রাস্তায় হেঁটে চললে মুঘল বাদশার জুতো শব্দ করে।
হাত নাড়লে, ঠাণ্ডা গাড়ির পেছন সিটের জানলা থেকে,
তেজি ঘোড়ার পিঠের থেকে চাবুক ঘোরে দলিত পিঠে।
আমাদের সবারই ধারণা, আমাদের সব কিছু ভুল, আমেরিকা-ইউরোপের সব কিছু ঠিকঠাক। সব কিছু নিখুঁত। লেখাপড়া, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় হলে তো কথাই নেই, আমরা ধরে নেই পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আমাদের নিশ্চয়ই কোনো তুলনাই হতে পারে না। সেই আমেরিকার একটা পরিসংখ্যান হঠাৎ করে আমার চোখে পড়েছে, পরিসংখ্যানটি মেয়েদের নিয়ে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে সেই দেশের মেয়েরা কেমন করছে তার পরিসংখ্যানটি দেখে আমার চোখ রীতিমতো ছানাবড়া হয়ে গেল। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি বা আরও স্পষ্ট করে বললে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ১৯৮৫ সালে কোনো একটা মহাবিপর্যয় ঘটে যাবার পর সেই দেশের মেয়েরা হঠাৎ করে কম্পিউটার সায়েন্স পড়া ছেড়ে দিল এবং তারপর এই বিষয় মেয়েদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে এবং এখন সেই দেশে কম্পিউটার সায়েন্সে ছেলেমেয়েদের সংখ্যায় রীতিমতো আকাশপাতাল পার্থক্য।
১৯৮৫ সালে কী এমন ঘটনা ঘটেছিল যে কারণে সেই দেশের মেয়েরা কম্পিউটার সায়েন্স পড়া ছেড়ে দিল? সেই সময়টিতে আমি আমেরিকায় ছিলাম এবং মোটামুটিভাবে বিশ্লেষকদের সাথে আমি একমত, সেই সময়টিতে আসলে প্রথমবারের মতো পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বাজারে আসতে শুরু করেছিল। এর আগে কম্পিউটার ছিল বিশাল এবং সেগুলো বড় বড় অফিস বা ল্যাবরেটরিতে থাকত। কোনো মানুষ কল্পনাও করতে পারত না যে, সেটা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে নিজের বাসায় পড়ার টেবিলে রাখা সম্ভব। বিশ্লেষকদের ধারণা, পার্সোনাল কম্পিউটার আসার সাথে সাথেই সেই দেশের মানুষেরা সেগুলো কিনতে থাকে।
সেই কম্পিউটার বিশেষ কিছু করতে পারত না। বলা যেতে পারে, সেগুলো ছিল মোটামুটি একটা খেলনা এবং আমেরিকান পরিবারে বাবারা সেই খেলনা নিয়ে খেলতে শুরু করল। বাবার সাথে সেই খেলনায় যোগ দিল তাদের ছেলেরা। যারা পার্সোনাল কম্পিউটার নামের সেই মূল্যবান খেলনাটি বাজারে বিক্রি করতে শুরু করল, তারা সেটাকে শুধুমাত্র পুরুষ এবং ছেলেদের খেলনা হিসেবে বিক্রি করতে শুরু করে এবং বাসার মেয়েটির যত আগ্রহই থাকুক তাকে সেটা নিয়ে খেলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না। ছেলেরা ধীরে ধীরে কম্পিউটার নিয়ে সময় কাটাতে শুরু করল, সেটা খুলে ভিতরে দেখতে শুরু করল, যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করতে শুরু করল এবং কিছুদিনের মাঝে দেখা গেল কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়টিতে পুরুষদের একচেটিয়া রাজত্ব। মেয়েরা সেখানে পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছে এবং তারা আর কখনও ছেলেদের সমান হতে পারেনি।
আমাদের দেশে বিষয়টা এত খারাপ হতে পারেনি। এই দেশে এসে আমি পদার্থবিজ্ঞানের মানুষ হয়েও দীর্ঘদিন কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগটি দেখেশুনে রেখেছি, আমি এই বিভাগ থেকে ছাত্রীদের ঝরে যেতে দেখিনি। বরং ছেলেদের মতো সমান আগ্রহ নিয়ে মেয়েদের এই বিষয়টি পড়তে দেখেছি। তারা হয়তো সংখ্যায় কম, কিন্তু তাদের আগ্রহ কম সেটি কিছুতেই বলা যাবে না।
সায়েন্স কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেয়েরা কেন কম তার কারণ খুঁজে বের করা মোটেও কঠিন নয়। জন্মের পর থেকে তাদের কানের কাছে সবাই ঘ্যান ঘ্যান করে বলে গেছে, 'বড় হয়ে তুমি ডাক্তার হতে পার, কিন্তু খবরদার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না'। কাজেই বড় হয়ে তাদের একটা অংশ নিজের অজান্তেই বিশ্বাস করে বসে থাকে যে, মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ার হওয়া মনে হয় ঠিক নয়। তাদের অনেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হয়, কিন্তু সব সময়েই তাদের ভেতর এক ধরনের দুর্ভাবনা কাজ করে। চারপাশের পুরুষ মানুষগুলো তাদেরকে সজ্ঞানে হোক অজ্ঞানে হোক বোঝানোর চেষ্টা করে যে, তারা ভুল বিষয়ে চলে এসেছে। একজন পুরুষ যখন তার জন্যে স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করে, মেয়েটিকে তখন একটা প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হয়।
২.
যখন বয়স কম ছিল, তখন প্রচুর গল্প-উপন্যাস পড়েছি, প্রবন্ধের বইগুলো দূরে সরিয়ে রেখেছি। এখন বয়স হয়েছে, হঠাৎ করে আবিস্কার করেছি প্রবন্ধের বই পড়তে বেশ ভালো লাগে। কোনো একটি বিচিত্র কারণে মানুষের মস্তিস্ক কীভাবে কাজ করে সেই ধরনের বই পড়তে আমার খুব আগ্রহ হয় এবং সুযোগ পেলেই সেগুলো পড়ি। পুরুষ এবং মহিলার মস্তিস্কের মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কী না সেটা জানার জন্যে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। পুরুষ এবং মহিলার চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়াতে পার্থক্য আছে সেটা অনেকেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু আমি কোথাও দেখিনি যে, ছেলেরা মেয়েদের থেকে ভালো গণিত, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি বুঝতে পারে সেই ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া গেছে।
পৃথিবীর এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে হার্ভার্ড। তার প্রেসিডেন্ট লরেন্স সামার্স একটা সভায় একবার বললেন, স্কুল-কলেজে ছেলেরা বিজ্ঞান এবং গণিত মেয়েদের থেকে ভালো বুঝতে পারে। সেটা বলার পর সবাই সেই প্রেসিডেন্টের পিছনে লেগে পড়ল; তার কাছে জানতে চাইল তিনি কোথায় সেই তথ্য পেয়েছেন। পৃথিবীতে কোথাও এটা বৈজ্ঞানিক তথ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নয়। এটা হচ্ছে পুরুষশাসিত সমাজে মাথামোটা পুরুষদের এক ধরনের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। এই পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক কথাটা বলার কারণে হার্ভার্ড প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করেছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে আমরা পুরুষ মানুষেরা যদি নিরিবিলি কথা বলি এবং ছেলে এবং মেয়েদের বিজ্ঞান ও গণিতে আগ্রহ নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে অবধারিতভাবে আমরা তাদের কথায় হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পাব।
বেশিরভাগ পুরুষ মানুষেরই মেয়েদের বিজ্ঞান কিংবা গণিতে দখলের ব্যাপারে এক ধরনের অযৌক্তিক নেতিবাচক ধারণা আছে। তাদের একটা প্রধান যুক্তি, গণিতের নোবেল পুরস্কারের সমমানের পুরস্কারের নাম ফিল্ডস মেডেল এবং কোনো মেয়ে কখনও ফিল্ডস মেডেল পায়নি। তারা এখন সেই যুক্তিটি দেখাতে পারবে না; কারণ সর্বশেষ ফিল্ডস মেডেলটি পেয়েছে মরিয়ম মির্জাখানি নামে একজন মেয়ে। মেয়েটি ইরানি বংশোদ্ভূত এবং এখন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কিন্তু সেটি আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়; কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে মেয়েরা ছেলেদের সমান সমান কৃতিত্ব দেখাতে পারছে কী না সেটা যাচাই করার আগে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে মেয়েদের কি আমরা ছেলেদের সমান সমান সুযোগ দিতে পেরেছি কী না। আমরা পারিনি। একজন পুরুষ মানুষ তার জীবনের যে সময়টাতে তার ক্যারিয়ারটুকু গড়ে তুলেন, ঠিক সেই সময়াটাতে একজন মেয়েকে সন্তানের জন্ম দিয়ে সন্তানকে মানুষ করতে হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে আমরা কখনও মেয়েদেরকে ছেলেদের সমান সুযোগ দিতে পারি না।
তাই আমরা যদি তাদেরকে ছেলেদের সমান সংখ্যক হিসাবে না পাই তাহলে অবাক হবার কী আছে? যখন একজন মেয়েকে ঠিক একজন ছেলের সমান সুযোগ দিব, তখনই তাদের দুজনের সাফল্যের তুলনা করার একটা সুযোগ পাব, তার আগে নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার কারণে আমাকে অসংখ্যবার শিক্ষক নিয়োগের কমিটিতে বসে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিতে হয়েছে। আমার সাথে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় অধ্যাপকরা থেকেছেন এবং তাদের কথাবর্তা শুনে মাঝে মাঝে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। একবার একজন মেয়ে প্রার্থী খুব চমৎকার ইন্টারভিউ দেওয়ার পর আমি যখন তাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি, তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাপক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ''এই মেয়ের বিয়ে হয়নি।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, ''তাতে সমস্যা কী?''
''কয়দিন পর প্রেম করবে, বিয়ে করবে।''
আমি আরও অবাক হয়ে বললাম, ''নিশ্চয়ই করবে। সমস্যা কোথায়?''
''তখন সমস্যা শুরু হবে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চা হবে। ম্যাটার্নিটি লিভ দিতে হবে।''
আমি বললাম, ''দিতে হলে দিব।''
''বাচ্চা জন্মানোর পর আসল মজা টের পাবেন। আজ বাচ্চার জ্বর, কাল বাচ্চার ফ্লু, পরশু চিকেন পক্স। এই মেয়েকে ডিপার্টমেন্টে পাবেনই না।''
আমি অবাক হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাপকের দিকে তাকিয়ে রাইলাম। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন; বললেন, ''মেয়েদের টিচার হিসেবে নেবেন না। একটা ছেলে টিচারের অর্ধেক সার্ভিসও পাবেন না।''
সেই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাপকের প্রত্যেকটা কথাই সম্ভবত সত্যি; কিন্তু আমি সেই কথায় বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেইনি। সন্তানের জন্মকাল এবং লালনপালন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকার কারণে একজন মেয়ের কাছ থেকে অর্ধেক সার্ভিস না পেলেও মেয়েরা অনুগ্রহ করে সন্তান জন্ম দেওয়ার এই দায়িত্বটা পালন করছে বলে এই পুরো মানব সভ্যতার জন্ম হয়েছে এবং পৃথিবীটা টিকে আছে। আমার মায়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতায় শেষ নেই যিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্রণা এবং ঝামেলায় ত্যক্তবিরক্ত হয়ে আমাকে জন্ম দেওয়া থেকে বিরত হননি। তাহলে এই পৃথিবীটাই আমার দেখা হত না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করার সময় আমার মেয়ে সহকর্মীদের জীবনের সন্তানসংক্রান্ত বাড়তি কাজের জটিলতা দেখে আমার মনে হয়েছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছোট শিশুদের দেখেশুনে রাখার জন্যে একটা চমৎকার ডে কেয়ার থাকা দরকার। শুধুমাত্র এই সেবাটুকু দিতে পারলেই আমাদের মেয়ে সহকর্মীদের জীবনটুকু অনেকখানি সহজ হয়ে যেতে পারত।
৩.
আমাদের খুবই সৌভাগ্য যে, আমাদের দেশে মেয়েদের লেখাপড়ায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিচু ক্লাসে ছেলে এবং মেয়ের সংখ্যা প্রায় সমান সমান। ছেলেমেয়েরা যখন বড় হতে থাকে তখন মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের সংখ্যা থেকে কমতে থাকে। অনেক মা-বাবাই তাদের মেয়েদের লেখাপড়ার পিছনে টাকা-পয়সা খরচ করতে আগ্রহ দেখান না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিতে অনেক বেশি আগ্রহ দেখান। আমি যখনই ছাত্রীদের সামনে কথা বলার সুযোগ পাই, তখনই অত্যন্ত চাঁছাছোলা ভাষায় তাদেরকে বলি, ''খবরদার, লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি নেবার আগে কখনও বিয়ে করবে না।''
আমার ধারণা, অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের মাথায় এই ধরনের বদবুদ্ধি ঢুকিয়ে দেবার জন্যে আমার উপরে খুবই বিরক্ত হন।
আমি মোটামুটি নিশ্চিতভাবে জানি, আমার আজকের এই লেখাটি পড়ে অনেক পুরুষ মানুষই খুব বাঁকা করে একটু হাসবেন এবং তার পাশে বসে থাকা আরেকজন পুরুষ মানুষের সাথে মেয়েদের নিয়ে কোনো এক ধরনের অসম্মানজনক কথা বলবেন এবং মেয়েদের নিয়ে কোনো এক ধরনের কৌতুক করবেন। কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন, গণিত, বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তিতে মেয়েরা আসলে দুর্বল– মুখে যত যাই বলা হোক। গণিত, বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি মেয়েদের বিষয় নয়– মেয়েরা লেখাপড়া করুক, সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নেই– কিন্তু গণিত, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলো ছেলেদের জন্যেই ছেড়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
আমি আশা করছি, আমার এই লেখাটি অনেক মেয়ের চোখে পড়ুক। তার কারণ, আমি নিশ্চিতভাবে জানি আমরা আমাদের দেশের মেয়েদের ছেলেদের সমান গুরুত্ব দিই না। বেশিরভাগ মেয়েই স্বীকার করবে তাদেরকে তাদের পরিবারের ছেলেদের সমান সুযোগ দিয়ে বড় করা হয়নি। তারা অভিযোগ করে বলবে যে, নানা রকম বিধি-নিষেধ দিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদেরকে বারবার বোঝানো হয়েছে, মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে বলে তাদের গাণিতিক বা বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিমত্তা কম কিংবা বলা হয়েছে, মেয়ে বলে তাদের জীবনে গণিত বা বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই। তাদের বাবা-মা বলেছেন; তাদের ভাইয়েরা বলেছেন; চাচারা বলেছেন; এমনকি তাদের স্কুলের অনেক শিক্ষকও এই কথা বলে এসেছেন।
আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, একটা ছেলে যেটুকু পারে একটি মেয়েও ঠিক সেটুকু পারে। সত্যি কথা বলতে কী, একটা মেয়েকে তার জীবনে আরও অনেক কিছু করতে হয় যেগুলো একটা ছেলেকে কখনও করতে হয় না। সেই হিসেবে একই জায়গায় পৌঁছানো একটা ছেলে এবং মেয়ের ভেতরে মেয়েটিকে অনেক বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে। আমি বহুদিন থেকে এই দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে আছি। এই দেশের অলিম্পিয়াড আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে আমার খুব চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি অনেকবার আমার চোখের সামনে সাধারণ একটি শিশুকে অসাধারণ একজন গণিতবিদ হয়ে উঠতে দেখেছি। যে মেয়েটি ভয়ে ভয়ে আমাকে বলেছে, 'স্যার, আমি কিছু পারি না', তাকে আমি বলেছি, 'অবশ্যই তুমি পারবে, কে বলেছে তুমি পার না'– সেই মেয়েটি যখন আমার কথা বিশ্বাস করে। তখন দেখতে দেখতে সে আত্মবিশ্বাসহীন একজন মানুষ থেকে বিস্ময়কর আত্মবিশ্বাসী একজন গণিতবিদ কিংবা কম্পিউটার প্রোগ্রামার হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে নেবার জন্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু করেছে।
তাই মাঝে মাঝেই আমার মনে হয়, আমার যদি সুযোগ থাকত তাহলে আমি আমাদের দেশের সব ছোট ছোট মেয়ের কাছে গিয়ে তাদের বলে আসতাম, বিজ্ঞান, গণিত কিংবা প্রযুক্তি মেয়েদের বিষয় নয়, সেটি মোটেও সত্যি কথা নয়। সত্যি কথা হচ্ছে, লেখাপড়ার ব্যাপারে একজন ছেলে যেটুকু পারে একটি মেয়েও ঠিক ততটুকু পারে। যদি প্রয়োজন হয় আর চেষ্টা করে তারা আরও বেশি পারে।
আমি সব সময় স্বপ্ন দেখি, আমাদের দেশের মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে বিপুল সংখ্যায় গণিত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে এগিয়ে এসে সারা পৃথিবীর একটা ভুল ধারণা ভেঙে দেবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০৮-০৪-২০১৫
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১২
নৌকা এসে ভিড়েছিল বাংলার কিনারে।
সোনালি চুলের যুবা, ফিরিঙ্গি সে লোক
ব্যবসায় থাকে না মন। গান বাঁধতে পারে।
সে-গানে জড়িয়ে থাকে গস্পেল আর শ্লোক।
হিঁদু ঘরে বিয়ে করল, মাটি হল নুন
কৃষ্টে আর খ্রিস্টে সে-ই ঘোচাল তফাত।
তোমরা তার চালাঘরে লাগালে আগুন
তারপর পেরিয়ে গেল ক'সহস্র রাত...
আবার সে ফিরে এল। অন্য রূপে ফেরা।
এখনও মানে না কিছু, গেয়ে যাওয়া কাজ,
সহিষ্ণু হল না তবু ধর্মযাজকেরা
কাল যারা মোড়ল ছিলে, মৌলবাদী আজ।
খেয়াল করোনি শুধু মারার সময় -
অ্যান্টনিরা চিরকালই জাতিস্মর হয়।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৩
স্বপ্নে দেখি মরুভূমি। রোদে পোড়া বালি।
ক্যাকটাস না। ফুটে আছে গুচ্ছ কাটা-হাত...
মরীচিকা। জল নয়। চমকানো ভোজালি।
হিংসাই এখানে খাদ্য। ধর্ম অজুহাত।
স্বপ্নে দেখি সমুদ্র। সে বিরাট হাঁ খোলে।
দূরে যে-সূর্যাস্ত, সে-ও রক্তে টলোমলো।
ভার নিয়ে কোনওমতে দিন শেষ হলে
মৃতদের সম্প্রদায় খুঁজে দ্যাখে জলও...
এই সমস্ত স্বপ্নে দেখি। ঘুম আসে না আর।
বাতাসকে প্রশ্ন করি - 'কী তবে উপায়?
কোন পথে শান্তি পাব?'... হাওয়া নির্বিকার।
তারপর ধুলো উড়িয়ে সে বলে আমায় -
'আগে সেই বাড়ি থেকে নিয়ে এসো চাল
যে-বাড়িতে কোনও হত্যা হয়নি গতকাল'।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৪
আবদুল করিম খাঁ-র ধর্ম ছিল গান।
আইনস্টাইনের ধর্ম দিগন্ত পেরনো।
কবীরের ধর্ম ছিল সত্যের বয়ান।
বাতাসের ধর্ম শুধু না-থামা কখনও।
ভ্যান গঘের ধর্ম ছিল উন্মাদনা। আঁকা।
গার্সিয়া লোরকা-র ধর্ম কবিতার জিত।
লেনিনের ধর্ম ছিল নতুন পতাকা।
আগুনের ধর্ম আজও ভস্মের চরিত।
এত এত ধর্ম কিন্তু একই গ্রহে থাকে।
এ-ওকে, সে-তাকে আরও জায়গা করে দেয়।
তবে কেন অন্য পথ ভাবায় তোমাকে?
তোমার ধর্মের পথে কেন অপব্যয়?
