মার্কিন শীর্ষ আদালত মেয়েদের গর্ভপাতের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। এটুকু নিশ্চিত। সেই রায়ের সূত্র ধরে সেদেশের বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের আইনে ঠিক কী কী বদল আনবে, তা এখুনি বলা মুশকিল। তবে আসছে। ভবিষ্যতে আরও আসবে বলেই মনে হয়। মার্কিন দেশে মেয়েরা গর্ভপাতের অধিকার সহজে পায়নি। এদেশে যত অবাধে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা এসেছিল বিস্তর জটিলতা সহকারে।
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, মনুষ্যজীবন শুরু হয় জন্মের মুহূর্ত থেকে। তাঁদের গর্ভপাত নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু খ্রিষ্টানদের, বিশেষত ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের, বিশ্বাস - মনুষ্যজীবনের শুরু শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটার মুহূর্ত থেকেই (পরবর্তীতে জিনবিজ্ঞান থেকে লব্জ ধার করে যুক্তি সাজানো হয়, নিষেকের মুহূর্তেই জাইগোট তার একান্ত নিজস্ব জেনেটিক গঠন পেয়ে থাকে, যা জারি থাকবে জীবনভর)। অতএব, যেকোনও গর্ভপাতই হত্যা। সুতরাং ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের দ্বারা চালিত আমেরিকায় গর্ভপাত নিয়ে আপত্তি থাকবে, সে তো বলাই বাহুল্য। সে তুলনায়, হিন্দুধর্মের অপরিবর্তনীয় ও দেহাতীত আত্মায় বিশ্বাস - যে আত্মা কিনা ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে - এদেশে, সম্ভবত, গর্ভপাত বিষয়ক আইন নিয়ে বিচলিত না হওয়ার কারণ। তাছাড়া, এদেশে যখন সে আইন পাস হয়, তখন রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত ধর্মের খুব একটা মাখামাখি বা সঙ্ঘাত ছিল না, কাজেই ধর্মসংক্রান্ত আপত্তি - যা হওয়ার এমনিতেও কারণ ছিল না - বা তদসংশ্লিষ্ট শোরগোল ওঠেনি।
কিন্তু গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় যুক্তি বাদ দিয়েও এথিক্সের দিক থেকে আপত্তিগুলো ঠিক কী ছিল? সে যুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিযুক্তিই বা কী কী? সেই কথাগুলো ফিরে দেখা যাক। তবে সে আলোচনায় যাওয়ার আগে মানবশিশুর জন্মের আগেকার পর্যায়গুলো বুঝে নেওয়া দরকার।
একেবারে শুরুর পর্যায়টা হলো নিষেক - ফার্টিলাইজেশন। শুক্রাণু ডিম্বানুর মিলন - দুইপক্ষের জিনের মিশ্রণে তৈরি হলো জাইগোট-এর জেনেটিক গঠন। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জাইগোট এসে আঁকড়ে ধরবে জয়ায়ুর দেওয়াল। ইমপ্ল্যান্টেশন। মায়ের জরায়ু আগলে রাখবে তাকে। (ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের মত অনুসারে, ফার্টিলাইজেশন থেকেই জাইগোট-টি মানুষ। অতএব, ইমপ্ল্যান্টেশন আটকানোটাও অনুচিত।) জাইগোট থেকে এমব্রায়ো, অর্থাৎ ভ্রূণে পরিবর্তন, ঘটতে থাকবে ধীরে ধীরে। শুরুর পর্যায়ের কোষগুলো থেকে শরীরের সবরকম কোষ তৈরি হতে পারে, কিন্তু আস্তে আস্তে 'বিশেষজ্ঞ কোষ' তৈরি হতে থাকে, যা থেকে কিনা নির্দিষ্ট অঙ্গ বা তন্ত্রের কোষই তৈরি হওয়া সম্ভব। ভ্রূণের রূপও বদলে যেতে থাকে। বারো থেকে ষোল সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণটি মানব-ভ্রূণের চেহারা নেয়। তার আগে অব্দি ভ্রূণটিকে আর পাঁচটা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ভ্রূণ থেকে আলাদা করা মুশকিল। আগে ভাবা হতো, চব্বিশ থেকে আটাশ সপ্তাহ বয়সের মাথায় গর্ভস্থ শিশু মাতৃজঠরের বাইরে এসে বেঁচে থাকতে সক্ষম। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সময়টা এগিয়ে এসেছে - মাতৃগর্ভে বাইশ সপ্তাহ কাটিয়ে আসা শিশুকেও বাঁচানো সম্ভব। ঠিকঠাক পরিকাঠামো থাকলে চব্বিশ সপ্তাহে জন্মানো শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় পঞ্চাশ-ষাট শতাংশ, বাইশ সপ্তাহে সেটা পঁচিশ শতাংশ।
