ইতিহাসবিদ ব্রায়ান লেভ্যাক এবং অন্যান্য গবেষকরা দেখিয়েছেন যে ১৪৫০ সালের পর থেকে প্রিন্টিং প্রেস ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর ডাইনি শিকার বা witch hunt আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এর কারণ, প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমে ডাইনি ও শয়তান সম্পর্কিত বই, ম্যানুয়াল, প্যামফ্লেট দ্রুত ও সস্তায় ছাপা সম্ভব হয়। উদাহরণ হিসেবে ১৪৮৭ সালে প্রকাশিত berüchtigte Malleus Maleficarum বইটির কথা বলা যায়। এই বইটি ডাইনি সনাক্ত ও শাস্তি দেওয়ার "গাইডবুক" হয়ে উঠেছিল।
সেদিনের প্রিন্টিং প্রেসের জায়গাটি আজ নিয়েছে ফেসবুক, সমাজ মাধ্যম এবং দুনিয়ার নিকৃষ্টতম সংবাদ মাধ্যম ভারতীয় অনলাইন মিডিয়া। চন্দ্র গ্রহণের প্রাক্কালে ফেসবুকের গ্রুপগুলো গত দুদিন ধরে কুসংস্কারের আড়ত হয়ে উঠেছে। আলোচনার বিষয় গ্রহণের সময় কী খেতে নেই, কোনদিকে শুয়ে ঘুমাতে নেই, খাবার বিষাক্ত হয় কিনা - ইত্যাদি মধ্যযুগীয় বাছ বিচার। তাতে ধুয়ো দিয়ে চলেছে গুচ্ছের অনলাইন মিডিয়া।
গ্রহণ ঘিরে নানা কুসংস্কার থাকলেও সত্য হলো, এই সময়ে খাওয়া, ঘুমোনো বা গান-নাচ করার মধ্যে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। খাবারও তখন স্বাভাবিক থাকে; বিষাক্ত হয় না, অতিরিক্ত জীবাণু জন্মায় না, কিংবা কোনো "রেডিয়েশন"ও মিশে যায় না। কিন্তু যারা সারসত্যটা বোঝেন, ভারতীয় সমাজের নিয়ন্ত্রণ এককালে তাঁদের হাতে যতটুকু ছিল, আজ সেটুকু নিয়ন্ত্রণও তাঁরা হারিয়েছেন। এই পোস্ট ট্রুথের যুগে মানুষকে বোঝানোর সাধ্যি কারো নেই!
অনেক মুক্তচিন্তক বিশ্বাস করেন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির হাত ধরে কুসংস্কার এবং ধর্মমোহের প্রাচীরে ফাটল ধরবে। এ একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। প্রযুক্তি নিজে নিরপেক্ষ। প্রযুক্তি কার হাতে, কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তার ওপরই নির্ভর করছে সমাজ বিজ্ঞানের পথে এগোবে নাকি কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হবে। দুনিয়ার আর দশটি বিষয়ের মতো এই বিষয়টিও পুরো দস্তুর রাজনৈতিক। আজকের বাংলা তথা ভারত তা পদে পদে প্রমাণ করে ছাড়ছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন