মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬
মমতাহীন ~ অনামিকা মিত্র
রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬
দাঙ্গা ~ কৌস্তভ কুন্ডু
মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬
নাটক : কল্লোল : (পঞ্চাশ বছর পেরোচ্ছে)
শার্দুল সিং বলে কেউ ছিল না! খাইবার বলে কোনো জাহাজ ছিল না! উৎপল দত্ত ইতিহাস জানেন না। কংগ্রেস কখনো নৌ বিদ্রোহকে স্যাবোতাজ করেনি।* *এই নাটকটা যে চলছে এটা বাংলার পক্ষে লজ্জার। বন্ধ করে দেওয়া হোক। এই সব ছিল নাট্যসমালোচনা, তথাকথিত বড় পত্র-পত্রিকায়।* *শেষে যখন এতেও কাজ হল না,তখন একে একে স্টেট্সম্যান ছাড়া সব পত্রিকা বলল বিজ্ঞাপন নেব না নাটকের।
একদম হিংস্র হয়ে এক পত্রিকা বলল, সব পত্রিকা সব নাটকের বিজ্ঞাপন নেয় না।পাল্টা এল তাপস সেন-এর মাথায়।এল টি জি জানাল, সব নাটক সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় না। আর তাপস সেন রাতারাতি পোস্টারের বয়ান বানালেন, 'কল্লোল চলছে, চলবে।' ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী, ছাত্র-যুব, অন্যান্য নাট্য সংগঠনের জোটের কর্মীদের হাতে হাতে, তারপর দর্শকের হাতে হাতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেল সেই পোস্টার।
এর আগে 'অঙ্গার' আক্রান্ত হয়েছিল মিনার্ভায়। কংগ্রেসী গুন্ডা নেপাল রায়ের নেতৃত্বে কাঁচ ভেঙে 'দেশদ্রোহী' (মানে কং সরকার বিরোধী/ বুর্জোয়া খনি মালিক বিরোধী বলে) নাটককে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে মিনার্ভার পাহারায় থাকত ছাত্র-যুব-শ্রমিকের দল। 'কল্লোল'-এ তাই সুবিধে হল না ও ভাবে গুন্ডামির। ফোন করে ভয় দেখিয়ে, রাস্তায় হেনস্থা করে, জোছন দস্তিদারকে সমর্থনের জন্য মেরে, উৎপল দত্তকে একটি প্রবন্ধের জন্য দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার করে 'কল্লোল'-র শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়ার অবিরাম চেষ্টা চলল। শার্দুল সিং চরিত্রাভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায়কে বারেবারে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টাও ছিল।
বলরাজ সাহানির মত প্রবীণ আই পি টি এ কর্মী (একদার) অন্য কিছু না পেয়ে নাটকের সঙ্গীতে কেন রাশ্যান, জার্মান নৌ বিদ্রোহের সুর ও গান ব্যবহার হয়েছে তাই নিয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে ঠুকলেন। তাঁর সাম্প্রতিক জাতীয়তাবাদ উথলে উঠে বলছিল দেশীয় নাটকে দেশীয় সুরই থাকতে হবে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ইন্টারন্যাশনালের জন্ম মনে করিয়ে দিতেই চাপ হয়ে গেল। কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙনের আভ্যন্তরীণ বিতর্কের অংশ এ সব।
সত্যজিৎ-মৃণাল থেকে অজিতেশরা সকলে পথে নামলেন উৎপল দত্ত-র মুক্তির দাবীতে। সারা ভারত থেকে প্রতিবাদ এল। এল বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। অনেকেই 'কল্লোল'-এর রাজনীতির সঙ্গে সহমত না। কিন্তু শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন।* *কলকাতারই আরেক প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব একবারের জন্যও ভাঙলেন না তাঁর হিরণ্ময় নীরবতা। প্রতিবাদ করলেন না।
তবু সেদিনকার কং সরকার গণ আন্দোলনের চাপে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন একসময় উৎপল দত্ত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের। উৎপল দত্ত যখন জেলে তখনও 'কল্লোল' চলেছে। অভিনেতারা যাবতীয় ভয় তুচ্ছ করে কাজ করেছেন। এবং তাঁদের পাহারা দিয়েছে শ্রমিক-ছাত্র-জনতা ঐক্য।
ঠিক এইখানে জনতার শিল্প এবং কম্যুনিস্ট পার্টির সম্পর্ক যেমন করে ফুটে উঠেছিল তা আর কখনো ফুটে ওঠেনি। 'কল্লোল'-এর প্রযোজনা নিয়ে আজ আর লেখার ইচ্ছে নেই। শুধু বলার কথা যে এমন এক ঐতিহাসিক প্রযোজনার পঞ্চাশ বছর কেমন নিঃশব্দেই প্রায় চলে যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো সব বদলে গেছে বলে? 'কল্লোল'-এর শেষ দৃশ্যে নাবিকেরা, স্বাধীনতার সশস্ত্র যোদ্ধা পরাজিত নাবিকেরা ক্ষত বিক্ষত দেহ-মন নিয়েও বলতে বলতে যেতেন 'নো সারেন্ডার নো সারেন্ডার'। বাতাসের কানে কি আজ কেউ সেই কথা বলে আর?
শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
হাম্বা ~ সুশোভন পাত্র
শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬
পেক্ষাগৃহে জাতীয় সংগীত ~ সরসিজ দাশগুপ্ত
সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬
যা জানলাম ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য
1. ফিদেল কাস্ত্রোর কয়েক হাজার শয্যাসঙ্গিনী ছিল এবং উনাদের সাথেই তিনি দিন রাত্রি সারাজীবন অতিবাহিত করিতেন।উনার জাঙিয়ার রঙ ছিল লাল।
2. ফিদেল কাস্ত্রো আমেরিকার সৃষ্টি ও ভয়ঙ্কর অত্যাচারী শাসক ছিলেন।
3. ফিদেল কাস্ত্রো যে বেঁচে ছিলেন তা উনার মৃত্যুতে অনেকে জানলেন।(অনেকটা সেই কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল যে সে মরে নাই এর মত)।
4. লেনিন, স্তালিন, মাও, হো চি মিন,কাস্ত্রো,চে, জ্যোতি বসু,বুদ্ধবাবু,নামুদ্রিপাদ, হরকিশেন সিং, কারাত, ইয়েচুরি, মানিক সরকার ইত্যাদি বড় ছোট যাবতীয় কম্যুনিস্ট নেতা, মন্ত্রীরা শয়তান, মানে ভয়ঙ্কর শয়তান, এরা লুম্পেন,মুস্লিম শাসকদের মত অত্যাচারী,নারীলোলুপ।আর নাটের গুরু ছিলেন মার্ক্স, এঙ্গেলস কারন এদের উস্কানিতে দাস ক্যাপিটাল লেখা হয়েছিল যা কিনা বাইবেলের পর পৃথিবীর সর্বাধিক বিক্রীত( বিকৃত ও হতে পারে) পুস্তক।
5. চার নম্বরে উল্লেখিত লোকজন ছাড়া পৃথিবীর আর সব শাসকই কমবেশি ভাল, চরিত্রের দোষ নেই,বিড়ি সিগারেট,মদ টদ খান না( মুসলিম দেশগুলো এই তুলনা থেকে বাদ)।
6. মহা হারামি দেশ হল চিন কারন কম্যুনিস্ট,কিন্তু এক্ষুনি কিছু করার নেই এরা যা সস্তায় মাল দেয় তাই সরকারি অনেক কিছুর বরাত ওদের বস্তায় চলে যায়।
7. গণসংগীত পৃথিবীর সবচেয়ে অখাদ্য গান।এতে কোন সুর টুর নেই,ঘুরে ফিরে লাল সেলাম,লাল সেলাম বলে।
8. হিটলার সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় তা অতিরঞ্জিত। তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ আর্য ও স্তালিনের থেকে কম মানুষ মেরেছিলেন।
9. আমেরিকা একটি গনতান্ত্রিক দেশ, সেদেশে জনগনের কথা দেশের নেতারা শোনে, জনতা যদি যুদ্ধ বা বোম ফেলতে বারন করে তাই শোনে,ওদেশের যতজন প্রেসিডেন্ট আজ অব্দি এসছেন সবাই ভাল,আর ট্রাম্প তো একটু বেশিই ভাল।
10. আর প্রধানমন্ত্রী যদি বল এ বিশ্বে, এ গ্যালাক্সির,বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে সাহসী, সবচেয়ে দূরদর্শী, সবচেয়ে ডাইনামিক হলেন মোদীজি।
11. গোবর মাখলে মোবাইলের ভয়ঙ্কর আলফা, বিটা, গামা তেজস্ক্রিয় বিকিরন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
12. প্লাস্টিক মানি চালু করে অবিলম্বে এই নোট সমস্যার আশু সমাধান করা উচিত।( এই আশু আমি নই, এই অর্থ শীঘ্র, এই শীঘ্র আবার পতন নয়)।
এরকমই বিভিন্ন জ্ঞানে রোজই নিজে সমৃদ্ধ হচ্ছি।ভাবছি একটা সঙ্কলন বানালে( এ আবার সেই রসেবশের সংকলন দা নয়) দেশের মূর্খ মানুষের অনেক সুবিধে হয়।
শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬
কালো টাকা ~ সুশোভন পাত্র
-কিতনে আদমি থে?
