাবস্থা চলছে। প্রশ্ন শুধু বাংলা ভাগের নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার। নেপালের ত্বরাই এর মদেশীয়দের বাড়বাড়ন্তের বদলা নাকি আরো কিছু।

ঈতিহাসের দিক থেকে বিশ্লেশন করে দেখলে বোঝা যায় যে দার্জিলিং কোনোদিন ই নেপালী দের নিজস্ব জায়গা বা (place of origin) ছিলো না। গোর্খা বলতে আমরা কিন্ত আলাদা জাত বুঝি না। এই অঞ্চলে ব্রিটিশেরা কিছু লেপচা সম্প্রদায়ের লোকজনদের নিয়ে এসেছিলো তাদের খানসামাগিরীর জন্যে। এদের ব্রিটিশ রা নিয়ে এসেছিলো সিকিম থেকে। তাছাড়া কিছু লোকাল জনজাতি ছিলো যাদের ভুটানী বলা যেতে পারে। কিন্ত তাদের গোর্খা কিছুতেই বলা যায় না। নেপাল ও ভুটান থেকে ক্রমাগত সামরিক আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য, স্বাধীন এবং ততোধিক দুর্বল রাজ্য সিকিম, ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারস্থ হয়। ফলত নেপাল ও ভুটান আক্রমণ করা বন্ধ করে এবং সিকিম রাজ, দার্জিলিং, কালিম্পং ,শিলিগুড়িএবং কাশিয়াং, ব্রিটিশদের (মানে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী) হাথে দেয় লিজ ভীত্তিতে। ১৯০৭ সালে জলপাইগুড়ির কিছু অংশ নিয়ে শিলিগুড়ি মহাকুমা তৈরী হয়। প্রফেসর হরেন ঘোষের লেখা থেকে পাওয়া যায় যে কালিম্পং আগে ভুটান রাষ্ট্রের অধীনে ছিলো।


তাই আমাদের বুঝতে অসুবিধে নেই যে এই দার্জিলিং জেলার কোনো অংশই ণেপাল রাষ্ট্রে মধ্যে ছিলো না। চার মহাকুমা নিয়ে এই দার্জিলিং জেলা ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই জেলা টাকে লিজ নেয় বাৎসরিক তিন হাজার টাকার চুক্তিতে। এই চুক্তিটা হয় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সিকিম রাজ এর , ১৮৩৫ সালে। ব্রিটিশ দার্জিলিং জেলা টাকে তাদের নিজস্ব সোসাইটিতে পরিনত করে। ওরা এখানে ওদের সিপাইদের ছাউনী করে এবং সাথে তৈরী করে শিক্ষা প্রতিষ্টান, হাসপাতাল। জলাপাহাড় আর লেবং এ তৈরী হয় সেনা ছাউনী। ১৮৬৫ সালে মকাইবাড়িতে চা চাষ আরম্ভ হয় এবং সেই জন্যে তাদের প্রচুর চা-শ্রমিকের দরকার পড়ে। এই ক্ষেত্রে নেপাল রাজ্য থেকে রুজিরুটির জন্যে হাজার হাজার নারী পুরুষ এই জেলাতে আসে। এই জনতার একটা বড়ো অংশ যোগ দেয় ব্রিটিশ ফৌজে এবং গোর্খা রেজিমেণ্ট এই ভাবেই তৈরী হয়। ১৮৮০ সালে প্রথম টয়-ট্রেন চালু হয়। পরবর্তি কালে এবং সময়ে এই দেশে নানা রাজ্য থেকে মানুষ আসে এখানে ব্যাবসা-বানিজ্য, চাকরির এবং নানান ব্যাবসায়িক কাজে এবং অনেকেই এখানে স্থির ভাবে বসবাস করে বাড়ি-ঘর বানিয়ে থাকতে আরম্ভ করে।

সাধারণ লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায়রাজনৈতিক বিশ্লেষনঃঃ-

দেশের পনেরো তম লোকসভার নির্বাচনের দামামা বেজে ঊঠেছে। চারিদিকে হই হই রই রই। সাথে মেডিয়ার ভোট নিয়ে দৈনিক লম্ফঝম্ফ। এই নির্বাচন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হচ্ছে, যখন সারা পৃথিবির পুজিবাদী অর্থনিতির প্রানকেন্দ্রআমেরিকা , ব্রিটেনের মত পূঁজিবাদী অর্থনিতির এবং পূঁজিবাদী অর্থনিতির ধারক ও বাহক দের মাথায় হাত পড়ে গেছে। বিশ্ব লগ্নীপূজির প্রানকেন্দ্র ওয়ালস্ট্রিটে ফেটে গিয়েছে ৯/১১ এর মতন আরেকটি বড়ো বিস্ফোরন যার দায়িত্ব আজ আর মার্কিন প্রশাসন কমুউনিস্টদের ঘাড়ে বা কোনো সন্ত্রাসবাদীদের ঘাড়ে ফেলতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক লগ্নিপূজির সারা বিশ্বে অবাধ চলাচলের ফলের বহু আকাঙ্কিত এবং সর্বসময়ে বহু প্রতিক্ষিত লাভের বুদ বুদের বিষ্ফারণ ঘটেছে। এই বিষ্ফারণের কম্পণ আজ সারা পৃথিবির সব দেশ গুলি কম -বিস্তর অনুভব করছে। এই আর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ১৯২৯ -৩০ সালের বিশ্ব -মহামন্দা কেও ছাপিয়ে গেছে। এই পূজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা কেবাঁচাতে কোনো রকমের কোরামিন-ইন্সুলিনে কাজ দিচ্ছে না। উপায় একটাই, আরো উদারিকরণ এবং আরো স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বাড়ানো। তাই এখন ভারত লক্ষ্য, চিন কে ঘাটিয়ে লাভ নেই। আজ আমাদের দেশে র এই আসন্ন নির্বাচনে সারা বিশ্বের লগ্নিপুজির লক্ষ্য ভারত, কারণ সে তার মালিকের মর্জির তোয়াক্কা করে না। তাকে বাড়তে গেলে, তার আরো স্বাধীনতা চাই। তার অবাধ চলাচল কে এই দেশে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাই আজ তার তাবেদার আমেরিকা নিশ্চিত করতে চায় যে এই নির্বাচনে যাতে বাম বা কমিউনিস্টদের শক্তি খর্ব করা যায়। তার জন্য ঢালো ডলার, যে করেই হোক, পশিমবঙ্গকে ছিন্ন-ভিন্ন করো। যাতে বামেরা দুর্বল হয় আর কেন্দ্রে শ্যামচাচাদের স্ট্র্যাটেজিক ভাস্তেরা ক্ষমতায় আসে। এই অভিপ্রায়ে, তাই ডলার ঢালা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সব বিচ্ছিন্নতাকারী এবং প্রতিক্রিয়াশিল শক্তিগূলোকে উজ্জিবিত করার জন্যে। এই ডলারের ইঞ্জেকশন শুধু আমাদের দেশেই নয়, নেপালে, মধেশীয়দের মধ্যেও দেওয়া হচ্ছে। ওদের মারফৎ টাকা থুরি ডলার এবং বন্দুক এই জিলা তেও আসছে। এই ঘটনা কংগ্রেস এবং বি জে পি উভয়েইজানে। তাই মোর্চাকে এতো তোষন। আমাদের পাড়াতুতো দিদিভাই ও আছেন ইদূর দৌড়ে, কিন্তু ওনার জ্ঞ্যন-গম্মি কম বলে ইদূর দোঊড়ে টিকতে পারলেন না বা শয়তানি বুদ্ধি মারাত্মক বলে বি জি পি কে লেলিয়ে দিলেন। অথয়েব বি জ়ে পী মোর্চার মন পেতে সমর্থ হলো। তুমুল দরা দরিতে কংগ্রেস পিছিয়ে গেলো। দার্জিলিং এ মোর্চার দাবি পৃথক গোর্খাল্যান্ড এর দাবি সমর্থন করলো বি জ়ে পী। সর্বোচ্চ দর দিয়ে দার্জিলিং লোকসভা আসনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে আদায় করে নিলো বি জ়ে পি। বি জ়ে পি র ইস্তেহারে কিন্ত প্রধানত হিন্দুত্ববাদ আর ঊদারনীতির তাবেদারী ছাড়া কিচ্ছুই নেই এবং তারা কিন্ত কিন্ত আগে মুখে কখনো আলাদা রাজ্যে প্রশ্ন তোলেনি। এমনকি ওদের প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষিত প্রার্থী এল কে আডবানী পর্যন্ত কয়েকদিন আগে এই গোর্খাল্যান্ডের দাবি নস্ব্যাৎ করেছিলেন, কিন্ত ঠিক এই ভোট দানের কয়েকদিন আগেই বি জ়ে পি এই গোর্খাল্যান্ডের দাবি কে সমর্থন করলেন এবং সুদুর রাজ্বস্থান থেকে প্রার্থী হয় দাড়ালেন যশোবন্ত সিং, যাঁর দার্জিলিং বা তার ভুমির সাথে কনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ নেই। এখন শুনছি যে তিনিই নাকি গুরুং পক্ষের হয়ে পাহাড়ে এসে দাবি তুলেছেন। দার্জিলিং এর পাহাড়ের মানুসষের কাছে মোর্চা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে জাতিয় দল পরিষ্কারভাবে আলাদা রাজ্য গোর্খাম্যান্ড আদায়ে তাদের সমর্থন করবে, সেই দল বা প্রার্থীকেই তারা সমর্থন জানাবে। এতদিন পর্যন্ত যে কংগ্রেস দল মোর্চার সমর্থন পাবার জন্য ঊদগ্রীব হয়ে ছিলো, সেই দলের কিছু নেতাদের দেখা যাচ্ছে গোর্খাল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে! কারণ তাদের সমর্থন পাওয়ার যখন আর কোনো সম্ভাবনা কংগ্রেস দেখতে পেল না, তখনই তারা মুখ খুললেন। অথচ মোর্চার সমর্থন পাবার ব্যাপারে তারা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইদানিংকালে জি এন এল এফ প্রধান সুভাষ ঘিসিং এর নির্বাচনী ততপরতা ইংগিতপূর্ন, কারন এখন তার পুরোনো বন্ধু কংগ্রেসের দরকার পড়তে পারে। যাই হোক, এই কংগ্রেসে এর মোর্চাকে সমর্থনের দ্বিচারিতা লক্ষনীয়। চিদাম্বরমের সাথে যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছিলো দিল্লি থেকে টেলিফোনে এমন কথাই জানিয়েছিলেন মোর্চার এক নেতা। তা প্রকাশিত হয়েছিলো একটা নেপালী দৈনিকে। তিনি নাকি মোর্চার নেতাদের আলাদা রাজ্যের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছিলেন এবং একথাও বলেছিলেন ১৯৪৯ সালেই আলাদা রাজ্য হওয়া উচিত ছিলো। তৎঅকালীন কংগ্রেস নেতারা এই বাস্তবতা কে উপলব্ধি করতে পারেননি। যদিও পরে তিনি এই সংবাদকে অস্বীকার করেছেন। কংগ্রেসের পক্ষে সরাসরি গোর্খাল্যান্ডের দাবির পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলেই, পরোক্ষভাবেই ছোটো ছোটো রাজ্যের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেওয়া হয়েছিলো, স্রেফ দার্জিলিং আসনে কংগ্রেসের পক্ষে মোর্চাকে পাওয়ার জন্যে। কিছুদিন আগে বিদেশমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রনব মুখার্জি গিয়েছিলেন শিলিগুড়িতে। তিনি সরাসরি বাঙ্গলা ভাগের দাবি ঊড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর তার পরের দিনই কংগ্রেস সাংসদ ও দার্জিলিং আসনে বর্তমান কংগ্রেস প্রার্থী দাওয়া নরবুলা প্রনব মুখার্জির বক্তব্যকে খন্ডন করে পরিস্কারই জানিয়ে দেন কংগ্রেস গোর্খাল্যান্ডের রাজ্যের দাবির বিরুদ্ধে নয়, বা বাংলা ভাগের ও বিরুদ্ধে নয়। প্রনব বাবু এমন কথা নাকি বলেননি। (এই স্থানে লক্ষনীয়ো যে মোর্চানেতারা কিন্তু আডবানীর গোর্খাল্যান্ডের অশ্বীকারের বিবৃতি টি ভোলার চেষ্টা করছেন)। একটি নেপালী দৈনিকেই তা প্রকাশিত হয়েছিলো। পরের দিন টেলিগ্রাফ পত্রিকার (উত্তর বঙ্গের পাতায়---১০ই মার্চ) লেখা হলো। ‘Narbula rubbs Pranab Claim’, কি বলেছেন নরবুলা সাহেব......” The CPM is unnecessarily creating confusion for political mileage. I want to make it clear that our leader, Pranab Mukherjee, had never said the Congress has against the division of Bengal and formation of Gorkha land” । এই বিষয়ে প্রনববাবু চুপ, কংগ্রেস চুপ, তাই এই চুপ থাকাটাই হচ্ছে কংগ্রেসের গেম প্ল্যান। এই বিষয়ে কিঞ্ছিৎ মুখ খুলেছেন আমাদের পাড়াতুতো দিদির সাগ্রেদ প্রবর। কি বলছেন তেনেরা। পার্থ চ্যাটার্জি এমন একজন নেতা যিনি গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে শিলিগূড়ির পাশে শালবাড়িতে মোর্চার অনশন মঞ্চে শুধু অংশগ্রহন করেছিলেন তাই নয়, তিনি তার বক্তৃতায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আলাদা রাজ্যের দাবির আন্দোলনকে যেন সি পি আই (এম) ও রাজ্যের বামফ্রন্ট বিরোধী আন্দোলনে পরিনত করা যায় তার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের আন্দোলনের পেছনে যে তৃনমূল নেত্রীর সমর্থন আছে, সে কথা বলতেও কিন্ত তিনি ভোলেননি। এরপর মেধা আর অনুরাধা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্স ভ্রমন। এটা ছিলো তৃনমুল নেত্রীর পরিকল্পনা মতন। তার শরিক এস ইঊ সি নেতা মানিক মুখার্জির গোরুবাথানে মোর্চার অনশনের মঞ্চে উপস্থিত থাকা ও বিমল গুরুং এর সাথে সাক্ষাৎ ছিলো একই পরিকল্পনার অঙ্গ।


