বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

চিরকুট ~ অবিন দত্তগুপ্ত

আমার পরিচিতেরা বারে বারেই বলেন আমি আজকাল হাত খুলে লিখি না । একথা অস্বীকার করে লাভ নাই , আমি মূলত পাঠক । পড়তে পড়তেই আমার লিখতে শেখা । আবার লিখতে লিখতেই নিজেকে নিজেই বেঁধে ফেলা । এটাও বলতে বাধা নেই যে মনের কথা লিখতে না পারার জন্য আমি স্বাগতার সাথে ঝগড়াও করেছি প্রচুর । কিন্তু ওটা স্রেফ্‌ দোষ চাপানো । আদতে ব্যাপারটা অন্য ।

আমার লেখা মূলত সমাজ এবং রাজনীতিধর্মী । এর বাইরে সতঃস্ফুতর্তা একমাত্র আমার ক্লাব । ব্যক্তিগত লেখা গুলি বেশ ভালোই হয় দেখেছি , সবই আমার নানা অভিজ্ঞতার এবং তারও একটা ক্ষয় আছে । অথবা হয়তো সব গল্পে নাক চিপে নিজেই ডুব দি নি । আমি সত্যি সীমাবদ্ধ । তথাপি এ অভিযোগ সত্য যে আমি হাতখুলে লিখি না । আজকে কেন লিখি না ,অথবা আদপে হাত খুলতে কেমন করে হয় ,সেই নিয়েই কয়েকটা কথা । 

আমার রাজনীতির মূল অনুপ্রেরণা আমার দাদুর চিরকুট , যেগুলো বাবাও দেখেনি । আমার দাদু সারাদিন গনশক্তি পড়ত আর সারা বছরের গণশক্তিগুলো একটা তাকের উপর তারিখ সমেত সাজিয়ে রাখতো । আমাদের বাড়িতে কাগজওয়ালা আসত । ঠামি তার কাছে আজকাল বিক্রি করলেও গণশক্তি বিক্রি করতেন না । একবার পূজার আগে গণশক্তি বিক্রী করতে গিয়েছিল ঠামি- সে নিয়ে সে কি বাওয়ালি । আমার বছর পাঁচ ,আমি দেখেছি । সে  যাই হোক তাকের উপরের গণশক্তি ছাড়াও আমার দাদুর একটা গোপন কাগজের আস্তানা ছিল । আমরা তো খুব ছোট পরিসরে বড় হয়েছি , তাই অ্যালোন টাইম কারুরি ছিল না - আমি দাদুর গোপন কাগজের বাক্সেরও উত্তরাধিকারী ছিলাম । সেখানেই প্রথম দেখা চিরকুট । দাদুর হাতের লেখা মুক্তর মতো ছিল ,ওইটা আমি পাইনি । চিরকুট পেয়েছিলাম । কোনটার তলায় লেখা লেনিন , কোনটায় মুজাফফার আহমেদ, কোনটায় মাও যে দং, কোনটায় স্তালিন । নাম গুলি প্রপার নাউন ছাড়া আর কিছুই ছিল না , কিন্তু অনুসন্ধিৎসা ছিল ঠিক । পরে বাবার কাছ থেকে কিছু ঠামির কাছ থেকে কিছু মায়ের কাছ থেকে কিছু ভাঙ্গা ভাঙ্গা অথচ কানেক্টেড্‌, এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়া কিন্তু একই দিকে দিক নির্দেশ করা গল্প শুনে আমার ইতিহাস সচেতনতা তৈরি হয় । দূরদর্শনের দৌলতে আবুল বাশারের মুখে রাজনীতি শব্দের মানে -"সর্বশ্রেষ্ঠ যে নীতি " শুনে শিহরিত হয়েছিলাম কৈশরে । তবে শ্রেণীসচেতনতা তৈরি করেছিল আমার রিফিউজি রিলিফ্‌ কমিটির সরকারি আবাসন - আজীবন তা ভোলার নয় । 

আমি যখন প্রথম সি পি আই এম-এর কাজ করি , তখন তা ছিল চেন ফ্ল্যাগ লাগানো - ২০০১ । আমি প্রথম মিছিলে হেঁটেছি লুকিয়ে , ১৫ বছর বয়সে । প্রথম নির্বাচনী রেজাল্ট শুনেছি বাবার কোলে চেপে , তখন আমার বয়স ৭ - আর এস পি , ফরোয়ার্ড ব্লক বললেও বাবাকে জিজ্ঞেস করতাম - "আমাদের দলে ?" 

আমার বাবা জোট সমর্থন করে । আমি জোট সমর্থন করি না । চলতে চলতে আমার আর বাবার অভিজ্ঞতা আলাদা হয়েছে - মতানৈক্য তৈরি হয়েছে । ঠামির সাথে ঝগড়া হলে আমি দাদুকে জিজ্ঞেস করতাম "ঠামি কি তোমার এনিমি ?" । দাদু বলতো আমরা বহুদিন একদল । আদতে ঠামি না থাকলে দাদুর বোধহয় ঠিক আমার দাদু হওয়া হয়ে উঠতো না । বামপন্থী রাজনীতিতে যারা দ্বন্দ দেখলে ভুরু কুঁচকান , তারা বামপন্থী রাজনীতি বোঝেন না । বামপন্থী রাজনীতি করতে এসে যারা আন্তদলীয় দ্বন্দের অর্থ শত্রু বোঝেন - তারা আগের শ্রেণীর চেয়েও ভয়ঙ্কর - পাতি ধান্দাবাজ ।

এটা আমার শারদীয়া লেখা । হাত খুলে লেখা ।  কেউ ছাপলে মেসেজ করবেন । :)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন