বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

খুড়োর কল ~ স্বাতী দাসগুপ্ত

খুড়ো চলছে সামনে কলে কত কি খাবার
ভুখা পেট রুটি চায়, খিদে জোরদার
বাতেলা মেরো না রাজা আর......

দেশটা বেচে ন্যাংটো রাজা নাচছে ধিন তা ধিন
সঙ্গে নাচছে মন্ত্রি-সান্ত্রি,গিলছে খনি ষড়যন্ত্রি
দৈত্য খাচ্ছে কড়মড়িয়ে আস্ত আলাদীন_
বাড়ছে খিদে ধর্ম দিচ্ছে প্রাণভরে আফিং।
ভুখা পেট রুটি চায়,খিদে জোরদার
বাতেলা মেরো না রাজা আর......

বিজ্ঞাপনে যত কাব্য, গরিবের ভবিতব্য
চোখ বুজে রাজা খাবে চেটেপুটে চোষ্য চব্য ।
ভুখা পেটে রুটি আর কোটি হাতে কাজ
খিদে বলে কেড়ে খা,হক লুটে নে আজ।
মাথা তুলে আসমানেতে, শক্ত রেখে পা-
বাতেলাতে পেট না ভরে, কেড়ে নিয়ে খা।
ভুখা পেট রুটি চায়, খিদে জোরদার
বাতেলা মেরো না রাজা আর......।।

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

ভাষা বিভ্রাট ~ তমাল রাহা

কেউ যদি ক্রমাগত হাসিমুখে "বালে বালে বালে বালে" অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বলতে থাকে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? হ্যা, আমারও সেরকম অবস্থ্যা হয়েছিল স্পেন এ এসে। শালা যাই বলি তাই শুনে লোকে তার দন্তবিকশিত করে "বালে বালে বালে বালে" বলে যেত। পরে জানলাম অর মানে হলো "ঠিক আছে"........ হ্যা, ঠিক ধরেছেন, এবার বিষয় টা হলো ভাষা।
ছোটোবেলার কথা।তখন ইস্কুল এর ছুটি পরলেই বারাকপুর যাওয়া হত। আর সেখানে গেলেই আমি মেতে উঠতাম খেলায়। আর খেলাধুলো করলে একটু হাতাহাতি তো হয়ই বৈকি! আমি একটু গায়েগতরে ছিলাম বরাবরই। মামাবাড়িতে তো ডাকনাম তা "গোদা" ই রয়ে গেছে।একবার হলো কি, পাড়ার বাবু নামে একটি ছেলের সাথে লাগলো ঝামেলা। ওরা তখন বাংলাদেশ থেকে সদ্য সদ্য এদেশে এসেছে। ঝগড়া টা হাতাহাতি তে বদলাতে সময় লাগলো না। আমিও হুট করে পা চালিয়ে বসলাম ...... আর লাগবি তো লাগ একদম মোক্ষম জায়গায়। আসল ঘটনা শুরু এরপর। খেলা উঠলো মাথায়। বাড়ি ফিরে এলুম। কিছুক্ষণ বাদে বাড়ির বাইরে প্রচন্ড চিত্কার চেঁচামেচি। বেরিয়ে দেখি বাবুর মা বলছেন "তোমাগো পোলায় আমার পোলার পোতায় হেমনে লাত্থায়সে যে আমার পোলা পোতা হাতে লৈয়া কান্দতাসে।" আমার মা আর দিদি তাই শুনে কিছু বুঝতে না পেরে ক্রমাগত প্রশ্ন করে চলেছে "পোতাটা কি জিনিস?" শেষে বাবুর মা বললেন "আরে হেইটাও যেন না, মোতনের কামে লাগে যেইটা!" আমার মা আর দিদি এখনো গল্পটা বলতে বলতে হেসে কুটোপাটি হয়ে যায়।
গোলোকপতি বাবু ছিলেন আমার ইস্কুলের ইংরিজির মাস্টারমশায়।সেটা নব্বুই দশকের গোড়ার কথা।আমি তখন কলেজে পড়ি। ছুটিতে দুর্গাপুর গিয়ে শুনি আমাদের ইস্পাত ইস্কুলের দুই-জন জনপ্রিয় মাস্টারমশায় রতন বাবু, স্বাধীন বাবু, ইহলোক ত্যাগ করেছেন। মনটা খারাপ। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। হঠাত দেখা গোলোকপতি বাবুর সাথে। বললুম, "স্যার, শহরে এসে খবরটা শুনলুম। মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে।" গম্ভীর মুখে স্যার উত্তর দিলেন "হ্যা, তমাল, ব্যপারটা খুবই আশাতীত।" অত দুঃখেও সেদিন হো হো করে হেসেছিলুম মনে আছে।
যুগযুগান্ত ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। ঐ দিনই হিটলারের নেতৃত্বে নাত্সী জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। পরবর্তীকালে ঐ ১লা সেপ্টেম্বর দিনটিকেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বশান্তি আন্দোলন। পশিমবঙ্গে ওই দিন-টিতে বামপন্থী দলগুলি করে যুদ্ধবিরোধী শান্তি মিছিল। ছাত্র-যুব রাও যোগ দেন। আমিও যোগ দিয়েছি। একটা শ্লোগান ছিল "দাগো দাগো কামান দাগো, পেন্টাগন এ কামান দাগো।" কিন্তু মিছিলের শেষের দিকে কিছু ছেলেকে বলতে শুনেছিলাম, "দাগো দাগো কামান দাগো, প্যান্ট-টা খুলে কামান দাগো।" জানি না ওটা ওদের অজ্ঞানতা বশত না অসভ্যতা ছিলো। 
এর সাথে আরেকটা জিনিসের মিল খুঁজে পাই। ইস্কুলের প্রেয়ার-এর লাইন-এ … অনেকেরই হয়ত এই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। 
ভাষা ব্যবহারকারীর দিক থেকে পৃথিবীতে বাংলা চতুর্থ ভাষা। এটা গর্ব করার মতো বিষয় হলেও আমরা নিজেরাই বাংলা ভাষাকে বিপন্ন করে তুলছি।
মানুষ লিখতে শিখেছে পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে; কিন্তু বলতে শিখেছে অন্তত ষাট হাজার বছর আগে। এ সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে বহু ভাষার উদ্ভব হয়েছে, আবার তা বিলীন হয়ে গেছে, যেমন অনেক সভ্যতার উত্থান ও পতন ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের অনেক বড় বড় সভ্যতা ও অসংখ্য ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ইতিহাস স্মরণীয়। একসময় উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় অসংখ্য 'রেড ইন্ডিয়ান' ভাষা প্রচলিত ছিল। কয়েকশ বছর আগে ইউরোপীয় দেশের উপনিবেশে পরিণত হওয়ার ফলে সেসব ভাষা ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর আমেরিকায় চালু হয়েছে ইংরেজি আর দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষা। 
ইচ্ছে করে ভাষা বিকৃতিটা নিন্দনীয়! তবে, মজা করার জন্য এদিক-ওদিক হলে মার্ডারাস হওয়ার কারণ দেখি না কারণ ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল; পরিবর্তন হচ্ছে এবং হতে থাকবেই। এটা ঠেকানোর উপায় নেই কোনো। তবে, সবসময় একটা মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়টা ভালো। তা না হলে পরিবর্তনটা বিশৃংখলায় পর্যবসিত হবে। যেমন ধরা যাক আজকাল facebook এ প্রায়ই দেখা যায়,
পষ্টিয়ে দে 
আরো পোস্টান
গুগলাইয়া
আজকাল ইল্যান্ডে অনেকেই excuse me এর জায়গায় অনেকটা মজা করেই squeeze me বলে থাকেন কিংবা লিখে থাকেন। এটা স্রেফ মজা। দেখুন ওদের শব্দদুটিতে উচ্চারনের জায়গাটা প্রায় কাছাকাছি হলেও শব্দার্থে কত ভিন্নতা। এটা প্রায় বিশ্বের সব দেশেই কম বেশী হচ্ছে।
তাছাড়া, পূর্ণবয়স্কদের জন্য ভাষায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়তো তেমন ক্ষতিকারক নয় কিংবা হবে না যতটা না শিশুদের ক্ষেত্রে হবে। শিশুরা সহজে বিভ্রান্ত হয়ে যাবে - ভুলটাকেই শুদ্ধ মনে করে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে। এটা নি:সন্দেহে একটা ভয়ংকর একটা ব্যাপার হবে! একটা মানদণ্ডের সাধারণ অনুশীলনকে উত্সাহ না দিলে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ ভাষার বিকৃতিতে সহজে আক্রান্ত হবে। ভাষার এদিক-ওদিক হলেও প্রমিত ভাষা সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা দরকার।
তাই এবার একটু ভাষাচর্চা করা যায় কি সবাই মিলে ?

