সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, অসুর, কুড়মি, মাহালী, কোড়াদের নিয়ে খেরোয়াল জাতি।
সেই জাতির রাজা ছিলেন হুদুড় দুর্গা কিস্কু বা ঘোড়াসুর । তিনি সমস্ত পাহাড়, জঙ্গল, নদী ও চারণভূমির অধিপতি ছিলেন।
আর্যরা বারবার তাঁর রাজ্যকে আক্রমণ করেও পরাক্রমী হুদুড় দূর্গার কাছে হেরে যেতে লাগল।
তখন তারা এক সুন্দরী নারীকে হুদুড় দূর্গার কাছে পাঠালো।
এই যুবতী ছিলেন গণিকাপ্রধানা, সেইসঙ্গে আর্যদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত ঘাতক।
মহিলাটির সৌন্দর্য্য ও ছলাকলায় মুগ্ধ হয়ে হুদুড় রাজা তাকে বিয়ে করল।
নয়দিন উদ্দাম মধুচন্দ্রিমার পরে নববধূ হুদুড়কে মেরে ফেলল।
দেবতাদের সমর্থনপুষ্ট ওই নারী হুদুড় দূর্গাকে হত্যা করে পরিচিত হন দেবী দুর্গা হিসেবে।
আর্যরা এবার নেতৃত্বহীন ভূমিপুত্রদের সুবিশাল সাম্রাজ্য দখল করে তাদের তাড়িয়ে দিল।
তারা পালিয়ে বেড়াতে লাগল ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, বাংলা ও ছত্তিশগড়ের পাহাড়ে জঙ্গলে।
সেই ধাক্কা আজো ভূমিপুত্র বা মূলনিবাসীরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এই হল সংক্ষেপে হুদুড় দূর্গার গল্প।
প্রচার করা হচ্ছে যে এই হুদুড় দুর্গাই হলেন দেবী দুর্গার বধ্য মহিষাসুর।
..................................................................................
২০১৩ সালের ১৭ই অক্টোবর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ক্যাম্পাসের SSS 1 প্রেক্ষাগৃহে "মহিষাসুর শাহাদাত দিবস" পালন করে।
অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ছিল All India Backward Students Forum.
সেই উৎসবের প্রস্তাবনায় বলা হয় দুর্গা কোন নারীশক্তির প্রকাশ নয়। দুর্গা আর তার আখ্যান হল আরও একটা ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রকল্প, যে ব্রাহ্মণ্যবাদী দর্শনের প্রতি মজ্জায় মিশে আছে পুরুষতন্ত্র।
"Durga Puja is the most controversial racial festival, where a fair skinned beautiful Goddess is depicted brutally killing a dark skinned native called Mahishashura. "
মহিষাসুর কোন অশুভ শক্তির প্রতীক নন। তিনি শহীদ।
দুর্গোৎসব হল আদিবাসী গণহত্যার উদযাপন। এটি অবিলম্বে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
" The festival is a celebration of genocide of natives. ..... Its a celebration of murder unlike in any other religion. .... It must be banned."
দেবী দুর্গা হলেন দেবতাদের ভাড়া করা এক যৌনকর্মী।
"They hired a sex - worker called Durga, who enticed Mahishashura into marriage and killed him after nine nights of honeymooning, during sleep. "
( Pamphlet by AIBSF, Mahishashur Martyrdom Day, 17th October, 2013 )
শুভ অশুভের দ্বন্দ্ব নয়, আগ্ৰাসী বহিরাগত আর্যরা ভারতবর্ষের মূলনিবাসী বহুজনদের কিভাবে পদানত করে সাংস্কৃতিক আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে, দুর্গাপূজা তারই প্রতীক।
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সালে সংসদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এই বিতর্কিত প্রচারপুস্তিকাটির অংশবিশেষ তিনি ভারতের জাতীয় সংসদে পড়ে শোনান।
.............................................................................
মহিষাসুরের পিতৃপরিচয় পাওয়া যায় দেবী ভাগবত, ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ ও কালিকাপু্রাণে।
ব্রহ্মার পুত্র মরীচি, মরীচির পুত্র কশ্যপ বিখ্যাত মুনি। এই কশ্যপমুনির ছেলে রম্ভ, আর রম্ভের ছেলে মহিষ। সে শিবের উপাসক।
তবে সে অনার্য কোথায় হল ?
বেদে অসুর ও দেব, ঐ দুই কথার অর্থই শুভ।
দেব কথাটির অর্থ দীপ্তিমান / প্রকাশমান এবং অসুর অর্থে প্রাণবান।
ব্রহ্মার পুত্র কশ্যপের স্ত্রী অদিতি থেকে উৎপন্ন হয়েছে দেব উপাসকদের বংশধারা । আরেক পত্নী দিতি হলেন অসুরপন্থীদের আদি মাতা।
বেদে ইন্দ্র, বরুণ, রুদ্রকে অসুর মহস বলা হয়েছে।
( ত্বম অগ্ৰে রুদ্র অসুরঃ মহস দিবঃ ঋগ্বেদ ২-১-৬)
ঋগ্বেদে আছে দেব ও অসুর দুজনেই সৌমনস ( জ্ঞান ) লাভ করছেন উপাসনা দ্বারা।
যক্ষা মহে সৌমনসায় রুদ্রম।
নমোভির্ দেবং অসুরং দুবস্য ।।
( ঋগ্বেদ ৫ - ৪২ - ১১ )
কাজেই পৌরানিক অসুর আর উপজাতীয় অসুর এক নয়।
চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী দুর্গাপুজো হত বসন্তকালে। তাই একে বাসন্তীপুজোও বলেন কেউ কেউ।
ট্র্যাজিক নায়ক হুদুড় দুর্গাকে নাকি আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে দুর্গাপুজোর সময় স্মরণ করে আসছে।
কিন্তু বাংলায় দুর্গাপুজা ব্যাপারটাই তো অকালবোধন। এবং প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়।
তবে তার আগে কোথায় ছিলেন হুদুড় দুর্গা ?
সাঁওতালীতে হুদুর শব্দের অর্থ মেঘের গর্জন বা বাজের শব্দ। সাঁওতালী লোককথাতে এমন এক বিশাল প্রভাবশালী এবং প্রজাদরদী রাজার উল্লেখ আছে।
কিন্ত তিনিই যে মহিষাসুর এবং সেই হুদুর দুর্গা যে দুর্গা দ্বারা নিহত হন এমন কিন্ত উল্লেখ নেই।
দাঁশায়, সোহরাই, কারাম, লাগড়ে, দং - এর মত লৌকিক পরম্পরার মধ্যে আর্য - অনার্য যুদ্ধ, মহিষাসুরের মত বিষয় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এই নিয়ে বৃদ্ধ সাঁওতালদের অনেকেই ক্ষুব্ধ।
তাঁরা নিজেদের বলেন ' খুৎকাঠিদার'। পৃথিবীতে বাসের অযোগ্য, আবাদের অযোগ্য ভূমিকে কঠোর পরিশ্রমে চাষের উপযোগী করে তুলেছিলেন এই হড় ( সাঁওতাল ) জাতি। তাদের সৃষ্টিতত্ত্বে আছে পিলচু হড়াম আর পিলচু বুড়ির কাহিনী।
তাঁরা যুগ যুগ করে প্রকৃতি উপাসক। তাঁদের মধ্যে হুদুড় দুর্গার পূজারীরা নেই।
সোহরাই উৎসবেও মহিষাসুরের অনুষঙ্গ ঢোকানো হচ্ছে। কিন্তু সোহরাই তো আদ্যোপান্ত একটি কৃষি উৎসব। সেখানে গো - বন্দনাই মূল উপজীব্য।
সাঁওতাল ছেলেদের অনেকেই সিংহবাহিনীর মন্দিরে পূজো দেয়। স্কুলের সরস্বতী পূজোতেও শামিল হন সাঁওতাল ছাত্ররা । আবার একই উৎসাহে তারা বড় বাঁধনা, ছোট বাঁধনা পরবেও মেতে ওঠে।
কিন্তু এই বিষয়টিকে আদিবাসী জাতিসত্ত্বার নবীন রক্ষকরা ভালো চোখে দেখছেন না। এরাই হুদুড়ের প্রবক্তা।
..............................................................................