এই সময়কালের মধ্যে ভ্রূণ ঠিক কবে মানবশিশু হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠল, তা বুঝে ওঠা মুশকিল। ২০১০ সালে নেব্রাস্কায় কুড়ি সপ্তাহের বেশি বয়সের ভ্রূণের গর্ভপাত নিষিদ্ধ হয়। কেননা, কুড়ি সপ্তাহে নাকি ভ্রূণ ব্যথা-যন্ত্রণা অনুভবে সক্ষম (যদিও ধাত্রীবিদরা এ বিষয়ে সহমত নন)। নেব্রাস্কার দেখাদেখি আরও বেশ কিছু রাজ্যে অনুরূপ আইন পাস হয়, যদিও ২০১৫ সালে মার্কিন সংসদে এই বাবদ বিল (Pain-capable Unborn Child Protection Act) পাস করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এবারে আসা যাক এথিক্সের প্রশ্নে।
গর্ভপাতের বিরুদ্ধে প্রাথমিক যুক্তিটা ধর্মীয়, যা শুরুতেই বললাম। কিন্তু এথিক্স ব্যাপারটা ধর্মের হাত ধরেই এসেছে, সুতরাং ধর্মীয় যুক্তিটা কিয়দংশে এথিক্সেরও যুক্তি। সেই যুক্তি অনুসারে, গর্ভাবস্থার প্রতিটি পর্যায়েই ভ্রূণটি মানব-ভ্রূণই। অতএব তাকে হত্যা মানব-হত্যা। আবার ধরুন, চব্বিশ সপ্তাহে গর্ভস্থ শিশু শরীরের বাইরে বেঁচে থাকতে সক্ষম - অন্তত এক-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে বাইশ সপ্তাহের শিশুও তা-ই। মানুষ হিসেবেই। তাহলে কোনও একটি বিশেষ দিনে কেমন করে বলা সম্ভব, যে, ঠিক তার আগের দিনটিতে গর্ভস্থ ভ্রূণটি - নাকি শিশুটি - 'মানুষ' হিসেবে গণ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়? এমন করে একদিন একদিন করে পেছোতে থাকলে একেবারে শুরুর মুহূর্ত, অর্থাৎ ফার্টিলাইজেশন, অব্দি যুক্তি পাওয়া যায়।
এটা অবশ্য লজিকের ভাষায় স্লিপারি স্লোপ আর্গুমেন্ট। এমন যুক্তি ধরতে থাকলে পরীক্ষায় পাসমার্ক বা গাড়ির স্পিড লিমিট, সবকিছুর বিরুদ্ধেই অনুরূপ যুক্তি দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, পরীক্ষায় তেত্রিশ পাওয়া মেয়েটি কি চৌত্রিশ পাওয়ার থেকে খারাপ? তাহলে কোন যুক্তিতে সে ফেল? আবার তেত্রিশকে যদি মানেন, বত্রিশ নয় কেন? এমন করে শূন্য অব্দি অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যায়।
পরের যুক্তিটা আরেকটু জটিল। যেকোনও মানুষকে হত্যা অনুচিত কেন? মানে, এ তো জানা-ই কথা যে, মানুষটা একদিন না একদিন মরতই। কী এমন ক্ষতি যদি সেই অনিবার্য দিনটিকে কয়েক বছর এগিয়ে আনা হয়? গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো, অন্যায়, কেননা মানুষটা তার ভবিষ্যত বেঁচে থাকার অধিকার, তার জীবনের পুরো ক্ষমতা, জীবনের পুরো সম্ভাবনা - আর পাঁচজন মানুষের মতো জীবন - তা উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হলো। একটি মানব-ভ্রূণের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা জন্মানো মানবশিশুর থেকে খুব আলাদা কি? এবং সেই সম্ভাবনা ভ্রূণাবস্থার প্রতিটি পর্যায়েই সমান (স্বাভাবিক কোনও কারণে গর্ভপাত হয়ে গেলে তা সেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু)। অতএব, গর্ভপাত মানে সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত হতে না দেওয়া। মানুষ খুনেও যেমনটা ঘটে, তেমনই।
প্রথমত, এই যুক্তি মানলে, গুরুতর রোগগ্রস্ত মানুষ বা মানবশিশু - যাদের 'আর পাঁচজন মানুষের মতো জীবন' গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই - তাদেরকে মেরে ফেলার যুক্তিও পাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, 'আর পাঁচজন মানুষের মতো জীবন' এই সম্ভাবনা একজন মানুষেরই থাকে - 'পার্সন' অর্থে মানুষের, যার একটা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও চিন্তাশক্তিসম্পন্ন মন রয়েছে। তার আগে অব্দি সে স্রেফ জিন-পরিচয় বা প্রজাতি-পরিচয়ে মানুষ - 'অর্গানিজম' হিসেবে মানুষ, 'পার্সন' হিসেবে নয়। অতএব, গর্ভপাত মানে 'অর্গানিজম' থেকে 'পার্সন'-এ পরিণত হতে না দেওয়া। অর্থাৎ 'পার্সন'-টি তৈরি হতে পারল না - যা তৈরি হলে আনুষঙ্গিক মনুষ্য-সম্ভাবনাও তৈরি হতো - কিন্তু যেহেতু 'পার্সন'-টি এক্ষেত্রে তৈরিই হয়নি, সেক্ষেত্রে সম্ভাবনার অপমৃত্যু হিসেবে ভাবার যুক্তি নেই। অর্থাৎ, গর্ভপাত সেই অর্থে 'পার্সন' তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করছে - গর্ভনিরোধকের ব্যবহারকে যদি 'সম্ভাবনার অপমৃত্যু' হিসেবে না দেখেন, গর্ভপাতকেও তেমন করে দেখার কারণ নেই।
যাঁরা গর্ভপাতের পক্ষে, তাঁরা মানব-ভ্রূণ ও মানবশিশুর মধ্যে এই 'পার্সন' কি 'পার্সন' নয়, এই যুক্তির উপরেই ভরসা করেন। অন্তত করতেন।
পরবর্তীতে জুডিথ থমসন ভ্রূণকে মনুষ্য-পদভুক্ত হিসেবে ধরেও চমৎকার এক যুক্তি সাজান। তাঁর বক্তব্য, ধরা যাক, মানব-ভ্রূণ একটি সম্পূর্ণ জীবন ও তাকে মায়ের দেহ ও অস্তিত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক পৃথক অস্তিত্ব হিসেবে ভাবা সম্ভব। কিন্তু এক 'পৃথক অস্তিত্ব' যখন অপর একজনের শরীরকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে, তখন তা তো পারস্পরিক সম্মতি ভিন্ন উচিত নয়। অর্থাৎ ভ্রূণ যদি পৃথক অস্তিত্বসম্পন্ন হয়, তাহলে যে নারীর শরীর - অর্থাৎ মায়ের শরীর - সে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে, তা মায়ের সম্মতি ব্যতিরেকে হওয়া অনুচিত। সুতরাং, মা যদি চায়, ভ্রূণকে আশ্রয়চ্যুত - মাতৃজঠর থেকে বিচ্যুত - করতে পারে।
মূল যুক্তি-প্রতিযুক্তির জায়গাগুলো এই।
এছাড়া নারীর নিজের শরীরের উপর অধিকার, নিজের শরীর-বিষয়ক সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার ইত্যাদি যুক্তি তো আছেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে ভ্রূণের বাকি অর্ধেক জিন যে তরফ থেকে আসে - অর্থাৎ পুরুষ বা পিতার অধিকার, তাঁর সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার - সেসব যুক্তিও উঠে আসতে পারে।
ধর্ষণ বা বলাৎকারের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়া নারীর গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে অবশ্য খুব জোরালো গলায় কেউই বলেন না, কিন্তু বাস্তবটা হলো, গর্ভপাতের ব্যাপারে আইন জটিল হলে তেমন নারীর পক্ষেও গর্ভপাত করাতে পারা দুস্তর হয়ে যায়।
পাশাপাশি এও বলে রাখা প্রয়োজন, গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গর্ভবতী নারীর প্রাণসংশয় ঘটলে গর্ভপাত করানোর অধিকার - যা কিনা চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত - সে নিয়ে বিশেষ বিতর্ক ছিল না।
এবারে সেই রায়ের প্রসঙ্গ, যা কিনা বারবার উঠে আসছে গত কয়েকদিন। মার্কিন শীর্ষ আদালতের Roe vs Wade মামলা, যেখানে আদালতের রায়ে সেদেশের মেয়েরা গর্ভপাতের যুক্তিসিদ্ধ অধিকার - নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতির পথে একটি বড় ধাপ- তা অর্জন করতে পেরেছিলেন। মামলাটি বিষয়ে বিশদে জানতে হলে উইকিপিডিয়া থেকে দেখে নিতে পারেন। আমি সংক্ষেপে সারকথাটুকু বলব।