৩০ শে মার্চ দার্জিলিং এ জিমখানা ক্লাব হলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং প্রকাশ্যেই এক ভাষনে কংগ্রেস প্রার্থী দাওয়া নরবুলার নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহার করার হুমকি দেন। যে তিব্বতী ও মুসলমানেরা কংগ্রেসকে ভোট দেন, তাদেরকেও তিনি হুশিয়ার করে জানিয়েছেন, মোর্চার বাইরে কাউকে ভোট দেওয়া চলবে না। প্রতিটি ভোটে তারা দেখে নেবেন কে কাকে ভোট দিচ্ছে। আর ওই সভাতে এও তিনি বলেন, কিভাবে ৯০% ভোট করাতে হবে, কিভাবে বুথ দখল করতে হবে। এক্কেবারে লালগড়ের ছত্রধর মাহাতর বিবৃতির সাথে মিলে যাচ্ছে। এই সব কথা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। টেলিগ্রাফ কাগজ়, ১ লা এপ্রিল, “At a reporters meet in Darjeeling yesterday, Morcha president Bimal Gurung had said, “Our Tibetan brothers have for long been voting blindly for the congress, but all the hill people, including our Muslim brothers, should only think about Gorkha Land as this is their place too.” He had also said the party would keep an eye on every vote during the coming polls.”

কংগ্রেস থাকলো নীরব ......কেন? কারণ ওদের আশা ছিলো যে মোর্চার আশীর্বাদ বা সমর্থন ওরাই পাবেন। শুধুমাত্র একটি আসন লাভের বিনিময়ে বি জ়ে পি বা কংগ্রেসের রাজ্য বা দেশ খন্ড খন্ড হয়ে যাক তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। নীতিহীনতাই তাদের একমাত্র সম্বল ভোট জিততে। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচনে জেতাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য--তার দারা রাজ্য বা দেশ বাঁচলো কি বাঁচলো না, তা তাদের কোনো বিবেচনার মধ্যেই থাকছে না। এনাদের বর্তমান অবস্থা চরম সঙ্কটজনক, এনাদের পুজিবাদী অর্থনীতি মুখ থুবরে পরেছে, এনাদের সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং বিভান্তী দেশের লোক পদদলিত করছে, এনারা কমুউনিস্টদের কাছে, যুক্তি , তর্কে, অর্থনীতিতের , দর্শনে হেরে বসে আছেন। নির্বাচনী ব্যাবস্থায় বামপন্থী দের কাছে হারছে এবং সারা দেশে বাম্পন্থীদের ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধি আটকাতে পারছে না, তাই এদের এই সঙ্কটজনক অবস্থায় এরা নানারকম নীতিহীন জোট করছে, ফ্যাসীবাদের আশ্রয় নিচ্ছে, পশ্চিম্বঙ্গে ১৯৭০-৭২ সালের কালো দিনগুলিফিরিয়ে আনতে চাইছে।


চলবে___________________
পর্ব ১ http://pnachforon.blogspot.com/2009/04/blog-post_10.html

বামফ্রন্ট অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ~ বিমান বসু


কিছু সংবাদমাধ্যম রাজ্যের মানুষকে বিরোধীদের জোটের কথা বলে যতই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক, রাজ্যের মানুষ জানেন কিসে তাঁদের ভালো, আর কিসে তাঁদের খারাপ হয়। তাই মানুষ এবারেও বামফ্রন্টের পাশেই থাকবেন, বামফ্রন্টকেই জয়ী করবেন। পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘গণশক্তি’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও সি পি আই (এম)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু। সিঙ্গুর থেকে বিরোধীদের গাড়ি কারখানা তাড়ানো থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃতীয় শক্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা, নানা বিষয়েই তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতামত দিয়েছেন এই সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রসূন ভট্টাচার্য



প্রশ্ন: পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের জোট ইউ পি এ টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। ইউ পি এ-র শরিকরা আলাদা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা কতটা? তারা কি আদৌ কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবে?


বিমান বসু: এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ এবং বি জে পি—র নেতৃত্বাধীন এন ডি এ উভয়েই ভারতের জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হবে। ইতোমধ্যেই ইউ পি এ এবং এন ডি এ —র শরিকদের অনেকে ঐ জোটগুলি থেকে সরে এসেছে। এই দলগুলির মধ্যে যারা কংগ্রেস এবং বি জে পি কাউকেই সমর্থন করে না, তারা উপলব্ধি করছে ভিন্ন কোনো কর্মসূচী প্রয়োজন। ফলে বামপন্থীরা যে ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের আহবান জানিয়ে ধীরে ধীরে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তুলছে তাতে এই দলগুলির অনেকে যুক্ত হচ্ছে। সম্ভবত আরো অনেকে যুক্ত হবে নির্বাচনের পরে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে নির্বাচনের আগেই একটা ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের কাঠামো গড়ে উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে এতে আরো অনেকে আসবে। আজ যারা তৃতীয় বিকল্প সম্পর্কে হেয় করা মন্তব্য করছে বা তৃতীয় ফ্রন্টের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন বলে দেখানোর চেষ্টা করছে তারাও তখন বুঝতে পারবে কোনটা বাস্তব আর কোনটা অবাস্তব।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত লোকসভা নির্বাচনের পর আমরা কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউ পি এ সরকারকে সমর্থন করেছিলাম কেন্দ্রে সাম্প্রদায়িক শক্তি বি জে পি-কে ক্ষমতায় ফিরে আসা ঠেকাতে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে সাম্প্রদায়িক এন ডি এ জোটের বদলে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠনের স্লোগান আমরা দিয়েছিলাম। সেই রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই আমরা এই সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের এই সমর্থন নিঃশর্ত ছিল না। সাধারণ ন্যুনতম কর্মসূচী রূপায়ণের শর্তেই বামপন্থীরা ইউ পি এ সরকারকে সমর্থন করেছিল। ইউ পি এ সরকার সেই কর্মসূচী রূপায়ণে অনীহা দেখিয়েছে। যেটুকু হয়েছে তা বামপন্থীদের ধারাবাহিক চাপের ফলেই। শুধু তাই নয়, ওরা সাধারণ মানুষের স্বার্থের এই কর্মসূচী রূপায়ণে বিরত থেকে জনস্বার্থবিরোধী নীতি নিয়ে চলেছে। দেশের স্বাধীন বিদেশনীতি বিসর্জন দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুসারী পররাষ্ট্রনীতি নিচ্ছে। সেকারণেই এখন দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ তৃতীয় বিকল্পের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, যারা স্বাধীন বিদেশ নীতি নিয়ে চলবে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে নীতি নেবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ ক্রমশ সেটা উপলব্ধি করছেন।


প্রশ্ন: বামপন্থীরা এই তৃতীয় শক্তিকে সংহত করতে বিভিন্ন অকংগ্রেসী এবং অ-বি জে পি দলের সঙ্গে আলোচনা করে একত্রিত করার চেষ্টা করছে। এই সংহতকরণ কতটা নীতির ভিত্তিতে হচ্ছে? তৃতীয় শক্তির মঞ্চে আসা এই দলগুলিকে কতটা বিশ্বাস করা যায়?


বিমান বসু: বিভিন্ন আঞ্চলিক দল তাদের কাজ নিজস্ব আঞ্চলিক ঘরানায় করে থাকে। কিন্তু আমরা বামপন্থীরা চেষ্টা করছি দেশের মানুষের ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নে একযোগে কাজ করতে একটি সাধারণ ন্যুনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে পথ চলার উদ্যোগ নিতে। সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে এভাবে পথ চলার চেষ্টা করলে, ভিন্ন ভিন্ন পার্টি হলেও একই নীতির দ্বারা পরিচালিত হলে তখন বিষয়টিকে আদৌ নীতিহীন বলে মনে হবে না। আঞ্চলিক দলগুলির নেতৃত্বের কারো কারো মনে যাই থাক না কেন, তারা যদি সর্বভারতীয় ভিত্তিতে ভারতীয় জনগণের স্বার্থবাহী কর্মসূচী রূপায়ণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের দুর্বলতা থাকলেও তারা নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে। কেউ বিশ্বাসযোগ্য কিনা, এটা কাজের নিরিখ ছাড়া বিচার করা খুবই কঠিন।


সব থেকে বড়ো কথা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করার কর্মসূচী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারলে তাতেও আঞ্চলিক দলগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এই কাজের মধ্যে দিয়ে সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে।


প্রশ্ন: নির্বাচনের পরে তৃতীয় শক্তি সরকার গড়ার মতো অবস্থায় এলে সি পি আই (এম) কি তাতে যোগ দেবে?


বিমান বসু: নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তির বর্তমান অবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটতে পারে। ভারতীয় জনগণের স্বার্থে সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচী তৈরি করা এবং নতুন নতুন শক্তির সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যে উদ্ভুত পরিস্থিতি গড়ে উঠবে সেই অবস্থার বিচারে তৎকালীন সময়ে সি পি আই (এম)-কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সরকারে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে। রাজনীতিতে কিছু বিষয় থাকে যার সবটা আগাম ঘোষণা করা যায় না। এটা ভবিষ্যৎবাণীর মতো নয়। এধরনের বিষয় নীতিভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং সি পি আই (এম) বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে কোনো কুন্ঠা বোধ করবে না। রাজনীতি হলো প্র্যাকটিক্যাল সায়েন্স এবং মার্কসবাদ লেনিনবাদও কোনো আপ্তবাক্য নয়, প্রয়োগের বিদ্যা। স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির ওপর অনেককিছুই নির্ভর করবে এবং কিছু সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতেই নিতে হবে।


প্রশ্ন: সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বি জে পি-কে এখনো কতটা বিপদ বলে মনে করে বামপন্থীরা? কংগ্রেসের জায়গায় বি জে পি কি কেন্দ্রে সরকার গড়ার মতো জায়গায় ফিরে আসতে পারে?


বিমান বসু: কেন্দ্রে বি জে পি-র ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আর বি জে পি এখনো বিপদ তো বটেই। বি জে পি রাজনৈতিক দর্শন পরিবর্তন না করলে এই শক্তি দেশের বিপদ হিসাবেই অবস্থান করবে। ভারতের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে, জাতীয় সংহতি, অখন্ডতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বি জে পি সবসময়ই বিপদ। আমরা ২০০৪ সালে চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনের পরেও বলেছিলাম, নির্বাচনে বি জে পি পরাস্ত হয়েছে মানে এই নয় যে দেশের সাম্প্রদায়িকতার বিপদ কেটে গেছে। বিগত পাঁচ বছরেও পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন হয়নি, যে এই বিপদ কেটে গেছে বলা যাবে।


অন্যদিকে বি জে পি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সাহায্য করার নামে যেভাবে দার্জিলিঙ-এ গোর্খাল্যাণ্ড ইস্যুকে ঘিরে ভূমিকা পালন করছে তা এ-রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিপদ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।


প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গে চলে আসি। এরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন বেশ উত্তপ্ত। অনেকেই বলছে এবার এরাজ্য থেকে বামফ্রন্টের আসন অনেক কমে যাবে। এমনকি কিছু সংবাদমাধ্যম সি পি আই (এম)-র নিজস্ব ‘বিশ্লেষণ’-র নাম করে বলছে, কিছু সংবাদমাধ্যম জনমত সমীক্ষার নামে বলছে বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ব্যাপক কমে যাবে। এব্যাপারে আপনাদের কি মনে হয়?


বিমান বসু: এরাজ্যের মানুষকে আমরা যতদূর চিনি এবং জানি, তাদের সঙ্গে চলাফেরা করে, কথাবার্তা বলে একথা বলতে পারি, বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও কিছু সংবাদমাধ্যম মানুষের মনকে বিষিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা প্রচার করছে, এবার কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হয়েছে, অতএব এবার তারাই জিতবে। কিন্তু জোট তো নতুন নয়। ২০০১ সালেও জোট হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালেও হয়েছিলো। এমনকি ২০০৪ সালেও একধরনের জোট হয়েছিলো। কিন্তু তাতে বামফ্রন্টের আসন কমেনি, বরং বেড়েছিলো। আসল কথা হলো, জোটটা কিসের জন্য? দেশকে, রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য না কি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য? মানুষ কী এটা বিচার করতে পারবে না? বামফ্রন্ট বিরোধীরা এবং কিছু সংবাদমাধ্যম রাজ্যের মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা রাজ্যের মানুষকে মূর্খ মনে করি না। এর জবাব তাঁরা নির্বাচনে সুদে আসলে দেবেন।


আরো একটা কথা বলা প্রয়োজন যে এবারের নির্বাচনটা হচ্ছে দিল্লিতে সরকার গড়ার জন্য, ভারতের যে পঞ্চদশ লোকসভা গঠিত হবে তার ৫৪৩জন প্রতিনিধির মধ্যে এরাজ্যের ৪২জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার জন্য। কোনো পঞ্চায়েত, পৌরসভা গঠনের জন্য নয়, অথবা রাজ্য সরকার গঠনের জন্যও না। অথচ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং কিছু সংবাদমাধ্যম এমনভাবে প্রচার করছে যেন এটা রাজ্যেরই নির্বাচন, তাদের প্রচারে কোনো জাতীয় বিষয়ের উল্লেখই নেই। দেশ আগামী পাঁচ বছর কিভাবে চলবে, দেশের বিদেশনীতি, অর্থনীতি, শিল্পনীতি, কৃষিনীতি, শিক্ষানীতি, সামাজিক ক্ষেত্রে নীতি কি হবে তা নিয়ে ওদের মুখে কোনো রা নেই। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচারই ওদের মূল হাতিয়ার। মানুষ নিশ্চয়ই এটা বুঝবেন।


প্রশ্ন: কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদের জোটে শুধু কংগ্রেস তৃণমূল নয়, অন্যান্য কিছু চরমপন্থী শক্তিও অংশ নিচ্ছে এবং সমর্থন দিচ্ছে। এটা কি আরো ভয়ানক দিক নয়?