আশ্বিন মাসকে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষ বলেন দাঁসায় মাস। ঠিক দুর্গাপুজার সময় হলেই সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে পুরুষরা নারীসাজে সজ্জিত হয়ে এক গ্ৰাম থেকে অন্য গ্ৰামে দাঁশায় নাচ নেচে বেড়ায়।
তাঁদের হাতে থাকে লাউয়ের খোল দিয়ে বানানো ভূয়াং নামে এক বাদ্যযন্ত্র।
এই দাঁশায় সম্পূর্ণরূপে কৃষিভিত্তিক পরব ও প্রকৃতিবন্দনার উৎসব। ইদানিং এটিকে হুদুড় দুর্গার কাহিনীর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বলা হচ্ছে, দুর্গা পুজা আদিম জনজাতির পক্ষে শোকের উৎসব। ঐসময় তাঁদের মহান রাজা ও দেশ হারানোর ব্যাথা নিয়ে আদিবাসীরা পিতৃপুরুষের স্মরণে ' হায় রে , হায় রে ' করতে করতে গ্ৰাম প্রদক্ষিণ করে। তারা ধারণ করে নারীর বেশ।
পূজার সময় নাকে, নাভিতে , বুকে করঞ্জার তেল লাগাতে হবে। ওই জায়গাগুলি থেকেই তো মহিষাসুরের রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
এছাড়া পুজোর কটাদিন দুয়োর এঁটে শোকপালন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে।
এছাড়া মহিষাসুরের মূর্তি গড়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার রীতি চালু হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
আগে কুড়মি মাহাতোরা গড়ামথানে মাটির হাতি ঘোড়া রেখে দিতেন, কিন্তু মূর্তি গড়ে হাত জোড় করার রীতি একেবারেই নবীন।
................................................................................
কতটা তাত্ত্বিক ভিত্তি আছে এই হুদুড় দুর্গার ?
শরৎচন্দ্র দে ১৯২১ সালে লিখেছিলেন Mundas and their Country.
সেখানে হুদুড়কে পাবার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত।
১৯২৮ সালে John Baptist Hoffman এর পনেরটি ভল্যিউমে Encyclopedia Mundarica গ্ৰন্থ প্রকাশ হয়।
মুন্ডা জনজাতির সামাজিক নিয়ম, রূপকথা, কিংবদন্তি, ভূতপ্রেত, সৃষ্টিতত্ত্ব, ওঝা, পরব ইত্যাদি প্রায় সবটাই ধরা রয়েছে ব্যাপটিস্ট সাহেবের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়।
সেখানে এই হুদুড় দূর্গার কাহিনী নেই।
নৃতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিক K. K. Leuva ছিলেন রাঁচীর Assistant Commissioner of Scheduled Castes and Scheduled Tribes.
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ফল The Asur -. A study of Primitive Iron Smelters.
সেখানে কোথায় এই হুদুড় দূর্গার কাহিনী ?
এছাড়া রয়েছে Bulletin of Bihar Tribal Research Institute (1964).
হুদুড় দুর্গা সেখানেও নিরুদ্দেশ।
আরো বিস্তারিত জানার জন্য রয়েছে তিনটি বই ;
নর্মদেশ্বর প্রসাদের Tribal people of Bihar ( 1961)
K. S. Singh এর Tribes of India ( 1994 )
জে এম কুজুরের Asurs and their Dancers ( 1996)
এই বইগুলিতেও কিছুই পাওয়া যায় না এই সম্পর্কে।
নাদিম হাসনাইনের বইটি ভারতীয় জনজাতিদের সম্পর্কে একটি আকরগ্ৰন্থ। সেখানে অসুর সহ বিভিন্ন উপজাতির উপর বিস্তারিত লেখা আছে। আছে তাদের নানা সাংস্কৃতিক প্রবণতা নিয়ে বিশদ আলোচনা। বইটি এককালে খুঁটিয়ে পড়েছি।
সেখানে ঘুনাক্ষরেও উচ্চারিত হয়নি এই হুদুড় দুর্গা।
............................................................................
