অসামাজিক
ভোরের বেলার ঘুমটা বড়ই পছন্দ পাগলটার। কিন্তু কলকাতায় জুন মাসের গোড়ার দিকে সকাল ৭টা নাগাদ রোদের এতই তেজ যে তেতে ওঠা ফুটপাথে বেশিক্ষন পড়ে থাকা যায় না, গা চিড়বিড় করে। তারওপর যেদিন থেকে এখানে নতুন মলটা হয়েছে সেদিন থেকেই বেলা একটু বাড়লেই মলটার সিকিউরিটি গার্ডগুলো বেজায় খিস্তি দেয়। মাঝেমধ্যে লাথিটাথিও মারে। পাগলের সঙ্গে স্বাভাবিক মানুষ যেমনভাবে ব্যাবহার করে আরকি। তাই আজকাল পাগলটাকে একটু তাড়াতাড়িই ফুটপাথের নিজের ভাগের অংশ ছাড়তে হয়। তারপর সে একটু ছায়া দেখে বসে চটজলদি হাগু আর হিসুটা সেরে নেয়। এসব ব্যাপারে জলটল তার লাগে না, কারন সে তো পাগল। আজকাল সিকিউরিটি গার্ডগুলোর ওপর মাথাটা গরম থাকে বলে চেষ্টা করে মলের বাউন্ডারি দেওয়ালটার গায়ে কাজকর্ম সারতে। ইচ্ছে আছে একদিন মলের ভেতরে ঢুকেই সকালের কাজটা করবে। তার জন্যে দুএকটা খিস্তি বা লাথিটাথি খেতে হলে খাবে।
এরপর পাগলটার কাজ হচ্ছে রাস্তার ওপরে যে চায়ের দোকানগুলো তার সামনে কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা। পাগল বা ভিখিরিদের ফাইন ডাইনিং রেঁস্তোরা বা লাউঞ্জ বারের সামনে দাঁড়িয়ে বিশেষ সুবিধে হয় না, কিন্তু চায়ের দোকানের লোকজন খালি হাতে ভাগায় না। পাগলটার কপালেও সকালে এক গ্লাস লিকার আর দু একটা খাস্তা বিস্কুট জুটে যায়। মাঝেমধ্যে কোন খদ্দের প্রজাপতি বিস্কুট বা বাপুজি কেকও কিনে দেয়। পাগল হোক আর যাই হোক, তার ইন্দ্রিয়গুলো তো সচল, পাগল বলেই হয়তো বেশি সচল। তাই মাঝেমধ্যে ঘুগনি পাউরুটির ডিশগুলোর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু পাগলকে ফ্রীতে ঘুগনী খাওয়ানোর মতন শৌখিনতা চায়ের দোকানদার বা খদ্দের কারুরই পোষায় না।
আজকে পাগলটা এসব কিছুই করলো না। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা নেড়ি কুকুরের বাচ্চার উদয় হয়েছে কোথা থেকে। অন্য পাড়া থেকে কেউ ছেড়ে গেছিলো বোধহয়। প্রথমরাত্রে বাচ্চাটা পাগলটার ঘুমন্ত দেহের পাশে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকে। রাতের ফুটপাথে ওটাই একমাত্র উষ্ণ দেহ ছিলো বলে হয়তো। সকালে উঠে পাগলটা দেখে কোলের কাছে কুকুরের বাচ্চা। সেই থেকে বাচ্চাটি রয়ে গেছে। সকাল হলে কেঁউ কেঁউ করে খিদে জানান দেয়। একটি চায়ের দোকানে একটি বাচ্চা ছেলে কাপ ডিস ধোওয়ার কাজ করে, সে প্রথম দিনই একটা চায়ের গ্লাসে করে গরম জোলো দুধ আর কোয়ার্টার পাউন্ড পাউরুটি জোগাড় করে এনেছিলো। পাগলটার সামনে দাত বার করে বলেছিলো, -হারুদা, বাচ্চাটারে দিও। তুমি খাইয়া নিও না আবার।
সেই থেকে সকালে কুকুরটার বরাদ্দের দুধ পাউরুটি বাচ্চাটা দিয়ে যায়। পাগলটা অনেক সময় নিয়ে কুকুরটাকে খাওয়ায়। পাগল না হলে ওর মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতো যে চায়ের দোকানের বাচ্চাটা রোজ যে দোকান থেকে দুধ পাউরুটি নিয়ে আসছে এর পয়সা কে দিচ্ছে? এবং পাগল না হলে এই প্রশ্নটা নিয়ে একটা গোটা ইস্তেহার নামিয়ে ফেলতে পারতো। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি, শুধু মাঝখান থেকে কুকুরের বাচ্চাটার সকালের দুধ পাউরুটির ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। আজকেও অনেক সময় নিয়ে কুকুরের বাচ্চাটাকে খাওয়ালো । বাচ্চাটার কোন নাম দেওয়ার কথা পাগলটার জট লাগানো মস্তিষ্কে কখনও আসেনি। বাচ্চাটার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলবারও চেষ্টা কোনদিন করেনি। বাচ্চাটা শুধু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ করে আর ও গায়ে হাত বোলায়।
বিকেলের দিকে মলের সামনে গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে। পাগলটাও ফুটপাথের একটা কোনায় বসে নানারকম গাড়ি আর মানুষ দেখে। এইসময়টায় সে একটু অন্যমনষ্ক থাকেই বলেই হয়তো সেদিনকে খেয়াল করলো না যে কুকুরের বাচ্চাটা ঘুরঘুর করতে করতে রাস্তায় নেমে গেছে। মলের সামনে যে গাড়ি পার্ক করবার জায়গা সেখানে যখন তীব্র গতিতে ছুটে এসে সাদা গাড়িটা আর্তনাদ করে ব্রেক করলো তখন ব্রেকের আওয়াজে পাগলটা একটু চমকে গেলেও একই সময়ে কুকুরের বাচ্চাটার চিৎকার তার কানে আসেনি। গাড়িটা যে ছেলেটা চালাচ্ছিলো তারও বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। সদ্য কলেজে ওঠা ছেলেটার সকাল থেকেই মেজাজটা বিগড়ে আছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই কলেজে একটি মেয়ের পিছনে ছুকছুক করবার পরে আজকে বাবার গাড়িটা, মানে ওই স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলটা নিয়ে কলেজে গিয়ে মেয়েটাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো গাড়িটা নিয়ে একটা কফিশপে গিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া যেতে পারে। মেয়েটা বলেছিলো,
- কফি! হঠাত তোর সাথে কফি খেতে যাবো কেন!
- তাহলে আমরা লং ড্রাইভে যেতে পারি একটু কোলাঘাটের দিকে।
- আর ইয়ু ফাকিং নাটস! বাজে হ্যাজাস না। তোকে আমি ঠিকমতন চিনিই না, একই কলেজে পড়ি, ব্যাস! লং ড্রাইভ ফাইভ মাথা থেকে কাটা।
কলেজের বাকি ক্লাসগুলো করবার আর ইচ্ছে ছিলো না। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি বারে বসে ড্রাই চিলি চিকেন দিয়ে কয়েক বোতল বিয়ার সাবাড় করেছিলো, আর মেয়েটিকে যথাক্রমে বিচ, হোর, ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে প্রভুত আনন্দ লাভ করেছিলো। ফেরবার পথে মুত্রথলিতে বিয়ারের চাপ অনুভব করায় মনে হয়েছিলো মলের মধ্যে গিয়ে হিসুটা সেরে ফেললে হাল্কা লাগবে। মানে পাগলটার ইচ্ছের মতন নয়, সঠিক ভাবে ফ্রেশনারের গন্ধওয়ালা বাথরুমের মধ্যে। বিয়ারের আমেজে একটু ঢুলুঢুলু ছিলো, গাড়িটাকে পার্ক করতে গিয়ে সামনের চাকাটা কুকুরের বাচ্চাটার পেটের ওপর উঠে গেলো।
প্রথম নেশার রেশটা কাটে আসেপাশের কিছু লোকজনের চিৎকারে। তারপরে ইলেকট্রিক শকের মতন আরেকটা চিৎকারে নেশা ফেশার পেছনে মেরে যায়। ছেলেটি দেখে কোথা থেকে একটি লোক আলুথালু বেশে চিৎকার করতে করতে কুকুরছানাটার সামনে মাটিতে বসে পড়েছে।