বিমান বসু: ভারতে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড‌্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহান তাঁর ‘এ ডেঞ্জারাস প্লেস’ বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে আমাদের রাজ্যের রাজনীতিতে কীভাবে কমিউনিস্টদের ঠেকাতে বিদেশী শক্তির পক্ষ থেকে সরাসরি সাহায্য দেওয়া হয়েছিলো। তারপরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। মানুষের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। মানুষ বুঝতে পারছেন দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়ার শক্তি এরাজ্যে বামপন্থীদের অগ্রগতি ঠেকাতে বিরোধিতার শক্তিকে জোটবদ্ধ করে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে। কথায় বলে নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। এরাজ্যের মানুষ বুঝবেন না কিসে তাঁদের ভালো হবে? তাঁরা জানেন, বামপন্থীরাই জনস্বার্থবাহী কর্মসূচী রূপায়ণ করতে আন্তরিক। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কমিউনিস্টরাই বামপন্থী ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস ও বি জে পি-র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার দেশের স্বার্থকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বন্ধক দেওয়ার কর্মসূচীকে আঁকড়ে থাকলে আমাদের তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে সময় লাগেনি। তাই দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় বামপন্থীরা যে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা নিয়ে চলে তা রাজ্যবাসী নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন।


প্রশ্ন: দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় প্রায় প্রতিদিনই সি পি আই (এম)-র কর্মী সমর্থক বা নেতারা খুন হয়ে যাচ্ছেন। গত ১৮ই মার্চ একদিনে ৫ জন সি পি আই (এম) কর্মী খুন হয়েছেন। বিরোধীরা বলছে এগুলি নাকি সি পি আই (এম)-র আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল। প্রকৃত কারণটা কি?


বিমান বসু: এধরনের খুন ও হত্যার ঘটনা বামফ্রন্টবিরোধীদের কর্মসূচীতে নতুন নয়। এরাজ্যে বামফ্রন্টের মূল শক্তি সি পি আই (এম)কেই তারা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করেছে। দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়ার শক্তি একাজে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। সমাজে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যেই তারা এই অপরাধমূলক কাজ করে চলেছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন খুন হচ্ছেন, অথচ তৃণমূলসহ বিরোধীরা প্রচার করছে আমরাই নাকি সন্ত্রাস করছি! শুধু গত ১৮ই মার্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের ৫জন নেতা-কর্মী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খুন হলেন। এটা কিসের ইঙ্গিত? আসলে বামফ্রন্টবিরোধীরা খুন-সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে রাজ্যে একটা নৈরাজ্যের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে চাইছে। আমরা এর মোকাবিলায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার ও প্রতিরোধ সংগঠিত করবো। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই আক্রমণ প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলা হবে। এভাবেই সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলিকে জনগণের কাছথেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। দুএকটি সংবাদমাধ্যম গল্পকাহিনী ছড়িয়ে যে-এলাকায় এই আক্রমণ, তার বাইরে অন্য কোন এলাকায় কিছু মানুষকে ভুল বোঝাতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু যে এলাকায় এই খুন-খারাপি হচ্ছে, সেই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষ জানেন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।


প্রশ্ন: লালগড়, দার্জিলিঙ এবং কামতাপুরের নামে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলি চলছে, সেগুলি নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে?


বিমান বসু: এই সব বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘটনা স্থানীয়ভাবে কিছু সমস্যা করতে পারে। হয়তো কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় প্রভাবও ফেলতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে রাজ্যে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। তবে লালগড়, দার্জিলিঙ এবং কোচবিহারকে কেন্দ্র করে রাজ্যকে খন্ড খন্ড করার যে চক্রান্ত চলছে, সেই সম্পর্কে বামফ্রন্ট কর্মীদের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে এটা বারে বারে তুলে ধরার প্রয়োজন আছে।পশ্চিমবঙ্গবাসী নতুন করে বাংলা ভাগের কোন চক্রান্তকে মেনে নেবেন না বলেই মনে করি।


প্রশ্ন: বামফ্রন্টের ঐক্যের ঘাটতির জন্য নাকি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছু জেলায় ফলাফল খারাপ হয়েছে। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের ঐক্য কেমন রয়েছে?


বিমান বসু: একথা সত্য যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইতে অংশ না নিতে পারায় এবং পরস্পর বিরোধী প্রচার ধারা পরিচালনা করায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিলো। এতে যে জনগণের শত্রুরা লাভবান হবে এটা সবাই যথাসময়ে ঠিকমতো বুঝে উঠতে না পারায় এলাকাগতভাবে বামফ্রন্টের ঐক্যের চাপ তৈরি হয়নি। বিরোধীরা কিছুটা লাভবান হয়েছিলো। এক্ষেত্রে বামফ্রন্টের সবশরিক দলের ভ্যন্তরীণ কিছু আত্মসন্তুষ্টি কাজ করেছিলো। এখন পঞ্চায়েতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বামফ্রন্টের ঐক্যকে দৃঢ় করতে সব শরিকদল ঐকান্তিকভাবে প্রয়াসী হয়েছে। বামফ্রন্টও অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের ময়দানে সামিল হয়েছে।


প্রশ্ন: সিঙ্গুর থেকে টাটাদের কারখানা তাড়ানো এবং নয়াচরসহ নানা শিল্পপ্রকল্পের বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনী প্রচারে আপনারা এগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে তুলে ধরছেন?


বিমান বসু: রাজ্যের অর্থনীতি বিকাশের যে কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে এবং কৃষির উন্নয়ন বজায় রেখে শিল্প বিকাশের কথা, তা নিশ্চয়ই আমরা প্রচারে তুলে ধরবো। সিঙ্গুর রাজ্যের ছোট মোটরযান তৈরির ক্ষেত্রে একটা ল্যান্ডমার্ক হতে পারতো। গত ২৩শে মার্চ মুম্বাইতে ‘ন্যানো’ যে বাজারে ছাড়া হলো তা পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর কারখানা থেকেই দেশে-বিদেশে যেতে পারতো। অথবা ৩১শে মার্চ কলকাতার বাজারে যে প্রচারের জন্য এলো, সেটাও সিঙ্গুর কারখানা থেকেই সরাসরি আসতে পারতো। কিন্তু এরাজ্যের প্রধান বিরোধীদলের শিল্পবিরোধী-উন্নয়নবিরোধী কর্মসূচীর জন্য সেটা হতে পারলো না। তারা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটিকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলো, ‘ন্যানো, কেন?’ এই শিল্পের ফলে যে অসংখ্য অনুসারী শিল্প হতে পারতো এবং তাতে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হতো, তা তারা নস্যাৎ করে দিয়েছে। হাজার হাজার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তারা কেড়ে নিয়েছে। কাজেই আমার মনে হয় না, বিরোধী শক্তিকে রাজ্যের নতুন প্রজন্ম ক্ষমা করবে।


প্রশ্ন: বিরোধীরা অভিযোগ করছে, গ্রামের গরিব মানুষ, তফসিলী জাতি, আদিবাসী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বামফ্রন্ট সরকার নাকি বঞ্চনা করছে। এই ব্যাপারে আপনাদের মত কি?


বিমান বসু: এসব একদম বাজে কথা। গ্রামের গরিব মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা কংগ্রেস আমলে কি ছিলো? আর বামফ্রন্টের আমলে কোন জায়গায় আছে? এই হিসাবটা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে সত্যিই বামফ্রন্ট সরকার জনস্বার্থবাহী কাজ করেছে কিনা। কংগ্রেসের আমলে যেখানে গ্রামের মানুষের শিল্পজাত পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা ছিলো মাত্র ৪-৫ হাজার কোটি টাকার, সেখানে এখন তা বেড়ে ২০-২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এটা কোন যাদুতে হয়েছে? জমিদার জোতদারদের বেআইনী খাস জমি ও বেনামী জমি উদ্ধার করে গ্রামের গরিবের মধ্যে তা বন্টন করা হয়েছে। এর ৭০ শতাংশই তো তফশিলী জাতি, আদিবাসী, ও ধর্মীয় বিচারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। এই জমিতে যে সোনার ফসল হচ্ছে তার উপকার তো এই সব অংশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পেয়েছেন। তাছাড়া বেশীরভাগ গ্রামে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, জুনিয়র হাইস্কুল, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল হয়েছে। কলেজের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। কংগ্রেস আমলে তিন লক্ষের বেশি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিত না। এখন প্রতি বছর ৮লক্ষ ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ সরকারী পরিকাঠামো থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। এইসবের উপকার তো গ্রামের তফসিলী জাতি আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই পাচ্ছেন। এইসব দিক বিচার বিবেচনা করে সামগ্রিকতার দৃষ্টিতে উন্নয়নের দিকটি দেখতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে বামফ্রন্ট সরকারের কাজের অভিমুখে সমাজের দুর্বলতর অংশের মানুষ কত গুরুত্বপূর্ন স্থান নিয়ে রয়েছে।

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০০৯

কংগ্রেস নয়, বি জে পি নয়, লক্ষ্য তৃতীয় শক্তির সরকার ~ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য




আমাদের মূল লক্ষ্য কেন্দ্রে একটি বিকল্প সরকার গঠন করা। অর্থাৎ কংগ্রেসও নয়, বি জে পি-ও নয়। বাম, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির বিকল্প সরকার। এর বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর এজন্যই এবারের নির্বাচনে বামপন্থীদের নিজেদের জমিকে শক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী। গণশক্তি-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বল‍‌লেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরাজ্যে বিরোধীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, নীতিহীন জোট, রাজ্যকে ভাঙার ষড়যন্ত্র নিয়ে যেমন আলোচনা করেছেন, তেমনই সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক, অভিমুখ উঠে এসেছে কথোপকথনে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অতনু সাহা

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল এবারের লোকসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কারণ গত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বহুমুখী প্রথমত সাম্প্রদায়িক বি জে পি-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেসের ইউ পি এ জোটকে শর্তসাপেক্ষে বাইরে থেকে সমর্থন জানালো বামপন্থীরা সেই শর্ত ছিল সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচী মেনে চলা। কংগ্রেস মানেনি। উলটে আমেরিকার কাছে নতজানু হয়ে কংগ্রেস দেশকেই বিকিয়ে দিচ্ছে তাই জানতে চাইলাম এবারের নির্বাচনে বামপন্থীদের বক্তব্যের মূল অভিমুখ কী?