প্রশ্নটা আর গব্বর সিং'র ডেরায় রামগড়ে তোলা তুলতে ব্যর্থ চামচা'দের ইন্টারোগেশনে সীমাবদ্ধ নয়। প্রশ্নটা এখন নিকটবর্তী ব্যাঙ্কের সারিবদ্ধ সর্পিল লাইনের দৈর্ঘ্যের। প্রশ্নটা আম জনতার ধৈর্যের। অভ্যাস বশত গব্বর সিং আজও জিজ্ঞেস করেন "আরে ওহ সাম্বা, কিতনে ইনাম রাখে হে রে সরকার হাম পর।" কিন্তু 'পচাশ' তো দূর, সাম্বা আজকাল 'উইকলি লিমিট' হাজার চব্বিশের চার আনাও বাড়িয়ে বলতে সাহস করে না। আসলে সাম্বা বিলক্ষণ জানে, "ইহাসে পচাশ পচাশ কোশ দূর গাঁও মে, যব বাচ্চা রাত কো রোতা হ্যা" তখন মা'রা আর ঘুণাক্ষরেও বলে না "বেটা শো জা নেহি তো গব্বর আ জায়েগা।" বরং বলে "বেটা শো জা, আর নেহি তো কালকের জন্য ব্যাঙ্কের লাইনে গিয়ে দাঁড়াবি যা।" শুনে বাচ্চা তো বটেই, বাচ্চার বাবা'রাও নাকি আজকাল ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর খোয়াবনামা কালো টাকা উদ্ধার করবেন। জাল নোটের কারবারে লাগাম টানবেন। তাই নাটকীয় ঘোষণায় প্রটোকলের ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ফুটেজের ঘাস খেলেন। দু'দিনে মুশকিল আসানের আশ্বাস দিয়ে জাপান গেলেন। আর ফিরে এসে গোয়া'তে পঞ্চাশ দিনের অপেক্ষার 'মাস্টারস্ট্রোক' দিলেন। ভক্তরা খুশি। হবু ভক্তরা আরও খুশি। আর পানাম পেপার্সের দুর্নীতি তে নাম জড়িয়ে যাওয়া বলিউডের অতি ভক্তরা আরও আরও খুশি।
দেশ সুদ্ধু মানুষ সকালে ব্যাঙ্ক খোলার অপেক্ষা করছেন। কাজ ফেলে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। সামনের ভদ্রলোকের কনুইয়ের গোঁতা খাচ্ছেন। 'বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনীর' জান কবুল মান কবুল লড়াই লড়ছেন। আর বিকেল তিনটের সময় কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারছেন -ক্যাশ শেষ। আপনার রক্ত-ঘাম। আপনার অ্যাকাউন্ট। আপনারই অর্জিত টাকা। অথচ দিনের শেষে আপনারই পকেটটা ফাঁকা। কি ভাবছেন, সরকারের হাত শক্ত করে কালো টাকা উদ্ধারের বলশেভিক বিপ্লব করছেন? জাল নোট কারবার বন্ধ করতে অগ্নিযুদ্ধে নেমেছেন? উইথ অল ডিউ রেসপেক্ট স্যার, আপনার সে গুড়ে কিন্তু বেজায় বালি।
২০১২'তে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সের চেয়ারম্যান'র নেতৃত্বাধীন উচ্চপদস্থ অফিসার'দের কমিটি 'ভারত ও বিদেশী কালো টাকা মোকাবিলার পথ' রিপোর্টে, অর্থমন্ত্রক কে জানায়, "৫০০ এবং ১০০০'র নোট বাতিল কালো টাকা মোকাবিলার কোনও পথই নয়। কালো টাকার বেশির ভাগটাই আজ বদলে ফেলা হয়েছে সম্পত্তিতে। তাছাড়া নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ব্যাপক খরচা সাপেক্ষ, ব্যাঙ্ক পরিষেবার পক্ষে ক্ষতিকারক। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও শ্রমিক-কর্মচারী'দের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রেও প্রভূত অসুবিধাজনক।"¹ এই রিপোর্টের সামঞ্জস্যেই আয়কর দপ্তরের তথ্যানুসারে গত আর্থিক বছরেও 'লিকুইড ক্যাশে' কালো টাকার পরিমাণ ৬%। ² আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে অনুযায়ী দেশে সার্কুলেটেড নোটে জাল নোটের পরিমাণ বর্তমানে .০০০০০৭%। ³ তাই ডিয়ার দাদা এবং বৌদি... সিটব্যাক অ্যান্ড রিল্যাক্স। অযথা ভাবাবেগে ভাসবেন না। বাস্তবের মাটিতে পা রাখুন। দেশে কালো টাকা উদ্ধার হবে, জাল নোটের কারবার বন্ধ হবে -বেশ তো। কিন্তু পরিকাঠামোগত পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে ভোগান্তিটা যখন আপনারই, হিসেবটাও তখন কড়ায় গণ্ডায় আপনিই বুঝে নিন। আপনার কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক প্রচারের বুলেট কারা চালাচ্ছেন সেটাও একটু জেনে নিন। আপনার 'আত্মত্যাগের' আড়ালে কোনও নেপো'রা বেমালুম দই মেরে যাচ্ছে একটু চিনে নিন।
হনুমান ছাপ শুদ্ধ দেশী রামভক্ত'দের জিজ্ঞাসা করুন, এন.ডি.এ ক্ষমতায় এসেই আর্থিক বছরে বিদেশের ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানোর উচ্চসীমা ৭৫,০০০ ডলার থেকে ২৫০,০০০ ডলার করলো কাদের স্বার্থে? ⁴ গত ১১ মাসে এই স্কিমে স্বাভাবিকের তিনগুণ হারে ৩০,০০০ কোটি টাকা বিদেশের ব্যাঙ্কে জমাই বা পড়লো কোন দেশভক্ত'দের?⁵ বন্দর নির্মাণে পরিবেশ বিধিভঙ্গের দায়ে আদানি গোষ্ঠীর ২০০ কোটির জরিমানা গত জুলাই মাসে মাফ করলো কোন সরকার?⁶ স্টেট ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার খাতা থেকে শোধ না হওয়া ৭ হাজার কোটির বেশি ঋণ মোছা হল কার হুকুমে? ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণ শোধ না করা ৬৩টি সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হল কোন তেলো মাথায় তেল ঢালতে? আচ্ছা, বিজয় মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন্সের অনাদায়ী ১২০১.১৯ কোটির ঋণও মোকুব হবে আর আপনাকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেশের কালো টাকা উদ্ধার হবে -এমন পরস্পর বিপরীতধর্মী পাটিগণিত মিলে যাবে কেশব নাগের কোন জাদুতে?⁷