পাগলটা যখন কুকুরের বাচ্চাটির থ্যাতলানো দেহটার সামনে বসে অদ্ভুত জান্তব স্বরে চিৎকার করে কাঁদছে, সেইসমইয় চায়ের দোকানের কাপ ডিস ধোয়া ছেলেটা দৌড়ে আসে। কয়েক মুহুর্ত থমকে দাঁড়িয়ে সে আবার দোকানের দিকে ছুট লাগায় কারন তার মনে পড়েছিলো যে একবছর আগে মা মারা যাওয়ার সময়ে কেউ একজন বলেছিলো মুখে একটু জল দেওয়ার কথা। জলটা নিয়ে ফিরে এসে সে দেখলো পাগলটা তখনও চিৎকার করছে আর তার মুখ চোখ দিয়ে জল নাল গড়িয়ে একসা। এরপরে যে ব্যাপারটা ঘটলো সেইটার জন্যে অবশ্য ছেলেটি বা হাল্কা করে জমে যাওয়া ভিড়ের লোকগুলো, কেউই প্রস্তুত ছিলো না। পাগলটা হঠাত লাফিয়ে উঠে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা একটা বাঁশ তুলে নেয় এবং চিৎকার করতে করতে সাদা গাড়িটাকে পেটাতে শুরু করে। গাড়িটার মধ্যে ছেলেটি এবং তার দুজন বন্ধুর তখন নেশা মাথায় উঠে গেছে। তবে সামনের ফগলাইটগুলোকে তছনছ করে পাগলটা যখন বনেটের ওপর উঠে সামনের কাঁচটায় প্রথম বাঁশের আঘাতটা করলো, তখন ওই তিনটি ছেলেই আর্ত চিৎকার করে উঠেছিলো। যে ছেলেটি গাড়ি চালাচ্ছিলো সে টেরও পেলো না যে তার অনেকক্ষনের মুত্রথলির চাপ হঠাত হাল্কা হয়ে গেছে এবং তার লিভাইজ ৫০১ এর সামনেটা উষ্ণ হয়ে ভিজে গেছে। বাঁশের দ্বিতীয় আঘাতের সামনের কাঁচটা অনেকগুলো টুকরো হয়ে ভেঙ্গেছিলো এবং চুল আর জামা থেকে সেই টুকরো গুলো ঝাড়তে ঝাড়তেই তিনজন গাড়ি থেকে লাফ মেরে নেমে দৌড়ে ফুটপাথে উঠে পড়ে। পাগলটা এক মুহুর্তের জন্যে তাদের দিকে লাফায় কিন্তু আবার ফিরে এসে গাড়ির বাকি কাঁচগুলোয় মননিবেশ করে। সাদা গাড়িটাকে তছনছ করে যখন সে পার্ক করা বাকি গাড়িগুলোর দিকে এগোচ্ছে তখন রাস্তায় লোক জমে গেছে আর একদিকের গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে গেছে।
মলের মধ্যে যাতে কেউ বিষ্ফোরন না ঘটায় তাই আজকাল মলের সামনে একটা কপুর গাড়ি থাকে। এই ক্ষেত্রেও কপুর গাড়িতে একজন এস আই আর গুটিকয়েক সার্জেন্ট বসে গুলতানি মারছিলো। হঠাত হট্টগোলে দেখে তারা গাড়ি থেকে হুড়মুড় করে নেমে এসে কিছুক্ষন থমকে গেলো। সামনের পাগলটা দ্বিতীয় গাড়িটার হুলিয়া পালটাতে ব্যাস্ত তখন। যে তিনটি ছেলে ফুটপাথে থমকে দাঁড়িয়ে এই বিচিত্র তান্ডব দেখছিলো, পুলিশ দেখে তারা হঠাত মনে একটু সাহস পেলো। গাড়ির চালক ছেলেটি আর্তনাদ করে উঠলো,
- থামান স্যার! কিছু করুন! একটা খুনটুন হয়ে যাবে।
অপেক্ষাকৃত অল্পবয়েসি সার্জেন্টটি সিনিয়রের সামনে বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে পাগলটাকে থামানোর জন্যে কিছুটা এগিয়েছে, ভিড়ের থেকে একটা ফচকে গলার স্বর শোনা গেলো,
- এগোস না, পাগল আছে, কামড়ে টামড়ে দিলে পোদে টেটভ্যাক নিতে হবে।
পাগলটিকে ছেড়ে কিছুক্ষন ভিড়ের দিকে একটু চোখ গরম করে সার্জেন্টটি আবার গাড়ির সামনে এলো। সাদা গাড়ির সেই তিনটে ছেলে ততক্ষনে এস আই কে ঘটনার বিবরন দিচ্ছে আর হাপাচ্ছে,
- বিশ্বাস করুন, দেখতে পাইনি! আর ব্যাপারটা এইরকম হয়ে যাবে ভাবিনি! ইট ওয়াজ জাস্ট আ ফাকিং ডগ! ওর পোষা জানতাম না।
- হুঁ! রাস্তার পাগলের আবার পোষা কুকুর! শালা কত কিছুই যে দেখবো।
- ঠিকই বলেছেন স্যার, কিন্তু কিছু একটা করে থামান! একটাও গাড়ি আস্ত রাখবে না নাহলে! আরে আপনাদের তো আর্মস আছে, ভয় টয় দেখান!
- আরে পাগল কি আর্মস বুঝবে নাকি! আর্মস তো ব্যাবহারও করতে পারবো না! তারওপর উলটে আক্রমন করলে মুশকিল। আঁচড়ে কামড়ে দিলে তো জান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।
- তাহলে...!
- দাড়ান, একটু ওয়াচ করি, নিজের থেকে থামলে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে পেদাবো। থানায় একটু ইনফরমেশনটা দিয়ে দিচ্ছি ওয়্যারলেসে।
- আরে দেখুন দেখুন, গাড়ি ছেড়ে এবার মলের দিকে এগোচ্ছে!
এর পরে কয়েক মুহুর্ত একটি অদ্ভুত নিস্তব্ধতার মাঝে, যা ভিড়ের লোকেদের কাছে কয়েক শতাব্দীর সমান, পাগলটি মলের বাইরে প্রথম ডিস্পলে উইন্ডোর কাঁচটার ওপর বাঁশটা দিয়ে আঘাত করলো, এবং দ্বিতীয় নয়, তৃতীয় আঘাতে যখন কাঁচটা ঝনঝন করে ভাঙ্গলো, পাগলটা মনের মধ্যে একটি চরম প্রশান্তি অনুভব করলো। একের পর এক ডিস্পলে উইন্ডোতে আঘাত করে কাঁচগুলি কে সে যত চুরমার করলো, তত যেন তার মস্তিষ্কের জটগুলো খুলতে শুরু করলো। ওই জটগুলোর মধ্যেই অনেকদিন আগের একটা লুকিয়ে থাকা স্মৃতি হঠাত সারা মাথাটাকে আক্রান্ত করলো – সেই যখন মলটা তৈরি হবে বলে কারখানাটা ভাঙ্গা হচ্ছে, এই রাস্তার সামনে কিছু হাঁড়গিলে কালো কালো মানুষ আকাশের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ছে আর একসাথে কবিতা পাঠের মতন করে স্লোগান দিচ্ছে। স্লোগানটা বিড়বিড় করতে করতে চিৎকারে পরিনত হলো পাগলটার গলায়। চিৎকারটা করে সে খুবই আনন্দ পেলো, এবং তাই বারবার চিৎকার করতে লাগলো, সাথে মিলিয়ে খিস্তিও দিলো – যদিও সে কথাগুলোর মানে বোঝে না, তবুও মনে হলো চিৎকার করে কথাগুলো বলে কাঁচ ভাঙ্গলে দ্বিগুন আনন্দ পাওয়া যায়।
মলের সামনে সেই ভিড়ের মানুষ দেখলো, একটা পাগল মলের কাঁচগুলো ভাঙ্গছে আর চিৎকার করছে – ভুখা মজদুর করে পুকার! এই শালা শুয়োরের বাচ্চা! মেরে ফেলবো! করে পুকার! করে পুকার! ভুখা মজদুর জিন্দাবাদ!
অঞ্চলের থানার ওসির কাছে ততক্ষনে ঘটনাস্থলে এস আইর খবর ছাড়াও ওপরতলা থেকে দুটো ফোন চলে এসেছে,
- ওয়াট ইজ দিস! এটা কি মগের মুল্লুক? চেম্বার অফ কমার্স আমায় বাঁশ করছে! কোন এন্টি-সোশ্যাল নাকি গাড়ি আর মল ভাংচুর করছে! তোমাদের ফোর্স নেই ওখানে?