উঃ এবারের লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের মূল লক্ষ্য একটি বিকল্প সরকার তৈরি করা। কংগ্রেসও নয়, বি জে পি-ও নয়। এখন বলা যায়, বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক আঞ্চলিক দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে হবে।

প্রঃ .... এই আঞ্চলিক দলগুলোর অবস্থান কী এক জায়গায় থাকবে?


উঃ এখানেই বামপন্থীদের দায়িত্ব। তৃতীয় বিকল্প গড়ে ওঠার যে সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাকে কর্মসূচীগত ঐক্যের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হবে। যার ভিত্তিতে চলবে এই সরকার। এই ঐক্যের ভিত্তি হবে শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থে কাজ করার কর্মসূচী। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করা, রা‍‌জ্যের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়া। তৃতীয়ত, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে বলিষ্ঠভাবে রূপায়িত করা। এবং চতুর্থত, স্বাধীন বিদেশনীতি। অর্থাৎ আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়া বিদেশনীতিকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করানো। এই চারটি নীতির ওপর দাঁড়িয়ে সরকার গড়াটাই বর্তমান পরিস্থিতির দাবি। যার বাস্তবতা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নির্বাচনের পর আরও হবে।

প্রঃ আরেকটা বিষয়, ভয়ঙ্কর আর্থিক মন্দা, বিশ্বজোড়া এই সঙ্কট
এবারের নির্বাচনে তার গুরুত্ব কতটা? বামপন্থীদের ভাবনায় তার থেকে দেশকে বাঁটচানোর রাস্তা কী?
উঃ বিশ্ব আর্থসঙ্কট অবশ্যই এবারের নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। যেহেতু কংগ্রেস বা বি জে পি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুসৃত তথাকথিত নয়া বিদেশনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না, তাই সঙ্কটের ছাপ আমাদের দেশেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কর্মসঙ্কোচন হচ্ছে, কর্মী ছাঁটাই হচ্ছেন। রপ্তানির বাজারে মন্দা, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প থেকে তথ্য প্রযুক্তি সবই আক্রান্ত। এ‍ই সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারবে কোন্‌ সরকার? কোন্‌ সরকার পারবে দেশের অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে? কংগ্রেসও নয়, বি জে পি-ও নয়, তা পারবে একমাত্র তৃতীয় বিকল্প সরকারই।

প্রঃ এই সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্ট সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা কী একটা বিকল্প দিশা হিসাবে ধরা যেতে পারে?
উঃ একটা রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। দেশের আইন, আর্থিক নীতির চৌহদ্দির মধ্যেই কাজ করতে হয়। তবু এই সঙ্কটের মুখোমুখি যতখানি সম্ভব রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা আমরা করেছি। ৫১০৬ কোটি টাকার একটা বিশেষ ব্যয়-বরাদ্দ করেছি। যার মধ্যে দিয়ে পরিকাঠামো নির্মাণ শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে এবং কর্মসংস্থানের মত বিষয় অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারও একটা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সারা দেশের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমত, এটা যথেষ্ট নয়, দ্বিতীয়ত, এই ব্যয় বরাদ্দের অভিমুখটা গরিব সাধারণ মানুষের দিকে নয়। এখানেই ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। এখানেই বিকল্পের লড়াই।

প্রঃ গত কয়েকটা নির্বাচনেই দেখা গেছে, কংগ্রেস নয়, বি জে পি, কোন্‌ বিপদটা বড়? নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে এবারও কী তেমন বিষয় সামনে চলে আসতে পারে?
উঃ প্রথমেই ফারকটা বুঝে নেওয়া ভালো। এবারের নির্বাচনের প্রশ্ন কংগ্রেস এবং বি জে পি’র বিকল্প হিসাবে তৃতীয় শক্তির সরকার তৈরি করা। বি জে পি-র মৌলবাদী বিপদতো আছেই। কিন্তু কংগ্রেসও আমেরিকার সঙ্গে যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ গড়তে চায় তার বিপদও কম নয়। তাই আমাদের লক্ষ্য দু’পক্ষকেই পরাস্ত করা।

প্রঃ আরেকটা প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে উঠে আসছে বাইরে থেকে হলেও যেহেতু ইউ পি এ সরকারকে বামেরা সমর্থন করেছিল, তাই ওদের খারাপ কাজের দায় বামপন্থীদেরও আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে কী বলবেন?
উঃ এটা ঠিক যে, গতবার কংগ্রেসের জোটকে আমরা সরকার গড়তে সমর্থন দিয়েছিলাম, বলা ভালো দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তা করেছিলাম একটিই কারণে, তাহলো সাম্প্রদায়িক বি জে পি, আর এস এসের কাছ থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কংগ্রেসের কোন জনবিরোধী কাজ আমরা সমর্থন করিনি, প্রতি পদক্ষেপে বিরোধিতা করেছি। শেষপর্যন্ত পারমাণবিক চুক্তির প্রশ্নে এক অসম্ভব পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো কংগ্রেস। তখন বাধ্য হয়েছিলাম সমর্থন তুলে নিতে। দেশের মানুষ এটা বুঝেছেন। বর্তমান মার্কিনী অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় মানুষ আরও বুঝছেন আমাদের মার্কিন বিরোধিতার কেন প্রয়োজন ছিল।

প্রঃ গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে তৃতীয় শক্তি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কংগ্রেস বি জে পি-র আক্রমণের মূল লক্ষ্যও হয়ে উঠেছে তৃতীয় শক্তি কিন্তু তৃতীয় শক্তি কী সত্যিই সংহত? সত্যিই বিকল্প সরকার দিতে সক্ষম হবে?
উঃ তৃতীয় ফ্রন্ট সত্যিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে শক্তি এবং সংখ্যার বিচারে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। কর্মসূচীর ভিত্তিতে একে আরও সংহত করতে হবে। সেই আলোচনা শুরুও হয়েছে। নির্বাচনের পরেও সেই আলোচনা হবে। সঠিক কর্মসূচীর ওপর দাঁড়ালেই বিকল্প সরকার গড়ে তোলা সম্ভব। বামপন্থীরা এই কর্মসূচীর ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। কোন বিশেষ দল বা নেতাকে নয়।

প্রঃ দেখুন, এখনই পরিষ্কার বলে দেওয়া যায় নির্বাচনের পরেও জোট গঠন প্রক্রিয়া চলবে সব শিবিরেই ইউ পি এ এবং তৃতীয় শক্তি দু’দিকেই এটা সমান সত্যি এতে সুবিধাবাদী রাজনীতির জন্ম নেবে কী? বামপন্থীদের অবস্থান কী হবে?
উঃ হ্যাঁ, এটা ঠিক যে নির্বাচনের পর জোট গঠনের প্রক্রিয়া আরও সুস্পষ্ট চেহারা নেবে। ইউ পি এ আরও ভাঙবে, এন ডি এ ভাঙবে। এই ভাঙাভাঙির মুখে যে নতুন শিবিরের জন্ম হবে তাকে কর্মসূচীগত ঐক্যে রূপান্তরিত করতে হবে। না হলে সেটা হবে সুবিধাবাদ। এখানেই বামপন্থীদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আমরা পালন করবো।

প্রঃ তেমন পরিস্থিতিতে কী বামপন্থীরা সরকারে যাবে?
উঃ পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিচার করে, তারই পটভূমিতে ঠিক করতে হবে আমরা সরকারে যাব কিনা।

প্রঃ যদিও লোকসভার নির্বাচন, কিন্তু এরাজ্যে বিরোধীরা রাজ্যের ইস্যুগুলোই বলে যাচ্ছে আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
উঃ আসন্ন নির্বাচন লোকসভার হলেও, এরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর অবস্থান নির্বাচনী লড়াইয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে রাজ্য উন্নয়নের পথে চলবে না দাঁড়িয়ে থাকবে? কৃষির সাফল্য থে‍‌কে শিল্পায়ন কী সঠিক রাজনীতি নাকি বিরোধীদের ধংসাত্মক বিরোধিতাই সঠিক? রাজ্যকে উত্তরে-দক্ষিণে ভাঙাভাঙির যে ষড়যন্ত্র, সেই বিষয়ে মানুষের মনোভাব কী তা তো নির্বাচনী লড়াইতে আসবে। কিন্তু যেহেতু লোকসভা নির্বাচন অতএব দেশের সরকার কী হবে, তার নীতি কী হবে তা প্রধান বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু মুশকিল হলো এনিয়ে আমাদের রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের তেমন কোন কথা শোনা যায় না। কখনও কংগ্রেসের বক্তব্যই ওদের বক্তব্য, কখনও বি জে পি-র বক্তব্যই ওদের বক্তব্য।

প্রঃ এবার তো তৃণমূল জোট করেছে কংগ্রেসের সঙ্গে আপনি এই জোটকে কীভাবে দেখছেন?
উঃ বিরোধীদের এই জোট সম্পর্কে বলা যেতে পারে, কংগ্রেস তাদের দুর্বল অবস্থা থেকে খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাইছে। আর সেজন্য সর্বভারতীয় একটা দল নিজেদের নীতি স্বার্থ বিসর্জন দিয়েও তৃণমূলী জোটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অস্তিত্ব রাখার চেষ্টা বলা যেতে পারে একে। কংগ্রেস জোট করেছে ঠিকই কিন্তু তারা এখনও নিশ্চিত নয়, অতীতের মতো তৃণমূল আবার বি জে পি শিবিরে ফিরে যাবে কিনা। দেখা গেছে, এই নীতিহীন অবস্থানই কংগ্রেসকে বারে বারে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নীতিহীন জোটের এটাই হয় অনিবার্য ফলাফল।

প্রঃ কিন্তু তৃণমূল তো আগে থেকে নানা রঙের পতাকাধারী দলের সঙ্গে জোট করে বসে আছে...
উঃ হ্যাঁ, সেতো আরও মারাত্মক। কংগ্রেসও সেটা জানে। চরম দক্ষিণপন্থী থেকে চরম বামপন্থী সবরকম দলের সঙ্গেই তৃণমূলের কোথাও প্রকাশ্য, কোথাও অপ্রকাশ্য সমঝোতা আছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদী সমস্ত শক্তিকেই ওরা ওদের জোটে জড়ো করেছে। এটা এরাজ্যের গণতন্ত্রের পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে বড় বিপদ। এসব মানুষ দেখছেনও।

প্রঃ এধরনের জোট সম্পর্কে, ওদের কার্যকলাপ সম্পর্কে রাজ্যের মানুষ নিশ্চয়ই বুঝছেন কিন্তু ওদের নৈরাজ্যের কার্যকলাপ এরাজ্যের কতটা ক্ষতি করেছে?
উঃ বিরোধীদের নৈরাজ্য সৃষ্টি, রাজ্যের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে খানিকটা প্রশ্ন চিহ্ন যে টেনেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মূলত আমরা তাকে অতিক্রম করেই এগচ্ছি, ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাব। শিল্পের জন্য পুঁজি আসছে, এই সঙ্কটের মধ্যেও আসছে।

প্রঃ বিরোধীদের এই নৈরাজ্য সৃষ্টি, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ রাজ্যের ক্ষতি করেছে এটা যেমন বাস্তব, আবার অনেকে মনে করেন প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল আরও দৃঢ় পদক্ষেপের কথা বলছেন অনেকেই আপনি কী মনে করেন?
উঃ একথাটা আমিও বিভিন্নভাবে শুনেছি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। যেমন ধরা যাক সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম জনসমর্থনের ভিত্তিতেই কারখানাটি হোক। কারখানা, কর্মসংস্থান এটাইতো আমাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু বিরোধীরা তা হতে দেয়নি। এই সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় অঞ্চলে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, বলা যেতে পারে, তৃণমূল-মাওবাদীরা আমাদের ধৈর্য পরীক্ষা করছে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা ছিল এবং এখনও আছে, শুধু প্রশাসন নির্ভর নয়, রাজনৈতিকভাবেই সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হওয়া। ২০০৭-এ নন্দীগ্রামেও কিছু মানুষ ভুল বুঝলেন। ওখানে আমাদের শিল্প গড়ার পরিকল্পনা কী, রাসায়নিক শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল এসব বোঝানোর আগেই অন্য ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। আমরা তখনই জমি অধিগ্রহণ না করার সরকারী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিই। তা সত্ত্বেও টানা একবছর সেখানে কেন একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চললো, মানুষ এখন তা বুঝতে পারছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন তৃণমূল-মাওবাদীদের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল। এইসব অভিজ্ঞতা থেকেই ভবিষ্যতে আমাদের আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

প্রঃ এসব ঘটনায় সরকারের শিল্পায়ন নীতি কী কিছুটা থামকে দাঁড়িয়েছে? মনে হতে পারে, অবস্থা কিছুটা থিতু হোক, ততোক্ষণ ধীরে চলো এটা কী সরকারের এখনকার মনোভাব
উঃ না, বিন্দুমাত্র নয়। সরকারের শিল্পায়ন নীতি দাঁড়িয়ে যায়নি। বিগত এক বছরে যে বিনিয়োগ হয়েছে, কিংবা আগামী এক বছরের জন্য যে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো এখন আমরা বিবেচনা করছি, তাতে থমকে যাবার মতো অবস্থা যে হয়নি তা স্পষ্ট। কিন্তু সরকারের মনোভাবের দিক থেকে একথা বলতে পারি, জ‍‌মি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন পরিকল্পনা আরও নিখুঁত করা দরকার, তার জন্য যেটুকু সময় লাগছে তা লাগবে। বলতে পারেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকেই আমাদের এই সতর্ক ব্যবস্থা।

প্রঃ মাওবাদীদের কার্যকলাপ, সন্ত্রাসবাদীদের সক্রিয় হয়ে ওঠা গোটা রাজ্যেই উদ্বেগ তৈরি করছে প্রশাসন কি ভাবছে, পার্টি কী করবে?
উঃ ঠিকই, এটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। আমাদের রাজ্যের পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে ব্যবহার করতে পারছে বলে এই লাগোয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তাদের একটা অংশ আবার প‍‌শ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াকে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়। এসমস্ত ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য প্রশাসনকে আরও তৎপর করা। কিন্তু সর্বোপরি রাজনৈতিক সমাবেশের মধ্যে দিয়ে একে নির্মূল করা।

প্রঃ উত্তরেও সমস্যা বাড়ছে আরেকটা বিষয় সমস্ত ক্ষেত্রেই দেখা যা‍‌চ্ছে এদের সঙ্গে রয়েছে তৃণমূল....
উঃ হ্যাঁ, তা তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে তৃণমূল। এরাই এই শক্তিগুলোকে একত্রিত করছে। দার্জিলিঙ আসছে লালগড়ে। লালগড় যাচ্ছে দার্জিলিঙে। সকালে লালগড় ফোন করছে তৃণমূল দপ্তরে, রাতে ফোন যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে, মাওবাদী ডেরায়। সতর্ক থেকেই এর মোকাবিলা করতে হবে। এরাজ্যের মানুষও বুঝছেন কতটা বিপজ্জনক ওরা।

প্রঃ একইসঙ্গে সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসীদের বিভিন্ন ইস্যু তুলে তাদের বিভ্রান্ত করারও চেষ্টা চলছে বিরোধীরা একে ব্যবহার করতে চাইছে ভোটে এই বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন?
উঃ একটা জিনিস স্পষ্ট হচ্ছে দার্জিলিঙ হোক বা কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কোন এলাকাই হোক, একটা পরিকল্পিত চেষ্টা চলছে এই অংশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা, বামবিরোধী করে তোলা। কিন্তু একটা বিষয় জোর দিয়ে বলা যায়, ৩০ বছর অতিক্রম করে আদিবাসী কিংবা তফসিলী সম্প্রদায় অথবা সংখ্যালঘু মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জমি পেয়েছেন, শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে, কর্মসংস্থানও বেড়েছে। কিন্তু সেটা সবক্ষেত্রে আশানুরূপ নয়। আমরা চেষ্টা করছি। যদিও এখনই সব পরিবর্তন ঘটে যাবে তা আমরা মনে করি না। যেমন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলো অতীতের চেহারা থেকে বর্তমানে অনেক পালটে গেছে। জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুলনামূলক বিচারে তাদের পিছিয়ে পড়া অবস্থাকে বিরোধীরা ব্যবহার করতে চাইছে। আমরা বিশ্বাসী, সঠিকভাবে আমাদের কর্মসূচীগুলো রূপায়ণ করতে পারলে, রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ ঘটাতে পারলে, বিরোধীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। অতীতেও তা হয়েছে। সংখ্যালঘু, আদিবাসী কিংবা তফসিলী সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাম শিবিরে ছিলেন, এখনও আছে। নির্বাচনী ফলাফলেও তার প্রতিফলন ঘটবে।