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

রোজগেরে ~ লোপামুদ্রা মিত্র পাল

চলতে চলতেয় আজ "রোজগেরে"

১) গত সপ্তাহে ক'দিন তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় বাস রুট ছেড়ে অফিসফেরত ট্রেন রুট ধরলাম মেট্রো অব্দি পৌঁছাতে। এমনি একদিন ট্রেনে উঠে বসতেই একটি লোক– কানে ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, মাথায় ব্যথা, পায়ে ব্যথা, হাতে ব্যথা, পেটে ব্যথা,দীর্ঘ দিনের ব্যথা, হটাত ব্যথা সারাতে ব্যবহার করুন এই তেল। সর্ব ব্যথাহর এই তেল,দাম মাত্র ১০ টাকা। দু ফোঁটা লাগিয়ে পাঁচ মিনিট মালিশে তিন মিনিটে ব্যথা গায়েব! এতেআছে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র অনুযায়ী হাজারো জড়িবুটি । কোন ঝামেলা বা side effect  নেই আলোপ্যাথি্রমতো। এতোটা বলার পর একজন পাশ থেকে বললেন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই?? লোকটি বলেন"পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া" আবার কি? কোন "side effect" নেই বললাম যে!! দেখলাম দেশের লোক বাংলা নাজানলেও ইংরেজিটা বেশ জানেন। যাই হোক হুড়মুড় করে বিক্রি হতে লাগলো । বেশির ভাগ ইখেটে খাওয়া মানুষ ,সারা দিনের কাজের শেষে গায়ে- গতরে ,মনে ব্যথা নিয়ে বাড়ির মুখে। একজনআবার পকেট থেকে ভলিনি জেল বার করে বললেন আমি লেবারের কাজ করি মেট্রো রেলে, ভলিনিলাগিয়ে একটু আরাম পেলেও খানিক বাদে আবার যে কে সেই। লোকটি বলে চলেন এই আলোপ্যাথি্রমতো খারাপ আর দুনিয়ায় কিছু নেই। আমাদের নিজস্ব শাস্ত্র অনুযায়ী চলুন। কথায় বলে নাগেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। বুঝলাম এদানিং হিট আয়ুর্বেদিকের "side effect" এটা। ওদিক থেকে হটাত ফিসফাস ক'জন মহিলার। একজনঅল্পবয়সী ক্ষয়াটে চেহারার বউ কি যেন বললেন। লোকটি বলেন হ্যাঁ হ্যাঁ মা জননী ওই দিনগুলোয় পেটে একটু লাগিয়ে মালিশ করলেই আপনার ব্যথা কমে শরীল একদম ঝরঝরে!! বেশ ভালইরোজগার হয়ে গেল ১৫ মিনিটে । আমায় লোকটি একদম ই পাত্তা দিচ্ছিল না, না দেওয়ার ইকথা। কারন আমি এক্কেবারেই potential customer নই। কিন্তু জাত salesman  বলতেহবে। সেই আপ্ত বাক্য sales man দের – যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমুল্য রতন"। তাইস্মরণ করে নামার ঠিক আগে আমায় – " ম্যাডাম , একটা নিয়ে যান , দেখবেন লাগাবার আগেইব্যথা গায়েব!" আমার সরল প্রশ্ন – কোথায় লাগাব? আশ্চর্য লোকটি বলে ওঠে, "কেন?যেখানে ব্যথা সেখানে"! মুখ ফস্কে বেড়িয়ে পড়ে "দাদা সংসারে বড় জ্বালা যন্ত্রণা,কোথায় লাগাবো একটু বলবেন?" আমি জানি উনি আমায় পাগল ঠাউরালেন। দমদম এ নেমে হাঁটতে হাঁটতেমুখ ফিরিয়ে দেখি তখনো আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখছেন আর বিড়বিড় করছেন, বোধহয়গালাগাল।


২)আগে যখন অফিস আসতাম বাসে শ্যাম বাজার মোরে বাস দাঁড়ালেইএকটি ২০-২২ বছরের ছেলে উঠত কাছা পরা। বাবার শ্রাদ্ধের জন্য পয়সা চাইত। TargetCustomer  ছিল দক্ষিণেশ্বরে পুন্যলোভে আসা মহিলা পুন্যারথিরা। ভুলেও ডেলি পাষণ্ড দের থেকে চাইল না।

অবাক ব্যপার ৩ মাস maternity leave কাটিয়ে জয়েন করে দেখি তখনো সে বাবার শ্রাদ্ধেরজন্য পয়সা চাইছে!!


৩) আজ এক অভিনব অভিজ্ঞতা হোল। বাসে আসতে আসতে বোধহয় সবচেয়েক্ষুদে রোজগেরে দেখলাম। বাচ্চাটির বয়স মেরেকেটে দুই কি আড়াই। নাক দিয়ে অনবরত শিকনিপরছে আর এক হাতে প্যান্ট টা টেনে ধরে আছে। সাথে বছর ছয়েকের দিদি শুধু। এরিয়া হলসিঁথি মোড় থেকে বনহুগলি। উঠেই দিদি দুটো পাথরের পাতলা খণ্ড চটাস চটাস করে বাজিয়েগান ধরল " টাকি ও টাকি ও টাকি টাকি টাকি রে" সেই আদ্যিকালের গান তাও বেসুরো।কিন্তু ঘটনা সেটা নয়। গানের সাথে সাথে ওই টুকু ছোট ভাই চলন্ত বাসে ব্যালেন্সরাখছে, নাচছে আবার পয়সাও তুলছে। অবাক হয়ে দুচোখ ভরে দেখলাম আমাদের ঘরের ৭-৮ বছরের বাচ্চাকেওহাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিতে হয় আর এদের বাবা – মা কত আয়াসে ছেড়ে দিয়েছে জীবনসংগ্রামে যুঝে নিতে নিজেদের, হয়ত বা এদের রোজগার ও ফুটপাথের ফুটিফাটা সংসারে ব্যয়হয় অভাবের ফুটো বোজাতে। রোজগার মন্দ হল না , এবার নিশ্চিন্ত জলখাবার। বাসের মেঝেয়বসে উচ্ছিষ্ট ব্রিটানিয়া কেক ভক্ষন ভাই ও বোনে ।

​ প্রতিবাদের বাঘ বেরুলো বনে ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য

ভোটের দিনে সকালবেলা যেই পড়েছে মনে,
চিরকালীন

​​
প্রতিবাদের বাঘ বেরুলো বনে।
আমি দেখতে পেলাম, কাছে গেলাম, মুখে বললামঃ আয়
ফেসবুকে আর টুইটারে বাঘ আটকে আছে, হায়!

আমার ভয় হল তাই দারুণ, কারণ চোখদুটো কৌতুকে
লাল, সবুজ বা গেরুয়া নয়, ভাসছিল নীল সুখে।
বাঘের গতর ভারি মুখটি হাঁড়ি অভিযোগের পাহাড়,
আমার ছোট্ট কিছু দাবী শুনে খোলে রূপের বাহার।

ভোটের দিনে সকালবেলা যেই পড়েছে মনে,
চিরকালীন প্রতিবাদের বাঘ বেরুলো বনে।
আমি দেখতে পেলাম, কাছে গেলাম, মুখে বললামঃ আয়
ফেসবুকে আর টুইটারে বাঘ আটকে আছে, হায়!

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

মরা প্রেম ~ শ্রদ্ধা মুখোপাধ্যায়

মৈথুনে আজ আমি খুঁজবই তোকে 
ঢেকে নেব কালকের আদরের দাগ 
ধুলো ঢেকে নিভে আছে চাদরের ভাঁজে
মরে যাওয়া কঙ্কাল আর অনুরাগ.

টেনে নেওয়া ফুসফুসে জং ধরা প্রেম
আশা আর হতাশায় সব শোধ-বোধ
যে আগুন জ্বলেছিল তার হাত ছুঁয়ে
নিভিয়েছে হিম রাতে সব প্রতিরোধ.

ভেসে থাকি, ডুবে যাই পুকুরের ঘুমে
পড়ে থাকে একা ট্রেন আর কিছু কথা
ভালোবাসি, বেসে যাব বলেছিল যারা
আজ তারা ফেলে গেছে শুধু নীরবতা...

​ এ "পরিবর্তন" কাকে বলে ~ সুমন্ত্র মাইতি

মুন্নাভাই : সার্কিট, বোলে তো........
​​
এ "পরিবর্তন" কাকে বলে ?
সার্কিট : ভাই,পরিবর্তন বোলে তো :

যেখানে দেখিবে লাল
তুলে নাও চামড়ার ছাল
সবুজ বিছুটি ঘসে কর হে বার্নিশ
যদি দেখো লাল সাপ
ঝাঁটা মেরে কর সাফ
মনে রেখো সর্বদা সংখ্যাটা চৌত্রিশ

মুন্নাভাই : আচ্ছা , "শিল্প" বোলে তো ?
সার্কিট: ভাই, শিল্প বোলে তো:

লোহা কাঠ ভারী তাই তুলে নাও কলম
ছড়া গান লিখে দাও ন্যানো ক্ষতে মলম
মেলা আর ঝুলনে বেচো হে বাদাম
বেগরবাই করলে আছে এবিজির বাটাম

মুন্নাভাই : ঠিক হ্যায় সার্কিট , তো ফির উত্সব বোলে তো .....
সার্কিট : ভাই, উত্সব বোলে তো

পুলি পিঠে খেয়ে পরে নদীয়ার যাত্রায়
মাটি কেটে পানাগরে ফুটবল খাতরায়
ধেই ধেই নাচে খোকা বারোমাস নাগাড়ে
জঙ্গলে হি হি হাসে , হো হো হাসে পাহাড়ে .....