জনাব প্রধানমন্ত্রী, আপনিই বলুন কোনটা সাদা, কোনটা কালো? ২০১৪'র আগে বি.জে.পি'র সর্বভারতীয় মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি সাংবাদিক সম্মেলনে যেদিন ইউ.পি.এ কে তুলোধোনা করে বলেছিলেন 'ডিমনিটাইজেশনের সিদ্ধান্ত গরীব বিরোধী', সেটা; না আজকে আপনি যে বলছেন, 'এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে গরীবরা', সেটা?⁸ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নাকি বড় লোকদের 'তেতো ওষুধ', সেটা; না বিজেপির বিধায়ক ভবানী সিং রাজওয়াতের কথায় এই সিদ্ধান্ত নাকি আগাম জানতেন আম্বানি-আদানি'রা, সেটা?⁹ কালো কে জনাব? ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন রাজস্থানের যে ৬২ বছরের প্রৌঢ়, সে; না কর্ণাটকের যে বিজেপি বিধায়কের মেয়ের বিয়েতে খরচা হল ৫৫০ কোটি, সে?¹⁰ সত্যি কোনটা? অর্থমন্ত্রীর কথা মত, সিদ্ধান্ত নাকি দশ মাস আগের পূর্ব পরিকল্পিত, বিপর্যয় মোকাবিলার সমস্ত ব্যবস্থাও প্রত্যাশার থেকেও অগ্রিম সম্পাদিত, সেটা; না সরকারের অপরিণামদর্শিতায় দেশ জুড়ে ন'দিনেই শহীদ হলেন ৫৫ জন, সেটা?¹¹
জনাব প্রধানমন্ত্রী, হোক না সাদা-কালোর সাচ্চা একটা হিসেবে নিকেশ। হোক না সেটা ইতিহাসের পাতায় গিয়ে। হোক না সেটা 'চ্যারিটি বিগনস অ্যাট হোম' দিয়ে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের হাজার-কোটির আয়ের উৎসের সাচ্চা একটা তদন্ত চেয়ে। নির্বাচনী প্রচারে কোটি টাকার কর্পোরেট ডোনেশেনের হিসেব কষে। আদানি'দের চার্টার্ড বিমানের ঘুরে বেড়ানোর সাচ্চা বিলের রশিদ নিয়ে। জিও-পে'টিমের পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে মুখ দেখানোর শোকোজ চেয়ে। ভুখা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দশ লাখি স্যুটের জবাব খুঁজে। হোক না সাদা-কালোর সাচ্চা একটা হিসেবে নিকেশ সমস্ত লজ্জার মাথা খেয়ে। জরা হাম ভি তো দেখে, আমাদের মাথায় চেপে আজ ইচ্ছেমত ছড়ি ঘোরাচ্ছে যারা, আসলে তাঁদের সাদা কে, আর কালোই বা কারা?
রাষ্ট্রায়ত্ত ৪৭টা লাশ ~ অবিন দত্তগুপ্ত
আজ নিয়ে প্রায় তিনদিন হয়ে গেলো , উনি আর বাজারে বসছেন না । ৪৭ এর আশা । ৪৭ এর আশাভঙ্গ ।
রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬
কালো টাকা ~ সুশোভন পাত্র
কালো টাকা মানে শুধু লুকানো টাকার জমে থাকা ভাণ্ডার নয়। কালো টাকা মানে যেকোনো কর ফাঁকি। কালো টাকা মানে যেকোনো অনুমোদিত সীমার বাইরে লেনদেন। ঐ যে মেজিয়ার কয়লা খাদানে ১০০টন কয়লা তুলে খাতায় কলমে ৮০টনের হিসেব দেখালেন -কালো টাকা। পুলিশ কে ঘুষ দিয়ে নদী থেকে দু গাড়ি বালি বেশী তুললেন -কালো টাকা। কালীঘাটের জাগ্রত দেবী কে সন্তুষ্ট রাখতে ভাইদের তোলা দিলেন -কালো টাকা। পার্টি ফান্ডের ১লক্ষর অনুদানে কুড়ি হাজারের রশিদ কাটলেন –ওটাও কালো টাকা। আসলে কালো টাকায় কোন কালো দাগ নেই, আইডেন্টিটি ফিকেশন মার্ক নেই। তাই আপনি হয়ত কালো টাকা দেখছেন প্রতিদিন, হাতেও নিচ্ছেন প্রতিদিন, কিন্তু চিনতে পারছেন না।
আনুমানিক ভাবে, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক রিপোর্ট এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ৮ তারিখের প্রেস বিবৃতি অনুসারে দেশের মোট কালো টাকা পরিমাণ দেশের জি.ডি.পি'র এক চতুর্থাংশের সমান। অর্থাৎ ২০১৫'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের জি.ডি.পি যদি হয় ১২৬.৫ ট্রিলিয়ন, তাহলে ঐ সরল ত্রৈরাশিকেই কালো টাকা ৩৫ লক্ষ কোটি। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১৫-১৬'র বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী বাজারে নগদ ৫০০ টাকার নোট রয়েছে ১৬৫০ কোটি। আর ১০০০ টাকার নোট ৬৭০ কোটি। যার সম্মিলিত অর্থমূল্য ১৭ লক্ষ কোটির একটু বেশী। সেই টাকারও এক চতুর্থাংশ কালো টাকা ধরে সহজ হিসেবে কষলে, এই নোট বাতিল করার সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ ২৫ হাজার কোটির কালো টাকা উদ্ধার হতে পারে। আবার ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটের মাধ্যমে বাজার থেকে তুলে নেওয়া অর্থের সম পরিমাণ অর্থ ২০০০ টাকার বা ৫০০ টাকার নতুন নোট ছেপে বদলে ফেলার খরচাও প্রায় ১২ হাজার কোটি। সুতরাং, সবের ধন নীলমণি হয়ে পড়ে রইলো আনুমানিক ৪ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি। যা দেশের মোট কালো টাকার মাত্র ১৩%। বাকি ৮৭% কিন্তু যেমন ছিল তেমনই রইলো। রইলো ২৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বৃহৎ কর্পোরেট'দের বকেয়া ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণে, রইলো রেভেনিউ ফোরগেনে'র নামে প্রতিবছর বিগ বিজনেস হাউসগুলোকে ছাড় দেওয়া কর্পোরেট ট্যাক্সে, রইলো আর্থিক কারচুপি করে লন্ডনে বসে থাকা বিজয় মালিয়া, ললিত মোদী'দের পকেটে, আর রইলো সুইস ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে।
এই সত্যিটা প্রধানমন্ত্রীও বিলক্ষণ জানেন। আর জানেন বলেই, ২০১৩'তে গোয়ার বিলাসবহুল হোটেলে বিজেপি'র পার্লামেন্টারি বোর্ডের মিটিং-এ প্রধানমন্ত্রী পদের মনোনয়ন পেয়েই তিনি টুইট করেছিলেন "দেশের একটা বাচ্চা ছেলেও জানে কালো টাকা আছে সুইস ব্যাঙ্কে। আমাদের কি সেটা ফিরিয়ে আনা উচিত নয়?" প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ এটাও জানেন যে শুধু নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সেই সুইস ব্যাঙ্কের এক ছটাক টাকাও দেশে ফিরে আসবে না। দীর্ঘসময়ের প্রেক্ষাপটে কালো টাকার রমরমাও ম্লান হবে না। আসলে নোট বাতিল তো ১৯৪৬'এ কিম্বা ১৯৭৮'র জানুয়ারি'তেও হয়েছিল। কিন্তু কালো টাকা'র এই বাড়বাড়ন্ত থামেনি। বরং অর্থনীতির বেহাল অবস্থার খেসারৎ চুকিয়ে পরের সাধারণ নির্বাচনে গো-হারা হয়েছিলো মুরাজি দেশাই'র জনতা সরকার।
তবুও বেশ হয়েছে নোট গুলো সব বাতিল হয়েছে। আমাদের দু-একদিনের কষ্টে যদি দেশের প্রাসাদসম কালো টাকার কিঞ্চিতও ফিরে আসে, তাহলে না হয় তাই আচ্ছা। গোরু তে ৮০% মানুষের জিন খোঁজা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন যদি জাল নোটের ব্যাপারীদের খুঁজতে বসেন, তাহলে তাই আচ্ছা। 'মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে'র চ্যাংড়ামি করা হিন্দু নেতা, আর তিন তালাকের সমর্থনে ভাষণবাজি করা মৌলবি গুলো যদি একদিন ব্যাঙ্কের লাইনে গা ঘেঁষে রিকুইসিট ফর্ম ভরেন, তো তাই আচ্ছা। অ্যালিস্টার কুকের টিমের বিরুদ্ধে জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রতিশোধে উদ্যত গোটা দেশবাসী একদিন যদি রাজনৈতিক দল গুলোর আয়ের উৎস জানতে চেয়ে বসে, তাহলে তাই আচ্ছা। কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শত নামজপা ছেড়ে একদিন যদি নিতাই মেলায় অর্থনীতির তর্কের তুফান ওঠে, তো তাই আচ্ছা। কালো টাকার 'হ্যাভ আর হ্যাভ নটসে' দেশটা যদি একদিন আড়াআড়ি ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে তাই আচ্ছা। মানুষ যদি ভাবতে শেখে ধর্মের বিভেদ নয় তাঁদের এক সুতোয় বেঁধেছে তাঁদেরই পেটের খিদে, তাহলে তাই আচ্ছা। এই সংখ্যালঘু শাসকদের সঙ্গে সংখ্যাগুরু শোষিত মানুষ গুলোর একদিন...একদিন যদি 'ভীষণ রাগে যুদ্ধ বাঁধে', তাহলে না হয় তাই আচ্ছা। সেদিন নাজিবরা আর ২৮ দিন ধরে নিখোঁজ থাকবেনা সেনোরিটা, সেদিন হয়ত নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্যানিকে প্রত্যন্ত গ্রামের তীর্থরাজিরা আর মরবে না সেনোরিটা , সেদিন হয়ত "বড়ে বড়ে দেশো ম্যা অ্যাসি ছোটি ছোটি বাত" আর একটাও হবে না সেনোরিটা…
শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬
সব অসুবিধাই দু'দিনের ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
ডায়মণ্ড হারবার রোডে নাকি বহু বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে? নাঃ, কিছু বলিনি।
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
পুজোর সময় মাইকের দৌরাত্ম! চাঁদার জুলুম! উফফ! না, আমি চুপ।
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
বৃষ্টিতে জল জমে শহরের অবস্থা শোচনীয়। চলাফেরা বন্ধ, খাওয়াদাওয়া অনিশ্চিত। শাট আপ!