অস্ট্রো এশিয়াটিক অসুর গোষ্ঠীকে দেখা যায় ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায়।
এই অসুরদের মধ্যে তিনটি ভাগ। বীর অসুর, বীরজা অসুর, আগারী অসুর।
এই অসুররা " লোহাপাথর " দেখলেই চিনতে পারে।
অতুলনীয় দক্ষতায় নিজস্ব লোকপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পাথর থেকে লোহা গলিয়ে বের করে নেয় । এরা এককালে নানারকমের আয়ুধ ও যন্ত্রপাতি বানাতে সিদ্ধহস্ত ছিল।
বলা হয়,মৌর্য সাম্রাজ্যের সাফল্যের পিছনে তাদের তৈরী লোহার অস্ত্র ও যন্ত্র একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের উৎপাদিত লোহার সামগ্ৰীতে জং ধরত না।
তবে ১৯০৭ সালে তাদের বিচরণভূমির ওপরেই গড়ে ওঠে টাটা স্টীল কারখানা। ব্লাস্ট ফার্ণেস পদ্ধতিতে উৎপাদিত লোহার সামনে তাদের প্রযুক্তি হটে যায়। এখন তারা তাদের বংশপরম্পরায় চলে আসা দক্ষতাকে প্রায় ভুলেই গেছে।
২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী ভারতে অসুর জনজাতির সংখ্যা প্রায় ৩৩, ০০০। পশ্চিমবঙ্গে ৪৯৮৭। ঝাড়খণ্ডে ২২, ৪৫৯। বিহারে ৪১২৯।
এই অসুরদের আসুরি ভাষা মুন্ডা উপভাষার মধ্যে গণ্য। কিন্তু এটি বলার লোক এখন বিরল।
জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ব্লকের ক্যারন চা বাগানের ১০১ টি অসুর পরিবারের মধ্যে ৯০ টি পরিবারই খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে গেছে মিশনারীদের ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে।
এছাড়া অসুর উপজাতিদের দেখা যায় বানারহাট, চালসা ইত্যাদি জায়গায়।
এরা নিজেরা অবশ্য বলে যে তারা ঝাড়খণ্ডের গুমলা ও লোহারডাগা থেকে এসেছে।
এরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এদের বংশের আদিপুরুষ হলেন মহিষাসুর।
কান্যকুব্জের ব্রাহ্মণদের একটি শাখা দাবী করে রাবণ তাদের পূর্বপুরুষ।
যাদবরা মনে করেন তাঁরা কৃষ্ণের বংশ।
হিমাচল প্রদেশে দূর্যোধনের মন্দির আছে। সেখানকার কিছু লোকজন মহাভারতের খলনায়ককে রীতিমতো উপাসনা করেন।
বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী পুরাণ ও মিথের সাথে নিজেদের জুড়তে চায়।
মুশকিল হয় যখন এইসূত্রে কিছু দুষ্টু লোক সরল মানুষদের জাতিসত্ত্বার নাম করে অন্যদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়।
....................................................................
" এটা মামুলি ব্যাপার নয়। এটা জাতিসত্ত্বার ব্যাপার। এটা নিজস্ব কালচারে উদ্ধুদ্ধ হবার একটা নিশানা। .... ইতিহাসটা আর্যরা লিখেছেন, তাদের পক্ষে। আর্যরা সেদিন সামনে আনতে দেননি, রামচন্দ্র কেন শম্বুককে হত্যা করেছিল। আপনারা সামনে আনতে দেননি একলব্যের আঙুল কাটা হয়েছিল কেন ? "
বললেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় মূর্মু। ৬ই অক্টোবর, ২০১৯ সালে বাঁকুড়ার রায়পুর সবুজ বাজার সিধু কানু মোড়ে রায়পুর হুদুড় দূর্গা স্মরণসভা কমিটির অনুষ্ঠানে।
উপস্থিত ছিলেন রায়পুর বিধানসভার বিধায়ক বীরেন্দ্রনাথ টুডু, ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের বাঁকুড়া জেলা গড়েৎ বিপ্লব সরেন।
( সারসগুন পত্রিকা, ৮ই অক্টোবর, ২০১৯)
..........................................................................
সাঁওতাল খেরোয়াল একটিভিস্ট অজিত হেমব্রম। ২০১৬ সাল থেকেই তিনি হুদুড় দূর্গা স্মরণ উৎসবের প্রধান সংগঠক। ' আয়নানগর" পত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ ;
" আমাদের একটি প্রধান উৎসব হলো দশানি।