মামলার রায় আসে ১৯৭৩ সালে। কিন্তু ঘটনাটা ১৯৬৯ সালের। টেক্সাসের নর্মা ম্যাককর্ভে - বহুলপরিচিত এই মামলায় ব্যক্তিপরিচিতি গোপন রাখার জন্য আইনি ছদ্মনাম জেন রো - তৃতীয়বারের জন্য গর্ভবতী হন, এবং উপলব্ধি করেন যে তাঁর পক্ষে তৃতীয় সন্তানকে মানুষ করা সম্ভব নয়। এমন ক্ষেত্রে, টেক্সাসে আইন অনুযায়ী, গর্ভপাতের অধিকার স্বীকৃত নয়। অতএব মামলা স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, হেনরি ওয়েড, তাঁর বিপক্ষে। রো বনাম ওয়েড।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন মূলত দুটি দিক থেকে। প্রথমত, মানব-ভ্রূণের ক্ষেত্রে আইনি অবস্থান - লিগাল স্টেটাস। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই গর্ভপাত আইন বাদে আর কোথাওই মানব-ভ্রূণের আর পাঁচটা মানুষের সমতুল্য আইনি পরিচিতি বা অধিকার - যেমন সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি - সেসব নেই। অতএব, মানব-ভ্রূণ সম্পূর্ণ মানুষের সমান কিনা সেসব পৃথক তর্কের বিষয়। দ্বিতীয়টি হলো, একজন মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। তেমন তেমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সে অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে, ঠিকই - কিন্তু এই বিশেষ ক্ষেত্রে তেমন পরিস্থিতি ঘটেছে কি? তাহলে রাষ্ট্র কোন অধিকারে এক নাগরিকের এমন একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে?
রো বনাম ওয়েড মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ে গর্ভপাতের অধিকার স্বীকৃত হয় - অন্তত কিয়দংশে, কেননা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সুযোগ খানিক থাকেই, বিশেষত বারো সপ্তাহের পরে গর্ভপাত চাইলে। তবুও মার্কিন দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই রায় যথার্থই বৈপ্লবিক। কিন্তু বর্তমান রায়ে উলটপুরাণ ঘটল। পুনর্মূষিকোভবর সম্ভাবনা। সম্ভাবনা নয়, খুবই বাস্তব।
গত কয়েক দশকে মার্কিন বিচারব্যবস্থায় রক্ষণশীলদের প্রভাব বেড়েছে। গত দুই দশকে অন্তত শীর্ষ আদালতে অন্তত এমন পাঁচজন বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন, যাঁরা গর্ভপাতের বিরুদ্ধে। গত বছর টেক্সাসে এমন আইন পাস হয়, যাতে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন পাওয়া গেলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। ভ্রূণের হৃদস্পন্দন ধরা পড়তে পারে মাত্র ছয় সপ্তাহেই। ওকলাহোমায় বিল পাস হয়, আইনবিরুদ্ধ গর্ভপাতের সাজা দশ বছরের জেল। লুইজিয়ানায় বিল আনা হয়, গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা মানুষ খুনের সমান - বিলটি যদিও আইনে পরিণত হয়নি। ওকলাহোমা-র নতুন আইন অনুসারে, নিষেক থেকেই মনুষ্যজীবনের শুরু - গর্ভনিরোধক হিসেবে আইইউডি (কপার-টি ইত্যাদি) কাজ করে অনেকাংশে নিষেকের পর, তার উপরও নিষেধাজ্ঞা আসবে না তো? গর্ভধারণের কারণে গর্ভবতী মহিলার প্রাণসংশয় ঘটলে গর্ভপাত এখনও আইনসিদ্ধ। কিন্তু গর্ভপাত আর মানুষ খুন সমান, এমন আইন হলে কজন ডাক্তার সাহস পাবে গর্ভপাত করাতে!!
আরও বড় সংশয়, রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ের মূল বিবেচ্য ছিল, নাগরিকের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে রাষ্ট্রের নাক-গলানোর অধিকারের উচিত নাকি অনুচিত। শেষ বিচারে এটুকুর ভিত্তিতেই এসেছিল ঐতিহাসিক রায়। সেই রায় বাতিল হওয়ার পথ ধরে আসবে না তো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতার উপর আরও বড় কোনও আঘাত?
বিশ্বের রাজনীতিতে তো বটেই, গণতন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রক্ষণশীলদের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। বেড়ে চলেছে। সব দেশেই। এদেশেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়া ঘর অব্দি পৌঁছে না যায়, এই জন্যই না এত শত ভাবনা।
© বিষাণ বসু