যে তোমাকে শিখিয়েছে দখলের কথা -
জেনো সে ধর্মই নয়। প্রাতিষ্ঠানিকতা।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৫
আজও কারা গোধরায় মৃতদেহ খোঁজে
অযোধ্যায় আজও কারা আগলায় মুষল
একদিন সূর্যাস্ত এত ধারালো ছিল যে
লাল হয়ে গেছিল স্বর্ণমন্দিরের জল।
এ-খেলার শেষ নেই। এরই মধ্যে তুমি
যদি বলে ওঠো "কোনও পক্ষই মানি না",
সাক্ষ্যও দেবে না জেনো প্রিয় জন্মভূমি
অন্তিম মুহূর্তে শুধু উগরে দেবে ঘৃণা।
আমি সেই মাটি থেকে কথা বলতে চাই
যে-মাটিতে এখনও সশস্ত্র নীরবতা ;
অসাধারণের মৃত্যু অনিবার্য, তাই
সাধারণের সহায় অন্যমনস্কতা।
এই উপমহাদেশ আমার ঠিকানা
হত্যাটি অনুমোদিত। কথা বলা মানা।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৬
বালক যিশুর দেহ শোয়ানো কফিনে
মা মেরি ধর্ষিতা হন সেই একই তারিখে
রক্তের আদিম রেখা রাস্তা চিনে চিনে
রানাঘাট থেকে চলে লাহোরের দিকে।
আকাশে উড়ন্ত ক্রুশ পরিক্রমা করে
এত কিছু দেখেশুনে সে একটু কাহিলও।
খাদক নিশ্চিন্তে ঢোকে নিরীহের ঘরে -
পাহারায় শাসকেরা বরাবরই ছিল।
হে ক্রুশ, কোথায় ছুটবে আজ তোমার মন?
কোন মাটির দাবি বেশি? কার শিয়রে যাবে?
মাঝখানে যে-কাঁটাতার, মুকুট এখন।
ছটফটাচ্ছে উপযুক্ত মাথার অভাবে।
উঁচু একটা টিলা খুঁজে দাঁড়াও আবার -
নীচে শেষ দেখতে পাবে, এই সভ্যতার।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৭
আকাশ এখনও লাল। সন্ধে, নাকি ভোর?
মানুষ এখনও শুয়ে। ঘুমন্ত, না মৃত?
জল দিয়ে ঘিরে রাখা প্রাচীন শহর...
কিছুটা চোখেরও জল - এমনই কথিত।
শেষ কবে কেঁদেছে তারা? সে কোন নাটকে?
কোন দৃশ্যে ভিজেছিল সবার রুমাল?
খিদে নিয়ে কাঠঠোকরা বসে আছে চোখে...
শোনা যাচ্ছে কাল আর হবে না সকাল।
এইবেলা যে-যার ধর্ম বুঝে নাও, ওঠো !
মরার ও মারার এই শেষতম সুযোগ।
দীর্ঘদিন চলল, কিন্তু কাহিনিটি ছোট -
বাণিজ্য পরম ধর্ম, দেনা বড় রোগ।
তবুও ভুলিনি দ্যাখো, পুরনো প্রথাটি -
শাইলক বাড়ায় হাত, আমি মাংস কাটি...
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৮
এ মাথা ছুঁয়েছে ধুলো, গালিবের ভিটে
এ মাথা নামমাত্র দামে লালনের কেনা
এ মাথা নিজেকে খোঁজে ঢোঁড়াই চরিতে
এ মাথা সহজে জেনো নামানো যাবে না।
এ মাথা স্তম্ভিত, চুপ ফেলিনি'র কাছে
এ মাথা শোয়ানো আলি আকবরের পা'য়
এ মাথা রামকিংকর দেখে তবে বাঁচে
এতবার নত, তাই টানটান হাওয়ায়।
এ মাথা কুরআন জানে, পড়েছে গীতাও।
হেঁটেছে বাইবেল থেকে আদি ত্রিপিটক।
এখন, হ্রদের ধারে, বলো তো কী চাও -
কে হে তুমি? ধর্ম, না অধর্মরূপী বক?
অতও নির্লজ্জ নয় মাথার বাসনা
কাটা গেলে যাবে। তবু নোয়াতে পারব না !
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
১৯
নিথর বাবার কোনও বিছানার পাশে
উন্মাদ মায়ের সামনে, একটা একটা ক'রে
কিউবা থেকে রাশিয়ায়, নভেম্বর মাসে
সেনা-ফিরে-যাওয়া কোনও প্রাচ্যের শহরে
বুকের বাঁদিক ঘেঁষে, চোখের কালিতে
স্বাধীন কণ্ঠের পথে দমকে দমকে
শেষবার জেগে ওঠা শিরা-ধমনীতে
কবরখানার দিকে ধাবিত সড়কে
পরস্পর লড়ে যাওয়া কলমে- কৃপানে
যে-পথে সবার জন্ম, সে-পথ আরও চিরে
'কিছুই মানি না' - এই বাক্যের প্রয়াণে
ধর্মের লড়াই শেষে বিক্ষত শরীরে
যখন যেখানে যত গোলাপেরা ফোটে -
আমার স্নানের জল লাল হয়ে ওঠে।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২০
হয় সাদা, নয় কালো। এ ছাড়া বোঝো না।
চরমপন্থার ধ্বনি বেঁধেছ ঘুঙুরে।
ছাইয়ের নীচেই তবু রাখা আছে সোনা -
শুধু খুঁজে নিতে হয় পথে পথে ঘুরে।
তোমরা বানিয়েছ খোপ, লম্বা দাগ টানা
বিরোধ-বিরোধ খেলা, যেন কত রাগ
ওপরে আলাদা। নীচে একই মালিকানা।
শুধু দেখে রাখা, কেউ না-পেরোয় দাগ।
যারা দাঁড়িয়েছে মাঠে, ছোঁয়নি কিনারা
না এ-মাথা, না ও-মাথা, যারা মাঝখানে,
পৃথিবীর সব ধর্মে শ্রেণিশত্রু তারা
ভয় বলে কিছু নেই তাদের অভিধানে।
মতে মিললে চিরসখা, অন্যথায় ফাঁসি -
এ যদি বিশ্বাস হয়, আমি অবিশ্বাসী।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২১
সকালে লেখার চাপ, কাগজ-পত্রিকা
বিকেলে থেরাপি আর ডাক্তার দেখানো
সন্ধের মরুতে দূর স্কচ-মরীচিকা...
কোহেন থাকেন, পাশে মেহেদি হাসানও।
শুক্রবার রাতে আসছে বন্ধুদের দল।
কোথায় বেড়াতে যাওয়া, এবারের শীতে?
মগজে পেতেছে আড়ি সঞ্চয়ের ছল -
যদি কিছু রাখা যেত ফিক্সড ডিপোজিটে...
এরই মধ্যে শব্দগুলো কখনও ভাবালে
গ্রীষ্মের দুপুরে আমরা গণতন্ত্রপ্রেমী
গোটা একটা সভ্যতার পতনের কালে
ধর্মতলা মোড় থেকে হেঁটে একাডেমি।
বচনে বিপ্লবী আর প্রাণে সুরক্ষিত -
আমাদের অবসাদ প্ল্যাকার্ডজনিত।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২২
এক মুঠো পৃথিবী, তার আস্ফালন কত !
যে পারছে শাসন করছে যখন তখন
শস্যের পাশের ক্ষেতে দুলে উঠছে ক্ষত...
অথচ পেরোও যদি মাধ্যাকর্ষণ -
একই সঙ্গে সব কিছু নিষ্প্রাণ আর বেঁচে
এক আবর্তে মিশে যাচ্ছে সামান্য-মহৎ
কে জানে কোনদিক থেকে কোথায় চলেছে
নিয়ন্ত্রণহীন এই চেতনার স্রোত...
ভেসে থাকা ধর্ম শুধু। বিদ্যমান থাকা।
আগে ছিল মহা নাস্তি। পরেও কি তাই?
মাঝখানে ঘূর্ণমান সময়ের চাকা
আমরাও ধুলোর মতো ভাসতে ভাসতে যাই...
তুমি কত তুচ্ছ যদি বুঝতে একবার -
লজ্জায় নামিয়ে রাখতে উদ্যত কুঠার।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ [ শ্রীজাত ]
২৩
তোমার বাবার হাতে শান দেওয়া চপার।
তোমার মায়ের দেহ বোমায় সাজানো।
ওরা না-ও ফিরতে পারে। ফেরে অন্ধকার।
সে আনে শাঁখের ধ্বনি। সে আনে আজানও।
দূরে কোন বিস্ফোরণে উড়ে যাচ্ছে লোক
দূরে কার আক্রমণে কাটা পড়ছে গলা
রাতে রূপকথা চায় তোমারও দু'চোখ
সময়ের কাজ তবে রূপকথা বলা।
কে তোমার সঙ্গে ঘোরে, পুজোয় বা ঈদে?
কে স্নান করিয়ে তবে চুল আঁচড়ে দেয়?
এলোমেলো মাথাভর্তি আদরের খিদে...
সিঁথি কেটে ভাগ করা ন্যায় বা অন্যায়।
কী দেব, স্বান্ত্বনা ছাড়া? বেঁচে থাকো প্রাণে।
তফাত কোরো না শুধু শাঁখে ও আজানে।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২৪
না-জেনে ওড়ায় পাতা, এ কেমন ঝড়?
ঘাতক, তোমাকে আমি বহুদিন চিনি।
মাথা কেটে নিয়ে যাও, পড়ে থাক ধড় -
যেটুকু স্বাধীনচিন্তা, জেনো তা স্বাধীনই।
সে ছোটে আলোর মতো। সে বাঁচে বিদ্যুতে।
তাকে দেখা যায় না তবু সে হল দর্শন
তুমি তাকে কোনওদিনও পারবে না ছুঁতে
ধর্মের কৃপাণ হাতে থাকবে যতক্ষণ।
না-বুঝে ঘনিয়ে আসে, এ কেমন শনি?
রায় থেকে রহমান, ছাড় নেই কারও
মেরে যেতে যেতে যেতে বুঝতেই পারোনি -
এরই মাঝে কবে মৃত্যু হয়েছে তোমারও।
এটুকুই অভিশাপ, হে ধর্মের সেনা
মৃতদেহ বয়ে ফিরবে। কবর পাবে না!
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২৫
প্রথম আজান শুরু। দূর থেকে শোনো।
ফিনকি দিয়ে উঠে আসে প্রতিবেশী ভোর...
যদিও এদিকে ঘুম ভাঙেনি এখনও,
কতদিন ছাড় পাবে, আমার শহর?
আর কতদিন আমি বাস থেকে নেমে
একা হেঁটে বাড়ি ফিরব, সত্যিই জানি না।
হে পৃথিবী, ভেবে দ্যাখো, তোমার হারেমে
মানুষের জন্য কোনও জায়গা আছে কি না।
মুক্ত ভাবনার কোনও দেশ হয় না। তবু
হিংসা ঠিকই টেনে আনে হত্যার সীমানা
কে আজও শাসন করে? কে আমার প্রভু?
মৃত্যু থেকে বড় নয় মৃত্যু-পরোয়ানা।
আজ হয়তো বেঁচে আছি, কাল হয়তো লাশ...
আমি তবু লিখে যাব আমার বিশ্বাস।
অন্ধকার লেখাগুচ্ছ
২৬
অদ্বিতীয় এই গ্রহ। অসামান্য ভূমি।
ঘূর্ণনে ক্রিয়াটি শূন্য, তবু ঘুরে চলে।
এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া খুঁজে ফেরো তুমি
যে-ধূর্ত সে বরাবরই বিজয়ীর দলে।
এ তবে কেমন যুদ্ধ, এতটা অসম?
এ তবে কেমন শোধ, উগ্র এতখানি?
বাড়িতে ফেরার পথ আজও দীর্ঘতম
পৃথিবীর ব্যর্থতারা আজও অভিমানী।
তুমি ধর্ম মেনেছ ও ভেঙেছ নিজেই।
বিঁধবে বলে বারবার খুঁজেছ পুতুল।
রক্ত ছাড়া এ রোগের উপশম নেই
কিন্তু তুমি শেষ কথা, এ ধারণা ভুল।
রাতে যাকে হত্যা করো, সকালে সে বেঁচে