এটাকে দুঃখ উদযাপনের দিন বলা যেতে পারে। কেননা এই দিনে আমরা আমাদের সবকিছু হারিয়েছি। প্রাচীন কালে খেরোয়ালদের একজন মহান নেতা ছিলেন। যিনি বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
তাকে বিদেশিরা নানা ছলাকলায় যুদ্ধে পরাজিত করে। আমরা তার মতো এমন নেতৃত্ব আর পাইনি। তাই আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি এবং হুদুড় দুর্গা বলে ডাকি। দশানি তার স্মরণেই পালন করা হয়ে থাকে।"
"যখন ঝাড়খন্ড আন্দোলন এবং আদিবাসী ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যখন যুক্ত হয়েছি তখন থেকে আমরা আমাদের আত্ম পরিচয় নিয়ে সচেতন হতে শুরু করেছি।
আমরা জানতে পারি যে হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী আমরা আসলে হিন্দু নই। আমাদের পূর্বপুরুষদের হিন্দুরা অসুর, দানব এবং রাক্ষস বলেই জানে।
২০১১ সালের দিকে বিজেপি ক্ষমতা আসার পূর্বে বাবা রামদেব ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতবর্ষকে পুনরায় তিনি রামরাজ্য, কৃষ্ণরাজ্যে পরিণত করতে চান। যখন আমি টিভিতে বাবা রামদেবের নির্বাচনী প্রচারণা দেখছিলাম তখন মনে হলো যদি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে খুব দ্রুত আমাদের জাতিসত্তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বিজেপি আবার ক্ষমতায় চলে আসে।
তখনো আমি এ রকমভাবে এই উৎসব উদযাপনের কথা চিন্তা করিনি।
আমাদের গ্রামে নানা উপজাতি এবং সম্প্রদায়ের লোকজন আছে।
আমরা সাঁওতালরা হিন্দুদের মন্দিরে কখনো যাই না। আমরা তাদের রীতিনীতিও অনুসরন করি না।
কিন্তু আমাদের স্ত্রীরা দুর্গাপূজা করেন। তবে সেদিন আমি বাড়িতেই থাকি এবং আমার কাছে এই বিষয়গুলো ভেবে অদ্ভুত লাগে।
আসলে আমাদের লোকজন তাদের আত্মপরিচয় এবং ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না।
যারা অল্প বিস্তর জানে তারাও দেখা যায় অন্যান্যদের মধ্যে সেটির কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। আমি একটা উপায় খুঁজছিলাম।
অনেক আগে পরিমল হেমব্রমের লেখা একটি বই পড়ে মহিষাসুর সম্পর্কে জানতে পারি যে, মূলত দুর্গা ছিলেন আর্য শক্তি। তারপরেই আমি এই উৎসবটির কথা ভাবি।
মূলত অসুর এবং দেবতা কী ? ইতিহাসের কোথায় তারা মিথ্যে কথা বলেছে? অসুর এবং দেবতার বংশধর কিন্তু এখনো রয়েছে। তাহলে তারা কারা? আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে পারিনি। এই দশানি আমাদের ইতিহাসকে জানার একটি বড় উপায় তাই আমি এটি শুরু করি।"
( আয়নানগর, ২০শে মে, ২০২০)
............................................................................
বিবেকানন্দ সরেনের তথ্য সহায়তায় মৃদুলকান্তি ঘোষ ( আদিবাসী সংস্কৃতি বিষয়ক লেখক) এই বিষয়ে কলম ধরেছেন কৃষিকথা পত্রিকায় ;
'দাঁশায় উৎসব সম্পূর্ণরূপে কৃষিভিত্তিক ও প্রকৃতি বন্দনার উৎসব।
অনেকে এটাকে যুদ্ধের কাহিনী বা হুদুড় দুর্গা কিস্কুর লড়াইয়ের কাহিনী বলে প্রচার করে।
সেটা ইচ্ছাকৃত না অজ্ঞতার কারণে- আমার জানা নেই।
কিছু প্রচারপ্রিয় বাঙালী তাতে উৎসাহ জোগাচ্ছে- মহিষাসুরকে কখনও অসুরদের রাজা, কখনও সাঁওতালদের রাজা বলে দাবী করছে।
মাত্র দু একটা লাইন যেখান সেখান থেকে জুড়ে দিয়ে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছে।
"দাঁশায়" অর্থ- দা: + আঁশ + আয়, (কারো কারো মতে দা: + সাঁওহায়)
"ইতিহাসের খোঁজে নয় জলের আশায় প্রকৃতি দেবীকে পুজা করাই দাঁশায়ের মুল উদ্দেশ্য ছিল"।