গোর্খাল্যান্ড ১ ~ পারিজাত ভট্টাচার্য্য


অনেকেরই জানা যে বাংলাভাঙ্গার আদি চক্রান্ত হয়েছিল ১৯৪৭ এর ৪২ বছর আগে অর্থা১৯০৫ সালে । তখন ব্রিটিশরাই ছিলেন আমাদের দেশের শাসক দল । লর্ড কার্জন ছিলেন ভাইসরয় । বাংলা ভাগের কার্জনীয় আদেশ জারি হয়েছিল ১লা সেপ্টেম্বর , ১৯০৫ এবং বাংলা ভাগ কার্যকর হয়েছিল ওই সালের ১৬ ই অক্টোবর । তবে বাংলা ভাগের পরিকল্পনার কথা লর্ড কার্জন প্রকাশ করেছিলেন তার আগের বছর , ১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এবং ওই ফেব্রুয়ারী মাসেই স্বরাষ্ট্রসচিব এইচ এইচ রিজলে তার একটি নোটে রাজনৈতিক ভাবে বাংলাকে দুর্ব ল করার লক্ষ্যে বাংলাকে ভাগ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন । কেন এই বাংলা ভাঙ্গার চক্রান্ত। কারন লর্ড কার্জন আর রিজলে বাংলা কে ভয় করতেন । রিজলে তখন ১৯০৪ এর ৬ই ডিসেম্বর তার নোটে লিখেছিলেন : “Bengal United is a power; Bengal divided will pull in several different ways….one of our main objective is to split up and thereby weaken a solid body of opponents to our rule” স্বয়ং কার্জন ও ভারত সচিবকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন : “………if we are weak enough to yield to their clamour now, we shall not be able to dismember or reduce Bengal again; and you will be cementing and solidifying, on the eastern flank of India, a force already formidable, and certain to be a source of increasing trouble in the future….” তবে শেষ পর্যন্ত কার্জন কেও প্রতিবাদী বাংলার কাছে মাথা নোয়াতে হয়েছিল । বয়কট- স্বদেশী-বিপ্লব্বাদী আন্দোলনের সামনে ছ বছর পর বাংলা ভাঙ্গার সরকারী সীদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার কে । কিন্ত কলকাতা থেকে সরিয় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ভারতের রাজধানীকে পাকাপাকিভাবে ১৯১১ সালে । এই বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ । তারপর আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রশাসন এর মঞ্চ থেকে কার্জন গষ্ঠি বিদায় নেবার পরও ঐক্যবদ্ধ বাংলা চিরকালী দিল্লির শাসক দের চক্ষুশূল হয়ে থেকেছে । কেবল ব্রিটিশ শাসক দের কাছেই নয়, ভবিষৎ কংগ্রেসী শাসকদের সভাপতির পদে সুভাষচন্দ্র বসুর জয়লাভের তাকে মেনে নিতে পারেন্ নি গান্ধীজি । এবং ১৯০৫ - ১১ সালে কার্জন রা যা পারেন নি তা তার উত্তরাধিকাররা ১৯৪৭ সালে এসে সক্ষম হয়েছিলেন ভারত ভাগ করে বাংলাকেও ভাগ করতে। অবশ্যই জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃতের সমর্থনে ও সহায়তায় । লক্ষনীয়, তখন বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধিন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্যবদ্ধ বাংলার দাবী করেছিল। কিন্ত কংগ্রস ও মুস্লিম লিগ উভয়েই তা প্রতাখ্যান করেন । অতঃপর ভারত ভাগের সঙ্গে বাংলাও ভাগ হয়ে যায়। কার্জন না থাকলেও কার্জনিও নীতি সফল হয়। স্বাধীনতার পরেও কংগ্রেস শাসকেরা মনে করেছিলেন যে ঐক্যবদ্ধ বাংলা এমনই এক শক্তির আধার যা কিনা ভবিষৎতে তাদের একচ্ছত্র শাসনের সামনে বিপদের উৎস হয়ে থাকবে। তাই তারা বাংলা ভাগের এক নতুন চক্রান্ত সুরু করলেন। শুধু এই বাংলা ভাগে এনারা সন্তষ্ট থাকেন নি। যদিও বিভাজিত তবু স্বতন্ত্র বাংলার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার পথ ধরেছিল স্বাধীনতার ৮ বছর পার হতে না হতেই, ১৯৫৬ সালে। ২০ শে জানুয়ারী, ১৯৫৬ কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকারের নিদের্শে পশ্চিম বঙ্গের কংগ্রসী মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ শ্রীকৃষ্ণ সিংহ এই দুই রাজ্যের সংযুক্তিকরনের প্রস্তাব দেন। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোবিন্ধব ল্লভ পন্থ ঘোষনা করেন ঃ বাংলা ও বিহারের সংযুক্তিকরন সম্ভব হইতে চলিয়াছে এবং হইবেও।"


এই সংযুক্তিকরনের লক্ষ্য ছিলো পশ্চিম বঙ্গের গনতান্ত্রিক আন্দোলন এর বাধা সৃষ্টির করার জন্যে পশ্চিমবঙ্গের অবলুপ্তি ঘটানো। এই প্রসঙ্গে ১১ ফেব্রুয়ারী নাগরিক বিরোধী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সাহিত্যিক অতুলপ্রসাদ গুপ্ত ঃ
এসব সুস্থ মনের চিন্তা নয়, অনাস্বাদিতপুর্ব ক্ষমতার মত্ততায় উচ্ছৃঙ্খল খামখেয়ালির লিলানৃত্য । প্রতিবাদে গরজে উঠেছিল সারা বাংলার সমস্ত বামপন্থী দলগুলি এবং সাথে ছিলো শুভ বুদ্ধি সম্পন্য মানুষ, শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, শ্রমিক- কৃষক, মধ্যবিত্ত ইত্যাদি। এই প্রতিবাদী আন্দোলনে কংগ্রেস ছাডা সবাই ছিলেন। একের পর এক সংগঠিত হয় ধর্মঘট। ওই সময়ে উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (কলকাতা) থেকে জেতেন বঙ্গ-বিহার সংযুক্তিকরন বিরোধী আন্দোলনের নেতা কমরেড মোহিত মিত্র। আর তার ফলে বঙ্গ-বিহার সংযুক্তিকরনের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। অবশ্য এই চক্রান্ত থেমে থাকেনি। বহু চক্রান্ত এর সাথে এই বাংলা ভাঙ্গার চক্রান্ত রখে দিয়েছিলেন পশিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার সাধারণ মানুষ কে পাশে নিয়ে। তাই এই ৩২ বছরে এই রাজ্জ্যের বামবিরোধী শক্তি গুলো বুঝে গেছে যে ওনারা জনতার সাথে বামফ্রন্টসখ্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। তবে মনে হয় যে শ্যাম চাচারা ১৯০৪ সালের রিজলের উক্তি টি মনে রেখেছেন যে Bengal United is a power; Bengal divided will pull in several ways” তাই ওনাদের বোধহয় রাতের ঘুম চলে গেছে। ওনারা এখন বাংলা দুই ভাগ চান না, চান টুকরো- টুকরো করতে। অনেকটা সেই উত্তর-পুর্ব ভারতের বলকানাইজেশন এর মতন।