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
পেট্রলের দাম বাড়ল আবার। সব জিনিষেরই। কীভাবে যে... শশশশশ!
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
যুদ্ধের পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসছে যে! চ্যোপ!!
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।অরাজকতা? বিশৃঙ্খলা? অসুস্থতা? অসহায়তা? মেনে নিন সকলে। একদম চুপচাপ।
"সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
-----------------
যারা আমাকে এই জ্ঞান দিলেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত এবার তাঁরাও আর কখনো "উফফ, কী করি!" পোস্ট করবেন না। কারণ, "সব অসুবিধাই দু'দিনের। মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। বৃহত্তর সামগ্রিক উন্নয়ন (ধরে নিচ্ছি হবে)-এর স্বার্থে।"
বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬
কবি ~ শমীক মুখার্জী
কিশোর রবি জোড়াসাঁকো হইতে নির্গত হইলেন। হাওড়া হইতে এখন ট্রেন যায়, পঁহুছানো অসুবিধা হইবে না। মূলরাস্তার নিকটে আসিতেই একটি তোবড়ানো মিনিবাস "পোস্তা-হাওড়া-হাওড়া-হাওড়া" কহিতে কহিতে আসিয়া দাঁড়াইল। সাবধানে আপনার চোগা-চাপকান সামলাইয়া পাদানিতে অর্ধেক ঝুলিয়া দাঁড়াইলেন কিশোর রবি। মিনিবাস ছুটিল হাওড়া ইস্টিশনের দিকে।
অন্যদিন এই সময়ে কিশোর রবির মনে খেলা করিয়া যায় গানের কথামালা, গুঞ্জরিয়া যায় সুরের ভ্রমর। আজ আর সে সব দিকে রবির ভ্রূক্ষেপমাত্র নাই, নতুন বৌঠান দুটি ক্ষীরকদম্ব খাইয়া যাইতে বলিয়াছিলেন, রবি দৃক্পাত করেন নাই, সবেগে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছেন ঘর হইতে। ... বাবামশায়, যে বাবামশায়কে তিনি এত সন্মান করেন, ঈশ্বরতুল্য মনে করেন, সেই বাবামশায় তাঁহার সঙ্গে এমনটি করিলেন?
ব্যান্ডেল লোকালে আনমনে বসিয়া আছেন রবি। ঝালমুড়ি এবং কচি শসা বিক্রেতারা বহুবার তাঁহার কর্ণের নিকটে বহুবিধ স্বরে তাহাদিগের পসরার গুণগান করিয়া গেল, রবির তাহাতে ভাবান্তর ঘটিল না।
বিকেল তিনটার কিছু পূর্ব্বে রবি চুঁচুড়ায় আসিলেন। একটি রিক্সা লইয়া সটান উপস্থিত হইলেন গঙ্গাতীরবর্তী বাগানবাড়িতে। বাবামশায় আজকাল এইখানেই দিন অতিবাহিত করিতেছেন। একটু পরেই তাঁহার উপাসনার সময় হইবে, তাহার পূর্ব্বেই তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ প্রয়োজন।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তখন বারান্দায় বসিয়া একটি সদ্য শোনা সঙ্গীত গুণগুণ করিতেছিলেন। নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে। তাঁহার এই পুত্র সত্যই প্রতিভাবান। রবি তাঁহার নাড়ির টান, এইবারে গ্রীষ্মে তাহাকে সঙ্গে লইয়া তিনি কার্শিয়াং যাইবেন।
সহসা ধ্যানভঙ্গ হইল মহর্ষির। দরোজার সামনে দাঁড়াইয়া আছে, ও কে? রবি না? রবি, বাবা, কখন এলে? খবর দিয়া আসো নাই তো?
রবি মনে মনে অনেক রোষকষায়িত বাক্যবাণ প্রস্তুত করিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু আচম্বিতে বাবামশায়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাঁহার সমস্ত তেজ উবিয়া গেল, পরিণত হইল অভিমানে। চক্ষের কোণে আসিল জলের বিন্দু। পায়ে পায়ে আগাইয়া গেলেন বাবামশায়ের সম্মুখে।
"কেন, বাবামশায়, কেন? ... দেশের রাজা না হয় এ ভাষা বুঝেন না, আপনি তো বুঝেছিলেন, তবে কেন জেনেশুনে আমাকে এই পাঁচশো টাকার নোট দিয়াছিলেন? গত তিন দিন ধরে সারা কলকাতা ঘুরেছি, কেউ নেয় নি, কেউ নিতে চায় নি। বলছে, কালো টাকা। না হয় না-ই দিতেন, আপনার স্নেহই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল ..."
গলা বুজিয়া আসিল কিশোর রবির। থরথর হাতে চোগার পকেট থেকে একটি পাঁচশো টাকার নোট তিনি আগাইয়া ধরিলেন মহর্ষির দিকে। মহর্ষি স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। নির্জনে এই বাড়িতে তিনি সাধন ভজন করেন, এনডিটিভি দ্যাখেন না। দেশের রাজা যে এত কিছু করিয়া ফেলিয়াছেন, তিনি জানিবেন কেমন ভাবে?
