-আপনার কাছে প্রশান্ত মহলানবীশের ফোন নাম্বার আছে?
রাত ন'টার একটু পর একটি চ্যানেল থেকে ফোন এলো।
একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিলাম ।
আচমকা এই প্রশ্নে বিলকুল ভেবড়ে গেলাম !
কি উত্তর দেব ভেবে পেলাম না !
চেনা নাম্বার !
ভিড় ঠেলে একটু ফাঁকায় এসে জিজ্ঞেস করলাম,
-প্রশান্ত মহলানবীশ?
-হ্যাঁ স্যার !
-মানে স্ট্যাটিস্টিশিয়ান প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ!
-হ্যাঁ স্যার ! উনি পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন তো !
-কিন্তু উনি তো বছর পঞ্চাশ আগে মারা গেছেন ! আর খুব যদি ভুল না করি বেঁচে থাকতেই পদ্মবিভূষণ পেয়েই l কিন্তু ওঁর নাম্বার তো...
-মারা গেছেন ! ওঃ হো !
ও প্রান্তে একরাশ হতাশা।
-তাহলে ওঁর কোনো আত্মীয়র নাম্বার...
আমি সত্যিই এক দম্পতিকে চিনি যাঁরা প্রশান্ত মহলানবীশের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, কিন্তু সেটা তো এই চ্যানেলের জানবার কথা নয় !
-না আমি ওঁদের কাউকে চিনি না !
শুকনো গলায় বললাম।
-কিন্তু কিছুদিন আগে ওনাকে নিয়ে আপনি লিখলেন যে ফেসবুকে !
এই বার পরিষ্কার হলো ব্যাপারটা !
-ডাঃ দিলীপ মহলানবীশের কথা বলছো ? যিনি ও আর এস এর আবিষ্কর্তা ?
-হ্যাঁ, হ্যাঁ ! উনিই, উনিই ! ওঁর কোনো ফোন নাম্বার!
-কিন্তু উনিও তো নেই ! গতবছর চলে গেছেন পুজোর পরে ! ফোন নাম্বার জোগাড় করাই যায়, কিন্তু সে নাম্বার নিয়েই বা আর কি করবে ?
ওঁর স্ত্রীও তো মারা গেছেন !
-না মানে, আসলে, এই মাত্র অফিসে লিস্টটা এলো তো !
উনি এবার পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন !
মসিয়েঁ ভের্দু তে অঁরি ভের্দুর মুখ দিয়ে চ্যাপলিন বলেছিলেন "One murder makes a villain, millions a hero. Numbers sanctify"
অর্থাৎ "একটি মানুষকে মারলে খলনায়ক, লক্ষ মানুষকে মারলে নায়ক ! সংখ্যাই পবিত্র করে !"
সংখ্যাই পাপ ধুয়ে তাকে মহান করে !
আর কেউ যদি মানুষ না মেরে, মানুষকে বাঁচান !
আর সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে সেই বাঁচানোর পরিমাপটা যদি এক জন-দুজন বা শত-সহস্র মানুষ না হয়ে কোটি তে পৌঁছয় ?
তাহলেও কি তিনি নায়ক হয়ে যান না !
উত্তরটা হল "না" !
ডাঃ দিলীপ মহলানবীশ ।
এই মানুষটাকে প্রায় কেউই চিনতেন না !
চেনা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকতে নাম ও শোনেন নি প্রায় কেউই !
অথচ তাঁর আবিষ্কারের ফলে গত পঞ্চাশ বছরে প্রাণ বেঁচেছে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের !
হ্যাঁ !
কোটি কোটি মানুষের !
ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ORS তাঁরই আবিষ্কার যে !
তাঁকে নিয়েও হাসাহাসি হয়েছে! গালিভারদের নিয়ে লিলিপুটরা যে হাসি হেসে থাকে !
না বুঝে, অবিশ্বাসের হাসি !
অথবা বুঝেও ঈর্ষার হাসি !
আমাদের শহরেই থাকতেন !
আমাদের রাজ্যেই !
আমাদের দেশেই !
আমরা চিনতাম না !
অন্তত দুটো নোবেল পাওয়া উচিৎ ছিল !
চিকিৎসাশাস্ত্রে আর শান্তির জন্য !
বেঁচে থাকতে আমরা তাঁকে চিনতাম না !
কোনো শ্রী বা ভূষণের যোগ্য মনে করি নি !
কারণ পুরস্কার পেতে হলে সুপারিশ লাগে ! মনোনয়ন লাগে !
মানুষটি সেসব জোগাড় করতে উৎসাহী ছিলেন না।
ডাঃ দিলীপ মহলানবীশ কাল পদ্মবিভূষণ হবেন।
লিখেছেন Koushik Lahiri