ঠিক ওই অপারেশন ব্রম্মপুত্র এর মতন ভারতে বলকানাইজেশ্ন চাইছেন। তাই উত্তরবঙ্গে কামতাপুরি, সুর্যাপূরি, গোর্খাল্যান্ড, গ্রেটার ইত্যাদি এবং দক্ষিনে পুরুলিয়া, বাঙ্কুড়া ও পশ্চিম-মেদিনীপুর। এই শ্যাম চাচা থুড়ি আমেরিকা র চরেরা এখন সর্ব শক্তি নিয়ে জনগন এবং এই বাংলা কে বিচ্ছিন্ন্য করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমার নিজের বাড়ি উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি শহরে। আমার পিতামহের বাড়ি দার্জিলিং এ হবার জন্যে এই জেলা টাকে এবং এই জেলার মানুষজন, তাদের সংষ্ক্রিতির সম্মন্ধে কিছুটা জানা আছে। এখানকার পাহাড়ের সাধারন নেপালী সমপ্রদায় খুব কর্মঠ, সত এবং অথিতিপরায়ন। কিন্ত এদের গত১৯৭৫ সাল থেকে খেপিয়ে তোলা হয়। এদের অধিকাংশের দাবি এখন গোর্খল্যান্ড। এই সুযোগে স্যাম চাচাদের আরেক দালাল পক্ষ, সংবাদ্মাধ্যম আজ সেই অতিপরিচিত হলুদ সাংবাদিকতায় নেমে পরেছেন। যা ইচ্ছা তাই লিখে চলেছেন। পূর্বাপর প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে, ইতিহাসের পাতা থেকে কোনো ঘটনার অংশকে তুলে ধরে তথ্য বিকৃতি ও ভ্রান্ত উপস্থাপনা নতুন বিষয় নয় এনাদের কাছে কারণ এনারাই প্রমান করেন যে শ্যাম চাচা দের দরকার গোয়েবেলস এর মতন সুযোগ্য সহায়ক। তাই আজ আনন্দবাজার এর বাজারি খবর যদি প্রকাশ করে ্যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি একসময়ে বাংলার অভিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি১৯৪৭ সালে করেছিল তাতে অবাক বা আশ্চর্য্য হবার কারন নেই, কারন এই বাজারি সংবাদমাধ্যম পড়াতে চায় আবার ভোলাতেও চায়, না ভুল্লে পিছিয়ে পরতে হয়। (এটি আনন্দবাজারের ২ রা জুলাই ২০০৮ এর সম্পাদকিয় কলমে শ্রীমান গৌতম রায়ের লেখা )। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) এর প্রকাশিত বক্তব্যটি হোলো ঃ রাজ্যের মধ্যেই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং পরবর্তী সময়ে সি পি আই (এম) পার্বত্য এলাকার জনগনের সেই দাবিকে বরাবর সমর্থন জানিয়ে এসেছে, দাবির সমর্থনে আন্দোলন ও করেছে, সংসদে সোচ্চার হয়েছে। রাজ্যকে ভাগ করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সি পি আই (এম) । সেইজন্যই চক্রান্তকারীদের আক্রমনের লক্ষ্য তারা। তাই এই ভদ্রলোক ওনার সম্পাদকীয় নিবন্ধে গোর্খাস্থান কারা চেয়েছিলেন এ, উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কে আক্রমন করেছিলেন। স্বল্পজ্ঞ্যন অথবা ইচ্ছাকৃত বিকৃতি সূত্রে ভ্রান্ত কিছু তথ্য দিয়ে লেখক বলেছেন যে, কমিউনিস্ট পার্টির দার্জিলিং জেলা কমিটি ১৯৪৭ সালে গোর্খাস্তান এর দাবি তুলে চিঠি পাটায় ও তখন পার্টির সম্পাদক ছিলেম রতনলাল ব্রাক্ষণ, এটি ওনার লেখায়ে অদ্ভুত ভাবে উল্লেখ ছিলো যে রতনলাল ব্রাক্ষণ বিধানসভার নির্বাচনে নাকি জয়লাভ করেছিলেন গোর্খাল্যান্ডের দাবির মাধ্যমে। এই তথ্য ভ্রান্ত এবং কমরেড রতনলাল ব্রাহ্মিণ এর প্রতি অপমানকর। আনন্দবাবু এবং তার সাগরেদ রা জানেন না যে একসময়ে শিলিগুড়ি তে কমিউনিস্ট পার্টি জলপাইগুড়ি থেকে পরিচালিত হলেও দার্জিলিং পাহাড়ে সে ব্যাবস্থা ছিলো না। দার্জিলিং পাহাড়ে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ভার ছিলো সুশীল চ্যাটার্জির ওপর। এই দায়িত্ব ওনাকে দেওয়া হয় প্রাদেশিক কেন্দ্র থেকে। এই কমরেড ই কমঃ রতনলাল ব্রাম্মিণ কেই কমিউনিস্ট পার্টি তে নিয়ে আসেন। তথাকথিত গোর্খাস্তান এর যে প্রস্তাবের কথা আনন্দবাবু রা বলছেন সেটার সময় ছিলো ৬ই এপ্রিল, ১৯৪৭ সাল, অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হবার আগেই। তখন দার্জিলিং এর সাংগোঠনিক সম্পাদক ছিলেন গণেশলাল সুব্বা। ইনি পরবর্তী সময়ে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তিকালে আলাদা রাজ্জ্য গডার দাবিতে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন সাংসদ আর বি রাই এবং দাওয়া লামা। ১৯৪৭ সাল, ১৫ই আগস্ট, দেশ স্বাধীন, বাংলা ভাগ, পশ্চিম বঙ্গ গঠন এবং পরের মাসেই অনুষ্টিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি এর চতুর্থ প্রাদেশিক সম্মেলন। ১৯৫১ সালে কলকাতা কংগ্রেসে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি স্বাধীন ভারতের বাস্তবতায়ে বিশ্লেসন করা হয়। এরপর উপজাতি জনজাতি বিসয়ক যে প্রস্তাব গ্রহন করা হয় তাতে দার্জিলিঙের নেপালী (গোর্খা) জনগোষ্ঠীর বিষয়ে উল্লেখ করে স্বায়ত্তশাসনের প্রকৃত ধারনাটি কে ব্যাখা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দার্জিলিঙের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিটিই সুস্পষ্ঠ ও সুনির্দিষ্ঠ ধারনা প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) ১৯৭২ সালে মাদুরাইতে অনুষ্ঠিত নবম পার্টি কংগ্রেস ভারতে জাতি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতি ঘোষনা করে রাজ্জ্যের মধ্যেই আঞ্ছলিক স্বায়ত্ত্যশাসন বৈজ্ঞানিক দৃষ্ঠিভঙ্গি তুলে ধরেছে। কমিউনিস্ট পার্টির দার্জিলিং জেলা কমিটি ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের কাছে রাজ্যের মদ্ধ্যেই আঞ্চলিক স্বায়িত্তশাসন দাবি জানিয়ে স্বারকলিপী পাঠায় এবং তার অনুলিপী দেওয়া হয় ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে। ১৯৫৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাজ্যের বিধানসভায় জ্যোতি বসু প্রস্তাব তোলেন নেপালী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির, দার্জিলিং পার্বত্য এলাকার জন্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও চা বাগান শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্যে।


এই সময়ে বহুবার স্বায়ত্তশাসন এবং নেপালী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য সাংসদ হীরেন মুখার্জি, সত্যেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার , সমর মুখার্জি, সোমনাথ চ্যাটার্জি, রতণলাল ব্রাহ্মমিন, আনন্দ পাঠক বারবার দাবি জানিয়ে এসেছেন। ১৯৭৭ সালে যুক্তফ্রন্ট ইশ্তেহারেও এই দাবি ছিলো অন্যতম। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পর সি পি আই (এম) বিধায়ক বীরেন বসু বিধানসভায় এই দাবি উত্থাপন করেন। আঠের দশকে সুভাষ ঘিসিঙের নেতৃত্বে হিংসাশ্রয়ী গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময়ে ২৫০ জনের বেশী সি পি আই (এম) নেতা-কর্মী শহীদ হলেন এবং বাস্তুচুত হলেন অনেক পার্টির নেতা ও কর্মীরা। এনারা সবাই ছিলেন কিন্ত পাহাডের মানুষ। এখনকার মতই অন্য কোনো দল কিন্ত আক্রান্ত হয় নি। রাজ্য সরকার সবরকমের আলোচোনা চালিয়ে জাবার চেষ্ঠা করে শান্তিপুর্ণ ভাবে কিন্ত ঘিসিং এর গঠিত জি এন এল এফ (GNLF) সমস্তরকমের শান্তিচুক্তি বাতিল করে দেয়। সাম্প্রদায়িক আচরণ এর সাথে সরকারের সম্পত্তি নষ্ঠ করে তারা। শেষমেশ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করে এই ধংসাত্বক কর্মসুচি কে প্রশাসনিক তৎপরতায় শান্তী এবং সম্পীতি আনার চেষ্ঠা হয় কিন্ত GNLF ১৯৮৯ সালের ভোট বয়কট করে । সেই সময়ে কংগ্রেস, তাদের বিচ্ছিন্নতাকারী রুপ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এই কংগ্রস লোক সভা নির্বাচনের কিছু মাস আগে জি এন এল এফ কে সমর্থন করে, পাহাড়ে সি পি আই এম এর সাংসদ আনন্দ পাঠক কে হারাবার জন্যে। এবং কংগ্রেস তারা শ্রেনী চরিত্র অনুযায়ী জি এন এল এফ কে সমর্থন করে এবং আনন্দ পাঠক হেরে যান। যাই হোক, আজ ও গোর্খাজনমুক্তির আক্রমনের লক্ষ্য সি পি আই (এম) এবং কমিউনিষ্ট দের হারাতে এই লোকসভা নির্বাচনে মোর্চির মন পেতে উদ্দোগী কংগ্রেস ও বি যে পী। এটাই এদের শ্রেনী চরিত্রের আরেক দিক, এরা শ্রমিক এবং সাধারন মানুষ কে ধর্মের নামে , জাত-পাতের শৃঙ্খলে এ আবদ্ধ করতে চায় যাতে শ্রেনীচেতনার বিকাশ থেকে এরা ছিন্ন থাকতে পারে। যাই হোক পাহাডে কমঃ রতণলাল ব্রাহ্মীণ খুব জনপ্রিয় ছিলেন। চা শ্রমিকেরা এবং সর্বসাধারণ ওনাকে মাইলা বাজে (মানে মেজ কর্তা ) বলে ডাকতো। তিনি কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী স্লোগান তুলে কমিউনিষ্ট পার্টি কে গড়ে তোলেন নি। চা বাগান শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি গরিব গোর্খাদের সহায়তাকারী সংঘটন গোর্খা দুঃখ নিবারণ সমিতির সংগঠক ছিলেন তিনি। তার সাহস, মমত্ববোধ ও ঔদার্য তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো। ১৯৪৬ সালে যে ইশতেহার প্রচার করে কমিউনিষ্ট পার্টির প্রার্থী রতনলাল ব্রহাম্মীণ বিজয়ী হয়েছিলেন, সেখানে কিন্ত কোনো আলাদা রাজ্যের কথা (গোর্খাস্তান ত নয়ই) ছিলো না। ইশ্তেহারটিতে যে ১১ দফা দাবি ছিলো তা পাহাড়ের চা বাগানের শ্রমিক ও গরিব মানুষের স্বার্থে। দার্জিলিং পাহাড়ে চা শ্রমিক দের ঐতিহাসিক আন্দোলন হয় ১৯৫৫ সালে। এই আন্দোলনরত শ্রমিকদের অপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালায়। নারী-শিশু সহ ৬ জন শহীদ হন। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের নেতা ছিলেন রতনলাল ব্রাহ্মীণ। যে স্মারকলিপিটির একটি অনুচ্ছেদ প্রমাণ করে জাতি সত্তার পক্ষে থেকেই একদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও একি সাথে ঐক্য সং হতি পক্ষে কমিউনিষ্ট দের দৃষ্ঠিভঙ্গি, সেই অনুচ্ছেদ তাই তুলে দেওয়া হলো ঃ

The Communist Party of India vehemently opposes the sinister British Imperialistic plot of excluding the district of Darjeeling from the rest of India and its constitution into a separate chief Commissioner’s Province as has been put forward by the Hillmen’s Association in its memorial to Lord Pethick Lawrence, Secretary of State of India, in December 1946. This Association (Hillmen’s Association) represents none but the local agents of the British Imperialism. The Communist Party of India is also opposed to any such plans that might be put forward by the local agents of British Imperialism in a modified form. It has reason to apprehend that the British Imperialists are hatching a plot to place the district of Darjeeling with other tribal peoples of Assam and Dooars in an altogether new Province to be called the North Eastern Himalayan Hill Province.”

চলবে________________


পর্ব-২
পার্বত্য পরিষদের পত্তন ও তার পর---