মুন্নাভাই : ফির বোলে তো.....স্সততা কি আছে ?
সার্কিট : ভাই, স্সততা বোলে তো ....

ওই দেখো দশতলা নীলরঙ্গা বাড়ি
তারই গায়ে লেগে আছে ধনেখালি শাড়ি
পাঁচ ফুট নিচে তার নীলরঙ্গা চটি
তারই নীচে লেখা আছে স্সততার বটি ....

শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

​​বহিষ্কৃত ~ অরুনাচল দত্তচৌধুরি

​​
তুমি কল্পশাস্ত্রলতা, আমি এক ঘোর অনাচারি
চাও বা না চাও আমি সব স্বর্গ ভেঙে দিতে পারি।

মন্দাকিনী পারে আসা মুখচোরা পারিজাত ঋতু
এসেও মেলেনি ফুল ... কেঁপে ওঠা লোকভয়ে ভিতু!

ভয় নেমে গেছে তার মাটিমাখা শেকড়ের কাছে।
পাপেরা ছড়ায় গল্প এ'পাড়ার আনাচে কানাচে।

না বুঝেই কেউ কেউ পারিজাতগন্ধ ভাবে তাকে
উৎসাহে সেই গল্প মেখে নেয় জিভে ও পোষাকে।

সময় ফুরোলে জানি এলে নিভে যাবে সমূহ প্রেরণা
সময়ের আগে ... তাই সেই ভুল ভাঙাতে যাবো না।

এ'রকম কত ভুল ঘটে যায় সময় বিশেষে
খবর যা কিছু রটে কিছু মিছে বাকি একপেশে।

দ্যাখো দিব্যি বেঁচে আছি। হলে হোক অতি নাটকীয়
স্বর্গের পাহারা টপকে অনাচারী প্রেমটুকু দিও।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

স্বাধীনতার চতুর্দশপদী ~ অমিতাভ প্রামাণিক

স্বাধীনতা, তুমি লুকিয়ে রয়েছ, আহা রে, একটি কোণে –
প্রভাতফেরীতে, বক্তৃতামাঠে, পতাকা উত্তোলনে।
ঐ দ্যাখো কত যুবক যুবতী গালেতে তেরঙা পেন্ট
লাগিয়ে দৃপ্ত ঘোষণা করছে, কী ইন্‌ডিপেন্‌ডেন্ট!
তুমি কেন তবে চুপসে রয়েছ, গায়ে মুখে পিঠে ঘাম –
কোথায় যাচ্ছ? যে পথে গিয়েছে প্রফুল্ল-ক্ষুদিরাম?
স্বাধীনতা, আভি হোঁশ মে তো আও, করোনাকো বিড়বিড়,
বাচ্চা নাকি হে? বুড়ো ভাম তুমি পূর্ণ ছেষট্টির।
তুমি সিপিয়েমে, তুমি তিনোমূলে, বিজেপিতে-কংগ্রেসে –
যখন গদীতে যে বসবে তুমি তার পাশে বসো ঘেঁষে।
কাগজে তোমার চলবে প্রচার, সেল হবে তুমি মলে,
সারা দেশ ছুটি, জনতা উপচে পড়বে সিনেমাহলে।

কী হল, শুনতে ভালো লাগছে না? চারিদিকে শৃংখল –
কী যন্ত্রে মেলে স্বাধীনতা তোরে, কোথা সে খুড়োর কল?

১৫ই অগাস্ট, ২০১৩

শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৩

সরিফুল ~ অমিতাভ প্রামাণিক

পৃথিবীর আকাশে কোথাও না কোথাও আজ চাঁদ দেখা গেছেই। পবিত্র রমজানের শেষে আজ খুশির ঈদ। আজ উৎসবের দিন, আনন্দের দিন আজ, আজ সকলের সঙ্গে মিলে সুখ বিতরণের দিন।

সরিফুলকে মনে পড়ল আজ। সরিফুল ইসলাম। ইস্কুলে আমরা এক ক্লাশে পড়তাম। ও এখন কোথায় থাকে, কী করে, কিচ্ছু জানি না।

সেটা বোধ হয় ক্লাশ সিক্স কিম্বা সেভেন। মাধ্যমিক অবধি আমার সুবিধা ছিল, যে ক্লাশে পড়তাম সেটা সেভেন্টি সেই ইয়ার, মানে নাইন্টি সিক্স-সেভেনের ঘটনা। আমার বয়স দশ কি এগার। রোগে ভুগে ভুগে ঘ্যানাপটকা চেহারা, বন্ধুরা বলত ঝ্যাঁটার কাঠির মাথায় ভাটাম ফল। কিন্তু সেটাও ঠিক না, পেটভর্তি পিলে, হাঁটলে আমার চেয়ে আমার পেটটা আগে আগে চলত, অনেকটা ভোডাফোনের জুজুদের মত।

বাবা ভোরবেলা গীতাপাঠ করত বলে মুখে মুখে সংস্কৃত শব্দ কিছু শেখা হয়ে যেত। বন্ধুবান্ধবদের নামের কী মানে, তার কী ব্যুৎপত্তি, এসব নিয়ে মাথা ঘামাতাম। শুভব্রত চিউইঙ্গাম (তখন চুনকাম বলতাম) খেয়ে কারো চুলে লাগিয়ে দিলে বলতাম, তোর ব্রত মোটেও শুভ নয়। উৎপলের হাসিটা ছিল ফোটা পদ্মের মত, প্রভাতের নাম আঁধার হলেই যেন বেশি মানাতো, মলিনও ওর নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। আমি আমার অপরিসীম দ্যুতি দিয়ে ক্লাশ ভরিয়ে রাখতাম, অনেক সময়েই সেই দ্যুতির উৎস ছিল রোগের জীবাণু।

সরিফুলে এসে হোঁচট খেলাম। সরিষার ফুল হলে তাও এক রকম, কিন্তু সরিফুল কথার অর্থ কী? সরিফুলকে জিজ্ঞেস করলে ও উত্তর দিতে পারত না। নামের অর্থ নিয়ে ওর কোন মাথাব্যথা ছিল না। আমি একে ওকে জিজ্ঞেস করতাম, এই, সরিফুল মানে কী রে?

ক্লাশেরই একজন, কে মনে নেই, আমাকে ডেকে নিয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বলল, সরিফুল নেড়ে তো, নেড়েদের নামের মানে থাকে না। আমি বললাম, নেড়ে কী? ও বলল, জোরে বলিস না, শুনলে তোকে ধরে যা দেবে না!

অসভ্য গালাগালি আমাদের পাড়ায় লেগেই থাকত, শুনলেই বুঝে যেতাম কোনটা বলা উচিত আর কোনটা অনির্বচনীয়। দ্বিতীয়টার তালিকায় একটা নতুন শব্দ যোগ হল – নেড়ে! কিছুদিন পরে জানলাম, নেড়ে মানে মুসলমান। কালোদের যেমন কালো বলতে নেই, পাগলদেরও তাই, তেমনি মুসলমানদের কিছু কিছু শব্দ বললে অসম্মান করা হয়।

বন্ধুদের মধ্যে আবার মান-সম্মান! মাসখানেক পরেই ইস্কুলের পেছনের মাঠে ক্যাম্বিস বল দিয়ে কিরিং কিরিং খেলা হচ্ছিল টিফিন পিরিয়ডে। আমি ভাত খেয়ে ইস্কুলে যাই, টিফিনের বালাই নেই। পার্থ তাও প্রায় রোজ আমাকে কিছু না কিছু খাওয়াত। ঘুগনি, আলুকাবলি বিক্রি হত গেটের ঠিক বাইরেই। আর ছিল দুধ আইস্ক্রীম। মিষ্টি বরফের সিলিন্ডারে কাঠি ঢোকানো, তার মাথায় কোরানো নারকেল। আহ্‌, অমৃত। এই সব খাওয়ানোর বদলে আমি পার্থকে বইয়ের পেছনের কোশ্চেনের উত্তর লিখে দিতাম। সেই পার্থ সেদিন আসেনি, আমি তাই কিরিং কিরিং-এ ভিড়ে গেলাম। খেলাধূলায় আমার উৎসাহ কম, ছোটাছুটি করতে পারি না, রোগে ভোগা নিস্তেজ শরীর। কিরিং কিরিং-এ অনেক ছুটতে হয়, কেননা অপোনেন্টের কেউ কাছে থাকলেই সেই ক্যাম্বিস বল ছুঁড়ে মারবে। গায়ে লাগলেই আউট। হয় বলের গতিপথ থেকে সরে গিয়ে নিজেকে বাঁচাও, অথবা হাতে
চটি পরে নাও, সেই চটি দিয়ে বলটা ডিফ্লেক্ট করে দাও। শুধু চটিতে লাগলে আউট না।