আর হুদুড় বা হুডুর শব্দটা মেঘের সাথে তুলনা করা হয়েছে। হুডুর বিজলী, হুদুড় হুদুড় হয় ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। দাঁশায় উৎসবের প্রথম গানটা শুনলেই তা সহজে বোঝা যায়।
হায়রে হায়রে
অকয় যাপে জুঁডিয়াদা দেশ দ
অকয় যাপে আতার আদা দিশম দ
দেশ দরে ল-লাটিচ এন দ
দিশম দরে হাসায় ডিগিরেন
ঠাকুর গেচয় জুঁডিয়াদা দেশ দ
ঠাকুর গেচয় আতার আদা দিশম দ
হায়রে হায়রে
দেশ দরে ল-লাটিচ এন দ
দিশম দরে হাসায় ডিগিরেন
দেশে ঠাকুর জৗডি মেসে দা: দ
দেশে ঠাকুর জারগে মেসে জাপুদ দ
দেশ দরে ল-লাটিচ এন দ
দিশম দরে হাসায় ডিগিরেন।
"প্রচন্ড অনাবৃষ্টির ফলে দেশ দিশম জ্বলে পুড়ে যায়, হে ঠাকুর বৃষ্টি দাও" – এটাই মুল কথা, কৃষিজীবি মানুষের করুণ আর্তি বোঝাতে "হায় হায়" শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের আদিকালে যত ধর্মীয় উৎসব, তার প্রত্যেকটাই কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কারাম, দাঁশায়, সহরায়, বাহা ইত্যাদি সবকটাই কৃষি ভিত্তিক উৎসব।
অকয় যাপে জুঁডিয়াদা হায়রে হায
সিঞবির দ ল: কান দ হায়রে হায
মানবির দ হাসায় ডিগিরেন
দেসে ছিতৗ দেসে কৗপরা হায়রে হায
জারগে দা: দ নতে বিন হায়রে হায
তারসে রাকাব, তারসে নাড়গ হায়রে হায়
সিঞবির দ ল: কা দ হায়রে হায়
মানবির দ ল: কান দ হায়রে হায়।
অনাবৃষ্টির ফলে মানভূমের জঙ্গল এবং সিনভূমের জঙ্গলও যেন জ্বলে পুড়ে গেল। ছিতা- কাপরা (ছিতা ও কাপরা জাহের দেবীদের অন্যতম দুই দেবী) বৃষ্টি দাও |
হায়রে হায়রে দিবি দুর্গা দয় ওডোক এনা রে
আয়নম কাজল দকিন বাহের এনা রে
হায়রে হায়রে চেতে লাগিদ দয় ওডোক এনা রে
চেতে লাগিদ দ কিন বাহের এনা রে
হায়রে হায়রে দেশ লাগিদ দয় ওডোক এনা রে
দিশম লাগিদ দ কিন বাহের এনা রে
হায়রে হায়রে সুনুম সিঁদুর লাগিদ ওডোক এনা রে
বাহা টুসৗ লাগিদ দ কিন বাহের এনা রে
হায়রে হায়রে দেলা সে দিবি দুর্গা হয় লেকাতে
দেলাসে আয়নম কাজল বার্ডু লেকাতে
হায়রে হায়রে অটাং হিজু পেসে সেরমা সাগিন খন
ঘুরলাউ হিজু: পেসে সরগ পুরী খন
বঠেল বঠেল সেকরেজ সেকরেজ।
অর্থাৎ, দেবী দুর্গা বাহির হলো, আয়নম, কাজল (আয়নম ও কাজল দেবীর সহচর, লক্ষ্মী, সরস্বতীর প্রতিরূপ ও বলা যেতে পারে) বাইরে এল, দেশের জন্য, দিশমের জন্য এবং সিঁদুর-তেল-পুস্পের জন্য। অর্থাৎ পুজা পাবার জন্য এরা বাহির হলো, এসো দুর্গা বাতাস হয়ে, এসো আয়নম কাজল ঘুর্ণি হয়ে সুদূর মহাকাশের স্বর্গপুরী থেকে। এটা দেবী আবাহনও বলা যেতে পারে। এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে দেবী বন্দনা বা পুজো করার ফলে ভালো বৃষ্টি হয়েছিল- তাই "বঠেল বঠেল" আনন্দসূচক ধ্বনি প্রয়োগ হয়েছে।
এবার আসা যাক মহিষাসুরবাদীদের উপমায়-
হায়রে হায়রে
চেতে লাগিদ ভুয়ৗং এম জানাম লেনা রে
চেতে লাগিদ ভুয়ৗং এম হারা লেনা রে
দেশ দাড়ান লাগিদ ভুয়ৗং এম জানাম লেনা রে
দিশম সাগাড লাগিদ ভুয়ৗং এম জানাম লেনা রে।
এই লাইনগুলোকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, দেশ রক্ষার জন্য লড়াই, এই জন্য ভুয়ৗং।
আসলে দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করতে দেশ বা দিশম পরিভ্রমণ, এখনও অনেকে বিশ্বাস করে ঠাকুর দেবতাদের মাহাত্ম্য প্রচার করলে মনের আকাঙ্খা পুর্ণ হয়।
কিন্তু পরের লাইনটা ইচ্ছা করে বলে না, পরের লাইনটা এই রকম-
সুনুমে সিঁদুর লাগিদ ভুয়ৗং এম জানাম লেনা রে
বাহা টুসৗ লাগিদ ভুয়ৗং এম হারা লেনা রে
পুরো শব্দার্থ এই রকম-
কেন ভুয়ৗং জন্ম নিয়ে ছিলে
কেন ভুয়ৗং বেড়ে উঠেছিলে
দেশ ঘোরার জন্য ভুয়ৗং জন্ম নিয়েছিলে