- আছে স্যার! ফোর্স আপডেট দিচ্ছে! আমরা আরও ফোর্স পাঠিয়েছি। এন্টি-সোশ্যাল না স্যার, পাগল! সাবভার্সিভ স্লোগান দিচ্ছে। ভুখা মজদুর টজদুর বলছে।
- পাগল স্লোগান দিচ্ছে! ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকছে! পাগল হঠাত মল আক্রমন করবে কেন! তাও আবার বামপন্থী স্লোগান দিচ্ছে! না ব্যাপারটা লাইটলি নিও না! আজকাল শহরেও উপদ্রব বাড়ছে জানো তো! মনিটর করতে থাকো। আর শোনো...।
- হ্যা সার!
- দরকার পড়লে সেরকম ব্যাবস্থা নিতে হবে। অনেক উচু তলার থেকে ব্যাপারটা নিয়ে চাপ আসছে। বোঝোই তো, ওই মলের সাথে অনেক বড় বড় মানুষ জড়িত। আমি কথা বলে নিচ্ছি।
- ওকে স্যার!
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওসি আবার ওপরতলায় ফোনটা করে নিলো,
- স্যার, ওখান থেকে ফোর্স আপডেট পাঠালো। লোকাল লোকজন বলছে সত্যি পাগল!
- হুম শোনো, আমি কথা বললাম। একদম সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ এসেছে, ব্যাপারটা এখানেই ইতি টানো। তার জন্যে যা দরকার হয়, করো। বুঝলে তো? যা দরকার...! আফ্টার অল, এই ডিস্ট্রাকশন অফ প্রপার্টি ছাড়াও তো আশেপাশে সিটিজেনদের সেফটির ব্যাপারটা আমাদের দেখতে হবে। কারুকে যদি এরপর আক্রমন করে ফেলে! বুঝতেই পারছো, আমাদের ওপর একটা দায়িত্ব চলে আসবে। মিডিয়া ছেড়ে কথা বলবে না। এমনিতেই এতগুলো গাড়ি আর মলের ক্ষতি হয়ে গেলো, আমাদের ইন্যাকশন নিয়ে খবর হবে তুমি জেনে রেখো!
- হ্যা স্যার!
- ওকে, আমাকে রিপোর্ট দিও।
- ওকে।
ওসির ঘর থেকে পুলিশের গাড়িতে নির্দেশ যেতে আর কয়েক মিনিটের বিলম্ব হলো। পাগলটার চোখের সামনে তখন নাঁচছে ভুখা শ্রমিক, রাক্ষুসে মল আর ভাঙ্গা কাঁচ। প্রথম গুলিটা কাঁধে এসে লাগলো বলে সেই ধাক্কায় সে একটু টলে গেলো। অল্পবয়েসী সার্জেন্টিটির হাত কেপেছিলো, সার্ভিস রিভলভারটাও বেশ ভারি ছিলো। দ্বিতীয় গুলিটা কিন্তু সোজা পেটে লাগলো, আর কালচে রক্ত ছিটকাতে ছিটকাতে পাগলটা মাটিতে আছড়ে পড়ে কিছুক্ষন নড়লো, তারপর আস্তে আস্তে স্থির হয়ে গেলো। প্রথম গুলির আওয়াজেই ভিড়ের অনেকে পিছনে ছিটকে গেছিলো, এবার হঠাত করে ভিড়টা খালি হয়ে গেলো। সার্জেন্টটি গটগট করে পাগলটির দেহের পাশে গিয়ে লাথি মেরে বাঁশটা সরিয়ে দিলো, তারপর কুকুরছানাটির দেহের কাছে গেলো, এবং কিছুক্ষন দেহটাকে নিরীক্ষন করে সজোরে বুটটা দিয়ে মাথাটা থেৎলে দিলো।
- বিশ্বাস করবেন না স্যার! মালটা এখনো বেঁচে ছিলো, একটু একটু নড়ছিলো। একটু পরেই মরতো যদিও। শালা ওইটুকু একটা জিনিস, তার জন্যে কত ঝক্কি পোয়াতে হলো!
ভগবান যখন দেবদূত কে বলেছিলো, যাও, আমার জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান দু্টো জিনিস নিয়ে এসো, দেবদূত পৃথিবীতে এসে পাগলের হৃদয় বা কুকুরছানাটির দেহ, কোনটাই খুজে পায়নি, কারন তিন দিন কাঁটাপুকুর মর্গে ফেলে রাখবার পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পাগলটার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো, আর কুকুরছানাটার দেহ ময়লার গাড়ি তুলে নিয়ে গেছিলো, সে ধাপার মাঠে ফুলকপিদের সারে পরিনত হয়েছে।