সরিফুল আর আমি আলাদা দলে। খেলার মধ্যে কোন এক সময় সরিফুলের হাতে বল এল, আমি ওর নাগালের মধ্যেই। সরিফুল আমাকে মারতে গেল, চটি পরা হাতে আমি চিৎকার করে বললাম, জোরে মারিস না। কে শোনে কার কথা। সরিফুল গায়ের জোরে বল ছুঁড়ল, লাগলো আমার ঠিক চোখের নীচে। কালশিটে পড়ে গেল মুহূর্তে। মানে, বাড়ি গিয়ে মার হাতে আবার ঠ্যাঙানি খেতে হবে।

ক্লাশে বন্ধুবান্ধব যখন ফেরত গেলাম, আর আমার জিগ্‌রি দোস্তরা, যারা কিরিং কিরিং খেলছিল না, আমাকে জিজ্ঞেস করল, কে সেই পাষন্ড যে আমার এই হাল করেছে, যেন নাম বলে দিলেই ওরা গিয়ে তাকে কীচকের মত বধ করবে, আমি সরিফুলের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম, ওই নেড়েটা!

সরিফুল এমনিতেই একটু অপ্রস্তুত ছিল – কারো লেগে যাক কেউই চায় না – যদিও খেলতে গিয়ে অনেক কিছুই হত, এ তো কিছুই না। কিন্তু আমার ওই অপভাষণ শুনে ওর মুখ সাদা হয়ে গেল। ওর চোখে আমি জ্বলন্ত ঘৃণার অভিব্যক্তি দেখলাম। বহু মাস সরিফুল আমার সাথে কথা বলেনি।

মাত্র কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গোলাম মুরশেদের লেখা হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতি বইটা পড়তে পড়তে জানলাম, বাঙালি মুসলমানদের পূর্বপুরুষ অনেকেই ছিল বৌদ্ধভিক্ষু, তাদের ন্যাড়া মাথা, সেই থেকে নেড়ে শব্দটা এসেছে। অ্যাজ ইফ, যারা ওদের নেড়ে বলছে, তাদের পূর্বপুরুষরা নেড়ে ছিল না! শুধু নেড়ে না, ওদের যবন, ম্লেচ্ছ ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বলা হয়, বদলে ওরা বলে, কাফের!

এই সব শব্দ বাতাসে ধ্বনিত হলেই মহাসিন্ধুর ওপারে বজ্রনির্ঘোষের মত পাপ-তাপ জেগে ওঠে। মানুষ তখন আর মানুষ থাকে না।

শুধু সরিফুল না, আমাদের আরো কয়েকজন মুসলমান বন্ধু ছিল। রোজার সময় অনেকে ওদের একটু সহানুভূতির চোখে দেখত। আহা, বেচারিরা সারাদিন না খেয়ে থাকে। আমি এই জিনিসটা খুব ভাল বুঝতাম না। আমার তো হাজারটা রোগ। কিছু খাওয়ার আগে ওষুধ, পরে ওষুধ খেতে হত বলে খাওয়া জিনিসটাই পছন্দ করতাম না, খিদে তেষ্টাও বিশেষ ছিল না। তাছাড়া বাড়িতে মা-ঠাকুমা হরদম উপোষ করত। আজ বারের পুজো, কাল সন্তোষী মা, পরশু একাদশী, উপোষের ঘনঘটা। কেউ দিনের বেলা না খেয়ে আছে জানলে আমার তেমন কোন বিশেষ অনুভূতি হত না।

পরে জেনেছিলাম, ওদের অনেকেরই এমনিতেই দুবেলা খাবার জুটত না। রোজার মাসটা ধর্মপালনের নামে চলে যেত বেশ। অন্যসময়ও খাবার রুটিন খুব বেশি পাল্টাতো না। ক'বছর আগে ওদের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন 'ওপারে' চলে গেছে, নতুন বাংলাদেশে। ওদের তাই খুব কষ্টে দিন কাটে।

রোজার পর অবশ্যম্ভাবী চলে আসত ঈদ। ইস্কুল ছুটি থাকত। আমরা শুনতাম, আমাদের যেমন দুর্গাপুজো, ওদের তেমনি ঈদ। কিন্তু কই, আমাদের যে পুজোয় প্যান্ডেল হয়, চার-পাঁচ দিন হৈ-হুল্লোড়, মাইক বাজে, বাজিপটকা ফাটে, ঠাকুর আসে, ঠাকুর যায়, আমরা নতুন জামাকাপড় পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরি, ওদেরও ডাকি, আয়, ওরা তো আমাদের ডাকে না!

যাদের নিজেদেরই দুবেলা দুমুঠো জোটে না, তারা কাদের ডাকবে! আমাদের চরমতম শত্রুর নাম দারিদ্র্য।

দারিদ্র্য বেড়ে যায় যত আমরা নিজেদের খন্ড-ক্ষুদ্র করি। যত বেশি ভেদাভেদ, তত দরিদ্রতা বেশি। এটা বুঝি না বলেই আমরা পূর্ব-পশ্চিম, ঘটি-বাঙাল, হিন্দু-মুসলমান, উচ্চ-নীচ! আর যতই চিল্লামিল্লি করি, পরিসংখ্যান বলে, পৃথিবীর দরিদ্রতম অঞ্চলগুলির একটা হচ্ছে এই গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা।

আমি কোরাণ বা বেদ কিছুই পড়িনি, মুসলমান-হিন্দুর ব্যাপারটা এখনও বুঝি না। বইগুলো পড়া ভালো, অনেকে অনেক বছর চিন্তাভাবনা করে লিখেছেন, নিশ্চয় তার গুরুত্ব আছে। কিন্তু ভেবে দেখুন, আমাদের সভ্যতার ইতিহাস মাত্রই সাড়ে তিন-চার হাজার বছরের, আর এসব লেখা দেড়-দু হাজার বছর বা তারও আগে। এসব আঁকড়ে ধরে নিজেদের ভাগাভাগি করে সামনের দিকে কী করে চলতে পারি আমরা?

সরিফুল কাছাকাছি থাকলে আজ নিশ্চয় ডেকে নিয়ে খাওয়াত আমাকে। অথবা আমিই ওকে খাওয়াতাম।

চাঁদ দেখে পবিত্র ঈদ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তার মাহাত্ম্যের বর্ণনা গুণীজন দেবেন। বাঁশবাগানের মাথায় চাঁদ ওঠা দেখলে আমার অবশ্য সেই হারিয়ে যাওয়া কাজলাদিদির মুখটাই ভেসে উঠবে। তাকে মাটির নীচে দাফন করা হয়েছিল, নাকি পোড়ানো হয়েছিল চিতার আগুনে, সে তথ্যে আমার প্রয়োজন নেই।