গঙ্গাবক্ষে শীতল হাওয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ছুটিয়া গেল নৈহাটির দিকে।
শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬
মুক্ত বাজার অর্থনীতি ~ সুশোভন পাত্র
অফিস ফেরত মোড়ের ট্রাফিক'টায় আজকাল প্রায়ই মিনিট দশেক আটকে থাকতে হয়। রাস্তায় তখন ব্যস্ত মানুষের স্রোত, রেড লাইটার গা ঘেঁষে বহুজাতিকের আকাশছোঁয়া বিজ্ঞাপন, দুপাশে গাড়ির কর্কশ হর্ন, ফ্লাই ওভারে আধুনিক সভ্যতার সাক্ষ্য গায়ে মেখে ছুটে চলা পর্যাবৃত্ত মেট্রো, আর শীর্ণ, দীর্ণ কয়েকটা ভিক্ষাজীবীর অসহায়তা। এসবের মধ্যেই সেদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম আকাশে উড়ে যাচ্ছে একদল পাখি। দিল্লীর এই চুলোতে এ'দৃশ্য বিরল বৈকি। চাইলে এখানে মাথার উপরে হাফডজন উড়োজাহাজ দেখতে পাওয়া যায়, প্রাসাদসম ফ্ল্যাট গুলোর মাথায় মোবাইল টাওয়ারের টিমটিম করা লালবাতি গুলোকে শনাক্ত করা যায়, চিমনির একরাশ কালো ধোঁয়ারও হদিশ পাওয়া যায়, কিন্তু রাতের আকাশের কালপুরুষটা খুঁজে পাওয়া যায় না, তর্জনীর ডগা দিয়ে লাইন টেনে সপ্তর্ষিমণ্ডলটা মিলিয়ে নেওয়া যায় না, ডানা ঝাপটে নীল আকাশের বুক চিরে উড়ে যাওয়া পাখির দলের অনাবিল হর্ষধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় না। আসলে আমাদের মত O₃, SO₂ NO₂, মাইক্রোমিটারের পার্টিকুলেট ম্যাটার কিম্বা অ্যারোডাইনামিক্সের বিজ্ঞানটা না বুঝলেও, দিল্লীর নিকৃষ্টতম বাতাসে প্রতিমুহূর্তের জরুরী নিঃশ্বাস'টাও যে প্রবল বিপজ্জনক পাখিরা সেটা বোঝে। বোধহয় আমাদের থেকে একটু বেশীই বোঝে।দীপাবলির পর গত পাঁচদিন আর একটাও রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকাল দেখেনি দিল্লী। C.S.E'র ডিপাৰ্টমেন্ট জানিয়েছে এই বুধবার সতেরো বছরের জঘন্যতম 'স্মগে' ডুবে ছিল দিল্লী। এপ্রিলে হু, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু বয়ে বেড়ানোর ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করেছে দিল্লী কে।'এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে'র মাপকাঠিতে বছরে নাকি মাত্র দু'দিন, বুকভরা শ্বাস নেওয়ার মত 'দূষণ মুক্ত' বাতাসের সৌভাগ্য হয় দিল্লীর। তবুও নিশ্চিন্ত, নির্বিকার এই জাহাঁবাজ দিল্লী। আমার যে পরিবেশ সচেতন কলিগ সেদিন বাতাসে CO₂ মিশে যাবার আশঙ্কায় হোটাসঅ্যাপে চিনের সামগ্রী বয়কটের আবেদন জানালেন, সোমবার তিনিই বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করলেন "ইস বার চালিশ হাজার কা পটাকা ফোড়া।" আসলে বয়কটের আবেদনটা পরিবেশ রক্ষার্থে ছিল না। আবেদনটা ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদের হিড়িক তুলতে। আসন্ন অল ইম্পরট্যান্ট তিন বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেশপ্রেম জাহিরের আগুনে খেলায় ফার্স্ট ইনিংসে লিড নিতে। আফসোস শুধু একটাই, আমাদের মাথার উপরের আকাশটা, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা বাতাসটা, এই জাতীয়তাবাদটা বোঝে না, কাঁটাতারে আবদ্ধ দেশপ্রেমের গণ্ডী গুলো চেনে না, জিও পলিটিক্সের জটিল অঙ্ক গুলো কষতে জানে না, তাই চিনের CO₂ আর ভারতের CO₂ তে দূষণের পার্থক্যটাও করতে পারে না।
শুধু আপনার নিঃশ্বাস নেওয়া বাতাসের কম্পোজিশনটাই নয়, বদলে যাচ্ছে আপনার বৃষ্টি মাথায় ফুটবল খেলার অমলিন শৈশবটা, বদলে যাচ্ছে আপনার পাড়া মাথায় তোলা চায়ের দোকানের আড্ডাটা, বিকেলের মা বৌদি'দের পুকুর পাড়ের চেনা ছবিটা, ঘুমনোর আগে গল্পের বই পড়ার আপনার নিখাদ অভ্যাসটা। আসলে বিশ্বায়নের নামে বদলে যাচ্ছে আপনার আশেপাশের গোটা সমাজটাই। পরিবেশে দূষণের মাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আপনার শয্যাশায়ী মায়ের ওষুধের খরচা, ছেলের কলেজের ফিস, মেয়ের কসমেটিকসের দাম, আপনার মাসকাবারি ছাপোষা ফর্দের দৈর্ঘ্যটা আর মুকেশ আম্বানির মোট সম্পত্তির পরিমাণটা। বর্তমানে যে সম্পত্তির পরিমাণ ২৩.১ বিলিয়ন ডলার। অঙ্কটা আপনার দেশের ১৪টা রাজ্যের, আর বিশ্বের ১৯টা দেশের জিডিপি'র থেকে একটু বেশী। ২০১৩-২০১৫'র আর্থিক বছরে ২৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বৃহৎ কর্পোরেট'দের বকেয়া মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকা। অঙ্কটা আপনার রোমান্টিক হানিমুনের নিশ্চিন্ত ডেসটিনেশন, ঐ নর্থ ইস্টের স্টেট গুলোর সম্মিলিত জিডিপি'র থেকেও একটু বেশি। প্রথম ১৫ জন ধনী ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পত্তির অঙ্কটা আজ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার সম্মিলিত সম্পত্তির থেকে একটু বেশি। আর এই প্রবল আর্থিক বৈষম্যের পরেও অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রেয়সী যে অর্থনীতির প্রশংসা করে সন্ধেবেলার সাংবাদিক বৈঠকে নিয়ম করে 'ফিলগুড ফ্যাক্টর' বিলিয়ে দেন তার নাম 'মুক্ত বাজার অর্থনীতি।' এই মুক্ত বাজার জাতি, রাষ্ট্রের পরিসর বোঝেনা। এই মুক্তবাজার বোঝে ডিমান্ড সাপ্লাই রেশিও। বোঝে লো কস্ট প্রোডাকশনের প্রফিট। বোঝে কনজিউমার সারপ্লাসের অঙ্ক। এবং বোঝে বলেই চিনের অর্থনীতির ঠাণ্ডা লাগলে ভারতের বাজারে হাঁচি হয়। বোঝে বলেই গোটা বিশ্বে চিনের পণ্য রমরমিয়ে বিক্রি হয়।
আচ্ছা, লেবার ব্যুরো রিপোর্টে যে দেশের বর্তমানে বেকারত্বর হার শেষ ৫ বছরের সর্বোচ্চ, যে দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রোথ মুখ থুবড়ে পড়ছে প্রতি কোয়ার্টারে, যে দেশের আটটি শ্রম নিবিড় শিল্পে গত আর্থিক বছরে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ১.৭৫ লক্ষ; একটা হোটাসঅ্যাপ ম্যাসেজ পাঠিয়ে সে দেশের অর্থনীতি উদ্ধার করার কষ্টকল্পনা আপনার বালখিল্যতা মনে হয় না? অরে মশাই, মুক্ত বাজারের ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করা আমেরিকাও চিনের পণ্যের আমদানি রোধে চড়া হারে শুল্ক ধার্য করেছে। এবং এতদসত্ত্বেও চিনের সাথে বর্তমানে আমেরিকার ট্রেড ডেফিসিটের অঙ্কটা স্টেগারিং, অঙ্কটা ৩৪৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতি'তে 'স্বদেশী' ফ্ল্যাবারের দর্শন আমদানির জন্য সংঘের লোকজন দীনদয়াল উপাধ্যায় কে খুব মান্যি যত্ন করেন।প্রধানমন্ত্রী আদর্শগত আনতির জন্য তাঁর নামে যোজনার নামকরণে শ্রদ্ধা তর্পণ করেন, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়ার গাল গপ্পো পাড়েন। আর বিজেপি'র ক্যাবিনেট, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সেই 'স্বদেশীয়ানা'র পিণ্ডি চটকে, আপনার জীবনদায়ী ওষুধে ৭৪% আর প্রতিরক্ষা তে ১০০% এফ.ডি.আই'র বিল পাশ করে, আমেরিকার সাথে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জের চুক্তি সাক্ষর করে। হিন্দুত্বের আঁতুড়ঘরের গুজরাত সরকার যখন নর্মদার ধারে চিনা ব্রোঞ্জ দিয়ে সর্দার প্যাটেলের মূর্তি গড়ে, সংঘের হেডকোয়ার্টার নাগপুরের মেট্রোতে যখন চিনের কোম্পানি কোচ তৈরির রমরমা ব্যবসা করে, দেশভক্তির সাক্ষাৎ অবতার স্বয়ং মোহন ভাগবতও তখন তাঁর জাতীয়তাবাদী লেজ গুটিয়ে মৌনব্রত পালন করেন। ডিয়ার গোমাতার বাধ্য সন্তানদল, আপনাদের রাজনৈতিক গডফাদার'রাই যখন বাড়ি বয়ে মুক্ত বাজার অর্থনীতির দালালি করেন তখন আপনারা কেন খামকা উগ্র দেশপ্রেমের আমাশয় ভোগেন? মুক্ত বাজারের সাম্রাজ্যে তো এটাই ডায়নামিক্স। মুক্ত বাজার সাম্রাজ্যে এটাই তো নিয়ম। আর এ সাম্রাজ্যের আপাতত চিনই সম্রাট। টেক ইট অর লিভ ইট…
মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬
আর জন্মের দুষ্টু লোক - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬
রাতভোর ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
- কেন তোর আপত্তি আছে?