দিশম ভ্রমণ করার জন্য ভুয়ৗং বেড়ে উঠেছিলে
তেল সিঁদুর পাওয়ার জন্য ভুয়ৗং জন্ম নিয়েছিলে
পুস্প স্তবক পাওয়ার জন্য ভুয়ৗং বেড়ে উঠেছিলে ।
আর একটা দাবী করা হয়, ভুয়ৗং নাকি তীর রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটা অনুমান মাত্র, ভুয়ৗং হচ্ছে ভূমির প্রতীক, ছিলার মতো ব্যবহৃত রুজুটাকে বলে তড়ে সূতাম।
তাগিঞ মেসে ভায়রো তাগিঞ মেসে হো
ভুয়ৗং ডান্টিজ ভায়রো রচদ আকান তিঞ
তড়ে সুতৗম ভায়রো তপা: আকান তিঞ।
আর একটা ভুল ব্যাখ্যা করে 'হুদুড়রে', 'দুর্গারে' শব্দের, যেন হুদুড় আর দুর্গা শব্দটা আলাদা বোঝায় | যদি কোন গানে থাকেও, ওটা দ্বিত সম্বোধন অর্থে ব্যবহৃত শব্দ। যেমন- "মাণিকরে সোনারে" অথবা "সোনা অমার মানিক অমার" একই সন্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কোথায় মহিষাসুর? এখানে তো প্রকৃতি দেবী বা দেবী দুর্গারই বন্দনা করা হচ্ছে। এটাই প্রকৃত সত্য।'
কৃষিকথা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
...........................................................................
অসুর সম্প্রদায় একটি প্রাচীন জনজাতি হলেও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের নিয়ে আলোচনা বিগত ছয় সাত বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর পেছনে রয়েছে একটি অসুর নারীর অদম্য প্রচেষ্টা।
ঝাড়খন্ডের সাখুয়াপানির সুষমা অসুর একজন অসুর একটিভিস্ট। তিনি গড়ে তুলেছেন " ঝাড়খন্ডী ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি আখড়া "। উদ্দেশ্য, প্রান্তিক ও মৃতপ্রায় উপজাতি সংস্কৃতি ও ভাষার চর্চা ও সংরক্ষণ। ওই প্রত্যন্ত গ্ৰামগুলিতে অসুর ভাষায় একটি কমিউনিটি রেডিও সার্ভিসের তিনি মূল চালিকাশক্তি।
দিল্লির " ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ফেস্টিভ্যাল "এ তাঁর রচিত "অসুর সিরিং" সমাদৃত হয়েছিল।
ফেসবুকে " অসুর আদিবাসী ডকুমেন্টেশন সেন্টার" নামে একটি পেজ চালান সুষমা ও তাঁর অনুগামী।
সেই পেজের একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে কলকাতা, পাটনা ও রাঁচীতে চলে আসা দুর্গোৎসব বন্ধ করে দেবার আবেদন করছেন তিনি।
সুষমার সাথে যোগ আছে শহুরে র্যাডিকাল বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী, গ্ৰুপ থিয়েটার, লিটল ম্যাগের প্রগতিশীলদের।
২০১৩ সালের দিল্লির জে এন ইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানটি মূলত অসুর নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচারের ফসল।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলিত আ্যকাডেমিশিয়ান কাঞ্চা এলাইয়া, যিনি Christian Solidarity Network এর সাথে যুক্ত।
আম্বেদকরবাদী বামসেফ পার্টির বামন মেশরাম বক্তা ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তাঁর প্রচুর বক্তৃতা আছে ইউটিউবে। একটি ভিডিওতে শোনা যায় তিনি রামচন্দ্রকে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির ছেলে বলছেন। এই রামচন্দ্রই নাকি ইতিহাসের পূষ্যমিত্র শুঙ্গ।
জ্যোতিবা ফুলের বিখ্যাত "গোলামগিরি" বইতে আছে ব্রাহ্মণ্যবাদী দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের লড়াইয়ের কল্পকাহিনী। দলিতরা নাকি অসুরদেরই বংশধর।
দক্ষিনের পেরিয়ারের চোখে রাবণই নায়ক। রাক্ষস, অসুর এরাই মেহনতী মানুষের প্রতিনিধি। জোর করে আর্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার প্রতিবাদে তাঁর দ্রাবিড় কাজাঘাম শ্রীরামচন্দ্রের ছবি ও মূর্তিতে জুতোর মালা পরিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাত।
মহম্মদ হেলালউদ্দিনের একটি প্রচারপুস্তিকা পাওয়া যায়। সেখানে তিনি লিখেছেন দুর্গাপূজা বাংলার মূলনিবাসীদের উৎসব নয়, এর শুরু হয়েছিল প্রধানতঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকত্বে। নব্য জমিদাররা পলাশীর যুদ্ধের পর থেকেই জাঁকজমক সহকারে এটির আয়োজন করতে আরম্ভ করেন।
" বাজেয়াপ্ত ইতিহাস", " চেপে রাখা ইতিহাস" এর লেখক গোলাম মোর্তাজাও এপার বাংলার প্রধান উৎসব বলে পরিচিত দুর্গাপুজার উৎপত্তির কলঙ্কিত ইতিহাস শুনিয়েছেন।
অসুরের প্রতি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল ও মানবতাবাদীদের বিশেষ পক্ষপাত রয়েছে।
এবং নব্য অসুরপুজার কাল্ট ধীরে ধীরে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । এর প্রচার ও প্রসারের জন্য সুষমাকে সারা দেশে ঘুরে বেড়াতে হয়।
বর্তমানে ভারতের প্রায় ৫০০ টি জায়গায় ঐ মহিষাসুর স্মরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
ওঁরা চাইছেন ব্রাহ্মণ্যবাদের কাউন্টার ন্যারেটিভ হিসাবে অসুর স্মরণ অনুষ্ঠানকে আরো গ্ৰাসরুট লেভেলে ছড়িয়ে দিতে।
অসুরপন্থীদের বৃহত্তর লক্ষ্য হল জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে ভারতের বুকে ছোট ছোট স্বাধীন সার্বভৌম কনফেডারেশন গড়ে তোলা।
................................................................................
বাংলায় হুদুড় দুর্গাকে নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান হয় ২০০৩ সালে, পুরুলিয়ার ভুলুরডিতে।
এরপর থেকে ধীরে ধীরে অন্যান্য আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে পা রাখেন হুদুড় দুর্গা।
২০১০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় আর্যভট্ট খানের একটি বিস্তারিত লেখা প্রকাশিত হয় হুদুড় দুর্গা সম্পর্কে। তখন বিষয়টি আরো প্রকাশ্যে আসে।
২০১১ সালে কাশীপুর থানার সোনাইজুড়ি গ্ৰামে বেশ বড় করে 'হুদুড় দুর্গা স্মরণ দিবস' অনুষ্ঠিত হয়। উদ্যোক্তা দিশম খেরওয়াল বীর কালচার কমিটি। অমিত হেমব্রম ও চারিয়ান মাহাতো ছিলেন অন্যতম সংগঠক।
এরপর থেকে বাংলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রতিবছর শারদোৎসবে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে হুদুড় দুর্গা বা মহিষাসুর স্মরণ উৎসব।
এই উপলক্ষ্যে পাতা সেলাই, ছোট ছেলেমেয়েদের বিস্কুট দৌড়, সূঁচে সূতো পরানো, ফুটবল ম্যাচ, স্লো সাইকেল রেস ইত্যাদি ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
হয় দাঁশাই, সাড়পা ও কাঠি নাচের আয়োজন।
কখনো কখনো দুর্গামন্ডপের দুশো মিটারের মধ্যেই দুটি অনুষ্ঠানই একসাথে হয়েছে। সাধারন মানুষ দুয়েই শামিল হয়েছেন।
২০১৭ সালে খাস কলকাতার কাছে গড়িয়ায় প্রকৃতি সেবাশ্রম সংঘ নামে একটি সংগঠন আয়োজন করেছিল মহিষাসুর স্মরণ দিবস।
................................................................................
হুদুড় দুর্গা আসলে একটি অর্বাচীন quasi academic তত্ত্ব।
হুদুড় নয়, এটিকে হুজুগদুর্গা বলাই ভালো।
কোন ভালো মানের নৃতত্ত্বের জার্ণাল, ইতিহাসের গবেষণামূলক গ্ৰন্থ, মেইনস্ট্রিম পত্র পত্রিকায় এই নিয়ে কোন স্ট্যান্ডার্ড লেখা নেই। নেই কোন ভালো বই।
আদিবাসী অঞ্চলে যাঁরা দীর্ঘদিন ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছেন, সেইসব বিশেষজ্ঞরাও সুনির্দিষ্ট কিছু লেখেননি এই বিষয়টি নিয়ে।
তাই বিতর্কটি আপাততঃ শেষ হচ্ছে না।
ব্যবহৃত কার্টুন ; রেবতীভূষণ ঘোষ।