ঈদ-উল-ফিতর, ৯ অগাস্ট, ২০১৩

ভানুকাকার তেইশ-ছাব্বিশ - প্রদীপ দাশগুপ্ত

মানুষপুর।

স্থানীয় নাগরিক কমিটি বছরে যে ক’টি অনুষ্ঠান নিষ্ঠাভরে পালন করে থাকে, তার মধ্যে বছরের শুরুতেই আসে তেইশে জানুয়ারি। আর তার পরেই ছাব্বিশে।
তেইশে, সুভাষ বসুর জন্মদিনে, প্রধান বক্তা হিসাবে ডাকা হ’ল যথারীতি আমাকেই। যেহেতু, এলাকার একমাত্র হাইস্কুলের আমিই প্রধান শিক্ষক।
আমি সবিস্তারে বললাম ওঁর দীর্ঘ জীবনের বীরত্বের কাহিনী। কিভাবে কংগ্রেস ছেড়ে, ফুয়েরার হিটলারের রণ-মিত্র-দেশ জাপানে গিয়ে, - শেষমেশ – রাসবিহারী বসুর কল্যাণে - আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতাজী হয়ে ওঠা; এ-সবই বললাম। আমার নজর পড়েছিল বাচ্চাদের দিকে। তাই তাদের ভালোলাগার মত করেই বললাম। এতে শুধু বাচ্চারা নয়, বড়রাও সশব্দ হাততালিতে অভিনন্দন জানালেন।
সভার শেষে গোল বাধল ভানুকাকাকে নিয়ে! সবার সামনেই চীৎকার করে বলে উঠলেন,-‘হারামজাদা, ভুলইয়া গ্যাছস, তুই এককালে একখান কালেজে রাষ্ট্র-বিজ্ঞান পড়াইতিস?’
সভাপতি-সহ উপস্থিত সবাই ওকে নেহাতই খুড়ো-ভাইপোর ব্যাপার হিসাবে নিয়ে মজা পেলেও, আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম যে,  ওই সম্ভাষণটা ছিল নিছক ভূমিকা মাত্র। বাড়ী যাবার পরে, আমার কপালে দুঃখ আছে।  
বাড়ি ফিরে আমিই বোঝাবার চেষ্টা করলাম যে যাদের নিয়ে অনুষ্ঠান, তাঁরা তো কেউ রাজনীতি করেননা। নাগরিক কমিটির অনুষ্ঠান দু’টির পিছনে প্রেক্ষিত হিসাবে রাজনৈতিক ইতিহাস থাকলেও, যেহেতু এখানকার নাগরিকগন এমন এক আর্থ-সামাজিক ধাপের মানুষ, দেশের শাসনকারী-প্রভুদের ঘেন্না-ধরানো রাজনীতিতে প্রভাবান্বিত হয়ে, রাজনীতির প্রতি বিবমিষা প্রকাশটাকেই এঁরা সুবিধাজনক মনে করেন। অতএব, পূর্বোক্ত দু’টি অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিশুদ্ধ অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান হিসাবেই তুলে ধরার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালান। একটা অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমি কি করে .... ।
শেষ করতে না দিয়েই ভানুকাকা পড়লেন আমাকে নিয়ে।
 ‘অরে গাধা, এমন এক অসমান সমাজে অরাজনৈতিক কোন কিছু যে হয় না, হেয়া তুই জানস না? প্রকাশ্য দিবালোকে – মাইকে-মুখ-দিয়া তুই কইতে পারলি – তারা-তো কেউ রাজনীতি করেন না? সব শালা করে, লুকাইয়া করে, শোষক-শ্রেণীর মগজ-শাসনে নিজের অজান্তেও করে। নিজেদের শ্রেণী-অবস্থান টিকাইয়া রাখনের স্বার্থে, নিজেরেই ঠকাইয়া মিছা কথা কয়। এইয়ার নাম ভদ্রলোক। বোঝজো?’ বলতে লাগলেন যে, কেন রাজনীতি শব্দটা  ওঁদের কাছে ‘ট্যাবু’। ‘চউক্ষে কি দ্যাখতে পাওনা, দ্যাশের শাসকরা, দ্যাশের মাইষের টাকা লূঠ কইরা ক্যামনে ল্যাংটা হৈয়া নাচে? নিজেগো কামড়া-কামড়ি থিকা - দুই-একখান ধরা পড়লে,  নিজেগো কাগজ দিয়াই প্রচার চালায়,- কয় – “কেলেঙ্কারি”। ,  হে তো ক্যাবল, টিপ-অব-দি-আইসবার্জ! নিজেগো এক ভাগের বিরুদ্ধে এই বদনাম-এর পিছনে কৌশলডা কিয়ের লেইগগা? ভাবজোস কোন দিন? এই সকল পোলিটিক্যালি আধা-সেন্সিটিভ মানুষগো,- “সব-ঝুট-হ্যায়”-মার্কা এক দর্শনে পৌঁছাইয়া দিতে। অহন তো প্রচারের আর এক কায়দা ধরছে, হ্যাগো মুখ দিয়া এই কথা বাইর করতে সফল হইছে যে, - যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবন; দ্যাখতেই পায়না, – কে-কোন সোসিও-ইকনমিক ক্লাসের সেবা করে!  হ্যাগো ওই কৌশলেই তো এ্যারা অ-রাজ-নোইতিক! হেয়া বোজোনা?’
 ‘সীতারামাইয়ার পরাজয় আমার পরাজয়’,- কে বলেছিল? বাম-ডান, হিন্দু-মুসলিম ,- চরম-নরম, - সবাইকে নিয়ে চলতে চেয়ে উনি কোন শ্রেণীর স্বার্থে ঘা দিচ্ছিলেন, কার কার ষলা-ষড়যন্ত্রে উনি কংগ্রেস ছেড়েছিলেন?  দেশেরই স্বাধীনতার জন্য লড়তে গিয়ে ওঁকে দেশটাই কেন ছাড়তে হ’ল? যারা আজ ওঁকে মহান দেশপ্রেমিক নামে ডেকে প্রায় পুজা বেদীতে বসাচ্ছেন, কেন তাদের একথা ভুলে যাওয়া সুবিধাজনক  মনে হয় যে, স্বাধীনতার পরেও, আজাদ হিন্দ বাহিনীর বীর সেনানীদের শাস্তি দেবার জন্য বিচার সভা বসে?  কেন স্বাধীন ভারতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বীর সেনানীদের মুক্তির জন্য বামপন্থীদেরই আন্দোলন করতে হয়েছিল? ‘এসবই হইল গিয়া বিরাজনীতিকরণের কায়দা। হ্যারা  প্রকৃত গণতন্ত্রে, – অর্থাৎ সকল মানুষের অধিকার-কর্তব্য-সচেতনায় ভয় পায় দেইখাই, - মুখে গণতন্ত্র-গণতন্ত্র শান্তি-শান্তি কইরা গলা ফাডায়। এগো ভন্ড কইলে প্রকৃত ভন্ডগো, চোর কইলে চোরেগো অপমান হইব ’।  মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, মায় নাতিনাতনি-সহ, সকলের সামনেই বিস্তর গালি-যোগে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে, এ ভাবেই, ভানুকাকা প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে লাগলেন।  
     
          দ্বিতীয় তারিখটিতে, “আজকের প্রজাতন্ত্র দিবসে ---”  ইত্যাদি বলে গলা ফাটিয়ে যিনি এতক্ষণ ঘোষণা করছিলেন, সভাপতি তাঁর কানে কানে কি যেন বলতেই, তিনি দুম করে ‘সংক্ষিপ্ত’ বক্তা হিসাবে ঘোষণা করে বসলেন ভানুকাকার নাম। আমি প্রমাদ গণলাম। ভানুকাকা আজ  ইউনিভার্সিটির ক্লাস-রুম না ভেবে বসেন। এইসব ভদ্রমানুষজনেদের ‘বোর’ না করে ছাড়বেননা। এঁদের মনের মত করে, ভানুকাকা কি করে এমন এক বিষয়ে অরাজনৈতিক বক্তৃতা পরিবেশন করবেন? তা’ও আবার, সংক্ষেপে?
যথারীতি, বক্তৃতার শেষে, বাচ্চারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। বড়রা বেশির ভাগই মুখ নীচু। আর সভাপতি এবং তাঁর পাশে দাঁড়ানো কয়েকজনের শুধু নিদারুণ-কষ্টের-হাসিমুখ নিয়ে গদ্গদ ভানুকাকার দিকে তাকিয়ে। সভাপতির তোয়াক্কা না করেই, ঘোষকই – মাইকে মুখ লাগিয়ে ছোট্ট উচ্চারণ করলেন,-‘সভা শেষ’।
আমি এমন শ্রুতিধর নই যে ভানুকাকার দীর্ঘ বক্তৃতার সবটাই আপনাদের কাছে পরিবেশন করব সংক্ষিপ্ত-সারটাই আপনাদের জানালাম।
ভানুকাকা প্রথমে ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দটা নিয়েই পড়লেন। প্রজাতন্ত্র আবার কি? সাধারণতন্ত্র। শব্দটা রাষ্ট্রনৈতিক। সাধারনে যাকে বলে রাজনৈতিক। এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শব্দ। প্রজাতন্ত্র  বললেই তো রাজার কথা চলে আসে। ইংরাজি শব্দটা হ’ল – “রিপাবলিক”,- ‘হ্যোয়ার দেয়ার ইজ নো মনার্ক, এ্যান্ড সুপ্রিম পাওয়ার ইজ ভেস্টেড উইথ দ্য পিপল’। আমি মনে মনে বললাম কি সব্বোনাশ! এ তো মারাত্মক কথারে বাবা, চরম ক্ষমতা থাকবে দেশের মানুষের হাতে!
‘রাজা থাকবে না; চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকবে মানুষজনের হাতে’, ভানুকাকা বললেন। ‘অনেকে জিগাইবেন, হেইডা আবার ক্যামনতারা কথা? ক্ষ্যামতা তো হগলডিই – রাজার! জিগাইবেন,- তুই বইয়ের কথাগুলান এইরোম মাথায় ধইরা রাখোস ক্যান? মরবি, মরবি! এইয়াই হইতেছে দেশের একেবারে গোড়ার সমস্যা! বিচ্ছিন্নতাবাদ! বিদ্যা-বুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা পইড়া থাকে একদিকে। ব্যবহারিক আচার-আচরণ হাঁটে আর একদিকে! উচ্চারণ আর আচরণের এই বিচ্ছিন্নতাবাদ,- শুধু দেশে বা সমাজে নয়, পেশার ক্ষেত্রে – এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও নানান আপদের আমদানি করে।
খুব রেগে গেলে, ভানুকাকা মাতৃভাষা ছেড়ে, বেশীরভাগ সময়ে, ক্লাস-নেবার সময়কার শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করেন। ভানুকাকা বলে চলেন,-‘অধিকাংশ দেশেই সকল মানুষকে - স্বাধীনতার গ্যারান্টি দিতে রাজাকে খেদিয়ে দেওয়া হ’লে কি হবে? দেশের মানুষ সে স্বাধীনতা কাকে বলে শাসকরা তা বুঝতে দিতে চাইলেই তো? অল্প সংখ্যক সুবিধাভোগী যাঁরা শিক্ষার সুযোগ তথা সব ব্যাপারটা বোঝার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরাও নিজশ্রেণী স্বার্থ ব্জায় রাখতেইবুঝতে চাননা। বেদের আমলের ধ্যান-ধারনার অভ্যাসে, মগজে রাজশাসনও অবিকল ছাপ নিয়ে আছে। রাজা যায়। রাজার আমলের সংস্কৃতি অর্থাৎ - শুধু গান-বাজনা না,- ভাবনা-চিন্তা-আচরণ দিব্যি জাঁকিয়ে বসে আছে। রাজভক্তি আর মগজ থেকে যেতেই চায়না! এখনও বহু রাজাকেই ঠাকুর-দেবতা সাজিয়ে পূজা করে!  এমনকি, নিজের ছেলের নামও, পরম স্নেহে রাখেন – ‘রাজা’! তো, এহেন মানুষদের কি করে বোঝান যাবে গণতন্ত্রের রূপে সব মানুষের স্বাধীনতা? ‘সাধারণতন্ত্র-দিবস’-কে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ বললে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়? সাধারন মানুষ তো প্রশ্ন করতেই পারে। মুশকিল হচ্ছে,- আমার ভ্রাতুষ্পুত্র, (আমি স্বগতোক্তি করি, মরেছে, বক্তৃতাতেও আবার আমাকেই আক্রমণ!) হে-তো হ্যাডমাষ্টার, হ্যাও বাদ যাননা। এ-গো বোঝানো রীতিমত মুশকিল যে, উচ্চারিত শব্দগুলো আসলে,- একজনের চিন্তার – অর্থাৎ - মগজের ‘হার্ড-ডিস্কে’,- আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের পেয়াদাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব-পরিবেশের দ্বারা  আগের থেকেই ‘প্রোগ্রাম’ করা চিন্তার প্রকাশ মাত্র।  ‘প্রজাতন্ত্র’ কথাটার মধ্যে ‘প্রজা’ শব্দটাই - মনের গোপন কোনে – অবচেতন মনে - চাগিয়ে তুলবে ‘রাজা’-সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণাগুলো। আমার ভ্রাতুষ্পুত্র ক’ন,- এদেশে গণতন্ত্র অনেকখানি বিকাশ লাভ করিয়াছে। কোন পর্যন্ত? ভোটদান পর্যন্ত? ভোটদানের পিছনে, বিচার-বুদ্ধির বিস্তার কতদূর? যাকে ক্ষমতা দিলাম, তিনি বা তার দল গণতন্ত্রের পক্ষে, অর্থাৎ - বেশীরভাগ মানুষের পক্ষে কাজ করেন কিনা, তার দৈনন্দিন খবর  নেবার সময় খরচ করতে আমরা রাজী থাকিতো? এই রকম খবর রাইখা ভোট দেওয়া মানেই যে এই রকম - চূড়ান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ,- এইডা যদ্দিন না বুঝতাছেন, যদ্দিন এই দায়িত্ব বুঝিয়া না লইতেছেন- তদ্দিন গণতন্ত্র ঠিক মতো মগজে জায়গা পাইবনা। গণতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণাগুলান – পোলাপানের মতো ইমম্যাচিওরই থাকবো। এ সম্পর্কিত সম্পূর্ণ ধারণা মগজে জায়গা  না পাইলে কি হয়?’ প্রশ্নটা তুলে, জবাব দিলেন ভানুকাকা নিজেই।
‘মগজে ভরা রাজা।- রাজার আমলের ধারণায়, জান-মালের সব দায়িত্ব রাজার। এদিকে রাজা তো খুঁইজা পাইতেছেন না। কি করা যায়? নিজেদের হাতে দায়িত্ব নেবার জন্য মগজ তৈরী হয় নাই। কারে দায়িত্ব দেওয়া যায়? ক্যান? একজন – অমুক-বাবা, অমুক-মা, কি একজন দাদা-দিদি হইলেই চলে। অতএব, কলৌ নামৈব কেবলম! কলি কালে নামই শ্রেষ্ঠ,নাম করলেই চলব। মন্ত্র-তন্ত্র, ধ্যান-জ্ঞান, পূজা-পদ্ধতি,- কিছুই জানার দরকার নাই। শুধু নাম করলেই চলব। এইয়ার চাইয়া সুবিধাজনক আর কি হইতে পারে! ব্যক্তিগত জীবনের এই আধ্যাত্মিক-ভক্তিবাদ যদি রাজনীতিতে আমদানি করি , তা’ হইলে তা’ হইবে আধ্যাত্মিক্তার ক্যারিকেচার। এই ক্যারিকেচারের পাপেই কপাল ভাঙ্গবে।
তখন আর,- পোলাটা ক্যান চাকরি পায়না, লাখের বেশি টাকা খরচ করিয়া যে পোলাটারে কম্প্যূটার-ইঞ্জিনিয়ার বানাইলাম – তারে ক্যান ভূতের মতন খাটাইয়া – একজন রাজমিস্ত্রির মজুরি দিতেও মালিক রাজি হয়না, ক্যান খাদ্যের-ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে, দ্যাশের কারখানা বন্ধ হয়, আর বিদেশের ছাপমারা জিনিষে বাজার ছাইয়া থাকে,- এই স ক ল প্রশ্নের জবাব পাউবেন না!
অন্যদিকে,- অহন আবার, রাষ্ট্র-বিজ্ঞানে পড়া শব্দগুলার মানেটাই বদলাইবার আমল চলতাছে।  পৃথিবীর নানান দ্যাশে গণতন্ত্র আছে কিনা পরীক্ষা নেওয়ার এক স্ব-ঘোষিত মুরুব্বি জুটছে। তার কাছে, দ্যাশে দ্যাশে গণতন্ত্রের বেদী স্থাপনের মানে হইল গিয়া, সে দ্যাশটাতে দাঙ্গা লাগাইয়া, একটা হট্টচট্ট পাকাইয়া, নির্বাচনে রিগিং কইরা, নিজেগো দালাল বসানোর ঠিকা নিছে; যাতে সে মুরুব্বি তাদের সুবিধা মত, সে দ্যাশটারে পরাণ-ভইরা লুঠ করতে পারে। ইরাক থিকা ইউক্রেন – একই জিনিষ দ্যাখতেপাইবেন! আবার, ‘এম্পায়ার’ শব্দটারও, নতুন অর্থ আমাগো শিখানোর লাইগা, একদল বুদ্ধিজীবীরে কামে লাগাইছে। আর, এই পোড়া বাংলায় তো, হ্যাগো মাইষে আমাগো শিখাইবার জন্য উইঠা-পইড়া লাগছে, যাতে দলতন্ত্রের হিটলারী-পণারেই  আমরা গণতন্ত্র বলিয়াই মানিয়া লই’।      
 ভাক্তি যোগ্যরে ভক্তি করা খারাপ না। ঐটা দরকার। তবে, এইখানে, আমগো সকলেরই প্রণম্য, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের একখান কথা আপনেগো মনে করাইয়া দিতে চাই। শাস্ত্রী মশয় কইছেন,- “ভক্তিবাদ গাঢ় হইয়া একবার মস্তকে প্রবেশ করিলে লোকের বুদ্ধিখানি উচ্চতর সমালোচনায় কিরূপ অপারগ হয় তাহা আমরা প্রত্যহ দেখিতে পাইতেছি”। আইজও কি আমরা দেখিনা? আমরা নিজেরাই কি ‘গাঢ ভক্তিবাদে আক্রান্ত না? সন্দেহ নাই , এয়াতে সুবিধার অন্ত নাই। পড়া-জানা-বোঝা ,- কিছুরই দরকার নাই; ঐ যে আগেই কইছি,- মন্ত্র-তন্ত্র-ধ্যানজ্ঞানের দরকার নাই!
সুবিধা, সুবিধা, সুবিধা। অতএব, এই সুবিধাবাদেই আমরা গা ভাসাইলাম। এয়াতে আর যাই হউক।‘প্রজাতন্ত্র’ সফল হইতে পারেনা। বুদ্ধি,- কারো কম কি বেশী থাহেনা। যে যতটা কাজে লাগায়, তারে তত বুদ্ধিমান কয়। আমার ফার্ভেন্ট আপীল,- বুদ্ধি কামে লাগাইয়া, ওই চূড়ান্ত, ক্ষমতা,- এই সবের দায়িত্বটা একটু বুঝিয়া ল’ন। প্রজাতন্ত্ররে সফল করেন।
‘শেষ প্রশ্ন”। না, ভয় পাইয়েন না, আমার না,- “অমর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের”। [মাইক থেকে মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে নীচু স্বরে বললেন, ‘শরৎচন্দ্র কি ল্যাখছেন শোন, একটু মেমরাইজ করিস’।]
শরৎচন্দ্র লিখছেন,- ‘মানুষে অনেক ভুল, অনেক ফাঁকি নিজের চারপাশে জমা করে স্বেচ্ছায় কানা হয়ে গেছে। আজও তাকে বহু যুগ যুগ ধরে অনেক অজানা সত্য আবিষ্কার করতে হবে, তবে যদি একদিন সে মানুষ হয়ে উঠতে পারে’।
এইখানে উপস্থিত সকলেই আপনেরা সম্মানিত মানুষ, শ্রদ্ধেয় মানুষ; আপনেগো কওয়ার অধিকারি বলিয়া – আমি নিজেরে মনে করিনা। কিন্তু, আমার ভ্রাতুষ্পুত্র,- তিনিও একজন সম্মানিত। প্রধান শিক্ষক। কিন্তু, পরিবারে - আমি তার গুরুজন। - পুরানা সমাজের সেই হিসাবের সূত্রে তারেই কই যে, তুই দেবানন্দপুরের কুলাঙ্গার! দেবানন্দপুরের মানুষ হইয়া শরৎচন্দ্ররে পড়স না, জানস না, চিনস না?  নিজের চৌদিকে ‘ফাঁকি’ জমাইয়া ‘কানা’ হইয়া থাকবি?    
কয়েক সেকেন্ডের ‘পজ’ দিয়ে ভানুকাকা মন্ত্রের মতন করে উচ্চারণ  করলেন,- ‘সকলকে প্রণাম।’    
সভা শেষে, বাড়ী আসা পর্যন্ত গোটা রাস্তাটাই ভানুকাকা নিঃশব্দে এলেন। ভাবলাম, যাক বাবা, নিজের জমে থাকা কথাগুলো বলতে পেরে, ভানুকাকা নিশ্চয়ই ঠান্ডা হয়েছেন। আমার ফাঁড়া কাটল!
বাড়ীতে ঢুকতে না ঢুকতেই হাঁক দিলেন,-‘বৌঠান! অর কাকিরে ক’ন তো, আমার ল্যাখার নূতন খাতাটা লইয়া আসতে!’
কাকীমা নয় , গোলমাল আন্দাজ করে বোধ হয়, – আমার মাতা ঠাকুরাণীই স্বয়ং ফাইলটা নিয়ে এলেন। তা’ থেকে আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে, বললেন, ‘গাধা, পড়’!
এ কি! এ যে রবিঠাকুরের একগাদা উদ্ধৃতি। ‘বাতায়নিকের পত্র’। .মাথাটা ঘুলিয়ে গেল,- দেশ, সাধারণতন্ত্র, সার্ব্বভৌমত্ব, শরৎচন্দ্র,- শেষে – রবীন্দ্রনাথ! ওফ!
  “৫ই জৈষ্ঠ, ১৩২৬” (ইং ১৯১৯) “জাহাজের খোলের ভিতরটায় যখন জল বোঝাই হয়েছে – তখনি জাহাজের বাইরের জলের মার সাঙ্ঘাতিক  হয়ে ওঠে। ভিতরকার জলটা তেমন দৃশ্যমান নয়, তার চাল-চলন তেমন প্রচন্ড নয়, সে মারে ভারের দ্বারা, আঘাতের দ্বারা নয়, এই জন্যে বাইরের ঢেউয়ের চড়-চাপড়ের উপরই দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে; কিন্তু হয় মরতে হবে, নয় একদিন এই সুবুদ্ধি মাথায় আসবে যে আসল মরণ ঐ ভিতরকার জলের মধ্যে, ওটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেঁচে ফেলতে হবে। ..... এ কথা মনে রাখতে হবে, বাইরের বাধা-বিঘ্ন বিরুদ্ধতা চিরদিনই থাকবে,  থাকলে ভাল বৈ মন্দ নয় – কিন্তু অন্তরে বাধা থাকলেই বাইরের বাধা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এই জন্য ভিক্ষার দিকে না তাকিয়ে সাধনার দিকে তাকাতে হবে, তাতে অপমানও যাবে, ফলও পাব”।
পড়া শেষে,চোখ তুলতেই, বললেন, ‘সেই বাংলা ১৩২৬ সনে, মানে আজ থিকা চৌরানব্বই বছর আগে, ত’গো শুদ্ধিকরণের লইগগা ঋষি-কবি লেইখখা গ্যাসেন! রবি ঠাকুররে ত’রা চিনস?’
    -----------
                                                            ৪ঠা আগস্ট, ২০১৩।


সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

অঙ্ক ও তার উত্তর ~ সুমন্ত্র মাইতি

অঙ্ক আমার কোনদিনই পছন্দের বিষয় নয় ৷ অথচ দুর্ভাগ্য এই যে খাতায় অঙ্কের হিসেবগুলো ঠিক মিলে যেত এবং পরীক্ষা নামক মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কখনই আমাকে "অঙ্কে কাঁচা" বলে অভিহিত করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে নি ৷

আমার পছন্দের বিষয় ছিল সাহিত্য, কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্তীয় শিক্ষামনস্কতায় সেই ছেলেকে তখনই সাহিত্য নিয়ে পড়তে অনুমতি দেওয়া হয় যখন প্রমানিত হয় যে তার দ্বারা অঙ্ক বিষয়টি করায়ত্ত করা অসম্ভব এবং যতক্ষণ না পরীক্ষার নম্বর সেই ধারনায় সরকারী সিলমোহর বসাচ্ছে ৷ কতজনকে বলতে শুনেছি, "ছেলেটা না অঙ্কে কাঁচা, তাই ওকে আর্টসেই দিলাম বুঝলি?" কিম্বা "ওরে বাবা, ওসব অঙ্ক টঙ্ক আমার দ্বারা হবে না, আমার বাবা আর্টসই ভালো" ৷ অবশ্য শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কচকচানি করতে বসি নি , ওসব নিয়ে অনেক নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়ে গেছে, অনেক গুরুগম্ভীর সেমিনার আয়োজিত হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি ৷ আমি অঙ্ক নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলব ৷

পরমেশ্বরণ নামে এক দক্ষিন ভারতীয় ভদ্রলোক আমাদের অঙ্ক পড়াতেন, আড়ালে আমরা তাকে বাঘ বলে ডাকতাম ৷ ভদ্রলোক এককালে সৈন্যবাহিনীতে ছিলেন, মেজাজটা ছিল একবারে মিলিটারীয় এবং ক্লাসে ছিলেন সাক্ষাত যম ৷ আমার অবশ্য কোনদিনই পরমেশ্বরণকে পছন্দ ছিল না, কারণ বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের সাথে ঐরকম ব্যাঘ্রসুলভ আচরণে কি বাহাদুরি ছিল আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি না ৷ যাইহোক, পরমেশ্বরনের অঙ্ক শেখানোর মন্ত্র ছিল নিয়মানুবর্তিতা এবং নিয়মানুবর্তিতা ৷ আমরা তখন অঙ্ক কষতাম চৌকো খোপের সেইসব খাতায়, একেকটা খোপে একেকটা সংখ্যা নিয়ে কারবার , তারপর তাকে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করে অবশেষে সেই কাঙ্খিত ম্যাজিক সংখ্যায় পৌছনো, যেটাকে বলা হত রেজাল্ট ৷ মাঝপথে কোনো ভুল হলে একটা সংখ্যায় পৌছনো যেত বটে, তবে তা কাঙ্খিত রেজাল্ট নয়, অতএব ভুল ৷ অবশ্য অঙ্কের এটাই নিয়ম, একই অঙ্কের কখনো দুটো উত্তর হতে পারে না ৷ পরমেশ্বরণ এই নিয়মের ব্যতিক্রম নন, তার কঠোর নির্দেশ ছিল পরীক্ষার খাতা যেন ঝকঝকে হয়, প্রত্যেকটা সংখ্যা এবং চিহ্ন যেন নির্দিষ্ট প্যাটার্ন ফলো করে, এর অন্যথা হলে ঠিক উত্তরেও নম্বর কাটা যাবে ৷ এবং এতসব পরেও যদি উত্তরটা শেষ লগ্নে গিয়ে ভুল হয়, তাহলে নম্বরের খোপে বসবে এক শুন্য ৷

স্যার রয় ছিলেন আমাদের অঙ্কের রবীন্দ্রনাথ ৷ "সায়েন্সের ছেলে" হবার দরুন বহুদিন অঙ্ক নিয়ে নাড়াঘাটা করতে হয়েছে, অনেকের ক্লাস করেছি, সবার প্রতি যথার্থ সন্মান রেখেই বলছি, ওনার কাছে যদি আরো কিছুদিন নাড়া বাঁধার সুযোগ হত, বিষয়টাকে হয়ত আরেকটু বেশি ভালবাসতে পারতাম ৷ স্যার রয়ের কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের বিষয়ে ছুতমার্গ নেই , অঙ্কের নিয়ম মেনে উত্তরে পৌছতে পারলেই তিনি খুশি ৷ তদুপরি নিয়ম মেনেও যদি শেষবেলায় সামান্য হিসেবের ভুলে উত্তরটা বেঠিক হয়, তিনি সেই ভুলটা লালকালি দিয়ে সংশোধন করে পুরো নম্বর বসাতেও দ্বিধাবোধ করেন নি ৷

বহুদিন পর জীবনের খাতায় কিছু অঙ্কের হিসেব মেলাতে গিয়ে কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে ৷ কোনটা আসল, উত্তরটা পৌছনোর পথ, নাকি উত্তরটা? শেষ লগ্নে যদি সামান্য হিসেবের ভুলে উত্তরটা ভুল হয়ে যায়, তাহলে নম্বর কত পাব স্যার ? ফুল মার্কস, নাকি শুন্য ?

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৩

বাউল ~ অমিতাভ প্রামাণিক

গিন্নী বলল, 'এই যে শুনছো,
পঞ্চাশ টাকা চাউল'!
আমি তারে বলি, 'আমার কী তাতে,
আমি ঘরছাড়া বাউল'।
পেছন ছাড়ে না, আবার বলল,
'পঞ্চাশ টাকা আটা' –
আমি বলি, 'আঃ, শুনে করবো কী,
ফালতু এ কাদা ঘাঁটা'।
বলেই চলল, 'ষাট-আশি করে
একেকটা সব সবজি' –
বাঁহাতে আমার একতারা, লাল
সুতো বাঁধা সেই কবজি।
'চিকেনের দাম শুনলে তোমার
চমকিয়ে যাবে পিলে' -
'ভোলামন' বলে গান ধরি আমি,
শুনতে চাই না রিলে।
'দু হাজার টাকা ইলিশ, এখন
ডিমটা হচ্ছে ভাজা' –
'কই দেখি দেখি', ঘরে ফিরে আসি,
সোজা কি বাউল সাজা!

৩রা অগাস্ট, ২০১৩

আজ আমার তোতলা দাদার গপ্পো ~ সুমন্ত্র মাইতি

দাদা মানে জেঠতুত দাদা,আমার চেয়ে বছর ছয়েকের বড় ৷ আমার বাবারা দুই ভাই, আমরা দুজন তেনাদের বংশের প্রদীপ ৷ আমি জন্মানোর পরে মা ভালো নাম রেখেছিলেন সাগ্নিক, ডাকনাম মুকুল ৷ আমাদের যৌথ পরিবার, জেঠু বড়কর্তা ৷ তার ওপর বাবা একখানি গর্হিত কাজ ততদিনে করে বসেছেন , সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মা কে বিয়ে করে ৷ তাই আমার নামকরণ যখন জেঠুর মন:পূত হলো না, বাবা তখন পুরো সিন থেকে হাপিস ৷
" এ কি বৌমা ? দুই ভাইয়ের মিলিয়ে নাম রাখতে হবে তো ৷ এটাই তো এই বংশের নিয়ম ৷ "
অগত্যা মায়ের দেওয়া নাম নাকচ , আমার নাম হলো রিন্টুর সাথে মিলিয়ে টিন্টু আর সৌমিত্রের সাথে সুমন্ত্র ৷
মজার কথা এর পরে আমাদের বংশের প্রায় সবার নাম মা রেখেছিলেন ৷ পিসতুতো ভাই বোনেরা, মামাত ভাই , দাদার বড় মেয়ে এবং সবশেষে আমার ছেলে , সবার নাম মা রেখেছেন ৷ ছেলের ডাকনাম অবশ্য আমি রেখেছি ৷ জিষ্ণু ৷ কলেজে পড়ার সময় এই নামটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল , ছেলে হলে এই নামই রাখব ৷ আরেকটা সাধ ছিল , মেয়ে হলে নাম রাখতাম লাইজু ৷ এ জন্মে আর সে সাধ পূরণ হলো না ৷

যাইহোক, নামকরণের ইতিহাস এবং সার্থকতার আলোচনা থাক ৷ যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম , দাদার তোতলামীর গপ্পো ৷

আমাদের গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তির পরিমান বেশ ভালই ৷ বাস্তু ভিটে,পুকুর, ধানি জমি, বাগান বাড়ি , প্রায় খান শয়েক নারকেল গাছ, দেবোত্তর মন্দির ,মন্দিরের পাশেই বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য ছোটমত রিসেপশন হল -সব যোগ করলে আয় মন্দ নয় ৷ দাদা কলকাতায় পড়াশুনো শেষ করার পর জেঠু আদেশ দিলেন গ্রামে ফিরে আসার ৷ পারিবারিক সম্পত্তির দেখাশুনোর সাথে বাবা এবং জেঠু ঠিক করলেন দাদাকে ব্যবসায় নামাতে হবে ৷ কি ব্যবসা ? চিংড়ি মাছের ভেরির ৷

দাদা তখন নব্য যুবক, কলকাতার আধুনিকতা গায়ে লেগেছে, তার ইচ্ছে কলকাতায় থেকে চাকরির চেষ্টা করবে ৷ কিন্তু দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাপের সামনে মুখ খোলার সাহস নেই ৷ তাই অনিচ্ছাসত্বেও ব্যবসায় মনোনিবেশ করলো ৷ গোল বাঁধলো যখন তার কিয়ত্কাল পরে জেঠু নিদান দিলেন বিয়ের পিড়িতে বসার ৷ দাদা পুরোপুরি বেঁকে বসলো ৷ বিয়ে সে কিছুতেই করবে না এত কম বয়সে ৷ এমন নয় যে সে কাউকে কথা দিয়ে এসেছে , তবু সে বিয়ে করবে না ৷ জেঠু অনড়, মেয়ের বাড়িতে তিনি ততদিনে মেয়ে দেখে এসেছেন , প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে এসেছেন, এখন দাদা বেঁকে বসলে ঘোর প্রেস্টিজ ইসু ৷ অগত্যা মাঠে নামলেন মা ও জেঠিমা , দাদাকে রাজি করলেন , " অন্তত একবার যা, মেয়ে দেখে আয় ৷ " গোঁজ হয়ে দাদা রাজি হলো ৷
বিজয়া দশমীর পরের দিন মেয়ে দেখতে যাওয়ার দিন ঠিক হলো ৷ দাদা, সাথে আমি আর আমার জেঠতুত দিদির বর ৷ গাড়িতে উঠেই দাদা গজগজ আরম্ভ করেছে, সাথে যোগ হলো তোতলামো ৷ (উত্তেজিত হয়ে পড়লেই দাদা তোতলায় ৷ )
" আমার প-প্রবলেম টা কেউ ব-বুঝছে না ৷ আমি এখন বিয়ে ক-করব না ৷ " এই বলে চলেছে সমানে ৷ মাঝরাস্তায় যখন গাড়ি থামল চা সিগারেটের জন্য, আমি আর জামাইবাবু আলাদা করে ডেকে বললাম , " শোন দাদা , জেঠুর সাথে বাওয়াল নিয়ে লাভ নেই , এঁড়ে পাবলিক ৷ কায়দা করে সামলা ৷ আমরা যাব, মেয়ে দেখব আর ফিরে এসে বলবি মেয়ে পছন্দ হয় নি ৷ ব্যাস , খেল খতম ৷"

বুদ্ধিটা সবার মনে ধরল ৷

আমরা মেয়ের বাড়িতে বেশ খাতির যত্ন পেলাম ৷ কিন্তু আমার মনে সর্বদা একটা খচ খচ করতে লাগলো , তোতলাবে না তো ? তাহলে আর ফিরে গিয়ে নাকচ করার ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাবতে হবে ৷ দাদা কিন্তু না তুতলিয়ে সপ্রতিভ ভাবে কথা বলে চলল ৷
যথাসম্ভব বিনয়ী হয়ে আমরা বিদায় গ্রহণ করলাম ৷ গাড়ি ছুটছে বাড়ির পথে , পেছনের সিটে আমি আর জামাইবাবু, সামনের সিটে দাদা ৷
জামাইবাবু গলাখাঁকারি দিয়ে বলে , "তা হলে বাড়ি গিয়ে ওই কথাটাই হবে ? "
দাদার দৃষ্টি সামনের কাঁচে , খানিক চুপ থেকে বলে , "অপ-পছন্দের তো ক-ক-কোনো কারণ দেখলাম না ৷ "

আগেই বলেছি, উত্তেজিত হলেই দাদা তোতলায় ৷